ধূসর রংধনু পর্ব ৯
মাহিরা ইসলাম
ভালোলাগা টা সাময়িক।রাস্তায় একটা ফুটফুটে কুকুরের ছানাকে দেখলেও আমাদের ভালোলাগে।
কিন্তু ভালোবাসাটা সাময়িক নয়। তা আজন্মের মায়ার বন্ধন।ভালোবাসার কোনো মানুষ হাজার অপরাধ করলেও আমাদের কাছে তা তুচ্ছ মনে হয়।
আর একজন অপরিচিত মানুষের প্রতি ভালোবাসা কখনো একদেখাতেই হয়না। মানুষ বলে না লাভ এট ফাস্ট সাইড। আসলে এটা কখনো সত্য নয়। প্রথম দেখায় ভালোলাগা হয় কিন্তু ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা হয় ধীরে ধীরে। একসঙ্গে এক ছাঁদের নিচে বসবাস করতে করতে ভালোবাসা, মায়া ধীরে ধীরে জন্মাতে শুধু করে।
যেমন প্রথম দেখাতেই রাস্তার কুকুরের ছানাটিকে ভালো লাগলেও আপনি যদি সেই ছানা টিকে কিছুদিন যাবত প্রতিদিন দেখেন, সঙ্গে তার অসহায়ত্বটুকু প্রতিদিন একটু একটু করে অনুভব করেন তবে ধীরে ধীরে তার প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিচ্ছে।এবং তার পরেই আপনি চাইবেন আপনার ভালোবাসাটাকে আকরে বাঁচতে। তার সঙ্গ পেতে। তার কাছাকাছি আসতে।
আর তবে সেটাই হবে আসল ভালোবাসা।
তখন দেখবেন আপনার নিকট এতদিন ধরে থাকা, দেখা #ধূসর_রংধনু হঠাৎ তার রং পরিবর্তন করে সাতটি রংয়ের রংধনুতে আকৃতি নিয়েছে।ধূসর আকাশ উজ্জ্বল হয়েছে। অন্ধকার পৃথিবী আপনার কাছে নতুন করে আলো ছরিয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাঝে কেটে গেছে আরো কয়েকটা দিন। এই কদিন তাসফি নিস্তব্ধ’র থেকে নিজ মুখ লুকিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছে। যথাসম্ভব এড়িয়ে গিয়েছে সে তাকে।
তাছাড়া পুরুষটির সেদিনের কথায় তার মনে গভীর ভাবে দাগ কেটেছে।
আজ নিস্তব্ধ’ র ক্লাস আছে।তাসফি উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে ক্লাসে।যথারীতি নিস্তব্ধ ক্লাসে প্রবেশ করে নিজের লেকচার শুরু করেছে। তবে তাসফির আজ ক্লাসে মনোযোগ নেই। সে অন্য ভাবনায় বিভর। তার মনের মাঝে সপ্তাহ খানেক ধরে কিছু একটা নিয়ে দোটানায় ভুগছে। কিসের দোটানা তা সে নিজেও বুঝতে পারছেনা।
লেকচার শেষ হতেই, নিস্তব্ধ হঠাৎ তাসফি নাম ধরে ডেকে উঠলো।
তাসফি চমকে উঠলো।দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গেল সে স্যারের দিকে।নিস্তব্ধ গম্ভীর কন্ঠে আদেশ দিয়ে বলল,,,
“পরবর্তী ক্লাস শেষে তার ডেস্কে গিয়ে দেখা করতে। কিছু কাজ আছে।”
তাসফি বুঝলোনা তার সাথে হঠাৎ কি কাজ থাকতে পারে এই লোকের।
আশা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,,
-” কি ব্যাপার বলোতো দোস্ত স্যার হঠাৎ তোকে ডাকলো কেন। কি কাজ রে?”
তাসফি ঠোঁট উল্টে বলল,
-” জানিনা গিয়ে দেখি।”
– “হ্যাঁ যাও ক্লাসের সিডিউল প্রতিদিন মেইনটেন করো দেখ স্যার তোমার উপর সন্তুষ্ট। ”
তাসফি মনে মনে বলল,” নারে পাখির বাসা। সন্তুষ্ট না ছাঁই। এই অহংকারী ডাক্তার তো তাকে পছন্দই করে না। তাকে দেখতেই পারে না।আমার সন্তুষ্টি।তাকে কেউ সন্তুষ্ট করতে পারবে কিনা কে জানে।”
তবে আজ হঠাৎ এই তলবের কারণ কি?
পরবর্তী ক্লাস শেষে তাসফি নিস্তব্ধ’র কেবিনে গিয়ে নক করলে ভেতর থেকে আওয়াজ আসে। “কাম ইন”।
তাসফি ভেতরে ঢুকে দেখে একজন পেশেন্ট সেখানে উপস্থিত।
নিস্তব্ধ হাতের ইশারায় তাকে পাশে থাকা বেঞ্চিতে বসতে বলে।
বাব্বাহ এই লোক ক্লাসের সঙ্গে রুগী ওও দেখে নাকি বাহ। এই লোকের কাছে রুগী আসে নাকি। সে তো ভেবেছিলো তার উল্টো। বাইরে দেখলো আরো রুগীর সংখ্যা।
কিছুক্ষণের মাঝে আগত পেশেন্ট বিদায় নেয়।
“সকলকে কি বলেছো তুমি ম্যারিড ওর আনম্যারিড?”
তাসফি নিজের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে। হঠাৎ প্রশ্নে সে আরো কিছুটা জড়োসড়ো হয়ে বসে।ধীর স্বরে ঊত্তর দেয়,,
–” কিছু বলিনি। কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে নি যে বলব।”
— “গুড। আশা করি বিয়ের খবর তুমি কাউকে মাইকিন করে করে জানাবেও না।গট ইট!”
— জ্বী।
নিস্তব্ধ তাকিয়ে ছিলো তাসফির রিয়েকশন দেখতে। সে ভেবেছিলো মেয়েটা এতে রিয়েক্ট করবে।
সবাইকে বলতে পারবেন না তবে বিয়ে করেছেন কেন। এখন আমি সকলকে বলব হ্যানত্যান।কিন্তু নিস্তব্ধ পুঁচকে মেয়েটার মাঝে সেরকম কোনো লক্ষণ দেখতে পেল না। অতঃপর কৌতুক করে বলল,
–” ওকে এবার তুমি আসতে পারো। আমার আরো পেশেন্ট রয়েছে আপনাকে বসিয়ে রাখলে আজ সারা দিন কেটে যাবে।পেশেন্ট দেখা শেষ হবে না।
তাসফি বেরিয়ে আসতে নিয়ে আবার ঘুরে প্রশ্ন করলো,
” এই আপনি না সার্জন তাহলে রুগী দেখেন কেন এটা তো আপনার কাজ নয়।”
নিস্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো বিরক্তি নিয়ে বলল,
” ম্যাডাম তারা আমার পেশেন্ট কিছুদিন আগে আমার দাঁড়াই সার্জারি হয়েছে তাদের বুঝলেন। তাই তাদের কন্ডিশন চেক করা আমার কর্তব্য।”
তাসফি ঠোঁট বাকিয়ে বেরিয়ে এলো।
নিস্তব্ধ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার প্রস্থান পানে। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সে। এইটুকু জ্ঞান নিয়ে এই পুঁচকে মেয়ে ডাক্তারি পড়তে এসেছে।
তবে ডাক্তারি পড়তে জ্ঞানের থেকে মুখস্থ বিদ্যাটাই বেশি কার্যকর। এখানে ফিজিক্স কেমিস্ট্রির কোনো ম্যাথ বা বিক্রিয়া নেই। যে বুঝে মাথা খাটিয়ে তবেই তা সলব করতে হবে।রয়েছে শুধু হিউম্যান বডি নিয়ে গবেষণা।
তাসফি পুনরায় ক্লাসে প্রবেশ করতেই দুটো মেয়ে তার হাত টেনে ধরে প্রশ্ন করলো,,
— “কি বললো তোমায় স্যার ডেকে নিয়ে?”
তাসফি ভারী অবাক হলো যে মেয়েরা আজ পর্যন্ত তার সঙ্গে একটু কুশল বিনিময় করে নি। আর আজ তারা তার হাত টেনে ধরছে।আশ্চর্য!
তাছাড়া মেয়েগুলো মোটেও সুবিধার নয়। সারাক্ষণ ক্লাসে হাঙ্গামা করে বেড়ায়। তার ওদের লিডার মান্সা। মেয়েটা এক নম্বরের বেয়াদপ।প্রাইভেট মেডিকেল এর মেয়েগুলো যে এত বেয়াদপ হয় তাসফির জানা ছিলো না।অবশ্য হবে নাই বা কেন।এরা তো আর রাতের পর রাত জেগে পড়াশোনা করে চান্স পেতে হয়নি।মাসের পর মাস রাতে ঘুম হারাম করতে হয়নি।বড়লোক বাবার টাকায় ফুটানি করে পড়তে এসেছে।
তবে শুধু বেয়াদব নয়,কিছু ভদ্র সভ্য মেয়ে ছেলেও আছে আবশ্য।
তাইতো এই মেয়েগুলো তাসফি লিষ্টের বাইরে।সে মনে করে মেয়েগুলো তার ক্লাসে নেই। তাই সে সব জামেলা থেকে মুক্ত থাকে।কিন্তু এখন কি মেয়েগুলো তার সঙ্গে হাঙ্গামা করতে চাইছে নাকি। আশ্চর্য। তাসফি চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে চাইলো ওদের দিকে কিন্তু তা তো সে হতে দেবে না।
তাসফি কি এখন বলে দেব যে,, “আমি আমার হাসবেন্ড এর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম রে মুর্খ মানবীর দল। তাতে তোদের কি।”
কিন্তু হায় আফসোস চাওয়া সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা জারি করায় নিজ তৈরি বাক্য গুলো উগরে দিতে পারছে না সে।
সত্য কথা গুলো গিলে নিয়ে তাসফি মেয়েগুলোকে শক্ত কন্ঠে জবাব দিল,
— ” প্রথমত গাঁ ছুয়ে কথা বলবে না। সেই অধিকার তোমাদের দেইনি আমি। এন্ড দ্বিতীয়ত স্যার পরবর্তী ক্লাসের সিডিউল গুলো একটু গোছাতে ডেকেছিলো। তোমাদের কোনো সমস্যা। ”
তাসফি’র এমন ভাবলেশহীন, গা জ্বালানো কথায় হাত ধরা মেয়েটা ফুঁসে উঠলো।
কিছু বলতে গেলে পাশের মেয়েটা থামিয়ে দিলো।
বাদ দে মান্সা। কথা বারিয়ে লাভ নেই। আবার তাসফির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল,,
— “আর তোমাকেও বলি তাসফি গায়ে হাত দিয়ে হাত ধরলে সমস্যা কোথায়? আমরা তো আর ছেলে মানুষ নই। তাছাড়া আমরা ক্লাসমেট।
তাসফি মুচকি হেসে জবাব দিল,,
–” আমি তোমাদের সাথে তর্ক করতে ইচ্ছুক নই। আর তাছাড়া ট্রেনে বা বাসে বসে একসঙ্গে যাতায়াত করা সত্ত্বেও যেমন একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের অপরিচিত থাকে ঠিক আমরা ওও তেমন। আমি তোমাদের চিনিনা। তাই অপরিচিত মানুষের থেকে আমি কোনো ধরনের অযাচিত স্পর্শ আমি নিশ্চয়ই বর্দাস্থ করবো না।করার প্রশ্নই আসে না।সো দূরে থাকো। হাঙ্গামা অন্য কারো সঙ্গে করতে চেষ্টা করো। আমার সঙ্গে নয়। আমি কোনো নিষ্পাপ বালিকা নই।যদি ভেবে থাকো তবে নিজেদের ভুলটা ভাঙ্গিয়ে নাও দ্রূত বুঝলে।”
মান্সা রাগে কাঁপতে থাকলো। এই দু টাকার মেয়েটার সাহস হয় কি করে তার সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলার। সে কি জানে তার বাবা এই হসপিটালের ফাউন্ডার্সদের একজন।
তাসফি নিজের বেঞ্চে বসতেই আশা হেঁসে ফিসফিস করে বলল,
-” বাহ তোর যে এত সাহস আগে তো জানতাম না রে তাসু।”
তাসফি ও তার মতো ফিসফিস করে বলল,
-” সাহস সবারই থাকে পাখির বাসা। কেউ দেখায় প্রকাশ করে ক্ষমতা ফলায়। কেউ প্রকাশ করে না। আর কারো ভীত মস্তিষ্ক তার সাহসি সত্তা কে গ্রাস করে নেয়।
তবে ঠান্ডা থাকা শান্ত থাকা মানেই যে সে সাহসি নয় এটা ভাবাই বোকামি।কখনো কখনো শান্ত থাকা মেয়েটাকে তার ব্যক্তিগত বিষয় কেউ শুধু শুধু হস্তক্ষেপ করলেও তার সাহসিকতা বাইরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে।এটাই পার্থক্য।
আশা বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলল,
-” বুঝলাম। তবে এখানে আপনার ব্যক্তিগত বিষয় কোনটা ছিল।”
তাসফি মুচকি হেঁসে আশার মাথায় টোকা মারলো তবে কোনো জবাব দিলো না।
– আঁউচ।
** আজ এক্সটা ক্লাস থাকায় তাসফির ফিরতে কিছুটা লেট হলো।
“ওসমান ভিলা”
ওসমান শেখ স্ত্রী থাকতে বড্ড যত্ন নিয়ে বানিয়েছিলেন দোতালা বাড়িটি।
গ্রাম ছেড়ে কিছুদিন এই বাড়িতে রাত্রী যাপন করতে না করতেই স্ত্রী পারি জমান ওপারে।তার স্ত্রীকে সে নিজ হাতেই গ্রামের বাড়িতে শায়িত করেন।তাইতো এখনো বুরো বয়সে গ্রাম ছেড়ে শহরে ছেলেদের সঙ্গে থাকতে বেশি মন টানে না তার। নিজের অর্ধাঙ্গীনী কে বড্ড ভালোবাসতেন যে।
বড় ছেলে নিলয় এখন থাকেন এই ভিলায়।
আর তার ছোট ছেলে আলঙ্গীর চাকরি সুত্রে মেয়ে বউ নিয়ে সিলেট থাকে।
তাসফি আজ ওসমান ভিলায় প্রবেশ করতেই ড্রয়িংরুমে অতিরিক্ত কিছু মানুষের আনাগোনা ঠাহর করলো। চিনলোনা কাউকেই। তবুও তাদের মাড়িয়ে নিঃশব্দে সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠে গেলো।
–” দাড়াও”
বাসন্তীর রুমে প্রবেশ করতে গেলে পিছন থেকে নিস্তব্ধ’র গম্ভীর কন্ঠস্বরে থেমে গেল সে।
ঘুরে দাঁড়ালো।
নিস্তব্ধ আদেশ দিল,,
— “আমার রুমে যাও। ভেতরে লোক আছে। রুমে গিয়ে ফ্রেস হও।
তাসফি ভ্রু কুঁচকে নিলো।বলল,,
— “আপার রুমে লোক কি করবে?”
নিস্তব্ধ ধমক দিয়ে বলল,,
— “যেটা বলেছি সেটা করো। কোন লোক সেটা তোমার জানতে হবে না।তাছাড়া আজ দাদু এসেছে। রুমে যাও।”
তাসফি আশ্চর্য হয়ে গেল৷
দাদু আসলো কখন।তাছাড়া দাদু আসছে বলে কি তার রুমে যেতে হবে নাকি। নিজে বের করে আবার নিজে রুমে যেতে বলবে। মানে সব তার মর্জিতে চলবে নাকি।
যাবে না সে জেদ দেখিয়ে তাসফি বেরিয়ে যেতে চাইলে নিস্তব্ধ সঙ্গে সঙ্গে অর্ধাঙ্গিনীর হাতখানা শক্ত করে চেঁপে ধরলো।
তাসফির মন আতঙ্কিত হলো।
নিস্তব্ধ হ্যাচকা টানে তাসফিকে কাছে টানলো।
রাগে হিসহিসিয়ে সুধালো,
” এত তেজ কোথায় পান আপনি? ভুলে যাবেন না আপনি যতই উড়ে বেড়ান না কেন দিন শেষে আপনি আমার খাঁচায়ই বন্দি।
ইচ্ছে হলে কাছে টেনে নেবো,ইচ্ছে হলে ছুঁড়ে ফেলবো।
এই তেজ অন্য কোথায় দেখাবেন।স্টুপিড।”
তাসফিকে ছেড়ে নিস্তব্ধ গটগট পায়ে হেঁসে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
তাসফি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। হ্যাঁ সে তো এই কদিনে ভুলেই গিয়েছিলো। শত পরিস্থিতি বদলালেও সে যে এখন এক জনের বিবাহিত স্ত্রী এ কথা তো মুছে যাবে না। সে যে কারো সাথে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ। তা যে চাইলেই ছোটানো যায় না। বাবার উপর তাসফির মেজাজ পূনরায় ক্ষিপ্ত হলো। অসহ্য অনুভূতি তার এখন নিজের কাছে নিজেকে বেআক্কল, হতবুদ্ধি মনে হচ্ছে।
তাসফি ভঙ্গুর হৃদয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। তার এখন ঠান্ডা একটা গোসল করা বড্ড দরকার। মাথাটা কেমন দপ দপ করছে।
বারবার নিস্তব্ধ’র বলা একটা কথা হৃদয়ে বরংবার তোলপাড় করছে।
” ইচ্ছে হলে কাছে টেনে নেবো ইচ্ছে হলে ছুড়ে ফেলবো।
সে কি এতটাই হাতের মোয়া।
গোসলের মাঝে তার দরজায় পুনরায় টোকা পড়লো।সঙ্গে পুরুষোচিত কন্ঠ,,
–” দরজা খোলো মেয়ে।”
— তাসফি
শক্ত গলায় বলল ,, কেন?
নিস্তব্ধ দাঁত কিড়মিড় করে নিজের রাগ সংবরণ করলো। এই মেয়ে এত কেয়ারলেস কেন। হাউ!
নিজেকে সামলে নিয়ে নিস্তব্ধ জবাব দিলো,,
— “জনাবা যে গোসলে গিয়েছেেন কাপড় টা কে নেবে? বিছানায় রেখে গেলাম পড়ে নেবেন।
তাছাড়া আপনার তো বাইরেই চেঞ্জ করার অভ্যেস।আশা করি প্রবলেম হবে না।”
তাসফি চোখ বড় বড় করে নিলো সে তো অস্থিরতায় ভুলেই বসেছিল। তার সব কাপড় আপার রুমে। কয়েকটা কাপড় এনে রাখবে সে। দাদু চলে গেলে আবার নিয়ে যাবে। সেধে অপমান সহ্য করতে এবার আর থাকবেনা সে এই অসভ্য অহংকারী মানবের রুমে।
হঠাৎ কিছু মনে হতেই সে চট করে শুধালো,,
— “এই আপনি কি করে জানলেন আমি বাইরে চেঞ্জ করি।”
— “তাসফির প্রশ্নে নিস্তব্ধ বক্র হেঁসে জবাব না দিয়েই বেরিয়ে গেল।
জবাব না পেয়ে তাসফি ভাবলো। হয়তো লোকটা চলে গেছে।
কিন্তু তার মন চিন্তিত হয়ে রইলো। নিস্তব্ধ কেন ওই কথা বলল।
এতক্ষণে মনের মাঝে আন্দোলন করতে থাকা তীব্র অসহায় অনুভূতি যেন মুহুর্তেই কোথাও আছড়ে পরে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেল।
মুচকি হাসলো তাসফি। ওই অহংকারী মানব কি জানে নিজের অজানতেই তাসফির কতটা খেয়াল রাখছে সে।
তাসফির হৃদয়ে আনমনা দোলা।হৃদয়ে গোপন কুঠুরিতে হয় জমা হয় তপ্ত কিছু অনুভূতির দল।
সত্যি কি অজানতে? নাকি ইচ্ছে করেই রাখছে?কে বলতে পারে তা।
ধরণীতে সন্ধ্যে নেমেছে অনেকক্ষণ হলো। মেহমান বিদায় নিয়েছে।
বিদায় নিয়েছে বললে ভুল হবে দাম্ভিক নিস্তব্ধ ইয়াসার তাদের বের করে দিয়েছে।
তাসফও আশ্চর্য হয়ে দেখলো মেহমানদের সঙ্গে কেউ এমন ব্যবহার করে তার কল্পনার বাইরে।
নিস্তব্ধ বাসন্তীর স্বামী হাসিবকে টানতে টানতে নিচে নামিয়ে আনে, মেহমানদের উদ্দেশ্য বলেছে,,
–” অনেক হয়েছে নাটক। আমার বোন আর আপনাদের ছেলের সাথে থাকবেনা।সো আপনারা যেতে পারেন।গেট আউট ফর্ম মাই হাউস।গেট আউট।”
মেহমানগন হতভম্ব চোখে নিস্তব্ধ’র দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেছে।
তার পর থেকেই তাসফি বাসন্তী আপার রুমে বসে আছে।
বাসন্তী অনেকক্ষণ যাবত কান্না করছে।তাসফি জানেনা কেন কান্না করছে
সে জানতে পারলো নিচে যে মেহমান গুলো এসেছিলো তারা আপার শ্বশুর বাড়ির লোক ছিল। বাসন্তী আর তার হাসবেন্ড হাসিব এর সঙ্গে ডিবোর্সের কেস চলছে। কিন্তু ডিবোর্স এখনো হয়নি। কিন্তু কি কারণে ডিবোর্স এটাই তাসফি কারো থেকে জানতে পারছে না।
দুপুরে বাসন্তী হাসবেন্ডের নিজ রুমে সাথে আলাদা কথা বলেছে। তারপর থেকে তার কান্না যেন থামছেই না।
নিস্তব্ধ নিজের গম্ভীর মুখখানা নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
গম্ভীর স্বরে বলল,,
ধূসর রংধনু পর্ব ৮
— “আপা প্লিজ তোর ওই ফ্যাসফ্যাস করে কান্না বন্ধ কর। আচ্ছা তুই কি চাস ওই রাস্কেল টার সাথে সংসার করতে? হ্যাঁ বল চাস?
তাহলে বল এক্ষুনি তোকে ওও বাড়িতে দিয়ে আসি। তুই থাকতে পারলে আমাদের তো কোনো সমস্যা নেই। আয় রেডি হ তোকে এখনি দিয়ে আসবো।”
বাসন্তী করুণ চোখে তাকালো ভাইয়ের দিকে।