ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২০
মাহিরা ইসলাম মাহী
জাওয়াদের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই চোখ বড় বড় করে নাওমী সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাতের বলটা সে চট করে অদিতির হাতে ধরিয়ে দেয়।
অতঃপর দাঁত কেলিয়ে মেকি হেসে অদিতি আর কাশফিকে নিয়ে সামনে ঘুরে। যেন তাদের থেকে ইনোসেন্ট কেউ নেই।
অদিতি পরপর ঘটনায় তাজ্জব বনে হতভম্ব দৃষ্টিতে একবার জাওয়াদের পানে চায় তো একবার নাওমীর পানে।
বেয়াদব টা সব রেখে তাকে ফাঁসালো।ইয়া খোদা।
“কি হচ্ছিলো এখানে?”
অদিতি মিন মিন করে বলে,
“ ক..কই কিছু না তো।”
কাশফি ফিসফিস করে বলল,
“ আমার রোগে তোকে ধরলো নাকি রে অদিতি।”
জাওয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অদিতির হাতের পানে চেয়ে সুধালো,
“ কিচ্ছু না রাইট? বাট তোমার হাতে ওটা কি?”
“ কি..কিছু না প্রফেসর।”
অদিতির কথায় জাওয়াদ কান দেয় না।
চট করে ছোঁ মেরে সে কাগজের গোল টুকরো টা অদিতির হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়।
জাওয়াদ মুটপাকানো কাগজের লেখা গুলো চোখ গোলগোল করে চেয়ে জোরে জোরে পড়ে শোনায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকে ভালো বাসি।”
পুরো পেজে এই একটি মাত্র বাক্য দিয়ে সাজানো।
“ তবে এগুলো কি মিস অদিতি? প্রেম কথন?ফাজলামো করেন আপনারা?হ্যাঁ?”
জাওয়াদের ধমক পূর্ণ টিটকারিতে অদিতি হকচকায়।
নাওমী কাশফি দুজন ও একে অপরের দিকে চায়।
নাওমী সঙ্গে সঙ্গে জিভে কামড় দেয়।
ইয়া খোদা এগুলো লতা আপার লেখা।
লতা আপার হাতের লেখা ভালো না। তার বয়ফেন্ড কে ভালোবাসি লিখে চিঠি পাঠাবে বলে হাতের লেখা ভালো করার তাগিদে তার খাতায় এই অকাম করেছে আপু।
শিট শিট।
ইয়া খোদা মাটি তুমি মাটি ফাঁক করো অদিতি সেই গর্তে ঢুকে যাক।
অদিতি’র ইচ্ছে করছে নাওমী কে এই মুহুর্তে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।
অসভ্য মেয়েটা তাকে ফাঁসিয়ে দিলো।
জাওয়াদ তিন জনকে ধমকে বলে,
“ পড়াশোনা বাদ দিয়ে ভার্সিটিতে এসে এসব করে বেড়াও তোমরা। এসব বাদ দিয়ে ল্যাবে গিয়ে দুটো এক্সপেরিমেন্ট করো কাজে লাগবে।
যাও ক্লাসে যাও।”
জাওয়াদের ধমকে সুরসুর করে তিন জন রমনী ক্লাসের পথে পারি জমায়।কথা বাড়ানোর সাহস তাদের হয় না। এই পরিস্থিতিতে চুপ থাকাই শ্রেয়।
আজ অদিতি আর নাওমী দু’জনেই বাড়ি ফিরেছে দ্রুত।
কাশফি আজ থেকে গিয়েছে সাদাফের খোঁজে।
ভাইয়ের সঙ্গে তার কিছু কাজ আছে।
খুঁজতে খুঁজতে ভার্সিটির পেছনের দিকটায় গিয়ে হাজির হয় কাশফি।
তাদের ভার্সিটি পেছনের দিকটায় ওই যে সেবারে আসলো আর নীলাদ্র’র দেখা পেল।সাক্ষী হলো কিছু তীক্ষ্ণ মুহুর্তের।
কাশফি আশপাশে চোখ বুলায়।
সঙ্গে অবাক বনে চায় তার ঠিক সামনে বরাবর বাইকের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীলাদ্র’র পানে।
নীলাদ্র আকাশ পানে চেয়ে আছে একদৃষ্টিতে।
তার হাতে জলন্ত সিগারেট। ক্ষণে ক্ষণে তাতে সুখটান দিতে ব্যস্ত সে।
কাশফি অবাক হয় আজ নিজের সাঙ্গু পাঙ্গু ব্যতীত একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
ইশশ দেখ কি রকম অসভ্য বখাটের ন্যায় বুকের কাছের শার্টের দুটো বোতাম খুলে সিগারেট টানছে।
কাশফির মস্তিস্ক সিগন্যাল দেয়।
তার যেতে হবে।পালাতে হবে দ্রুত।
মানবের সামনে থেকে সরতে হবে তার।
“ শুনো কাশি এদিকে এসো।”
কাশফি শুষ্ক ঢোক গিলে। তার হৃদপিণ্ড শুকিয়ে।
ইদানীং নীলাদ্রকে দেখলেই তার পেটের মাঝে কেমন গুটগুট করে সচিবালয়ে যাওয়ার তাড়ানা পাওয়া যায়।
নীলাদ্র’র হঠাৎ ডাকে সে থমকায়।অসভ্য ছেলেটা বুঝলো কেমন করে তার উপস্থিতি। সে তো আকাশ পানে চেয়ে ছিলো। তার উপর কেমন তার নামের বিকৃতি করলো দেখ। নীল সমুদ্র একটা।
তাকে সোজা অসুখে পরিনত করে দিলো।
কাশফি না শোনার ভাণ ধরে পেঁছাতে চায়।
তার আগেই নীলাদ্র ধমকে উঠে,
“তুঁতলারানী তোমাকেই বলছি। আর এক পা পেঁছালে ঠ্যাং ভেঙে রেখে দেব।”
কাশফি হতভম্ব নেত্রে চায়।
দুরুদুরু বুকে এগিয়ে যায়।
খানিক ভয় পেলেও নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে।
“ সাদাফের বোন রাইট?”
কাশফি চমকায়।কি করে জানে ছেলেটা আশ্চর্য।
“ জ্বী। কিন্তু আ..পনি কি করে জানলেন?”
নীলাদ্র রহস্যময় হাসে।
কাশফি ভ্রু কুঁচকায়। রাগ হয় তার এত রহস্য না করে বললেই তো পারে।ধুর।
নীলাদ্র বাইক থেকে সরে দাঁড়ায়।
কাশফির উদ্দেশ্যে বলে,
“ বসো। “
“ বাইকে?”
কাশফি অবাক স্বরে সুধায়।
“ হ্যাঁ। নয়তো কি আমার ঘাড়ে বসতে বলছি?”
“ না না তা কেন।আ…মায় কেন ডাকলেন?”
“ বসো বলছি।”
কাশফি কোনো রকমে বাইকে উঠে বসে।
নীলাদ্র পাশের একটা গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
কাশফির বোধগম্য হচ্ছে না নীলাদ্র কি করতে চাইছে।
“ শুনো তোমায় একটা গল্প শোনাই।
আসলে ভার্সিটি ছুটি।গল্পটা বলার মতো লোক পাচ্ছিলাম না বুঝলে। দাঁড় করিয়ে রেখে তোমায় কষ্ট দিতে চাচ্ছিলাম না।ওই যে প্রফেসরের আদেশ।কোনো র্যাগিং চলবে না।”
কাশফি মনে মনে ভেঙচি হুহ।নীল সমুদ্র নাকি আবার প্রফেসরের কথা শুনে।প্রফেসরের সামনে সিগারেট খেতে যার বাঁধে না সে আবার.. ঢং যত্তসব।
নীলাদ্র কাশফির কপালে টোকা মারে।
“ শুনবে।”
“ আশ্চর্য না বললে শুনবো কেমন করে।”
নীলাদ্র হাসে,
“ তোমায় এক রাজ কুমারের গল্প বলি শুনো। উহু ভাগ্যবান রাজকুমার নয়। হতভাগা রাজকুমার।
রাজকুমারের জন্ম হয়েছিল ভীষণ অবহেলায়,
রাজা রানীর সময় ছিল না রাজকুমারের দেখা শোনা করার।
আসলে কোনো মা ও যে এমন মমতাহীন হয় তা রাজকুমারের জানা ছিল না।
রাজা সময় দিতে পারতেন না রাজকুমার কে নিজের রাজ্য সামলাতে সামলাতে।
কিন্তু যখনই তিনি সময় পেতেন রাজ কুমার কে ভালোবাসতেন।
রাজকুমার একটু বড় হলে বাবা মায়ের অভাবে কাঁদতো কিন্তু রাজা রাণীর রাজকুমারের কান্না দেখার সময় ছিল না।
রাজ কুমার যখন আর একটু বড় হলো সে দেখতো ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে, রাজা রাণী সারাক্ষণ ঝগড়া করতো।
এখন আর রাজকুমার কাঁদেনা। কান্নারা তার নিরবতায় সঙ্গ দিয়েছে।
ড্যাবড্যাব করে চেয়ে চেয়ে শুধু দেখে।
একদিন রাজকুমার জেদ করলো।
জেদ করে নিজের খাবার সে নিজেই তৈরি করতে গেল…
কথা বলছিলো আর নীলাদ্র সিগারেট ফুঁকছিলো।
তার হঠাৎ থেমে যাওয়ায় কাশফি বিরক্ত হলো।
গল্পটা সে ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।
“ কি হলো থামলেন কে.ন? ব..বলুন।”
নীলাদ্র বলল না কারণ সে দেখতে পাচ্ছে কাশফির পেছনে তার দল এগিয়ে আসছে।
মুহুর্তেই তিয়াশা, সাফওয়ান, জেরিন, সাদিক এসে হামলে পড়লো।
তিয়াশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“ তোরা দুজন এখানে কি করছিস? নীলাদ্র তোকে পুরো ভার্সিটিতে খুঁজছি, কল করছি ধরছিস না।আর এখানে এই মেয়েটার সঙ্গে এসে বসে রয়েছিস।”
নীলাদ্র জবাব না দিয়ে থমথমে কন্ঠে কাশফির উদ্দেশ্য বলল,
“ নামো। আমার বাইকে সারাদিন বসে থাকার সুযোগ দিচ্ছি না তোমায়।”
মুহুর্তেই নীলাদ্র’র পল্টি খাওয়ায় কাশফি হকচকায়।আশ্চর্য নীল সমুদ্র দেখি মুহুর্তে কালো সমুদ্রে রুপান্তর হলো।নিজে ডেকে , নিজে বসিয়ে এখন নিজেই ধমকাচ্ছে।
কাশফি লাফিয়ে নামলো।
নীলাদ্র তীর্যক কন্ঠে বলল,
“ এত লাফালাফি করছ তোমার ঠ্যাং না ভাঙ্গে আমার ভাঙ্গার আগে।”
কাশফি ভেঙচি কাটে।
হনহন করে সকলের সামনে দিয়ে হেটে চলে আসে।
নীলাদ্র না আস্ত নীল সমুদ্র । হুহ সব কিছুকে এক সঙ্গে সুনামীর ঢেউয়ে ভেঙে চুরমার করে নিয়ে যাওয়ার ধান্ধা। হুহ যত্তসব।
সাফওয়ান ফিসফিস করে নিলাদ্র’র কানে কানে বলে,
“ কাহিনি কি বলতো।র্যাগিং থেকে কি লাইনিং মারছিস নাকি ভাই?”
নীলাদ্র চোখ গরম করে চায় সাফওয়ানের পানে।
সাফওয়ান চুপসে যায়।
তিয়াশা তীক্ষ্ণ চোখে নীলাদ্র’র পানে চেয়ে বলে,
“ কাহিনি কিন্তু আমিও কিছু বুঝতে পারছি না নীলাদ্র। কি চক্কর চলছে তোদের মাঝে?”
“ তোরা যা ভাবছিস ওসব কিছুই না।পথ ছাড়।বাসায় যাবো।”
নীলাদ্র বাইক ছুটিয়ে চলে যেতে নিতেই সাফওয়ান চিৎকার করে বলে “আমায় ও নিয়ে যা ভাই। একা রেখে যায় না
তোর নতুন বাসা একটু দেখে আসি। কেমন করে সাজালি বাসা।”
নীলাদ্র বিরক্ত হয়ে বাইক থামায়।
“ দেখার কিছু নেই।বাসা তো বাসাই। কোনো ডিজাইনিং নয়।”
সাফওয়ান দাঁত কেলিয়ে হেসে চট করে উঠে পরে।
“ এত কিপ্টা কেন রে তুই। তোর বাসায় গিয়ে কি মাংশ, পোলাও খেতে চাইবো? আশ্চর্য। “
দুজনের দিকে তিয়াশা চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রয়।যার বাইকে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে মানুষ বসলো না আর কাশফি মেয়েটা এত সহজে?উহু কিছু তো আছেই।যা আছে সেটা সে নাই দেবে। মনে মনে শয়তানি হাসে সে।
বাইক চালাতে চালাতে নীলাদ্র জিজ্ঞেস করে,
“ কাল আসিস নি কেন?”
সাফওয়ান মন খারাপ করে বলে,
“ মায়ের শরীরটা বেশি ভালো ছিলো না।”
“আর তোর বাপ?
“ বাবা বিদেশ। কতবার বলবো তোকে। একটা কিছু যদি মনে রাখিস। তুই মনে রাখিস টা কি ভাই।”
নীলাদ্র নির্লিপ্ত কন্ঠে সুধায়,
“ নাথিং।”
নিশান- নিশানী কে পড়াতে এসেছে আজ নাওমী।
দুপুর থেকেই তার মন মেজাজ ভালো নেই এমনি তে।
নীবিড় এসে আবার উল্টা পাল্টা কিছু না বলে তাকে।
আজ নীবিড় তাকে কিছু বললে সে নির্ঘাত রাগের মাতালে ছেলেটার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেবে ঠাস করে। একমুহূর্ত ওও অপেক্ষা করবে না।
“কি গো মা গত দুদিন আসো নি যে?”
বাসন্তীর প্রশ্নে নাওমীর মুখখানা চুপসে যায়।সুধায়,
“ আসলে আন্টি হস্টেলে একটু ঝামেলা হচ্ছিল।”
“ সে কি কথা। তোমার খাবার দাবারে কষ্ট হচ্ছে না তো। কেউ কিছু বলছে তোমায়?কেউ কিছু বললে নীবিড়কে বলবে।ওও ঠিক করে দেবে সব। তাছাড়া তোমায় তো বলেছি আমাদের এখানে চলে আসো মা।”
নাওমী মনে মনে হাসে।যে ঝামেলা বাঁধাতে ওস্তাদ সে আবার কি ঝামেলা মেটাবে।মুখে বলে,
“ না না আন্টি খাওয়া দাওয়া কষ্ট হচ্ছে না। আসলে আমার রুমমেট একটু অন্য টাইপের।ওর সঙ্গে এডজাস্ট করতে কষ্ট একটু এই আরকি।”
বাসন্তী হেসে বলল,
“ বুঝেছি। দুজনের পটছে না তাই তো? ওমন আমার ও হত যখন হস্টেলে থাকতাম। হস্টেলে রুম শেয়ার করে থাকা কত ঝামেলা আমি বুঝি।
আসলে মা বুঝলে তো আসলে জীবনে চলতে হয় সবখানে এডজাস্ট করে। যদি বেশি বোঝার চেষ্টা করি আমরা তবে পরতে হয় অপরের পায়ের তলে। শুনো মা একদম সংকোচ করো না। তুমি যদি আসতে চাও আমাদের এখানে নির্দিধায় চলে এসো কোনো সমস্যা নেই।দরকার হলে আমি সঙ্গে যাবো জিনিস পত্র আনতে সাহায্য হবে তোমার। “
নাওমী চিন্তিত হয়। সত্যিই তার আসা ঠিক হবে কিনা বুঝতে চেষ্টা করে,
“ আমি ভেবে দেখবো আন্টি।”
“ আচ্ছা ভেবে আমায় অবশ্যই জানিয়ো কিন্তু। ওদের দুজন কে এখানে থেকেই পড়ালে, যাওয়া আসার ঝামেলাও হলো না তোমার বুঝলে মা।”
নাওমী মাথা নাড়ায়।
রাত তখন দশটা প্রায়।
মাহরিসা উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে বেলকনিতে।
মনের মাঝে তার হাজার প্রশ্ন উদভ্রান্তের ন্যায় ছুটে চলেছে।
মাহরিসার হাতের মাঝে থাকা ফোনটা বেঁজে
উঠে বারংবার।
কিন্তু তার মাঝে রিসিভ করার কোনো ভাবাবেগ হতে দেখা যায় না।
আদ্রিতের ফোন।লোকটার ফোন কেন ধরবে সে? কে হয় লোকটা তার?
অথচ লোকটার থামার নাম গন্ধ মাত্র নেই।
শেষ মেশ আর উপায় না পেয়ে তার ফোন রিসিভ করতে হলো।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আদ্রিতের একেরপর এক ধমক পূর্ণ বার্তা ভেসে আসতে লাগলো,
“ ফোনে কি করিস তুই সারাক্ষণ। বাড়ি গিয়ে ফোনটা কি সোকেজে আটকে রাখিস। ফোন দিলে ফোন ধরতে পারিস না? সামান্য কমনসেন্স নেই তোর মাঝে? ফাজলামো করিস তুই আমার সঙ্গে? “
মাহরিসা জানতো ফোন ধরার পর ওপাশ হতে এমন কিছুই শুনতে পাবে সে।
তবুও দাঁতে চেপে সে চোখ বন্ধ করে পুরোটা শ্রবণ করলো।
কিন্তু আজ সে আর চুপ করে থাকবে না।
আদ্রিত নিজের কথা শেষ করে থামতেই মাহরিসা এবারে আওয়াজ তুললো,
“ আমার না কমনসেন্সের ভীষণ অভাব জানেন তো। তাই আপনাকে এই কমনসেন্সের অভাবজনিত মস্তিষ্ক খাটিয়ে কিছু বলছি শুনুন।
আমার ফোন আমি সোকেজে আটকে রাখবো না কোথায় রাখবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর ফাজলামো আমি খুব কম মানুষের সঙ্গে করতে পারি জানেন, আর আপনার সঙ্গে তো নয়ই আদ্রিত ভাই। আর আপনি ফোন দিলেই যে আমার ধরতে হবে এমন কোথাও লেখা আছে কি? আমি কি আপনার সঙ্গে চুক্তি করেছি?
আমার ফোন আমি ধরবো না কাটবো সেটা আমার ব্যাপার।
আপনি কে তা বলার?
কে আপনি? কিসের অধিকার খাটান আপনি আমার উপরে আদ্রিত ভাই?
আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই। কে হন আপনি আমার? কিসের অধিকার আপনার আমার উপরে এত বলুন?”
রাগে কপালের রগ ফেটে যাবার জোগাড় আদ্রিতের।
“ অধিকার দেখাস তুই আমায়? অধিকার? তোর অধিকারে ম*****।”
আদ্রিত নিজের চেম্বারের সামনে টেবিলে থাকা ফুলদানিটা শব্দ করে ফ্লোরে ফেলে।
মুহুর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে তা।
ওপাশের শব্দে মাহরিসা নিজে ও কেঁপে উঠে,তবুও নিজের মাঝে মিছে সাহস বজায় রেখে সুধায়,
“ একদম বাজে কথা বলবেন না আদ্রিত ভাই?”
আদ্রিত ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে।
রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
“ বাজে কথার কি দেখেছিস তুই? এখন থেকে প্রতিনিয়ত বাজে কথার তালে থাকবে হবে তোকে।
অধিকার দেখাস তুই আমায়? আমায় তুই ব্যক্তিগত দেখাস। তোর ব্যাক্তিগত কতদিন ব্যক্তিগত থাকে আমিও দেখবো তা। তোর ব্যক্তিগত যদি আমার নিকট খুল্লাম খুল্লাম না করেছি আমার নামও আদ্রিত শেখ নিভৃত নয়।
পরিবারের সবাই মিলে ফাজলামো পেয়েছ আমার সঙ্গে তাইনা?”
“ আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন। ”
আদ্রিত ততক্ষণে গাড়িতে চরে মাহীন দের বাসার সামনে প্রায়।
“ বের হ। এক্ষুনি বের হবি তুই বাসা থেকে।
আমার যদি তোকে বের করে আনতে হয় আই প্রমিস একটা হাড়ও আস্ত থাকবে না তোর।
অধিকারের গুষ্টি’র ষষ্ঠী করবো আজ।”
মাহরিসা এবারে সত্যি সত্যিই প্রচন্ড ভয় পায়।ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে সে।
আদ্রিত কি করতে চাইছে?
মাহরিসা যখন প্রচন্ড ভয়ে থাকে তখন সে ছোট বেলাকার ন্যায় আচরণ করতে থাকে।
এটা তার রোগ না অন্য কিছু সে তা জানে না। সে খুব করে দেখেছে এই অসুখটা তার আদু ভাইয়ের সামনেই বেশি হয়। কেন হয় সে জানেনা।
মাহরিসা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে উচ্চারণ করে,
“ আপনি একটা সাইকো আদু ভাইয়া।”
“ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি সাইকো তোর কোনো সমস্যা? তুই বের হবি কি না নাকি আমি আসবো?
আমি আসলে কিন্তু ভীষণ বহুত ঝামেলা আছে।
তুই আমায় এক ফোঁটাও চিনিস নি।আমি কি কি করতে পারি তোর ধারণাই নাই মেরিগোল্ড? “
“মেরিগোল্ড? “
মাহরিসা থমকায়। কি বলল এটা তার আদু ভাইয়া?
আদ্রিত ততক্ষণ মাহরিসার বাসার নিচে।
“ তুই আসবি নাকি আমি আসবো? কোনটা?”
মাহরিসা ভয়ে গলা শুঁকিয়ে কাঠ কাঠ।
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ১৯
কি হবে তার এখন? ক্ষ্যাপা সিংহকে সে আরো ক্ষেপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই বা কি করতো।
নিজের কানে শোনা কথাগুলো তো সে আর ফেলে দিতে পারে না।
ইয়া খোদাকি হবে তার এখন? কে বাঁচাবে তাকে..