ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২২
মাহিরা ইসলাম মাহী
“ কবুল বলতে পারিনা আদু ভাইয়া।”
“ তোর কবুল বলতে হবে না।কথাটা আবার রিপিট কর।”
মাহরিসা থতমত ভঙ্গিতে আদ্রিতের বাড়িয়ে রাখা হাতে নাক মুছে।
“ বল..”
“ পারিনা আ…”
ঠাস করে শব্দ হলো।
মাহরিসার মুখ খুলতে দেরি আদ্রিতের তার গালে থাপ্পড় মারতে দেরী হয় নি।
বাম গালে হাত দিয়ে মাহরিসা হতভম্ব দৃষ্টিতে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রয়।
দুঃখে, কষ্টে চোখ হতে অশ্রু ঝরে তার সমান তালে।
থাপ্পড়ের শব্দে কাজী সাহেব পরতে পরতে নিতেও কোনোরকমে নিজের চেয়ার সহ টেবিলখানা আঁকড়ে ধরে।একি অবস্থা। বিয়ে করতে এসে কনে বরের হাতে মার খাচ্ছে।
এমনিতেই বেচারার চোখে ঘুমের ফোয়ারা। তারওপর বারোটা বাজতে চললো বিয়ের খবর নেই আর না তো তার টাকা পয়সার।
নিস্তব্ধতা, জাওয়াদ, বিদ্যুৎ, আদ্রিতের হঠাৎ আক্রমণে বিস্মিত,শক খেয়ে চোখ বর বড় করে মুখে হাত দেয়।
এমন কিছু করবে আদ্রিত তা ছিলো তাদের ধারণার বাহিরে।
নিস্তব্ধতা মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে,
“ ভাইয়া..”
জাওয়াদ ফিসফিস করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ এটা কি একটু বেশিই হয়ে গেল না আদ্রিত?”
আদ্রিত নিজেও বুঝতে পারছে কাজটা করা তার ঠিক হয়নি। তবুও নিজের রাগ সে কন্ট্রোল করতে পারে নি।সম্ভব হয় নি তার দ্বারা। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার।
ঠিক এই কারণে,ঠিক এই অতিরিক্ত রাগের আঁচটাই বোধহয় তার মা তাসফি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
এই রাগ আদ্রিতের পক্ষে কন্ট্রোল করা সেদিন ও সম্ভব হয় নি, আজও না।
আর সম্ভব হবেও না।
তাসফি যতই চেষ্টা করুক তার ছেলের রাগ সে বাড়াতে বৈ কমাতে পারে নি একফোঁটাও।
মানুষের রাগ থাকা ভালো তবে অতিরিক্ত নয়।
এবারে বাঁধলো আরো বিপত্তি। এতক্ষণে মাহরিসা রেসপন্স করলেও এবারে সে মুর্তি বনে।
মুখে কুলুপ আটে।না তো কোনো কথা বলছে আর নাতো কান্না করে চোখ ভেজাচ্ছ।
সময় গড়ায়। ঘরির কাঁটা একটার কাছাকাছি প্রায়।
কাজী সাহেব হাই ছাড়তে ছাড়তে করুণ কন্ঠে বলেন,
“ বিয়েটা কি আজ হবে ডাক্তার মশাই? বাড়িতে আমার বউ অপেক্ষা করছে যে।”
আদ্রিত রাগী চোখে কাজীর পানে চেয়ে সুধায়,
“ আরে ধূর মিয়া দেখছেন না বউ কবুল বলছেনা। আর আপনি আছেন আপনার বউ নিয়ে? আগে আমার বউটা পার্মানেন্ট করে তার পর নিজের পার্মানেন্ট বউয়ের কাছে যাবেন। নিজের স্বার্থ দেখছেন আর আমার স্বার্থ টা দেখছেন না।সেম অন ইউ কাজী সাহেব।রাত তো একটা নয় আরো আসবে।আরে আপনার বউ হারিয়ে যাবে না মিয়া।”
কাজী হতভম্ব দৃষ্টিতে চায়।
কত্তবড় অসভ্য, বেয়াদব ছেলে।তাকে বলে কিনা রাত আরল আসবে।এই ছেলে ডাক্তার হলো কেমন করে।তাও আবার নাম করা ডাক্তার। আশ্চর্য। অবশ্য যেই ছেলে বিয়ের পিরিতে হবু বউকে থাপ্পড় মারতে পারে তার দাঁড়া অসম্ভব কিছুই না।এসব কথা তো তার হাতের মোয়া।
দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিদ্যুতের মাজা ধরে এলো।সে কাজীর উদ্দেশ্যে বিরক্ত হয়ে বলল,
“ আরে রাখেন মশাই আপনি। বউয়ের প্যাঁচাল থামিয়ে একটা চেয়ার দিন।আশ্চর্য দেখছেন একটা মানুষ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর আপনাদের কোনো মায়াদয়া নেই।
এত কিপ্টামী কেন করেছেন বলুন তো।পাঁচটা চেয়ার কিনে বসে আছেন আর দুটো কিনলে কি আপনার টাকা ক্ষয়ে যেত।আশ্চর্য মশাই।”
কাজী সাহেব পরলেন মহা বিপদে।সবাই তার বউকে নিয়ে টানাটানি কেন লাগালো আবার।
এই আজব পাবলিক গুলো বুঝি শেষ পর্যন্ত তার ঘাড়েই এসে পরার ছিল ইয়া খোদা।
কেন যে এত টাকার লোভ করতে গেল সে।
এই জন্যই কথায় আছে “লোভে পাপ পাপে মৃত্যু”।সে হারে হারে টের পাচ্ছে। এদের ফ্যাসাদে পরে এবারে তার প্রাণ টাই না সত্যি সত্যিই বেরিয়ে যায়।
সকলকে অবাক করে দিয়ে মাহরিসা তখন নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। কাজীর চোখ চকচক করে উঠে ধৈর্যের অবসান ঘটার আশায়। কিন্তু তার চকচকে চোখ কে পুনরায় ছানি পরিয়ে মাহরিসা বিদ্যুতের উদ্দেশ্যে বলে,
“ আপনি আমার চেয়ারে এসে বসুন ভাইয়া।আমি অনেকক্ষণ হলো বসেছি।ভালো লাগছেনা আর বসতে।”
আদ্রিত দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ মানব দরদী হতে বলেছে কেউ তোকে? এতই যদি মানব দরদী হওয়ার ইচ্ছে থাকে আমার উপর দয়া দেখা।”
মাহরিসা আদ্রিতের কথায় পাত্তা দেয় না বরং ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
আদ্রিত নিস্তব্ধতা কে ইশারা দেয়।
ভাই-বোনের পাল্লায় নিস্তব্ধতা পরেছে ফ্যাসাদে। কার দিকে যে আগাবে সেটাই বুঝতে পারছেনা। এই মুহুর্তে সাদাফ থাকলে বোধহয় বড্ড ভালো হতো।ছেলেটা হুটহাট কি করে যেন নিজের কারিশমায় হাবিজাবি বলে অনেক জটিল জটিল পরিস্থিতি ও সামলে নেয়।
তার কি সাদাফকে একটা ফোন করা উচিত?
উহু মোটেও না। তার জীবনে সাদাফের কোনো দরকার নেই।লাটসাহেব থাকুক সাহেব হয়ে। করুক যেমন খুশি তেমন সাহেবা কে বিয়ে।হুহ। তার কিচ্ছু আসে যায় না।সে কোনো সাহেবের সাহেবা হতে পারবে না। বয়েই গেছে তার।
নিস্তব্ধতা মাহরিসার কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
“ কবুলটা বলে দে না মারু।”
মাহরিসা নির্লিপ্ত কন্ঠে নাক টেনে আওড়ালো,
“ পারিনা।তোমার ভাইকে সরি বলতে বলো। কেন মারবে সে আমায়।কোন অধিকারে। কিসের অধিকার তার।”
“ কিসের অধিকার বুঝিস না তুই এখনো বুনু? অধিকার জন্মাতেই তো তোকে এখানে নিয়ে এলো।”
নিস্তব্ধতার করুণ স্বর।
মিনমিন করা মাহরিসার হঠাৎ এই রুপে আদ্রিত ভ্রু উঁচিয়ে চায়।মেয়েটা পুনরায় তাকে অধিকার দেখাচ্ছে। কত্তবড় সাহস।বেয়াদব।
নিস্তব্ধতা ভাইয়ের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“ ভাইয়া একটা সরিই তো বলে দে না।”
আদ্রিত জবাব দেয় না।
নিস্তব্ধতা মাহরিসা কে পুনরায় গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয় ।
নিস্তব্ধতা সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
“ চলুন আমরা সাইডে গিয়ে দাঁড়াই।তুমি কথা বলো ভাইয়া।”
সকলে সাইডে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ায়।
দু মিনিট পার হতেই, বর-কনে কি করছে দেখার উদ্দেশ্যে দুষ্টু বিদ্যুৎ আঁড় চোখে পিছু ঘুরে চায়, আদ্রিতের চোখে চোখ পরতেই সে দাঁত কেলিয়ে হাসে।
ধরা পরা চোরের ন্যায় মুখ করে চট করে সামনে ঘুরে।
সামনে ঘুরেও সে কান খাড়া করে রাখে আদ্রিতের মুখ হতে সরি শোনার উদ্দেশ্যে।
আহাঃ বেচারা এতকাল পর কাউকে সরি বলবে আর সে নিজ কানে শ্রবণ করবে না।তা কি হয়।উহু।
মাহরিসা থম মেরে বসে।
আদ্রিত অদ্ভুত কাজ করে বসে।
মাহরিসার হাতখানা হুট করেই শক্ত করে চেপে ধরে কোনো ইশারা ব্যতীত।
“ উউহু। “
“ সমস্যা কি তোর? একটু হাতই তো ধরেছি এভাবে শব্দ করতে হবে?”
মাহরিসা ছলছল চোখে চায়।
লোকটা বুঝবে কেমন করে, কি জোড়ে সে তার হাত চেপে ধরেছে। হাত তো নয় আস্ত লোহা মানবের।হাত ধরা তো নয় তাকে শাস্তি দেওয়া।দানব একটা।
সবেতেই শক্তি খাটানো।
মাহরিসা’র ভিজে আশা চক্ষুদ্বয় অবলোকন করে আদ্রিত শ্বাস ছাড়ে।
“ ওকে, ওকে, বলছি।”
নিজের ধরে রাখা হাতের মুঠো ঢিল করে আদ্রিত পাশে বসা মাহরিসার দিকে মাথা নিচু করে সামান্য ঝুঁকে।
মাহরিসার কানের কাছে ফু দেয়।
মাহরিসা চোখ বন্ধ করে দেয়।
আদ্রিত ফিসফিস করে মাদকীয় কন্ঠে সুধায়,
“ আ’ম সরি মেরিগোল্ড। বাট নিজের অস্তিত্ব আজ তোকে আমায় সঁপে দিতেই হবে। নো কম্প্রমাইজ মেরিগোল্ড। “
আদ্রিতের ফিসফিসালো নেশাক্ত কথার স্বরে মাহরিসার নিজেকে মাতাল মনে হয়।
কোনো এক অদ্ভুত ঘোরে সে চোখ বন্ধ করে দুবার কবুল উচ্চারণ করে,
“ কবুল,কবুল । “
কাজী সাহেব এতক্ষণ কান খাঁড়া করে ছিল।আদ্রিতের ফিসফিসানো কথাটুকু সে শুনতে না পেলেও মাহরিসার কবুল শোনার সঙ্গে সঙ্গে সে চিৎকার করে উঠে,
“ কবুল বলেছে, কবুল বলেছে।আর একবার বলো মা কবুল?”
সকলে চমকে চায়।
আদ্রিত হতাশ কন্ঠে বলে,
“ তিন কবুল হয়নি কাজী সাহেব? তখন কি বলেছিল তাহলে,শুনেন,নি?”
কাজী সাহেব থতমত খেলেন। বললেন,
“ ওভাবে বললে হয় নাকি বাজান?”
“ হয় সব ভাবেই হয়।”
কিন্তু মাহরিসা আদ্রিতের উপরে মাতুব্বরি করে নিঃশব্দে।
আরেকবার কবুল বলতে সে দ্বিধা করে না।
“ কবুল।”
“ আলহামদুলিল্লাহ। “
কাজী সহ সকলে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে।
বিদ্যুৎ সিটি বাজায় আঙুলের সহিত।
পকেট থেকে বের করে দুটো চিকন ফুলের মালা সে দু’জনের গলায় পরিয়ে দেয়।
জাওয়াদ অবাক কন্ঠে সুধায়,
“এগুলো কখন কিনলে?”
বিদ্যুৎ দুষ্টু হেসে বলে,
“ কিনতে নয়, করতে হয় বস করতে হয়।একমাত্র বন্ধুর বিয়ে বলে কথা।”
আবার ফিসফিস করে বলে,
“ বোনের মালা চুরি করে এনেছি।”
বলেই বিদ্যুৎ চোখ টিবি দেয়।
জাওয়াদ চোখ বড় বড় করে চায়।সুধায়,
“ আশ্চর্য তোমরা সবাই এমন অদ্ভুত কেন।”
বন্ধু’র ওসব কথায় আদ্রিতের কান নেই।সে হাফ ছাড়ে।
খানিক্ষণ আগে ধরা মাহরিসা হাতখানা সে এখনো ছাড়েনি।
শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই সে মাহরিসার হাত খানা আরো জোড়ে চেপে ধরে।
যেন সে স্পষ্ট করে জানান দিচ্ছে। এখন থেকে, এই মুহুর্ত থেকে আদ্রিতের মেরিগোল্ড শুধুই তার।শুধুই তার।
কাজী সাহেব এবারে আদ্রিত আর মাহরিসা কে ভালো করে অবলোকন করে,
এই বোধহয় তিনি প্রথম কোনো বিয়ে পড়াচ্ছেন যেখানে কনে স্বয়ং নিজে বাসার নরমাল থ্রি পিচ পরিহিত।
আর বর পরিহিত ডাক্তারী এপ্রোন।আশ্চর্য, আশ্চর্য, আশ্চর্য।
তারওপর এমন ঘটনা সে বোধহয় খুব কমই দেখেছেন।যেখানে বর থাপ্পড় মেরে কনে কে কবুল বলায়।
ইয়া খোদা এই সমান্য দুনিয়ায় তুমি আমায় আর কি কি দেখাতে চাও।দেখিয়ে আমায় উপরে তুলে নাও।
কাজী সাহেবের মন ছিঃ ছিঃ করে, নিজের গালে নিজে থাপ্পড় মেরে বলে,
“ ছিঃ তোমায় উঠিয়ে নিলে তোমার বউয়ের কি হবে।স্বার্থপর,নিজের বউয়ের কথা ভাববে না।”
নিজেকে তিরস্কার জানায় সে।এসব আজব প্রাণীর জন্য কাজী সাহেব তার বউয়ের হক নষ্ট করতে পারবে না।কিছুতেই না।
এবারে আসে কাবিনে সাইন করার পালা।
আদ্রিত দ্রুততার সহিত কলমের খসখস শব্দ তুলে সাইন করে দেয়।যেন তার সবেতেই বড্ড তাড়া।
কাজী সাহেব ভাবলেন যাক এবারে বুঝি বিয়ের ঝামেলা শেষ হবে। ল্যাটা চুকাবে।কিন্তু না।মুরুব্বির ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে দেয় মাহরিসা।নিজের অভিমত নিয়ে কাজী সাহেব সাইন করার স্থান মাহরিসা কে দেখানোর পরেও মাহরিসা সাইন করে না।
কাজী সাহেবের মনে হলো, না এবার তার বুড়িগঙ্গায় ঝাপ দিতেই হবে।আর কোনো উপায় নেই।
মাহরিসা নিস্তব্ধতা’র উদ্দেশ্যে ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল,
“ আপু তোমার ভাইকে বলো আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে তবেই আমি সাইন করবো। নয় তো নয়।”
নিস্তব্ধতা চেখ বন্ধ করে নিশ্বাস নেয়।
এত ধৈর্য্য মেয়েটাকে খোদা কি করে দিলো।অবিশ্বাস্য।
তার তো এক্ষুনি বুকে ব্যাথা শুরু হয়েছে।আহ।
জাওয়াদ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“কাজী সাহেব আমাদের সঙ্গে একটু বাহিরে আসুন।আমরা তবে বাহিরে যাচ্ছি। মাহরিসা তুমি প্রশ্ন করো।ঠিকআছে। এই তো আমরা আসছি।
তোমায় পুনরায় মারতে চাইলে আমাদের জানাবে।ব্যাটার হাত কেটে রেখে দেব।একদম চিন্তা করো না বোন।”
আদ্রিত করুণ স্বরে বলে,
“ ভাই…”
জাওয়াদ সহ সকলে হেসে বেরিয়ে যায়।
“ হঠাৎ এত সাহস উদ্ধার করে আনলি কোথা থেকে হুম? কবুল বলতেই এত সাহস বেড়ে গেল তোর যে এখন আমায় তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে?”
আদ্রিতের কন্ঠে অবিশ্বাস্যতার লেশ।
মাহরিসার তাতে যায় আসে না।
মাহরিসা নাক টানে।সংকোচ বিহীন আদ্রিতের এপ্রোনে নিজের নোংরা নাক খানা মুছে ফেলে চট করে।
আদ্রিত চিৎকার করে উঠে,
“ খবরদার। যদি আর একবার নোংরামি করেছিস। পিচাশের একটা লিমিট থাকে।আশ্চর্য।”
“ আমায় এত অপছন্দ হলে বিয়ে কেন করছো আদু ভাইয়া।”
“ তার কৈফিয়ত তোকে আমায় দিতে হবে?”
মাহরিসা মাথা নাড়ায়।
আঁধা ঘন্টা’র মতন সময় পার হয়।
নিস্তব্ধতা সমানে পায়চারি করছে ভিতরে দুজনের মাঝে কি কথা হচ্ছে সে জানেনা।শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে মারু আবার বেফাস কিছু না বলে মার খেয়ে বসে।তাহলে তো কেলেংকারী।
জাওয়াদ তাকে আশ্বস্ত করে বলে,
“ টেনশন করো না নিস্তব্ধতা। কিছু হবে না। মাহরিসা ততটাও বোকা নয়।এবং আত্মসম্মানহীন মেয়েও নয়।নয়তো সকলের সামনে আদ্রিতকে কে দিয়ে ক্ষমা চাইয়ে ও নিতো না।
সম্পর্কের মাঝে রাগ অভিমান হবেই স্বাভাবিক। তবে তার লিমিট ক্রস হলে অপরজনকে তার সম্মান রক্ষার্থে ক্ষমা তো চাইতেই হবে।
মাহরিসাও সেটাই করেছে।
তাছাড়া দুজনের শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। আদ্রিতকে কিছু প্রশ্ন করার মাহরিসার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আর আদ্রিত তার জবাব দিতে বাঁধ্য।”
নিস্তব্ধতা নিচু কন্ঠে চকচকে চোখে চেয়ে বলে,
“ তাই নাকি বিবাহের এত পাওয়ার প্রফেসর?
তবে কি চাইলে হাসবেন্ড ব্যাটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নি নাঁচানোও যাবে?”
জাওয়াদ হেসে বলে,
“ যেতেই পারে। “
নিস্তব্ধতা দাঁত কেলিয়ে হাসে।
জাওয়াদ বুদ্ধি দেয়।
“ কাবিনে এমন কিছু চাইবে যাতে বর তোমার নিকট বাঁধা পরে। “
নিস্তব্ধতা কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে বলে,
“ এই এক মিনিট ভাই তখন কাবিনে কি লিখতে বলেছিলো? আপনি দেখেছিলেন?”
জাওয়াদ মাথা নাড়ায়।
তখনি ভেতর থেকে ডাক আসে আদ্রিতের।
হন্তদন্ত হয়ে সকলে ভেরতে ঢোকে তাদের মাঝের কাজী সাহেবের তাড়া সবচেয় বেশি। বাড়িতে তার বউ অপেক্ষা করছে কি না।
কনের সাইনের জায়গায় সাইন দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচে কাজী সাহেব।
অবশেষে,অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
নিস্তব্ধতা এবার নিজের আটকে রাখা শ্বাস টেনে নেয়। যাক শেষ ভালো যার সব ভালো তার।
বিদ্যুৎ আফসোস করে মাহরিসার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ,
“ এটা কি করলেন ভাবী।আপনার সাইন করার মুহুর্তের একটু স্মৃতি রাখতে চেয়ে ভিডিও করতে চেয়েছিলাম তার সুযোগ টাও দিলেন না।”
মাহরিসা জবাব দিলো না।
বরং কান্না মিশ্রিত বদনেই সে আদ্রিতের পানে অগ্নি চোখে চেয়ে।
রাত অনেক হয়েছে বিধায়, আদ্রিত জাওয়াদ কে নিস্তব্ধতাকে ওসমান ভিলায় নামিয়ে দিয়ে আসতে বলল।
জাওয়াদ নিজেও মাথা নেড়ে সে পথে আগালো।
নিস্তব্ধতা ও আর কথা বাড়ালো না।শুধু গাড়িতে ওঠার আগে মাহরিসার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“ ভাইয়ের কথার বাহিরে যাস না মারু।একবার রেগে গেলে কেলেংকারী ঘটে যাবে।
তুই হয়তো বুঝতেই পারছিস আদ্রিত শেখের রাগের পারদ তোকে বিয়ের পিরিতে অবদি টেনে আনলো।তবে বোঝ তার রাগের পারদের উত্তপ্ততার মাত্রা কতখানি ভাইয়ের সব কথা শুনে চলিস।খবরদার। তাছাড়া ভাই আমার হলে কি হবে।আমার থেকে ভাই কে বোধহয় তুইই ভালো চিনিস।”
মাহরিসা কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।
নিস্তব্ধতা গাড়িতে উঠে বসে।
গাড়ি চলে নিজের গতিতে।
জাওয়াদ এর মাঝে নিস্তব্ধতাকে রহস্যময় ভঙ্গিতে হেসে প্রশ্ন করে,
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ২১
“ সাদাফ কে বিয়েটা কেন করলে না নিস্তব্ধতা? পছন্দ করো না ওকে? অন্য কাউকে ভালোবাসো?”
নিস্তব্ধতা বাইরে তাকিয়ে মাঝ রাতের নির্জনতায় ছেয়ে যাওয়া প্রকৃতি উপলব্ধি করছিলো।
হঠাৎ জাওয়াদের প্রশ্নে চমকে উঠে তার পানে চাইলো।