ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৮
মাহিরা ইসলাম মাহী
নিশুটি রাত। উত্তাল সমীরণ।
চারপাশে বাতাসের শো শো শব্দ কানে এসে বারি খাচ্ছে।
চারজন মানব-মানবী’র অবস্থান এই মুহুর্তে মাহীনদের দোতালা বাড়িটার ছাঁদে।
নীবিড় চোখ গোল গোল করে দেখতে ব্যস্ত তার আদ্রিত ভাই, নিজ বোন মাহরিসা এবং তার শত্রু কিংবা মিত্র সে যাইহোক মিস নাউডুবা চশমিশ।
মিনিট দশেক আগের বলা আদ্রিতের বাক্যখানা এখনো হজম হচ্ছে না নীবিড়ের।মূলত সে হজম করতে পারছে না। কি সর্বনাশ বদহজম হলো নাকি। তাই হবে বোধহয় নিশ্চিত।
এত্ত বড় সত্যি কথাটা তার থেকে সকলে লুকিয়ে গেল? কিভাবে সম্ভব? কিভাবে।
ব্রো এভাবে বেইমানি করতে পারলো তার সঙ্গে?
কিভাবে পারলো?
আদ্রিত কে দেখে সে যখন জিজ্ঞেস করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ এতরাতে তুমি এখানে কি করছো ব্রো?”
“ বাসর করতে এসেছিলাম শুধুমাত্র তোর আর তোর বাপের কারণে পারলাম না।তোরা ভাই, বোন, বাপে মিলে আমার জাত শত্রু হয়ে দাঁড়ালি কোন দুঃখে বলতো? তোদের জন্য কি সালার বাসর টাও করতে পারবোনা?”
নীবিড়ের চক্ষু কোটর থেকে বের হবার উপক্রম।
বাসর,শত্রু এসবের মানে টাকি।
“ ব্রো তুমি কিছু খেয়ে আসো নি তো হসপিটাল থেকে?”
“ তোর কি মনে হয় ডক্টরদের জন্য হসপিটালে গাঁজা সাপ্লাই দেওয়া হয়?”
“ না..না মানে বলছিলাম কি তুমি উল্টাপাল্টা বকছো রাইট? আমার নাউডুবা চশমিশের কাছে আসো নি তো? একটু ভেবে বলো।”
“ ছেহ বউ থাকতে পরকিয়া করতে যাবো কোন দুঃখে রে মহিষের বাচ্চা। “
নীবিড়ের চোখে জল ছলছল,
“ তোমার বউটা কে ব্রো?”
“ তোর বোন কয়টা ইডিয়েট? তোর বাপ কি গোপনে আরেকটা বিবাহ করে বউ বাচ্চা পালছে? কি মনে হয় তোর?”
“ না তো।”
“ তো?”
“ একটাই তো।”
“ তাহলে আমার বউ কে?”
মাথায় হাত দিয়ে নীবিড় ঠাস করে বসে পরেছিল মাটিতে।
এই মুহুর্তে নীবিড়ের মুখখানি শুকিয়ে এইটুকু হয়ে গেল আফসোসে।
সে কাঁদো কাঁদো মুখ করে করুণ কন্ঠে বলল,
“ এত্ত বড় একটা বিষয় তোমরা আমার থেকে গোপন করতে পারলে ব্রো?”
নাওমী ভেঙচি কাটে।বিরবির করে,
“ ইশশ মহিষের বাচ্চার ঢং দেখ।যেন ভাঁজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা।
এত বার দেখে দেখেও বুঝিস নি কিছু
তোর বুদ্ধি মাথায় না হাঁটুতে রে হতচ্ছাড়া। “
মাহরিসা ভাইয়ের পানে গোমড়া মুখ করে চেয়ে।
অসভ্য লোকটা দিন কের দিন তাকে লজ্জায় ফেলে মেরে ফেলার পায়তারা করছে।
কবে না জানি মাহরিসার জান টাই বেরিয়ে যায় খাঁচা থেকে।
নীবিড় মাহরিসার পানে চেয়ে সুধালো,
“ দু’জনে মিলে আমার সঙ্গে বেইমানি করলি তো।আল্লাহ গজব পরবে তোরের উপর..”
আদ্রিত চট করে নীবিড়ের মুখ চেপে ধরলো,
“ খবরদার আর একটু যদি উল্টাপাল্টা বলেছিস তো তোদের দুইভাই বোনকে একসঙ্গে বুড়িগঙ্গায় ফেলো দিয়ে আসবো।”
তিনজন মানব মানবী আদ্রিতের রাগী চোখ মুখের দিকে পাংশুটে দৃষ্টিতে চেয়ে।
সকলের মুখে আতঙ্ক।
নীবিড় কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
“ ব্রো সামনের দুটোকে নিঃসন্দেহে ফেলে দিয়ে আসো।আমায় রক্ষা করো।এটলিস্ট ওদের মতো ভারী বস্তাগুলো ফেলতে তোমার তো সাহায্য কারীর দরকার পরবে।”
নাওমী চোখ বড় বড় করে চায়,
“ ছিঃ ছিঃ ছিঃ মহিষের বাচ্চাটা কতবড় স্বার্থপর দেখেছ তোমরা?এক নম্বরের অকৃতজ্ঞ একটা।ছেহ।”
আদ্রিত জবাবে গমগমে কন্ঠে সুধালো,
“ উহু কাউকে দরকার নেই। বাপ ছেলে জীবনের ভিলেন দুটোকে আগে ফেলতে হবে। তারপর বউয়ের সিরিয়াল। “
“ সিরিয়াল বলছো কি।বউয়ের লাইন লাগিয়েছো নাকি ব্রো?”
আদ্রিত রক্তচক্ষু বদনে নীবিড়ের পানে চায়।
নাওমী ফিক করে হেসে দেয়।
এতক্ষণে চেপে রাখা হাসিটুকু চেয়েও আটকে রাখতে পারলো না।অবশেষে বাহিরে বেরিয়েই এলো।
নীবিড় অবাক চোখে তার সে হাসির পানে চেয়ে।
নীবিড়ের হঠাৎ অদ্ভুত দৃষ্টি লক্ষ করে নাওমী থেমে গেল। মুহুর্তে চুপসে গেল তার হাসতে থাকা মুখশ্রী খানা।
চোখের চশমাটা ঠিক করার ভঙ্গি করে নাকের ডগায় ঠেলে আঁড় চোখে চাইলো।
পুনরায় নীবিড়ের একই দৃষ্টির সাক্ষী হয়ে থতমত খেল।
চুপচাপ বসে রইলো মুখে কুলুপ এঁটে।
ভার্সিটির শেষ ঘন্টা, রৌদ্রের প্রখরতা প্রচন্ড।
সূর্যিমামা মাথার উপর মহা আনন্দে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখছে সকলকে।
কাশফি কপালে হাত ঠেকিয়ে কোনো রকমে ক্যামপাস ঢেঙিয়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র।
ততক্ষণাৎ মুন্না নামের সিনিয়র এক ভাইয়া কাশফির পথ আটকে দাঁড়ায়।
“ কি খবর কেমন আছো কাশফি?”
কাশফি অবাক দৃষ্টিতে ছেলেটার পানে চায়।
সে লক্ষ করছে ইদানীং ছেলেটা তাকে ফলো করছে।
তার নামটাও জানে দেখি কি আশ্চর্য।
সৌজন্য রক্ষার্থে কাশফি মেকি হেসে বলল,
“ ভালো ভাইয়া।”
“আমায় জিজ্ঞেস করলে না কেমন আছি?”
কাশফি বোকা হাসলো।
“ তোমার হাসিটা ও কিন্তু খুব সুন্দর কাশফি।”
“ আ..মি আজ বরং আসি ভা..ইয়া।বা..ড়ি যেতে হবে।”
“ তোমরা তোতলামো কথা গুলো শুনতে কিন্তু ভালোই লাগে।”
কাশফি কোনো রকমে ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে।
আশ্চর্য! ভার্সিটির ছেলেগুলো এমন গায়ে পরা স্বভাবের কেন হয়।
হঠাৎ তীব্র বেগে নীলাদ্র’র বাইক খানা হুট করে কাশফির সামনে এসে থামাতেই চমকে উঠে দুই হাত পিছিয়ে গেল ও।
ভয়ে বুকের মাঝে ধুকপুক ধ্বনি বাজছে তার ক্রমাগত।
কাশফি একপলক নীবিড়ের দিকে চেয়ে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে নেয়।
“ দাঁড়াও।”
কাশফি থমকে দাঁড়িয়ে যায়।
“ ক..কেন? “
“ উঠে এসো।”
কাশফি গোলগোল চোখ করে চায়।
“ ম..মানে?”
“ কাজ আছে উঠো।”
“ কো..কোথায়?”
“ আমার মাথায়।এসো এসো। “
কাশফি সত্যিই সত্যিই বোকার মতন হাত বাড়িয়ে দিলো।
নীলাদ্র চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।
“ হুপিং কাশি বাইকের পেছনে উঠো।মাথায় উঠে বসবে কোথায়। অবশ্য তুমি মাইন্ড না করলে কোলে বসতে পারো।আ’ম নট ইন্টারেস্টেড ইউ।”
কাশফি চোখ পিটপিট করে চাইলো।
নীল সমুদ্রের অপমানে গাল ফুলিয়ে রাখলো।
অভিমানে সে সামনে হাটা দেয়।
বিরবির করে,
“ ইন্টারেস্টেড নস তো বাইকে উঠবি কেন রে
“ এই মেয়ে উঠতে বসেছি তোমায়।”
“ যা..যাবো না আপনার সঙ্গে। “
“ রাজকুমারের গল্পটা বলবো শুনবে না?”
কাশফির চোখমুখ চকচক করে উঠে।ঘুরে দাঁড়ায় সে সঙ্গে সঙ্গে।
“ পুরোটা বলবেন তো?”
নীলাদ্র মাথা নাড়ায়।
“ সত্যিই বলবেন? প্রমিস করুণ?”
“ বলবো।মনে রেখ হুপিং কাশি।গল্প শেষে তোমার দেওয়া কথা ওও রাখতে হবে।
পারবে তো রাজকুমারের দুঃখ ঘুচাতে?”
“ চেষ্টা করবো নীল সমুদ্র। “
“ উহু। চেষ্টা নয়।দুঃখ ঘুচাতে না পারলে তোমায় শাস্তি পেতে হবে।রাজি?”
কাশফও শুষ্ক ঢোক গিললো।
জোড়ে জোড়ে মাথা দুলালো।
সে রাজি।
দুঃখ ঘুচাতে পারবে কি পারবে না কিভাবে লাঘব করবে সেসব পরে দেখা যাবে।আগে সে পুরোটা শুনুক তো অভদ্র নীল সমুদ্রের গোপন কুঠুরি হতে।
কাশফি দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠে বসলো বাইকের পেছনে।
নীলাদ্র বিরবির করে বলল,
“ হুপিংকাশি চলন্ত বাইকে একদম ডিস্টার্ব করবে না আমায়।তোমার ছোঁয়া ভয়ংকর।
বারবার আমার বাইকের পেছনে উঠে আমার বাইকে মেয়ে মানুষ না উঠার রেকর্ড ভাঙছো।এর মাশুল তো তোমায় অবশ্যই গুনতে হবে।নিঃসন্দেহে। “
“ তবে মেয়ে মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস তুই অবশেষে? কচি মেয়ে বুঝি?”
ভার্সিটিতে সাদাফ অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধতার সামনে।
দু’দিকের প্যারায় তার জীবন ত্যানাত্যানা।
শেষমেশ আদৌও বাঁচতে পারবে কি না কে জানে।
“কি হলো উত্তর দিলি না যে।কচি মেয়ে কি তোর জবান বন্ধ করে দিলো নাকি?”
“ করতেই পারে।তোর তো জাওরা ব্যাডা আছে
আমার কেউ থাকলে সমস্যা কোথায়।”
“ বার বার একই কথা কেন বলিস বলতো? বলেছিনা।ওসন জাওরা কাউয়ার আমার দরকার নেই।”
“ নিষেধাজ্ঞা জারিও তো করিস নি।”
তীব্র আক্রোশে সাদাফের চুলগুলো পরপর টেনে ধরলো নিস্তব্ধতা।
নীলাদ্র নিজ ফ্লাটের সামনে এসে বাইক থামাতেই কাশফি অবাক কন্ঠে বলল,
“ এখানে কেন এলাম আমরা?”
“ সারা রাস্তা জ্বালাতন করেছ আমায় হুপিংকাশি। এবারে চুপ না করলে তিনতলা থেকে নির্ঘাত তোমায় নিচে ছুঁড়ে ফেলবো আমি।”
কাশফি থতমত খেয়ে চায়।
দু’জনের পিছু পিছু মনসুর নিজেও হাজির হয়।দুজনের গতিবিধি লক্ষ করে সে সঙ্গে সঙ্গে ফোন লাগায় তার স্যার কে।
“ স্যার ছোট সাহেব তো মেয়েটাকে নিজ বাইকের পেছনে চরিয়ে আবারো হাজির হয়েছে নিজ ফ্লাটে।আপনি কি একবার আসবেন স্যার?”
ওপাশে আরাধ্য নির্লিপ্ত।
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৭
“ নজর রাখো।ওদের কার্যে ব্যাঘাত ঘটিয়ো না সাবধান। চাকরিটা বাঁচাতে চাও তো?”
মনসুর শুষ্ক ঢোক গিলে।
ইশশ তার স্যারটাও না বড্ড দুষ্টু।কথায় কথায় তার অবলা,ভোলাভালা চাকরি টাকে লেজ এর মতন মাঝে টানার দরকার টা কি বুঝিনা বাফু।
আশ্চর্য!