ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৯
মাহিরা ইসলাম মাহী
নীলাদ্র বাইক থেকে নেমে কাশফি কে নামতে আদেশ ছুঁড়ে।
“ এসো।”
“ ভেতরে যেতে হবে কেন? এখানে বলুন না নীল সমুদ্র? “
“ ওকে বলবো না যাও বাসায় যাও?”
নীলাদ্র’র নির্লিপ্ত স্বর।
কাশফি কাঁদো কাঁদো মুখ করে চাইলো।
ছেলেটা এত পাজির পাজি। এমন করে না করতে হয় নাকি মুখের উপর।আহাঃ। ভদ্রতা জ্ঞান টুকু নেই ছেলেটার।
বাড়ি বয়ে নিয়ে এসে এখন তাকে তাড়ানোর ধান্ধা।
পাজি ছেলে।
নীলাদ্র কথা না বাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
কাশফি গাল ফুলিয়ে পিছু পিছু পা বাড়ায়।
একবার গল্পটা শেষ হোক এই কাশফি আর তোর ধারে কাছেও আসবে না হুহ।
প্রচন্ড গরম।
কাশফি রুমে ঢুকেই সোফায় বসে পরে ঠাস করে।
নীলাদ্র চোখ ছোট ছোট করে চায়।
“ শ্বশুর বাড়ি নাকি এটা তোমার? সামান্য ভদ্রতা টুকু তো অন্তত বজায় রাখো।”
“ বাড়ি বয়ে নিয়ে এলো টা কে শুনি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাশফি বলতে ইচ্ছা হলো,কিন্তু জবাব দিলো না।
তার মিকি মাউস হেয়ার ব্যান্ডটা দিয়ে চুলগুলো আরো আঁটোসাটো করে বাঁধার চেষ্টায়।
“ নীল সমুদ্র আপনার ফ্রিজে জুস নেই?”
কাশফি চট করে উঠে দাঁড়ায়। ফ্রিজের দিকে এগিয়ে যেতে নিতেই নীলাদ্র সঙ্গে সঙ্গে পথ আঁটকে দাঁড়ায়। এই খবরদার। আমার ফ্রিজে হাত দেবে না।
“ কেন? গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছেন বুঝি?”
“ সোফায় গিয়ে বসো যাও। “
ধমকে কাশফি পুনরায় গাল ফোলায়।
কি এমন গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছে ফ্রিজে হুহ।যত্তসব ঢং।
কাশফি যখন পুরো রুমে চোখ বুলাতে ব্যস্ত নীলাদ্র তার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিচেনে ঢুকে চট করে ফ্রিজ খুললো।
সাফওয়ানের রেখে যাওয়া ড্রিংসের বোতলগুলো চট করে লুকিয়ে ফেললো।
হাফ ছেড়ে বাঁচলো উফফ।
পিছনে ফিরতেই ভরকে গেল।
কাশফি কোমরে দুহাত রেখে দাঁড়িয়ে।
“ এই কি করছিলেন আপনি? “
“ তু…তুমি।”
কাশফি দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
“ আমার রোগ আপনার ও হয়েছে বুঝি।কি করছিলেন আপনি কিচেনে? “
“ ক..কই কিছু না তো।তুমি কখন এলে?”
“ এই তো মাত্র।”
নীলাদ্র হাফ ছেড়ে ঠাস করে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে পরলো।
কাশফি এলো দু মিনিট পার হতেই।
তার হাতে জুসের প্যাকেট।
নিজের সব কটা দাঁত বের করে হেসে নীলাদ্র কে দেখালো ।
যেন দাঁত দেখানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে সে।
“ আচ্ছা নীল সমুদ্র আমি কি সেদিন আমার ফোনটা এখানে ফেলে গিয়েছিলাম বলুন?”
“ জানিনা।শুনো মেয়ে তোমার ওসব ভাঙা চোরা ফোন দিয়ে না আমার কোনো দরকার নেই? কি ভেবেছ কি আমায় চোর বানাবে?”
“ আহাঃ রাগ করছেন কেন।আমার আসলেই মনে নেই কোথায় যে ফেললাম।বন্ধ ওও পাচ্ছি। মাঝে মাঝে আবার খোলা থাকে কি আশ্চর্য কান্ড বলুন দেখি।আচ্ছা আপনি জানলেন কেমন করে আমার ফোন ভাঙা ছিল?”
“ বেশি কথা বলো তুমি হুপিংকাশি। তোমার দ্বারা কোনো কিছু আস্ত রাখা অসম্ভব সেটা তোমায় দেখলেই বোঝা যায়।তাছাড়া এত আশ্চর্য হওয়ার কি আছে।তোমার বন্ধ ফোনটা ভূতে বোধহয় বারবার চার্জে লাগায়।দেখ গিয়ে।”
“ তার মানে আপনি বলতে চাইছেন ভূতে নিয়েছে আমার ফোনটা?”
“ এখানে বলার কি আছে।”
কাশফি কাঁদো কাঁদো মুখ করে চাইলো।
ফোনের চাইতে তার কভারটার জন্য বেশি মন খারাপ হচ্ছে। তার বন্ধু ডরেমনের ফটো ছিলো কভারে।আহারে।
পঁচা ভূত তার কভার টা অন্তত দিয়ে যেতি।
দুশো টাকার কভার দিয়ে তোর কি কাজ।
যদি একবার তোকে ধরতে কান মলে দেব।
ভূত মহাশয়কে হাজারটা গালি ছুঁড়ে কাশফি জুসের প্যাকেট হাতে সোফায় বসে পরলো পুনরায়।
নীলাদ্র’র দিকে বাড়িয়ে দিল শেষ টুকু।
“ খাবেন? নজর লাগাচ্ছেন আপনি? “
“ ইয়াক! তোমার কি মনে হয় তোমার পোকা ধরার দাঁতের, নোংরা গালের জুস আমি খাবো? অসম্ভব। “
তার দাঁতে পোকা? নোংরা গাল এত বড় অপমান?
সাধের জুস খানা সে অনুভূতি কে মাটি চাপা দিয়ে টেবিলে রেখে দিলো।
কাশফি বিরবির করে,
“ কষ্ট পাস না রে জুস তোকে আমি নিজের টাকা দিয়ে কিনে খাবো।ফ্রিতে কারো অপমান শুনতে হবে না তোর হুহ।”
নীলাদ্র তা আঁড় চোখে পরখ করে চোখ ঘুড়িয়ে নেয় চট করে।
“মুন্না তোমায় কি বলছিলো তখন কাশি?”
নীলাদ্র’র হঠাৎ প্রশ্নে কাশফি থতমত খায়।
“ ক..ক..কই কিছু না তো।”
না চাইতেও কাশফির মনে হচ্ছে সে ঘাবড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আশ্চর্য সামান্য প্রশ্নে এত ঘাবড়ানোর মত তো কিছু হয়নি তাইনা?”
“ সত্যিই কিছু বলে নি? তবে যে দেখতে পেলাম কাশি হেসে হেসে তার ভাইরাস মুন্নার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছিলো। ছিহ ছিহ।নিজের ভাইরাস মানুষের মাঝে ছড়াতে লজ্জা করে না তোমার কাশি?”
“ এই একদম বাজে কথা বলবেন না।”
“ ওও বাজে কথা বুঝি?তবে তোমার ন্যায় আমার চোখেও সমস্যা হয়েছিল বোধহয় তাইনা? কি বলো?”
কাশফি জোরে জোরে মাথা নাড়লো।
“ হ্যাঁ হ্যাঁ ওটাই হবে বোধহয়। আপনার চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে নীল সমুদ্র।চোখের ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। “
“ আসলেই প্রয়োজন?”
কাশফি মাথা নাড়ায়।
“ অবশ্যই। আপনি বরং কালই ডাক্তারের কাছে চলে যান নীল সমুদ্র। “
নীলাদ্র চট করে উঠে কাশফির সামনে এসে দাঁড়ালো। সামান্য ঝুঁকলো।
ভরকে গিয়ে সোফার নরম গদিতে কাশফি আরো ডেবে গেল নিচের দিকে।
শুষ্ক ঢোক গিললো।
নীলাদ্র মাথা নিচু করে বলল,
“ তাই? তা ডুববে নাকি নীল সমুদ্রে?”
কাশফি ড্যাবড্যাব করে চেয়ে অবুঝের ন্যায়।
“ মা..মানে?”
“ তোমার মাথা।”
নীলাদ্র টোকা মারে কাশফির মাথায়।
“উফফ! এটা কি করলেন?”
কাশফি হাতের তালু দিয়ে মাথা ঢলে।
“ গল্প বলবেন কখন? শেষ করুন নীল সমুদ্র। বাসায় যাবো।”
“ তো যাও না কে নিষেধ করেছে?”
“ আর সেই রাজকুমারের কি হবে?”
“ রাজকুমারের আজ মন ভালো নেই সে আজ কথা বলবে না।
তোমায় অন্য দিন গল্প শোনাবো।”
কাশফি রাগে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে উঠলো,
“ কি বললেন আপনিইইই? প্রমিস করেছিলেন আপনি আমায়।”
“ তোমায় তো আমি একবারো প্রমিস করিনি যে আজই শোনাবো।বলেছি বলবো।”
“ মিথ্যুউউউক।”
“ আপনাকে আমি খুন করবো নীল সমুদ্র। আপনার সঙ্গে আড়ি। আর কথা বলবেন না আমার সঙ্গে। “
চট করে নীলাদ্র পিঠে কিল বসিয়ে
কাশফি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে গেল।
“ আঁউচচ।কাশিইই।”
কাশফি বের হতেই নীলাদ্র কাশফি’র রাগ করে রেখে দেওয়া সেই জুস টুকু এক নিঃশ্বাসে চোখ মুখ বুঁজে গিলে ফেলল।
বিরবির করলো,
“ ছিহ। নোংরা মেয়ে?”
রাগ মাথায় চেপে বাড়ি ফিরে কাশফি ঠাস করে ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে।
আশ্চর্যজনক ভাবে একখানা চিরকুট বেরিয়ে আসে।
প্রিয় কাশফুল,
“ তোমায় দেখতে আমার হাজার বাহানা।
আগোচরে কাছে চাই।আপন করে পাই।
তোমার সামনে নিজেকে এলোমেলো হারাই।
কথা বলার শব্দেরা লুকোয় সেই তুমি কাছে এলে।তোমায় কাছে পেলে।
সে কি তুমি বুঝো মেয়ে।নাকি বুঝেও না বোঝার ভাণ করো প্রতিমুহুর্তে?”
রাগে দুঃখে চিঠি খানা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললো সে।
এত রাগ তার কি কারণে? শুধুই অকারণ?
নাকি অহেতুক।
ঘন্টা পেরোয়।সে পুনরায় ছেঁড়া চিরকুট খানা নিয়ে বসে।আঠা দিয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা।
তবে কি দরকার ছিল তা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করার।
অদ্ভুত না বুঝি?
সময়টা কড়া রৌদ্দুরের মূর্ছা যাওয়ার মুহুর্তে।
সূর্যিমামা ধীরে ধীরে নিজ তেজ নিস্তেজ করার বৃহৎ চেষ্টায়।
তৃপ্তির ফ্লাটের কলিংবেল বাজে।
দৌঁড়ে এসে দরজা খুলে সে।
ওপাশে নাওমী কে দেখে অবাক হয়।
নাওমী হেসে বলল,
“ আসলে আন্টি অদিতি গতকাল ভার্সিটিতে যায়নি।এমন কি আজও যায়নি।ফোনটাও তুলছেনা
টেনশন হচ্ছিলো তাই চলে এলাম একবার চট করে।অসুস্থ নাকি আমাদের অতিথি পাখি।”
তৃপ্তি হাসলো।
“ এসো মা ভেতরে এসো। বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে এসে কথা বলো।অদিতি অসুস্থ নয় ঠিক তবে কিছুটা।
ওর মন মেজাজ ভালো নেই। তুমি জানো কিনা আমি জানিনা।ওও তোমাকে বলেছ কি না?”
নাওমী ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে আসে পাশে চোখ বুলায়।
বেশ ছিমছাম গোছানো একটা ফ্লাট।
চারপাশ বেশ সাজানো গোছানো।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে তৃপ্তি আন্টি বেশ তৃপ্তি নিয়ে মেয়েকে নিয়ে সাজিয়ে ঘুছিয়ে সংসার করছে।
বেশ সৌখিন মানুষ। তার পরিপাটি রুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আচ্ছা এত কিছু কি আন্টি একাই করেছেন? অদিতির তো বাবা নেই।
আর তার থেকেও নেই।
তাচ্ছিল্যের হাসলো নাওমী।
আচ্ছা তার বাবা -মা’র এত বিশাল বড় একটা বাড়ি না থেকে যদি এমন ছিমছাম সাজানো গোছানো ছোট্ট খাট্ট একটা সংসার হতো।কেমন হতো তবে?
তারা দুই ভাই বোন সেই ছোট বাসা জুরে লাফিয়ে ঝাপিয়ে বেড়াত তবে কেমন হতো?
কেন তাদের বেলায় হলো না এমনটা?
কেন কিছু কিছু মানুষগুলো এতটা নিষ্ঠুর হলো? কেন?
তৃপ্তি চায়ের ট্রে টা টেবিলো রেখে হেসে বলল,
“ আর কাল তো তোমার বান্ধবী কে দেখতে আসছে।
তুমি অবশ্যই আসবে কিন্তু মা।আমি তো ওর নতুন বন্ধু-বান্ধব কাউকে চিনি না।জানাতেও পারছি না।তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে।প্রমিস করো।”
তৃপ্তি হঠাৎ বাক্যে নাওমী চমকে চায়।
“ জ্বী জ্বী আন্টি কিছু বললেন?”
তৃপ্তি নাওমীর চোখ মুখ লক্ষ করে।
নাওমীর ছোট বেলার তৃপ্তি নিখিল আর শিশু অদিতির একটি ফটোফ্রেমের দিকে চেয়ে।
তৃপ্তি কোনো প্রশ্ন করলো না নাওমীকে বরং মুচকি হেসে নাওমীর হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে আগের কথাটা পুনরায় রিপিট করলো।
নাওমী হেসে চা নিয়ে তাতে চুমুক দিলো।
“ আহাঃ আন্টির হাতের চা টাও বেশ ভালো।”
বলল,
“ অবশ্যই আসবো আন্টি।আমার বান্ধবীর বিয়ের পাত্র দেখতে আমি আসবো না তা কি হয় নাকি।আমি অবশ্যই আসবো।আপনি একদম চিন্তা করবেন না।”
“ যাও মা তুমি অদিতির সঙ্গে একটু দেখা করে আসো।ওও রুমেই আছে।”
নাওমী চায়ের কাপটা রেখে উঠে দাঁড়ালো।
চট করে তৃপ্তি কে অবাক করে দিয়ে তাকে আলিঙ্গন করে মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলল,
“ আপনি খুব ভালো মা এবং একজন খুব ভালো ওয়াইফ আন্টি।বেস্ট অফ লাক।থ্যাংকিউ ফর ইউর বেস্ট চা ট্রিট।”
তৃপ্তি টিপটিপ করে চাইলো।
নাওমীর কথার অর্থ না বুঝলেও তার ভালো লাগছে কারো থেকে নিজ ভালো মা, ওয়াইফ হবার প্রশংসা শুনে তার ভীষণ ভালো লাগছে।
তৃপ্তি আজ পুনরায় উপলব্ধি করতে পারলো।
মানুষ চাইলে সব করতে পারে। সব।শুধু দরকার ওপর ওয়ালার একটু রহমত।
তৃপ্তি মনে মনে আশা এবং তাসফিকে আজও ধন্যবাদ জানালো।
সঙ্গে আর একজন বিশেষ মানুষকে তার প্রকৃত বন্ধু সুজন কে।
সঙ্গে নিস্তব্ধ কে তাকে অবহেলা করার জন্য। সেদিন পার্কে তাকে থাপ্পড় মেরে তার জায়গাটা তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।
মানুষ গুলোর জন্যই তো আজ সে এ পর্যন্ত আসার সুযোগ পেয়েছে।তার অতিথি পাখিকে পেয়েছে।
তৃপ্তি খাটে শুয়ে আছে।
নাওমী গিয়ে তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
অদিতি উঠে পিছু ঘরে নাওমীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
নাওমী নিঃশব্দে বান্ধবীর মাথায় হাত বুলায়।
“ কুল ডাউন মাই বেবি। এত হাইপার হয় না।রিলাক্স। “
“ কাল আসবি তো?”
“ আসবো বোকা মেয়ে, আসবো।আমি না আসলে হয় নাকি।”
নাওমী অদিতির গলায় কাতুকুতু দিতেই অদিতি খিলখিল করে হেসে উঠলো।
“ এত সুরসুরি আসে কোথা থেকে তোমার হুম।বর যখন জাপ্টে ধরবে করবে কি।বলি আপনার বর মহাশয় লাভ বাইট টা দিবে কোথায় শুনি?”
“ যাহ অসভ্য মেয়ে।”
অদিতি অকারণে লজ্জা পায়।
ভুলতে চায় পেছনের কথা।কিন্তু আদৌও ভোলা সম্ভব কি এত এত অনুভূতি?
উহু।না তো।
আশা যখন বিছানা গোছাতে ব্যস্ত সুজন পেছন থেকে এসে অর্ধাঙ্গিনীকে আলিঙ্গন করে।
আশা ছিঁটকে সরে যায়।
রাগে কটমট করে চায়,
“ ইশশ বুড়ো বয়সে ভীমরতি। যত্তসব। “
“ আশ্চর্য! শুনো মেয়ে তোমার কি মনে হয় হয় আমি বুড়ো হয়ে গিয়েছি? মোটেও না।শরীরের বয়স কি আর আসল বয়স হলো? মনের বয়সই হচ্ছে আসল বয়স।”
“ ইশশ আসছে।উনি বুড়ো নন চুল গুলো পাক ধরেছে বাতাসে।”
“ অবশ্যই কি যে বলিস না বউ ওগুলো তো বাতাসেই পাক ধরে জানিস না। চাইলে এখনো তোকে দশটা বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।”
আশা ভেঙচি কাটলো।
“ কোনো দরকার নেই আমার দশটা বাচ্চার। বাচ্চা গুলো পেলেছে কে? দুটো কে মানুষ করতে হিমসিম খাচ্ছি এসেছে দশটার কথা বলতে।”
সুজন চট করে আশা’র গালে চুমু খায়।
“ আরেকটা চুমু খাই বউ?”
আশা চোখ লাল করে চায়।
“ খবরদার না। ইশার্কি ছেড়ে ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুণ।
যে বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে খেলার কথা সেখানে উনি ঘরের দ্বার দিয়ে বসে আছে আশ্চর্য মানুষ। “
“ কি যে বলো না।তোমাকে বিয়ে করেছিলাম কত বছর বয়সে বলোতো? ভুলে গেলে।”
“ আপনি না চুপ করে থাকবেন একদম। সব কটা পেয়েছে বাপের স্বভাব। জ্বালিয়ে খেল।“
দরজার সিটকিনি তুলে আশা ঠাস করে দরজা লাগিয়ে বেরিয়ে গেল।
সেই শব্দে কেঁপে উঠলো সুজন সহ ড্রয়িংরুমে বসা সাদাফ আর কাশফিও ওও।
ভাইবোন দুজনে বুঝতে পারলো তাদের মায়ের রাগ তুঙ্গে।
সাদাফ কেটে পরার ধান্ধা করতেই কাশফি তার হাত টেনে ধরে রেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
আশা তেরে এলো।রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“ তোকে কালই একবারে বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরবো।সুজাইন্নার বাচ্চা যদি গড়িমসি করেছিস বিশ্বাস কর তোকে মালবাহী ট্রাকের নিচে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আসবো এই আমি।”
সাদাফ কাশফির ধরে রাখা হাতের দিকে চোখ গরম করে চায়।
কাশফি দাঁত কেলিয়ে হাসলো।
“ এই কাশফি অনলাইনে শেরওয়ানি দেখতো।
লাল রঙের একটা বেনারসি ওও দেখ।”
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৩৮
কাশফি বাধ্য মেয়ের ন্যায় মাথা নাড়লো।
সাদাফের ইচ্ছে হলো পাতাল খুলে সে পাতালে গিয়ে লুকাক।মনে হচ্ছে কাল মা তাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।আর তার নিস্তার নেই কি হবে তার।
কি হবে?
ইয়া খোদা তুমি রহম করো তোমার এই অবলা বান্দার প্রতি।একটু খানি।এই এত্তুখানি একদম বেশি না।