ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৯
মাহিরা ইসলাম মাহী
কাশফির ভাষ্যমতে এই মুহুর্তে তার হৃদয়ের পরিস্থিতি ভয়ংকর। ঠিক যেমন উপকূলে বসবাসকৃত মানুষের ঘরবাড়ি বন্যায় ভেঙে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, ঠিক তেমনি ভয়ংকর কাশফির হৃদয়ের অবস্থা।
“কি ব্যাপার, বললে না তো কাশফি কেমন আছো?”
সাফওয়ানের প্রশ্নে কাশফি মেকি হাসলো।
“ সাপুরের বাচ্চা দেখতে পাচ্ছিস না হুপিংকাশি হসপিটালে? হসপিটালে তুই ভালো থাকিস? তোর বউ ভালো থাকবে?”
নীলাদ্র দাঁতে দাঁত চেপে সকলের অলক্ষ্যে সাফওয়ানের পায়ে পাড়া দিয়ে ধরে।
পায়ে জ্বালাময়ী ব্যথা অনুভব করতেই সাফওয়ানের চোখ মুখ শুঁকিয়ে গেল,
“ ভালো ভাইয়া..”
“ থাক থাক,ঠিকআছে, বোন আমি বুঝে গেছি তুমি অন্নেক ভালো আছো..”
নীলাদ্র পুনরায় চোখ পাকিয়ে তাকালো।সাফওয়ান সঙ্গে সঙ্গে মেকি হেসে কথা ঘুরালো,
“ না না আমি বুঝতে পেরেছি ভালো নেই তুমি একদম ভালো নেই।”
নাওমী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভাইকে পরখ করতে ব্যস্ত।
ইদানীং তার মারকুটে ভাইকে বড্ড বেশিই বেসামাল লাগছে নাকি সেই চোখে বেশি দেখতে শুরু করেছে কোনটা।বুঝতে পারছেনা।
কাশফি হতবিহব্বল দৃষ্টিতে একবার নীলাদ্র’র পানে চায় তো একবার, সাফওয়ানের পানে।
সে আসলে বুঝতে পারছে না কিছু।
তার বোকা বোকা , ভয়ার্থ দৃষ্টি দিয়ে সকলকে ফেলে নাওমীর উপর গিয়ে থামে।
নাওমী আবারো মিষ্টি করে হাসলো।
কাশফির ভয় বেড়ে তাতে দ্বিগুণ হয়।
আহাঃ পৃথিবীতে এত এত চিন্তার দলেরা আগমন ঘটালো কেমন করে?
সকলে বুঝি এবারে এক জোট হয়ে কাশফির উপরেই ক্ষেপেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আমায় কি সত্যিই ভুতে ধরেছিল নীল সমুদ্র? “
“ কেন আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না কাশি।তোমার কি মনে হয় মানুষকে মিথ্যা কথা বলার জন্য ফর্দ টেবিলে সাজিয়ে রেখেছি? নাকি মিথ্যা কথা বলার কোর্স শুরু করেছি? কোনটা? তোমায় মিথ্যা বলে আমার লাভ টা কি শুনি?
আর শুনো মেয়ে তোমায় যেন তেন ভুত নয় এক আস্ত ভাইরাস ভুতে ধরেছিল।ভুতে না ধরলে কাউকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয় সাপুরের বাচ্চা বল?”
সাফওয়ান সঙ্গে সঙ্গে ওপর নিচ নাথা নাড়ালো।
নীলাদ্র বসালো তার মাথায় চর।
“ ওপর নিচ মাথা দোলাচ্ছিস কি বেয়াদব মুখে বল।”
সাফওয়ান সঙ্গে সঙ্গে ডানে বামে মাথা নেড়ে মুখে সুর তুললো,
“ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই অবশ্যই।এই যে দেখ না কাশি মানুষের হাত পা ভেঙে যায় কেন? কেন ভেঙে যায়?
ওই ভুতে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বলেই তো।”
“ ভুতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সাফওয়ান ভাইয়া?”
কাশফির অবাক স্বর।
সাফওয়ান মাথা দুলায়।
নাওমী কৌতুক হেসে সুধালো,
“ বাহ বাহ, ভুতের বড্ড সাহস কি বলেন ভাইয়া?”
সাফওয়ান মেকি হাসলো।
ইয়া খোদা এমন ডাকাত বন্ধু যেন কারো জীবনে না হয়, কারো না।
এই অসভ্য ছেলেটার বন্ধু কেন হবে সে কেন?
সেবার যে তার অসুস্থ মাকে হসপিটালে ভর্তি করতে সাহায্য করলো নীলাদ্র নামের ছেলেটা তারপর থেকেই তো অঘটন টা ঘটলো।এই ছেলেটাকে দেখলেই তার চোখ ভিজে আসতো।সেই থেকেই তো কেমন কেমন করে মিশে যাওয়া হলো একে অপরের সঙ্গে।
ভাগ্যিস সেদিন তার মা অসুস্থ হয়েছিল।
সেদিন মাঝ রাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে মাকে নিয়ে দিশেহারা চারপাশে গাড়িগোড়ার অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই।
অথচ ছেলেটা কোথা থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে হাজির হলো। তুলে নিল নিজ গড়িতে।মা কে ভর্তি করলো হসপিটালে। না বলতেই হসপিটালের সকল বিল মেটালো।
সাফওয়ানের হুশ ছিল নাকি এত দিকে।
মোটেও না।
ভাগ্যিস সেদিন রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিল না সেদিন।
নয়তো এমন ডাকাত বন্ধু সে পেত কোথায়।
খোদার কাছে সে প্রার্থনা করে, এমন ডাকাত বন্ধু আর কারো না হোক কারণ তার এই বন্ধু দুনিয়ায়তে একটাই চিজ।অন্য কাউকে নিজের মনের এই আসনে সে বসাতেই পারবেনা।উহু একদমই না।
নীলাদ্র প্রত্যুত্তরে কাশফি উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
সে জানে নীল সমুদ্র একদম ডাহা মিথ্যা বলছে তাকে।কোনো ভূত-টুত কিচ্ছুটিতে ধরে নি তাকে।সে তো ভিমরী খেয়েছিলো সত্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে।আহাঃ শত মিথ্যার পর সত্য প্রকাশ হবার ভয় বুঝি মানুষের হৃদয়কে দারুণ ভাবে বশ করে নেয়।
ঠিক তার মতন।যেমন করে সে বশ হয়েছে কৃত্রিম সমুদ্রের ওই বিশাল জলরাশির মাঝে।
সুজন হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ছোঁটে।কতগুলো বসন্ত অপেক্ষার পর অবশেষে কাল তার ছেলের বিয়ে নামক ভাড়া কাটলো,আর পরদিনই কিনা মেয়েকে তার অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হতে হলো?
কই কাল তো ঠিকঠাকই ছিল।সকলে বের হলো ফুরফুরে মেজাজে।হঠাৎ কি এমন ঘটলো তার সঙ্গে। সুজন হলপ করে বলতে পারে নির্ঘাত ভার্সিটিতে কেউ তার ফুলের মতো নিষ্পাপ, সাদা পদ্মচেরাগের ন্যায় কোমল মেয়েটাকে উস্কেছে।
নয়তো এমনটা ঘটার প্রশ্নই উঠে না।
কেবিনে ঢুকে মেয়ের পাশে নীলাদ্রকে দেখতেই সুজনের মেজাজ বিগড়ে যায়।
“এই ছেলে এই, অসভ্য ছেলে তুমি আমার মেয়ের পাশে বসে কি করছো?
“ কুল ডাউউন শশশশশ… সরি আঙ্কেল। “
“ হোয়াট? “
“ কুল, কুল এত উত্তেজিত হবেন না আঙ্কেল। এই বয়সে এত উত্তেজিত হওয়া মোটেও ভালো নয়।হার্টের প্রবলেম করবে যে।”
“ এই বয়সে মানে? তুমি কি বলতে চাইছো আমি বুড়ো হয়ে গেছি?”
“ কারেকশন,বলতে চাইনি, বরং বলেছি।”
বলেই নীলাদ্র মিষ্টি করে হাসলো।
সুজন অগ্নি চোখে চেয়ে।কত্ত বড় সাহস তাকে বলে কিনা বুড়ো? অসভ্য, বেয়াদব,বদমাশ ছেলে।
হতচ্ছাড়া ছেলে।
“ তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো অসভ্য ছেলে।”
“ না না, এমা ছিঃ ছিঃ কি যে বলেন না,একদমই না। লিমিটের মাঝে থাকতে আমি পছন্দই করিনা।সেখানে মিলিট ক্রস করার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
আপনি কিন্তু আমায় লজ্জায় ফেলে দিলেন আঙ্কেল। “
সুজনের চোখ দুটো পারে তো কোটর ফেরে বেরিয়ে আসে।
কত্তবড় বেয়ারা ছেলে, সে এই ছেলেকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে? লজ্জাজনক কোনো কথা সে আদৌও বলেছে কি?
“ সীমা লঙ্ঘন করো না ব…”
“ আঙ্কেললললল আমি সীমার মাঝে থাকতে পছন্দই করিনা।আরেকবার স্মরণ করে নিন না প্লিজ।”
কাশফি ভয়ার্থ দৃষ্টিতে একবার বাবার পানে চায় তো একবার নীলাদ্র’র পানে।
সে বুঝতে পারে না।নীল সমুদ্র এভাবে তার বাবার সঙ্গে তর্কে কেন জড়ায়।
“ দেখ ছেলে…”
“ আঙ্কেল আঙ্কেল… নাদ দিন না।আমার মনে হয় কাশফিকে এবারে বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত। ও তো এমনিতেই হসপিটালের গন্ধ শুঁকতে পারে না।”
নাওমী সুজন কে থামায়।
সুজন একপলক আগুন চোখে নীলাদ্র’র পানে চেয়ে মেয়ের শিয়রে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলায়।
“ কি করে কি হলো বলতো মা? এই জন্যই তোর মা পইপই করে বলে সকালে না খেয়ে বের হবি না।তোরা ভাইবোন দুটো বাবা মায়ের কথা শুনলে তো।”
কাশফি বাবার চিন্তিত মুখের দিয়ে চেয়ে হাত জরিয়ে ধরে মিষ্টি করে হাসলো।
সুজন নিজেও হাসলো।
মেয়েটার এই মিষ্টি হাসিটা দেখলে আর একদম রাগ করে থাকার ফুসরৎ নেই।
আশা ঠিকই বলে মেয়ে তার রাজ কপালে, শুধু যদি তার মেয়েটার কন্ঠনালীর এই ত্রুটিটুকু না থাকতো…
সুজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
সুজনের ভীষণ ভয় হয়।এই যুগ জামানায় একজন খাটি, যোগ্য, সুপুত্রকে মেয়ের জন্য খুঁজে দিতে পারবেন তো তিনি।পারবে তো মেয়েকে তার একজন সুন্দর মনমানসিকতা সম্পূর্ণ জীবনসঙ্গীনীর হাতে তুলে দিতে। যে মেয়েটার এই ত্রটিটুকু নিয়ে কোনোদিন খোঁটা দিবে না।বরং আগলের রাখবে সকলের থেকে ঠিক তার মতন করে।
কেউ কি আদৌও আছে এমন? কে জানে।
সাদাফ হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢোকে।
“ কি অবস্থা রে তোর বুনু।ভার্সিটি যাস না হসপিটালের টিকিট কাটতে যাস আমি তো সেটাই ভেবে পাই না।বাবা তোমার মেয়েকে বলো নিজের জন্য পাত্র খুঁজতে নয়তো আমরাই একটা রিক্সা ওয়ালাকে খুঁজে ওকে ধরিয়ে দেই।
তারপর আমাদের এই যন্ত্রণা টুকু ওই রিক্সা ওয়ালাই বহন করুক।”
কাশফি চিৎকার করে উঠলো,
“ ভাইয়ায়ায়া ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। “
“ শোন কাশফুল তোকে বরং আমরা কাশফুলের রাজ্যে ছেড়ে…”
নীলাদ্র চোখে চোখ পরতেই সাদাফ থেমে গেল।
নীলাদ্র আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে গেল।
তার পিছু পিছু সাফওয়ান ওও বেরিয়ে গেল।
তার মা অনেকক্ষণ যাবত একা আছে বাড়িতে।
সাদাফ গম্ভীর স্বরে বলল,
“ ওও এখানে কি করছিলো নাওমী?”
“ কাশফি কে হসপিটালে নীলাদ্র ভাইয়া ভর্তি করিয়েছে।তারপর আমাকে দিয়ে তোমাদের খবর দেওয়ালো।”
সুজন অবাক কন্ঠে বলল,
“ ওই অসভ্য ছেলেটা আমার মেয়েকে ছুঁয়েছে? ওও মাই গডড। “
কাশফি শুষ্ক ঢোক গিললো। তার বাপ-ভাই যদি জানতে পারে সে ছুটে ছুটে যায় নীলাদ্র বাসায় তবে কেমন হবে এর পরের ঘটনা? কে জানে? আপাতত সে জানতে চায়না।
নিজের মনের খবর জানতেই সে ব্যস্ত।
সমস্ত ফর্মালিটি পূরণ করে সুজন আর সাদাফ কাশফিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল হসপিটাল থেকে।
হসপিটালের গেট পেরুতে যেতেই নাওমী দেখলো তার বেয়ারা ভাই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে।
নাওমী না দেখার ভান করে চলে যেতে নিতেই গম্ভীর পুরুষালী স্নেহ মিশ্রিত ডাকে তার পা দুটো থামতে বাধ্য হলো।
“ দাঁড়া।”
নাওমী দাঁড়ালো ঠিকই কিন্তু পিছু ঘুরলো না।
নীলাদ্র নিজেই বোনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,
“ হোস্টেল ছেড়ে নীবিড়দের বাসায় কেন থাকছিস?”
নীলাদ্র’র প্রশ্নে নাওমীর চমকানোর কথা থাকলেও সে একটুও চমকালো না
“ আমার ইচ্ছা। “
“ হোস্টেলের প্রবলেম সলভ করে দিয়েছি।ওবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসবি।”
“ আমার কারো সাহায্য চাইনা।
আমি কোথায় থাকবো না থাকবো সেটা আমার ইচ্ছা। তোর টাকায় তো থাকছি না।”
“ আমি তোকে আমার টাকা দিলে তো।”
“ আচ্ছা তাই বুঝি?”
নীলাদ্র মাথা চুলকে হাসলো।
“ আগামী মাস থেকে আমার একাউন্টে মিস্টার আরাধ্য এবং মিসেস মান্সা ব্যতীত বাকি যে টাকা গুলো ঢুকে সেগুলো যেন আর না আসে। ”
“ সেসব আমায় বলে কি লাভ।”
“ আমি তো এতসব জানি না।”
নীলাদ্র কে পাশ কাটিয়ে নাওমী সামনে হাঁটা দেয়।
“ আমার সঙ্গে থাকবি বোন?”
“ না, আমি কোনো মারকুটে অসভ্য উপাধি ট্যাগ লাগানো ছেলের বোন নই।”
নাওমী রিক্সা ডেকে উঠে পরলো তাতে।
শহরের বিছানা শতশত ধূলোময়লা জমা ড্রেনের উপর অনায়াসে বসে নীলাদ্র আরেকখানা সিগারেট ধরালো।
আকাশে বিষাক্ত ধোঁয়ার কুন্ডলী ছেড়ে চোখ বুঝে সে।আহহহ,এতেই বুঝি সুখ।
ভাইয়ের সঙ্গে বনিবনা কমেছ তার আরো বছর কয়েক আগে।বাদরের বাঁদরামি সহ্য হয় না তার।
তারওপরে ভবঘুুরে ছেলেদের পছন্দ তো নয় তার একদমই।তাইতো ধীরে ধীরে ভাইয়ের সঙ্গে ছোট বেলার খুনসুটিময় মুহুর্তের মাঝে দুরত্ব কমেছে তার বহু আগে।
নাওমীর ভেতরকার সত্ত তাকে তীর্যক কন্ঠে প্রশ্ন।
“যেই ভবঘুরে স্বভাব তোমার অপছন্দ তবে নীবিড় যে সেই ক্যাটাগরিতেই পরে? নীবিড় কে পছন্দ করো কি তুমি? “
নাওমী দৃঢ় স্বরে জানায় কখনো না।
“ তবে যে তার সঙ্গে কথা বলতে নিলে থামো না।তার সঙ্গ তুমি পছন্দ করে। এসব কেন নাওমী?
“ ওসব তো মহিষের বাচ্চা ছলচাতুরী হুহ।”
রিক্সা চেপে নাওমী বিরক্ত হয়।চারিদিকের এত ময়লা না। চোখ ময়লা পরে কেমন বার বার চোখ ভিজে আসছে তার।
অসভ্য বাতাসের দল ফিসফিস করে নাওমীর কানে কানে বলে,
“ এত ছলচাতুরী কি করে করতে পারো বলোতো তুমি নাওমী? বড্ড পাষান্ড তুমি।নীবিড় তোমায় ঠিকই বলে, আসলেই তুমি একটা যা..তা।
কাঁদো ভাইয়ের জন্য দোহায় দাও অবলা ধূলো গুলোর? ওমাগো।কি মিথ্যুক কি মিথ্যুক গো তুমি।
ভাইয়ের জন্য যখন এতই মন পুরে যাওনা গিয়ে জরিয়ে ধরে ভাইকে নিজ অপছন্দের কাজ করতে নিষেধ করে।”
নাওমী বাতাসের দলকে চুপি চুপি শাষায়।
“ কখনো না।”
নাওমী বাসায় ফিরে ড্রয়িংরুমে বসা নীবিড়ের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই নীবিড় চট করে উঠে দাঁড়ায়।
যেন বড় করো অন্যায় করে পালানোর ধান্ধায় সে।
নাওমী পাশ কাটা তে নিলেই নীবিড় ঘুরে।
দুজনে ধাক্কা লাগতে লাগতে থেমে যায়।
নাওমী ভ্রু কুঁচকে ডানে মোড় নিলে নীবিড় একই সঙ্গে বামে।
নাওমী মেজাজ খিঁচিয়ে বলল,
“ কি সমস্যা আপনার? এমন ছি,কুতকুত খেলছেন কেন। কান খুলে শুনে রাখুন এসব ঢংয়ের খেলা, খেলার মোটেও আগ্রহ নেই আমার।”
নীবিড় আজ পাল্টা জবাব দিলো না।
নাওমী ভীষণ অবাক হলো।
নীবিড়ের ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে নাওমী কে ভয়ংকর কিছু জিজ্ঞেস করতে,সঙ্গে এডভাইস দিতে।
কিন্তু লজ্জায় পারছে না।
কি আশ্চর্য ছেলে হয়েও এত লজ্জা হুট করে তার মাঝে উদয় হলো কেমন করে।
নাওমী নীবিড়ের বুক হাত দিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে হেঁটে উপরে উঠে গেল।
নীবিড় ফিসফিস করে বলল,
“ শুনো নাউডুবা চশমিশ এভাবে বারবার মেয়েলী স্পর্শে কোনো ছেলেকে সিডিউস করা ঠিক নয়।একদমই উচিত নয়।তোমার জন্য তো নিষিদ্ধ। বুঝলে মেয়ে?”
মিষ্টি একটি সকাল।উহু ঠিক সকাল নয়।সকাল গরিয়ে দুপুর নামবে নামবে ভাব।
অতিদির যখন ঘুম ভাঙে সে বেলকনির দোলনায় শুয়ে।
কি আশ্চর্য সে এখানে ঘুমিয়ে পরেছে?
মন পাখি তার ঝড় তুলে,
“ অতিথি পাখি তুমি যে গতকাল রাতে সোয়ামীর মধূর স্বরে দিওয়ানা হয়েছিলে তা কি আর আমরা জানিনা ভেবেছ।”
সারারাত জাগলে ঘুম তো দেরী তে ভাঙবেই।সোয়ামী কাছে নেই তো তো কি এই যে মনে যে সে আছে ঠিকই।
অদিতির ঘুম ভাঙতো না এখনো, রহিমা খালার ক্রমাগত দরজা ধাক্কানোর গুতোয় তার তীব্র ঘুম ছুটেছে।
“ আপামনি গো।দরজা হান খুলেন।বেলা বারোটা বাইজা গেল আপনের কোনো খবর আছিল না।
আপনে আজ ইউনিভার্সিটি যাইবেন না।
সোয়ামী নাই ঘরে,এতবেলা পর্যন্ত ঘুমায় তো লাভ নাই।সোয়ামী আপনের যেইহানে সেই হানে জান।
আমাগো গেরামের জিকুর নতুন বউ তো সোয়ামীর পাছ-ই ছাড়ে না।হাগতে গেলেও সেই বউ লগে লগে যায়।শেষমেশ অতিষ্ঠ হইয়া জিকুতো বউরে কষাই-য়া একখান থাপ্পড়-ই বসাই দিলো।”
অদিতি সঙ্গে সঙ্গে গালে হাত দিলো।সোজা থাপ্পড়? ইয়া খোদা।
“ সোজা থাপ্পড়ই মেরে দিলো খালা?”
“ তয়লে আর বলিকি, শুধু কি তাউ বদনা ভর্তি পানি ও বউয়ের মাথায় ঢাইলা দিছিলো।”
অদিতি নিজ মাথায় হাত দিলো।
তৃপ্তি রহিমা খালাকে নিষেধ করেছে মেয়েকে ডাকতে।কে শোনে কার কথা।তৃপ্তি হতাশ হয়।
এই দুটোকে নিয়ে সে আর পারে না।একজন বকবক করে পাগল করবে আরেকজন প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে পাগল করবে।আশ্চর্য।
অদিতি ফিসফিস করে বলল,
“ আপনার কি মনে হয় খালা আমার সোয়ামী এমন কাজ করবে কখনো?”
“ নানা কি যে বলেন না আপামনি।আপনি তো পাইছেন সোনায় সোহাগা সোয়ামী, জিকু তো ছিলো রুপা থুরি রুপা ও না বরং পিতল সোহাগা সোয়ামী।
আপনের প্রফেসরের সঙ্গে কি আর গরুর গোবর ফেলানির তুলনা চলে।”
অদিতি লজ্জা পায়।
ফোন হাতে নিয়ে সে আরো লজ্জায় মুষড়ে যায়।
“শুভ সকাল মাই লিটল বার্ড,ছোট্ট আদর চাই মাই লাভ।আসবে তো আজ?”
জাওয়াদ,তার প্রিয়তমের মেসেজে সুন্দর অর্ধদুপুর আরো সুন্দর হয়ে উঠে। ভ্যাবসা গরম হঠাৎ করেই নাই হয়ে যায়।শীতের শিশির আঁকড়ে ধরে অদিতি কে।
অদিতির যাওয়া হয় না ভার্সিটি।দেখা হয় না জাওয়াদের সঙ্গে। তার দিন কাটে লজ্জায়,তার জাওয়াদের দুষ্টু কথার হাতছানিতে।
ইশশ এত এত লজ্জা কোথায় লুকাবে সে।
বিয়ের পর প্রতি মুহুর্তে এমন লজ্জায় মূর্ছা যেতে হয় বুঝি।জানলে বিয়ের পিরিতে বসার নামই নিতো না সে।ইশশ।
ভীষণ ভয়ংকর একটি স্বপ্ন দেখে নিস্তব্ধতা ঘুম ছুটিয়ে চমকে উঠে বসলো।
সে আরো চমকালো যখন নিজেকে বেলকনির বদলে বিছানায় আবিষ্কার করলো।
সাদাফ যাওয়ার পর সে তো বেলকনির ফ্লোরেই মাথা এলিয়ে ছিলো।বিছানায় এলো কেমন করে।
কি আশ্চর্য কান্ডকারখানা।
দরজা তো বন্ধ।
ভয়ে সে বুকে থুথু দিলো।
কিসব ভুতুড়ে কান্ড কারখানা রে বাবা।
বিছানা থেকে নামতে নিতেই পাশের টেবিলে চোখ যেতেই তার চোখ খানা আপনা-আপনি বৃহৎ আকৃতি ধারণ করলো, যেমন মানুষ অতি শকড হলে হয়। ঠিক যেমন ঘোড়ার ডিম পাড়া আর লিচু গাছ থেকে কাঠাল পাওয়ার সমান।
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৮
রাতে যে চিঠি খানা সে যত্ন করে ভাজ করে রেখেছিলো নিজ ড্রয়ারে।
কেউ সেটা মেলে রেখে কেমন অযত্নে ফেলে গিয়েছে।
চিঠি খানার মালকিন যেন চাইছে নিস্তব্ধতা চিঠি পড়ুক, তার চিঠি এই মুহুর্তে পড়ুক।
নিস্তব্ধতার মেজাজ টা হুট করেই খারাপ হলো চিঠি প্রেরকের উপর।
ইচ্ছে করছে দশটা কাঠাল এনে হতভাগার মাথায় ভাঙতে।
এত বেশি সে বুঝে কেন? কেন বুঝবে?”