ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৩

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৩
মাহিরা ইসলাম মাহী

নীলাদ্র দুইহাত উঁচু করে আড়মোড়া ভাঙার ভঙ্গিমা করে হাই তুলতে তুলতে বলল,
“বুঝলে সাদাফ ব্রো কাল সারারাত একটা কথা খুব করে চিন্তা করলাম।আসলে জীবনে লাভ করতে হলে মাঝে মাঝে নিজের ইগো কে লস করতে হয় বুঝলে।
সে হোক আমার ক্ষেত্রে কিংবা তোমার ক্ষেত্রে হোক।
আর এই মেয়ে মানুষের মাঝে টিকতে হলে একটু টেকনিক খাটাতেই তো হয়।
বয়সে ছোট হই তোমার তাই তুমি করে বলছি ডোন্ট মাইন্ড ব্রোওও।”
বলে নীলাদ্র সাদাফের দিকে চেয়ে মিষ্টি করে হাসলো।
সাফওয়ান হাঁফাতে হাঁফাতে দৌঁড়ে এসে নীলাদ্র’র পেছনে দাঁড়ালো।
নীলাদ্রের হঠাৎ পরিবর্তন সঙ্গে তার একটি কথাও বিশ্বাস হচ্ছে না সাফওয়ানের।
সাদাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলো নীলাদ্র’র পানে।
নীলাদ্র ফিসফিস করে বলল,

“ কুল ডাউন ব্রো। আমায় এভাবে দেখার কিচ্ছু হয়নি। আমার চেহারা গ্লো করছে না মোটেও।গ্লো তো করার কথা নিস্তব্ধতার মুখশ্রী তাই না ব্রো। দেখ এই দুনিয়ায় প্রয়োজন ব্যতীত কেউ কারো আপন হয় না।সে যেই হোক না কেন।”
“ কি বলতে চাইছো?”
“ নাথিং জাস্ট দু’জনের প্রয়োজনে শত্রুতে মিত্র হতে চাইছি,হবে ?”
সাদাফ হেসে বলল,
“ তুমি করবে আমায় সাহায্য? “
নীলাদ্র মিষ্টি করে হেসে বলল,
“ কেন নয়।তুমি আমায় সাহায্য করতে পারলে আমি কেন করবো না।”
“ আমি তোমায় কখন সাহায্য করলাম?”
“ করনি ভবিষ্যতে করবে।”
“ আচ্ছা তাই বুঝি?”
“ আজ্ঞে। দেখ ব্রো তুমি আর নিস্তব্ধতা.. “

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ আমাকে যখন ব্রো বলছো নিস্তব্ধতা কে ভাবী কেন নয়? আমার মনে হয় না কেউ না জানলেও আমার আর নিস্তব্ধতার বিয়ের খবরটা তোমার অজানা। এম আই রাইট নীলাদ্র ফারদিন।”
নীলাদ্র ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
“ আবস্যুলেটলি রাইট ব্রোওওও। বাট বাট বাট আর ইউ জেলাস।”
“ নিজ ওয়াইফের প্রতি জেলাস না হয়ে পারা যায় বলো?”
“ উমম কখনোই না। আমি হলে এতক্ষণে তোমার মুখ ফাটিয়ে দিতাম এক ঘুসিতে।আমার সামনে আমার ওয়াইফকে নাম ধরে ডাকা ইম্পসিবল। “
কাশফি নীলাদ্র’র সকল কথা শ্রবণ করে বসে বসে। আড় চোখে নীলাদ্র পানে চাইতেই সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে ফেলল সে।
কি আশ্চর্য ছেলেটা তার দিকে এমন করে চেয়ে আছে কেন।
কাশফি ফিসফিস করে বলল,

“ খবরদার এভাবে তাকাবেন না নীল সমুদ্র। গোটা সমুদ্র টাকে গিলে ফেলতে ইচ্ছে করে যে।”
“ ওকে ভাআআআবী… হ্যাপি?”
সাদাফ হাসলো নীলাদ্র’র কথায়।
“ভাবীকে পটাতে আমি সাহায্য করবো তার বদলে তুমি আমায় সাহায্য করবে প্রমিস?”
“ তোমার সাহায্য টা কি নীলাদ্র ফারদিন? “
নীলাদ্র বাঁকা হেসে বলল,
“ সেটা নাহয় সময় এলেই বলবো। প্রমিস?”
“ প্রমিস।”
“ আমার সাহায্যের বদলে তুমি সাহায্য করবে তো আমায় ব্রো।তখন কথা ঘুরাতে পারবে না।ডিল?”
“ ডিল।”
কাজ শেষ সাপুরের বাচ্চা চল।
সাদাফ ওদের পথ আটকালো।

“ কাজ শেষ মানে আমায় তো সাহায্য করলে না?”
“ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করিও সাহায্য ইনবক্সে পেয়ে যাবে। নো টেনশন ব্রো।এই নীলাদ্র ফারদিন একবার যে কাজে হাত দেয় সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দেয় না।”
যাওয়ার সময় নীলাদ্র কাশফিকে চোখ টিপ মারলো।কাশফি থতমত খেল।
অভদ্র উহু শুধু অভদ্র নয় অসভ্য নীল সমুদ্র।
তাকে ভার্সিটিতে আসতে বলে শত্রুকে মিত্র বানানো হচ্ছে বাহ ইন্টারেস্টিং। ভেরী ইন্টারেস্টিং।
ইন্টারেস্টিং তো বটেই এই যে কাশি তেমার নীল সমুদ্র এত গুলো দিন পর তোমায় মন প্রাণ ভরে দেখে যে তার হৃদয় জুড়ালো সে খবর কি তুমি রেখেছ? রাখনি তো।তবে বুঝবে কেমন করে কোনটা অহেতুল আর কোনটা কারণ বশত।
তিয়াশা খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে সবটাই অবলোকন করলো।
অনলের উত্তাপে সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার।
সাদাফের বিয়ে হয়েছে নিস্তব্ধতার সঙ্গে। এত বড় একটা ঘটনা তার অগোচরে ঘটে গেল? আর সে এখনো কিছু বুঝতেই পারলো না।
কি আশ্চর্য। সাফওয়ান এই মুহুর্তে তাকে কিছু না বললে সে তো আজও জানতে পারতো না।
সকলে এভাবে তাকাস ধোঁকা দিচ্ছে।

সন্ধ্যার পরমুহূর্তে। সূর্যিমামা ডুব দিয়েছে ঠিক মোড়ের সেই বটগাছটার পিছে।আসলেই কি তাই?
খালি চোখে আমরা কতকিই না দেখি, সব কি সত্য হবে? উহু মোটেও না। প্রশ্নই উঠে না।
তবে যে গোটা দুনিয়া থেকে মিথ্যার ফুলঝুরি উধাও হতো চিরতরে।
আরাধ্য দাঁড়িয়ে আছে তার স্টাডি রুমের বিশাল জানালার সামনে।উত্তরে হাওয়া বৈছে মৃদু মন্দ। খারাপ না।
এই বিশাল ফাঁকা বাড়িতে এই জানালাটাই যে একমাত্র সঙ্গী তার।
মনসুর আরাধ্য’র পিছে এসে দাঁড়ায়।শুষ্ক ঢোক চিপে গলা ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
“স্যার ইদানীং ছোট স্যারের সঙ্গে মেয়েটার মেলামেশা বেড়েছে। মেয়েটা স্যারের ফ্লাটে যাচ্ছে একা একা।ঘটনা বেশি সুবিধার লাগছে না।”
আরাধ্য নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,

“ ডিটেইলস বলো।”
স্যার আমার মনে হয় মেয়েটার ছোট স্যারের সঙ্গে সঙ্গে মেলামেশাটা প্রি প্লান।
কারণ মেয়েটার বাবা মা সম্পর্কে জানলে আপনি চমকে উঠবেন।
“ বলো দেখি। দেখা যাক কোনটা প্রিপ্লান আর কোনটা অগ্রীম। দেখি তুমি আমায় কতটুকু চমকাতে পারো।যদি চমকাতে পারো তবে তোমায় একটা গিফট করা হবে। গেট রেডি মনসুর আলম।”
মনসুর গদগদ হয়ে বলল,
“ স্যার মেয়েটার নাম কাশফি ইফতিসাম। সেই যে অনেক বছর আগে আপনার সঙ্গে ঝামেলা করা নিস্তব্ধ ইয়াসারের বন্ধু সুজন ইফতিসামের একমাত্র মেয়ে। তার মায়ের নাম মিসেস আশা ইফতিসাম , আপনার তিনমাত্র বান্ধবী। “
কথাগুলো শেষ করেই মনসুর চকচকে চোখে স্যারের পানে চাইলো। এই বুঝি সে স্যার কে চমকে দিতে পারলো।
কিন্তু আরাধ্য নির্লিপ্ত ভঙ্গিতেই বসে রইলো।
মনসুরের কথা মোতাবেক তাকে চমক উঠতে দেখা গেল না।আর না তো একফোঁটা ঘাবড়াতে।
এ কি করে সম্ভব মনসুর তো ভেবেছিলো তার স্যার বিশাল রিয়্যাক্ট করবে।তার ধারণা ভুল হতে পারে কি করে? মানতে পারছেনা মনসুর।
আরাধ্য হাসলো।

“ তোমার কথা মোতাবেক আমি চমকাতে পারলাম না মনসুর।দুঃখিত তুমি আমায় চমক দিতে ব্যর্থ হয়েছ। এবার তোমার কি করা উচিত বলো? গিফট তো পেলে না।”
মনসুর মাথা নিচু করে নিলো। ভেতর ভেতরে কিছু একটা সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত।
মুহুর্তেই সে চমকে উঠে চট করে মাথা তুলে বলল,
“ তার মানে স্যার মেয়েটাকে আপনি আগে থেকে চিনতেন,জানতেন?”
মনসুরের কন্ঠে স্পষ্ট বিস্ময়।
আরাধ্য এবারে শব্দ করে হাসলো।
“ তোমার কি মনে হয় নিজ ছেলের ব্যাপারে আমি উদাসীন হতে পারি? “
মনসুর জবাব দিতে পারলো না।
ছেলে মেয়ে কে আরাধ্য সবচাইতে বেশি ভালো বাসে।নিজের জীবনের চাইতেও বেশি।প্রতিটা মানুষ সর্ব প্রথম নিজেকে বেশি ভালোবাসে।কিন্তু তার স্যার ব্যতীক্রম।
সম্পূর্ণ ব্যতীক্রম।

বছর খানেক আগের সেই দিনটা আজও মনে আছে মনছুরের।
নীলাদ্রকে একদিন হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বাড়িতে ফিরতে দেখেছিলো।
আরাধ্য চুপচাপ সবটা দেখেছিলো কিচ্ছু বলেনি।কিন্তু পরবর্তী দিন নীলাদ্র কে সামান্য চোট দেওয়া সেই ছেলেটার ব্যান্ডেজ লেগেছিলো শত খানেক।
পুরোটার সাক্ষী মনসুর নিজে।সেই তো ছেলেটাকে হসপিটালে দিয়ে এসেছিল।
এরপর একদিন নাওমী মামনী হাইস্কুলে থাকতে একটা ছেলে তাকে টিজ করায় স্যার ছেলেটার বাবা-মা কে সহ মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়েছিলো।
তার স্যার দেখতে শান্ত শিষ্ট ভোলাভালা। অথচ কে বলবে এই শান্ত শিষ্ট মানুষটি মাঝে মাঝে ভয়ংকর রুপ দারণ করে।
আরাধ্য হাতে কলমটা ঘুরাতে ঘুরাতে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“এর আগে কখনো দেখেছ আমার ছেলেকে মেয়ে নিয়ে ঘুরতে?

“ না স্যার।”
“ দেখছ মেয়ে মানুষের মতন আরেকটা মেয়ের পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে? “
“ না স্যার।”
“ তাকে দেখেছ কোনো মেয়েকে আজ পর্যন্ত নিজ বাইকের পেছনে বসাতে?”
“ না স্যার। ছোট স্যার তো মেয়ে সঙ্গ পছন্দ করে না।তাছাড়া নিজের বাইককে সে জীবন সঙ্গিনীর মতন ভালোবাসেন মেয়ে মানুষ তোলার প্রশ্নই উঠে না।”
“ মেয়েটার নাম কাশফি ইফতিসাম রাইট?”
“ জ্বী স্যার।”
“ তবে আমার ছেলে ওই সামান্য মেয়েটার জন্য সকল অসম্ভব কে সম্ভব করবে কেন? বলো কেন?”
মনসুর জবাব দিতে পারলো না।
আরাধ্য আবারো শব্দ করে হাসলো।

“শোনো মনসুর তোমায় দুটো গল্প শোনাই।কাশফির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে দু’বার। “
“ দু’বার। কিন্তু আমি তো জানিনা স্যার।”
“ সব কথা কি তোমায় জানতে হবে মনসুর?”
“ জ্বী না স্যার।”
“ শোনো তবে।কাশফির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় আমার কাপড়ের দোকানে ।”
“ কাপড়ের দোকানে? মানে আপনার… “
“ হ্যাঁ। স্বভাব মোতাবেক আমি হাতে নিয়ে কাপড়ের মানগুলো চেক করছিলাম।সেই সময় মেয়েটা হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলো। আমার দিকে আঙুল তুলে তাড়াহুড়ো গলায় বলল,
‘ আঙ্কেল প্লিজ আমায় একটা কলাপাতা রঙের শাড়ি দেখাবেন প্লিজ।একটু দ্রুত করবেন হ্যাঁ।বাসায় ফিরতে হবে।মাকে বলা হয়নি।নীল সমুদ্রের বাসায় গিয়ে আমার ফোনটা হারিয়ে গেছে।সঙ্গে আমার ডোরেমনের প্রিয় কাভারটাও।
বাড়িতে ফোন ওও করতে পারছি না।’

নীল ফ্রেমের চশমা পড়া মেয়েটাকে আমার দেখে ততক্ষণাৎ মনে হলো আমার নাওমী দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।
দোকানের কর্মচারী বিট্টু কিছু বলতে চাইলো আমি হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলাম।
‘ তুমি কি ধরনের কাপড় চাইছো মামনী? নরমাল নাকি এক্সপেন্সিভ কিছু?’
মেয়েটার মুখ কিছুক্ষণের জন্য চিন্তিত দেখা গেল।।
ব্যগ থেকে সে সরল মনে দুহাজার টাকা বের করে অসহায় মুখ করে বলল,
‘ আঙ্কেল আমার কাছে দুহাজার টাকার মতই আছে।আপনি আমাকে দু হাজারের মধ্যে ভালো একটা শাড়ি দেখান প্লিজ।’
আমি তাক থেকে পাঁচ -সাত হাজার টাকা দামের শাড়ীগুলো বের করে দেখালাম কাশফিকে।
বিট্টু আমায় কিছু বলতে চায়লে আমি আবারো ওকে থামিয়ে দিলাম বেচারা ভেবেছে আমি দাম ভুলে গেছি।
সেই সুন্দর মুখের চশমা চোখের মেয়েটা শাড়ি গুলোর মাঝে থেকে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ী বের করে হাতে নিয়ে অবাক কন্ঠে সুূধালো,

“ এই চমৎকার সুন্দর শাড়িটা মাত্র দুহাজার টাকা? ওও মাই গড।”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
“ তোমার জন্য পনেরো’শো।”
মেয়েটা গালে হাত দিয়ে ইয়া বড় হা করলো।
ঠিক মিষ্টি বোয়াল ছানার ন্যায়।
শাড়িটা প্যাকিং শেষে বিল পে করার সময় আমার হাতে মেয়েটা আরো ভাংটি দু’শো টাকা গুজে দিয়ে বিট্টুর দিকে আড় চোখে চেয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ এই নিন আঙ্কেল টাকাটা রাখুন আপনি এত্ত ভালো।আপনাকে দুইশো টাকা বকশিস দিলাম।
উফফ এত কম টাকায় এত ভালো শাড়ি পাবো আমি তো ভাবতেই পারিনি কখনো।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। “
মেয়েটা চলে গেল হাসিমুখে ।
মেয়েটা আমার সামনে দু হাজার টাকা বের করে দেখালো।শাড়ি চাইলো।
আমি যদি ওকে তার চাইতে আরো কমদামী শাড়ি দিয়ে দিতাম ওও কি টের পেত বলো মনসুর?”
মনসুর মাথা নাড়লো।

“ তাই বলে আপনাকে দোকানের কর্মচারী ভাবলো মেয়েটা?”
“ হ্যাঁ।”
“ বলছেন কি স্যার। মেয়েটা সোজা আপনাকে মালিক থেকে কর্মচারী বানিয়ে দিলো? সঙ্গে বকশিস ওও দিলো?”
“ হ্যাঁ দিলো তো তাতে সমস্যা কোথায়? আর মালিক আর কর্মচারীর মাঝে পার্থক্য কোথায় বলোতো মনসুর? কর্মচারীরা কি মানুষ নয়।আজ ওরা যদি মাল বিক্রি না করতো লক্ষ লক্ষ টাকাগুলো আমাদের ব্যাংকে জমা হতো কেমন করে বলোতো?”
মনসুর চুপসে গেল।
“ মেয়েটার সঙ্গে দ্বিতীয় দেখা হয় নীলাদ্র’র ভার্সিটিতে।
মাঠের বটগাছতলায় আনমনে বসে ছিলাম আমি।
কাশফি ছুটে এলো আমার কাছে।
ভীষণ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“ এই আপনি সেই ভালো দোকানদার আঙ্কেল না? ওও মাই গড।আপনি আমার ভার্সিটিতে আমি তো বিশ্বাস-ই করতে পারছিনা।”
মেয়েটা একদম নিঃসংকোচে ঠাস করে আমার পাশে বসে গেল।
“ আঙ্কেল আপনি হঠাৎ এখানে যে? আপনার পরিচিত কেউ পড়ে এখানে ওও গড?”
“ হু আমার ছেলে পড়ে এই ভার্সিটিতে।”
“ বলছেন কি? উফফস আমার যে কেমন লাগছেনা।আপনার ছেলে কি আজ ভার্সিটিতে এসেছে? আমায় পরিচয় করিয়ে দেবেন কিন্তু অবশ্যই। “
“ অবশ্যই দেব।”
“ জানেন কি হয়েছে? আমাদের ভার্সিটিতে একটা অভদ্র নীল সমুদ্র আছে, সবেতেই তার নাক গলানো।”
“ সমুদ্র অভদ্র হয় বুঝি?”
“ এমা না না। সমুদ্র কেন অভদ্র হবে আমি তো আমাদের ভার্সিটির মোস্ট হ্যান্ডসাম বয় নীলাদ্র ফারদিন ওরফে নীল সমুদ্র’র কথা বলছি। “
আমি শব্দ করে হেসে দিলাম।
সেদিন প্রথম আমি জানতে পারলাম কেউ আমার অভদ্র ছেলেটাকেও নীলাদ্র’ থেকে নীল সমুদ্র নিকনেম দেওয়ার মতো ও সাহস রাখে।
শুধু দিয়ে নয় ডাকতেও সে অভস্ত।আর আমার বাঁদর ছেলে তা সাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতেও অভস্ত ভাবা যায়।
মেয়েটা অধের্য্য গলায় আবারো বলল,

“ জানেন কি হয়েছে? ভার্সিটির প্রথম কয়েকদিন পর তো একদিন অসভ্য নীল সমুদ্রের বন্ধু গুলো আমায় র‍্যাগিং ওও দিলো আর নীলাদ্র মহাশয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করে সবটা দেখে গেল।কত্ত বড় বদমাশ ভাবতে পারেন?
তাই তো আমি নাম দিলাম তাকে নীলাদ্র থেকে নীল সমুদ্র শুধু নীল সমুদ্র নয় অভদ্র নীল সমুদ্র।”
বলেই মেয়েটা প্রাণ খুলে হাসলো।
আমি সে হাসি দেখলাম মুগ্ধ চোখে।মেয়েটার হাসির মাঝে যেন আমি সবসময় মজা করা আশার হাসিখুশি সেই মুখটা স্পষ্ট দেখতে সক্ষম হলাম।
মনসুর বুঝলো তার সব শেষ।স্যারকে আর কিচ্ছুটি বলে লাভ হবে না।স্যার কাশফিতে তার ছেলের জন্য মজেছে। আর কে ঠেকায় কে কাকে।
মনসুর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
নাওমী মামনী মাহীন স্যারের বাড়িতে থাকে সেটাও আপনি জানেন?
নাওমী মামনী নীবিড় ছেলেটার সঙ্গে একটু বেশি মেলামেশা করে আপনি সেটাও কি জানেন স্যার?
আরাধ্য শীতল দৃষ্টিতে চাইলো,

“ কি মনে হয় তোমার মনসুর?”
মনসুর ফিসফিস করে বলল,
“ আমার তো অনেক কিছুই মনে হয় স্যার তবে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে নাওমী মামনীর উপর সর্বক্ষণ নজরদারি করেন সর্বক্ষণ।আড়ালে আবডালে।”
আরাধ্য স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ আজ সাত তারিখ পনেরো তারিখ রেডি থাকবে।বেয়াই বাড়ি যাবো আমি।”
মনসুর বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইলো।
মনে হলো মাত্রই তার মাথায় বর্জ্যপাত হলো বুঝি।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫২

আশা এসে হাজির হয়েছে ওসমান ভিলায়।নিজের একমাত্র বউমা কে নিয়ে সে শপিংয়ে যাবে।
সোনার টুকরো বউমা তার। এবারে তার অসভ্য পান্ডা যদি তার সোনার টুকরো সান্ডা বউমার কাছে মানুষ হয়।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here