ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৯
মাহিরা ইসলাম মাহী
মাথার উপরে সূর্যিমামা নিজের সমস্ত ক্রোধটুকু যেন ছেড়ে দিয়েছে গলগল করে।
এখন কি গ্রীষ্মকাল নাকি বর্ষাকাল? সেদিন না বর্ষাকাল এলো।ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো, চুষে নিলো পৃথিবীর সবটুকু বিষাক্ত ধোঁয়া ।তবে এখন শরৎ নাকি হেমন্ত?
কাশফি বসে আছে তাদের ভার্সিটির পেছনের শিমুল গাছটার নিচে।
শিমুল গাছে কড়ি ফুটে চলেছে তবে কি শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে এলো প্রকৃতি?
তবে যে প্রতিনিয়ত সে তার ব্যাগে কাশফুলেদের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে? শরৎকাল উধাও হলে সেগুলো আসছে কেমন করে।কেই বা চিরকুট সমেত কাশফুলগুলো দিয়ে চলেছে তাকে? কে সেই মহামানব নাকি মানবী?
কাশফি চট করে ফোনটা বের করলো।
চোখ দিলো ক্যালেন্ডারের পাতায়।
কিন্তু মি মুশকিল এ ক্যালেন্ডারে যে বাংলার মাসগুলো নেই।চারপাশে শুধু কেমন ইংরেজির ছোঁয়া।
বইগুলো সব ইংলিশের,প্রশ্নপত্র ইংলিশের,ফোনের ফাংশন ইংলিশে এখন ক্যালেন্ডারটাও।
এই ইংরেজের বংশধর দেশ থেকে বিতারিত হয়েও ছাড় দিয়ে যায়নি কাউকে।এখনো দেখ কেমন সকলকে জাপ্টে জরিয়ে ধরে বসে।
রেস্তোরাঁর মেনুকার্ডটা পর্যন্ত ইংলিশে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাশফির মনে হলো কেউ দুরুম করে তার পাশে এসে বসলো।
এই শুনশান জায়গায় কে এসে আধিপত্য ঘটাবে তার পাশটায়? কার এত সাহস?
ফোন থেকে মাথা তুলে পাশে চাইলো রমণী।
নীলাদ্রকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সে।
সেদিন মারু আপুদের বাড়ি থেকে ফিরে পরদিনই ভার্সিটি এসেছিল সে অথচ নীল সমুদ্ররের টিকির ও দেখাটি নেই কদিন ধরে।
অকারণে নাম না জানা অভিমানে যুবতী রমণীর বুক ভার।
আজ হঠাৎ কই থেকে উদয় হলেন জনাব।
হুহ।বলবে না সে কথা।
নীলাদ্র বোধহয় রমণীর অভিমান বুঝতে নারাজ।
ইতি উতি না করে সে ঠাস করে মাথা রাখলো কাশফি কোলের মাঝে রাখা ব্যাগের উপর।
একপ্রকার কাশফির কোলের উপরেই বলা যায়।
কাশফি হতভম্ব বনে চেয়ে রইলো। কি হলো এটা।
“ তোমার রাজকুমারের গল্প শুনবে কাশি?”
কাশফি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। থমথমে কন্ঠে বলল,
“ না।”
“ কেন? সেদিন ও এই গল্প শুনতে আমার ফ্লাটে পর্যন্ত গিয়ে হাজির হলে।”
“ আপনার দামী পাদ খাওয়া আগডুম বাগডুম রাজকুমারের গল্প আপনিই শুনুন। আর আপনার রাজকুমারের ঘোড়ায় আপনার বউকে চড়ান অসহ্য। “
নীলাদ্র আদ্র কন্ঠে বলল,
“ এমনটা কিন্তু কথা ছিল না কাশি।রাজকুমারের দুঃখ গুছিয়ে দেবে কথা দিয়েছিলে তুমি।”
“ কথা দিয়ে ছিলাম নাকি?”
নীলাদ্র’শিশুর ন্যায় মাথা নাড়লো।
নীল সমুদ্রের চোখে চোখ রাখলো রমনী।
কাশফির মনে হলো ছেলেটার চোখে তীব্র বেদনার ছোঁয়া। চোখে মুখে একরাশ ক্লান্তির ছাপ।
“ আপনি এই কদিন কোথায় ছিলেন বলুন তো?”
“ জেনে আর কি করবে বলো?”
“ আপনি একটা অসহ্য। উঠুন বলছি।”
নীলাদ্র উঠলোনা বরং চোখ বন্ধ করে বলল,
“ বাবা অসুস্থ ছিলো কাশি তাকে নিয়ে হসপিটালে ছিলাম।”
কাশি আরও মিইয়ে গেল।বুঝতে পারলো তার অভিমান নিছক ছেলেমানুষী। নীলাদ্র তার বাবার সেবা করছিলো।এখানে তার অভিমান মানায় না।
কিন্তু নীল সমুদ্র তো তার বাবাকে পছন্দ করে না।তবে?
ওই যে কথায় আছেনা রক্তের টান কি ভোলা যায়।আর রইলো সঙ্গে সম্পর্কের মায়া,বন্ধন তাতো একেবারেই না।
কাশফি ম্লান স্বরে বলল,
“ আর আপনার মা?”
“ ওই মহিলার কথা আমার সামনে ফের কখনো তুলবে না কাশি।”
নীলাদ্র’র কন্ঠের রাগের আভা স্পষ্ট।
কথা বাড়ালো না সে।
“ওসব ছাড়ো তোমায় বরং সেই হতভাগা রাজকুমারের গল্পটা শুনিয়ে শেষ করি বুঝলে।আর যে অপেক্ষা করতে পারছি না আমি এবারে সত্যিই ক্লান্ত হুপিংকাশি ।”
কাশফি বুক খানিকটা কেঁপে উঠলো।
ভেতরটা হঠাৎ কেমন খাঁ খাঁ করছে শূন্যতায়।
সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“ আপনি আগে উঠে বসুন প্লিজ।”
কিন্তু নীলাদ্র নাছোরবান্দা।
“ উহু।তা তো হচ্ছে না কাশি।গল্পটা তোমার চোখে চোখ রেখে না বলতে পারলে আমার ঠিক পোষাবে না বুঝলে।”
“ দ…দেখুন কেউ দেখলে বাজে ভাববে।”
“ ভাবুক।”
কাশফি হাল ছাড়লো
নীলাদ্র বলতে আরম্ভ করলো।
“ বাবা মায়ের নিঃসঙ্গতায় গুমরে গুমরে কাঁদার পর সেদিন যখন রাগ করে রাজকুমার নিজের জন্য খারাব বানাতে গেল। তারপরেই তো বাঁধলো বিপত্তি।কারো দয়া চাই না তার।তার নিজের কাজ সে নিজেই করবে বলে মনে মনে পণ করলো।নিজের খাবারটাও সে নিজে বানাবে।প্রাসাদ ভর্তি এত কর্মচারীর কোনো দরকার নেই তার।যেখানে রাজা রাণীর দ্বায়িত্ব নেই তার প্রতি সেখানে কর্মচারীর দ্বায়িত্ব দিয়ে আর কিই বা হবে।
কিন্তু সেবারে ডিম ভাজতে গিয়ে বাঁধলো বিপত্তি। কড়াইতে ডিম দেওয়ার সঙ্গে তৈল ছিটকে এসে পড়লো রাজকুমারের বুকের বা পাশে।
সকল কর্মচারী অস্থির হয়ে পড়লো তাকে নিয়ে অথচ রাজা রাণীর দেখা নেই।
উদাস রাজকুমার বিছানায় কাটালো কতগুলো দিন।রাজা-রাণী পরবর্তীতে রাজকুমার কে দেখতে আসলে মুখ ঘুরিয়ে নিতো।
তৈল ছিটকে পরার স্থানে ঠোসা পরলো। এরপর দাগ হলো। সে দাগ এখনো দেখলেই রাজকুমার রেগে যায়।
রাজকুমার কলেজে উঠলো।
রাজার গুপ্তধন নেবে না বলে পণ করলো। টিউশন করিয়ে নিজের খরচ চালাতে লাগলো।”
কাশফি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো গল্পটা।অবাক কন্ঠে বলল,
“ তখনকার দিনে টিউশন ছিল বুঝি?”
নীলাদ্র হাসলো জবাব দিলো না।
“ জানো তো কাশি আমরা কিছু কিছু মানুষের উপরে উপরে যে স্বভাবটা দেখি তা সবসময় সত্য হয় না।অনেক সময় কেউ কেউ নিজের ভেতরের সত্তা কে ঢেকে রেখে বাহিরে মিছে আস্তরণ তৈরি করতে ভালোবাসে।
নিজের ভালো দিকটা সংগোপনে লুকিয়ে খারাপটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে ভালোবাসে।
আর এসব এমনি এমনি হয়না।তার চারপাশের পরিবেশ তাকে প্রভাবিত করে।তার পরিবার তাকে প্রভাবিত করে।সে যে সমাজে বাস করে সে সমাজ তাকে প্রভাবিত করে।
একজন মানুষ শুরুতে কিন্তু বর্তমানের মানুষটা ছিল না। সে জন্মেছিল নিষ্পাপ শিশু বনে।কিন্তু কি হলো,কালের পরিবর্তনে চারপাশের একেরপর এক প্রবল ধাক্কায় শিশুটির সমস্ত কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। লুকিয়ে রাখতে শিখলো তার সুখ দুঃখগুলো কে।বাঁচতে শিখে গেল সে একা।
অথচ বসবাস করার কথা ছিল তার পরিবার সমেত একটা সুস্থ সমাজে।
আর একই স্বভাবে পরিণত হলো একসময় রাজকুমার নিজেও।
নিজের সুখ গুলোকে সে আর কাউকে ডেকে দেখায় না।দুঃখগুলোকে ভাগ করে দেয় না।
রাজা রানীর ডিভোর্সের পর রাজকুমারের মনে রাণীর জন্য জন্ম নিলো তীব্র ঘৃণা।রাণীকে দেখলেই রাজকুমারের প্যানিক অ্যাটাক শুরু হয়।
রাজকুমারের একটা বোন ছিল জানো তো কাশি।
খুব মিষ্টি একটি রাজকন্যা। কিন্তু রাজকুমারের মত সেই ছোট্ট রাজকন্যা ও অবহেলিত হতে লাগলো দিনের পর দিন।তাতে রাজকুমারের রাগ তীব্র হতে লাগলো বাবা-মা রূপী দুটো মানুষের প্রতি।সেই রাগ একসময় পরণত হলো ঘৃণায়।
কিন্তু রাজকন্যা যত বড় হতে লাগলো রাজকুমার দেখলো রাজকন্যা তার চাইতেও দ্বিগুণ জেদী আর আত্নবিশ্বাসী।
অন্যের মনের ভেতরের চলা ঝড় তুফান সে মুহুর্তে পরে ফেলতে পারে যেন।
কিন্তু হঠাৎ এক ধমকা হাওয়ায় ঘটে গেল অঘটন।
রাজকন্যার চোখে হলো ইনজুরি। ডাক্তার চোখে পরিয়ে দিলো দুটি গোল কাঁচ দিয়ে নির্মিত চশমা।
চশমা ব্যতীত সে অন্ধ।
কি সর্বনাশ।
রাজকুমারের সেই বোনরূপী রাজকন্যার জন্মদিন সামনেই বুঝলে।আশ্চর্যজনক ভাবে রাজকুমার আর রাজকন্যার জন্মদিনটা একই দিনে।ঠিক অক্টোবরের একুশ তারিখ ।কিন্তু রাজকুমার চিন্তায় আছে বোনের সঙ্গে ভাব করে তাকে কি করে জন্মদিনে সারপ্রাইজ টা দেবে। ”
কাশফি খানিকটা থমকে গেল।কোনো সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সে।কিন্তু সে সমীকরণ কেমন মিলেও যেন মিলছে না। কেন মিলছে না কি আশ্চর্য। সমীকরণে তথ্যের অভাব কোথায়? সে বাকি তথ্য যোগাড় করবে কেমন করে?কি মুশকিল! উফফ।
“রাজকুমার রুপী ভাইকে রাজকন্যা ভালোবাসলেও বুঝতে দিতে সে নারাজ।
বোকা রাজকন্যার ধারণা ভাইকে ভালোবাসলেই ভাই যদি তার সে ভালোবাসাকে দূর্বলতা ভাবে তবে তো মুশকিল।রাজকন্যা মোটেও দূর্বল নয়।
যত বড় হলো রাজকন্যা সরে গেল সকলের থেকে।রাজা,রাজকুমার, রাজপ্রাসাদ সব ছেড়ে গেল সে অন্যত্র।নিজের খরচ সে নিজেই চালায়।
একসময় রাজকুমার ও প্রাসাদ ছাড়লো।
কিন্ত এর মাঝেই রাজ কুমারের জীবনে ঘটে গেল অঘটন। “
কাশফি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“ ক..কি অঘটন? “
নীলাদ্র কাশফির চোখে চোখ রাখলো।তাকালো গভীর দৃষ্টিতে। বলল,
“ভার্সিটিতে একদিন একজন ভীনদেশী রাজকন্যার আগমন ঘটলো।একটা সময় রাজকন্যা এসে রাজকুমারের সামনে দাঁড়ালো।রাজকন্যার চোখে মুখে ছিলো একরাশ ভয় আর আতঙ্ক। থরথর করে কাঁপছিলো রাজকন্যার গোলাপি ঠোঁট জোড়া।চোখ দুটো হালকা অশ্রুতে ভেজাঁ।
কথা বলছিলো থেমে থেমে।
হঠাৎ চারপাশ থমকে গেল।রাজকুমারের হঠাৎ কি যে হলো।রাজকুমার মুহুর্তে হারালো রাজকন্যার মাঝে।
সবকিছু বুঝে উঠতে রাজকুমারের একটু সময় লাগলো।কিন্তু এখন যখন বুঝলো সে আর অপেক্ষা করতে চায় না।
রাজকন্যার ওসব সামান্য শারীরিক ত্রুটিতে রাজকুমারের কিচ্ছু আসে যায় না। সে নিজের সবটুকু দিয়ে রাজকন্যা কে ভালোবাসা এই মুহুর্তে প্রস্তুত।
কাশফি উঠে যেতে চাইলো, নীলাদ্র দিলো না। রমণীর হাত চেপে ধরলো জোড়ে।
কাশফি শুষ্ক ঢোক গিলে বলল,
“ বর্তমানে রাজকুমার এখনও কি টিউশনি করে?”
নীলাদ্র হাসলো জবাব দিলো,
“ উহু।ওইটুকু টিউশনির টাকায় কি আর এতবড় ভার্সিটির পড়ার খরচ আর বউ সামলানো সম্ভব। “
“ মানে?”
“ মানে রাজকুমার বর্তমানে রাজার প্রকান্ড ব্যবসার একাংশ দেখাশোনা করে টাকা নেয়।সে কারো মাগনা টাকা খায় না।কাজ করে খেটে খায়। রাজকুমারের ভবিষ্যত রাণী আর তার আন্ডা-বাচ্চার জন্য টাকা পয়সা গোছানোরও তো একটা ব্যাপার স্যাপার আছে বুঝলে? আস্ত একটা বউকে পালা তো চাট্টিখানি কথা নয় তাইনা?”
কাশফি জবাব দিলো না।এবারে সে সর্বশক্তি দিয়ে নীলাদ্র’র হাত ছাড়িয়ে চট করে উঠে দাঁড়ালো।নীলাদ্র নিজেও উঠে দাঁড়ালো।
আর একটু কাছাকাছি হলো সে কাশফির। ফিসফিস করে বলল,
“ রাজকুমার যদি সে রাজকন্যার হাতটা রাণী রূপে এই মুহুর্তে ধরতে চায় সে কি ধরতে দেবে?”
কাশফি আর একমুহূর্ত দাঁড়ালো না হাঁটা দিলো সামনের পথে।
নীলাদ্র চিৎকার করে বলল,
“ সে রাজকুমারটা কে জানতে চাইবে না কাশি? “
কাশফি একমুহুর্ত থমকে দাঁড়ালো কিন্তু পিছু ঘুরলো না, ফিসফিস করে বলল,
“ না জানতে চাই না।একদমই জানতে চাইনা নীলসমুদ্র।জানেন তো জানা প্রশ্ন মানুষ বার বার জানতে চায় না।”
রমণীর সে ফিসফিস তরঙ্গের ধ্বনি বাতাসের মাধ্যমে নীলাদ্র’র কর্ণ পর্যন্ত পৌঁছালো না।
কাশফি এবারে দৌঁড় দিলো।পালাতে চায় সে অনেক অনেক দূরে।
নীলাদ্র চিৎকার করে বলল,
“ মনে রেখ হুপিংকাশি সে রাজকুমার কিন্তু আজীবন রাণীর পথ চেয়ে থাকবে আজীবন।”
সেদিন ওবাড়িতে সাদাফকে সারারাত বেলকনিতে দাঁড় করিয়ে রেখেই পাড় করিয়েছে নিষ্ঠুর রমণী নিস্তব্ধতা।
তার এ কান্ড যে কেউ দেখলে বলবে হয়তো সে একটু অতিরিক্ত করছে।
কিন্তু না।তার কাছে এটা মোটেও অতিরিক্ত নয়।
পুরুষ মানুষের ত্যাড়া ঘাড়কে সোজা করার এটাই একমাত্র উপায়।আর তা হলো,
“বউ থাকতেও তাকে বউ বিহীন রাত্রী যাবন করানো”
এ কষ্ট বোধহয় বোঝা শুধুমাত্র পুরুষের দ্বারাই সম্ভব আহাঃ।
নিস্তব্ধতা মনে মনে হাসে।
চিঠি লেখা তাইনা?
মুখে ভালোবাসি বলবে না তুমি হে যুবক কত তে।
সঁজনেডাটা তোমার সব পয়েন্ট আমি কুঁচি কুঁচি করে কেটে, ঘেটে ঘট করে দেব।
কিন্তু নিস্তব্ধতা তখনও ভুলেও বুঝতে পারেনি তার জন্য সামনে কি ভয়ংকর দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে।
আশা আজ এসেছে তার একমাত্র বউমাকে তাদের বাড়িতে নিতে।
মেয়েটাকে আজ সে নিজের মনের মত রেঁধে বেড়ে মন ভরে খাওয়াবে।
আহাঃ সে যে কত দিনের শখ তার।
নিস্তব্ধতা কে সে নিজে হাতে নীল পাড়ের খয়েরী রঙা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।
আশা আবেগে আপ্লুত হয়ে বউমার কপালে চুমু খায়।মাশাআল্লাহ ভীষণ চমৎকার লাগছে তার একমাত্র বউমাকে।
তার পান্ডা আজ বউয়ের এই সাজ দেখলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করে বসবে।
তার সান্ডা-পান্ডা দুটোর মাঝে সব যে কবে ঠিকঠাক হবে কে জানে।
তার হতভাগা যে এমন ভেজা বেড়াল বের হবে কে জানতো।
সেদিন যে বউমা তাকে সারারাত বেলকনিতে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো তাও সে ঢের দেখেছে।
সে তো বলবে নীরুমা একদম ঠিক কাজ করেছে।
কেন রে নীরু মা বউ হয় তো তোর, এত ইতি উতি না জাপ্টে ধরে ঠাস ঠাস করে দুটো চুমু খেয়ে নিলেই পারিস।মেয়ে মানুষের মন গলতে কি আর সময় লাগে।
তার সুজন মাঝি তো এখনো তাকে জাপ্টে ধরে চুমু দিলে ব্যস তার সমস্ত রাগ ক্রোধ গলে জল।
ভালোবাসা কাঙ্গাল এই দুনিয়ায় সকলে।
কেউ নেই পরিপূর্ণ তৃপ্তিতে।কিছু না কিছু অদৃশ্য ভঙ্গিতে আমাদের তাড়া করে বেড়ায় সর্বক্ষণ।
সাদাফ এই মুহুর্তে মায়ের কথাগুলো শুনলে আহত কন্ঠে বলত,
“ তুমি তো জানো না মা তোমার আদরের বউমা তোমার হতভাগা ছেলের থেকে এই চুমু খাওয়ার ভয়েই তো এত লুকোচুরি খেলছে। কত নিষ্ঠুর পদ্ধতি অবলম্বন করছে।”
নিজ বউমা কে নিয়ে আশা পা বাড়াতেই হঠাৎ নিস্তব্ধতার ফোনটা বেজে উঠে স্ব শব্দে।
আননোন নম্বর দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে নিস্তব্ধতার।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে অপরিচিত কন্ঠস্বর,
“ হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন আমি প্যাশন হসপিটাল থেকে বলছিলাম। মিসেস নিস্তব্ধতা বলছেন?
আপনার হাসবেন্ড সাদাফ ইফতিসাম বাইক এক্সিডেন্ট করে গুরুতর আহত হয়েছেন। অবস্থা ভালো নয়। দয়া করে ইমার্জেন্সি আসবেন প্লিজ।”
নিস্তব্ধতার মনে হলো তার পুরো দুনিয়া ঘুরছে।
তার সঙ্গে তার মাথাটাও ঘুরছে ভনভন করে।
চোখের সামনে ভেসে উঠলো বছর কয়েক আগের তার সে সাংঘাতিক এক্সিডেন্টের কথা।চারপাশে রক্তের ছিটেফোঁটা। তার মাঝে নিস্তেজ পরে আছে সে।
যে আঘাতে নিজের একটা পা আজও তার অসুস্থ।
ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৫৮
করতে পারেনা সে দৌঁড়ঝাপ।
এবারে তার ভালোবাসার মানুষটা ও কি…
আর ভাবতে সক্ষম হলো না নিস্তব্ধতা। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়লো ।মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো। মুহুর্তেই দামী স্মার্ট ফোনটা থমকে পরলো কংক্রিটের ফ্লোটে।ওপরের কাঁচটা খানিক ফেটে গেল।
চোখ উল্টে নিস্তেজ হয়ে পড়লো নিস্তব্ধতা ফ্লোরে।
ড্রয়িংরুমে থাকা সকলে চিৎকার করে ছুটে এলো তার দিকে।
এরপর…