নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ১
ঝিলিক মল্লিক
“ম্যাডামজি, মেজর শাহবীর রুস্তম ফিরছেন শীঘ্রই। ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। আমি এসে কিন্তু কোনোকিছু অগোছালো দেখতে চাই না।”
“হ্যাঁ?!”
ফোনের অপর প্রান্তের রাশভারী পুরুষালি কন্ঠস্বর শোনা মাত্র চমকে উঠে চোখ মেলে প্রশ্নটা করে বসে জীম। ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা তুলে কানে চেপে ধরে রেখেছিল ও। এই মুহূর্তে সময় দেখা খুবই প্রয়োজন। প্রচন্ড আলসেমিতে কান থেকে ফোন সরিয়ে সময় দেখতে ইচ্ছা করলো না ওর। তাই শুধু আলতোভাবে মাথা ঘুরিয়ে বামদিকের দেয়ালঘড়িতে সময়টা দেখে নিলো একবার৷ সকাল সাতটা বাজে। এই সময়টা কখনোই জীমের ঘুম ভাঙার উপযুক্ত সময় নয়। এমনকি এ সময়ে কেউ ওর ঘুম ভাঙিয়ে ওকে বিরক্তও করে না।
তাই ঘুমের মুহূর্তে হঠাৎ ফোনের রিংটোন বাজখাঁই শব্দ করে বেজে ওঠা মাত্রই জীমের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ঘুম জড়ানো অবস্থাতেও নাম্বারটাও খেয়াল করেনি সে। সোজা কল রিসিভ করে বসে। তারপরেই ফোনের অপর পাশে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কন্ঠস্বর। তাও আবার এমন সংবাদ। এই সময়ে কোনোভাবেই মেজরের বাসায় ফেরার কথা নয়। ছুটিও পাবে না, যতদূর জানে। নাহ! ব্যাপারটা মোটেও সুবিধাজনক নয়৷ এই লোককে হাড়ে হাড়ে চেনে জীম। লোকটার নাড়িনক্ষত্রের সকল খবর ওর জানা আছে। মাঝেমধ্যে আবার সন্দেহও জাগে মনে। আসলেই কী এই মানুষটাকে ঠিকমতো চিনতে পেরেছে সে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লোকটাকে মাঝেমধ্যে কেমন অচেনা মনে হয়। কখনো-সখনো ভারী অদ্ভুত লাগে। আবার কখনো ভয়ংকর রহস্যময়। যেই রহস্যের জট খোলার সাধ্য জীমের নেই। তবে ও খুলতে চায়। কারণ ওর পড়াশোনা-ই এমন একটা সেক্টরে; যেখানে গোয়েন্দাগিরি করা মুখ্য বিষয়। জীম এবার অত্যাধিক সিরিয়াস হয়। শ্বশুরবাড়িতে রুস্তমের রুম, মানে তার একান্ত শোবার ঘরটার নরম বিছানার আরাম পরিবেশ ছেড়ে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে৷ একটা হাই তোলে জোরেসোরে। শীতের দিন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন ডিসেম্বর মাস চলমান। সবে প্রথম সপ্তাহ চলছে এই মাসের। জীম কম্ফোর্টার পা থেকে মাথা অবধি পেঁচিয়ে তারমধ্যে ঢুকে উবু হয়ে বসে। তারপর ফিসফিস করে অতি সাবধান সুরে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা নিজের একান্ত মানুষটাকে বলে,
“মেজর?”
“হুঁ?”
ফোনের ওপাশ থেকে মানুষটার পাল্টা প্রশ্ন শোনে জীম। এইতো সেই চিরপরিচিত কন্ঠস্বর। এই কন্ঠস্বর জীম ভোলে কী করে? পৃথিবীর সকল মানুষের কন্ঠস্বর ভুলে যাওয়া যাবে, তবু স্মৃতি হনন হলেও মেজরের কন্ঠস্বর কখনো ভুলতে পারবে না জীম। এই কন্ঠস্বরের প্রেমে যে কতশত তরুণী পরতে পারে! তার একটা তালিকা করলে নির্ঘাত হিসাবের হালখাতা বিধ্বস্ত হয়ে যেতো এতোদিনে। এই কথাগুলো ভাবলেই চরম ঈর্ষান্বিত হয় জীম। কারণ অজানা। তবু ঈর্ষান্বিত হয় ও। এইসমস্ত ব্যাপারে রুস্তম জানলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বলে বসতো, “জীম, তোমার মাথার তাঁর কয়টা ছিঁড়ে গেছে? এসো, জোড়া লাগিয়ে দিই।”
তখন দেখা গেল, রাগের মাথায় জীম উল্টাপাল্টা দু’টো গালি ছুঁড়ে দিতো। আর শাহবীর রুস্তম অতি মেজাজের সাথে বলে উঠতো, “মুখের ভাষার কি যাচ্ছেতাই অবস্থা! মেরে নদীতে ফেলে দেবো।”
তখন জীম হোহো করে হেসে উঠতো। কারণ এমন কথা সে চার মাসের বিবাহিত জীবনে অগণিত বার শুনেছে। যা হিসাবের বাইরে। অবশ্য মানুষটার সাথে কথাবার্তা বেশিরভাগ যা হয়েছে, সবসময়-ই ফোনে। বিবাহিত জীবনের চার মাসে মাত্র দুইবার রুস্তমের সাথে সরাসরি সময় কাটানো হয়েছে ওর৷ তা-ও খুব অল্প সময়ের জন্য। তারপরেই তো রুস্তমকে ক্যান্টনমেন্টে চলে যেতে হলো। এখানে থাকার সময় আর কই? জীমের এতোসব ভাবনার মাঝে ওর ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো। কম্ফোর্টারের মধ্যে আরো কিছুটা গুটিয়ে গেল ও। রুস্তম তখনও কিছু বলছিল না। জীম শুধু ওপাশ থেকে বাস চলার আর রুস্তমের পাশের মানুষদের সাথে কথা বলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল। তারমানে সত্যিই লোকটা রাজশাহীতে ফিরছে আজ। কথাটা এখন বিশ্বাসযোগ্য। জীম এবার রুস্তমের মনোযোগ নিজের দিকে ঘোরাতে ঘুম জড়ানো স্বরে বলে উঠলো,
“শাহবীর।”
“বলুন ম্যাডাম, মেজর শাহবীর রুস্তম ইজ হেয়ার।”
“একা-ই ফিরছেন?”
“না। আমার কলিগরা আছে সাথে। বিয়ে অ্যাটেন্ড করবে।”
“আম্মার ফুপাতো বোনের মেয়ের বিয়েতে আপনার কলিগরা? অবিশ্বাস্য!”
“অবিশ্বাস্য কোনো ঘটনা নয়। এক্সুয়ালি আমাদের টিমের একটা লং-টার্ম মিশন শেষ হয়েছে তো, একারণে অথোরিটি থেকে আমাদের গোটা টিম মেম্বারদের রিকভারি লিভ অ্যাপ্রুভ করা হয়েছে। এবার হঠাৎ ছুটি পাওয়া। টিমমেটদের তেমন কোনো প্ল্যানিং ছিল না। বোরিং টাইম চলছিল৷ কক্সবাজার ভ্যাকেশনের প্ল্যানিং করছিল ওরা। আমাকে জানাতেই আমি প্রস্তাব দিলাম, আমার সাথে আত্মীয়ের বিয়ে অ্যাটেন্ড করতে। আর যেহেতু বড়লোক আত্মীয়-স্বজন, ওদের আপ্যায়নের ত্রুটি রাখবে না—এতটুকু শিওর। তুমি কী বলো?”
“কতদিনের ছুটি?”
জীম রুস্তমের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা একটা প্রশ্ন করে বসে। আপাতত ওর মাথার মধ্যে অনেক কিছু চলছে। রুস্তম জবাব দেয়,
“পনেরো দিনের। আর চিটাগাং বিয়েতে গেলেও তো আমাদের সেখানেই তেরো দিন কেটে যাবে।”
“হঠাৎ এসব করছেন কেন? কাহিনী কী? কিছু ঘটাবেন নাকি? সত্যি করে বলুন তো!”
“কোনো কাহিনী নেই। অযথা উল্টাপাল্টা ভেবে ভেবে মাথা ব্যাথা করছো নিজের।”
“আরে শালা, আপনি তো সেই একটা মাল।”
“নিজের স্বামীকে কেউ মাল বলে না জীম।”
“কিন্তু আমি তো বলি।”
“কারণ তুমি অসভ্য।”
“আপনার জন্য।”
একটু চুপ থেকে জীম আবারও বলে ওঠে,
“ওই ছুপা রুস্তম, কাহিনী কিত্তা বল তো?”
“তোমাকে কতবার বলেছি! আমার সাথে তুই-তোকারমূিলক বিশ্রীভাবে কথা বলবে না। লোকে শুনলে কী বলবে? থাপ্পড় মেরে দাঁত বত্রিশটা ফেলে দেবো বেয়াদব!”
“লোকের কিছু বলাতে আমার ছেঁড়া গেল। মেজর শাহবীর রুস্তম আমার স্বামী কম, দোস্তোবন্ধু বেশি। চারমাস আগে বিয়ের শুরু থেকেই তো দু’জনের মধ্যে এমন বোঝাপড়া হয়েছিল না? হঠাৎ এমন পল্টি ক্যান? মাগার কথা হচ্ছে, হইছে টা কী ব্যাটা? তাই বল।”
“কিছুই হয়নি। তবে তোমার একটা হেল্প লাগবে অতি জরুরি।”
“হেল্প করতে পারি। বাট, দু’টো কন্ডিশনে।”
“কী কন্ডিশন?”
“কন্ডিশন নাম্বার এক, প্রথমত আমাকে সিক্রেট ব্যাপারটা বলতে হবে।
সেকেন্ড কন্ডিশন হচ্ছে, গত সপ্তাহে শাশুড়িমার সাথে ঘুরতে বেরিয়ে জুয়েলারির শপে একটা এয়ারিং চয়েস করে এসেছি। পঁচিশ হাজার লাগবে। ট্যাকা ছাড়েন, হেল্প নেন। ব্যস!”
ফোনের ওপাশ থেকে রুস্তম কিছুক্ষণ চুপ থাকে৷ তারপর জবাব দেয়,
”সেকেন্ড কন্ডিশনটা অ্যাপ্রুভড করে নিলাম। বাট, ফার্স্ট কন্ডিশনের কোনো এক্সিস্টেন্স যেহেতু নেই, তাই ওটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।
জীম এবার বলে উঠলো,
“ওই শালার ব্যাটা; সত্যি করে কন তো, কি লুকাচ্ছেন আমার কাছ থেকে?”
“নাথিং ডিয়ার। জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে পড়তে পড়তে মাথাটা গেছে তোমার।”
“ফাতরামি বন্ধ করেন শালা! ছাগল পেয়েছেন আমাকে?”
“না, অতি বালপাকনা পোলাপান।”
“আমি? শালা আপনাকে তো..”
জীম পুরো কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই শাহবীর রুস্তম বলে ওঠে,
“বাসে আছি। সবে ক্যান্টনমেন্ট থেকে রওয়ানা হয়েছি আমরা। ফিরতে সন্ধ্যা হবে৷ তুমি যেই কাজটা করবে তা হলো, আম্মা যখন ঘুম থেকে উঠবে; তখন তাকে গিয়ে বলবে, আমি আর আমার কলিগরা কয়েকদিনের ছুটি পেয়েছি। এই ছুটিতে ওরা আমার সাথে চিটাগাং-এ বিয়ে অ্যাটেন্ড করবে৷ ওরা আমার সাথেই আমাদের বাসায় আসছে। আমরা টোট্যাল নয়জন আছি। আম্মাকে জানানোর পরে ওদের সবার থাকার ব্যবস্থা করতে বোলো। সাথে তিনজন মেয়ে কলিগও আছে। ওরা আসার পরে আম্মা যেন ওভার রিয়্যাকশন না দেয়, বুঝেছো? আমরা আসার পরে সবকিছু হ্যান্ডেল করার দায়িত্ব তোমার। মেইনলি আম্মাকে। জানো তো, উনি মাঝেমধ্যে বিনা কারণে ওভার রিয়্যাকশন দিয়ে বসেন। কলিগদের সামনে যেন অমন না করেন, এটা বোঝাবে। তাকে আর আমি কল করে জানালাম না৷ তা করতে গেলে আরো হাজারটা প্রশ্ন করে বসবে। আর বাকিটা আমি এসে বুঝিয়ে বলবো। বুঝতে পেরেছো?”
“বুঝতে পারলাম একটু বেশিই।”
“এসে দেখছি, গোয়েন্দাগিরি করে করে তোমার মাথার কি হাল! রাখছি এখন। আল্লাহ হাফেজ।”
সফেদ রঙের সুবিশাল বাসটি। বাসের গায়ে “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী”—এর লোগো খচিত। এই বাসটির গন্তব্য রাজশাহীর পথে। যাত্রা শুরু হয়েছে সাভার ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা থেকে। বাসের মধ্যে নয়টি সিটে অবস্থান করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাভার ক্যান্টনমেন্টের প্যারা-কমান্ডো বিগ্রেডের নয়জন প্যারা-কমান্ডো অফিসার। যা ৯ম পদাতিক ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত। ৯ম পদাতিক ডিভিশন বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী এবং বিশেষায়িত ডিভিশনগুলোর মধ্যে একটি।
এটি সাভার ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকারী প্যারা-কমান্ডো বিগ্রেডের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণকারী ডিভিশন।
বাসে যারা অবস্থান করছে, তারা নয়জন-ই টিম মেম্বার।
মেজর শাহবীর রুস্তম— এই স্পেশাল টিমের ক্যাপ্টেন, টিম লিডার। লেফটেন্যান্ট হাসান মোর্শেদ, ডেপুটি টিম লিডার। মেজর রুবায়েত নওয়াজ, ইনটেলিজেন্স অফিসার। জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার তহুরা রেহমান, স্নাইপার স্পেশালিস্ট। লেফটেন্যান্ট আফিম মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার। কমব্যাট মেডিকেল অফিসার, মেজর শোয়েব মুস্তাফিজ। সিগন্যাল অফিসার, লেফটেন্যান্ট জেসি হায়দার। জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার সৈয়দা রিক্তি , অ্যাডভান্সড ওয়্যাপন স্পেশালিষ্ট। ক্লোজ কমব্যাট এক্সপার্ট, নন কমিশন্ড অফিসার রায়ান কবির। এই ক’জনকে নিয়ে এই টিম গঠিত হয়েছে। সব বাঘা বাঘা অফিসাররা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্ডারে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্পমেয়াদি এবং দ্রুতগতির মিশন পরিচালনায় গঠিত একটি স্পেশাল টিম। দু’দিন আগে একটা দীর্ঘমেয়াদি সাসটেইনড অপারেশনস কমপ্লিট করে অথোরিটি থেকে ছুটি পেয়েছে তারা সবাই। এই টাস্ক ফোর্সের অফিসারগণ বিশ্রামের জন্য দীর্ঘ পনেরো দিনের ছুটি পেয়ে এবার ঢাকা হতে রাজশাহীর পথে পাড়ি জমিয়েছে। এমনটাই জানে সবাই। আসলে, সবাইকে বলা হয়েছে এটা-ই।
মেজর রুস্তম ফোনে কথা বলা শেষ করে আলিশান সিটে মাথা এলিয়ে দিতেই বিপরীত পাশের সিট থেকে অফিসার শোয়েব হেডফোন সরিয়ে প্রশ্ন করে,
“কাজ হয়েছে ক্যাপ্টেন?”
“হুঁ। ওদিকটা ঠিকঠাক। এবার জাস্ট নিজেদের গেটআপ চেঞ্জ করে নাও। এখন থেকেই তোমরা সবাই আমার ফ্রেন্ড। জাস্ট অনলি ফ্রেন্ড। আর কিছু নয়, ওকে? আমরা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি। কোম্পানি হতে আমরা সবাই একসাথে ফেক্সিবল লিভ নিয়েছি। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও সবাই।”
শেষের কথাগুলো বেশ জোরেই কমান্ডের সুরে বাসের সকল সেনা অফিসারদের উদ্দেশ্যে বললো মেজর শাহবীর রুস্তম। সবার একান্ত মনোযোগ তার দিকেই ছিল। কথা শেষ হতেই সবাই “ইয়েস স্যার!” বলে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
ডলি বেগম শোবার ঘরের বারান্দায় বসে ফোনালাপ করতে ব্যস্ত ছিলেন। জীম তখন গিয়ে পেছনে দাঁড়ায়। শাশুড়িকে কথা বলতে ব্যস্ত দেখে এগোলো না আর৷ শুনতে পেল, ওর শাশুড়ি তার মেজো বোনের সাথে কথা বলছেন। কথার ধাঁচে সেরকমই বোঝালো। মনে হচ্ছে, আজকে চিটাগাং যাওয়ার ব্যাপারে কথা হচ্ছে।
ডলি বেগম তার মেজো বোনকে বলছেন, “বড় ছেলেটার কথা আর কি বলবো বল! ওকে এতো করে অনুরোধ করলাম, যেন একটু ছুটি নেওয়ার ব্যবস্থা করে জরুরি ভিত্তিতে। এতো বড় একটা বিয়ের আয়োজন। তাছাড়াও চিটাগাং বেড়াতে যাওয়া হয় না প্রায় তিন বছর হতে চললো। এবারে যাওয়ার পর বেড়ানোর সময়কালটা একটু দীর্ঘ হবে। তারিনের মেয়ের বিয়েতে তো থাকবোই। সেই সাথে সেখানকার সব আত্মীয়দের বাসায় বেড়িয়ে আসবো। তা ছেলে আমার দু’দিন আগে জানালো, সে নাকি ছুটি নিতে পারবে না। তার এখন কাজের খুব প্রেশার। এই সময়ে ছুটির আবেদন করাও ঠিক নয়। আর কি করবো বল?জীম আর তাজরীনকে নিয়েই রওয়ানা হবো আমি। ছোট মেয়েটা হোস্টেল থেকে ফিরবে সন্ধ্যার মধ্যেই। আমাদের ব্যাডিং সব গোছানো শেষ। তাজরীন ফিরলে কাল সকালেই রওয়ানা হবো। তোরা কখন রওয়ানা দিবি?”
ডলি বেগম আরো কিছুক্ষণ কথা বললেন। জীম পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল। শাশুড়ির ফোনে কথাবার্তা শেষ হতেই ও সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“আম্মা শোনো।”
ডলি বেগম মুখ তুলে চাইলেন। তারপর একটা হালকা হেসে জিজ্ঞাসা করলেন,
“বল মা। টেবিলে তোর নাস্তা ঢেকে রাখছিলাম তো। খাইছোস?”
“খাওয়া-দাওয়া ছাড়ো তো আম্মা। তোমার জন্য একটা দারুণ সুখবর আছে।”
জীম অতি উচ্ছ্বসিত হয়ে ডলি বেগমের চেয়ারের পাশে ফ্লোরে হাঁটু মুড়ে বসে তার হাত ধরে কথাটা বললো। ডলি বেগম সরু চোখে চেয়ে থেকে প্রশ্ন করলেন,
“কী সুখবর?”
“তোমার ছেলে ফিরছে গো আম্মা!”
“কে ফিরছে?!”
ডলি বেগম বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করেন। জীম চটপটে গলায় জবাব দিলো,
“তোমার পোলা রাজশাহী আসছে আজ। পনেরো দিনের ছুটি পেয়েছে। তবে একা না। তার কলিগ-বন্ধুদেরও সাথে নিয়ে আসছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে এসে পরবে। চলো, মেজর সাহেবের বাড়িতে আসা উপলক্ষে আয়োজন করতে হবে তো!”