নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ২৮
ঝিলিক মল্লিক
তাজরীন রুবায়েতের অন্যরকম কথা শুনে কিছুক্ষণ থ’ মে’রে দাঁড়িয়েছিল। ওখান থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে, তখনই হঠাৎ কারো গোঙানির আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে গেল তাজরীন। প্রথমে ভাবলো, হয়তো ওর মনের ভুল। ভুলভাল শুনেছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবারও একইরকম আওয়াজ শোনা গেল। কৌতূহল জাগলো ওর মনে। কিঞ্চিৎ নয়, অনেকটাই বটে। কিছু একটা চলছে এখানে। যা সাধারণ মানুষের জ্ঞানের বাইরে। এ সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি। কৌতূহলী তাজরীন এগোনোর চেষ্টা করলো। রুবায়েত কঠোর হাতে ওকে আটকাতে চাইলো। মুখে বললো,
“ওদিকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ভূত-প্রেত থাকার সম্ভবনা আছে। আপনাকে ধরবে কিন্তু।”
তাজরীন সন্দিহান। রুবায়েত তো এভাবে কখনো কথা বলে না৷ কন্ঠস্বরে কিঞ্চিৎ রসিকতার আওয়াজ৷ তারমানে নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। তাজরীন এবার জোরপূর্বক রুবায়েতের হাত ঠেলে সরিয়ে দিয়ে এগোলো।
তাজরীন নির্বাক। অতর্কিতে গোল হয়ে আসা মুখে হাত দিয়ে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। একটা চটের বস্তা। তার ভেতর থেকে কারো গোঙানোর আওয়াজ আসছে। দুই মিনিটের মধ্যেই পিনপতন নীরবতা। সুনশান পরিবেশ আগের রূপ ধারণ করলো। তাজরীন চিৎকার দেবে, প্রস্তুতি চলছে। চিৎকার মুখ থেকে বেরিয়েও গেছে ততক্ষণে। সঙ্গে সঙ্গে রুবায়েত পেছন থেকে মুখ চেপে ধরলো তাজরীনের। টেনে সরিয়ে নিয়ে আসলো সেখান থেকে। নারিকেল গাছের আড়ালে দাড় করিয়ে হাত সরিয়ে নিলো মুখ থেকে। তাজরীন জোরে জোরে বারকয়েক নিঃশ্বাস টেনে ভেতরে নিলো। হাঁপিয়ে উঠেছে ও। আপাতত রুবায়েতকে প্রচন্ড ভয় করছে। তাজরীন ধীরে ধীরে রুবায়েতের মুখের দিকে তাকায়। রুবায়েত ঘামছে। চোখে-মুখে ধরা পড়ার পর দুশ্চিন্তার আভাস। তাজরীনকে ভয়টা আরো বেশি জেঁকে ধরে। রুবায়েতকে প্রশ্ন করে সরাসরি —
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“খু’নি আপনি? মানুষ খু’ন করছেন? কাকে এনে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলছেন? বলুন?”
“লিসেন তাজ, কেউ নেই ওখানে। ভুলভাল দেখেছো তুমি। তাছাড়াও..”
“চুউপ! একটা কথাও বলবেন না। অস্বীকার করছেন কোন মুখে? আপনারা কী করতে এসেছেন এখানে? সত্যি করে বলুন। নাহলে আমি সবাইকে গিয়ে বলে দেবো, আপনারা কারা, কোন উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন!”
রুবায়েত হাত উঠিয়ে বলার চেষ্টা করতেই ওকে থামিয়ে দিয়ে কথাগুলো বললো তাজরীন। আপাতত ওর মাথা কাজ করছে না। শুধু চোখের সামনে বস্তাবন্দি প্রাণীর গোঙানির দৃশ্য ভেসে উঠছে। হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠছে ওর। রুবায়েতকে এই মুহূর্তে ভালোভাবে নিতে পারছে না ও। রুবায়েত তাজরীনের কথা শুনে নিরুপায় হয়ে বললো,
“কেউ মারা যায়নি তাজ। ভুল বুঝছো। ওখানে একজনকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দ্যাট’স ইট। আর কিছু শোনার কোনো প্রয়োজন তোমার আছে বলে মনে করছি না। এখান থেকে যাও। জাস্ট গেট লস্ট!”
রুবায়েত কিছুটা চেঁচিয়ে ধমক দিয়ে বললো তাজরীনকে। কাজের কাজ কিছুই হলো না। বরং তাজরীন গাছের কাছ থেকে সরে সামনের দিকে এগিয়ে এসে বুকে দুই হাত গুঁজে বেশ দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো,
“ওকে। আপনি, আপনারা যা খুশি করতে পারেন। আমাকে না বলুন, অসুবিধা নেই। কিন্তু আমি আপনাদের এ-সমস্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সবাইকে জানাবো। নিস্তার পাবেন না আপনারা। এমনকি এসবের সাথে আমার বড়ভাই জড়িত থাকলেও নয়। এখন আমি সবাইকে গিয়ে বলে দেবো, এখানে বিয়ে অ্যাটেন্ড করার নামে আপনারা কোনো নিষ্পাপ মানুষের ক্ষতি করতে এসেছেন। আমার যতটুকু সাধ্য, চেষ্টা করবো আপনাদেরকে আটকানোর।”
তাজরীন পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য। মুহূর্তের মধ্যে ওকে আটকালো রুবায়েত। হাত টেনে ধরে কিছুটা মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“একটা শব্দও যেন ওখানে গিয়ে তোমার মুখ থেকে বের না হয়। বোবা হয়ে থাকবে। তোমার একটা বোকামির জন্য আমরা কোনোরকম ঝামেলায় পরতে চাই না। আর হ্যাঁ, তুমি জানতে চাইছিলে না? কী করছি, কেন করছি আমরা? তাহলে শুনে রাখো, আমরা যা করছি; এটা সিক্রেট। অবশ্যই কারো ক্ষতির জন্য করছি না। যা যা করছি, তাতে সবার মঙ্গল। সুতরাং, তোমার ননস্টপ চলতে থাকা ননসেন্স মুখটাকে আপাতত বন্ধ রাখবে। নাহলে দ্বিতীয়বার এই মুখ নিয়ে আমার সামনে দাঁড়াতেও পারবে না। চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে ফেলে দেবো। ওয়ার্ন করছি।”
তাজরীন রুবায়েতের কথা শুনে কিঞ্চিৎ ভয় পেল। তবে সরাসরি প্রকাশ করলো না। কিছুটা শান্ত হয়ে বললো,
“আর যদি আপনার কথা শুনি তাহলে?”
“যা চাইবে, তাই পাবে।”
“আর যদি না শুনি?”
“চট্টগ্রামের পাহাড়.. তোমার সম্ভবত অ্যাক্রোফোবিয়া আছে। অ্যাম আই রাইট?”
তাজরীন অবাক হলো। লোকটা জানলো কীভাবে এ সম্পর্কে? সে তো কাউকেই বলেনি। তাজরীন সে প্রসঙ্গে গেল না আর। রুবায়েতের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এবার বললো,
“আপনার কথা না শুনলেও কিচ্ছু যায় আসবে না আমার। তবে আমি শুনবো, একটা বিশেষ কারণে। কারণটা আপাতত তোলা থাক। কিন্তু আমার কিছু কন্ডিশন আছে এই মুহূর্তে।”
“কীসের কন্ডিশন?”
“অনেকগুলো, আপনি রাখতে বাধ্য।”
“বেশি ফটরফটর না করে সোজা কথায় আসো তাজ৷ আমার হাতে টাইম নেই বেশি। আজকের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে।”
“কন্ডিশন নাম্বার ওয়ান, আমি আপনাকে এখন যতগুলো প্রশ্ন করবো; সবগুলোর অ্যান্সার আপনাকে দিতে হবে। আর কন্ডিশন নাম্বার টু, ওটা কাল বলবো।”
রুবায়েতের মেজাজ তরতর করে বাড়ছে। তবু যথেষ্ট শান্ত থাকার চেষ্টা করে বললো,
“ওকে। ডিল ডান। শুরু করো।”
তাজরীন প্রশ্ন করা শুরু করলো,
“আপনারা কী এখানে শুধুমাত্র বিয়ে অ্যাটেন্ড করতেই এসেছেন?”
“না।”
রুবায়েত শান্ত স্বরে স্পষ্ট জবাব দিলো। তাজরীন আবারও প্রশ্ন করলো,
“আপনাদের কাছে প্রটেকশন ওয়েপন আছে। আমি কী ঠিক?”
“ইয়েস।”
“আপনারা গত পরশু রাতে সাধুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন লুকিয়ে। জেসি, রিক্তি আর তহুরা কুঠিবাড়িতে থাকলেও ওরা এই বিষয়ে জানতো। তাই-না?”
“হু।”
“আপনারা এখানে একটা বিশেষ কারণে এসেছেন। কারণটা আমি ঠিক জানি না। তবে এতটুকু জানি, আপনারা জব থেকে নরমালি কোনো ছুটি পাননি। রাইট?”
“হু।”
“আপনার ওপর সেদিন রাতে যেই লোকটা আক্রমণ করেছিল, তাকেও আপনি চেনেন?”
“হ্যাঁ। চিনে নিয়েছি।”
“আপনাদের এসব কাজের ব্যাপারে আপনাদের অথোরিটি আর এখানকার থানা-পুলিশ জানে, রাইট?”
“হু।”
রুবায়েত একটুও অবাক হচ্ছে না তাজরীন এতোসব ব্যাপারে জানে দেখে। শুধু চুপচাপ প্রতিটা কথার জবাব দিয়ে যাচ্ছে। তাজরীন আবারও প্রশ্ন করে,
“আমার বড়ভাই তো সবকিছুর মূল হোতা৷ আপনাদের সিক্রেট মিশন, তাতে আমরা সাধারণ মানুষ ইন্টারফেয়ার করার অধিকার রাখি না। কিন্তু আপনারা এই বিয়েবাড়িকেই কেন বেছে নিলেন রুবায়েত? এখানে শত শত ছোট বাচ্চা আছে। বযস্ক মানুষেরা আছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, জীবিত কতগুলো মানুষ আছে। আপনাদের এসবের চক্করে ওদের যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?”
“হবে না। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।”
তাজরীন জবাব দিলো,
“ওকে৷ যা ভালো বোঝেন, করেন। আর তো চারদিনের মতো আছি এখানে। আমিও দেখবো, আপনারা কিভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করেন। তবে মানতে হবে, গেইম আপনারা বেশ ভালোই খেলতে পারেন। আমাকে ড্রামা কুইন বলেন না? আমার থেকেও ভালো ড্রামা করতে পারেন। নাহলে অথোরিটির স্পেশাল পারমিশনে এখানে এসে এমন নাটক-তামাশা! বাহবা পাওয়ার মতো।”
তাজরীন যাবে বলে পা বাড়ালো। রুবায়েত পেছন থেকে বলে উঠলো,
“অন্যের ফোন ধরাকে আমি জঘন্য অপরাধের কাতারে ফেলি তাজ। আর আপনি সেই অপরাধটা করে ফেলেছেন। চরম দুঃসাহস দেখিয়েছেন। অন্যের ফোনের পাসওয়ার্ড প্যাটার্ন দেখার ভালো ট্যালেন্ট আছে আপনার দেখছি! এর শোধ অবশ্যই নেওয়া হবে। আপাতত অব্যহতি দিলাম৷ কজ, আপনার পেছনে নষ্ট করার মতো ফালতু সময় আমার নেই।”
তাজরীন দেখলো, রুবায়েত অন্ধকারে উধাও হয়েছে৷ তাজরীন জানে, ওরা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে ধরতে এসেছে এখানে। কয়েকজনকে স্থানীয় পুলিশ বাহিনী এনকাউন্টারও করে দেবে। তারপর জানানো হবে, আসামি পালানোর চেষ্টা করায় এমনটা করতে বাধ্য হয়েছে তারা।
তাজরীন সবকিছুই জানে৷ কিন্তু রুবায়েতের সামনে এমনভাবে কথা বলেছে যেন, আংশিক তথ্য জানতে পেরেছে। সবকিছু স্বীকার করেনি, কারণ এসব সেনসেটিভ ইস্যু। তাজরীনের জানা উচিত নয়৷ তাজরীন বরং অজ্ঞাত-ই রইলো।
আজ গায়ে হলুদ। প্যান্ডেল হলুদে হলুদে সেজে উঠেছে। দুপুরের দিকে একদফা হলুদ মাখানো হয়ে গেছে। এখন সন্ধ্যায় হলুদ অনুষ্ঠান।
শাহবীর, আফিম, হাসান, রুবায়েত, শোয়েব, আর রায়ান গোল হয়ে বসে আছে কতগুলো চেয়ার নিয়ে। ওদিকে অনুষ্ঠানে অনেক মানুষজনের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। শাহবীর মুখে হাত রেখে রুবায়েতকে উদ্দেশ্য করে নিচু স্বরে বললো,
“এই সুযোগে তোমাকে বেরিয়ে যেতে হবে রুবায়েত। ফেরিঘাটে যাও। ওখানে একজন দেখা করবে তোমার সাথে।”
তারপর রায়ানকে নির্দেশনা দিলো,
“রায়ান, তোমাকে যেখানে যেতে বলেছিলাম; সেখানে যাবে। আমাদের চোখে ধূলো দেওয়া হচ্ছে খুব চালাকির সাথে। যেই জায়গার কথা ভেবেছিলাম, ওরা সেখানে নেই। বারবার জায়গা বদল করছে শুধুমাত্র আমাদেরকে ঘোরানোর জন্য। দু’টো জায়গা রেড জোনে এসেছে। তুমি আর শোয়েব আলাদাভাবে সেখানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আমাকে জানাবে। তারপর ডিসিশন নেবো। এরপর মোক্ষম চাল। সবকিছু এই বিয়ের মেইন অকেশন হওয়ার মধ্যেই কমপ্লিট না করলে পরে সহজ হবে না কাজটা। ওসির সাথে আজও কথা হয়েছে আমার। তারা অলওয়েজ রেডি। জাস্ট অথোরিটির অর্ডার আসলেই..”
শাহবীর পুরো কথা শেষ না করে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলে,
“রায়ান আর শোয়েব, তোমাদেরকে মেসেজে লোকেশন সেন্ড করে দেবো। দেখে নিয়ে আজ রাতের মধ্যেই কাজ সেরে ফেলো। কাল কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান। রিমাইন্ড দ্যাট।”
আফিম এবার প্রশ্ন করলো,
“আমি আর হাসান কী করবো ক্যাপ্টেন?”
“তোমাদের আপাতত কোনো কাজ নেই। এখানেই থাকো। এখানে থাকা দরকার তোমাদের৷ সবাই নিরুদ্দেশ হলে ওরা সন্দেহ করবে। এমনিতেও সিলভি কিছুটা বাঁকা চোখে দেখছে।”
রুবায়েত উঠে শাহবীরের সাথে হ্যান্ডশেক করে বললো,
“ফেরিঘাটে ওরা ওঁত পেতে থাকতে পারে। প্রটেকশন ওয়েপন, হিম্মত আর রবের প্রতি ভরসা সবসময়ই থাকে ক্যাপ্টেন। বাট দোস্তো, আজ কোনোরকম নিশ্চয়তা নিয়ে যাচ্ছি না। আমার কাজটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবেই হোক, জান বাঁচিয়ে সফল হতেই হবে। আমার কিছু হলে কাউকে কোনোরকম এক্সপ্লেশন দেবে না৷ আম্মার আরো সন্তান আছেন। তার শূন্যতা তৈরি হবে না। তবে একটা অনুরোধ— অথোরিটিকে বোলো, মেজর রুবায়েত নেওয়াজ যদি শহীদ হয়; তবে তার লা’শ যেন জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়। স্মৃতিসৌধের সামনে রাখা হয়। অ্যাট অফ অল— সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে।”
রুবায়েতের সাথে সবাই কোলাকুলি করলো এগিয়ে এসে। সবার মুখ কিঞ্চিৎ ফ্যাকাশে, কিন্তু ওরা স্বাভাবিক। এর আগেও বহুবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। একসাথে প্রতিহত করেছে। কিন্তু এবারের কাজটা একটু খাতারনাক। রুবায়তকে একা-ই সামলাতে হবে। যেকোনো মূহুর্তে যা কিছু হয়ে যেতে পারে। কোনো নিশ্চয়তা নেই। একথা ওরা প্রত্যেকে জানে৷ জান হাতে নিয়ে চলতে হয় ওদের৷ আঁধার সমীপে দাঁড়িয়ে ওরা। রুবায়েত সামনে দাঁড়ানো ক্যাপ্টেনকে স্যালুট করলো সিভিল পোশাকেই। তারপরেই আঁধার ছেড়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। শাহবীরকেও যেতে হবে। জীমের সাথে দেখা করা প্রয়োজন। জীম একটা জরুরি কথা বলবে ওকে। গতকাল থেকেই বারবার বলছে। শাহবীর ব্যস্ততার কারণে শুনতে পারেনি। আজ শুনতেই হবে। নাহলে জীম আবারও অভিমান করে বসবে।
রুবায়েত বের হবে। সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও। প্রটেকশন ওয়েপনটা খুব সতর্কতার সাথে শার্টের নিচে গাঁটে রেখে হাঁটছে। ও বের হবে পেছনের পথ থেকে। পথিমধ্যে দেখা হলো তাজরীনের সাথে। আশেপাশে কয়েকজন মানুষ আছে নিজ খেয়ালে। আবছা আঁধার এদিকটায়। প্যান্ডেলের আলো ঠিকরে আসছে৷ তাজরীনের গালে, হাতে হলুদ। রুবায়েত ওকে এড়িয়ে যেতে চাইলো৷ কিন্তু তাজরীন ইচ্ছাকৃতভাবে পড়ে যাওয়ার ভান করে নিজের হাতটা রুবায়েতের সাদা শার্টের ওপর ফেললো। ওর হাতের হলুদ লেগে গেল রুবায়েতের সাদা শার্টে৷ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তাজরীন হালকা হেসে বললো,
“বাহ! আপনার গায়ে বিয়ের কনের জন্য বাটা হলুদ লেগে গেছে। এবার আপনারও শীঘ্রই বিয়ে হয়ে যাবে।”
রুবায়েত নির্লিপ্তভাবে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“যার জীবন-মরণের ঠিক নেই, তার বিয়ের আশা করা বোকামি তাজ। কেউ শেখায়নি আপনাকে? আসছি, আল্লাহ হাফেজ।”
নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ২৭
রুবায়েত বের হয়ে গেল। তাজরীন হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। এভাবে কেন কথা বললো লোকটা? ঘাড় ঘোরাতেই তাজরীন দেখতে পেল আফিম আর তহুরা এদিকে আসছে। তহুরার মুখ থমথমে। আফিমের মুখের হাবভাব মাত্রাতিরিক্ত গম্ভীর। আগে কখনো এভাবে দেখেনি আফিমকে। গুরুতর কিছু হয়েছে নাকি?