নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ২৯
ঝিলিক মল্লিক
আফিম ক্রমাগত ফোন স্ক্রল করেই চলেছে। অথচ তার সামনে যে একজন জ্বলজ্যান্ত মেয়েমানুষ দাঁড়িয়ে আছে, সেদিকে তার খেয়াল নেই। মেয়েমানুষকে গুরুত্ব না দেওয়া হচ্ছে অত্যাধিক অবমাননা এবং ঘোরতর অপরাধ। তালিকাভুক্তকরণে পরিস্থিতি আবার বেগতিক। কিছু একটা হয়েছে। ভয়াবহ কিছু। তাজরীন দূরে দাঁড়িয়েছিল। দূর থেকেই লক্ষ্য করছিল ওদের। অবস্থা সুবিধের নয়। আফিমের হাবভাব দেখে ভয় লাগছে। তবে কী আজ এই চট্টগ্রামের ভূমিতেই একটা রণক্ষেত্র তৈরি হবে? মার্ডার-ফার্ডার হবে নাকি দু’জনের একজন একে-অপরের হাতে? বলা যাচ্ছে না। নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না ও। দুশ্চিন্তায় নখ কামড়াতে শুরু করেছে। ভাবছে, এগিয়ে গিয়ে দু’জনের ঝামেলার ব্যাপারে শুনে মিটমাট করে দেওয়া যায় কিনা। তখনই ফোন পকেটে রেখে পকেটে হাত ঢুকিয়ে রেখে সোজা দাঁড়িয়ে থাক আফিম তহুরার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তাজরীনকে বললো,
“তাজরীন, তুমি একটু এখান থেকে যাবে? জরুরি কথক আছে আমাদের। ডোন্ট মাইন্ড হ্যাঁ? বুঝতেই তো পারছো, আমাদের পার্সোনাল ম্যাটার!”
পার্সোনাল ম্যাটার! আফিম ভাইয়া বলে কি! তাজরীন নিজেই এবার তব্দা খেয়ে গেল। আগে তো কখনো এতোটা সিরিয়াস দেখা যায়নি আফিম ভাইয়াকে। তবে আজ কী হলো? তহুরার সাথে কথাবার্তা ব্যক্তিগত ইস্যু বলছে! তাজরীন দু’পাশে ভদ্রভাবে মাথা নাড়িয়ে ছক কষতে কষতে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
তাজরীন যেতেই আফিম ফোন স্ক্রল করা বাদ দিয়ে তহুরার দিকে তাকালো। তহুরা উশখুশ করছে। বোঝাই যাচ্ছে, এহেন পরিস্থিতিতে অস্বস্তি হচ্ছে ওর। আফিম কোনো কথা না বলে সরাসরি তহুরার হাতের কব্জি মুঠোয় নিলো। তারপর ওকে টেনে নিয়ে গেল পুকুরপাড়ে। এদিকটায় কেউ নেই। নিরিবিলি পরিবেশ, তাই এখানে আসা। পুকুরঘাটে সান বাঁধানো ঘাট। সেখানে গিয়ে বসলো আফিম। তহুরা চলে যেতে চাইছিল। ওর আচরণেই উপলব্ধি করা যায়। আফিম তহুরার হাত ধরে টেনে বসালো। তারপর ওর মুখোমুখি বসলো। তহুরা ওর দিকে ফিরেও তাকালো না। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। আফিম একটানা অনেকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো সাড়া পাবার আশায়। কিন্তু তহুরা নিজের জায়গায় অবিচল। ঘাড় কোনোভাবেই ঘোরালো না। আফিম তখন ইটের ছোট একটা টুকরো উঠিয়ে পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়ে তহুরার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আজকাল তোকে চেনা যায় না তহু।”
“চেনার কথা ছিল বুঝি?”
তহুরা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করলো। চোখে-মুখে ওর বিষন্নতা। স্পষ্ট বোঝা যায়। মুখ মলিন হয়ে আছে। আফিম নির্লিপ্ত ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। তারপর বেশ কঠোরতার সাথে বলে,
“তুই এমন আচরণ করছিস কেন আমার সাথে? দু’দিন ধরে খেয়াল করছি, সবার সাথে বেশ হাসিখুশি থাকিস, ভালোভাবে কথা বলিস। আমাকে কেন এড়িয়ে যাচ্ছিস? আমি কী করেছি?”
“তোমার সাথে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।”
আফিমের প্রশ্নের জবাব না দিয়েই চলে যেতে চাইলো। উঠতে যাবে, তখনই আফিম ওকে জোরপূর্বক টেনে বসালো। হাতের কব্জি চেপে ধরে বললো,
“কোথাও যাবি না তুই। আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উঠতে পারবি না। ফাইজলামি শুরু করেছিস আমার সাথে?”
“ তোমার সাথে কেন ফাইজলামি করবো? কে তুমি?”
একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন। আফিমের জন্য বিরাট একটা ধাক্কা। সামান্য একটা প্রশ্ন। কিন্তু এর গূঢ় অর্থ যে কি চরম, তা সবার বোঝার কথা নয়। আফিম অস্থির হলো। তহুরার দুই হাত এবার নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে অস্থিরতার সহিত বললো,
“আমি কে — এমন প্রশ্ন করে কী বোঝাতে চাইলি তহু? একে-অপরের সাথে কী নির্দিষ্ট সম্পর্কের শিরোনাম থাকলেই অধিকার ফলানো যায়? এর বাইরে কিছু হয় না?”
“না হয় না।”
“এতোগুলো বছর ধরে আমরা একসাথে কাজ করছি, তারপরও তুই এমন কথা বলছিস কোন বিবেকে?”
তহুরা জবাব দিলো না। আজকাল ওর আর কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছা হয় না। আফিম হঠাৎ গলার স্বর কোমল করে তহুরার চোখে চোখ রেখে বললো,
“ওই মেয়েটার সাথে আমার জাস্ট টাইম পাসের রিলেশন। এমনকি এযাবৎকালে যতগুলো রিলেশন করেছি; সবগুলো-ই আমার দিক থেকে টাইমপাস ছিল৷ ইভেন, রিসেন্ট যেই রিলেশনটা চলছে, সেটাও আমার কাছে টাইমপাস। আর ওই মেয়েটার কাছেও…”
“ওই মেয়েটা বলছো কেন? তোমার প্রেমিকা না? কী যেন নাম?”
“আমার কাছে ওই মেয়েটা-ই। ওর নাম আমার ঠিকমতো মনে থাকে না।”
“কেন? তুমি-ই না আমাকে সেদিন শাসিয়েছিলে তোমার প্রেমিকাকে ওভাবে ডাকার জন্য?”
আফিম সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে,
“তুই আজ-ও সেই নাদান-ই রয়ে গেলি। তোকে আর মানুষ বানানো গেল না।”
আফিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তহুরার দুই গালে হাত রেখে ওর চোখে চায়। তারপর আফিম মেশানো কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আমি তোকে ভালোবাসি। বিয়ে করবি আমাকে?”
তহুরা চমকে ওঠে ছয় শব্দের বাক্যদ্বয় শোনার সাথে সাথে। ভালোবাসা! বিয়ে! বলে কী এসব?! পাগল হলো নাকি? তহুরা এবার সিরিয়াস হয়। সব নিরবতা, নিশ্চুপতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে তড়িঘড়িতে আফিমের কপালে হাতের উল্টো পিঠ রাখে। আফিম সন্ত্রস্ত দ্রুত কপাল হতে তহুরার হাত সরিয়ে দিতে দিতে বলে,
“আরে আরে কি করছিস! মাথা গেছে নাকি তোর?”
“আমার না, তোমার গেছে। তোমার জ্বর এসেছে কিনা, তা-ই দেখছি।”
“তোর কেন মনে হলো, আমার জ্বর এসেছে?”
“না মানে, উল্টাপাল্টা বকছো যে। তাই ভাবলাম!”
“আমি কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলছি না তহুরা। সোজা কথায় আসি।”
আফিম নিজের পায়ের ঊরুর ওপর হাতের কনুই রেখে খানিকটা ঝুঁকে বসলো তহুরার দিকে। তহুরা পেছালো না। একই ভঙ্গিমায় একরাশ বিস্ময় নিয়ে আফিমের দিকে তাকিয়ে রইলো সরু চোখে। গায়ের চাদরটা আরেকটু ভালোভাবে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য খুলতেই আফিম সেটা টেনে নিলো। নিজের গায়ে অর্ধেকঁ জড়িয়ে তহুরার মুখের ওপর বাকি অর্ধেক পাশ ছুড়ে দিলো। আফিম বোঝাতে চাইলো, ওর শীত লাগছে। তহুরা আজ শুধু বিস্মিত হয়েই চলেছে। দু’জনের দৃষ্টি পুকুরের বিশালতা ছাড়িয়ে দূর-দিগন্তের ওপারের নীলভ আসমানে। আজ পূর্ণিমা নয়। তবে তারকাখচিত আসমানের কারণ চারপাশ সামান্য আলোকিত হয়ে আছে। প্রকৃতিও যেন আজ নিজেকে প্রকাশ করতে ব্যস্ত। প্রকৃতির এই আবেশের মাঝেই আফিম সরলভাবে তহুরাকে জানালো,
“দ্যাখ তহু, প্রেম নিবেদন করার জন্য এই মুহূর্তে কোনো গোলাপ আমার কাছে নেই। এমনকি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য রিং-ও নেই। তবে আমি আর সময় নষ্ট করতে চাইছি না। তাই তোকে তোর মতো সহজ ভাষাতেই বলে দিচ্ছি, এতোকাল যা করেছি, করেছি। পুরুষ মানুষ আমি। ছাব্বিশ বছরের জীবনে কেউ এমনে এমনে সিঙ্গেল বসে থাকে না। আর ব্যাটা মানুষ তো মোটেই থাকে না। তাই স্বভাবতই আমিও প্রেম করেছি। প্রেম বললেও ভুল হবে। ওসবকে টাইমপাস বলা ভালো। কিন্তু কখনো কাউকে ভালোবাসিনি বা কারো প্রতি দুর্বলও হইনি। তবে একটা সময় গিয়ে আমি নিজের কাছে ক্লিয়ার হয়েছি যে, আমি তোর প্রতি দুর্বল। তোর জন্য আমার দিলে একটু ফিলিংস-টিলিংস আছে। তোকে দেখলে মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে ট্যাংট্যাঙাট্যাং সং বাজে বুঝলি। ওইযে গতবারের ক্যাম্পেইনে আমরা সবাই একসাথে যেই গানটা গেয়েছিলাম না? ওটার-ই টিউন। তো যাইহোক, তোর প্রতি যেহেতু আমার ফিলিংস-টিলিংস কাজ করে তাই তোকেই আমি বিয়ে করবো ব্যস। এখন তোকে জানিয়ে দিলাম। তুই প্রস্তাব নাকচ করলে করগে। তাতে আমার কোনো প্যারা নেই। রাজি না হলে একদিন রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। ওকে ডান! আমি পেরেছি।”
কথাগুলো চোখ বুঁজে এক নিঃশ্বাসে বলে থামলো আফিম। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। তহুরা ভ্রু কুঁচকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর মুখের দিকে৷ কি যে বললো, সব ওর মাথার ওপর দিয়ে গেল। তাই অনিশ্চয়তা দূর করতে আফিমকে বললো,
“কী বললে তুমি? আবারও বলো তো!”
“এক কথা আমি বার বার বলি না। না শুনলে ঘুমা তুই। আমি গেলাম আমার প্রেয়ার কাছে।”
“প্রেয়া আবার কে?”
“আমার এক্স।”
তহুরা উঠলো। পেছন থেকে আফিমের পিঠে দুমাদুম কতগুলো কিল বসালো। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো আফিম। তহুরা বললো,
“মজা নিচ্ছো না?”
“কি আশ্চর্য! তোর সাথে আমি মজা করবো কেন? তুই কী আমার সম্বন্ধী লাগিস নাকি?”
“তোমাকে আমি বিয়ে করবো না। যা খুশি করে নাও।”
তহুরা উল্টোপথে হাঁটা ধরলো। আফিম এতোক্ষণ সিরিয়াস ছিল না। এবার বেশ গুরুগম্ভীর হয়ে তহুরার হাত টেনে ধরলো পেছন থেকে। ওকে টেনে ওর পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
“কনভিন্স করার চেষ্টা করছি বলে ভাব নিস না তহু। তোদের মেয়েমানুষের আবার এসব ক্ষেত্রে বহুত ভাব। জানি তো আমি। অভিজ্ঞতা আছে বেশ। কিন্তু এখন কোনোরকম ভাবভঙ্গিমা নিতে পারছি না। কতগুলো দিন তুই আমার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিস। এখন মাথাব্যাথা নিরাময়ের কারণও তোকেই হতে হবে। তোকে দু’টো অপশন দিচ্ছি। তুই কী আমাকে বিয়ে করবি? অপশন নাম্বার এক— হ্যাঁ। অপশন নাম্বার দুই— অবশ্যই। এবার তুই বেছে নে, কোন অপশনটা নিবি।”
তহুরা ঘাড় ঘুরিয়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো আফিমের দিকে। পাগল হলো নাকি!
জীম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে শাহবীরকে। শাহবীরও ওকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ভাবছে, হঠাৎ হলোটা কি! কপাল ভালো, এদিকটাতে আলো থাকলেও কেউ আসছে না। নাহলে লজ্জায় পরতে হতো ওকে। শাহবীর জীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
“কী হয়েছে সিলভি? কি একটা জরুরি কথা বলবে বলছিলে?”
জীম মুখ ওঠালো শাহবীরের বুক থেকে। ওর চোখে-মুখে আনন্দ ঠিকরে পড়ছে। ঠোঁটের কোণে কপট হাসি বজায় রেখে বললো,
“জানেন, কি হয়েছে?”
“কী হয়েছে সিলভি?”
“একটা দারুণ ব্যাপার হয়েছে।”
“কী দারুণ ব্যাপার?”
“আপনাকে হুটহাট ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে।”
জীমের কথা শুনে মুচকি হাসে শাহবীর। প্রশ্ন করে,
“এই তোমার দারুণ ব্যাপার? জরুরি কথা?”
জীম আবারও ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“হ্যাঁ। এটাই জরুরি কথা। আরেকটা কথা ছিল অবশ্য।”
“কী কথা সিলভি?”
জীমের মুখ হঠাৎ নীলবর্ণ ধারণ করে। ওর মুখে ভাবভঙ্গি দেখে শাহবীরের মনে সন্দেহ জাগে। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। স্বাভাবিক কারণ জীম তাকে এখানে ডাকেনি। এতোটুকু নিশ্চিত শাহবীর। তবে এতো জড়তা কেন? জীম অপ্রকৃতস্থ হয়ে নত মুখে নিচু স্বরে বলে ওঠে,
“আমাদের মধ্যে তো অনেকদিন আগেই সবকিছু হয়ে গেছে, তাই-না রুস্তম?”
রুস্তম! আজ তাকে রুস্তম বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। কেন? কারণ কী এর? সচারাচর এই নামে সম্বোধন খুব কম করে জীম। তাই শাহবীরের একটু অবাকই লাগলো। তাছাড়াও কিসব উদ্ভট প্রশ্ন করছে এই মেয়ে। প্রশ্নের কোনো আগামাথা নেই। শাহবীর কিঞ্চিৎ মুখটা নামিয়ে জীমের থুতনি তুলে প্রশ্ন করলো,
“সবকিছু মানে?”
“স্বামী-স্ত্রী-এর মধ্যে যে-সব কিছু হয়, সেই সবকিছুর কথা বলছি আমি।”
“হ্যাঁ হয়েছো তো?”
“তো, -তো কিছুনা।”
জীম কিছু একটা বলতে যেয়েও বলে না। চুপ হয়ে যায়। শাহবীর তবু ওর মুখ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায় একইভাবে তাকিয়ে থাকে। জীম বলে অন্য কথা। শাহবীরকে চমকে দিয়ে প্রশ্ন করে,
“রুস্তম, ধরুন কাল আপনি থাকলেন না। যেকোনো কারণে হতে পারে। তখন আপনার শূণ্যতা কার কার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, ধারণা করতে পারেন? আর এই ব্যাপারে কী আপনার কিছু যায়-আসবে?”
“একদম-ই না সিলভি। যদি সত্যিই আমার কিছু যায়-আসতো তবে আমি এই পেশা বেছেই নিতাম না। তাই না?”
জীম এবার শাহবীরের কাছ থেকে অনেকটা দূরে সরে বলে,
“আমার যা উত্তর পাওয়ার আমি পেয়ে গেছি। এবার আপনি আসতে পারেন।”
শাহবীরের যাওয়ার অপেক্ষা না করে জীম নিজেই দ্রুত সেখান থেকে পা চালিয়ে চলে গেল। শাহবীর ওর যাওয়ার পানে চেয়ে ভাবনায় পরলো।
রুবায়েত ফিরলো গভীর রাতে। বিয়েবাড়ির আমেজ তখনও চলমান। কাল-ই তো বিয়ের মূল অনুষ্ঠান। সবাই উঠোনেই ছিল। রুবায়েতকে দেখে ডাক দিলো। রুবায়েত এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো সবার মাঝখানে। ইকবাল জিজ্ঞাসা করলো,
“কোথায় গিয়েছিলে রুবায়েত?”
রুবায়েত হাসিমুখে জবাব দিলো,
“এইতো ভাই, চায়ের দোকানে গিয়েছিলাম। বোঝেনই তো..”
রুবায়েতকে আর বলতে হলো না। সবাই বুঝে নিলো। সিগারেট অন্তঃ প্রাণ মানুষদের কী সিগারেট ছাড়া দিন শুরু হয়? দিন চলে? রাতে ঘুম হয়? শোয়েব আর রায়ানও এসে বসলো। ওরা জানালো, ওরা-ও রুবায়েতের সাথে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়েছিল। হঠাৎ মাহমুদ বলে উঠলো,
“রুবায়েত ভাই, আপনার পায়ে কী হয়েছে?”
সবার নজর গেল রুবায়েতের পায়ের দিকে। রুবায়েত নিজের পায়ের দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে অগোচরে ‘চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করলো। স্বভাবতই টাকনুর ওপরে প্যান্ট পরার কারণে সামান্য একটা ভুল হয়ে গেল। সেটাকে ধামাচাপা দিতে রুবায়েত জিন্স টেনে দিয়ে বললো,
“আরেহ তেমন কিছু না! অন্ধকারে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছিলাম। ভাঙা ইটের টুকরোয় বা’রি লেগেই আ’ঘাত পেয়েছি। চিন্তা কোরো না। আমি মলম লাগিয়ে নেবো।”
রুবায়েত উঠে গেল। দূর থেকে শাহবীর ওদেরকে ইশারায় ডাকলো। ওরা যেতেই ওদের নিয়ে কাঠের দোতলায় চলে গেল। শাহবীর দরজার খিল টেনে দিয়ে সবাইকে নিয়ে বসলো বিছানার ওপর। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো,
“কাজগুলো কমপ্লিট হয়েছে?”
শোয়েব, রায়ান জানালো, তাদের কাজ কমপ্লিট হয়েছে। লোকেশন দেখে এসেছে। সেখানে ওরা নেই। রুবায়েত বললো,
“ওরা কোথায় আছে, আমি জানতে পেরেছি। গিয়েছিলাম একটা কাজে, ফরচুনেটলি দু’টো কাজ হয়ে গেছে। ওদের মধ্যে দু’জন ওখানে ওঁত পেতে ছিল। হামলা করার চেষ্টা করেছিল। সফল হয়নি। ধরতে পারিনি দু’টোকে। তার আগেই পালিয়ে গেছে। নাহলে আমাদের কাজ আরো সহজ হয়ে যেতো।”
শাহবীর বললো,
“অসুবিধা নেই। আগামীকাল কিছু একটা হবেই। টার্গেট নিয়ে যেতে হবে। কাল রেডি থাকবে সবাই। আর যেন…”
“এক মিনিট, আসছি আমি।”
রুবায়েতেন ফোনে কল এসেছে। রিং বাজতেই আলোচনার মাঝে উঠে গেল ও। কিছুটা দূরে গিয়ে কল রিসিভ করে বললো,
নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ২৮
“হ্যালো, হ্যাঁ সোনা; তোমাকে কিছুক্ষণ পরে কল করছি আমি। রাগ করে না প্লিজ। এখন ঘুমাও। রাত জেগো না। শরীর খারাপ করবে। আমি ফিরে শরীরের বেহাল দশা দেখলে খুব খারাপ হবে কিন্তু। মনে রেখো।”