নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ৩০

নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ৩০
ঝিলিক মল্লিক

আজ কনে পক্ষের অনুষ্ঠান। বিয়েবাড়ির মূল আয়োজন। আজ মেয়েরা সব কুঠিবাড়ির কাঠের দোতলায়। শাড়ি পরছে সবাই একসাথে। তাজরীন পেটিকোট আর ব্লাউজ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থির থাকতে পারছে না। শাড়ি পরতে হবে। এতো মানুষের ভিড়। বৌমণিকে দেখলো এককোনায় দাঁড়িয়ে আছে অর্ধেক শাড়ি পরা অবস্থায়। তাজরীন এগিয়ে গেল সেদিকে। জীমকে আজ ভীষণ বিষন্ন দেখাচ্ছে। তাজরীন প্রথমে বুঝতে পারেনি। যখন ধারে গিয়ে দুইবার জোরে জোরে ডাকার পরেও তার বৌমণি ডাক শুনলো না; তখন তাজরীন বুঝলো, কিছু একটা হয়েছে। তার বৌমণি এতো মানুষের ভিড়েও অন্য জগতে রয়েছে। রিক্তি, জেসি এগিয়ে আসলো। ওরা দু’জন ভীষণ তাড়াহুড়ো করে শাড়ি পরছে। সবাইকে নিচে যেতে হবে দ্রুত। বরপক্ষ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। রুস্তমের মা এসে তাদেরকে শাড়ি পরতে সাহায্য করেছেন। বিয়েবাড়ির ব্যস্ততায় তার নাগাল-ই পাওয়া যাচ্ছিল না ক’দিন যাবত। আজ তাজরীন, তহুরা আর জেসিকে নিয়ে একপ্রকার জোরপূর্বক বড়ঘর থেকে তার মা’কে তুলে এনেছে শাড়ি পরিয়ে দেওয়ার জন্য। ডলি বেগম তখন তহুরাকে শাড়ি পরাচ্ছিলেন। তাজরীন জেসি আর রিক্তিকে পাশ কাটিয়ে জীমকে টেনে নিয়ে গেল পাশের ঘরে। দরজার খিল দিলো। জীম তখনও প্রতিক্রিয়াহীন। তাজরীন ওর মলিন মুখের দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,

“তোমার কী হয়েছে বৌমণি? ভাইয়া কিছু বলেছে তোমাকে?”
“না। তোমার ভাইয়া কিছু বলেনি। আর আমারও কিছু হয়নি।”
“বলো না আমাকে, কি হয়েছে তোমার? আমাকে তো তুমি নিজের বোনের মতো ভাবো। তাহলে বলতে অসুবিধা কী?”
তাজরীন নাছোড়বান্দা। বেশ জোরাজুরি করলো। শেষমেশ না পেরে জীম মুখ খুললো,
“আমি প্রেগন্যান্ট তাজ। তোমার একটা ভাইপো/ভাইজি আসছে।”
শূন্যে তাকিয়ে কথাগুলো বললো জীম। তাজরীন এক মূহুর্তের জন্য থ’ হয়ে রইলো। পরমুহূর্তেই উৎফুল্ল হয়ে জীমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আলহামদুলিল্লাহ্ আলহামদুলিল্লাহ্! এ তো দারুণ খুশির খবর! কিন্তু তুমি এমন বিষন্ন কেন? কাউকে এই সুখবর জানিয়েছো? ভাইয়াকে?”
তাজরীন চঞ্চল হলো৷ জীম ওর হাত চেপে ধরে বললো,
“কাউকে জানাইনি তাজ। এখন কাউকে জানাতেও চাইনি। এমনকি তোমাকেও নয়। তবে তোমার জোরাজুরির জন্য জানাতে বাধ্য হলাম। দয়া করে তুমি আপাতত কাউকে কিছু বোলো না এই ব্যাপারে। সময় হলে আমি জানিয়ে দেবো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কেন বৌমণি? তুমি কাউকে কিছু জানাচ্ছো না কেন? আর ভাইয়া? তার তো অবশ্যই জানা দরকার। ভাইয়ার সবার প্রথমে জানার হক আছে।”
জীম বিছানার ওপর বসলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
“নাহ তাজরীন। তোমার ভাইয়ার এখন কোনোকিছু জানার দরকার নেই। উনি যা করছেন, করতে থাকুক। নিজের কাজে ব্যস্ত থাকুক। এখন এই ব্যাপারে জানলে তার টেনশন বাড়বে। আর আমি এখন তাকে কোনোপ্রকার চাপে ফেলতে চাইছি না।”

“কীসের টেনশন ভাইয়ার? আমি তো কখনো শুনিনি, কোনো পুরুষের তার অনাগত সন্তানের আসার সুখবর শুনে টেনশন হতে পারে। আর আমার ভাইয়া তো ওই ক্যাটাগরির নয়।”
“বিষয়টাতে তোমার ভাইয়া কেমন— এই প্রশ্নে আসছে না তাজ। তোমার ভাইয়া খুব ভালোমানুষ। সেকথা তোমার আর আম্মার পরে একমাত্র আমি-ই ভালো জানি। উনার মতো সবাই হতে পারে না। আমার কাছে আব্বার পরে দ্বিতীয় সুন্দর পুরুষ তিনি। কিন্তু আমি আটকে যাচ্ছি অন্য জায়গায়।”
“কোথায় বৌমণি? আমাকে বলো। আমার সাথে শেয়ার করে দেখো। আমি হচ্ছি প্রবলেমের সলিউশন দেওয়াতে মাস্টার। এক চুটকিতে সলিউশন দিয়ে দেবো।”
তাজরীন সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে৷ দমবন্ধকর পরিস্থিতি চলছে আপাতত। জীম ওর দুই হাতের মুঠো চেপে ধরে বললো,

“তুমি কী জানো, তোমার ভাইয়ারা এখানে একটা সিক্রেট মিশনের জন্য এসেছে? তাদেরকে অথোরিটি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্পেশাল পারমিশনে এখানে পাঠানো হয়েছে। তাদের এবারের মিশনটা খুব ক্রিটিকাল। রিস্ক আছে অনেক। আমি নিজে এ ব্যাপারে শিওর হয়েছি। এমনকি শাহবীর নিজেও জানেন। তাই আমার কাছে সামান্য কিছুও খোলাসা করেননি। করলে আমি প্যানিক করতাম, তা উনি জানেন। দু-একদিনের মধ্যেই হয়তো কিছু একটা হবে। আঁচ করতে পারছি আমি। প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা শিওর হয়েছি এই মাসে। গতমাস থেকেই একটু খটকা ছিল। প্রেগন্যান্সি কিটও কাছেই ছিল। টেস্ট করার পর. . .যাইহোক, আমি অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে এখন কিছু বলবো না। আল্লাহর রহমতে এবার ভালোই ভালোই ফিরে আসুক, তারপর।”
তাজরীন উঠে দাঁড়ালো দরজার খিল খুলতে খুলতে বললো,
“আমি সব জানি বৌমণি। তোমার কথা রাখবো আমি। কাউকে কিছু জানাবো না। মনে-প্রাণে দোয়া করি, সবকিছু ঠিক থাকুক। তুমি চিন্তা কোরো না।”
তাজরীন বাইরের ঘরে চলে গেল। জীম ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শাড়ি পরতে ব্যস্ত হয়।

শাহবীর খুব ব্যস্ত এখন। কানে ব্লুটুথ হেডফোন লাগানো৷ ফোন হাতে। একদিকে টেক্সট করছে। অপরদিকে ফোনকলে কথা বলছে। অতি সতর্ক দৃষ্টিতে চারিপাশে তাকাচ্ছে। পর্যবেক্ষণ করছে। রুবায়েত তার থেকে হাতকয়েক দূরে দাঁড়িয়ে। গ্রুপ কলে রয়েছে ওরা। জেসিরা প্যান্ডেলের ভেতরে। ওরাও ফোনকলে রয়েছে। রুস্তম নির্দেশনা দিলো,
“জেসি, রিক্তি, তহুরা — তোমরা যেখানে আছো, ওখানেই থাকো। সবাই একসাথে গায়েব হলে ঝামেলা হবে। রুবায়েত বের হবে বৈঠকের পরে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাকিরা বেরিয়ে পরবে। আফিম, শোয়েব কানেক্ট থাকো।”
রুবায়েত প্যান্ডেলের ভেতরের দিকে যাচ্ছিল হাসানের সাথে। তাজরীন শাড়ির কুচি ধরে এদিকেই আসছিল। ওকে কুট্টুস ডাকছে পেছন থেকে। তাজরীন ওকে দেখে হাসিমুখে হাত নাড়ালো। রুবায়েত একপলক সেদিকে তাকালো ভ্রু কুঁচকে, সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। দ্বিতীয়বার আর তাকালো না।

তাজরীন খাওয়া শেষ করে তহুরাকে নিয়ে পাশাপাশি দু’টো চেয়ারে বসে আছে প্যান্ডেলের বাইরে। ওদিকটায় বেশ শোরগোল। বরযাত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত সবাই সামনে গান-বাজনা চালু করেছে কয়েকজন যুবক। তাজরীন উপভোগ করছে বেশ। ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে ওর। হঠাৎ তাজরীনের ফোনে কল আসে। ফোনস্ক্রিনে নাম্বারটা দেখে প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করে তাজরীন। তা দেখে পাশ থেকে তহুরা বললো,
“রিং বাজছে তাজরীন। কল রিসিভ করবে না?”
তাজরীন তবু চুপ করে বসে থাকে। তহুরা এবার কৌতূহলী হয়ে বলে,
“কল রিসিভ করছো না কেন? কে কল করেছে?”

“এশরাক।”
“এশরাকটা কে?”
“যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, সে।”
“তাহলে কল রিসিভ করছো না কেন?”
তাজরীন এবার কল রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে কিছু একটা বলতেই তাজরীন বলে উঠলো,
“বললাম না? আমি একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এভাবে জেরা করছো কেন? তুমি দয়ার কথা বলছো না? আমি বলেছিলাম তোমাকে দয়া দেখাতে? ফালতু! কল কাটো।”
তাজরীন নিজেই কল কেটে দিলো। বেশ রেগে গেছে ও। তহুরা এতোক্ষণ হতভম্ব হয়ে ওর কথা শুনছিল। এবার আর কৌতূহল দমন করতে না পেরে বললো,
“তোমাদের ঝামেলা হয়েছে নাকি? এমাহ, বিয়ের আগে এভাবে ঝামেলা করা ঠিক না। আফটার অল পছন্দের মানুষ।”

তহুরা কথাটা স্বাভাবিকভাবে বললেও তাজরীন শোনামাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে বলে উঠলো,
“কীসের পছন্দের মানুষ হ্যাঁ? কোনো পছন্দের মানুষ না ও। ফালতু একটা ছেলে। কিভাবে যে টলারেট করি, তা শুধুমাত্র আমি আর আমার আল্লাহ-ই ভালো জানেন!”
“তাহলে ওকে বিয়ে করছো কেন?”
“দায়ে পড়ে। সমাজের জন্য।”
তহুরার কৌতূহল রীতিমতো বাড়ছে। তাজরীন তো এভাবে কথা বলে না। তাজরীন এবার উঠে দাঁড়ালো। তহুরা বুঝলো, তাজরীন কিছু বলবে না৷ তাই চলে যেতে চাইছে। তহুরা ওকে টেনে বসালো৷ আকুতি করে বললো,
“কী হয়েছে? আমাকে বলা যাবে? তোমাকে এই একটা ব্যাপার নিয়ে এতো আপসেট কেন লাগে? এর আগেও খেয়াল করেছি, তোমার বিয়ে আর ফিয়োন্সের টপিক উঠলেই এমনভাবে আপসেট হয়ে যাও। জানি, আমার সম্ভবত জানার অধিকার নেই। অনাধিকার চর্চা করছি। তবু, মনের দুঃখ কমাতে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো৷ এমনিতেও তোমার পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না।”
তাজরীন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা। পরিবেশ নির্জন দেখে নিচু স্বরে বলতে শুরু করলো,

“দুঃখের কথা বলছো? আমার জীবনে একটা সময়ে কোনো দুঃখ ছিল না। যদিও এখনও আহামরি তেমন নেই। তবে আগে আমি বেশি হাসিখুশি ছিলাম। সবসময় আমার মুখে হাসি লেগে থাকতো। সবাইকে নিয়ে আনন্দে হৈ-হুল্লোড়ে গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া আমার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হলো আমার প্রথম বিয়ে যখন ভেঙে গেল। তখন আমার বয়স একুশ। ভালো একটা সম্বন্ধ এসেছিল। দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের পক্ষ থেকে। তারা বলেছিল, বিয়ের পরেও আমাকে পড়াশোনা করতে দেবে। তাই ফ্যামিলির মানুষ রাজি হয়েছিল সহজেই। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে ছেলের সাথে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হলো। সবদিক থেকে পজিটিভ হিন্টস ছিল। তবে আমার একটা সমস্যার কথা ছেলেপক্ষের কাছ থেকে আড়াল করা হয়েছিল।”
“কোন সমস্যা?”

তহুরা এতোক্ষণ মনোযোগ সহকারে তাজরীনের কথা শুনছিল। এবার ও প্রশ্ন করতেই তাজরীন জবাব দিলো,
“ বন্ধ্যাত্বের কথা। আমি যে কোনদিন সন্তান জন্ম দিতে পারবো না — একথা আমি জেনেছিলাম আমার বিশ বছর বয়সে। বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই আমার অনিয়মিত পিরিয়ড হতো। প্রথম প্রথম বুঝতাম না, নরমালি নিতাম ব্যাপারটাকে। আম্মাকেও তেমন কিছু জানাতাম না৷ আর জানালেও বা কী? আম্মা নিজেই এ ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল। আগের যুগের মানুষ তো৷ আমাকে বোঝাতো, সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। আমার শারীরিক কন্ডিশনের জন্য সাফার করতে হতো অনেক। একসময়ে আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে মেডিকেল টেস্ট করাতে বলে। ওর কথামতো টেস্ট করনোর পর রিপোর্টে ধরা পরে, আমি বন্ধ্যা। তখন বিশ বছর বয়সের ঘটনা। আরো কতগুলো টেস্ট করানোর পরে শিওর হই, আমি কখনো মা হতে পারবো না৷ জানো, সেদিন একথা জানতে পেরে আমার অনুভূতি কেমন ছিল? বাচ্চাকাচ্চা খুব ভালোবাসি আমি। আর আমার কিনা এমন কপাল? সবচেয়ে বড় অন্যায়টা আমার আম্মা করেছিলেন আমার সাথে।

এই ঘটনার পর আমার ভালোর জন্য নাকি তাড়াহুড়ো করে হঠাৎ আমার বিয়ে ঠিক করলেন ভালো ছেলে দেখে। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যিটা চেপে গেলেন। আমি জানতামও না, এই ব্যাপারে তাদের কিছু জানানো হয়নি। সবকিছু ঠিকঠাকমতোই এগোচ্ছিল। গায়ে হলুদ হলো। বিয়ের দিন সকালে আমাকে তখন আমার ঘরে পার্লারের কয়েকজন বউ সাজে সাজাচ্ছে। খয়েরী বেনারসি পড়ে বউ সেজেছিলাম আমি। বিয়ে নিয়ে কতশত স্বপ্ন বুনছিলাম মনে মনে। প্রতিটা মেয়ের-ই বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। পছন্দ করে বিয়ে না হলেও আমারও ছিল। কিন্তু আমার সব স্বপ্নে ভাটা পরলো বিয়ের ঠিক ঘন্টা কয়েক আগে। আম্মা এসে কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, ছেলেপক্ষ বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। তাদেরকে নাকি আমার কোন আত্মীয় না প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানিয়েছে, আমি কখনো মা হতে পারবো না। ছেলেপক্ষ বলেছিল, আমরা কেন তাদের আগে জানায়নি এ ব্যাপারে? জানালে তারা কখনো একজন বন্ধ্যা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে নিতো না। বিয়ে ভাঙার পরেও সুবিশাল অনুষ্ঠান নষ্ট হয়নি। সবাই সুন্দরমতো খেয়েদেয়ে যাওয়ার সময়ে আমাকে নিন্দে-উপহাস করে তবেই গেছে। জানো? ওই দিনটা আমার জীবনের জন্য একটা অভিশাপ। চরম অপমানের দিন ছিল। ওদিনের পরে আমার জীবনের সাথে দুঃখ নামক শব্দটা যুক্ত হলো৷ আজও সেটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।”

তহুরার হঠাৎ কেন জানি কান্না পেল তাজরীনের কথাগুলো শুনে। এতোটা হাসিখুশি মেয়েরও ভেতরে ভেতরে এতো বেশি কষ্ট থাকতে পারে? অথচ ওপর থেকে দেখলে বোঝাই যায় না। তাজরীন তহুরার অবস্থা দেখে সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলে,
“তোমার ভাবনা ভুল তহু। আমি কষ্টে নেই, বিশ্বাস করো!”
তহুরা নিজেকে সামলে নিলাম বলে,
“এশরাকের ব্যাপারটা?”

“এশরাকের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে এই বছর। আমাদের প্রতিবেশীর আত্মীয়ের ছেলে। এবার আমার আম্মা নিজে সবকিছু জানিয়েছেন এশরাকের মা’কে। আমিও এশরাকের সাথে দেখা করে আগে ক্লিয়ার হয়ে নিয়েছিলাম। তখন ওই ছেলেটা বলেছিল, ওর আমাকে পছন্দ হয়েছে। আমি মা হতে পারবো না তো কি হয়েছে, দরকার হয় অ্যাডপ্ট নেবে। তবু আমাকে বিয়ে করবে। আমাকে দেখলে ওর ভীষণ মায়া লাগে। আমি তখনই স্পষ্ট বুঝেছিলাম, ছেলেটা আমাকে পছন্দ করলেও মূলত দয়া করেই বিয়েটা করতে চাইছে। আর সারাজীবন আমাকে ওর দয়াশীলতা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে যদি বিয়ে করি তো! কিন্তু তখন আর আমার পেছানোর কোনো উপায় ছিল না। আম্মা আমাকে সবসময় সুখী দেখতে চান। আমার বিয়ে ভাঙার পর তার অবস্থা দেখার মতো ছিল না।

নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ২৯

এবার বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে তাকে একটু হাসিখুশি দেখেছি আমি। তার আনন্দ কেড়ে নিতে চাইছিলাম না। একারণেই আমাকে যেভাবে চালানো হচ্ছে, যা করতে বলা হচ্ছে — রোবটের মতো সব করছি আমি। ওকে আমার ভালো লাগে না৷ ওর সাথে কথা বলতেও ইচ্ছা হয় না। মন টানে না আমার। আজও ছেলেটা আবার কল দিয়ে কথা শোনালো। বললো, আমাকে ও দয়া করে বিয়ে করছে। আজ আর সহ্য করতে পারিনি। শুনিয়ে দিয়েছি কতগুলো কড়া কথা। এরপর নিশ্চয়ই আম্মাকে কল করে নালিশ করবে আমার নামে৷ ভাইয়া তো ওর এমন আচরণের ব্যাপারে জানে না, ভাইয়ার সামনে খুব সাধু সেজে থাকে। যদি ভাইয়া জানতে পারে একবার, তাহলে বিয়েটা ভেঙে দেবে। আমি জানাচ্ছি না কারণ, আম্মাকে আর কষ্ট পেতে দিতে চাই না। এক জীবনে একবার আম্মার জন্য সেক্রিফাইস করি। দেখা যাক, সামনের জীবনটা কেমন হয়। আমার সহ্যক্ষমতা দারুণ। যেমন-ই হোক, মানিয়ে নিতে পারবো।”

নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ৩১