নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ১০
ঝিলিক মল্লিক
একটা নিস্তব্ধ গভীর জঙ্গল।
ঘন সবুজ গাছপালায় ছেয়ে গেছে চারদিক। বিশাল মহীরুহের গা বেয়ে উঠে গেছে লতাপাতা, নিচে ঘন ঝোপঝাড়। দিনের বেলা গাছের পাতার ফাঁক গলে সূর্যের আলো যখন মাটিতে পড়ে, তখন ছোট ছোট আলো-ছায়ার খেলা হয়। কোথাও কোথাও মেঠোপথ ঢুকে গেছে জঙ্গলের গভীরে, যে পথে দিনের বেলাতেও ছায়া ঘনিয়ে থাকে। পাখির ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ, আর মাঝে মাঝে বুনো জন্তুর গর্জন জঙ্গলকে করে তুলেছে রহস্যময়। শীতল হাওয়া বইছে শাঁ শাঁ আওয়াজে। শীত পরেছে মারাত্মক।
জঙ্গলের ঠিক পাশেই বিস্তৃত একটা বিল। যদিও একটা বললে ভুল হবে। সুদূরে যতদূর দেখা যায়, ততোদূর পর্যন্ত অসীম একের পর এক বিল। দিগন্ত বিস্তৃত। এই বিলগুলো বর্ষায় টলটলে পানিতে ভরে ওঠে, আবার শুকনো মৌসুমে কোথাও কোথাও কচুরিপানা আর জলজ গাছপালা জন্মায়। বিলে রাজহাঁস, বক, পানকৌড়ি আর নাম না জানা অনেক জলচর পাখি অবাধে উড়ে বেড়ায়। শীতকালে অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে বেশি।
কোথাও কোথাও শাপলা-শালুকের ফুল ফুটে আছে, তাদের মাঝে মাছেরা লুকোচুরি খেলছে। কচুরিপানার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে পানির ঢেউ এসে পড়ছে তীরে। বিলের ধারে বটগাছের ছায়ায় বসে কেউ জাল ফেলে মাছ ধরছে, কেউ বা নৌকায় বসে সোঁতার টানে বিলের এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছে। বর্ষাকালের পরিবেশটা এমন-ই হয়।
তবে এখন শীতের মৌসুম। চারপাশের নীরবতার মাঝে বাতাসের শাঁ শাঁ শব্দ ও পাতার মৃদু দোল খাওয়া যেন এক সুরেলা সঙ্গীত তৈরি করছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ যেন প্রকৃতির এক অনবদ্য মিলন। একদিকে রহস্যময় জঙ্গল, অন্যদিকে প্রশান্ত বিল। যা শুধুই শান্তি বয়ে আনে। জীম একটা কানটুপি কানে আর কালো রঙা শাল চাঁদর গায়ে জড়িয়ে হাঁটছে সবার পেছনে। সামনের সারিতে তাজরীন, তহুরা, রিক্তি আর জেসি। ছেলেরা আরো আগে। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ওদের। জীম যতই পায়ের কদম বাড়াচ্ছে, মনে মনে ভীষণ বিস্মিত হচ্ছে। এখানে শাহবীর এর আগে এলেও বাকি ছেলেগুলো কখনোই আসেনি। অথচ ওরা এমনভাবে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেন কতদিনের চেনা-পরিচিত জায়গা ওদের। সত্যিই আশ্চর্য হওয়ার মতো ব্যাপার। অন্যরা হয়তো এসব ছোটোখাটো ব্যাপার নিয়ে খুব একটা ভাবে না, কিন্তু জীমের মস্তিষ্ক অন্যদের থেকে আলাদা। ও খুব ভাবে এসব নিয়ে। অবশ্য ভাবনাচিন্তায় ক্ষতি নেই। এই ভাবনাচিন্তা থেকেই প্রায়শই একেকটা জটিল প্যাঁচের উদঘাটন এবং সমাধান করে ফেলে ও। ব্যাপারটা নিতান্তই শাহবীরের ইংরেজি ভাষায় ‘রিডিকিউলাস’ টাইপের নয়।
শোয়েবের হাতে একটা পলিব্যাগ। আকারে বেশ বড়। অনায়সে এরমধ্যে একটা ছোটোখাটো কলসি এঁটে যাবে। তাতে যে কি জিনিস আছে, তা জীমসহ মেয়েরা কেউই জানে না বোধহয়। তবে শাহবীরের কথায় হতে পারে ‘হেব্বি একটা জিনিস!’
জীম রীতিমতো শীতে কাঁপছে। রাত অনেক হয়েছে। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে এদিকে আসাটা জটিল কাজ ছিল। এজন্য তাড়াহুড়োয় শীতের পোশাক-আশাকও নিতে পারেনি তেমন। তাজরীন তহুরা, জেসি, রিক্তি— ওরা বেশ সামনে এগিয়ে গেল হাঁটতে হাঁটতে। শীতের প্রকোপে জীমের পা আর চলে না। জমে গেছে যেন। ধীরে ধীরে কচ্ছপের গতিতে হাঁটছে ও। হঠাৎ রুস্তম পেছনে ঘুরে তাকায়। জীমকে অনেকটা পেছনে দেখে ফোনলাইট অফ করে পেছনে এগিয়ে আসে। সবাইকে সামনে হাঁটতে নির্দেশনা দেয়। অন্ধকার পথে জীমের কাছে এসে দাঁড়ালো রুস্তম। জীম ওকে দেখে মুখ তুলে চাইলো। শীতে দাঁত শিরশির করছে। আর সওয়া যায় না। জীমকে সরু চোখে ভালোভাবে পরখ করে দেখলো রুস্তম। তারপর একবার পেছনে ঘুরে তাকালো।
ততক্ষণে সবাই অনেকটা দূরে এগিয়ে গেছে। এদিকে অন্ধকার। ওই দূরের জায়গা থেকে এখানকার পরিবেশ স্পষ্ট নয়৷ তার-ই সুযোগ নিয়ে আচমকা জীমকে নিজের জ্যাকেটের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো শাহবীর। হঠাৎ এহেন কাজকর্মে জীম হতভম্ব ভীষণ। তবু শীতের হাত থেকে বাঁচতে শাহবীরের এমন কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা হিসেবেই ধরে নিলো ও। শক্ত করে ওর হাতদুটো গলিয়ে দিলো শাহবীরের চেইন খোলা জ্যাকেটের ভেতরে। পিঠের পেছনদিকে নিয়ে টি-শার্ট আঁকড়ে ধরলো। বুকে মাথা ঠেকালো। শাহবীর ততোক্ষণে জীমের শরীরে এলোমেলোভাবে পেঁচানো চাদরটা খুলে সুন্দরভাবে পেঁচিয়ে নিলো দু’জনের শরীরে। জীম তখন একটা উদ্ভট কাজ করে বসলো। শিরশির করতে থাকা দাঁতের কামড় বসিয়ে দিলো শাহবীরের বুক বরাবর। তবুও লোকটা একটুও টুঁশব্দ করলো না। জীমকে বকাঝকাও করলো না। মানতে হবে, লোকটার ধৈর্য আছে বটে। জীম মনে মনে ঠিকই বলে বসলো, ‘এই ব্যাটা তোর এতো ধৈর্য ক্যান? তোর ধৈর্যের এক ইঞ্চিও যদি আমার থাকতো, তাহলে এতোদিনে লাইফে কিছু একটা করে ফেলতে পারতাম!’
“ব্রো। আসবেন না আপনারা?”
সময়যাপনের মাঝেই দূরে অন্ধকারাচ্ছন্ন টিলা থেকে আফিমের গলা শোনা গেল। জীম হালকা নড়েচড়ে উঠলো। তবে শাহবীর ওকে ছাড়লো না। আরো মিনিট পাঁচেক জড়িয়ে ধরে রেখে ওম দিয়ে তবেই ছাড়লো।
মুরগির মাংসের তেহারি যেন জীমদের দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে। জীম, তাজরীনদের আসলেই প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। সেই কোন সকালে ভারী খাবার খেয়েছে। তারপর সারাদিনে কোল-ড্রিংকস আর হালকা খাবার। তাতে কী পেট চলে?
প্যাকেটের এই তেহারি নাকি শাহবীরের কথায় ‘হেব্বি জিনিস।’
অবশ্য এখন জীমদের কাছেও ঠিক তাই। জীম আর তাজরীন সঙ্গে সঙ্গেই বসে পরলো গাছের গুঁড়ির ওপর। সামনে ধানক্ষেত। অজস্র ধানের বিশাল বিশাল চারাগাছ রোপণ করা। তারওপর শিশির বিন্দু ওরা আঁইলের মাঝখানের পথ থেকে আসার সময়েই টের পেয়েছে। ধানক্ষেতের উত্তরদিকে শিমসহ আরো নানান শীতকালীন সবজি বাগান। এই জায়গাটুকু নাকি শাহবীরের খালামণির চাচা শ্বশুরের বড় ছেলের। তাদের সাথে খালামণির পরিবারের খুবই ভালো সম্পর্ক। আর গ্রামের বাড়ি হওয়ায় পুরো অঞ্চলে সবারই অবাধ বিচরণ। কোনো বাঁধাবিপত্তি নেই।
ছেলেরা সব দাঁড়িয়ে আছে। জীম তাজরীন বসেছে গাছের গুঁড়ির কাছে। জেসি, রিক্তি আর তহুরা ওপাশের আরেকটা জাম গাছের গুঁড়িতে বসেছে। জীম এবার ঘাড় ঘুরিয়ে শাহবীরকে জিজ্ঞাসা করলো,
“আপনারা খাবেন না?”
শাহবীর জবাব দিলো,
“না। আমরা খেয়ে এসেছি। এগুলো তোমাদের জন্য এনেছি।”
রায়ান ওপাশ থেকে বললো,
“ভাই রে ভাই! কি একটা সেই গ্রাম! অনেক খোঁজাখুজি করে শেষমেশ একটা হোটেলে তেহারি পেলাম। বিরিয়ানি নেই। তা-ও মুরগির মাংসের তেহারি।”
আফিম পাশ থেকে ঝাঁঝালো সুরে বলে উঠলো,
“যা পাইছোস, তাই নিয়ে শুকরিয়া আদায় কর। এই গ্রামে তো বাজারের ওদিকে তা-ও কতগুলো দোকানপাট আর হোটেল আছে বলে তেহারি অন্তত পাওয়া গেছে। নাহলে ওটুকুও কপালে জুটতো না।”
তহুরা তখন খেতে খেতে চেঁচিয়ে আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“ওই, তুমি রায়ানের সাথে এভাবে কথা বলছো কেন? জন্মের সময় মুখে মধু পরেনি?”
“না, পরেনি রে সকিনার মা। তুই একটু দয়া দেখিয়ে তখন আমার মুখে মধু দিয়ে যেতি, খুব ভালো হতো!”
“তখন আমার জন্ম হলে ঠিকই দিয়ে যেতাম। নেহাত তোমার বছর পাঁচেকের ছোট। আফসোস লাগে, বুঝলা আফসোস!”
মুরগির রান চিবোতে চিবোতে আফিমকে তিরস্কার করে কথাটা বললো তহুরা। আফিম পাল্টা আরো কিছু বলতেই যাচ্ছিল। বেঁধে যেতো দুটোর মধ্যে। তখনই হাসান এসে ওকে সরিয়ে নিয়ে গেল কাঁধে ধরে। তাজরীনের গলা দিয়ে খাবার নামছিল না৷ ওর আবার ভীষণ ভূতের ভয়। ভয় ভয় চোখে আশেপাশে দেখছে ও। অন্ধকার বিল। এখানে ধানক্ষেতের পাশের উঁচু টিলা। এই গাছের নিচে বসে ওরা। যদিও বড়োভাই আছে, আরো বিশ্বস্ত কয়েকজন পুরুষ আছে সুরক্ষার জন্য। তবু তাজরীনের ভূতের ভয় কাটে না। বিষয়টা টের পেলো রুস্তম। তাজরীনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তাজ কি ভূতের ভয় পাচ্ছিস?”
তাজরীন জোরে জোরে দুই পাশে মাথা নাড়লো। না বোঝানোর চেষ্টা করলো। তখন রুস্তম হালকা হেসে আশ্বস্ত করে বললো,
“ভয় নেই সোনা। বড়ভাই আছি তো। আর ভূত বলে কিছু হয় না।”
তাজরীন চুপচাপ খেতে খেতে দেখলো, সবাই মিটিমিটি হাঁসছে ওর দিকে চেয়ে। শুধুমাত্র রুবায়েত নামক লোকটা গাছের সাথে পিঠ হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে থমথমে মুখ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার। তাতে যেন তাজরীনের অস্বস্তি আরো বাড়লো বৈ কমলো না।
হেলেন কুঠিবাড়ির এই কাঠের দোতলা বাড়িটা যেন ঐতিহ্যের অংশ তাদের। নিচতলায় ভুঁইয়াদের বেশকিছু কাছের আত্মীয়রা রয়েছেন। নিচতলার মেঝে মাটির তৈরি। আর কাঠের দোতলার মেঝেসহ পুরো দোতলা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। তবে দোতলায় উঠতে যেই সিঁড়িটা, সেটা লোহার মোটা পাতের। কিছুটা বাংকারের মতো বৈশিষ্ট্য। শুধু পার্থক্য হলো, বাংকারে সিঁড়ি বেয়ে মাটির নিচের দিতে যেতে হয়। আর এখানে সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে গর্তের মতো ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে উঠলেই দোতলা। আর দোতলার মেঝেটা নিচতলার ছাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত।
জীমদের ব্যাগসহ সকল জিনিসপত্র আগেই শাহবীরের খালামণির বড়ছেলে ইকবাল ভাই আর তার স্ত্রী হাফসা নিজ দায়িত্বে এনে রেখেছেন এই ঘরে। মাত্র তিন ঘর সংযুক্ত বিশাল এই দোতলায় এসেই বিছানার ওপর ঝাঁপিয়ে পরেছে সবাই। গ্রামের বাড়ি হিসেবে বাথরুম একেবারে বাড়ির পেছনের দিকে পুকুরঘাটে দুটো। সবই পাকা স্যানিটারি কাজের। ওদিকে বড়ভবনে জনসমাগম বেশি। সেদিকে আর যায়নি কেউ। সবাই বাথরুমের কাজ সেরেই এসেছে। একেবারে সামনের দু’টো ঘর একসাথে সংযোগ করা। মাঝখানে একটা বড় পর্দা টানানো। পর্দার দুইপাশে খাট। একপাশে বিশাল একটা খাট। যেখানে কম করে হলেও ছয়জন ঘুমাতে পারবে। পর্দার ওপাশে আরেকটা ঘর কিঞ্চিৎ ছোট। সেখানে ছোট ছোট দু’টো খাট। ছেলেরা এপাশের বড় খাটটা দখল করে নিলো সবাই মিলে। আর পর্দার এপাশের ঘরে জেসি, রিক্তি একটা খাটে, আরেকটা খাটে তহুরা আর তাজরীন। তাজরীনের হঠাৎ ভয় করছে খুব। ওদের খাটের পায়ের কাছটায় দু’টো জানালা। ওর পায়ের কাছের জানালাটা খোলা। সেখান থেকে লম্বা সুপারি আর তালগাছ দেখা যায় বাড়ির দক্ষিণ দিকের। তাজরীন লেপের নিচে মুখ গুঁজে ফিসফিসিয়ে তহুরাকে বললো,
“ও তহু জানালাটা বন্ধ করে দাও না প্লিজ।”
“কেন? ভয় লাগে তোমার?”
“হু, একটু একটু।”
তহুরা লেপ সরিয়ে উঠে বসে জানালা বন্ধ করে দিলো। তবে দুর্ভাগ্যবশত শীতকাল হওয়ায় ওদের সব কথাবার্তা ওপাশেও শোনা গেল। পর্দার ওপাশ থেকে হাত চারেক দূরের খাটটা থেকে ছেলেদের হাহা হিহি করে হাসির আওয়াজ শোনা গেল। তাজরীন বুঝলো, তাকে নিয়েই হাসাহাসি হচ্ছে। তাজরীন এবার রাগ করে লেপে মুখ গুঁজলো। তহুরা বুঝতে পেরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
“হাসি বন্ধ না হলে আগামীকাল আন্টির কাছে নালিশ করে সবগুলোকে পুকুরের ঠান্ডা পানিতে চুবানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবো।”
আফিম তা শুনে চেঁচিয়ে বললো,
“অ্যাহ! ভয় পাই নাকি রে চান্দু!”
ওর সাথে হাসান, শোয়েব, রায়ানও মিললো। এবার জেসি আর রিক্তিও উঠে বসলো। কিছুক্ষণ ছেলেমেয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পর্দার আড়াল থেকে তর্কযুদ্ধ চললো।
জীম আর শাহবীরকে দোতলার কোণার এই ঘরটা দেওয়া হয়েছে। এই ঘরের সাথে একটা বারান্দাও আছে৷ পুরোটাই কাঠের। এই ঘরের দরজা আছে একটা। কাঠের দরজা। এজন্য অন্যান্য ঘরের থেকে এটাকে আলাদা করা যায়। জীম সবে ওড়না খুলে বালিশের পাশে রেখে গলার চেইন আর কানের দুল খুলে রাখছিল বক্সে। কিছুক্ষণ ধরেই ওপাশের ঘরে ওদের তর্কাতর্কি শুনছিল। শাহবীর তখন থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে এসেছে ওপাশ থেকে। জীম লাগেজে জিনিসপত্র রাখতে রাখতে বললো,
“ওরা চেঁচামেচি করছে। ছেলেমানুষি কাজ সব। আপনি গিয়ে থামান না প্লিজ।”
“করুক চেঁচামেচি। দোতলার সদর দরজা দেখেছো? ঠিক ট্যাংকির ওপরের ঢাকনা যেমন, তেমন। আর এখানকার কোনো কাহিনী নিচতলা পর্যন্ত পৌঁছাবে না। সো, জাস্ট কুল থাকো।”
জীম শান্ত হলো। বিছানা পরিপাটি ছিল। এসে তেমনই দেখেছে। কিন্তু এঘরে আসার পরেই শাহবীর জামাকাপড় সব বের করে বিছানা এলোমেলো করে ফেলেছে। এই ঘরটা মাঝারি আকারের। মাঝারি খাটটা লম্বাভাবে রাখার কারণে প্রস্থে পুরো ঘরে এঁটে গেছে। একেবারে খাপেখাপ। জীম এবার মূলত বিছানা এলোমেলো করার জন্য চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল। তখনই শাহবীর এগিয়ে আসলো। ঘরে গ্রামে প্রচলিত হলুদ বাতি জ্বলছিল। হাত বাড়িয়ে সেটা বন্ধ করে বিছানার ওপর বসলো। জীম বুঝলো। তবে সরলো না। স্বামী সঙ্গ সে-ও পেতে চায়। বোধহয় প্রত্যেক স্ত্রী-ই চায়। জীমের একটা কপাল। বিয়ের কয়েকমাসেও স্বামীকে সেভাবে কাছে পায়নি। তারওপর শাহবীর যে নির্দয় লোক। সবসময় দূরে সরিয়ে রেখেছে জীমকে। আজ একটু কাছে আসুক না! নিজস্বতা ভাঙুক না-হয়! খুব করে চাইছে জীম। আবছা আঁধারে নিশ্চুপ চোখে চেয়ে আছে শাহবীরের মুখপানে। শাহবীর এবার জীমের পোশাকের কটিদেশ ধরে টেনে এগিয়ে নিয়ে আসলো নিজের কাছে। বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। গলায় আঙুল বিচরণ করতেই শিউরে উঠলো জীম। নিচু স্বরে বললো,
“ঘুমাবো।”
“হ্যাঁ, ঘুমাবো তো। চলো ঘুমাই।”
মাদকতা জড়ানো কন্ঠস্বর জীমকে আরো আড়ষ্ট করে ফেললো। শাহবীর আবারও আদুরে গলায় বলে উঠলো,
“সিলভি।”
“হু।”
“চলো ঘুমাই।”
“ওরা. .”
“ওরা কিছুনা। হাসবেন্ড-ওয়াইফ আমরা। ওরা কচি খুকি নয়।”
“কিন্তু. . .”
নক্ষত্রের যাত্রাপথে পর্ব ৯
জীমকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না শাহবীর। ঠোঁটের আলিঙ্গন গাঢ় করলো। গলার ভাঁজে হাতের বিচরণ আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ় করে তুললো ৷ রাতও গাঢ় হতে থাকলো। তবে তথাকথিত নির্দয় মেজর শাহবীর রুস্তম নিজেকে যথেষ্ট সংযত রাখলো। সিলভির নরম পেল্লব ঠোঁট থেকে নিজের নির্দয় ঠোঁটজোড়া সরিয়ে বললো,
“জাস্ট অন কিস, তারপর ঘুমাবে। ওকে?”