না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১
মাইশা জান্নাত নূরা
—”মানা করেছিলাম না বোরখা-হিজাব ছাড়া বাসা থেকে বের না হতে? করেছিলাম কি না বলোওও?”
কলেজ মাঠের ভিড় ঠাসা পরিবেশে এমপি সারফারাজ ইউসুফ খানের ধ*মকের স্বরে বলা কথায় মুহূর্তেই কেঁপে উঠলো পিহুর ছোট্ট মনটি। হরিণীর মতো টানা টানা কাজল কালো চোখ দু’টো নোনাজলের পুকুরে পরিণত হয়ে গিয়েছে। অ*প*মানে-লজ্জায় মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে কলেজ মাঠের মাঝখানে ইউসুফের সম্মুখে পিহু।
ওর পরণে টকটকে লাল জর্জেটের একটা থ্রি-পিস রয়েছে। ওড়নাটা একপাশ দিয়ে নেওয়া। অন্যপাশে হাঁটু ছুঁই ছুঁই চুলগুলো বিরাজ করছে। লাল এই রঙটা ওর উজ্জ্বল শ্যমলা শরীরে অদ্ভুত মানিয়েছে। পরক্ষণেই কাচুমাচু কণ্ঠে পিহু বললো….
—”আমার কোনো বোরখা নেই। মাত্র দুইটা জামা আছে। কেবল এই দু’টোই বাড়ির বাহিরে পড়ে আসার উপযুক্ত। এই জামা দু’টোও আমার না। আমার বড় বোনের। এক বছর ব্যবহার করার পর ওর কাছে আর ভালো না লাগায় আমাকে পড়ার জন্য দিয়েছে।”
ইউসুফ কিছুটা থ*ম*কালো পিহুর এরূপ কথা শুনে। ভ্রু কুঁচকে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করলো সে পিহুকে। ভ*য়ে গুটিয়ে যাচ্ছিলো পিহু। পরক্ষণেই ইউসুফ নিজের শক্ত হাত দ্বারা পিহুর ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে কলেজ গেইটের দিকে হাঁটা শুরু করলো। ভয়ে সিঁটিয়ে আসা মনে কিন্ঞ্চিত সাহস সন্ঞ্চার করে পিহু বললো…..
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—”ক-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? সবাই দেখছে। আপনার আমার সাথে এমন আচরণ করা ভা-ভালো দেখাচ্ছে না যে তা কি আপনার নজরে পড়ছে না?”
ইউসুফ থেমে দাঁড়িয়ে চোখেমুখে তীব্র কঠোরতার ছাপ ফুটিয়ে আশেপাশে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো। তার এই একটিমাত্র নজরই যথেষ্ট ছিলো শ্বাসরুদ্ধ নীরবতায় পুরো কলেজকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। শিক্ষক-শিক্ষিকারা চোখ নামিয়ে দ্রুত পায়ে অফিস রুমের দিকে চলে গেলেন। ছাত্র-ছাত্রীরাও আ*ত*ঙ্কে মুখ চাওয়া-চাওয়ি না করেই ছুটে গেলো নিজ নিজ ক্লাসকক্ষে। কয়েক সেকেন্ড আগেও যেখানে ঠাসা ভিড় জমে ছিলো। সেই নীরব পরিবেশে এখন কেবল ইউসুফ আর পিহুর নিঃশ্বাসের শব্দও শোনা সম্ভব হচ্ছে যেনো। পরপরই ইউসুফ ঘাড় হালকা ঘুরিয়ে পিহুর দিকে তাকিয়ে বললো……
—”নিজের কামাইয়ে খাই, নিজের ক্ষমতায় চলি। কারো বাপের হোটেলে খাই না। তাই কে কিভাবে আমার আচরণ নিলো না নিলো সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।”
পিহু এবার আরো একটু সাহস দেখিয়ে বললো….
—”আপনি অনেক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ সেটা এই কলেজের প্রতিটা ইট-পাথরও জানে। কিন্তু আমি! আমি অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে। আমার কোনো ক্ষমতা নেই। তাই আমার লাজ-লজ্জাও আছে। হাত ছাড়ুন আমার।”
মুহূর্তেই ইউসুফের চোয়াল শক্ত হলো। কণ্ঠ নিচু করে হাড় হিম করে দেওয়ার মতো করে বললো…..
—”মুখ দিয়ে আর একটা শব্দ উচ্চারণ করলে এই কলেজের মাটির নিচেই তোমাকে জীবন্ত পুঁ*তে ফেলবো। তখন না থাকবে তোমার বাহ্যিক অস্তিত্ব আর না থাকবে আত্মীক অস্তিত্ব বুঝলে!”
ইউসুফের কথায় পিহুর ভিতরটা এবার ভ*য়ে পুরোপুরি জমে গেলো যেনো৷ একটা শব্দ মুখ থেকে বের করার সাহস সে করে উঠতে পারলো না। ইউসুফ পিহুর হাত ওভাবেই শক্ত করে ধরে কলেজের গেইট পেরিয়ে বাইরে তার দাঁড় করিয়ে রাখা কালো বিএমডব্লিউ গাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালো। মুহূর্তের মধ্যে গাড়ির দরজা খুলে দিলো একজন কালো পোশাকধারী বডিগার্ড।
ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে আ*ত*ঙ্কে আচ্ছন্ন পিহুকে বসিয়ে দিয়ে ইউসুফ স্বয়ং ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। ইউসুফের গাড়ির ঠিক পিছনেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে আরও তিনটি কালো গাড়ি। প্রতিটি গাড়ি ভর্তি রয়েছে কালো পোশাকধারী বিশাল বিশাল ব*ন্দু*ক হাতে নেওয়া বডিগার্ডসরা। ইউসুফ গাড়ি স্টার্ট করলো। কালো কাফেলার মতো গাড়িগুলো কলেজ এড়িয়ে ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক পেরিয়ে ইউসুফের গাড়িটি এসে দাঁড়ালো ঢাকার সবচেয়ে বড় মার্কেটের সামনে। কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীর ভেতরে থেকে গাড়ির দরজা খুলে দেওয়া হলো। ইউসুফ পিহুকে নিয়ে প্রবেশ করলো মার্কেটের ভেতরে।
একে একে ইউসুফ পিহুর জন্য কিনে ফেললো ১০০ এরও বেশি বোরখা-হিজাব, নানারঙের হিজাব পিন, দামি দামি পাথরের ব্রঞ্জ। আর ১৫০ এরও বেশি দামী ও নিখুঁত কাজ করা শাড়ি-থ্রি-পিস। প্রতিটি দোকানদার বিস্ময়ের নজরে তাকিয়ে দেখছে এমন অস্বাভাবিক কেনাকাটা। ইউসুফ গম্ভীর কণ্ঠে সবাইকে নির্দেশ দিলো সবকিছু যেনো নিখুঁতভাবে প্যাকিং করা হয়। অতঃপর ইউসুফ পিহুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে শীতল ও ভারী কন্ঠে বললো…..
—”আমার হবু বউয়ের পরিধান করার মতো বোরখা নেই, জামা নেই! এই লজ্জা সহ্য করার মতো ছিলো না। শোনো প্রিটিহার্ট আজ থেকে এই পুরো মার্কেট তোমার জন্য বুক করা থাকলো। যখন যেটা মন চাইবে এসে নিয়ে যাবে। কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাবে না একটা শব্দও উচ্চারণ করবে না। যদি সেই সাহস কেউ দেখানোর চেষ্টা করে তবে তার সাথে পারসোনালি কথা আমি বলবো।”
ইউসুফের কারোর সাথে পারসোনালি কথা ঠিক কেমন ধাঁচের হতে পারে সে সম্পর্কে হালকা হলেও ধারণা পিহুর আছে। পিহু ইউসুফের দিকে তাকালো। ইউসুফের গাড় নীলরঙা দু’চোখের মণিজোড়া চিকচিক করছে। ঘন ভ্রু জোড়া ওর দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ করে তুলেছে। চোখা নাক, দৃঢ় চোয়াল, মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি, রাজকীয় মোঁচ আর সিল্কি কালো চুলগুলো সামান্য এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে কপালের উপর। ফর্সা শরীরে ধূসর রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা পড়ায় ইউসুফের সুপুরুষের ন্যায় লুক পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
অপমানে, লজ্জায় পিহুর চোখ আবারও ভিজে উঠেছে। পিহু কণ্ঠ নিচু করে বললো…..
—”আমি কারোর ভি*ক্ষা নিতে চাই না।”
ইউসুফ পিহুর দিকে ভ*য়ং*ক*র শীতল দৃষ্টি স্থির করে বললো…..
—”ভিক্ষা কাকে বলে সেটা তুমি এখনও বুঝতে শিখো নি প্রিটিহার্ট। নিজের বোনের এক বছর ধরে ব্যবহার করা পুরাতন জামা পরে তুমি ঘুরছো বাহিরে। ভি*ক্ষা*টা তোমায় দিয়েছে সে। আর আমি যা দিচ্ছি সেটা ভালোবাসা। এটাকে উপহার বলে। বুঝলে?”
পিহু বললো…..
—”আমি গরিব ঘরের মেয়ে। রোজ রোজ নতুন জামা পরে বাইরে বের হলে লোকজন অন্য চোখে দেখবে। দশটা কথা রটাবে। সেসব আমি সহ্য করতে পারবো না। তাই আপনার এইসব উপহার আমার লাগবে না।”
চোয়াল শক্ত করে ইউসুফ গর্জে উঠে বললো….
—”যে তোমার দিকে অন্য চোখে তাকাবে তার চোখ আমি উপড়ে ফেলবো। মুখ দিয়ে দু’টো ক*টু শব্দ বের করা তো অনেক দূরের বিষয়।”
পিহুর বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। পিহু ইউসুফের চোখের দিকে তাকিয়ে শুধালো….
—”কেন করছেন এসব? আমার মতো সাধারণ একজন মেয়ের জন্য আপনার এইসব পাগলামি আচরণ কেবল লোকজনকে বিনোদন দিচ্ছে। সবাই আমাকে জো*কা*র বলছে।”
রাগে ইউসুফের চোখ লাল হয়ে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
—”এমপি সারফারাজ ইউসুফ খানের হবু বউকে জো*কার বলেছে কে? কার কলিজা এতো বড়? নাম বলো। নামটা শুনি। তারপর তার কলিজাটা বের করে ওজন করে দেখবো আমি।”
পিহু ঢো*ক গি*ললো একবার। এই লোকের সাথে কোনো কথা বলা মানেই প্রতিত্তুর হিসেবে কোনো না কোনো ভ*য়ং*কর রকমের থ্রে*ট শোনা। পিহুকে নিরব থাকতে দেখে ইউসুফ বললো…..
—”লোকে কি বলবে, লোকে কি ভাববে, লোকে কি করলো এসব ভেবে ভেবেই নিজের জীবনের অর্ধসময় পার করে ফেলেছো তুমি। তাই এই ভাবনা এখন সর্বক্ষেত্রেই তোমার মাথায় আসে। এক ধরণের বা*জে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এটা। যতো তাড়াতাড়ি এই চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবে তোমার জন্য ততো ভালো হবে। বুঝেছো প্রিটিহার্ট!”
পিহু মাথা নুইয়ে রেখেছে। দোকানদারদের প্যকিং করা শেষ হলে গার্ডসরা সব ব্যগ গাড়িতে উঠিয়ে নিয়েছে। অতঃপর ইউসুফ আবারও বললো….
—”এখানেই দাঁড়িয়ে থাকার পরিকল্পনা করেছো নাকি আজ সারাদিন? বাসায় ফিরতে হবে না?”
পিহু নরমস্বরে বললো….
—”না, জ্বি হবে।”
—”চলো, আমি ছেড়ে দিচ্ছি তোমায় বাসা পর্যন্ত।”
—”আমি যেত….!”
—”কলেজ মাঠে শেষ কি বলেছিলাম মনে নাই? এই মার্কেটের মেঝে শক্তপোক্ত টাইলস দ্বারা নির্মিত হলেও এটা ভে*ঙে কাউকে গেঁ*ড়ে দিতে কিন্তু আমার খুব বেশি সময় লাগবে না। কারণ আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কারোর অপ্রয়োজনীয় কথা আমার পছন্দ না।”
পিহু আর একমূহূর্তের জন্য না দাঁড়িয়ে দ্রুত কদমে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলো। পিহুর পিছন পিছন সারফারাজ ও নিঃশব্দে হাসতে হাসতে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসলো। পূর্বের ন্যায় গাড়িতে উঠে বসলো পিহু ও ইউসুফ। পিছনে বাকি ৩ গাড়িতে গার্ডসরা। ইউসুফ গাড়ি স্টার্ট দিলো।
প্রায় ১ঘন্টা পর মিরপুরের একটি নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকায় নিজ গাড়ি নিয়ে ঢুকলো ইউসুফ। সরু গলি বিশিষ্ট ভা*ঙাচোরা রাস্তার পাশে খোলা নর্দমা যা রাস্তাটির প্রস্থ আরো কমিয়ে দিয়েছে। চারপাশে পুরোনো টিনশেডের ঘরের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও চোখে পড়ছে প্লাস্টার খ*সে পড়া চার-পাঁচ তলা বিশিষ্ট ২-৪টে দালানকোঠা৷ সব মিলিয়ে গাদাগাদি বসতিই বলা চলে। রাস্তায় চলাচল করতে থাকা মানুষদের বিস্ময়ভরা দৃষ্টি কালো বিএমডব্লিউ গাড়িটির উপর স্থির হয়ে আছে। এমন বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে এই ভা*ঙা*চোরা গলিতে কোনো ধনী-ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির আসাটা ভিষণ বেমানান দেখাচ্ছে কিনা!
কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ইউসুফ গাড়ির ব্রেক কষলো একটি টিনসেডের প্রাচীর দেওয়া গেইটের সামনে। পিহু তৎক্ষণাৎ নামতে উদ্যত হলে ইউসুফ ওর হাত চেপে ধরে ওকে থামিয়ে দিলো। পিহুর বুকের ভেতরটা ধুকপুক ধুকপুক শব্দ করছিলো। ওর সাহস হচ্ছিলো না ইউসুফের চোখের দিকে চোখ তুলে তাকানোরও।
ইউসুফ ধীরস্বরে বললো….
—“বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এলাম অথচ একবারও বললে না ভেতরে গিয়ে অন্তত এক গ্লাস পানি পান করতে? আমাকে কি তোমার এমন ভয়ংকর কোনো খাদক বলে মনে হয় যে, বাড়ির ভিতর ঢুকলেই তোমার বাবাকে বিরাট লসের মুখে পড়তে হবে আমার আপ্যায়ন করতে গিয়ে?”
‘বাবা’ শব্দটা শুনেই পিহুর ভেতরটা কেমন যেনো করে উঠলো। একটু আগেও ভী*তির ছাপ ফুটে থাকা মুখশ্রীটি নিজের রূপ পাল্টে নিয়েছে। কঠোরতার ছাপ ফুটে উঠেছে সেইস্থলে। পিহু নিজের অন্য হাতের জোরে ইউসুফের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে নামতে নামতে বললো….
—“আমার কোনো বাবা নেই, এমপি সাহেব।”
পিহু আর থামলো না। দ্রুতগতিতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেইটটা শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। পিহুর কথায় ইউসুফের কপালের ভাঁজ আরও গভীর হলো। ওর জানা তথ্যে পিহুর বাবা এখনও জীবিত আছেন। তবে কি ওদের বাবা-মেয়ের মধ্যকার সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়? নাকি অন্য কোনো গোপন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে মেয়েটি নিজের মনের ভিতর? মাথার ভিতর একের পর এক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে ইউসুফের। ঠিক তখনই ওর মনে পড়লো গাড়ির ডিকিতে কেনাকাটা করা সব জামা-কাপড়ের ব্যগগুলো রাখা রয়েছে। পরক্ষণেই ইউসুফ বডিগার্ডদের উদ্দেশ্যে বললো ‘সব প্যাকেট ভেতরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।’
অন্যদিকে, বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে পিহু কল তলায় গিয়ে হাত-মুখ ধুচ্ছিলো। চারপাশের পরিবেশ ও পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা সম্ভব যে ওদের সংসার কতোটা অভাবের চাদরে মুড়ে আছে। ৬ শতক জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট একতলা ইট-পাথরের বাড়িটি। জায়গায় জায়গায় প্লাস্টার খ*সে পড়েছে, রঙ চ*টে গিয়েছে। চারটে থাকার মতো ঘর আর একটি মাত্র পাবলিক ওয়াশরুম রয়েছে এবাড়িতে। ঐ একটাই সবাই মিলে ব্যবহার করে।
এই বাড়ির সদস্য সংখ্যা মোট ছয়জন। পিহু, তার বাবা জবরুল মিয়া, সৎ মা সোমা বেগম, সোমার আগের সংসারের মেয়ে সোনালী, আর জবরুলের পক্ষ থেকে জন্ম নেওয়া জমজ ২ ছেলে রিফাত ও রিয়াদ। সোনালী পিহুর চেয়ে ছয় বছরের বড়, আর রিফাত-রিয়াদ পিহুর চেয়ে চার বছরের ছোট।
সোনালী নিজঘর থেকে বের হয়ে আসতেই পিহুকে কল তলায় দেখতে পেয়ে চিল্লিয়ে সোমাকে ডেকে বললো…..
—”মা, ও মা! এ বাড়ির নবাব*জা*দী তো ঘরে ফিরেছে। কিন্তু এর হাত তো দেখছি খালি। তুমি না সকালে ওকে কতো কিছু আনতে কইছিলা। আইসা দেখো তার কোনো কিছুই নিয়া আসে নি ও।”
সোনালীর কথা যেনো পিহুর উপর কোনো প্রভাব ফেলতে সক্ষম হলো না। সে নিজের মতো করে হাত-মুখ ধোঁয়া শেষ হলে আঙিনার মাঝ দিয়ে টাঙানো রশির উপর থেকে গামছাটা নিয়ে শরীরের পানিটুকু মুছতে শুরু করলো। সোমা দাঁতে দাঁত পি*ষে ঘর থেকে বের হয়ে এদিকেই আসতে আসতে বললেন…
—”আনে নাই মানে! আজ ওর পিঠের ছা*ল-চা*ম*ড়া তুলে ফেলমু আমি। আমার কথা অমান্য করার ফল কতোটা ভ*য়ং*ক*র হতে পারে তা হারে হারে টের পাবো ঐ মাইয়া।”
সেইসময় গেইট খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো ইউসুফ। উচ্চস্বরে সোমাকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—”আসসালামু আলাইকুম হবু সৎ শ্বাশুড়ি আম্মা।”