না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১২

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১২
মাইশা জান্নাত নূরা

সারফারাজ বেড়িয়ে গিয়েছে বোঝা মাত্রই এতোসময় ধরে দাঁতে দাঁত চেপে পরে যাওয়ায় যে ব্য*থা সহ্য করে ছিলো সোনালী তা এবার গলা ছেড়ে চিৎকার দিয়ে বের করলো…
—”ও মা! আমার কোমর! মা গো মা, আমি ম*র*লা*ম। আমার মাথা! এতো য*ন্ত্র*ণা করছে আমি পারছি না সহ্য করতে। আম্মা গো, আমায় ধরে উঠাও দয়াকরে। আমি ম*র*লা*ম গো!”
রুমের ভিতর থেকে পিহু সোনালীর চিৎকার স্পষ্টই শুনতে পারছে। পিহু আবারও রুম থেকে বের হতে নিবে সেইসময় ওর ফোনটা বেজে উঠলো। বিছানার কাছে গিয়ে ফোনটা উঠাতেই স্ক্রিণে ‘I love you’ দিয়ে সেইভ করা নাম্বারটা দেখেই পিহু রিসিভ করে বললো…..

—”এখুনি না চলে গেলেন আবার কল করলেন যে?”
সারফারাজ গাড়িতে উঠে বসেছে মাত্রই। দক্ষ হওয়ায় গাড়ি স্টার্ট করে এক হাতে স্টিয়ারিংটা ঘুরাচ্ছে আর অন্যহাতে ফোনটা কানে ধরে রেখেছে। সারফারাজ বললো…..
—”তোমার জন্য এটা এইটুকু হলেও আমার জন্য অনেক বড় বিষয়। এই দুরত্ব টুকুও সহ্য করা দায় হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য। কি করবো বলো?”
—”আপনি এখন ড্রাইভ করছেন?”
—”হুম, করছি।”
—”জানেন না, ড্রাইভিং করার সময় ফোন ব্যবহার করা উচিত না!”
—”আমার জন্য এটা নতুন কিছু না। সমস্যা মনে করি না তাই এইটুকুতে।”
—”সবসময় নিজের মর্জিতে চলেন আর অন্যের উপর নিজেরই মর্জি চাপিয়ে দেন। সে হোক ভালো কিংবা খারাপ।”
—”এতোদিন নিজের উপর কারোর মর্জি চালাতে দেই নি ঠিকই। তবে কথা দিচ্ছি বউ হয়ে যাও তারপর তোমার মর্জিতে চলবো আমি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—”এখন ফোনটা রাখুন গাড়ি চালানোতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করুন।”
—”এখন রুম থেকে বের হওয়ার চিন্তা যদি মাথাতে এনে থাকো তাহলে মনে রেখো তোমার ঐ সুন্দর পা দু’টো কে*টে হাতে ধরিয়ে দিতে আমি দু’বার ভাববো না প্রিটিহার্ট।”
পিহুর ফোন রাখতে চাওয়ার এতো তাড়ার পিছনের কারণ যে রুমের বাহিরে গিয়ে দেখা সোনালীর কি অবস্থা তা সারফারাজ বুঝে গিয়েছে দেখে পিহু শুকনো ঢো*ক গি*ল*লো একবার। পিহু মিনমিনিয়ে বললো…..
—”যাবো না৷ আপনি ফোন রাখুন।”
—”চুপচাপ ঘুমাও।”
এই বলে সারফারাজ খ*ট করে ফোনটা কে*টে দিলো। পিহু ওর বুকের সাথে ফোনটা চেপে ধরে শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেললো। পিহুর মনুষত্ব্য বোধ থেকে যাও একটু দয়া-মায়া জেগেছিলো সোনালীর জন্য তা-ও আর দেখানো হলো না আর। এমন গা হিম করে দেওয়ার মতো হু*ম*কি শোনার পর তারই সেই নি*ষে*ধা*জ্ঞা অ*মান্য করার সাহস হবে হয়তো যার কলিজা একটা বুকের ভিতরে থাকে আরেকটা সে হাতে নিয়ে ঘুরে। পিহু আর কোনো কিছু না ভেবে ফোনটা বালিশের থেকে কিছুটা দূরে রেখে বিছানায় নিজের শরীরটা এলিয়ে দিয়ে দু’চোখ বুঁজে নিলো।

রাত ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট….
সারফারাজ মিনিট দ’শেক আগেই ফিরেছে খান ভিলায়। এরপর সোজা নিজের রুমে চলে গিয়েছে।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সারফারাজ পিহুর বাবা জবরুলকে কল করলো। কিন্তু ফোন বন্ধ দেখালো। সারফারাজ বিষয়টাকে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
খান বাড়ির ডাইনিং রুম……
ডাইনিং টেবিলের উপর দু’হাত ভাঁজ করে মাথা ঠেকিয়ে চেয়ারে একাই বসে আছেন আতুশি। তেজ আর নির্ঝর যেদিন বাড়ির বাহিরে কাটায় কেবল সেইরাত গুলো ব্যতিত বাকি রাত গুলোর প্রায় অর্ধ সময় আতুশি ডাইনিং রুমে এভাবে বসে বসেই ওদের ফেরার অপেক্ষা করেন।

বাকিরা ১০টার ভিতরেই নিজ নিজ ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। তেজ আর নির্ঝরকে নিজহাতে খাবার বেড়ে খাওয়াতে না পারলে আতুশির মনটা অশান্ত হয়ে থাকে ঘুম ভালো হয় না। তাই সকলের শত মানাকেও তোয়াক্কা করেন না তিনি।
আতুশির একমাত্র মেয়ে নীরা কানাডায় পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যখন চলে গিয়েছেন তখন থেকেই সারফারাজ, তেজওয়ার আর নির্ঝরই তার স্নেহ ও ভালোবাসার শূন্যস্থানটুকু দখল করে নিয়েছে। তাই নিজেকে ভালো রাখার জন্য হলেও আতুশি ওদের তিন জনের খুঁটি-নাটি প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখতে ভুলেন না কখনও।
রাত প্রায় ১২টা…..
নির্ঝর আর তেজ ধীরপায়ে খান ভিলার মূল দরজা পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। তেজ বাড়িতে ঢোকার আগেই নিজের বাহ্যিক রূপের পরিবর্তন করে ঘরে সবার সামনে যেমন আনস্মার্ট লুক নিয়ে থাকে সেই লুক নিয়েই ফিরেছে আজও।

তেজের পরনে ঢোলা চেক প্রিন্টের একটা শার্ট যার গলা পর্যন্ত বোতাম লাগানো। শার্টের হাতাটাও একদম হাতের মুখ পর্যন্ত নিয়ে বোতাম লাগিয়ে রেখেছে। একটা ঢোলা কালো রংয়ের প্যন্ট পড়েছে। মাথায় তেলচিটে ভাব ও একপাশ দিয়ে সিঁথি উঠানো রয়েছে। নাকের উপর থাকা বড় ফ্রেমের চশমাটায় তেজের এই লুকটা পরিপূর্ণ হয়েছে।
তেজের পাশেই নির্ঝর একদম কুল লুক নিয়ে দাঁড়ায় আছে। নির্ঝরের পরণে একটা অফ-হোয়াইট শার্ট রয়েছে। যার হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে রাখা। ধূসর রংয়ের একটা প্যান্ট পড়েছে আর বাম হাতে একটা অ্যাপল ওয়াচ রয়েছে। মাথার চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে রেখেছে।
নির্ঝর ফিসফিস করে তেজকে বললো….

—“ভাই, ছোট চাচী নিশ্চিত ডাইনিং টেবিলে বসে আমাদের জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আজ যা যা খাওয়ালে তুমি বাহিরে আমার পেট তো একেবারে ‘হট ট্রান্সফর্মার এর মতো’ হয়ে আছে। এখন আর ভেতরে কিছু ঢুকানো সম্ভব হবে না।”
তেজ ঠাণ্ডা গলায় বললো….
—“আমারও একই অবস্থা। কিন্তু ক্ষুধা নেই বললে চাচীর মনটা খারাপ হবে। অল্প করে হলেও খেতে হবে।”
নির্ঝর একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…..

—“আচ্ছা চলো, দেখি কপালে কি লেখা আছে আজ।”
ডাইনিং রুমে ঢুকতেই ওরা দেখলো টেবিলের মিডল পয়েন্টে রাখা চেয়ারে বসে আতুশি ঘুমিয়ে আছেন। আতুশির মায়া মাখানো সহজ-সরল মুখশ্রীটাতে একটু গভীর ভাবে নজর বুলালে যে কারোরই মনে হবে একজন মা তার সন্তারদের জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন।
তেজ আর নির্ঝর চুপচাপ গিয়ে দুই পাশে চেয়ার টেনে বসলো। আতুশি তৎক্ষাৎ চোখ খুলতেই ওদের দু’জনকে দেখে হাসিমুখে বললেন…..

—“সরি বাবারা, চোখটা লেগে গিয়েছিলো। দাঁড়াও, আমি এক্ষুনি খাবার বেড়ে দিচ্ছি তোমাদের। সব রেডিই আছে।”
এই বলেই আতুশি দু’টো খাবারের প্লেট সাজালেন।দু’টো প্লেটেই নিলেন গরম ভাত, মুরগির ঝোল, আলু ভাজি, ডাল আর সালাদ। প্লেটে এতো এতো আইটেম এর খাবার দেখে নির্ঝর ঢো*ক গি*ল*লো একবার। নির্ঝরের চোখে-মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে….
“আমি ফাঁ*ইসা গেছি!
আমি ফাঁ*ইসা গেছি!
মাইন*কার চি*পায়।”

তেজ ভদ্রভাবে মাথা হালকা নিচু রেখে বসে আছে। আতুশি প্লেট দু’টো তেজ আর নির্ঝরের সামনে রাখলেন। তেজ পাশ থেকে চামচটা হাতে তুলে নিলো। নির্ঝর তেজের দিকে অ*স*হায় দৃষ্টিতে তাকালো। তেজ নির্ঝরের দিকে তাকাতেই নির্ঝর ইশারায় বললো…..
—“ভাই, এতো খাবার এখন খাইলে আমি নি*র্ঘা*ম ম*রে যাবো। আর না খাইলে চাচীর মন ভা*ঙ*বে। এখন বলো প্লিজ আমি বাঁচবো কিভাবে?”
তেজ আতুশিকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—”ছোট চাচী, আমাকে একটু ফ্রীজ থেকে ঠান্ডা পানি এনে দিবেন!”
আতুশি বললেন….

—”এক্ষুণি এনে দিচ্ছি বাবা।”
এই বলে আতুশি রান্নাঘরে চলে গেলেন। তেজ নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—“বেল্টটা খুলে প্যান্টের কোমরটা ঢিলা কর। জায়গা বাড়বে এতে কিছুটা।”
নির্ঝর এক মুহূর্তও না ভেবে তেজের কথা মতো চেয়ারে বসেই প্যন্টের বেল্টের হুক খুলে দিলো। টক করে শব্দ হতেই নির্ঝরের পেট যেনো কিছুটা রিলিফ ফিল করলো। নির্ঝর হাঁফ ছেড়ে বললো….
—“আহ! চাপ কিছুটা কমলো এবার।”
আতুশি হাফ লিটারের একটা ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে তেজের প্লেটের পাশে থাকা গ্লাসে ঢেলে দিলেন। নির্ঝর চামচ দিয়ে অল্প অল্প করে তরকারী মিশানো ভাত মুখে নিতে লাগলো। কিন্তু যতো ভাত নির্ঝরের মুখের ভিতর যাচ্ছে আর গলা দিয়ে নিচে নামছে ততোই ওর মুখের রঙ পাল্টাচ্ছে। চোখের আকৃতিও বড় হয়ে যাচ্ছে। এসি চলা সত্ত্বেও নির্ঝর ঘেমে যাচ্ছে।
তেজ নির্ঝরের অবস্থা এমন বেগতিক হতে দেখে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ইশারায় বললো….

—“একটু ধীরেই খা। নইলে এবার তোর পেটের ভেতরেই বো*মা ফা*ট*বে।”
আতুশি বললেন….
—”তোমরা খাওয়া শেষ করো আমি একটু রুম থেকে আসছি।”
তেজ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আতুশি রুমে চলে গেলেন। নির্ঝর অ*স*হা*য় কন্ঠে বললো….
—“ভাই আর পারছি না। সত্যিই এবার আমার পেট ফেঁ*টে যাবে নিশ্চিত। এখনও যদি তুমি কোনো সমাধান বের না করো তাহলে কাল সকালে আমার জা*নাজা পড়ানোর জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নাও।”

তেজ আশেপাশে চোখ বুলালো একবার। অতঃপর চেয়ার ছেড়ে উঠে রান্নাঘর থেকে একটা কালো পলিব্যগ নিয়ে এসে নিজের ও নির্ঝরের প্লেট থেকে ৩ ভাগ খাবার সেই ব্যগে ভরে নিয়ে দ্রুত পায়ে মূল দরজা পেরিয়ে বাহিরে চলে এলো। এরপর বাগান সাইডে এসে সেখানে থাকা ওদের পোষা কু*কু*র টমির খাবারের বাটিতে সবটুকু খাবার ঢেলে দিয়ে পলিথিনটা ডাস্টবিনে ফেলে আবারও ভিতরে এসে চেয়ার টেনে বসলো।
তেজের এমন কাজে নির্ঝরের খুশি আর দেখে কে। পরপরই আতুশি আবারও সেখানে উপস্থিত হলেন।আতুশিকে দেখামাত্র তেজ আর নির্ঝর ওদের প্লেটে অবশিষ্ট থাকা খাবারটুকু খুব মনোযোগের সহিত খেতে শুরু করলো৷ আতুশি বললেন…..

—”একি বাবারা, এতো তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ হলো তোমাদের! এতো অল্প খেলে চলে নাকি? আরেকটু ভাত দেই?”
তেজ বললো….
—”না চাচী আর লাগবে না পেট ভরে গিয়েছে।”
আতুশি ভাতের বাটিটা নিয়ে নির্ঝরের কাছে এসে বললো….
—”তেজ বাবা তো নিলো না কিন্তু তুমি একটু নাও নির্ঝর বাবা! আমার ভালো লাগবে তাহলে।”
নির্ঝর চেয়েও না করতে পারলো না। আতুশি একে একে নির্ঝরের প্লেটে অল্প ভাত ও মুরগীর পিচ সহ সামান্য ঝোল দিলেন। নির্ঝরের মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেনো আতুশি ওর প্লেটে ভাত-তরকারী নয় ওর মাথার উপর এক টন ইট ফে*লে দিলেন।
নির্ঝর অনেক কষ্টে খাবারটুকু কোনোরকমের গি*লে নিয়ে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে একহাতে নিজের পেট চা*প*ড়াতে চা*প*ড়াতে বললো….

—“চাচী আপনার মন রাখতে গিয়ে এখন আমার পেটটা ফুলে বঙ্গবন্ধু স্যটেলাইট এর মতো মহাকাশে গিয়ে ভাসবে মনে হচ্ছে।”
তেজ মাথা নিচু করে ঠোঁট চেপে হাসছে। আতুশি বললেন…..
—”এই বয়সে এই টুকু খাবার খেয়েই এমন অবস্থা হলে কি চলে বাবারা! ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া না করলে শরীর স্ট্রং হবে না।”
তেজ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো….

—”ছোট চাচী একদম ঠিক বলেছেন। আমাদের উচিত বাহিরের খাবার বর্জন করে ঘরের স্বাস্থ্যকর সব খাবার বেশি বেশি করে খাওয়া। নির্ঝর এখন থেকে বাহিরের আ*জে-বা*জে খাবার খাওয়া তোর জন্য বন্ধ। বুঝলি! চাচী আপনি এবার ঘুমাতে যান। সকালে সার্ভেন্টরা এসব পরিষ্কার করে দিবে।”
নির্ঝর মনে মনে বললো….
—”নিজেই আমায় বাহিরের খাবার খাইয়ে পেট তাজা করালো। আর এখন কতো সুন্দর ভাবে চাচীর সামনে আমাকেই ফাঁ*সি*য়ে দিলো।”
আতুশি কেবল খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে এঁটো প্লেট-বাটিগুলো রান্নাঘরের সিন এ রেখে নিজ রুমে চলে গেলেন। তেজ বেসিন থেকে হাত ধুঁয়ে এসে নির্ঝরকে তখনও চেয়ারে বসে থাকতে দেখে বললো….
—”কিরে তোকে তোলার জন্য ক্রে*ন আনার ব্যবস্থা করতে হবে নাকি এখন।”
নির্ঝর বললো….
—”ব্রো, তুমি গিয়ে ঘুমাও। আমি আরেকটু বসে থাকবো। তারপর চলে যাবো।”
তেজ আর কথা বাড়ালো না। নিজঘরে চলে গেলো।

সকাল প্রায় ১০ টা…..
সারফারাজ অনেকক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। কিন্তু এরপর কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো সে। বাহিরে বের হতে হবে। পার্টির সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে ওর ১২টায়। শাওয়ার নিয়ে একটা কালো রংয়ের পান্ঞ্জাবি আর সাদা রংয়ের পাজামা পড়েছে সারফারাজ। ওর আলমারী কেবল পান্ঞ্জাবি আর পাজামা দিয়েই ভর্তি। ২-৪টা কোর্ট, শার্ট-প্যন্টও আছে যদিও। কিন্তু সেসবের থেকে পান্ঞ্জাবি-পাজামা পড়েই চলাফেরা করতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে সারফারাজ।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো চিরুনি করলো। হালকা এলোমেলো ভাব করেই রাখে সারফারাজ ওর মাথার চুলগুলো। যা কপালের উপর সুন্দর ভাবে বিস্তার করে। চুলের এই স্টাইলেই সারফারাজকে বেশি মানায়। সুদর্শন লাগে অনেক। পাশ থেকে ❝Bleu de Chanel❞ সেন্টটা উঠিয়ে শরীরে দিয়ে নিলো। যার সুগন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সেন্টটা সারফারাজ বরাবর ব্যবহার করে।
পরক্ষণেই সারফারাজের ফোনটা বেজে উঠলে সে বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে ফোনটা উঠাতেই দেখলো স্ক্রিণে কমলার নাম্বার ভেসে উঠেছে। কমলার নিজস্ব কোনো ফোন ছিলো না তাই সারফারাজ গতকালই ওকে একটা নোকেয়া মডেলের বাটন ফোন কিনে দিয়েছিলো।
কমলার কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কমলা বললো….

—”ভাইসাহেব আপামনিরে নিয়া কি আপনে বাহিরে কোথাও গেছেন? আমি কি তাইলে আবার বাড়ি চইলা যামু? পরে আসমু!”
কমলার এমন প্রশ্নে সারফারাজের ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো। সারফারাজ সকাল থেকে নানান কাজের ব্যস্ততায় পিহুকে কল করার সময়-ই পায় নি। সারফারাজের কোনো প্রতিত্তুর না পেয়ে কমলা আবারও বললো….
—”ভাইসাহেব কিছু বললেন না যে! আপামনির বাড়ির গেইটে তো তালা মা*রা। বাড়িতে কেউ নাই। ওরা মা-মাইয়াও মনে হয় বাহিরে গেছে।”
সারফারাজ বললো….

—”তুমি বাড়ি চলে যাও কমলা।”
এই বলে সারফারাজ কল কেটে দিলো। তৎক্ষনাৎ সারফারাজ আহাদকে কল করলো। আহাদ কল রিসিভ করতেই রাগী স্বরে বললো…..
—”তোমাকে আমি বলেছিলাম না পিহুর বাড়ির উপর সর্বক্ষণ নজর রাখার জন্য? সিসিটিভি ক্যমেরা লাগানো রয়েছে। কে আসছে, কে বের হচ্ছে আমাকে কিছুই ইনফর্ম করার প্রয়োজন মনে করো নি তুমি ড্যমেট!”
আহাদ ভ*য়ে কেঁ*পে উঠলো। পরপরই সে বললো…
—”স-স্যার গতকাল রাতে হঠাৎ-ই আমার স্ত্রীর লেবার-পেইন হয়েছিলো তাই আমি একজন গার্ডসকে দায়িত্বে রেখে বাসায় চলে এসেছিলাম। আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো।”
সারফারাজ দু’চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বললো….
—”ঠিক আছে। তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে থাকো। আমি দেখছি বিষয়টা।”

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১১

এই বলে সারফারাজ কল কেটে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে পার্কিং সাইড থেকে নিজের গাড়িটা নিয়ে সোজা নিজের আস্তানার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। যেতে যেতে সারফারাজ পিহুর ফোনে বেশ কয়েকবার কলও করেছিলো কিন্তু ফোন বার বার বন্ধই এসেছে। গতকাল সারফারাজ নিজে ওকে বাড়ি ছেড়ে দিতে এসেছিলো জন্য ওর বাড়ির মোড়ে যে গাড়িটা সর্বক্ষণ রাখা হতো সেটাও রাখা হয় নি। পুরো রাস্তা কেবল পিহুর চিন্তাই সারফারাজের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পিহু একা ওকে না জানিয়ে কোথাও যাওয়ার মেয়ে না। সোমা-সোনালী কি পিহুকে জোর পূর্বক কোথাও নিয়ে গিয়েছে? না না, ওদের দু’জনের পক্ষে এমন কিছু করার সাহস হবে না। তাহলে পিহু কোথায়?

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here