না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৪ (২)

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৪ (২)
মাইশা জান্নাত নূরা

ইলমার নতুন বাসার জন্য ওর প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসপত্র কেনা শেষ হতে হতেই বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। রিজার্ভ করা মিনি ট্রাকটা নিয়ে ইলমার সাথে তেজ ওর বাইকে করে সেই ভাড়া বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। জিনিসপত্র রুমের ভিতর জায়গা মতো সেট করে দেওয়ার জন্য কয়েকজন কম বয়সী ছেলেকেও ভাড়া করে এনেছিলো তেজ।

ওদের সহোযোগিতায়-ই ইলমার বলে দেওয়া জায়গা গুলোতে ১টা মাঝারি আকারের খাট, একটা ২ পাল্লার আলমারী, হাঁড়ি-পাতিল ও রান্নার সরন্ঞ্জাম রাখার জন্য খোলা ও দরজা ওয়ালা ২ সিস্টেম বিশিষ্ট একটা র‍্যক, গ্যসের চুলা-সিলিন্ডার, রাইসকুকার, মিনি ফ্রিজ ইত্যাদি রেখে দিলো। কারেন্টের লাইন ঠিক করে দেওয়ার জন্য একজন কারেন্ট মিস্ত্রি ও এসেছিলেন। ফ্যন, লাইট সেট করে দিয়েছেন তিনি। এরপর সকলের পারিশ্রমিক মিটিয়ে দেওয়া হয়ে গেলে তেজ ইলমার রুমেই বিছানার উপর বসে পড়লো। পিছনের দিকে দু’হাত ভর দিয়ে হালকা ঝুঁকে৷ দু’চোখ বন্ধ করে মাথাটা হালকা উপরের দিকে স্থির করে রেখেছে।
ইলমা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বললো….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—”চা পান করবেন, তেজ?
তেজ বললো….
—”আমি তো নরমাল চা পান করি না। গ্রিন-টি পান করি৷”
ইলমা ভ্রু কুঁচকে বললো….
—”কি টি?”
তেজ ওভাবে থেকেই আবার বললো…
—”গ্রিন-টি।”
—”গ্রিন মানে তো সবুজ আর টি মানে চা। তাহলে গ্রিন-টি মানে কি সবুজ চা?”
তেজ সোজা হয়ে বসে ইলমার দিকে তাকিয়ে বললো…..
—”না, রংটা ঠিক সবুজ না। হালকা সবুজ হয় আবারও কখনো একটু সোনালি কালারও হয়। এই চা এর নাম গ্রিন-টি রাখা হয়েছে কারণ এটা অক্সিডাইজড হয় না। মানে চায়ের পাতাগুলো শুকালেও এর রং কালো হয় না। সবুজ ভাবটা থেকেই যায়।”

ইলমা কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছে তেজের দিকে। তেজ একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো….
—”গ্রিন টি আসলে তৈরি হয় Camellia sinensis নামক গাছের কচি পাতা দিয়ে। ওই একই গাছ থেকে ব্ল্যাক টিও বানানো হয়। শুধু বানানোর প্রক্রিয়াটা আলাদা হয়। গ্রিন টিতে পাতাগুলো শুকানো হয়, কিন্তু ফারমেন্ট করা হয় না। তাই এর রঙ, ঘ্রাণ আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো অক্ষ*ত থাকে।”
ইলমা মুখ কুঁ*চ*কে বললো….
—”এতো ভাড়ি ভাড়ি কথা বুঝে আমার কাজ নেই। আপনি বরং এসব গ্রিন-ফ্রিন টি খাওয়া ছেড়ে কুসুম গরম পানির সাথে নিমপাতার রস গুলিয়ে খাইয়েন। সেটা শরীরের জন্য ভালো উপকারী হবে।”
তেজ বাঁকা হেসে বললো….

—”অনেকেই বলে গ্রিন-টির স্বাদ নাকি বি*দ*ঘু*টে লাগে তাদের কাছে। আমি যেহেতু এমন বি*দ*ঘু*টে স্বাদের চা পান করে অভ্যস্ত তাই আমার কাছে নিমপাতার রসটাও পান করা আহামরি কঠিন বিষয় মনে হবে না মিস.ইলমা।”
ইলমা প্রতিত্তুরে আর কিছু বললো না। র‍্যকের নিচ তাঁক থেকে কিছু সবজি বের করে নিয়ে তা কাটতে শুরু করলো। কিয়ৎক্ষণ পর ইলমা বললো….
—”রাতের খাবার এখান থেকে খেয়ে যাবেন আপনি?”
তেজ বললো…..
—”না। আমি এখুনি বের হবো। নির্ঝরটা একাই আছে বাংলোতে। কমোর ব্যথার কতোটা কি উন্নতি হলো দেখতে হবে আমায়।”
—”আচ্ছা ঠিক আছে।”
অতঃপর তেজ ওখান থেকে রওনা করলো।

সন্ধ্যার আকাশটা সূর্যের শেষ গাঢ় লালচে রঙে ঢেকে গিয়েছে। বাংলোর ভিতর নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।
ড্রয়িংরুমের মেঝেতে কোমরের উপর দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে পায়চারি করছে সারফারাজ। গাঢ় নীলাভ মণিবিশিষ্ট চোখজোড়ার চারপাশের সাদা অংশ হালকা রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। পূর্বের ন্যায় কপালের ও ঘাড়ের সূক্ষ্ণ শিরাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
নির্ঝর সোফার উপর গুটিসুটি হয়ে বসে আছে। দুই হাঁটুর মাঝে হাত গুঁজে রেখেছে। নির্ঝরের ঠোঁটজোড়া মৃদুভাবে কাঁপছে। দাঁত দিয়ে একটু পর পর কামড়াচ্ছে অবচেতন ভাবে। ভয়ে সর্ব শরীরের লোমকূপ একটু পর পর শিউরে শিউরে উঠছে নির্ঝরের। মনে মনে আওড়াচ্ছে….

—“আল্লাহ! এবারের মতো বড় ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিন, আমি আর মি*থ্যে কথা বলবো না। তেজ ভাই, আজ তুমি শেষ। তোমার সাথে এই নির্ঝরিয়াও শেষ হবে। সারফারাজ ভাই তোমার আসল রূপ জেনে গিয়েছে।”
সারফারাজ পায়চারি থামিয়ে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো…
—”যদি কোনোভাবে আমার এখানে আসার খবর তেজের কানে পৌঁছায় আর সে এখানে না আসে আজ তাহলে তোর একটা হাড়ও অক্ষ*ত রাখবো না আমি নির্ঝর। বুঝেছিস?”
নির্ঝর কেঁপে উঠে বললো….
—”বড় ভা-ভাইয়া, তুমি তো আমার ফোন সেই কখন-ই জমা নিয়েছো। আমি কিভাবে তেজ ভাইকে তোমার আসার কথা জানাবো বলো!”
সারফারাজ আর কিছু বললো না।

নিজের রুমে থাকতে থাকতেই কেমন বিরক্ত বোধ হচ্ছিলো পিহুর। তাই পিহু নিজ রুম থেকে বেড়িয়ে নীরার রুমে যাবে বলে মনঃস্থির করলো। সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে নীরার রুমের দিকে অগ্রসর হতেই পিহু ওর শ্বাশুড়ি মা তাহমিনা খানের রুমের সামনে এসে থেমে গেলো। ভিতর থেকে তাহমিনা হালকা কন্ঠস্বর ভেসে আসছিলো….
—”এই সব গুলো কাঁথা আমার নাতি-নাতনীদের জন্য এতোবছর ধরে যত্ন নিয়ে বানিয়েছি আমি। এই কাঁথাগুলো এবার পিহু মা’কে দিতে হবে।”
তাহমিনার কথা শুনে পিহুর মুখ হা হয়ে গেলো। বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে এসেছে মোটে ২দিন হলো আর এখুনি ওর শ্বাশুড়ি মা ওর হাতে হবু সন্তান-সন্ততিদের জন্য বানানো কাঁথা তুলে দেওয়ার কথা বলছেন! পরপরই পিহুর শ্যমরঙা মুখশ্রী লজ্জায় কেমন লালচে বর্ণ ধারণ করলো মূহূর্তেই। পিহু হালকা হেসে মনে মনে বললো….

—”মা হওয়ার অনুভূতি পৃথিবীর ভিতর সবথেকে শ্রেষ্ঠ অনুভূতি হয়তো। আমি আমার ৪ মায়ের মতো মা হতে চাই। জন্মদায়িনী মা ও তিন শ্বাশুড়ি মায়ের গুণগুলো একটু একটু করে নিজের মাঝে ধারণ করতে চাই। যেনো আমার সন্তান-সন্ততি গর্বের সাথে বলতে পারে তাদের মা বেস্ট মা।”
অতঃপর পিহু সেখানে আর না দাঁড়িয়ে নীরার রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। নীরার রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজায় কড়া নাড়লো পিহু। দরজাটা হালকা ভিড়ানো ছিলো। ভিতর থেকে নীরার কন্ঠস্বরে ‘কে? ভিতরে এসো’ বাক্যটি ভেসে আসলে পিহু ভিতরে প্রবেশ করলো। নীরা বিছানায় বসে বই পড়ছিলো। পিহুকে দেখে বইটা বন্ধ করে হাসিমুখে বললো….

—”পিহু আপু তুমি যে! এসো, আমার পাশে এসে বসো।”
পিহু হালকা হাসির রেখা ঠোঁটে বজায় রেখে নীরার মুখোমুখি বিছানায় বসে বললো….
—”বই পড়ছিলে?”
—”হুম। আমার গল্পের বই পড়তে ভিষণ ভালো লাগে।”
পিহু নীরার কোল থেকে বইটা উঠিয়ে নিয়ে তাতে হাত বুলালো। শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ বই এটা। পিহু বললো….
—”শেষ কবে গল্পের বই পড়েছিলাম খেয়াল নেই।”
—”তোমার বই পড়তে ভালো লাগে আপু?”
—”হুম। হয়তো পড়ার প্রতি ভালো লাগাটা এতো বেশি হওয়ার জন্যই উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডিটুকুও পেরোনোর সৌভাগ্য হয় নি আমার।”
নীরা লক্ষ্য করলো এই কথাটুকু বলতে গিয়ে পিহুর মুখটা মলিন বর্ণ ধারণ করেছে। তাই নীরা পরিস্থিতির মোড় ঘুরাতে বললো….

—”আগে হয় নি তো কি হয়েছে? এখন হবে। আমি পড়াবো তোমায়।”
পিহু অবাক নয়নে তাকালো নীরার দিকে। হালকা হেসে বললো….
—”এই বয়সে এসে বাচ্চাকালের পড়া পড়বো আমি? লোকে শুনলে হাসবে নীরা।”
—”এখানে হাসার কিছু নেই আপু। আর যার হাসবে তারা নিজেরাই একেকজন মূ*র্খ। কারণ শেখার ও জানার জন্য বয়স লাগে না। লাগে আগ্রহ। তোমার মধ্যে যদি পর্যাপ্ত আগ্রহ থাকে তাহলে তুমি আবারও পড়তে পারবে। হোক না সেই শিক্ষার ধাপ তোমার বর্তমান বয়সের তুলনায় অনেক পিছানো৷ তাতে কিছু যায় আসে না। বুঝলে!”
পিহুর চোখজোড়া ছলছল করছে। এই অশ্রুরা কি সুখের? নাকি এতোকাল ধরে যে জানার আগ্রহ মনের মধ্যে একপ্রকার ক*ব*র দিয়েই রেখেছিলো বলা চলে সেই ক*ষ্টের অশ্রু?

নিজের ও পাশের ঘরে যেই মেয়েটা থাকে দু’জনের পরিমাণেই ভাত ও তরকারী গ্যসের চুলায় বসিয়ে দিয়েছে ইলমা। পাশের ঘরের মেয়েটা এখনও বাহির থেকে ফেরে নি। মেয়েটার নাম কি, বয়স কেমন, চলন-বলন কেমন হবে সে সম্পর্কে কিচ্ছু জানে না ইলমা। ভেবেছে মেয়টা বাহির থেকে ফিরলে খাবার নিয়ে যাবে ওর কাছে পাশাপাশি পরিচয়টাও হয়ে নিবে।
ইলমার রান্না প্রায় শেষের পথে। সেইসময়-ই পাশের রুমের বাহির পার্শে থাকা দরজাটা খোলার হালকা শব্দ ইলমার কানে এলো। ইলমা চুলার ধার থেকে উঠে নিজের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। দেখলো একজন শার্ট, প্যন্ট ও ক্যপ পরিহিত কেউ পাশের রুমের দরজা খুলছে। ইলমার ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো। মনে মনে বললো…..
‘বাড়ির মালিক যে বললেন এখানে যিনি থাকেন উনি একজন মেয়ে! কিন্তু ওনার পোশাক দেখে তো মনে হচ্ছে না উনি একজন মেয়ে! তাহলে কি একজন অপরিচিত ছেলের সাথে আমাকে বাসা শেয়ার করে থাকতে হবে! না, না। এ কি করে হয়?’

বাংলোর মূল দরজা পেরিয়ে ডান হাতের শাহাদত আঙুলে বাইকের চাবির রিং-টা ঘুরাতে ঘুরাতে শিশ বাজাতে বাজাতে ভিতরে প্রবেশ করলো তেজ। সারফারাজ পায়চারি থামিয়ে নিজের অগ্নি দৃষ্টি স্থির করলো তেজের উপর। নির্ঝর তেজকে দেখা মাত্র শুকনো ঢোক গি*ল*লো একবার। তেজের কানে হেডফোন লাগানো ছিলো। হয়তো গান শুনছে। গানের তালেই শরীর হালকা ভাবে দুলাচ্ছে তেজ। তেজ চোখ বন্ধ করে ওভাবেই হেলিয়ে-দুলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। চোখ মেলে সামনেটা দেখছে না। তেজ গেয়ে উঠলো……

❝হায় রসেতে….
রসেতে ডুবেছে জাওয়ানীর আগুন
থামালেও থামেনা এই প্রেমের ফাগুন (২)
নেশা নেশা লেগেছে প্রেমের নেশা
তাই মজনু অ্যা অ্যা অ্যা অ্যা
হে নেশা নেশা লেগেছে প্রেমের নেশা
তাই মজনু দেবে লায়লাকে শ…!❞
বাকি টুকু শেষ করার আগেই তেজ চোখ মেলে সামনে তাকালো। সারফারাজকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তেজ ওভাবেই স্থির হয়ে ঢো*ক গি*ল*লো একবার৷ ঘাড় হালকা বাঁকিয়ে সারফারাজের পিছনে নির্ঝরের দিকে তাকাতেই নির্ঝর ওর হাত দিয়ে নিজের গলার উপর টান মা*রা*র ইঙ্গিতে বুঝালো আজ সে শেষ।
সারফারাজের স্থির, গাম্ভীর্যময় তীক্ষ্ণ অগ্নি দৃষ্টি তেজের বুকের ভি*ত*র কেমন করে এসে যেনো বিঁ*ধ*লো। তেজ দু’কম এগিয়ে এসে বললো…

—“ভা-ভাইয়া, তুমি এখানে!”
সারফারাজ উত্তর দিলো না। সারফারাজের এই দৃষ্টি যেনো বুঝাচ্ছে সে নিজে একজন আহত সিংহ আর তেজ ওর শিকার।
তেজের ঠোঁটদ্বয়, গলা-কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে এইটুকু সময়েই৷ তেজ আবারও কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে সারফারাজ স্বজোরে তেজের বাম গালে একটা থা*প্প*ড় দিলো। থা*প্প*ড়ে*র তেজী ভাব যেমন ছিলো শব্দও তেমন-ই প্রখর ছিলো। নির্ঝর ভ*য়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে গেলো এবার।
তেজের মাথা একপাশে ঘুরে গেলো। তেজের ঠোঁটের কার্নিশ ফে*টে রক্ত বেরিয়ে এলো। কয়েক সেকেন্ড নিস্তব্ধ রইলো পুরো বাংলোর পরিবেশ। নির্ঝরের ভীতি শ্বাস, সারফারাজের রাগী প্রশ্বাস ও তেজের আ*হ*ত শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে কেবল।

তেজ একহাত নিজের গালের উপর চেপে ধরে মাথা নিচু করে রইলো। ঠোঁটের কোণ বেয়ে র*ক্ত গড়িয়ে পড়লো দু’ফোটা। সারফারাজের দৃষ্টি রূপ পরিবর্তন করলো। সারফারাজের রাগকে চাপা দিলো ঘৃ*ণা, হ*তা*শা ও ভাইদের থেকে পাওয়া প্র*তা*রণার নোং*রা চাদরখানা।
সারফারাজ তেজের বুকের বামপার্শে এক আঙুল দ্বারা হালকা প্রেসার দিয়ে ঘৃ*ণা মিশ্রিত কন্ঠে বললো….
—“তুই কি আমার সেই ছোট ভাই তেজওয়ার খান তেজ, যাকে আমি নিজের প্রাণের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম?”
সারফারাজের এই প্রশ্নটা তেজের বুকে অদৃশ্য ধাঁ*রা*লো ছুঁ*ড়ি দ্বারা করা প্রথম ক্ষ*ত ছিলো। সারফারাজ আবারও বললো…..

—”তোর সেই নিষ্পাপ মুখের আড়ালে যে এমন নোং*রা, জ*ঘ*ন্য একটা রূপ থাকবে আমি কল্পনাও করতে পারি নি। আমাদের বিশ্বাস, ভরসা, স্নেহ ও পূর্ণ স্বাধীনতার এভাবে প্রতিদান দেওয়ার আগে তোর কলিজাটা একটুও কাঁ*প*লো না কেন?”
তেজের দু’চোখ অশ্রুতে টলমল করে উঠলো। মুখ ফুটে একটা টু শব্দ করার শক্তি তেজ পেলো না৷
সারফারাজ বললো….
—“তুই একেকদিন একেক মেয়ে নিয়ে ঘুরিস? ক্লাবে ক্লাবে যাস? দামি দামি ম*দ পান করিস? তুই আমার ভাই? এই সারফারাজ ইউসুফ খানের শরীরে যেই র*ক্ত বইছে সেই একই র*ক্ত তোর শরীরেও বইছে? আমি যেই গর্ভে ঠাঁই পেয়েছিলাম, যেই মা-বাবার শিক্ষায় বড় হয়েছিলাম সেই একই গর্ভে ঠাঁই তোরও হয়েছিলো, একই মা-বাবার শিক্ষা তুই-ও পেয়েছিলি! তাহলে কেমনে পারলি এই খান বংশের র*ক্তে এমনে ক*ল*ঙ্কের দা*গ লাগাতে?”
তেজের বুকের ভেতরটা জ*খ*মে*র পর জ*খ*মে ভরে গেলো এবার। তেজ ব্য*থি*ত কন্ঠে বললো….

—“ভাইয়া, আমি…!”
সারফারাজ কথা শেষ করতে দিলো না তেজকে। গর্জে উঠে বললো….
—“চুপ! একটা শব্দও ঐ মুখ দিয়ে বের করবি না। তুই যদি খান বংশের সন্তান না হতি তাহলে এই ঘরেই তোকে আমি জীবন্ত পুঁ*তে ফেলতাম এমন বি*শ্বা*স-ঘা*ত*কতা করার জন্য।”
তেজের দু’চোখ থেকে অশ্রুরা ঝড়ে পড়ছে। ফর্সা গালটাতে সারফারাজের থা*প্প*ড়ের দাগ বসে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ঠোঁটের কার্নিশের ফাঁ*টা জায়গা থেকে আর র*ক্ত ঝড়ছে না। তেজ বললো….
—“আমি ভুল করেছি ভাইয়া। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি, আমি এমনটা…!”
সারফারাজ চিৎকার বললো…

—“Enough, Tej. আজ তোকে জা*নে মা*র*তে আমি পারলাম না ঠিকই। কিন্তু আজ থেকে তুই আর আমার ভাই রইলি না। তোকে ঘে*ন্না করতেও আমার ঘে*ন্না*র রুচি কাজ করছে না। তুই কেবল আমার সাথে না খান পরিবারের সহজ-সরল মানসিকতার প্রতিটা মানুষের সাথে নিখুঁত ভাবে ছলনা করেছিস। বি*শ্বাস-ঘা*ত*ক*তা করেছিস। তোর কোনো ক্ষমা নেই।”
তেজ সারফারাজের সামনে হাঁটু ভে*ঙে বসে পড়লো। সারফারাজ দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে গভীরভাবে নিঃশ্বাস ফেলে বললো….

—“তুই আজ আমাকে শুধু ভাই হিসেবে না, মানুষ হিসেবেও মে*রে ফেলেছিস তেজ। তুই আজ প্রমাণ করে দিয়েছিস র*ক্তের সম্পর্কের চেয়েও বি*ষা*ক্ত হতে পারে মানুষের চরিত্র।”
সারফারাজ তেজের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তেজের গলা কাঁপছে। বুকটা উঠানামা করছে তীব্র অনুতাপে। চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রুরা ঝরে পড়ছে। তেজ বললো….
—“ভাইয়া, আমার দিকে একবার তাকাও! প্লিজ তাকাও! রাগী নজরেই তাকাও! তোমার চোখের ঐ ঘৃ*ণা আমি নিতে পারছি না ভাইয়া৷ আমি ম*রে যাচ্ছি ভাইয়া। আমার ভিতরটা পু*ড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে!”
সারফারাজ তবুও ফিরলো না তেজের দিকে।
তেজ বসা অবস্থাতেই ছেঁ*চ*ড়ে এগিয়ে এসে দু’হাতে সারফারাজের দু’পা জড়িয়ে ধরলো। সারফারাজ সঙ্গে সঙ্গে দু’চোখ বুঁজে দু’হাত শক্ত করে মু*ষ্টি*বদ্ধ করে ধরলো। তেজ শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো….

—“তুমি আমাকে মা*রো ভাইয়া। আমাকে কেঁ*টে, ছিঁ*ড়ে ফেলো। যা খুশি করো তুমি আমার সাথে। কিন্তু এইভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না ভাইয়া। তোমার ছোট ভাই তেজ আমি। তোমার পায়ে ধরে আমি ক্ষমা ভিক্ষা চাচ্ছি আমি। শুধু একটু ক্ষমা ভাইয়া। তুমি যে আমার অহংকার ভাইয়া। আমার প্রেরণা তুমি। আমি সত্যিই ম*রে যাবো। কসম!”
সারফারাজ ওর সর্বোচ্চ শক্তি খাটিয়ে তেজের বাঁধন থেকে নিজের পা ছুটিয়ে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ঘৃ*ণা ভরা কন্ঠে বললো…..

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৪

—“তোর কান্না, অসহায়ত্ব আমার হৃদয়কে আজ স্পর্শ করতে পারছে না তেজ। এমনিও আজ থেকে আমি জানবো, আমার কোনো ছোট ভাই নেই। না তেজওয়ার খান, আর না নির্ঝর খান। তোরা দু’জনেই আজ থেকে আমার কাছে মৃ*ত।”
এই বলে সারফারাজ আর একমুহূর্তের জন্য সেখানে দাঁড়ালো না। ভাড়ি কদম ফেলে বেড়িয়ে গেলো বাংলো থেকে। পিছন থেকে তেজের আহাজারি মিশ্রিত ডাক সারফারাজের কানে পৌঁছালেও ওকে থামাতে সক্ষম হলো না।
নির্ঝরও হাঁটুতে মুখ গুঁজে হু হু করে কাঁদছে। তেজ মেঝেতে বসেই হু হু করে কাঁদছে আর চিৎকার করে বলছে….
—“ভাইয়া! একবার থামো ভাইয়া! আমি ভুল করেছি। আমি মেনে নিচ্ছি আমার ভুলটা! ভাইয়া এভাবে আমাদের ফেলে যেও না তুমি! ম*রে যাবো ভাইয়া। ম*রে যাবো…!”

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here