না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৪ (৪)

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৪ (৪)
মাইশা জান্নাত নূরা

ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে পড়েছে নির্ঝর। ক্লান্ত চোখে কান্নার দাগ শুকিয়ে গিয়েছে। ঘুমন্ত মুখেও বি*ষন্ন*তার ছাপ ফুটে আছে। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ ব*জ্র*পাতের প্রবল শব্দে নির্ঝরের ঘুম ভেঙে গেলে চমকে উঠে বসলো সে।
চোখ মেলে চারপাশটাতে নজর বুলালো নির্ঝর। পুরো বাংলো বাড়ি আবছা আলো-অন্ধকারে ঢেকে আছে। নির্ঝর দু’হাতে নিজের মাথার দু’পাশ চেপে ধরলো। মাথাটা কেমন ভারি হয়ে আছে আর চোখের ভেতরেও জ্বা*লা অনুভব করছে সে।
নির্ঝর বিরবিরিয়ে বললো….

—”আহহ, আমার মাথা! মাথায় একটু চাপ পড়েছে আর এই মাইগ্রেনের ব্যথাটাও বেড়ে গিয়েছে।”
পরপরই নির্ঝর সোফা ছেড়ে উঠে ডাইনিংয়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি পান করলো। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো সময় তখন রাত দু’টো। পুনরায় ড্রয়িংরুমে আসতেই নির্ঝরের চোখ গেলো দোতলার দিকে। তেজের রুমের দরজাটা পুরোপুরি খোলা অবস্থায় দেখে নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বললো…..
—“তেজ ভাই তো দরজা খোলা রেখে ঘুমায় না! আজ খোলা যে! ঘুমায় নি নাকি?”
এই বলে নির্ঝর উপরে উঠে তেজের রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখলো রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে। অতঃপর ভিতরে প্রবেশ করে লাইট অন করতেই দেখলো বিছানাটা একদম পরিপাটি অবস্থায় রয়েছে। তেজ রুমে নেই। ওয়াশরুম, বেলকনিতে চেক দিলো সেখানেই নেই তেজ। নির্ঝরের কণ্ঠ কাঁপলো হালকা উৎকণ্ঠায়। সে বললো…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—“তুমি কোথায় গেলে, তেজ ভাই?”
পরক্ষণেই নির্ঝরের স্মরণ হলো সারফারাজ চলে যাওয়ার পর তেজ উপরে এসে ছাদের দিকেই গিয়েছিলো। নির্ঝরের চোখ বড়ো হয়ে গেলো এবার। মনে মনে আওড়ালো…..
—”আবহাওয়ার এমন অবস্থা আর তেজ ভাই এখনও ছাদে আছে!”
নির্ঝর আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ছাদের দিকে ছুট লাগালো। ছাদের হালকা ভিড়ানো দরজাটা খুলতেই ঠান্ডা বাতাসের সাথে বৃষ্টির বেসামাল ছিঁটেফোঁটা নির্ঝরের শরীরে এসে লাগলো। তখুনি নির্ঝরের চোখে পড়লো ছাদের এক কোণে দেওয়ালে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় তেজ রয়েছে। বৃষ্টিতে তেজের সর্বশরীর ভিজে একাকার অবস্থা। নির্ঝর উচ্চস্বরে ‘তেজ ভাই’ বলে দৌড়ে তেজের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো ওর পাশে। তেজের দু’চোখ বুঁজে রয়েছে। শরীরটা কেমন ছেড়ে দেওয়া ভাব। তেজের গালে হাত দিতেই চমকে উঠে নির্ঝর বললো….

—“হায় আল্লাহ! জ্বরে তো তোমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে ভাই!”
অজানা ভয়ে নির্ঝরের সর্ব শরীর কেঁপে উঠলো। নির্ঝর তেজকে ডাকতে শুরু করলো…..
—“তেজ ভাই, শুনতে পারছো তুমি? আমি নির্ঝর। চোখ খোলো না একবার! তেজ ভাই! ভাই!”
তেজের কোনো সাড়া নেই। তেজের ঠোঁটজোড়া মৃদুভাবে কাঁপছে। ভাড়ি ভাড়ি নিঃশ্বাস ফেলছে সে একটু পর পর চোখ বোঝা অবস্থাতেই।
নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলে নিয় বললো….

—“এখন কাউকে ডাকতে গেলেও সময় লাগবে। যা করার আমাকেই করতে হবে।”
এই বলে নির্ঝর তেজের বৃষ্টিতে ভেজা ছেড়ে দেওয়া শরীরটাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে এলোমেলো পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। তেজের ভাড়ি শরীরটা নিয়ে চলতে গিয়ে নির্ঝরের নিঃশ্বাসও ভারি হয়ে আসছে। তবুও সে থামছে না। দোতলায় তেজের রুমে এসে ওকে ইজি চেয়ারে শুইয়ে দিলো নির্ঝর।
অতঃপর চেয়ারের পাশেই মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লো সে। হাঁপিয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিলো নির্ঝর। পরপরই উঠে গিয়ে আলমারি খুলে ২ সেট শুকনো কাপড় বের করে সাবধানে তেজের ভেজা জামা বদলে দিলো। আর নিজেও বদলে নিলো। তেজের ভেজা চুলগুলো মুছে ওর শরীরে একটা ভাড়ি কম্বল দিয়ে নির্ঝর একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…..

—“সারফারাজ ভাই আমাদের দু’জনকেই অনেক ভালোবাসেন তেজ ভাই। আমাদের কাজে সারফারাজ ভাই অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তাই তার রাগ কমতে সময় লাগবে যথেষ্ট। তুমি এভাবে ভে*ঙে পড়লে সারফারাজ ভাইয়ের রাগ আমরা ভাঙাবো কিভাবে! তোমায় শক্ত হতে হবে।”
নির্ঝরের বলা কথাগুলো তেজ শুনতে পারলো কিনা তা নির্ঝর জানে না। নিজের মনকে হালকা করতেই মূলত কথাগুলো বললো নির্ঝর। অতঃপর নির্ঝর রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এসে একটা বাটিতে ঠান্ডা পানি নিলো সাথে একটা পরিষ্কার কাপড় নিয়ে আবারও তেজের রুমে এসে ওর পাশেই আরেকটা চেয়ারে বসে জলপট্টি দিতে লাগলো। বারবার কাপড় ভিজিয়ে তেজের কপালে, গলায়, আর বুকের উপর রাখছে ওর শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর উদ্দেশ্যে।

প্রায় আধঘন্টা পর ওয়ারড্রবের উপরে রাখা ফাস্টএইড এর বক্স থেকে থার্মোমিটারটা বের করে এনে তেজের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করলো নির্ঝর। ১০২ ডিগ্রি এখন। থার্মোমিটারটা জায়গা মতো রাখতে রাখতে নির্ঝর বললো….
—“এখনও অনেক জ্বর। প্রায় ৪-৫ ঘন্টা ধরে বৃষ্টিতে ভিজেই নিজের এই অবস্থা বানিয়েছে তেজ ভাই। এই আবহাওয়ায় এতো রাতে ডাক্তার ডাকাও সম্ভব না। আরো কিছুসময় জলপট্টি দিতে হবে আমায়। বাকি যা করার সকালে করতে হবে।”
বাইরে তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃষ্টির জোর আস্তে আস্তে কমে আসছে। নির্ঝর পুনরায় তেজের পাশে বসে ওর কপালে আবারও জলপট্টি দিতে দিতে বললো….
—”তেজ ভাই, তোমাকে এমন নিস্তেজ-নিরব অবস্থায় দেখতে আমার একটুও ভালো লাগছে না। বুকের ভিতরটাতে কেমন চাপা য*ন্ত্র*ণা অনুভব হচ্ছে। এমন একটা দিন হুট করে দেখতে হবে ভাবিই নি।”

খান ভিলায় ড্রয়িংরুমেই পিহুর কোলে মাথা রেখেই সারফারাজ ঘুুমিয়ে গিয়েছে। সারফারাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই সোফায় মাথা হেলিয়ে রেখে ঘুমিয়ে গিয়েছে পিহুও।
ফজরের আজান কানে এসে পড়তেই পিহুর ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকাতেই সারফারাজকে নিজের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে পিহু শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো……
—”ঘুমন্ত অবস্থায় কতোটা নিষ্পাপ লাগে দেখতে আপনাকে এমপি সাহেব। অথচ এই নিষ্পাপ মুখের আড়ালেই কতো দুঃখ, কষ্ট চাপা পরে আছে। দেখবেন আমি আপনার সব দুঃখ, কষ্টগুলোকে দূর করে দিবো আস্তে আস্তে এমপি সাহেব।”
কিছুসময় সারফারাজের ঘুমন্ত মুখশ্রী পানে তাকিয়ে রইলো পিহু। অতঃপর সারফারাজের উপর থেকে নজর সরিয়ে সাবধানে পাশ থেকে সোফা সেটের বালিশটা নিয়ে সারফারাজের মাথার নিচে দিয়ে নিজে সেখান থেকে সরে আসলো।
ওজু করে ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য ড্রয়িংরুমের একসাইডে জায়নামাজ বিছিয়ে সেখানে বসলো পিহু। ২রাকাত নামাজ পড়া শেষ হতেই পাশে সারফারাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিহু বললো….

—”ওজু করে আসুন। নামাজ পড়লে দেখবেন মনের ভিতরে থাকা সব অশান্তি হালকা হয়ে গিয়েছে অনেকটা।”
সারফারাজ বিনাবাক্যে পিহুর কথা মেনে নিলো। ওজু করে মাথায় টুপি পড়ে পিহুর পাশেই ওর থেকে একটু সামনে জায়নামাজ বিছিয়ে সেখানে বসলো। দু’জনেই নামাজ সম্পন্ন করে মোনাজাতের জন্য হাত উঠালো। মোনাজাত শেষে সারফারাজ পিছিয়ে এসে পিহুর কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। পিহু অবাক হলো না। সারফারাজ বললো….

—”মোনাজাতে কি চাইলে আল্লাহর দরবারে?”
পিহু স্মিত হেসে বললো….
—”মহান আল্লাহ তায়ালা আগে পূরণ করুক চাওয়া গুলো তারপর বলবো।”
—”আমি কি চাইলাম শুনবে না?”
—”উহুহ, এখন শুনবো না। আপনার চাওয়া গুলো যখন পূরণ হবে তারপর না হয় বলিয়েন!”
—”আচ্ছা।”
কিয়ৎক্ষণ ২জনেই নীরব রইলো। অতঃপর সারফারাজ বললো….
—”ধন্যবাদ তোমায়, বউ।”
পিহু ভ্রু কুঁচকে বললো….
—”ধন্যবাদ কিসের জন্য?”
—”এইযে অশান্ত মনে একটু শান্তি খুঁজে পেলাম তার উপায় তো তুমিই বলে দিলে। তাই এই সামান্য ধন্যবাদ টুকু তোমায় দেওয়াই যায়।”
পিহু আর কিছু বললো না। হালকা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলো সে। সারফারাজ পিহুর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। এই মুখটার দিকেও কিছু সময় তাকিয়ে থাকলেই যেনো সারফারাজ শান্তির সাগরে ডুবে যায়।

সকালবেলা,
তেজের জ্বর ছেড়ে গিয়েছে। শরীর আবৃত করে রাখা কম্বলটার জন্য গরম গরম অনুভূতি হওয়ায় তেজ চোখ বুঁজে রাখা অবস্থাতেই কম্বলটা শরীরের উপর থেকে সরিয়ে ফেললো। এরপর চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো ওর পায়ের কাছে ইজি চেয়ারের পায়ার সাথে হেলান দিয়ে বসে বসেই ঘুমিয়ে আছে নির্ঝর। পাশেই মেঝের উপর একটা বাটিতে এক টুকরো কাপড় ভিজানো আছে।
তেজ ওর মাথাটা একহাতে চেপে ধরে চোখ বুঁজে আবার খুলে বললো….
—”মাথাটা মনে হচ্ছে এক মণ ওজনের পাথর হয়ে আছে। এতো ভাড়ি! উফহহ। রাতে তো ছাদে ছিলাম। নিশ্চয়ই এই নির্ঝরটাই নিচে নিয়ে এসেছে। পোশাকও পরিবর্তন করে দিয়েছে। জ্বর-ট্বর এসেছিলো নাকি! এই বাটি, পানি, কাপড় নিয়ে রাত জেগে এসব করেছে নিজ্ঝরিয়াটা!”
পরক্ষণেই শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে তেজ আবারও বললো…

—”শা*লার জীবন তো একটাই। আগের জন্ম, পরের জন্ম বলতে কিছু নাই। তাইলে এই জীবনে কোন কালে কোন পূর্ণ করেছিলাম যে এর মতো একটা ভাই জুটলো এই ফাঁ*টা নসিবে! মনে পরে না কেন কোনো পূর্ণ করার কথা!”
কথা শেষ করতে না করতেই তেজ উচ্চশব্দে হাঁচি ফেললো। ১বার না পরপর ৩ বার। নির্ঝর হলো তেজের ঠিক বিপরীত। তেজের ঘুম যেমন অধিক গাঢ়, ১-২ ডাকে ভাঙে না তেমনই নির্ঝরের ঘুম হলো অধিক পাতলা, একটু শব্দ হলেই ঘুম ভেঙে যায়। নির্ঝর চোখ মেলে তেজের দিকে তাকাতেই ও জেগে গিয়েছে দেখে বললো….
—”এখন কেমন লাগছে তোমার ভাই? কোনো সমস্যা বুঝছো কি?”
তেজ ওর বাম হাতের তালুর সাহায্যে নাকে হালকা ডলা দিলো। নাকের ভিতরে কেমন শিরশির অনুভব হচ্ছে ওর। মুখে কিছু না বলে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল উঁচিয়ে ইশারায় বুঝালো যে, ‘সে ঠিক আছে।’ পরপরই আবারও হাঁচি ফেললো তেজ। এবার টানা ৩ বার হয়ে গিয়েছে। তেজ বললো….

—”লে ছক্কা মারা শেষ। আহহ।”
নির্ঝর উঠে ওয়ারড্রব এর উপর থেকে টিস্যুর বক্সটা এনে তেজকে দিলো। তেজ একটার পর একটা টিস্যু নিয়ে নাক মুছছে আর পাশেই থাকা ঝুড়িতে ফেলছে ব্যবহৃত টিস্যুগুলো। নির্ঝর ওর ফোন থেকে ওদের পারিবারিক ডাক্তারকে কল করে আসার জন্য বলে দিলো। অতঃপর তেজকে উদ্দেশ্য করে নির্ঝর বললো…
—”ভাই, চলো ফ্রেশ হবে। তারপর খাবার খেতে হবে। কাল রাতেও খাও নি।”
তেজ নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—”তোর তো এখন আমার থেকে সারফারাজ ভাইয়ের মতো মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা নির্ঝর। কিন্তু তুই উল্টে আমার সেবা-যত্ন করছিস! কেনো?”
নির্ঝর হেসে বললো….

—”পল্টি খাওয়ার হলে তো যেদিন তোমার আসল সত্য জানতে পেরেছিলাম সেদিনই খেতে পারতাম। এতোদিন অপেক্ষা করতাম না।”
তেজ ঢোক গি*ল*লো একবার। কেমন-ই যেনো অনুভূতি কাজ করছে এই মূহূর্তে তেজের ভিতর। অতঃপর বললো।….
—”আমার জন্যই সারফারাজ ভাই আজ তোর থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে নির্ঝর। আমার জন্যই কাল যখন বাড়ির সবার সামনে সব সত্য উন্মোচন করা হবে তখন তোকেও ছোট হতে হবে। কোনোকিছু না করেও আমার জন্য এতোকিছু কেনো সহ্য করবি তুই?”
নির্ঝর শান্ত চোখে তেজের দিকে তাকিয়ে বললো….
—”র*ক্ত-ই যেখানে আলাদা নয় সেখানে আমার-তোমার বলতে আবার কি থাকে তেজ ভাই?”
তেজ কিছু বললো না। আজ যেই নির্ঝরকে সে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে এতো বড় বড় কথা বলতে দেখছে সেই নির্ঝর যেনো ওর কাছে সম্পূর্ণ নতুন কেউ। নির্ঝর আবারও বললো…..
—”আসো তোমার শরীরের ও একটু অং*শ কা*টি আর আমার শরীরেরও একটু অংশ কা*টি। তারপর যদি তুমি আমাদের একে-অপরের র*ক্তের ধরণ-গরণ আলাদা করতে পারো তখন আমিও তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবো না হয়।”
তেজ তৎক্ষনাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরলো। নির্ঝরও তেজকে জড়িয়ে ধরলো। দুই ভাইয়ের এই মূহূর্তটা সবথেকে সুন্দর মূহূর্তের মাঝে একটি বলে মনে হবে হয়তো যে কারোর কাছেই।

—”নীরা! তোমার কি কোনো কাজ আছে আজ? মানে তুমি কি আজ ব্যস্ত থাকবে নাকি ফ্রী!”
খান ভিলায় লাইব্রেরি কক্ষের ভিতরে ঘুরে ঘুরে কিছু বই দেখছিলো নীরা। সেইসময় পিছন থেকে পিহুর মুখে এরূপ প্রশ্ন শুনে নীরা বইটা যথাস্থানে রেখে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হেসে বললো…
—”আমার মিষ্টি ভাবী-পু এর জন্য আমি সবসময়-ই ফ্রী আছি। বলো কি করতে হবে আমায়?”
পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে বাহিরটা একনজরে দেখে নীরার কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—”আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে তোমায়।”
—”কোথায় যেতে চাও?”
—”আস্তে কথা বলো। কেউ শুনে ফেলবে।”
নীরার ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে এলো। সে বললো….

—”কোনো সিক্রেট কিছু করতে চাচ্ছো নাকি?”
পিহু ফিসফিসিয়ে বললো….
—”হুম, সিক্রেট তো বটেই। পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ কিছুও।”
—”খোলাসা করে বলো। নয়তো বুঝছি না তো!”
অতঃপর পিহু সম্পূর্ণ বিষয়টা নীরাকে খোলাসা করে বললো। নীরার মুখে হাত চলে গেলো। অবাক স্বরে বললো….
—”কি বলছো তুমি এসব ভাবী-পু! এটা অবিশ্বাস্য লাগছে আমার কাছে।”
—”সত্যটা এমনই যে অবিশ্বাস্য লাগাটাই স্বাভাবিক। এখন আর কথা বাড়ালে চলবে না। আমায় নিয়ে চলো সেখানে।”

—”কিন্তু বাড়িতে সবাইকে কি বলবো? বিশেষ করে বউ ভাইকে কি বলবে তুমি? বড় ভাইয়া যেমন মানুষ তার চোখে ফাঁ*কি দিয়ে এমন কিছু করা সম্ভব না।”
পিহু একবার ঢোক গি*ল*লো। মনে মনে চিন্তা আর ভ*য় যে কাজ করছে না ওর বিষয়টা এমন না। তবে এখন ভ*য় পেলে চলবে না। এই ভেবে পিহু কনফিডেন্স বজায় রেখে বললো….
—”তোমার ভাই যতোই চতুর আর বুদ্ধিমান হোক না কেনো আমিও তোমার ভাইয়ের-ই অর্ধাঙ্গিনী হই। তাই তার থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে আমি চলবো এটাই স্বাভাবিক নয় কি?”
নীরা চোখ-মুখের ধরণ কিছুটা কুঁচকানো মতো করে বললো….

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৪ (৩)

—”আচ্ছা ঠিক আছে, চলো। উপায় একটা পেয়েছি বাড়ির বাহিরে যাওয়ার জন্য। সেটাই কাজে লাগাতে হবে। সফল হলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আর না হলে কি হবে সেটাও বলে রাখি, বড় ভাইয়া তো আমার উপর রেগে আছে ২ বছর হলো। এবার ষোলো কলা পূর্ণ হবে আর আমার গ*র্দা*ন থেকে মাথাটাও নামিয়ে ফেলবে।”
পিহু ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে নিঃশব্দে হাসলো কেবল। অতঃপর ওরা দু’জনে লাইব্রেরি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here