না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৫

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৫
মাইশা জান্নাত নূরা

তেজ আর নির্ঝর দু’জনকেই একসাথে এমন উচ্চস্বরে চিৎকার করে প্রশ্ন ছুঁড়তে দেখে নীরা আর পিহু দু’জনেই চমকে উঠে পিছিয়ে গেলো এক কদম। নীরার চোখের আকৃতি গোল হয়ে গিয়েছে। আর পিহুর মুখে হালকা ভয় ও বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠেছে।
পিহু কপাল কুঁচকে অবাক স্বরে বললো…
— “হ্যাঁ, আজ তিনদিন হয়ে গেলো।”

তেজ আর নির্ঝর একে-অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ। যেনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশ্চর্যজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ঘটনা সম্পর্কে আজ তারা জানতে পারলো। পরক্ষণেই নির্ঝর ধপ করে সোফার উপর বসে একহাত মাথায় রাখলো। নির্ঝরের মুখশ্রী জুড়ে হতভম্বতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে।
তেজ ওর ঘাড় হালকা কাঁত করে এক নিঃশ্বাসে বললো….
—“কেনো? কোথায়? কবে? কীভাবে?”
নীরা তেজের দিকে তাকিয়ে বললো…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—“তোমরা এমন রিয়াকশন দিচ্ছো কেনো ভাইয়া? ভাবীপুকে কি কোনোভাবে এটা বুঝাতে চাচ্ছো যে আমাদের বড় ভাইয়ার মধ্যে কোনো সমস্যা, মানে সিরিয়াস কিছু আছে তাই তার হুট করে বিয়ে করে নেওয়াতে তোমরা সন্তুষ্ট নও!”
তেজ ধমকের স্বরে বললো….
—“এই তুই চুপ কর। ছোট ছোটর মতো থাক। বড়দের কথায় মাঝে বাম হাত-পা ঢুকাবি না, বুঝেছিস?”
নীরা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো….
—“মাত্র তিন-চার বছরের বড় হয়ে এমন গুরুজন সাজতে চাচ্ছো কেনো তুমি মেজো ভাইয়া? আর আমি কিন্তু এখন ১৮+। আর ছোট নেই, বুঝলে?”
তেজ গম্ভীর গলায় বললো….

—“আবার মুখে মুখে উত্তর করছিস! মনের মধ্যে কিন্তু রাগ কম জমে নেই আমার। হিসাবের খাতা এখন খুলে বসলে তোর জন্য ফল ভালো হবে না বলে দিচ্ছি নীরা।”
নীরা মুখ কাচুমাচু করে তেজের সামনে থেকে পেছনে সরে গেলো। ঠিক তখনই নির্ঝর ওর বুকের ডান পাশ চেপে ধরে “উফফ” শব্দ করে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করলো। সবাই একসাথে নির্ঝরের দিকে ঘুরে তাকালো।
নির্ঝর হাঁপাতে হাঁপাতে বললো…..
—”আমার মনে হচ্ছে প্রেসার বেড়ে গিয়েছে। বুকটা কেমন ধড়-ফড় ধড়-ফড় করছে। আমি মনে হয় আর বাঁচবো না!”
ওরা তিনজন নির্ঝরের কাছে ছুটে এলো। নির্ঝরকে ঘিরে দাঁড়ালো। পিহু ওর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বললো…..

—”ওনার কি শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে তো ইনহেলার ব্যবহার করার কথা ওনার। সেটা নিয়ে আসুন।”
নীরা বললো….
—”নির্ঝর ভাই! তোমার আবার হাঁ*পানির ব্যরাম কবে থেকে ধরলো? আমি বিদেশ চলে গিয়ে তোমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখি নি সেই জন্য কাঁদতে কাঁদতে বুক ভিজিয়ে এই হাঁ*পানি ধরিয়েছো নাকি?”
নির্ঝর চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছিলো। নীরার এমন কথা শুনে চোখ হালকা মেলে ওর মাথায় ঠা*স করে একটা গা*ট্টা মার*লো!
তেজ ঠোঁট কাঁ*ম*ড়ে বললো….

—“এই ব্যাটা! চিৎ হয়ে শুয়ে পড়। তোর কলিজার চিকন হাড়গুলো দিয়ে ঠিক মতো র*ক্ত চলাচল হচ্ছে না মনে হয়। আমি এখন তোর পেটের উপর প্রেসার দিবো। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
পিহু প্রথমে ওদের কথার তালে তাল মিলালেও পরপরই তেজের কথার মানে বুঝতে না পেরে বললো…..
—“এক মিনিট! কলিজার চিকন হাড় মানে? কলিজার আবার হাড় হয় নাকি? আর সেই হাড় দিয়ে র*ক্তও চলাচল করে? শ্বাস নিতে সমস্যা হলে পেটে প্রেসার দিতে হয় কবে থেকে?”
পিহুর প্রশ্নে পরপরই তেজ, নির্ঝর, নীরা তিনজনই একসাথে শব্দ করে হেসে উঠলো। পিহু হত*ভ*ম্বের ন্যায় তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। নির্ঝর ভালো ভাবে বসে বললো….

—“বড় ভাবী, আসলে এটা একটা প্রাঙ্ক ছিলো! আপনার সাথে আর আমাদের প্রথম দেখা হলো। তাই ভাবলাম একটু মজা করি!”
তেজ কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বললো….
—“আফটার অল, আমরা সম্পর্কে আপনার ছোট দেবর হই। তাই বড় ভাবীর সাথে প্রথম মোলাকাতে এতোটুকু দু*ষ্টুমি না করলে চলে না।”
পিহুর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তেজ আর নির্ঝরের এরূপ কথা শুনে। পরক্ষণেই পিহু ওদের দু’জনের কান টেনে ধরে ঝাঁ*কা*তে ঝাঁ*কা*তে বললো….

—“বড় ভাবী হিসেবে আমারও এতোটুকু অধিকার আছে যে, দু*ষ্টু দেবরদের এমন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা করার জন্য কান টেনে দেওয়ার মতো শা*স্তি দেওয়ার!”
তেজ ও নির্ঝর যেনো ব্য*থার চেয়ে মজাই বেশি পাচ্ছে পিহুর এমন কাজে। তাই তো ওদের দু’জনেরই মুখে হাসি লেগে আছে। নীরা হেসে পিহুর কাঁধে হাত রেখে বললো…..
—“ভাবীপু, ভাইদের কান ছেড়ে দাও। এমনিতেই কোনো মেয়ে বেশিদিন ওদের সহ্য করে না। এখন যদি তোমার কান টানার কারণে ওদের কান দুইটা হাতির কানের মতো ঝুলে পড়ে তাহলে বিয়ের মার্কেটে ওদের দাম তো আরও পড়ে যাবে!”
নীরার কথায় পিহু হেসে ফেললো। তেজ আর নির্ঝরের কান ও ছেড়ে দিলো। তেজ রাগী লুক নিয়ে বললো….

—“নীরা, আজ তোরে আমি খাইছি!”
নীরা সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বললো…..
—“আআআ ভাবীপু বাঁচাও! খান বাড়ির মেজো ষাঁড় ক্ষে*পেছে!”
এই বলে নীরা ড্রয়িংরুমেই ছুটতে শুরু করলো।
তেজ পেছন থেকে নীরাকে ধরার জন্য ছুটছে। পরপরই নির্ঝরও তেজের সাথে যোগ দিলো। পিহু হাসতে হাসতে পেট ধরে সোফায় বসে পড়লো।

ওদের তিন ভাইবোনের হাসি, খুনসুটি, ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে বাংলো বাড়ির ড্রয়িংরুমটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো মূহূর্তেই। হঠাৎ পিহু অনুভব করলো ওর চোখের কোনে জল টলমল করছে। পিহু হাসি থামালো। ওর বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে উঠছে। পিহুর শ্যমরঙা মুখটা মলিন হয়ে এলো। মনে মনে বললো……
‘আমারও যদি এমন ভাইবোন থাকতো! মা তো মা*রা গিয়েছেন অনেক আগেই। সৎ মা, সৎ ভাই-বোনরা যদি আমায় একটু ভালোবাসতো!
তাহলে হয়তো আমারও এমন হাসি-খুশি ও খুনসুটিতে পরিপূর্ণ একটা পরিবার থাকতো।’
তেজ, নির্ঝর আর নীরা তখনও হাসাহাসি করছিলো। তখুনি নীরা খেয়াল করলো পিহু হাসির মাঝেই কেমন থেমে গিয়েছে। চুপচাপ মাথা নুইয়ে বসে আছে পিহু৷ নীরা ইশারায় তেজ আর নির্ঝরকে পিহুর দিকটা দেখিয়ে ধীরস্বরে বললো….

—”দেখো, ভাবীপু কেমন যেনো চুপ হয়ে গেলো হুট করেই।”
পরক্ষণেই ওদেরও হাসিমুখটা মিলিয়ে গেলো। একসাথে তেজ, নির্ঝর আর নীরা পিহুর কাছে এগিয়ে এলো। তেজ, নির্ঝর পিহুর সম্মুখে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো। নীরা পিহুর পাশে বসলো। ওদের তিনজনের দৃষ্টিই পিহুর উপর স্থির।
নির্ঝর বললো….
—”বড় ভাবী, কিছু হয়েছে আপনার? আপনি ঠিক আছেন তো?”
পিহু চমকে মাথা তুলে তাকালো ওদের দিকে। অতঃপর জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে নরম কন্ঠে বললো…..
—“না, না কিছু হয় নি আমার। এমনিই একটু ক্লান্ত বোধ করছিলাম। তাই বসে পড়লাম এখানেই।”
তেজ দু’হাটু ভাঁজ করে বসলো পিহুর সম্মুখে। পিহু তেজের নজরের সাথে নিজের নজর মিলাতে চাইলো না। তেজ ধীর স্বরে বললো….

—“মি*থ্যে বলবেন না বড় ভাবী৷ আমি স্পষ্ট আপনার চোখে পানি দেখতে পারছি। আর এই পানি ক্লান্তি থেকে আসে নি বরং এসেছে বুকের ভিতর কাজ করা কোনো চাপা কষ্টের কথা স্মরণ করার জন্য।”
পিহু তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে বললো….
—“আরে না, তেমন কিছু না তেজ। তোমরা যা ভাবছো তা না। মনে হয় চোখে কিছু পড়েছে তাই!”
নীরা পিহুর কাঁধে হাত রেখে বললো….
—“ভাবীপু, কেনো আমাদের থেকে সত্যটা লুকানোর বৃথা চেষ্টা করছো তুমি বলো তো? তোমাকে কিন্তু আজ আমি প্রথম দেখেছি না ভাইয়াদের মতো। তাই তুমি যে অগোছালো ভাবে মি*থ্যাটা বলছো সেটা আমি অন্তত বিশ্বাস করতে পারছি না।”
নির্ঝর বললো….

—“বড় ভাবী! আমাদের আপনি আপনার ছোট ভাই-বোনের মতো মনে করতে পারেন। আমরা যেমন আপনার সুখের সময়ের সাথী হতে চাই তেমনই আপনার দুঃখের ভাগও আমরা সমান ভাবে ভাগ করে নিতে চাই। তাই এখনও যদি আপনি আপনার কান্না করার পিছনের আসল কারণটা আমাদের না বলেন তাহলে মনটা খারাপ হয়ে যাবে আমাদের তিনজনেরই।”
তিনজনের এমন আদর মিশ্রিত পিহুর মন খারাপের কারণ জানতে চাওয়ার আগ্রহ দেখে ওর বুকের ভেতরটাতে কেমন যেনো করে উঠলো। পরক্ষণেই পিহু নিচু গলায় বললো…..
—“তোমরা এমনভাবে একসাথে হাসছো, খুনসুটি করছো আমি তোমাদের দেখছিলাম আর ভাবছিলাম কতো মিষ্টি মধুর সম্পর্ক তোমাদের।”
পিহুর কন্ঠ কেমন ভারী হয়ে এলো। একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বললো…..

—“আমারও মা ছিলেন। কিন্তু আমি ছোট থাকতেই তিনি মা*রা যান। তারপর যিনি এলেন, মানে আমার সৎ মা! তিনি কখনো আমার মা হয়ে উঠার চেষ্টাটুকুও করেন নি। আমার ছোট দুই জমজ সৎ ভাই রিফাত, রিয়াদ আর বড় সৎ বোন সোনালী ওদের কাছে আমি সব সময় থেকে গিয়েছি ‘অন্য ও পরজন কেউ’ হয়ে। ওরা তিনজন যখন একত্র হতো, হাসি-ঠাট্টা ও আনন্দ করতো! আমি তখন চুপচাপ নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরেই এক কোনে হাটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকতাম। তখনও ভাবতাম হয়তো আমার অনুপস্থিতি ওদের কারোর না কারোর মন পুড়াবে। কেউ হয়তো এসে আমার হাত ধরে টেনে ওদের মাঝে নিবে। কিন্তু কখনো কেউ আসে নি।”

পিহুর দু’চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ওর কোলের উপর। পরক্ষণেই পিহু একবার ঢোক গি*লে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে একটু হেসে বললো…..
—“আজ তোমাদের তিনজনকে দেখে মনে হচ্ছিলো ওরা ভালো হলে আমারও এমন একটা পরিবার থাকতো! ওদের মধ্যেই কেউ আমায় আদুরে মার দেওয়ার জন্য তাড়া করতো কিংবা আমি কাউকে তাড়া করতাম।”
পুরো ড্রয়িংরুমটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো মূহূর্তেই।তেজ নরম স্বরে বললো….
—“বড় ভাবী, অতীতকে ভুলে যান আপনি৷ বর্তমানকে নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগোতে হয় আমাদের। আর এখনও আপনি একদমই একা না। আমরা আছি আপনার সঙ্গে। আজ থেকে আমাদের সুখ, হাসি-মজা-খুনসুটি, দুঃখ সব কিছুর সঙ্গী আপনিও হবেন।”
পরপরই নীরা পিহুকে জড়িয়ে ধরে বললো….

—“একটা কথা মনে রেখো ভাবীপু, আমরা কেউ তোমার সঙ্গ মাঝপথে ছেড়ে দিবো না। যখনই তোমার মন খারাপ হবে তখনই তুমি আমাদের যে কারোর কাছে চলে আসবে। আমরা ঠিক তোমার মন খারাপ দূর করিয়ে তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলবো দেখিও।”
নির্ঝর ওদের দু’জনের কথায় সায় জানালো। পিহুর মলিন মুখে হাসির ছাপ স্পষ্ট হলো ওদের তিনজনের এমন মিষ্টি ভালোবাসায় ভরপুর কথাগুলো শুনে। বুকের ভারটাও কেমন হালকা হয়ে গেলো পিহুর।
কিয়ৎক্ষণ পর পিহু নিজের কপাল চাপড়ে বললো….
—”আরে, যে কারণে আজ আমার এখানে আসা সেটাই তো করা হলো না এখনও।”

পিহুর কথায় নীরাও জিহ্বায় হালকা ভাবে কাঁ*ম*ড় বসালো। নির্ঝর আর তেজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওদের দিকে। কি কারণ তা জানাই এখন ওদের দু’জনের মূল উদ্দেশ্য। পিহু বললো….
—”তেজ, নির্ঝর! তোমরা দু’জনে সেই ভু*লটা করেছো তা শুধরে নেওয়ার জন্য ও তা থেকে তৈরি হওয়া তোমাদের ৩ ভাইয়ের মধ্যকার ইস্যুটা সহজ ভাবে সমাধান করার জন্য আমার মাথায় একটা ভালো প্লান কাজ করছে৷ তোমরা চাইলে আমি তা শেয়ার করতে পারি এখন।”
মূহূর্তেই তেজ আর নির্ঝরের গতকাল রাতের ঘটনার কথা স্মরণ হলো। সারফারাজ যে ওদের কারণে কষ্ট পেয়েছে সেই কথা স্মরণ হতেই ওদের দু’জনের মুখশ্রী জুড়ে মলিনতা ও অনুশোচনার ছাপ স্পষ্ট হলো। বিশেষ করে তেজ বেশি অনুশোচনার আ*গুনে দ*গ্ধ হচ্ছে। কারণ বেশি দো*ষ তো তেজ-ই করেছে।
তেজ নিচু গলায় বললো….

—“বড় ভাইয়া, এখন কেমন আছেন বড় ভাবী?”
পিহু গাঢ়ভাবে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—“ভালো নেই। এমপি সাহেব খুব রাগে আছেন। কিন্তু ওনার সেই রাগের ভেতরে যে ভয়ানক ক*ষ্ট লুকিয়ে আছে তা আমার নজর এড়াতে পারে নি। গতকাল সারারাত জেগে ছিলেন। চুপচাপ বসে কেবল নীরবে কেঁদেছিলেন।”
তেজের গলা ভারী হয়ে এলো। একবার ঢোক গি*লে বললো…..

—“বড় ভাইয়ার আজ এই কষ্টের মূল কারণ আমি। কেবল আমিই। আমার কিছু ভুল পদক্ষেপ, সিদ্ধান্তই ভাইয়াকে এতোটা আ*ঘা*ত দিয়েছে গতকাল। আমি সত্যিই ভিষণ ভাবে অনুতপ্ত।”
পিহু স্নেহভরা কন্ঠে বললো…..
—“তেজ, ভুল করার পর তা ভেবে অনুতাপ হওয়া ভালো। কিন্তু শুধুই অনুতাপে পরিস্থিতির মোর বদলায় না। পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য আগে নিজেকে বদলাতে হবে। নিজের ভেতর থেকে সব নোংরা ধুয়ে ফেলে নিজেকে পুরোপুরি পরিষ্কার করতে হবে। তোমার এই সামান্য চাওয়া, পরিবর্তন ও প্রচেষ্টাই পারবে তোমাদের সম্পর্কটা আবারও জোড়া লাগাতে। আগের মতো সুন্দর করে তুলতে।”
তেজ বললো….

—“হ্যা আমি নিজেকে শুধরে নিবো পুরোপুরি। আর আপনি কি পরিকল্পনা করেছেন এই ইস্যুটাকে সহজ ভাবে সমাধান করার জন্য সেটাও বলুন। আমরা সেভাবেই করবো সবটা।”
পিহু বললো….
—“তুমি তো সারফারাজের ও পুরো খান পরিবারের সামনে বরাবরই সাদা-সিধা, ইনোসেন্ট একজন ছেলের রূপ নিয়ে থাকতে! এমপি সাহেব সহ বাকিরা তোমায় ঐ রূপেই ভালোবাসতেন। কিন্তু বর্তমান যুগে একজন উপযুক্ত বয়সের পুরুষ এমন ভোলা-ভালা, ইনোসেন্ট, বোকা সেজে ঘুরাঘুরি করলে সেটা সমাজের ৮০% মানুষই ভালো নজরে দেখবে না। তাই না?”
তেজ বললো….

—“হ্যাঁ, বাইরে সবাই ঠাট্টা করে। হালকা ভাবে নেয়। পারিবারিক অনেক অনুষ্ঠানেই আমায় এই লুকে অংশগ্রহন করতে হয়েছিলো। যার দরুন আমায় অনেকেরই অপমানমূলক কথা সহ্য করতে হয়েছিলো।”
পিহু মাথা নেড়ে বললো….
—“এই জায়গাটাতেই মূলত আমাদের বুদ্ধিটা খাটাতে হবে। আগামীকাল তুমি আর নির্ঝর একসাথে খান বাড়িতে ফিরবে। পরিবারের সামনে তুমি বলবে ‘আমি নিজেকে পাল্টাতে চাই। কারণ আমার এই সাদাসিধা রূপের জন্য বাহিরের মানুষজন আমায় ক*টু কথা শুনাচ্ছেন, অপমান করছেন। তাই আমি নিজেকে এখন থেকে আধুনিক ও আত্মবিশ্বাসী লুকে সবার সামনে তুলে ধরতে চাই।’ এতেই সবাই বুঝে যাবে তুমি বদলাতে চাইছো একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই!”
পিহুর পরিকল্পনা শুনে ওদের তিনজনের ঠোঁটেই হাসির রেখা ফুটে উঠলো। পরপরই পিহু আবারও বললো….

—”তোমার ভাইয়াও হয়তো তখন ভাববে, তুমি সত্যিই নিজের ভুলটা শুধরে নেওয়ার চেষ্টায় নেমেছো। তাই এ নিয়ে আর কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগো না তুমি বা নির্ঝর। একটা কথা শুধু মাথায় রেখো, মাঝেমাঝে সত্যটাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে সকলের সামনে তুলে ধরতে হয় যাতে আমাদের প্রিয়জনরা তার পিছনের কারনটা জেনে কষ্ট না পায় আর আমাদের ভুল না বুঝে। এটাকে প্রতারণা করা বলে না। এটাকে বলে বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার।”
নির্ঝর এতোক্ষণ চুপ ছিলো। এবার বললো….

—“বড়ভাবী, আপনার বুদ্ধিমত্তা ও সদাচারণ বলে দিচ্ছে আপনিই হলেন খান বাড়ির যোগ্য বড় বউ। মাত্র দু’দিন হলো খান বাড়িতে এসে প্রতিটা মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা চিন্তা করছেন। বড় ভাইয়া সত্যিই ভাগ্যবান যে আপনার মতো একজন অর্ধাঙ্গিনী পেয়েছে সে।”
পিহু মৃদু হেসে বললো…
—“এমপি সাহেবকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আমিই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি নির্ঝর। ওনার মনটা খুব পরিষ্কার। এখন ওনাকে সময় দিতে হবে পুরো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি তো ওনার পাশে আছিই। এবার শুধু তোমাদের নিজেদেরকে ঠিক করে নেওয়ার পালা।”
তেজ বললো….

—“বড়ভাবী, পরিবারের সবার সামনে সত্যটাকে গুছিয়ে তুলে ধরার পর আমি একান্তে বড় ভাইয়ার সামনে মাথা নিচু করে নিজের ভুল স্বীকার করবো আর ক্ষমা চাইবো। ততোক্ষণ পর্যন্ত ভাইয়ার পা আমি ছাড়বো না যতোক্ষণ পর্যন্ত না সে আমায় বলছে, সে আমায় ক্ষমা করে দিয়েছে।”
পিহু বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো….

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৪ (৫)

—“এখানে আসার আগে তোমাদের না দেখেও, না চিনেও আমার মনে একটা আশার আলো কাজ করছিলো। এমপি সাহেবের ছোট ভাইয়েরা ওতোটাও খারাপ হতে পারে না এমনটা ভাবছিলাম। ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়। তোমরাও ভুল করেছো। আর তোমরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছো, তোমরা নিজেদের বদলে ফেলবে। তোমাদের কথা শুনে মনে শান্তি কাজ করছে আমার।”

না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here