না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৫ (৩)
মাইশা জান্নাত নূরা
রুমের বাইরে হঠাৎ কিছু ভা*ঙার শব্দ কর্ণপাত হতেই নীরা কল কেটে দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। আধভিড়ানো দরজাটা খুলতেই সামনে পিহুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীরা এক মুহূর্তের জন্য যেনো থমকে গেলো। ওর চোখেমুখে ঘাবড়ে যাওয়ার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে।
পিহু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীরার দিকে।নীরা দ্রুত পিহুর হাত ধরে টেনে ওকে রুমের ভিতরে এনে ছিটকিনিটা লাগিয়ে দিলো। পিহু অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো….
—“একটু আগে তুমি এটা কী বললে, নীরা?”
নীরা একবার ঢোক গি*লে পিহুর সামনে দাঁড়িয়ে ক*ম্পিত গলায় বললো…..
—“ভাবীপু, তুমি আগে একটু শান্ত হও। আমি সব বলবো তোমায়। সবটা। কিন্তু আগে কথা দাও, এই বিষয়ে তুমি কাউকে কিছু বলবে না। বড় ভাইয়াকে তো একদমই না!”
পিহু কোনো উত্তর দিলো না। কেবল স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীরার মুখশ্রীপানে। নীরা অনুনয়ভরা কন্ঠে আবারও বললো…
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—“ভাবীপু, তোমার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়তো খুব বেশি দিনের নয়। কিন্তু তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো, বলো? করো না বিশ্বাস?”
পিহুর দিক থেকে এবারও কোনো সাড়া পেলো না নীরা। নিজের ভিতর ভীষণ অসহায় বোধ করছে সে। নীরা নিজের কোমরের ওপর একহাত রেখে, অন্য হাত দিয়ে মুখটা আলতো করে ঢেকে উল্টোপিঠ হয়ে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে লাগলো। প্রতিটি শ্বাসের গতি ছিলো স্বাভাবিকের থেকে কয়েকগুণ বেশি। রুমের ভিতর সীমিত পাওয়ারে এ.সি চলা স্বত্ত্বেও নীরা ঘামছে। ওর কপাল ও গলায় বিন্দু বিন্দু ভাবে জমে আসা ঘামগুলো চিকচিক করছে।
ইলমা আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেলো না।
মেয়েটা কেমন অদ্ভুত। উল্টোপিঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো চারপাশের কোনো কিছুতেই ওর কোনো আগ্রহ নেই। অনু ইলমার প্রশ্নগুলোর একের পর এক সোজা-সাপ্টা উত্তর দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু একবারও পাল্টা কোনো প্রশ্ন করে ইলমার ব্যাপারে জানতে চাইছে না কিছুই। অনুর এমন আচরণেই মূলত ইলমার মনে হালকা অস্বস্তিবোধ কাজ করছে।
ইলমা অনুর দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে নরম স্বরে বললো…..
—“আমার পরপর করা এত প্রশ্নে হয়তো তুমি বির*ক্ত হয়ে গিয়েছো অনু। আসলে একই বাসায় পাশাপাশি দু’টো রুমে থাকি বলেই তোমার ব্যাপারে জানার আগ্রহটা শুরু থেকেই ছিলো। আজ যেহেতু কিছুটা জানতে পারলাম, এখন আগের চেয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো।”
অনু প্রতিত্তুরে কিছু বললো না। ইলমা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। সে রুম থেকে বের হতেই পেছন থেকে অনু শব্দ করে দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলো। ইলমা কিছুটা চমকে ঘুরে তাকালো।
দরজার ওপারে অনু বন্ধ দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে আস্তে আস্তে নিচে মেঝেতে বসে পড়লো দু’হাঁটু ভাঁজ করে। একটু পর পর অনু ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে। অনুর কপাল ভিজে গিয়েছে ঘামে। এই ঘাম এর কারণ ভয় নাকি চিন্তা তা বোঝা দায়।
পরক্ষণেই অনু ওর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশের মাংসল অংশে দাঁত বসিয়ে শক্ত করে কাঁ*মড়ে ধরলো। র*ক্ত বের হলো না। কিন্তু তীব্র ব্য*থায় ওর ঠোঁট কম্পিত হলেও দাঁত সরালো না সেখান থেকে।
অনুর চোখ দু’টোও কেমন রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।
নীরা ওর গলায় পেঁ*চানো ওড়নার আঁচলটা দিয়ে কপাল ও গলার ঘাম মুছতে শুরু করলো। নীরা একনও ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে। ওর চোখে-মুখে স্পষ্ট ফুটে আছে উৎকণ্ঠার ছাপ। তখুনি নীরার পিছন থেকে পিহু ওর দিকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো….
—“পানি পান করো।”
নীরা কোনো কথা না বলে গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে অনেকটুকু পানি পান করলো। অতঃপর গ্লাসটা পাশেই ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখলো নীরা।পিহু একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে আলতো করে নীরার হাত ধরে ওকে বিছানায় এনে বসালো। নিজেও বসলো নীরার সামনা-সামনি। পিহু শান্ত কণ্ঠে বললো….
—“এতো বেশি উত্তেজিত হচ্ছো কেনো তুমি, নীরা? আগে নিজেকে শান্ত করো। তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমি কাউকে কিছুই বলবো না এ নিয়ে। তুমি নির্দ্বিধায় আমাকে সবটা খোলাসা করে বলতে পারো।”
পিহুর কথায় নীরা ভিতর থেকে একটু শান্তি অনুভব করলো। নীরার নিঃশ্বাসের গতি ধীর হলো। নীরা বললো…
—“দুই বছর আগে হুট করেই আমার কানাডা চলে যাওয়া ও কারোর সাথেই যোগাযোগ না রাখার পিছনে কারণ এটাই ছিলো যে, আমি হঠাৎ-ই জানতে পারি আমার গর্ভে আরেকটা প্রাণ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। ওর পিতা কে আমি জানি না, ভাবীপু! জানি না কিভাবে, কখন, কার সাথে এমন কিছু হয়েছিলো।”
শেষ কথাগুলো বলতে গিয়ে নীরার গলা কাঁপছিলো। পিহু লক্ষ্য করলো নীরার দু’চোখে অশ্রুরা চিকচিক করছে। পিহু স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নীরার দিকে কিছুক্ষণ। অতঃপর পিহু বললো…..
—“কি বলছো তুমি, নীরা? ওর পিতা কে জানো না মানে! এটা কিভাবে সম্ভব?”
নীরা পিহুর ডান হাতটা নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে অশ্রুভেজা নয়নে পিহুর দিকে তাকিয়ে কাপান্বিত কণ্ঠে বললো….
—“ভাবীপু, আমি কসম কেটে বলছি আমি কখনও এমন কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশে যাই নি। যেমন শহরের বিভিন্ন নাইটক্লাবে গুলো রয়েছে। যেখানে গিয়ে ছেলে-মেয়েরা মদ্যনেশায় ডুবে গিয়ে নিজেদের হারিয়ে ফেলে। আমি কখনও কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্যও সেবন করি না। তবুও, তবুও এমনটা ঘটলো! নিজের বাড়িতে থেকেও, কিভাবে, কখন, কে কিছুই মনে নেই আমার। বিশ্বাস করো ভাবীপু, আমি মিথ্যে বলছি না। আমি জান..!”
নীরার কথা শেষ হওয়ার আগেই পিহু আলতো করে নীরার গালের উপর হাত রেখে বললো…..
—“শান্ত হও, নীরা। শান্ত হও। আমি বিশ্বাস করি তোমায়। তোমার প্রতিটা কথা বিশ্বাস করি আমি। কিন্তু, এটা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। কোনো পুরুষের স্পার্ম ছাড়া কোনো নারীর পক্ষে গর্ভবতী হওয়া সম্ভব নয়। তাই এখন তোমার উচিত নিজের মাথা ঠান্ডা রাখা। চেষ্টা করা উচিত দুই বছর আগের প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত মনে করার। এমন কিছু কি হয়েছিলো তোমার সাথে, যা তখন তোমার কাছে অস্বাভাবিক লেগেছিলো?”
নীরা দু’চোখ বুঁজে নিলো কিছুটা শক্ত ভাবেই। মনে করতে চাইছে পিহুর বলা এমন কিছু।
রাত ১১টা….
পিহু নিজরুমের মেঝেতে পায়চারি করছে। সারফারাজ এখনও বাসায় ফেরে নি। পিহুর চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। সন্ধ্যার সেই ঘটনাগুলোই পিহুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নীরার সময় প্রয়োজন নিজেকে সামলে নেওয়ার ও পুরোনো অস্বাভাবিক কোনো ভুলে যাওয়া স্মৃতিকে মনে করার জন্য। পিহু নীরার মন-মানসিকতার অবস্থা বুঝতে পেরে ওর উপর কোনো প্রেসার দেয় নি তাই।
পিহুর চিন্তার মাঝেই সারফারাজ রুমের ভিতর প্রবেশ করে পান্ঞ্জাবির ফোল্ড করে রাখা হাতাগুলোর ভাঁজ খুলতে খুলতে শান্ত কন্ঠে বললো…..
—”কি ব্যপার আমার মনের মালকিনকে আজ এমন অস্থির দেখাচ্ছে যে! কোনো বিষয় নিয়ে সে চিন্তিত হলে আমায় বলতে পারে। তার স্বামী মহাশয় তুরি বাজিয়ে সেই সমস্যা সলভড করে দিবে ইনশাআল্লাহ।”
পিহু শান্ত চোখে সারফারাজের দিকে তাকালো। মনে মনে আওড়ালো….
—”নাহ, এমপি সাহেবকে নীরার বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। এমনিতেই তেজ ও নির্ঝরের বিষয় নিয়ে গতকাল থেকে উনি অনেক আপসেট হয়ে আছেন। আগে ওদের সাথে সম্পর্কটা ঠিক হোক তারপর দেখা যাবে এ নিয়ে।”
পিহু নিজের ঠোঁটে স্মিত হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো…..
—”তেমন কিছুই না এমপি সাহেব। আপনার আসার অপেক্ষায় ছিলো। আজ এতো দেড়ি করলেন যে!”
এই বলেই পিহু নিজের জিহ্বায় হালকা কাঁ*ম*ড় বসালো। মনে মনে বললো….
—”অতিরিক্ত চাপে লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে বসে আছো তুমি পিহু! এবার নির্ঘাত এই লোক তোমায় আরো লজ্জা দিয়ে বসবে আর তা তোমায় হজম করতে হবে।”
সারফারাজ ভ্রু উঁচিয়ে পিহুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—”মিস করছিলে আমায় আগে বলবে না! তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আসতাম।”
পিহু লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিয়েছে। ওড়নার আঁচল টেনে আঙুলে পেঁচাচ্ছে। এক পায়ের উপরপিঠে আরেক পা ঘঁ*ষছে। পিহুর লজ্জাভাব দেখে সারফারাজ ঠোঁটে কাঁ*ম*ড়ে হেসে পিহুর কাছে এগিয়ে দাঁড়িয়ে ওর থুঁতনি স্পর্শ করে মুখটা হালকা উঁচিয়ে ধরলো। পিহু সঙ্গে সঙ্গে ওর দু’চোখ খিঁ*চে বন্ধ করে নিলো। সারফারাজ পিহুর দিকে অন্য রকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো….
—”কাল থেকে তাড়াতাড়ি আসবো। আমার ভালোবাসা কেমন সহ্য হয় তোমার তাও দেখবো তখন।”
সারফারাজের এরূপ কথা শুনে পিহুর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল হাওয়া নেমে গেলো যেনো। অতঃপর সারফারাজ পিহুর থুঁতনি ছেড়ে নিঃশব্দে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুমের দরজা খট করে বন্ধ হতেই পিহু একবার ঢোক গি*লে চোখ মেললো। সারফারাজ ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে বুঝে শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেললো পিহু। এতোসময় ধরে যেনো নিঃশ্বাস নেওয়া ও ছাড়াটাও বড় কোনো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ওর জন্য।
সকাল বেলা,
পিহু ডাইনিং টেবিলে সবার জন্য নাস্তা সাজাচ্ছিলো। নীরাও সাহায্য করছিলো পিহুর সাথে হাত লাগিয়ে। আতুশি, শিউলি ও তাহমিনা তিনজনই রান্নাঘরে। বাড়ির পুরুষ মানুষরা এখনও নিচে নামেন নি। পিহু কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু পর পর মূল দরজার দিকে তাকাচ্ছিলো। নীরা বিষয়টা লক্ষ্য করে বললো….
—”ভাবীপু, তুমি কি ঐ ২ বাঁ*দরের আসার অপেক্ষা করছো? তাহলে বলবো তোমার আশায় ওরা জল ঢেলে দিবে নিশ্চিত। কারণ ঐ ২ নবাবজাদার ঘুম বেলা ১২ টার আগে ভাঙে না কোনো কালেই।”
নীরার কথা শুনে পিহু একহাতে নিজের কপাল চা*প*ড়ে বললো….
—”তাহলে হইছে স*র্ব*নাশ। এই সকালের সময়টা ছাড়া তো এ বাড়ির সবাইকে একসাথে পাওয়া যায় না। এমপি সাহেব এখন বেড়িয়ে গেলে আসেন একেবারে রাতে।”
নীরা দাঁত দিয়ে নখ কাঁ*ম*ড়াতে কাঁ*ম*ড়াতে বললো….
—”জানি না কি হবে।”
তখুনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো সারফারাজ। পরনে একটা আকাশী রঙয়ের পান্জাবি ও সাদা পাজামা রয়েছে। পান্ঞ্জাবির হাতা দু’টো আস্তে আস্তে ফোল্ড করছে সারফারাজ। নীরা সেদিকে তাকিয়ে বললো….
—”ঐ তো বড় ভাইয়া চলে আসলেন। একটু পর বড়বাবা, মেজোবাবা, বাবা আর দাদুজানও চলে আসবেন।”
পিহুর চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো। সারফারাজ ডাইনিং প্লেসে এসে চেয়ার টেনে বসলো। পিহু সারফারাজের দিকে ফলের রসের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলো। পিহু একটা প্লেটের উপর আপেল কা*টতে নিয়েছিলো তখুনি সারফারাজ পিহুর হাত ধরে টেনে ওকে নিজের পাশেই আরেকটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। পিহু ধীর স্বরে বললো…
—”আরে কি করছেন! নীরা আছে এখানেই। বাকিরাও চলে আসবে তো।”
সারফারাজ এর কানে যেনো সেসব পৌঁছালো না। পিহুর হাত থেকে ফল কাঁটার ছুঁ*ড়ি*টা নিয়ে প্লেটটাও নিলো। অতঃপর নিজেই সাবধানে ফলগুলো কাঁ*ট*তে কাঁ*টতে বললো…..
—”অসাবধানতায় তোমার হাত কে*টে গেলে আমার কষ্ট হবে বউ। নিজের কষ্ট যেনো না বাড়ে তাই এই কাজটুকু না হয় আমিই করছি।”
পিহু অবাক নয়নে সারফারাজের দিকে তাকিয়ে আছে। সারফারাজ এক মনে ফলগুলো কাঁ*ট*ছে। পাশেই দাঁড়ানো নীরা ফ্যল ফ্যল দৃষ্টিতে ওদের দু’জনকেই দেখছে। সেইসময় রান্নাঘর থেকে একসাথে তাহমিনা, শিউলি ও আতুশি নিজ নিজ হাতে করে বাকি খাবার গুলো নিয়ে ডাইনিং প্লেসে আসলেন। তাঁদের দেখে পিহুর এবার ভিষণ লজ্জা লাগছে। সে থাকতে সারফারাজ ফল কাঁটছে বিষয়টা ওর তিন শ্বাশুড়ি মা কি চোখে দেখছেন কে জানে, এমনই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে পিহুর মাঝে।
পিহুর ধারণাকে ভু*ল প্রমাণিত করে দিয়ে তাহমিনা স্মিত হেসে বললেন….
—”বউয়ের কাজে হাত লাগিয়ে তার কষ্ট কমিয়ে দেওয়ার মতো পুরুষ মানুষের বড্ড অভাব আমাদের সমাজে। মাশাআল্লাহ আমি আমার ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দিতে পেরেছি।”
পিহু মাথা নুইয়ে রাখা অবস্থা লজ্জামাখা হাসি দিলো। শিউলি বললেন….
—”ঠিক বলেছো তুমি বড় ভাবী। আমাদের স্বামীধনেরা তো কেবল বাহ্যিক কাজেই পটু। ঘরের কোনো কাজে তাঁদের কখনও হাত লাগাতে দেখি নি বিয়ের যে এতোগুলো বছর পার হয়ে গেলো। সেই হিসেবে আমাদের সারফারাজ বাবা হয়েছে একেবারে হীরার টুকরো ছেলে।”
আতুশিও শিউলির কথার তালে তাল মিলালো। সেইসময় সামনে থেকে একসাথে বাড়ির প্রধান কর্তা মোস্তফা খান ও তার তিন পুত্র জামাল, জাবির ও জায়েদ একসাথে ডাইনিং প্লেসের দিকে আসছিলেন। শিউলির স্বামী জাবির বললেন….
—”খান বাড়ির সিনিয়র মহিলারা বাচ্চাদের সামনে সিনিয়র পুরুষদের নিয়ে সমালোচনা করছেন দেখছি। বড় ভাইয়া, জাবির এইটা তো চুপচাপ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”
আতুশির স্বামী জায়েদ বললেন….
—”হুম মেজো ভাইয়া, ঠিক বলেছো তুমি। আমরা নাকি কেবল বাহ্যিক কাজেই পটু, ঘরোয়া কাজে কখনও তাঁদের সাথে হাত লাগাই নি জন্য এতো বড় অ*প*মান করলো বাচ্চাদের সামনে! আমাদের তাই প্রমাণ দিতে হবে কাজে করে যে আমরা বাহ্যিক কাজের পাশাপাশি ঘরোয়া কাজেও যথেষ্ট পটু আছি।”
জামাল খান নিঃশব্দে হাসছেন কেবল। শিউলি আর আতুশি তাঁদের স্বামীদের এরূপ কথা শুনে মুখ বাঁ*কা*লেন। আতুশি বললেন….
—”তাহলে আজ রাতেই প্রমাণটা দিয়ে দিন আপনারা। আজ রাতের রান্নার ধারের কাছেও ঘেঁ*ষবো না আমরা। যা করার সব আপনাদের করতে হবে। কাটাকাটি থেকে শুরু করে বাটাবাটি ও রান্না শেষ করে টেবিলে সাজিয়ে পরিবেশন পর্যন্ত সব করতে হবে।”
মোস্তফা খান চেয়ার টেনে বসে বললেন….
—”হ্যা হ্যা, এটুকু ভরসা ওদের উপর করাই যায়। আমার থেকে বাহ্যিক কাজ সামলানোর গুণ যেহেতু পেয়েছে ওরা এবার দেখা যাবে মরহুমা মিসেস মোস্তফা খানের থেকে রান্নার গুণটাও পেয়েছে কি না!”
জায়েদ বললেন….
—”ইনশাআল্লাহ পারবো আমরা। সারফারাজ বাবা তুমি কিন্তু আমাদের দলে। কারণ এ বাড়ির পুরুষ সদস্যের তালিকায় তুমিও পড়ো।”
সারফারাজ বললো….
—”ঠিক আছে ছোট বাবা। আমিও আছি তোমাদের সাথে।”
পিহু আর নীরা মিটমিটিয়ে হাসছে সবার কথা শুনে। সেইসময় নীরার দৃষ্টি মূল দরজার দিকে পড়লে নির্ঝরকে একা ভিতরে আসতে দেখে কনুই দিয়ে পিহুকে হালকা ভাবে গুঁ*তো দিলো সে। পিহুও সহ সবার দৃষ্টিও সেদিকে গেলেও সারফারাজ চোখ তুলে তাকালো না। ওর মুখ-চোখের ধরণ মূহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে গেলো। জাবির কিছুটা কঠোর কন্ঠেই বললেন….
—”৫ দিন বাড়ির ২ছেলে বাড়ি ফিরো না। ফোন দিলেও কেউ ফোন উঠাও না। সমস্যা কি তোমাদের?”
নির্ঝর মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে ডাইনিং প্লেসের সামনে। জামাল বললেন….
—”তেজ কোথায় নির্ঝর? সে আসে নি তোমার সাথে?”
এবারও কোনো প্রতিত্তুর করলো না নির্ঝর। তখুনি পিছন থেকে তেজকে আসতে দেখে উপস্থিত সকলের চোখ যেনো কপালে উঠার উপক্রম হলো। কেবল পিহু, নীরা বাদে। সারফারাজ তৎক্ষনাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলে পিহু সারফারাজের হাতের উপর হাত রেখে ধীর স্বরে বললো….
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২৫ (২)
—”উঠবেন না প্লিজ, এমপি সাহেব। এটা আমার অনুরোধ আপনার কাছে।”
সারফারাজের চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। ফলস্বরূপ দু’হাতের শিরাগুলো ফুলে উঠেছে ওর। রাগের কারণে কপালের ও ঘাড়ের সূক্ষ্ম র*গ গুলোও স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে সারফারাজের। কিন্তু পিহুর কথা রাখতে সারফারাজ আর উঠতে পারলো না। বসেই রইলো।
