না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৫
মাইশা জান্নাত নূরা
সারফারাজ যে একজন এমপি এই কথাটি কর্ণপাত হতেই পিহুর বুকের ভেতরটা কেমন যেনো ধ*ড়-ফ*ড় করে উঠলো। ভিড়ের মাঝেই দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলো সোনালী আর সোমা।
সোমা দাঁতে দাঁত চেপে বললো….
—“যেই জায়গায় আমার মেয়ের থাকার কথা ছিলো সেই জায়গায় এখন ওই পো*ড়া*মুখিটা আছে। আমার ভেতরটা জ্ব*লে পু*ড়ে খা*ক হয়ে যাচ্ছে।”
সোনালী ক*টা*ক্ষ ছোঁ*ড়া*র মতো করে বললো….
—“এসেছি পর থেকে তো কম চেষ্টা করলাম না। কতোজনের সাথে যেচে গিয়ে কথা বললাম। কিন্তু এখানকার সবাই যেনো ইংরাজি বিজ্ঞানী! কথায় কথায় ইংরাজি ঝেড়ে দেয়। যার জন্যই তো কারোর সাথে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলতে পারি নি। আর কাউকেই আমার রূপের জালে ফাঁ*সা*তেও পারলাম না। কিন্তু ওই পো*ড়া*মু*খিটা ও-তো আমার মতো এতো সুন্দর করে সেজে-গুঁ*জে*ও আসে নি। তবুও কিভাবে এক কোঁ*পে*ই একজন এমপিকে নিজের জালে টেনে নিলো মা! আর এমপি সাহেব ও কেমন যে মেয়ের হাতে থা*প্প*ড় খেলো তাকে উল্টো অ*প*দ*স্থ না করে নিজের জিনিস বলে দাবি করছে সকলের সামনে। কতো মধুমাখা কথা বলছে!”
এদিকে সারফারাজ চারপাশে ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলিয়ে গার্ডসদের নির্দেশ দিলো….
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—“পুরো এড়িয়া এখনই সিল করে দাও। একটা প্রাণীও যেনো এখান থেকে বের হতে না পারে। সিকিউরিটি ডাবল করে দাও।”
মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লো সারফারাজের গার্ডসরা। ভিড়ের মধ্যে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পিহুর হাত এখনও ব*ন্দী সারফারাজের শক্ত হাতের মুঠোয়। পিহু আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজের হাত ছাড়ানো। কিন্তু সারফারাজের মুখে এ নিয়ে কোনো ভাবান্তর লক্ষণীয় হচ্ছে না।
সেইসময় পিহুর বাবা জবরুলের ছোটবেলার বন্ধু আশরাফ সাহেব মূলত যার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে পিহুদের এখানে আসা তিনি সামনে এসে দাঁড়ালেন।সারফারাজ-ই আশরাফ সাহেবকে ডেকে পাঠিয়েছিলো। সারফারাজ কড়া কন্ঠে আশরাফ সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো…..
—“পুরো জায়গাটা কি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আছে আশরাফ সাহেব?”
আশরাফ সাহেব মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালে সারফারাজ বললো….
—”এক্ষুণি আমাকে এই জায়গার সম্পূর্ণ ফুটেজটা এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”
আশরাফ আর এক মূহূর্তের জন্য না দাঁড়িয়ে ছুটে চলে গেলেন ফুটেজ আনতে। সারফারাজ ওর পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট আহাদকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
—”আহাদ একটা প্রজেক্ট সেট করার ব্যবস্থা করো কুইক।”
আহাদও তার কাজে চলে গেলো। পিহু তখনও হাত ঝাঁকাচ্ছে। অন্য হাত দিয়ে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ক্লান্ত হলেও হাল ছাড়ছে না সে সারফারাজ পিহুর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বললো…..
—“এই বৃথা চেষ্টা এবার থামাও প্রিটিহার্ট। সারফারাজ ইউসুফ খান একবার কোনো কিছুতে হাত ছোঁয়ালে সেই জিনিসটা অটোমেটিক তার দখলে হয়ে যায়। সেখানে তুমি তো র*ক্ত-মাংসে গড়া গোটা একটা মানুষ! আমার কঠিন মনের গভীরতম জায়গাটা পর্যন্ত স্পর্শ করতে পেরেছো তুমি। এখন আমার থেকে তোমার মুক্তি তো সম্ভব না। শুনে রাখো খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী রূপে গ্রহন করবো আমি। তারপর আমার মৃ*ত্যু হলেও তোমার পিছু আমি ছাড়বো না। আমার শারিরীক অস্তিত্ব হয়তো মাটির নিচে বিলীন হয়ে যাবে কিন্তু এই যে আমার একটা আলাদা পরিচয় আছে এই ক্ষ*ণ*স্থা*য়ী পৃথিবীর বুকে সেই পরিচয়ের ভার তোমার সাথে জুড়ে থাকবে সর্বক্ষণ। এই পরিচয়ের মৃ*ত্যু কখনও সম্ভব হবে না। তখনও মানুষ তোমায় বলবে ‘ঐ দেখো এমপি সারফারাজ ইউসুফ খানের বউ যাচ্ছেন’।”
পিহু একবার ঢোক গি*ল*লো। তারপর তেজী কণ্ঠে চিৎকার করে বললো…..
—“অনেকক্ষণ ধরে আপনার এসব অ*স*ভ্য*তামো সহ্য করছি। আর সম্ভব না। হাত ছাড়ুন! নয়তো আমি…”
সারফারাজ ভ্রু কুঁচকে পিহুর দিকে একটু ঝুঁকে চাপা স্বরে বললো….
—“অ*স*ভ্য*তা*মো কাকে বলে এবং কতো প্রকার তা বিয়ের পর প্রাক্টিকেলী জানতে পারবে প্রিটিহার্ট। এখন তো যাস্ট ট্রেলার দেখাচ্ছি। আমারও তো টুকটাক লজ্জা-টজ্জা আছে নাকি!”
সারফারাজের এবারের বলা কথায় পিহুর এবার সব ধৈর্যের সীমা যেনো বাঁ*ধ ভে*ঙে ফেললো। পিহু মুখে আর কিছু না বলে যেই হাত দ্বারা সারফারাজ পিহুর হাত ধরে আছে সেই হাতের উপরিভাগে কাঁ*ম*ড় বসিয়ে দিলো পিহু৷ চারপাশে উপস্থিত সবাই এবার অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো যেনো। কিন্তু সারফারাজ ওর মুখদিয়ে কোনো শব্দ বের করলো না। নিজের অন্যহাত মুষ্টিবদ্ধ করে এই অসহনীয় য*ন্ত্র*না*ও সে চুপচাপ সহ্য করে নিলো। পিহু যখন দেখলো সারফারাজ এখনও ওর হাত ছাড়ছে না তখন সে হতাশ হয়ে মুখ তুলে নিলো। পিহুর চোখে-মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
পিহু সারফারাজের হাতের কাঁ*ম*ড় বসানো জায়গার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো…..
—”কাঁমড়ের জায়গায় দাঁতের দাগ পড়ে গিয়েছে।লাল হয়ে উঠেছে। র*ক্ত*ও তো বেরোচ্ছে। তবুও এই মানুষটা নির্বিকার হয়ে আছে কিভাবে? এ কেমন লোক! শরীর কি পাথরের তৈরি নাকি? এত য*ন্ত্র*ণা সয়ে গেলো তবুও আমার হাত ছাড়লো না!”
সারফারাজ নিচু গলায় বললো…..
—“সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করা শেষ?”
পিহু মাথা নিচু করে ফেললো। সে খুব ভালো ভাবেই বুঝে গিয়েছে যে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না যতোক্ষণ না পর্যন্ত সারফারাজ নিজে ওর হাত ছাড়ছে।
ঠিক তখনই আশরাফ সাহেব সিসিটিভি ফুটেজের পেনড্রাইভটা নিয়ে আবারও সারফারাজের সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তা বাড়িয়ে দিলেন। আহাদ ইতিমধ্যেই প্রজেক্টরটা সেট করে ফেলেছে। সারফারাজ পেনড্রাইভটা আহাদকে দিয়ে প্রজেক্টরে চালানোর নির্দেশ দিলো।
প্রজেক্টরে ফুটেজ ভেসে উঠলো। সবার দৃষ্টি এবার স্থির হলো প্রজেক্টরের উপর। পিহুর সারফারাজকে থা*প্প*ড় মা*রা*র আগের মুহূর্তগুলোতে দেখা গেলো…..
‘একজন কালো কোর্ট-প্যান্ট পরিহিত লোক পিহুর খুব কাছে এসে ওর কমোর স্পর্শ করেছে। কিন্তু ক্যামেরায় কেবল লোকটির পিছন অংশ দেখা যাচ্ছে মুখটা দেখা গেলো না।’
সারফারাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে লোকটার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি লক্ষ্য করলো। তৎক্ষনাৎ সারফারাজের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সে চিৎকার করে একটা নাম উচ্চারণ করলো…..
—“রায়হান পাটোয়ারীইই!”
সবার মধ্যে ভিতীর মাত্রা কয়েক ধাপ বেড়ে গেলো। পিহু লজ্জায় মাথা আর তুলতে পারছে না। কারণ সে ভু*ল করেছে। ভু*ল মানুষকে থা*প্প*ড় দিয়েছে, অ*প*মা*ন মূলক কথা শুনিয়েছে, কাঁ*ম*ড় পর্যন্ত দিয়ে তার হাত ক্ষ*ত করে দিয়েছে। এই লজ্জা রাখার জায়গা পিহু খুঁজে পাচ্ছে না।
পরক্ষণেই ২জন গার্ডস একজন মধ্যবয়সী পুরুষকে ধরে নিয়ে এলো সারফারাজের সামনে। লোকটির চোখে মুখে আ*ত*ঙ্কের ছাপ ফুটে উঠেছে।
একজন গার্ড বললেন….
—“বস, উনি নিয়ম ভে*ঙে পালাতে চাইছিলেন। তাই আমরা ওনাকে ধরে আনলাম।”
মুহূর্তেই সবার দৃষ্টি স্থির হলো সেই লোকটির উপর। এই লোকটিই সে যার নাম সারফারাজ একটু আগে উচ্চারণ করেছে।
সারফারাজ পিহুর হাত ধরে থাকা অবস্থাতেই ওকে নিয়েই রায়হান পাটোয়ারীর দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে কড়া স্বরে বললো…
—“এক পা ক*ব*রে পড়েছে তবুও মেয়েদের সাথে অ*স*ভ্য*তা*মো করার মতো নোং*রা স্বভাব গেলো না আপনার! আগেরবার আপনার মেয়ে আমার পায়ে পড়ে বলেছিলো, ‘শেষবারের মতো আপনাকে মাফ করে যেনো আমি ২য় একটা সুযোগ দিই।’ আমি দিয়েছিলাম। কিন্তু কথায় আছে না-‘কু*কু*রের লেজ কোনোদিন সোজা হয় না। আপনার ক্ষেত্রেও সেই কথা ফলে গেলো।”
রায়হানের কলিজা কাঁপছে। তিনি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিছুটা তেজ নিয়ে বললেন…..
—“আমি এবার কোনো অ*ন্যায় করি নি। আর ফুটেজে তো লোকটির মুখও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে আমাকে এভাবে ধরে আনার মানে কি। নিশ্চয়ই আমাকে ফাঁ*সা*নো হচ্ছে।”
সারফারাজ ভ্রু উঁচিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বললো…
—“তাই নাকি?”
সে পিহুর হাত ধরেই রায়হানের আরো একটু সামনে এসে দাঁড়ালো। গার্ডসদের উদ্দেশ্য করে বললো….
—“ঘুরাও এনাকে।”
গার্ডসরা রায়হানকে ঘুরিয়ে ধরতেই দেখা গেলো তার ঘাড়ে সা*পে*র একটা ট্যাটু আঁকা রয়েছে।
সারফারাজ প্রজেক্টরে থাকা লোকটির ঘাড়ের অংশ জুম করতে বললো আহাদকে। অতঃপর ফুটেজের লোকটির ঘাড়েও ঠিক একই ট্যাটু সকলের সামনেই দৃশ্যমান হলো। সবার চোখের সামনে যখন প্রমাণ জ্বল জ্বল করছে তখন রায়হানের অস্বীকার করার আর কোনো সুযোগ রইলো না।
রায়হান এবার সারফারাজের সামনে হাঁটু ভে*ঙে বসলো। অনুনয়ের স্বরে বললেন……
—“ক্ষমা করে দিন এমপি সাহেব। আমি আপনার পায়ে পড়ছি। আমি অনেক বড় অন্যায় করছি। আমার এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। কথা দিচ্ছি আর কখনও এমন কাজ কর…..!”
সারফারাজ গর্জে উঠে বললো…..
—”ক্ষমা পাওয়ার জন্যও যোগ্যতা থাকা লাগে যা আপনার নেই। একবার ক্ষমা করেছিলাম, একবার সুযোগ দিয়েছিলাম নিজেকে শুধরে নেওয়ার, কিন্তু আপনি শুধরান নি। কারণ আপনি শুধরানোর মতো মানুষ না। তাই এবার আর ক্ষমা হবে না আপনার।”
উপস্থিত সবাই বলে উঠলো রায়হানকে যেনো উপযুক্ত শা*স্তি দেওয়া হয়। তাকে যেনো ক্ষমা করা না হয়। সারফারাজ ওর গার্ডসদের উদ্দেশ্য করে বললো…..
—”তাকে থা*না*য় নিয়ে যাও। আইন তাকে তার কর্মঅনুযায়ী শা*স্তি প্রদান করবেন। নারীদের সাথে ঠিক কেমন আচারণ করা উচিত, তাদের দিকে কেমন নজরে তাকানো উচিত তা প্রাক্টিকেলি বুঝিয়েও দিবেন।”
সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন গার্ডস মিলে রায়হানকে বহিরাগত রাস্তার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলেন। রায়হান চিল্লিয়ে ক্ষ*মা চাচ্ছেন কিন্তু তার চিৎকার উপস্থিত কেউ কানে তুলছে না। সারফারাজ এবার সকলের উদ্দেশ্য বললো….
—”সাময়িক বি*শৃ*ঙ্খলার জন্য আসল অনুষ্ঠান থেমে রয়েছিলো। আশরাফ সাহেব বিবাহকার্য শুরু করতে বলুন কাজী সাহেবকে। আর আপনারাও নিজেদের মতো ইন্ঞ্জয় করুন।”
অতঃপর সবাই পূর্বের ন্যয় গল্প-গুজবে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এখনের পরিবেশ দেখে কেউ বলতেই পারবে না একটু আগে কতো বড় একটা বি*শৃ*ঙ্খ*লা ঘটে গিয়েছে এখানে। পিহু নিচু স্বরে বললো…..
—”আমাকে ক্ষমা করবেন এমপি সাহেব। আমি আমার কাজ ও আচারণের জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ক্ষমা চাচ্ছি আপনার কাছে।”
সারফারাজ পিহুর হাতটা ধরা অবস্থাতেই ওকে হালকা টানলো নিজের দিকে। এখনও ওদের মাঝে ১হাত সম পরিমাণ দুরত্ব বিরাজ করছে। পিহুর বুকের ভিতরের ধ*র*ফ*রা*নো ভাবটা বেড়ে গেলো পাল্লা দিয়ে। পিহু চোখ তুলে তাকালো সারফারাজের দিকে। সারফারাজ হালকা হেসে বললো…..
—”যদি ঐ দু’ঠোঁটের ভাঁজ থেকে ভালোবাসি শব্দটা বের করতে পারো তাহলে আজকের জন্য তোমায় মাফ করে দিতে রাজি আছি আমি।”
এই বলে সারফারাজ একবার চোখ টিপ দিলো পিহুকে। পিহুর মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো সারফারাজের এরূপ কথায় ও কাজে। পিহু সঙ্গে সঙ্গে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো…..
—”এবার অন্তত হাত ছাড়ুন আমার।”
—”এরপর থেকে বোরখা-হিজাব ব্যতিত বাসার বাহিরে পা রাখবে না। যদি রাখো তাহলে আমার থেকে খা*রা*প কেউ হবে না। কথাটা মাথায় থাকে যেনো।”
পিহু কোনো প্রতিত্তুর করলো না। সেইসময় সোনালী আর সোমা একসাথে সেখানে এসে দাঁড়ালো। সোনালী নিজের ৩২ পাটি দাঁত বের করে সারফারাজের দিকে ড্যব ড্যব করে তাকিয়ে আছে। সারফারাজ এর দৃষ্টি কেবল পিহুর উপরেই স্থির। সোমা হাসিমুখে বললেন….
—”আমি পিহুর মা। আর ও আমার মেয়ে সোনালী। পিহুর বড় বোন। সোনালী বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত পিহুর বিয়ে দিবেন না ওর বাবা না।”
সারফারাজ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো……
—”তাহলে বড় আপাকে বিয়ে দিয়ে দিন যতো দ্রুত সম্ভব। যদি দেখছি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সময় নিচ্ছেন তাহলে আপনাদের রুলস-রেগুলেশন মানার প্রয়োজন আমি মনে করবো না আর। নিজের হবু অর্ধাঙ্গিনীকে আপনাদের ঘরের সো-পিচ বানিয়ে ফেলে না রেখে সোজা নিজের ঘরে তুলে নিয়ে যাবো।”
সারফারাজকে এতোটা কাছে থেকে দেখার পরই সোনালী ওর উপর একদফা ক্রাশ খেয়ে বসেছিলো। ক্রাশের মুখে নিজেকে বড় আপা বলে সম্বোধিত হতে দেখার মতো দুঃখ বোধহয় এই পৃথিবীতে ২য় কিছুতে নেই। সোনালী মুখের অবস্থা এখন তেমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোমাও পুরোপুরি চুপ হয়ে গিয়েছে। একটু আগে পর্যন্তও তিনি ভেবেছিলেন সোনালীকে এখনও যদি সারফারাজের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করানো যায় তাহলে ওর ফর্সা গাঁয়ের রং আর এতো সুন্দর সাজসজ্জা দেখে সারফারাজের মন পিহুর থেকে সরে সোনালীর উপর স্থির হবে। কিন্তু সারফারাজের কথা একেবারে সোমার মুখ যেনো ঝাঁ*মা দ্বারা ঘ*ষে দেওয়ার মতো করে বন্ধ করে দিলো।
আশরাফ সাহেবের মেয়ের বিবাহকার্য সম্পন্ন হলে সারফারাজ পিহুকে সঙ্গে নিয়ে ভিআইপি টেবিলে বসে একসাথে খাবার খেলো। আর সোমা-সোনালীকে বাকিদের মতো বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খাবার খেতে হলো। সোনালীর মনে হচ্ছে সে খাবার না বি*ষ খাচ্ছে। ভিতরটা নয়তো এতো জ্ব*লা*র কথা না পিহুর প্রতি এমপি সাহেবের এতো টান এতো কেয়ার করা দেখে।
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হলে সকল অতিথিরা নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লে সারফারাজ পিহুকে বললো…..
—”আমার গাড়ি তোমায় তোমার বাসা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসবে। ঐ গাড়িটা সর্বক্ষণ তোমার বাড়ির পাশেই থাকবে। বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করো যদি ঐ গাড়িতে করেই যাবে এবং ঐ গাড়ি করেই আবার বাড়িতে ফিরবে।”
পিহু বললো….
—”আমি আপনাদের মতো কোনো হাই-ফাই এলাকাতে থাকি না আর না আমার পরিবার কোনো হাই-সোসাইটি থেকে বিলং করে যে আমাদের বাড়ির সামনে কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও আশে-পাশে থাকা লোকেরা তা দেখে কিছু বলবে না। আমি লোকমুখের কথাকে অনেক ভ*য় পাই এমপি সাহেব। এই বিষয়টা আমাকে অনেক গভীরভাবে আ*ঘা*ত করে। তাই আপনার এই আমার যাতায়াতের সুবিধার জন্য দেওয়া দয়ার গাড়িটা আমার লাগবে না। আমি সবসময় অটো-রিকশাতে কিংবা পায়ে হেঁটে চলাচল করে অভ্যস্ত। এই অভ্যাসেই আমি সই।”
পিহু এতোসময় কথাগুলো সারফারাজের দিকে না তাকিয়ে বলে গিয়েছে একনাগাড়ে। পিহুর অবাধ্যতামূলক কথা শুনে সারফারাজের রাগে ঘাড়ের সূক্ষ্ম র*গ গুলো স্পষ্ট হয়েছে। সারফারাজ ধ*ম*কের স্বরে বললো…..
—”আজ অবাধ্যতামূলক কথা মুখ দিয়ে বের করেছো প্রথমবার জন্য মাফ করে দিলাম। নেক্সট টাইম আবার যদি আমার কোনো কথার পিঠে একটা অবাধ্য শব্দ ঐ মুখ দিয়ে বের হতে শুনি তাহলে জিহ্বা টে*নে কে*টে কপালের মাঝখানে পেঁ*রে*ক দিয়ে গেঁথে দিবো। তখন না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁশি৷”
সারফারাজের হাড় হিম করে দেওয়ার মতো ধ*ম*কে*র স্বরে বলা কথা শুনে পিহুর কলিজা পর্যন্ত কেঁ*পে উঠলো যেনো। সারফারাজ পিহুর দিকে হালকা ঝুঁকে বললো…..
—”এমপি সারফারাজ ইউসুফ খানের হবু বউয়ের চরিত্রের দিকে আঙুল উঠাবে যে তার অস্তিত্ব এই পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে প্রিটিহার্ট। তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।”
তখুনি সোমা আর সোনালী এসে উপস্থিত হলে সারফারাজ সোমার দিকে তাকিয়ে বললো…..
—”আরে হবু সৎ শ্বাশুড়ি আম্মা আর বড় আপা যে। খাওয়া-দাওয়া ভালো হলো তো আপনাদের?”
সোনালীর এবার ইচ্ছে করছে নিজের চুলগুলো নিজেরই টে*নে ছিঁ*ড়ে ফেলতে। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট শক্ত ভাবে কাঁ*ম*ড়ে ধরে রাগে বের হয়ে আসতে চাওয়া নিজের কান্নাকে নিয়ন্ত্রণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা সে করছে। সোমা জোরপূর্বক হেসে বললেন….
—”হ্যা। ভালো হয়েছে।”
—”আমার হবু বউয়ের যত্নে কোনো ত্রু*টি যেনো না হয় হবু সৎ শ্বাশুড়ি আম্মা। যদি ভুলেও এমনকিছু হয়ে যায় তাহলে আপনাদের লম্বা সালাম জানিয়ে বিশেষ একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে খাতিরদারি করার ব্যবস্থা করবো আমি৷”
সোমা শুকনো ঢোক গি*ল*লো এবার। সারফারাজ পিহুর দিকে তাকিয়ে বললো….
—”বাড়ি যাও তাহলে প্রিটিহার্ট। আমিই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু জরুরী একটা কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। তা সমাপ্ত না করা পর্যন্ত মনের ভিতর তৃপ্তি জিনিসটা আসবে না।”
পিহু আর একমূহূর্তের জন্যও দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে গেইটের দিকে অগ্রসর হলো। পিছন পিছন সোমা আর সোনালীও গেলো। গেইটের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা সারফারাজের একটা ব্লু বিএমডব্লিউ কারের দরজা গার্ডস খুলে দিলে পিহু, সোমা আর সোনালী সেখানে উঠে বসলো। অতঃপর গাড়িটি রওনা হলো পিহুদের বাড়ির রাস্তা ধরে।
আহাদ সারফারাজের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৪
—”বস, এখন তাহলে আপনি সেখানে যাবেন কি?
সারফারাজ চোয়াল শক্ত করে বললো….
—”হুম চলো।”
অতঃপর সারফারাজও নিজ গাড়িতে উঠে বেড়িয়ে পড়লো অসমাপ্ত বিশেষ কাজটির সমাপ্তি ঘটিয়ে নিজের মনকে তৃপ্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে।