নিষিদ্ধ অনুভূতি গল্পের লিংক || আহমেদ হৃদ

নিষিদ্ধ অনুভূতি পর্ব ১+২
আহমেদ হৃদ

শহরের সবথেকে বড়ো রেস্টুরেন্টের টেবিল বুক করেও যখন সেখানে একটি মেয়েকে বসে থাকতে দেখতো রুদ্র; চোখেমুখে বিরক্তি লেপ্টে গেল তার! চোখ-মুখ কঠোর হয়ে এলো সে। এতো বড় রেস্টুরেন্টে’র এই মেনার্স? যে কেউ এলো আর তাকে বসতে দিয়ে দিলো? রুদ্র মনেমনে ঠিক করলো গিয়েই কতগুলো কথা শুনিয়ে দেবে মেয়েটাকে। রীতিমতো ঝামেলা বাঁধাবে! তেতে এগিয়ে এলো রুদ্র। যখন দেখলো টেবিলে স্ব স্ব সারিতে সাজানো হরেক রকমের খাবার, মেজাজ আরও ছিটকে গেলো। এক ফোঁটা জায়গা নেই টেবিলটায়! মেয়েটার মনোযোগ তখনো খাওয়ায়। গোগ্রাসে গিলছে! পরনে সাদামাটা পোষাক। তবুও নিজেকে আকর্শনীয় করে তোলার কি চেষ্টা! রুদ্র যখনি কিছু বলবে, তখনি মনে হলো আজ তার অরোনির সাথে দেখা করার কথা। অথচ, তাদের টেবিল দখল বসে আছে ফালতু একটা মেয়ে। এটাই অরোনি নয়তো? রুদ্র নিজেকে শাসালো। না না, এটা যদি অরোনিতা হয়, ডিরেক্ট বিয়ে ক্যানসাল!

কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। পকেটে হাত গুজে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু মেয়েটার ইহজগতের কোন হুস নেই। খেয়েই চলেছে সে। রুদ্র কপাল কুঁচকে হালকা কাঁশলো। জিজ্ঞেস করলো,
‘মিস অরোনিতা?’
আরু তাকালো। সুট, বুট, কোট পরে তার সামনে দাড়িয়ে একটি ছেলে। নিশ্চয়ই চৌধুরি মহাশয়! গুনে গুটে ন’টায় এসেছে। আর কি ভাব! অবশ্য বিয়ে তো হবেই না! আরু সৌজন্য হাঁসতে গিয়েও পারলো না। মুখ খাবারে ভর্তি। কোনমতে গিলে উত্তর দিলো,
‘জ্বি আমি’ই অরোনিতা। আপনি রুদ্র?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুদ্র উত্তর দিলো না। ধপ চেয়ারে বসলো। যেন সক্ খেয়েছে সে। এমন মেয়ের সাথে তার তার বিয়ে দিতে চায়? পূর্নদৃষ্টিতে তাকালো আরুর দিকে রুদ্র। চোখে মোটা করে এব্রোথেব্রো ভাবে কাজল দেয়া। কপালে কালো রঙের বৃহৎ একটি টিপ। কানেও বেশ বড়সড় একজোড়া দুল। রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই মেয়েকে বিয়ে করবে, তা-ও রুদ্র? হাহ্!
মেয়েটার হাত এখনো এটো। পাশে একগাদা চামুচ সাজানো। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটা টাচ্ অব্ধি করেনি ওগুলোতে।
তার আসার অপেক্ষা অব্ধি মেয়েটা অপেক্ষা করতে পারলো না? রেস্তোরাঁর সবথেকে দামিদামি ডিসগুলো দিয়ে টেবিল ভরা। শরীর ও তো বাঁশের কুঞ্চির মতো। যেন তোরো-চৌদ্দ দিন না খেয়ে ছিলো। এতো খাবার খেতে পারবে?
‘কেমন আছেন?’ সৌজন্যে দেখাতে জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।
‘জ্বি ভালো।’ বলেই আরু আকস্মিক ওয়েটারকে ডাকলো। ওয়েটার ছুটে আসে। বুক করা টেবিল বলে কথা!
‘জ্বি, ম্যাম।’

আরু রুদ্র’র দিকে তাকায়। তারদিকেই তাকিয়ে লোকটা। আরু পাত্তা না দিয়ে নির্দ্বিধায় বলে ওঠে,
‘এগুলো নিয়ে যান। একটা কোল্ড কফি, আর একটা ব্লাক টি দিন।’
রুদ্র এ পর্যায়ে হতবিহ্বল। ওয়েটার অর্ডার কিছুক্ষণের মধ্যেই দিয়ে গেলো। আরও অবাক হলো, যখন ব্লাক টি টা তার দিকে এগিয়ে দিলো মেয়েটি। মেয়েদের সাথে ওঠাবসা নিতান্তই নেই রুদ্র’র। কিন্তু এমন মেনার্সলেস মেয়ে সে জিবনেও দেখেনি! একজন পুলিশ কনস্টেবলের মেয়ে নিশ্চই এমন হয়না! না না, হয়! এইতো তার সামনেই বসে মিস অরোনিতা আরু।
আরু ফোকলা হাঁসলো। নিশ্চয়ই তাকে গাইয়া, এঁয়ো ভূত ভাবছে? ভাবুক! আরু তো এটাই চায়। আজ নিয়ে এরকমভাবে দশজনের সাথে দেখা করতে এসেছে আরু। কারোরই আরুকে পছন্দ হয়নি। হবে কি করে? আরুতো আসার আগে নিজের ভো’ল পাল্টে এসেছে। সে নিজে থেকে কোন বিয়েই ভাঙবে না বরং তাকে দেখে ছেলে পালাবে; এটাই তার মতলব!

আরু চিন্তায় ডুব দিলো। এস এস সি তে রেজাল্ট খারাপ করার পর প্রথম প্রথম বিয়ের ভয় দেখাতো তার বাবা। কিন্তু ইন্টার প্রথম বর্ষে ফেইল করেছে বলে তার বাবা যে তার সত্যিই বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লাগবে, আরু কল্পনাও করতে পারেনি। কি আজব! পড়াশোনায় না হয় একটু কাঁচা, তাই বলে বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগতে হবে? দিক না বিয়ে! আরু ও দেখবে কিভাবে বিয়ে হয়! তার জন্য অপেক্ষা করছে আশিক। আশিক চাকরিটা পেলে আরু নিজেই তাদের সম্পর্কের কথা জানাতো তার বাবাকে।
‘মিস অরোনিতা?’ কারো ডাকে ধ্যান ছুটলো আরুর। রুদ্র ডাকছে। আরু তড়িঘড়ি করে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করেই বলে উঠলো,

‘কিছু অর্ডার করবেন না?’
রুদ্র এবার না চমকিয়ে পারলো না। এইতো এতগুলো খাবার খেলো, আবার? রুদ্রকে এভাবে দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে আরুর। তাকে খারাপ ভাবছে তাইতো? ভাবুক! দুনিয়ায় এতো ছেলে রয়েছে; সেখানে এক-দু’জন খারাপ ভাবলে আরুর কিছু যাবে আসবে না।
আরু আবারো ওয়েটারকে ডাকলো। একটু আগে যা যা খেয়েছে; সব আবারো রিপিট করে অর্ডার করলো। এরপর তাকালো রুদ্র’র দিকে। বেচারার মুখটা দেখার মতো!
‘আপনার জন্য কিছু-?’ বললো আরু।
রুদ্র নিজেকে স্বাভাবিক করলো। বললো,’না, কিছু লাগবে না।’
‘বিলের ভয় করছেন?’

রুদ্র এতোক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও এবার একটু চেঁতলো মনে হলো। মেয়েটা বললো ‘রুদ্র টাকার ভয় পায়?’ পুরো রেস্টুরেন্ট কিনে রাখার ক্ষমতা আছে তার। রুদ্র কথা না বাড়িয়ে আরও কিছু অর্ডার করলো। ওয়েটার ‘সময় লাগবে’ বলে প্রস্থান করলেন।
আরু দাঁত দিয়ে নক্ কাটছে। এটাও তার এক পদ্ধতি। রুদ্র এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। ঝা!ড়ি দিয়ে উঠলো,

‘এই মেয়ে এই, মুখ থেকে হাত সরাও।’
আরু পাত্তা দিলো না। নিজের কাজে তার সম্পূর্ণ মনোযোগ। রুদ্র শরীর রাগে রি রি করছে! এই তার মায়ের সুপা/ত্রী? রুদ্রকে কে-টে কে-টে দ্বিখণ্ডিত করলেও এই অস-ভ্য মেয়েটাকে বিয়ে রুদ্র করবে
না।

ঠান্ডা এসির হওয়া থেকে বেরোতেই ফ্যাপ`সা গরম আঁকড়ে ধরলো আরুকে। তার দু’হাতে অনেকগুলো বাক্স। এগুলো মূলত খাবারের বাক্স। ভেতরের ঘটনার কথা মনে পড়লেই আরুর পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। একটা লোক এতো হাইজেনিক হয় কি করে? সামান্য নক্ কাটা নিয়ে কতগুলো কথাই না তাকে শোনালো। শেষে তো বেড়িয়েই যাচ্ছিলো। আরুর বুক তখন কাঁপে উঠেছিলো। এতোগুলো খাবারের বিল কে দেবে? আরুর ব্যাগ বিশাল হলেও তাতে মাত্র ত্রিশ টাকা আছে। যে করেই হোক লোকটাকে থামাতে হবে। নাহলে নিশ্চত তাকে থালা-বাসন মাজতে হবে আজ। আরু তখন উচ্চস্বরে বলে উঠেছিলো,
‘আরে বিল তো দিয়ে যান।’
ভাগ্যিস রুদ্র থামে। মিল মিটিয়ে গটগট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়। আরুর পেটে একফোঁটা জায়গা নেই। এতো খাবার কি করবে? তাইতো সে প্যাকেট করে নিলো! এরপর ওয়াশরুম থেকে ঠিক হয়ে বেড়িয়ে আসে আরু। এগুলো নিয়ে এখন কুসুমদের বস্তিতে সে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আরু রিকশা করে বস্তির দিকে রওনা দিলো। কুসুমসহ আরও অনেক’কে খাবারের প্যাকেট দিয়ে বাড়িমুখো হলো আরু। কিন্তু আরুর অজান্তেই যে কারো দৃষ্টি শীতল হলো! মনে স্নিগ্ধ শান্তির বিচরণে ভরে উঠলো। এ দৃষ্টিতে যখন কতটা মুগ্ধতা ছিলো, আরু কি তা জানে? জানেনা! আরু যেতেই মুচকি হেঁসে চলে গেলো সে-ও!

কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলেন মহুয়া। তার দৃষ্টি ভীতু! তিনি একশো ভাগ নিশ্চিত ছেলেটাকে ঘোল খাইয়ে এসেছে এই মেয়ে। কত ভালো চাকরি করে ছেলেটা! দেখতেও তো মাশাল্লাহ। সব ছেলেগুলোর মতো রুদ্রকেও যে তিনি জামাই বানাতে পারবেন না, এটাই হলো তার ভীতু চোখের কারন!
আরু হনহনিয়ে ভিতরে ডুকলো। পুরো বাড়িতে এসি রয়েছে। অথচ, কেউ তা ব্যাবহার করতে পারবে না। মহুয়া কড়া গলায় বলে দিয়েছেন, এসি যে বাড়িতে আছে, তা যেন আরু ভূলে যায়। এগুলো তিনি ঘর সাজানোর জন্য কিনেছেন। এইটা কোন কথা? আরু ফ্যান ছেড়ে চিৎ হয়ে সোফায় বসে পড়লো। মহুয়া তবুও এগোলেন৷ জিজ্ঞেস করলেন,

‘কি হলো ওইখানে?’
আরু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসলো। রহস্য কন্ঠে বলতে লাগলো,
‘ছেলেটা কার পছন্দের মা? উফফ! কি হ্যান্ডসাম! আমি তো দেখেই ক্রাশ খেয়েছি। আর কি হাইজিন! দাঁত দিয়ে নক্ কাটছিলাম বলে উনার সে-কি চিন্তা! যেন তার হবু বউ এইটুকুন জিবানুতেই মা/রা যাবে। প্রায় সারে সাত হাজার টাকা তিনি খরচ করেছেন এটুকু সময়ের মধ্যেই। এতো টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয়? আমি তখুনি ওনাকে বিয়ে করে নিতে চেয়েছিলাম। আর কি বললো আমায় জান?’

মহুয়া বেগমের স্নায়ু টানটান। এতো রসিয়ে রসিয়ে কখনোই কোন পাত্রের বর্ননা দেয়না আরু। এইতো সেদিনের কথা, কি ঝগড়া তার সাথে। বাড়ি মাথায় তুলেছিলো। হয়তো সত্যিই এবারে ছেলেকে পছন্দ হয়েছে। মহুয়া বেগম উৎসুক হয়ে মেয়ের কথা শুনছিলেন। অবাক হয়ে বললেন,
‘কি বললো?’
‘আমায় তিনি বিয়ে করবেন না। ‘
মহুয়া হতভম্ব! আরু উঠে চলে গেলো। মনটা শান্তি শান্তি লাগছে তার। কিন্তু বিকেল গড়াতেই তার শান্তির বারোটা বাজে গেলো। সব পরিশ্রমে পানির বন্যা বইতে লাগলো।

এতো কাঠ-খড় পু`ড়িয়েও রুদ্র যে আরুকে পছন্দ করে বসবে; ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি আরু। শুধু কি তাই? সন্ধ্যায় তাকে দেখতে আসছেন লোকটা। মেজাজ এখন তুঙ্গে উঠেছে আরুর। কি না কি করলো বিয়েটা ভাঙতে সে!তবুও মর্ক’ট লোকটার তাকে ভালো লাগলো? কিভাবে সম্ভব এটা? এখন আরুর মন চাইছে কচু গাছের সাথে ফাঁ*স নিতে। যদি বিয়েটা আজ পাকা হয়ে যায়? তার জন্য আশিক অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আর আরুও তো তাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। না না, বিয়ে ঠিক হলে সে আজ’ই আশিকের সাথে পালাবে। পালাবে মানে পালাবেই। যে করেই হোক!
কিছুক্ষণ আগে আরু একবার ড্রইংরুমে উঁকি দেয়। মহুয়া চিন্তিত ভঙ্গিতে সোফায় বসে। তার দৃষ্টি মাটিতে নিবদ্ধ। তা দেখে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো আরুর। এই চেহারের মানে জানে আরু। প্রতিবার পাত্রপক্ষ থেকে শেষবারের মতো ফোন আসে যখন, তখনি মহুয়া বেগমকে এমন চিন্তিত হতে দেখা যায়। কারনটা তো আর অজানা নয় কারো! আরু গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়। তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু আরু নিজেকে সামলালো। মায়ের পাশে বসে কন্ঠ খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হয়েছে আম্মু?’
মহুয়া নিরুত্তর। আজ একটু বেশিই চিন্তিত লাগছে আরুর কাছে। আচ্ছা, লোকটা আবার অপ’মান করেনি তো? আরু মাকে চুপ থাকতে দেখে মৃদু ধাক্কা দিলো। মহুয়া মুখ তুলে চাইলেন। তার দৃষ্টিতে অথৈজল। চিকচিক করছে। আরুর বুক ধক্ক করে উঠলো। কি এমন হলো? আরু অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কিছু বলবে তো?’
‘তখন তুই মজা করছিলি তাইনা?’
‘কখন?’
মহুয়া চোখের পানি মুছলেন। হেঁসে জবাব দিলেন,’ তুই কি গাঁধি আরু? বুদ্ধি কবে হবে তোর? ধুরর! আমারি বোঝা উচিৎ ছিলো।’

‘আরে কিসব বলছো তুমি? কি বোঝা উচিৎ ছিলো তোমার?’
‘কই, তখন তো বললি না ছেলেপক্ষ আজকেই দেখতে আসবে। তাহলে এভাবে বসে থাকতাম আমি? কত উঁচু শ্রেনীর মানুষ তেনারা। কত আয়োজন করতে হবে বলতো? তোকে রুদ্র’র ভীষণ পছন্দ হয়েছে। বলেছে, আজকেই আংটি পড়িয়ে যাবে।’
আরুর মাথায় বাঁ*জ পড়লো। পিলে চমকে উঠলো। সে কি ঠিক শুনেছে? লোকটা তো তখন রেগেমেগে একাকার! তার মুখ দেখেই তো আরু শতভাগ নিশ্চিত ছিলো; জীবন থাকতে সে এই মেয়ের সামনে আসবে না। তাহলে? লোকটার মাথায় সমস্যা আছে নাকি? নিশ্চিত আছে! নাহলে এমন ডিঙ্গি মেয়েকে কারো পছন্দ হয়? মহুয়া আরও কি কি জানি বললেন। আরুর কানে কিছুই গেলো না। তিনি উঠে রান্নাঘরে চলে গেলেন। কতো আয়োজন বাকি!

সেই থেকেই মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে আরুর। আশিক অনলাইনেও নেই। ছেলেটাকে কাজের সময় পাওয়া যায় না। এখন কি করবে সে? কিছু একটা না করলে কপালে তার ছেঁ`ড়া লোকটা জুটবে আরু নিশ্চিত। ওমন মানুষের সাথে কেউ থাকতে পারে? আরু তো পারবেই না। সে তো এক জায়গায় বসে থাকার মেয়ে নয়! লোকটা এক্কেবারে কাটখোট্টা! বিড়ালের মতে দুটো চোখ। আর কি মোটা! এহহে, যাচ্ছে’তাই!
আরু তাদের বাড়িটা তিনবার চক্কর কা*টলো। হাতে ফোন। নিশ্চয়ই আশিক তার উপর রাগ করেছে। পুরো তিনঘণ্টা সে অফলাইন ছিলো। রাগ তো করবেই! এদিকে মাথাটাও ঠান্ডা হচ্ছে না কিছুতেই। কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে বুঝতেই পারছে না আরু। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে রুমে এসে ওড়নায় পেঁচালো সেগুলো আরু। তারপর মাথায় দিলো। তখনি আগমন সাঈদের। আরুর ছোট ভাই। সাঈদ বলে উঠলো,
‘আম্মু তোমায় শাড়ি পড়তে বলেছে। নাহলে ঝাড়ু নিয়ে আসবে বলেছে।’
আরু ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সন্দিহান কন্ঠে বললো, ‘শেষের কথাটা তোর না আম্মুর?’
সাঈদ থতমত খেলো। বিরবির করে, ‘আম্মুর।’ বলে ছুটে পালালো।

আরুর তিন বান্ধুবি সহ রাহিল’ হাজির হয়েছে আরুদের বাড়িতে। মহুয়া ফোন করতেই, সবাই চলে এসেছে। আরু সবকটাকে গালি দিলো। আহমেদ সাহেব (আরুর পিতা) বাড়িতে নেই। এই সুযোগে আরু ভেবেছিলো পাগল সেজে দাড়াবে রুদ্র’র সামনে। নাকানি-চু*বানি খাইয়ে ছাড়বে ব্যাটাকে। এখন কি তা আর হবে? এই চারজন তো আরুর বিয়ে খাওয়ার জন্য মুকিয়ে আছে। অগত্যা আরুকে শাড়ি পড়তে হলো। কলাপাতা রঙের শাড়ি। মুখে হালকা প্রসাধনী। সবাই হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠলো। আরুর ভাই বারবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। তার আপু বাড়ি থেকে গেলেই তো তার শান্তি! চারিদিকে বসন্ত মনে হচ্ছে সাঈদের। এদিকে আরু মুখ চুপসে বসে আছে। সে তিন ঘন্টা থাকলে, আশিকও গুনে গুনে তিন ঘন্টা অফলাইনে থাকে। এদিকে যে আরু অন্যকারো হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে ছেলেটার খেয়াল আছে? নেইতো! ঘোর ঘোর লাগছে যেন আরুর।
মহুয়া আবারো ঘরে উঁকি দিয়ে তাড়া দিলেন। একটা মেয়েকে সাজাচ্ছে তিনজন। তা-ও এতো ঢিলেমি? বাইরে রুদ্র সপরিবারে বসে আছে। তারা বারবার আরুকে ডাকছে। আর মেয়েটা? কবে যে একটু আক্কেল-জ্ঞান হবে কে জানে!

রুদ্র আবারো উঁকি দিলো। না! আসার নাম নেই। মেয়েটা মনেহয় আসবেনা পণ করেছে। আচ্ছা, সে’ই বা এতো উতলা কেন হচ্ছে? কতো মেয়েকেই তো তার মা দেখালো, কথা বলালো! কই তাদের বেলায় তো তেমন হয়নি।
রুদ্র’র ভাবনার মাঝেই আরু হাজির। রুদ্র তাকাতেই হার্ট মিস করলো কয়েকবার। থমকে তাকিয়ে রইলো। নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। কিন্তু কেন? শাড়িতে আরুকে দেখে? মেয়েটাকে শাড়িতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে! না চাইতেও চোখ নামিয়ে নিলো রুদ্র। এই রূপসী রমনী তো তার। একান্ত নিজের!
আরু এসেই সালাম দিলো। ইলিমা (রুদ্রর মা) আরুর সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন। আরু বসলো ঠিক রুদ্র’র সামনা-সামনি। লোকটা মাথা নিচু করে আছে। কি অসভ্য ছেলে! তখন কি রাগটাই না দেখালো! আর এখন দেখো- যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেনা। আরুর ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে গলাটা টি`পে দিয়ে বলতে,’ক্যান আসছিস? চইলা যা। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে ব্যাডা।’

ইলিমা কথা প্রিয় মানুষ। তিনি দু’মিনিটে আসর বসানোর ক্ষমতা রাখেন। ঠিক হলো-ও তাই! জমে উঠলো তাদের কথাবার্তা। ইলিমার মেয়েকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। মেয়ে ফেল’ঠুস! এস এস সি তে রেজাল্ট টেনেটুনে পাশ। সেখানে তার ছেলে সব সাবজেক্টে টপ! কিন্তু তবুও, ছেলের পছন্দ’ই তার পছন্দ। ছেলে যখন বলেছে, মেয়ে নিশ্চয়ই ভালো।
আরু রুদ্রদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে মনেমনে। ক’ভাইবোন এরা? সং এর মতো দাড়িয়ে আছে তিনটে মেয়ে। একটা ছেলেও কেমন ড্যাপড্যাপ করে দেখছে তাকে। বাপরে বাপ! এতো বড় ফ্যামিলি? আরু শুনেছে বড় ফ্যামিলিতে অনেক প্যাঁচ থাকে। ননদ গুলো তো ভাইয়ের বউকে একদমি স`হ্য করতে পারে না।
‘আরু শুনছিস কি বলা হচ্ছে তোকে?’

মায়ের কর্কশ গলা শুনতেই ভাবনার সুতো কাটলো আরুর। ইলিমা তার দিকে ড্যাপড্যাপ করে চেয়ে আছে। নিশ্চিয়ই ভাবছে আরু কালা নাকি? কেমন হয় যদি আরু তাদের ভাবনাকে সত্যি বানিয়ে দেয়? বেশ হবে! পরমুহুর্তেই মনে হলো ঘারে কেউ চিম/টি কা*টলো আরুর। আড়চোখে দেখলো তানিয়া ওটা। দীর্ঘশ্বাস ফেললো আরু। বোকার মতো বলে উঠলো,
‘কিছু বলছিলে আম্মু?’
মহুয়ার মেজাজ খারাপ হলো। নিজেকে সামলে শান্ত গলায় তিনি ইলিমাকে বললেন,
‘না না, ওর আবার কি আলাদা কথা বলবে? ও বিয়েতে রাজি।’
আরুর টনক নড়লো। এতোক্ষণ কি তবে তাকে আলাদাভাবে কথা বলতে বলা হচ্ছিলো? তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো আরু,

‘কথা বলবো আমি। আমি ছাঁদে যাচ্ছি।’ এরপর রুদ্র’র দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনিও আসুন।’
আরু উঠে চলে গেলো। রুদ্র হাসলো। এতোটুকুও অবাক হয়নি আরুর আচরণে সে। অবাক হয়েছে বাকি সদস্যরা। চেয়েই আছে। রুদ্র গলা পরিষ্কার করে উঠে দাড়ালো। আরুর পিছুপিছু হাঁটতে লাগলো। ছাঁদে গিয়ে দেখলো রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। রুদ্র গিয়েই গলা পরিষ্কার করে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন আছো?’
আরু তাকালো না লোকটার দিকে। উত্তরে শক্ত গলায় বলে উঠলো,
‘কেন এসেছেন ধেই ধেই করে এখানে? আমি বিবাহিত। আমার উনি আছে।’
‘উনি কে?’
‘বয়ফ্রেন্ড।’

রুদ্র বুকে দামা’মা বে*জে উঠলো। এই মেয়ে যা বললো, সে কি তাই শুনলো? এইটুকু মেয়ের আবার বয়ফ্রেন্ড ও আছে? আর তাকে স্বামীও ধরে নিয়েছে? মাথার রগ দপদপ করে উঠলো রুদ্র’র। চোখের শিরা ক্রমশ লাল হয়ে আসছে তার। জীবনে এই প্রথম কোন মেয়েতে মুগ্ধ হয়েছে সে। অথচ, এ-তো বয়ফ্রেন্ড ও জুটিয়ে বসে আছে। রুদ্র খেয়াল করলো, তার হাত থ’রথ’র করে কাঁপছে!

নিষিদ্ধ অনুভূতি পর্ব ৩+৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here