নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ২৮
ঝিলিক মল্লিক
আজ প্রথমবার আরবিনের ঘরে এসেছে রিদি৷ পরিপাটি, গোছানো ঘর। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, ঘরটা মনের মতো করে সাজানো। আরবিনের পছন্দ আর রুচিবোধ দেখে ভীষণ অবাক হলো রিদি। সাথে উৎফুল্লও। তবে মুখে তা প্রকাশ করলো না।
বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে রিদি। আরবিন ওর পিঠ থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ড্রেসিং করিয়ে দিচ্ছি। আরবিন চেয়েছিল, রিদিকে হসপিটালে নিয়ে যেতে। কিন্তু রিদিই জেদ ধরলো, আঘাত যেহেতু গুরুতর নয়; তাই হসপিটালে সে কোনোমতেই যাবে না। তারচেয়ে বাড়ি ফিরলেই শান্তি। অগত্যা আরবিনের ওকে কোয়ার্টারেই নিয়ে আসতে হলো।
রিদি মুখ চেপে কিছুক্ষণ পরপর ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে৷ আরবিন সেটা টের পাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলছে না। কান্নার মাত্রা যখন বেড়েই চলতে লাগলো, থামাথামির কোনো নাম নেই; তখন আরবিন অধৈর্য হয়ে জোরে একটা ধমক দিলো রিদিকে। তাতে বরং উল্টো প্রতিক্রিয়া হলো। রিদি আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। পিঠে মলম লেপ্টে দিয়ে আরবিন ওর হাতের বাহু ধরে টেনে বসিয়ে দিলো ওকে। রিদি আরবিনের মুখোমুখি বসে চুপ হয়ে গেল হঠাৎ। গলা দিয়ে আর একটা স্বরও বের হলো না। আরবিন ওর হাত চেপে ধরে বললো,
“তোমাকে আমি মে’রেছি?”
রিদি মুখ নুইয়ে চুপ করে থাকে। কোনো জবাব দেয় না৷ আরবিন-ই বলে,
“তাহলে কাঁদছো কেন?”
“নিজের বোকামির জন্য।”
রিদি এবার মুখ খোলে। আরবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“বোকামি নয়। বরং বলো অতিরিক্ত ফালতু জেদের জন্য।”
“স্যরি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
স্যরি বলেই চকিতে মুখ তুলে তাকায় রিদি। তারপর আরবিনের হাতের বাহু আঁকড়ে ধরে বলে,
“এই, আপনি না কিছুক্ষণ আগেও ভালোবেসে কথা বলছিলেন? আবার এখন এভাবে কথা বলছেন কেন?”
“ভালোবেসে? কখন? আমি ভালোবেসে কথা বলতে পারি না রিদি। যদি কিছু বলেও থাকি, তাহলে ভুলে যাও।”
“না, না। ভুলবো কেন? এরপর থেকে যা বলবেন, সব ফোনে রেকর্ড করে রাখবো। পরে পাল্টি খেলে তখন কানের কাছে ধরে রেকর্ডগুলো শোনাবো।”
“আচ্ছা ছাড়ো এখন। আমার কথা শোনো।”
রিদিকে কিছুটা টেনে এগিয়ে নিয়ে কথাটা বলে আরবিন। রিদি ওর চোখে চোখ রেখে সব কথা শোনার জন্য প্রস্তুত হয়। মুখে বলে,
“আপনি যা বলবেন, সব শুনতে রাজি। বলুন।”
“বাহ! সুমতি হলো নাকি?”
“মোটেও না। আমি ভুল করেছি৷ শুধরে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। পারেন না কেন শুধরাতে? শুধু তো বকাঝকা করেন। আর…”
“আর কী?”
“কিছুনা।”
“তুমি জানো রিদি? এই বাশার লোকটা কতটা নোংরা? ওর ছেলেও৷ ওরা আমাদের দেশের জন্য কত ক্ষতিকর জানো?”
“আগে বুঝতে চাইতাম না। আজ বুঝেছি৷ ওরা আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে দিতে চায়।”
আরবিনের আনন্দে চোখ জ্বলে ওঠে হঠাৎ। রিদির কাঁধ চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করে,
“তাহলে তুমি এই দেশের জন্য কিছু ফিল করতে পারছো?”
“পারছি।”
আরবিন রিদিকে টেনে কিছুক্ষণ নিজের সাথে মিশিয়ে রাখে। রিদি নিজে থেকেই তখন বলে,
“ওরা যখন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল, সব ইনফরমেশন বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাচার করে দেবে, পুরো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থ বাজারে ধ্বস নামিয়ে ছাড়বে; তখন জানেন প্রথমবারের মতো আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। তখন আমি ফিল করতে পারলাম, এই দেশটা আমারও। এই দেশের জন্য আমারও চিন্তা হয়।”
“এটুকুই যথেষ্ট। আর কিছু চাই না।”
“আমাকে না?”
“তোমাকে চেয়ে কী হবে?”
“তাহলে?”
“ছেলেমানুষী বাদ দাও।”
“আপনি ওইখানে আমাকে রেসকিউ করার পরে কী যেন বলছিলেন। বলুন না আরেকবার।”
“ভুলে গেছি কি বলেছিলাম।”
“আমি মনে করিয়ে দিই?”
“না থাক।”
“না, মনে করিয়ে দিই। আপনি বলেছিলেন, আমি আপনার দুর্বলতা। এতোটা দুর্বল এর আগে কারো ওপর হননি। যতটা আমার ওপ..”
“চুপ করো।”
আরবিন রিদির মুখ চেপে ধরে থামিয়ে দেয়। রিদি অভিমানী দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আরবিনের দিকে৷ তখন আরবিন ধীরে ধীরে ওর চোখে চোখ রাখে দৃঢ়ভাবে৷ তারপর বলে,
“কিছু কথা বলি। শুনবে?”
“বলুন।”
“তোমার সাথে আমি কখনোই থাকতে চাইনি রিদি। তোমাকে আমার সাথে জড়াতেও চাইনি। কারণটা বহুমুখী। তোমার সাথে আমার মতের মিল নেই৷ তা-ও একটা গুরুতর বিষয় নিয়ে। তুমি অনেককিছুই বুঝতে পারো না, তোমাকে চাইলেও বোঝানো যায় না। মোস্ট ইম্পরট্যান্ট টপিক হচ্ছে, তুমি প্রচন্ড আমার প্রফেশনের বিরোধী। তোমাকে আমার বিরুদ্ধে, আমার কাজের বিরুদ্ধে অনেকে উসকে দিতে পারতো। এতে তোমার-আমার দু’জনেরই ক্ষতি। লাস্ট টাইম আমাদের ওপর হামলা হওয়ার পরেই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার আশংকা বেড়ে গিয়েছিল। এজন্য তোমাকে একটা জঘন্যতম শাস্তি দিয়ে দূরে সরাতে চেয়েছিলাম সারাজীবনের জন্য। যদিও সেটা আমার ভুল। জানিনা তোমার কাছে আসলে কি হয়! শাস্তিটা অন্যভাবেও দিতে পারতাম। কিন্তু! সে যাক। বাশার আর ওর লোকজন ফলো করছিল আমাদের। কন্টিনিউসলি। পিছু ছাড়েনি। তারপর তোমাকে ফাঁদে ফেললো এভাবে। আর তুমিও রাগ-জেদ দেখাতে গিয়ে ফাঁদে পা দিয়ে ফেললে। আজ সামান্য কয়েক মুহূর্তের জন্য বেঁচে গেল। আমি না আসলে কী হতো?”
“মরে যেতাম। বেঁচে থাকার আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। আপনি প্রতিনিয়ত আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। কেন করেছেন এরকম? কেন? কেন?”
রিদি আরবিনের শার্টের কলাপ চেপে ধরে কাঁধ ঝাঁকিয়ে প্রশ্নটা করে। ওর চোখের কোণে অশ্রুকণা জমেছে। আরবিন তা খেয়াল করে দেখে। তারপর হঠাৎ চোয়াল শক্ত করে বলে,
“আমি তোমাকে নিঃশেষ করিনি রিদি। তুমি নিজেই নিজেকে ধ্বংস করেছো। পারলে আমাকেও ধ্বংস করে দিতে। এজন্য আমি নিজেকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। আগে যা কিছু হয়েছে, ভুলে গেছি।”
রিদি আরবিনের কথাটা শুনে মাথা তুলে তাকায়। এতোটা পাষাণ! দুই হাত দূরে ছিটকে সরে যায় রিদি। আরবিন ওকে ধরতে গেলেই ও হাত উঠিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না, না। ছোবেন না আমাকে। ঘৃণা লাগছে আমার।”
তারপর-ই হঠাৎ হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করে রিদি। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আপনি এতো যন্ত্রণা না দিয়ে বরং একবারেই মে’রে ফেলুন না আমাকে। না, না! আপনি তো আমাকে বহু আগেই মে’রে ফেলেছেন। বিয়ের প্রথম যেদিন কাছে এসেছিলেন, সেদিন। ওইদিনের পর থেকে আমি আর নিজের মধ্যে থাকি না। আপনি আমাকে থাকতে দেন না। এমন কেন আপনি?”
“আমি এমন-ই রিদি। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। তুমি নিজেই উটকো একেকটা চিন্তা-ভাবনা করে কষ্ট পাও। এটা তোমার প্রবলেম।”
“আমি আপনার সঙ্গে থাকবো না। আর এক মুহূর্তও না!”
“অ্যাজ ইওর উইশ।”
রিদি হঠাৎ কান্না বন্ধ করে হাঁটু থেকে মুখ উঠালো। বিস্ময়ে, ক্ষুব্ধ চাহনিতে মিনিট খানেক দেখলো আরবিনকে। আরবিন বেপরোয়াভাবে বিছানার ওপর আধশোয়া হয়ে দেখছে রিদিকে। রিদি বিছানা থেকে নামলো দ্রুত। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল ঠিকঠাক করে নিজেকে পরিপাটি করে নিলো। চোখের নোনাপানি মুছে নিলো। তারপর আরবিনকে একবার শক্ত চাহনিতে দেখে দরজার বাইরের দিকে পা বাড়াতেই আরবিন কিছুটা রাশভারী গলায় বলে উঠলো,
“যাবে আর কোথায়! দিনশেষে তো আমার কাছেই ফিরতে হবে।”
রিদি থমকে দাঁড়ালো হঠাৎ। ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড়ে এসে আরবিনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর শার্ট, চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে লাগলো পারলে। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“আপনি মে’রে ফেলুন আমাকে। দুই হাতে গলা চেপে ধরে মে’রে ফেলুন। এতো যন্ত্রণা দিয়ে প্রতিদিন না মে’রে একবারে মে’রে ফেলুন তাতে বরং বেঁচে যাই।”
“মরা কী এতো সোজা? মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে দেখেছো? যে মৃত্যু স্বচক্ষে দেখে ফিরে এসেছে, সে সহজে মরতে চায় না।”
“এতো শক্ত কথা বলবেন না আমাকে। এসব আমার মাথায় ঢোকে না।”
“তাহলে কী বলবো?”
“ভালোবেসে কথা বলুন। ওই যেমন রেসকিউ করার পরে বলছিলেন।”
“তোমাকে আমি একটা শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম রিদি। কিন্তু এখন দেখছি, তুমিই কন্টিনিউসলি আমাকে পাল্টা শাস্তি দেওয়ার প্ল্যানিং করে চলেছো।”
“সেটা কীভাবে?”
বোকার মতো প্রশ্ন করে রিদি। আরবিন ফিচেল হেসে ওর নাকে আঙুল দিয়ে আলতো করে একটা টোকা দিয়ে বলে,
“এইযে এতো বেশি কান্নাকাটি করো। তোমার এই কান্নাকাটি আমার সহ্য হয় না। মাথা যন্ত্রণা করে।”
রিদি আর কান্নাকাটি করলো না। চুপ করে গেল। আরবিনের বুকে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে পড়ে রইলো৷ আরবিন এবার ওর পিঠ আঁকড়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,
“ভেবে দেখলাম বুঝলে।”
“কী?”
“তোমাকে ছাড়া যাবে না। আমার জীবনে বিনোদনের বড্ড অভাব। তোমার এই রাগ-জেদ দেখানো, কান্নাকাটি — এসবে আমি দারুণ বিনোদন পাই৷ মিস করি কীভাবে বলো তো? তাছাড়াও তুমি যে পাগল-ছাগল। ছেড়ে দিলে কার খপ্পড়ে যেয়ে পড়ো, তার ঠিক নেই। আমি ছাড়া আর কেউ তোমাকে হ্যান্ডেল করতে পারবে বলেও মনে হয় না৷”
রিদি আরবিনের বুকে একটা ঘুষি মারলো বেশ জোরে৷ আরবিন এবার শব্দ করে হেসে ওঠে। তারপর বলে,
“তাছাড়াও, যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে তোমার। দেশকে চিনতে শিখেছো, দেশের কথা ভাবছো। এটুকুই চেয়েছিলাম আমি।”
“আমাকে চাননি?”
“উমম…ভাবছি।”
“কী ভাবছেন?”
“বলতে পারছি না এখন।”
“বলুন না।”
“বলার মতো তেমন কিছু নয়।”
“আচ্ছা বলতে হবে না। ওইখানে জড়িয়ে ধরে যা বলেছিলেন, তাই বলুন আবার।”
“কী বলেছিলাম? ভুলে গেছি।”
রিদি আরবিনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বসলো। আরবিন বাঁধা দিলো না। রিদি কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললো,
“আমি এই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা ফিরবো। আব্বুকে আজ-ই কল করে বলবো, আমাকে নিয়ে যেতে।”
“একেবারে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা?”
“হুঁ, ভাবছি।”
“ছেড়ে থাকতে পারবে?”
“আলবাৎ পারবো।”
“তোমার পড়াশোনা?”
“উদ্ভাসের কার্ড আছে না? ঢাকা ফিরে ঢাকার ব্রাঞ্চে কার্ড দেখালেই ক্লাস করতে পারবো। ওতে কোনো অসুবিধা নেই।”
“ফ্যামিলিকে কী বোঝাবে?”
“ভেবেছি একটা কথা। এতোদিন যে কেন মাথায় আসেনি! আসলে আরো আগে চলে যেতাম।”
“কী বলবে?”
“আপনাকে বলতে বাধ্য নই। শুধু জেনে রাখুন, আমি আপনার সাথে থাকছি না।”
“কারণ?”
“আপনার মতো মানুষের সাথে থাকা যায় না।”
“ওহহ তাই নাকি! জানতাম না তো।”
“আপনি কিছু জানেন না।”
“আসলেই জানি না। তুমি সর্বজান্তা।”
“আপনাকে আমি খু’ ন করে ফেলবো। মেরে ফেলবো একদম।”
আরবিনের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে রিদি। আরবিন কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর স্বরে বলে,
“হাত সরাও। শার্টের কলার চেপে ধরে ফাতরামি করা আমি পছন্দ করি না।”
আরবিনের ওই চাহনি সবসময় ভয় পায় রিদি। বিনাবাক্যে হাত সরিয়ে নেয় ও। আরবিন এবার উঠে বসে। রিদির দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় টেনে নিয়ে বলে,
“আমি সবকিছু প্রকাশ করতে পারি না রিদি। এটা আমার ব্যর্থতা। তোমাকে কষ্ট দেওয়া আমার ইন্টেনশন নয়।”
“তাহলে কী?”
“জানি না। তবে এতটুকু জেনে রাখো, তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। আমার পারমিশন ছাড়া এখান থেকে এক পা-ও নড়াবে না।”
“যাবো তো আমি অবশ্যই। আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।”
“বাধ্য।”
“কেন?”
“কারণ তুমি আমার..”
আরবিন পুরো কথাটা শেষ করতে পারে না। তার আগেই ওর ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। আবদুল মুহিত স্যার কল দিয়েছেন। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবদুল মুহিত স্যার বলে উঠলেন,
“তুমি এখন কোথায় আছো আরবিন?”
“স্যার কোয়ার্টারে এসেছি।”
“ডিউটি টাইম চলছে তোমার। দ্রুত ক্যান্টনমেন্টে আসো।”
“স্যার ফিফটিন মিনিটস টাইম দেন। ওয়াইফের সাথে আছি।”
“না, না! পাঁচ মিনিট সময়ও দেওয়া যাবে না। দ্রুত আসো। মিটিং ডেকেছি।”
আরবিন এবার রিদিকে সরিয়ে ঘুরে কিছুটা চাপা স্বরে ফোনে বললো,
“আপনার বউ রাগ করে বাচ্চাকাচ্চা সমেত বাপের বাড়িতে চলে গেছে বুঝলাম। এখন আপনি কী চাইছেন আপনার অফিসাররাও বউহারা হোক?”
আবদুল মুহিত ফোনের ওপাশ থেকে হোহো করে হেসে উঠলেন। যেন কতবড় রসিকতা করে ফেলেছে আরবিন। তার হাসি শুনে বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেললো আরবিন। রসিকতা মোটেই করেনি ও। বরং খুবই সিরিয়াস ভাবে কথাটা বলেছে৷ আবদুল মুহিত এবার বললেন,
“বউ গেলে বউ আসবে কত। ওসব ছাড়ো এখন৷ ডিউটিতে আসো৷ পরে বরং ফিরে দু’টো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, সব ভুলে যাবে।”
আরবিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে “আসছি” বলে কল কাটলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে এলোমেলো ড্রেস ঠিক করে নিতে লাগলো। রিদি শাড়ির আঁচল উঠিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ প্রশ্ন করলো,
“কোথায় যাচ্ছেন এখন?”
“ক্যান্টনমেন্টে।”
“ওহহ।”
রিদি কিছু একটা শোনার আশায় দাঁড়িয়ে ছিল৷ আরবিন কোনো কথা বললো না। রিদি ওকে জিজ্ঞাসা করলো,
“তাহলে আমি বাপের বাড়িতে যাচ্ছি। ডিসিশন ফাইনাল।”
“বাপের বাড়িতে কী মধু আছে? ওসব বাপের বাড়ির ভূত ছাড়ো। পড়াশোনায় মন দাও। হুট করে ওয়েদার চেঞ্জ করলে শেষে ঝামেলায় পরবে।”
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ২৭
“পড়বো, মরবো, সব হউক। তা-ও আমি আপনার সাথে থাকবো না। ন এ আকারে না।”
রিদি কোমরে দুই হাত রেখে মূলত ঝগড়া করার জন্য-ই দাঁড়িয়েছে। আরবিন কিছু বললো না। পাল্টা জবাবও দিলো না। কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত চাহনিতে রিদিকে সম্পূর্ণ অবলোকন করলো। তারপর দুই হাত নিজের প্যান্টের পকেটে রেখে রিদির ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেল। ঘটনার আকস্মিকতায় শিউরে উঠলো রিদি৷ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরবিন দ্রুত বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
“আজ রান্নাটা তুমি কোরো। ফ্রিজে দেখো মাংস আছে আর কিছু মাছ। যা মন চায়, রান্না কোরো। আর ঝাল কম দিও। বেশি ঝাল আমি খেতে পারি না কিন্তু।”