নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩১
ঝিলিক মল্লিক
রিদি পা টিপে টিপে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো৷ তানহা সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছিল। রিদি ইশারায় হালকা শব্দ করে ডাকলো ওকে। তানহা যেন রিদির-ই অপেক্ষায় ছিল। চকিতে মুখ তুলে তাকালো ও। রিদির সতর্ক দৃষ্টি। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো তানহা। একবার ওদের থাকার ঘরটার দিকে উঁকি দিলো। ঘরের দরজা অর্ধেক ভেজিয়ে রাখা। ভেতরের পরিবেশ অল্পস্বল্প দেখা যায়। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এবার উঠে গিয়ে ধীরেপায়ে হেঁটে রিদির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তানহা। তারপর ওর কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
“ভাইয়া এখন মামির সাথে গল্প করছে। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে গল্প-আড্ডা অনেকটা সময় ধরে চলবে। তুমি বরং এই সুযোগে কাজটা সেরে ফেলো।”
“তা তো করবো। কিন্তু আবার ভয়ও লাগছে।”
“কীসের ভয়?”
“উনি যদি একবার হাতেনাতে ধরে ফেলে, তাহলে আজকে আমাকে তুলে একটা আছাড় মারবে শিওর। ওয়ার্নিংও দেবে না। মাফ-টাফ চাওয়ার সুযোগ তো মোটেও নয়।”
“আরে বোকা! তুমি কী কোনো অপরাধ করছো নাকি?”
“না তো।”
“খু’ ন-খারাবি করছো?”
“মোটেও না।”
“চুরি-ডাকাতি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ওভাবে বোলো না প্লিজ। চুরি না হোক, একপ্রকার ডাকাতি-ই তো করছি তাইনা? একজনের ফোন না বলে ধরবো, উল্টাপাল্টা কাজ করবো তা নিয়ে; এ-তো নির্ঘাত ডাকাতির শামিল!”
“এই অন্য কেউ একজন কে হয় তোমার?”
রিদি একটু হতভম্ব হলো তানহার কথায়। তারপর ভাবনায় পড়লো। কিছুক্ষণ বাদে জবাব দিলো,
“আমার স্বামী হয়। এ আর বলার কী আছে?”
“বলার মতোই কথা। যার ফোন নেবে, সেই ব্যক্তি তোমার স্বামী। তার সবকিছুর ওপর তোমার হক থাকবে। আমি তো আমার জামাইয়ের ফোনের লক থেকে শুরু করে সবকিছুর পাসওয়ার্ড জানি। তার ফোন যেকোনো সময়ে হাতে ধরতে পারি। তোমাকেও পারতে হবে। নাহলে এই সম্পর্ক এগোবে কীভাবে বলো?”
তানহা রিদির কাঁধে হাত রেখে সাহস দিলো ওকে। এবার মনে মোটামুটি জোর পেল রিদি৷ তানহা আস্তে জিজ্ঞাসা করলো,
“ফোনের লক জানা আছে তোমার?”
“আজকেই জেনেছি৷ উনি যখন ফোনের লক খুলছিলেন, তখন পেছন থেকে দেখেছিলাম।”
“আচ্ছা, তাহলে তুমি ঘরে যাও৷ আমি এই সামনের সোফায় বসে আছি। দরজা আটকিও না আবার৷ ভাইয়া ওঘর থেকে বের হলেই আমি তোমাকে ইশারা করলে তুমি ফোন রেখে দেবে।”
“আচ্ছা।”
তানহা সরে এসে সোফায় বসলো। রিদি সময় নষ্ট না করে দ্রুত ঘরের ভেতরে গেলো। আরবিনের ফোনটা বিছানার এককোণে রাখা ছিল৷ বিছানার ওপর বসে ফোনটা হাতে তুলে নিলো রিদি। লক খুলে সোজা ফেসবুকে ঢুকলো। আরবিনের আইডির টাইমলাইনে গিয়ে সিঙ্গেল স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে ম্যারিড স্ট্যাটাস দিয়ে দিলো, সাথে নিজের আইডিও ট্যাগ করলো৷ সেখান থেকে বেরিয়ে মেসেঞ্জারে গেল রিদি। আরবিনের মেসেঞ্জারে সব সিনিয়র-জুনিয়র অফিসারদের কনভারসেশন দেখতে দেখতে যখন প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছে, তখন নিচের দিকে একটা আইডির কনভারসেশনে গিয়ে চোখ আটকালো রিদির। ফারিয়া জাহান নামক আইডিটা থেকে মেসেজ করা হয়েছিল প্রায় চার দিন আগে। মেসেজটা এমন—
“স্যার, ক্যান উই গো অন এ কফি ডেইট?”
মেসেজটা সিন করা হয়নি। মানে তিনদিন যাবত আনসিন অবস্থায়-ই ছিল মেসেজটা। রিদির তখন মাথা কাজ করছিল না। ও কনভারসেশনের ওপরের দিকের মেসেজগুলো পড়তে লাগলো। আরবিনের সাথে মাঝেমধ্যে কয়েকদিন পরপর কথা হয়েছে মেয়েটার। আরবিন ফর্মাল কথাবার্তা বললেও মেয়েটা বিভিন্ন সময়ে নানানভাবে নানান ধরনের কথাবার্তা বলেছে। যা কেউ একটু সময় নিয়ে ভাবলেই ধরতে পারবে। মেয়েটার মেসেজগুলো দেখেই রাগ উঠছিল রিদির। তখনই ফোনের ওপরে নোটিফিকেশন ভেসে উঠলো। মেসেজ এসেছে একটা৷ ফারিয়ার মেসেজ। রিদি আবারও কনভারসেশনের নিচের দিকে এসে মাত্র ফারিয়ার পাঠানো মেসেজটা দেখলো। ফারিয়া লিখেছে,
“স্যার, আপনি ম্যারিড?”
মেসেজটা লেখার পরে আবার একটা বিস্ময়সূচক চিহ্ন। তা দেখে রিদির মেজাজ আরো বেশি বিগড়ে গেল। রিদি আরবিন হিসেবেই লিখলো,
“হ্যাঁ তো?”
“না, মানে আপনি তো কখনো আমাদের জানাননি যে, আপনি ম্যারিড!”
মেসেজটা দেখে কিছুক্ষণ থমকে, হতভম্ব হয়ে বসে রইলো রিদি। মাথা যন্ত্রণা করছে ওর। প্রচন্ড পরিমাণে। এতোদিন ভেবেছিল, আরবিন বোধহয় অফিসে সবাইকে জানিয়েছে, ও ম্যারিড। কিন্তু আজ রিদি বুঝলো, ওর জানায় ভুল। অনেককিছুই ওর জানাশোনার বাইরে। নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজের ওপরই রাগ উঠলো রিদির। জেদের বশে প্রচন্ড কান্না আসছে ওর। মন চাইছে, চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু ফ্ল্যাটে লোক সমাগমের উপস্থিতি থাকায় রিদি কাঁদতেও পারছে না মন খুলে। রিদি ফারিয়ার পরবর্তী মেসেজের কোনো জবাব দিলো না। বরং সোজা ওকে মেসেঞ্জার, ফেসবুক থেকে ব্লক দিলো। তারপর হোয়াটসঅ্যাপ থেকে।
আবারও ফেসবুকে ঢুকে নোটিফিকেশন চেক করতেই দেখতে পেল, আরবিনের ম্যারিড স্ট্যাটাসের বারো মিনিটের মধ্যে আটাশি রিয়্যাক্ট এসেছে। কমেন্ট করা হয়েছে ছত্রিশটা। সব কলিগ, সিনিয়র-জুনিয়র অফিসারদের কমেন্ট। সবাই কংগ্রাচুলেশনস জানিয়েছে। রিয়্যাক্ট চেক করলো রিদি। বেশিরভাগ লাভ আর কেয়ার রিয়্যাক্ট। তারমধ্যে ওয়াও রিয়্যাক্ট সাতটা। সেগুলো চেক করে দেখলো, সবগুলো ওয়াও রিয়্যাক্ট-ই মেয়েদের দেওয়া। বিয়ের কথা জেনে কত আশ্চর্য হয়েছে ভাবো! রিদি ধরে ধরে সবকটা মেয়েকে ব্লক দিলো। মেয়েগুলো আরবিনের ফ্রেন্ডলিস্টের নয়। সম্ভবত ফলো করতো, নাহলে আইডি স্টক করতো সবসময়। সব কাজ শেষ করে আরবিনের ফোনটা আগে যেখানে ছিল, এবার সেখানেই ছুঁড়ে ফেললো রিদি। তারপর একটা বালিশ টেনে পিঠের নিচে রেখে তাতে হেলান দিয়ে হাঁটুতে মাথা রেখে মুখ চেপে ধরে বসে রইলো।
মায়ের সাথে গল্প শেষ করে মাত্র সে-ঘর থেকে বের হয়েছে আরবিন। ড্রয়িংরুমের দেয়ালঘড়িতে একবার সময় দেখে নিলো। রাত বেশ হয়েছে। বারোটার ওপরে ঘড়ির কাটা। আম্মাকে ঘুম পাড়িয়েই এসেছে আরবিন। ড্রয়িংরুমের সোফায় তানহাকে প্রায় অর্ধ ঘুমন্ত দেখে বেশ জোরে ডাক দিলো আরবিন। তানহা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। তারপর একবার পাশের ঘরের দিকে আড়চোখে চেয়ে দেখে শোবার জন্য ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
ঘরে ঢুকতেই হালকা কান্নার সুরে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরবিন। ঘরের আলো সবগুলো নেভানো। অন্যদিন তো এমন থাকে না পরিবেশ। আজ কি হলো! আরবিনের মনে প্রশ্নটা আসলো। উত্তর দিকের একটা বাতি জ্বালালো ও। হালকা আলো হয়েছে। খুব বেশি আলোর প্রয়োজন অবশ্য নেই এতো রাতে। রিদিকে বিছানার ওপর দেখা গেল হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে কাঁদছে। আরবিন কৌতূহলী হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল ওর দিকে।
“রিদি? কী হয়েছে?”
রিদির কাঁধ ধরে আলতোভাবে ডাকতেই ছিটকে আরবিনের হাত টান মে’রে সরিয়ে দিলো রিদি। তারপর মুখ তুলে তাকালো। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মোটামুটি ভড়কে গেল আরবিন। চোখ-মুখের একি অবস্থা! কেঁদেকেটে চোখ-নাক-মুখ লাল হয়ে গেছে। ঠোঁট শুষ্ক অবস্থা। চুল এলোমেলো। রীতিমতো বিধ্বস্ত অবস্থা। আরবিন কিছু একটা বুঝলো। দ্রুত এগিয়ে এসে রিদির সামনে বসলো৷ ওর কাঁধে দুই হাত রেখে মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কান্নাকাটি করেছো কেন?”
“দূরে সরুন।”
“বুঝলাম না! দূরে সরতে হবে কেন? নরমাল একটা প্রশ্ন করেছি। অ্যান্সার করবে, ব্যস! এভাবে কথা বলছো কেন?”
“আপনি ম্যারিড, একথা কেউ জানে না?”
আচনক এমন প্রশ্নে রিদির দিকে সরু চোখে তাকালো আরবিন। রিদি ওর দিকে ক্ষুব্ধ চাহনিতে চেয়ে আছে। পারলে চোখ দিয়ে আগুন ঝড়িয়ে ওকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। আরবিন আন্দাজ করতে পারলো যেন। দ্রুত বালিশ সরিয়ে বিছানার ওপাশ থেকে নিজের ফোনটা হাতড়ে তুলে নিলো হাতে৷ রিদি তখনও একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে আরবিনের দিকে৷ আরবিন একবার ওকে দেখে ফোনের লক খুলে সোজা ফেসবুকে গেল। আইডির টাইমলাইন ঘুরেই হতবিহ্বল হয়ে কিছুক্ষণ ফোন হাতে ধরে বসে থাকলো আরবিন। রিদিকে প্রশ্ন করলো,
“অনুমতি না নিয়ে ফোন ধরেছিলে কেন তুমি?”
“অনুমতি নিতে হবে কেন? আমি আপনার ওয়াইফ। আপনার ফোন মানে আমার ফোন। এতে আবার অনুমতি নেওয়ার কী আছে? কেন? ফোন ধরায় খুব সমস্যা হয়ে গেল বুঝি? ম্যারিড স্ট্যাটাস দিয়েছি দেখে সহ্য হচ্ছে না।”
আরবিনকে একপ্রকার চেপে ধরলো রিদি। আরবিন ওর শার্টের কলার থেকে রিদির হাতদুটো টেনে সরিয়ে দিলো৷ চোখ বুঁজে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করলো, মাথা ঠান্ডা রাখার যথাযথ চেষ্টা করলো। তারপর সোজা হয়ে বসে রিদির হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো,
“না, কোনো অসুবিধা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সামান্য একটা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস তোমার আর আমার সম্পর্কের মানদন্ড নির্ধারণ করে দেবে না। এক ঘরে, একই ছাঁদের নিচে আমরা কেমন আছি— সেটা হচ্ছে মেইন পয়েন্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিলেই আমাদের মধ্যে ভালোবাসাবাসিও হয়ে যাচ্ছে না, কিংবা মনোমালিন্য। তাহলে এসব বিষয়কে অহেতুক এতো গুরুত্ব দিচ্ছো কেন রিদি?”
আরবিন প্রশ্নটা করে রিদির দিকে তাকিয়ে থাকে। রিদি কোনো জবাব দেয় না৷ আরবিন আবারও বলে,
“ফারিয়াকে ব্লক দিয়েছো কেন?”
“ইচ্ছা হয়েছে তাই।”
“সবকিছু তোমার ইচ্ছার ওপর ডিপেন্ড করে চলবে না। ও আমার জুনিয়র অফিসার। হ্যাঁ, একটু বেতালা। আমাকে পছন্দ করে, বুঝতে পারি। যতটুকু সম্ভব এড়িয়েও চলি৷ তাই বলে ব্লক দিয়ে সরাসরি অপমান করার মতো কোনো গুরুতর ঘটনা দেখছি না। প্রফেশনাল লাইফে আমার একটা ইমেজ আছে। সবাই সেখানে আমাকে সম্মান করে চলে। আমার প্রফেশনাল লাইফ ঘাঁটার চেষ্টা করবে না কখনো। এটা ফার্স্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং। মনে থাকবে?”
প্রথম দিকে নরম সুরে কথা বললেও শেষের কথাগুলো একটু গম্ভীর আর কঠোর গলায়ই বললো আরবিন। রিদি এবার মুখ খুললো। আরবিনের শার্টের কলার আলতো হাতে চেপে ধরে বললো,
“আপনার আইডি পাবলিক করা কেন? আপনার আইডিতে অতো মেয়েমানুষ কী করে?”
“উফফ! তোমাকে নিয়ে আর পারি না। কতবার বলেছি? কলারে হাত দেবে না। তবু বারবার একই দুঃসাহস দেখিয়ে চলেছো!”
“আমার সাহস বেশি। তাই দেখাচ্ছি। কোনো সমস্যা?”
“হ্যাঁ সমস্যা। শার্টের কলার থেকে হাত সরাও।”
“আগে আমার প্রশ্নের জবাব দেন।”
“ওকেহ। আমার আইডিতে অপরিচিত কোনো মেয়েমানুষ নেই৷ যে কয়জন আছে, তারা সবাই পরিচিত আর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেই। আর এর বাইরে যদি কোনো মেয়ে দেখেও থাকো, তাদেরকে আমি চিনি না।”
“আপনি প্রোফাইল লক করবেন আজকেই।”
“আমার সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করার এজ প্রায় বারো বছরের মতো। আজ পর্যন্ত কখনো একাজ করিনি। ভবিষ্যতে কোনোদিন করবো বলেও মনে হয় না। সো, এরপর থেকে এধরনের উল্টোপাল্টা আবদার আর কখনো করবে না।”
রিদি আরবিনের কথা বুঝলো কিনা কে জানে! কলার ছেড়ে উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলো ও। আরবিন এবার ওর একহাত টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
“অতীতের কথা বাদ। বর্তমানে আমার জীবনে তুমি ছাড়া অন্য কোনো নারী নেই। একথা আমার তোমাকে বারবার বলে বুঝাতে হবে?”
রিদি তবু ঘুরে তাকালো না। আরবিন এবার এগিয়ে গিয়ে ওর কাছ ঘেঁষে বসলো। রিদি চকিতে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো আরবিনের মুখপানে। তারপর আস্তে-ধীরে প্রশ্ন করলো,
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন না কেন?”
“ভালোবাসার কথা আমি মুখে বলতে পারি না রিদি৷ কখনো বলা হয়নি কাউকে।”
“আমাকে বলুন তাহলে।”
আরবিন হাসলো রিদির কথা শুনে৷ ওর ওই নির্মল হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো রিদি। ধীরে ধীরে হাত উঠিয়ে আঙুল ছুঁয়ে দিলো আরবিনের ঠোঁটে। তারপর জিজ্ঞাসা করলো,
“তাহলে কী আপনি আমাকে ভালোবাসেন না?”
“জানি না তো।”
“তাহলে আছেন কেন আমার সাথে?”
“কারণ, তোমাকে ছাড়লে আমার জীবনটা নিরামিষ হয়ে যাবে। ফ্রি-তে এতো এতো বিনোদন মিস হয়ে যাবে প্রতিদিন।”
রিদি আরবিনের বুকে ঘুষি মারলো আলতো করে। তারপর হঠাৎ আরবিনের বুকে লেপ্টে গিয়ে ওর হাতের বাহু চেপে ধরে বললো,
“একটু ভালোবাসুন না আমাকে।”
“উহুঁ।”
মাথা নাড়ালো আরবিন। রিদি আকুতি করে বললো,
“একটু ভালোবাসলে কী হয়?”
“অনেককিছুই হয়।”
“তাতে অসুবিধা কী?”
“অনেক অসুবিধা। সামনে তোমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসব মোহ-মায়াজালে আঁটকে নিজেকে ডুবিও না।”
“আমি ডুবতে চাই। সাঁতার জানি না। তবু অসুবিধা নেই। ডুবে গেলে মরে যাবো। তাতে কী?”
রিদি শুনলো না আরবিনের নিষেধাজ্ঞা আর সতর্ক বাণী। বরং আরো কাছ ঘেঁষে বসলো ওর। আরবিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে। রিদিকে জড়িয়ে ধরলো না ও। বরং নিজের হাতদুটো পেছনে সরিয়ে চাঁদর চেপে ধরে রাখলো। তারপর আবার কঠোর গলায় বললো,
“সামনে তোমার অ্যাডমিশন এক্সাম। নিজের সর্বনাশ কোরো না রিদি।”
“হোক সর্বনাশ। আমি চাইছি, হোক।”
“কিন্তু আমি চাইছি না।”
রিদি এবার আরবিনের বুকে মুখ লুকিয়েই কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“আপনি আমাকে আসলেই ভালোবাসেন না। বাপেরবাড়ি চলে যাবো আমি। থাকবো না আপনার কাছে।”
“উহহ! কি শুরু করলে? কান্না থামাও।”
“তাহলে একটু ভালোবাসুন।”
“না।”
আরবিনের কাটকাট জবাব। রিদি এবার ওর বুক থেকে মুখ উঠিয়ে আরবিনের গলায় একটা আঙুল রেখে আকিঁবুকিঁ করতে করতে আকুতি সুরে অনুরোধ করলো,
“একটু বাসুন না।”
“না।”
আরবিন ওকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু রিদি আরবিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলো৷ আরবিন এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিদির পিঠে আঁকড়ে ধরলো। গলা হতে চুল সরিয়ে দিতে দিতে বললো,
“ওকেহ। একটু বাসলাম। বেশি না কিন্তু। এরপর উঠে ভোরে পড়তে বসবে। বুঝেছো?”
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৩০
রিদি মাথা নেড়ে সায় দিলো। হ্যাঁ বুঝেছে সে। এখন এই ভালোবাসায় সে দুনিয়া ভুলতে বসবে। কিছু মনে থাকবে না। আরবিন ওকে আরো কাছে টেনে নিলো৷ রিদির আবদার রাখতে আজ ওকে খুব ভালোবেসে আদর করলো। নিজের নিয়ন্ত্রণের বাঁধ ভাঙলো ইচ্ছাকৃত-ই। তবু মুখে একবারও বললো না, “ভালোবাসি!”