নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৯

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৯
ঝিলিক মল্লিক

বাসাভর্তি মেহমান। বেশিরভাগ সবাই পরিচিত আত্মীয়-স্বজন। তবুও রিদির অস্বস্তি কমার বদলে বরং বেড়েই চলেছে। বুকের মাঝে দুরুদুরু কম্পন, যেন যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে সানন্দে ওকে গ্রাস করে নিচ্ছে পুরোপুরি।
শুক্রবার দিনটা এতো দ্রুত আসতে হলো! মাঝখানের দু’টো দিন যেন চোখের পলকে কেটে গেছে। কেনাকাটা, তাবেদারি করতে করতেই সময় চলর গেল। রিদি শুধু মুখ বুঁজে, চুপচাপ দেখেছে। ঘরোয়া ভাবে বিয়েতেও কি এলাহি আয়োজন ওর আব্বা-আম্মার! কোনোকিছুর কমতি নেই। কাকিমণি গত দু’দিন যাবত এখানেই আছেন তার দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। রিদির বিয়ের পাট চুকিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবেন। বাড়ি বলতে অবশ্য তার নিজের বাড়িও নয়। ভাড়া বাসা নিয়ে থাকছেন আপাতত। মৃত স্বামী এজহারের জমিতে দালান তুলছেন। যতদিন না নির্মাণকাজ শেষ হবে, ততোদিন ভাড়া বাড়িতেই থাকবেন। রিদির আব্বু, এমনকি হালিমা খাতুনের মায়ের বাড়ির আত্মীয়রা তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল, তবে তিনি তাতে মোটেই রাজি নন।

রিদির হাতে গতকাল মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছিল জামিয়া। রিদি নিজেও লাগাতে পারতো। কিন্তু ওর থেকে দুই বছরের ছোট বোনটি গত দু’দিনে ওকে খুব একটা নড়তে-চড়তে দেয়নি। ননীর পুতুল বানিয়ে রেখেছে। বড়বোনের বিয়েতে তার জন্য কি দারুণ খেয়াল জামিয়ার! রিদি রীতিমতো অবাক হয়। বাচ্চা মেয়েটার কত খেয়াল তার প্রতি! অবশ্য সে হালিমা খাতুনের মেয়ে। তার-ই স্বভাব পেয়েছে বৈকি। তিতাসও সেরকম। আত্মীয়দের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব, ভদ্রতা সব দিক থেকে সমানে সমান দারুণ শিক্ষা পেয়েছে তারা তাদের মায়ের কাছ থেকে।
ঘড়ির কাটা সকাল দশটার ঘর পেরিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। রিদি বসেছিল বিছানার ওপরে। জামিয়া ওর চুলের বেণী খুলে দিচ্ছে। রিদির সাথেই ঘুমিয়েছে ও গতকাল রাতে। রিদিকে দু’টো দিন চুপচাপ দেখে ও চুপ হয়ে আছে। অন্য সময় দু’জনে একসাথে হলেই হাসি-মজায় আড্ডা জমিয়ে তোলে৷ তবে রিদির ভাবগতিকে মনে হচ্ছে না, এখন তা হওয়ার নয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জামিয়া রিদির মুখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“বিয়ের সময় হলেই মেয়েরা চুপচাপ হয়ে যায়, তাইনা আপু?”
“হুঁ?”
রিদি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় জামিয়ার দিকে। জামিয়া বলে,
“তুমি তো এমন চুপচাপ ছিলে না। হঠাৎ কী হয়েছে তোমার?”
“কিছুই হয়নি রে সোনা। শরীরটা খারাপ যাচ্ছে মনে হয়। এমনিতেও কেমন যেন লাগছে। হঠাৎ করে এতোকিছু হয়ে যাচ্ছে। শুধু দোয়া করছি, যা হচ্ছে; তাতে যেন ভালো কিছু থাকে। আল্লাহ যে কপালে কি লিখে রেখেছেন, তা তো জানি না।”

জামিয়া কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল। তারপর আবার বললো,
“তুমি বিয়ের পর কী একইরকম থাকবে? নাকি পাল্টে যাবে?”
“ চেঞ্জ হবো কেন পা গল? আমি কী বিয়ে করে মঙ্গলগ্রহে যাবো নাকি? অবশ্য মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়া তো আলাদা।”
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো রিদি। জামিয়া সহাস্যে বললো,
“ মঙ্গলে না যাও, তুমি তো সিলেট যাবে।”
“সিলেট!”
হ্যাঁ! রিদির মনে পড়লো, বিয়ের কয়েকমাস পরে ওকে সিলেট চলে যেতে হবে। সিলেট একটা স্বপ্নের জায়গা। ওখানে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল বহু আগে থেকেই। আবার আব্বা-আম্মা একা হয়ে যাবে— একথা মনে পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল রিদির। জামিয়া তা বুঝতে পারলো বোধহয়। ওর মন খারাপ দূর করতে উৎফুল্লতা নিয়ে বললো,

“তোমার বর যেন কীসের চাকরি আপু?”
“সরকারি চাকরি।”
“কীসে?”
“তা তো জানি না..!”
কথাটা বলেই থমকালো রিদি। আসলেই জানে না ও। এখনকার যুগে সরকারি চাকরিটা-ই মুখ্য বিষয়। এর ঊর্ধ্বে কেউ আলোচনা করে না। গত কয়েকদিনে বড়দের মুখে ও শুধু একটাই কথা শুনেছে, আরবিন সরকারি চাকরি করেন। নিশ্চয়ই কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে হবে। অতো কিছু ভাবার সময়টাই পেয়ে ওঠেনি রিদি। আরবিন সিলেট যাওয়ার আগে বরং শুনে নেবে।

রিদি উঠে গেল বসা থেকে। আজ ওদের বাড়িতেই বিয়েটা সারা হবে ঘরোয়াভাবে। কাজী সাহেবের উপস্থিতিতে কাবিননামায় সই, রেজিস্ট্রি করা হবে। তারপর বাদবাকি ছোটোখাটো নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণ করলেই ঝামেলা শেষ। আরবিনদের আসার কথা জুম্মা বাদে। রিদির হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে আনুষ্ঠানিকতাবিহীন বেশকিছু তত্ত্ব পাঠানো হয়েছে। তাছাড়াও রিদির বাড়ি থেকেও পাঠানো হয়েছে পাত্রপক্ষের বাড়িতে।
এদিকে রিদির বাড়ি থেকে ওর জন্য একটা খয়েরী রঙা হালকা কারুকার্যময় জামদানী শাড়ি কেনা হয়েছে। রিদি জামদানী কাপড়ের ব্লাউজ পরতে পারে না। তবুও বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যই ওর মায়ের অনুরোধে নিতে রাজি হয়েছে। গহনা নিয়ে খুব একটা ঝামেলা হয়নি। একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য বহু আগে থেকেই রিদির আব্বা-আম্মা পরিকল্পনামাফিক গহনা গড়িয়ে রাখতে শুরু করেছিলেন। তাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে এটুকু খুব একটা ঝামেলার বিষয় হয়ে ওঠেনি। ছোট পরিবার বলে অভাবও নেই বলা চলে।

রিদির একমাত্র ফুপু এসেছেন ঠাকুরগাঁও থেকে। তার বাড়ি অনেক দূরে হওয়ায় পাকা দেখায় থাকতে পারেননি। এমনকি হঠাৎ এই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন হওয়ায় নিকটাত্মীয় অনেকেই আসতে পারেননি। তবু লোকসংখ্যা কম নয়। জনা বিশেকের ওপরে আত্মীয়রা উপস্থিত আজ এখানে। আরবিনদের বাসা থেকে আসবে দশ-বারো জনের মতো।
রিদির মা-কাকিমণি, খালা-ফুপুরা রান্নাবান্না আর ঘর গোছানোর কাজে ব্যস্ত। দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাটা কখন যেন বারোটা ছাড়িয়ে গেল অতি দ্রুতই! রিদি উঠে গোসল সারতে চলে গেল। নাহলে কিছুক্ষণ পরে এসেই মা-কাকিমণিরা তাড়া দিতে শুরু করবে। বাথরুমে যাওয়ার আগে জামিয়াকে বলে গেল, শাড়ি-গহনা বের করে রাখতে।

সময় কত দ্রুত চলে আসে! দেখতে দেখতেই মানুষের জীবনের বিরাট পরিবর্তন ঘটে যায়। অথচ মানুষের আগে থেকে তা সম্পর্কে নূন্যতম আন্দাজও থাকে না। একেই বুঝি বলা হয় ভাগ্য!
রিদি কি আন্দাজ করতে পেরেছিল, আরবিন নামক এই শান্ত নদীর মতো প্রবাহমান স্বভাবের মানুষটার সাথে ওর সারাজীবনের বন্ধনের গিট বেঁধে যাবে! ক’দিন আগেও যেই মানুষটাকে স্যার, স্যার বলে তোষামোদ করতো; আজ তার সাথেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
তিন কবুল বললেই ওই নামটা তার নামের পাশে খোদাই করা হয়ে যাবে।

বসার ঘরে সহজ-সাবলীল আয়োজনে সবার সামনে বসেছিল রিদি। মাথায় প্রায় কপাল পর্যন্ত শাড়ির আঁচল টেনে ঘোমটা দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে ওকে। শরীরে গহনা খুবই সামান্য, সাধারণ। গলায় একটা চিকন পাতের হাঁর আর দু’হাতে দু’টো মোটা বালা। নাকে নতুন পরানো ছোট নাকফুলটা চিকচিক করছে। রিদির মা ওকে ভারী গহনা পরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রিদি বারণ করে দিয়েছে। এতো গহনার ভার সইতে পারবে না ও। রিদির পাশেই ওর হাত ধরে বসে আছেন ওর আব্বু। সোহরাব হোসেন মেয়ের রয়েছেন অনেকক্ষণ যাবত। সরছেন না সেখান থেকে। তার পাশে তিতাস আর সম্বন্ধী আকবর আলীও রয়েছে। পাশাপাশি সোফায় বসে আছে ইকবাল জম্মাদার, আরবিন ও ইকবাল জম্মাদারের তিনজন পুরুষ আত্মীয়। আরবিনের আম্মা আসেননি। ছেলের বিয়েতে মায়ের আসার নাকি নিয়ম নেই। এ-ধরনের কথাবার্তা তাদের গ্রামাঞ্চলে খুব প্রচলিত আছে। শহরে এসেও সেটাই ধরে রেখেছেন তিনি। তবে আরবিনের খালা আর ফুপুরা এসেছেন। তারা আরেকটা সোফায় বসে আছেন। সবার চোখ মূল দু’জন মানুষের দিকে। আরবিন আর রিদির দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।

রিদি নতজানু হয়ে বসে আছে। হাতদুটো একটা আরেকটার সাথে চেপে ধরে কচলাচ্ছে। মনে স্থিরতা নেই একফোঁটাও। চোখের পাতা কেঁপে উঠছে বারবার। চাইলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। অজানা এক অনুভূতিতে আড়ষ্ট হয়ে পড়ছে ও। কি আশ্চর্য! আগে তো আরবিনকে দেখে এমন অনুভূতি হয়নি। “স্যার” সম্বোধনটা আর ব্যবহার করলো না রিদি। লোকটা ওর স্বামী হতে চলেছে আর কিছু মুহূর্তের ব্যবধানেই! রিদি নত মুখে বসেছিল। আরবিনকে ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছে না ও। তবে যতটুকু দেখতে পাচ্ছে, তাতেই বুকের ধড়ফড়ানি বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। আরবিন সাদা পাঞ্জাবি পরেছে আজও। বুক অবধি দেখতে পাচ্ছে রিদি। শুভ্র পাঞ্জাবিতে তেমন কারুকার্যতা নেই। সামান্য সোনালি কাজ রয়েছে বুকের আর কাছটায় কলারের আশেপাশে। হাতদুটো বুকে চেপে বসে আছে। ক্ষণিক বাদে বাদে দু’টো পা হালকা নাড়াচ্ছে। একটা ঘড়িও পরেছে বাঁহাতে। যদিও তা সবসময়ই থাকে।
কাজী সাহেব সকল নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা করছেন। একে একে সব ফর্মালিটি পূরণ হয়ে যাচ্ছে। রিদির সেদিকে খেয়াল নেই। হুঁশও নেই কোনো। একসময় কানে বাঁজলো কাজি সাহেব বলছেন,

“আম্মা, তুমি রাজি থাকলে বলো কবুল। বলো মা কবুল।”
রিদির আব্বু ওর কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে কবুল বলতে বললো। রিদিও ধীরেসুস্থে বিনা ঝঞ্ঝাটে টেনে টেনে তিনবার বললো,
“কবুল, কবুল, কবুল।”
আরবিনকে বলতে বলার পরে ওপর পাশ থেকে শান্ত একটা কন্ঠস্বর শোনা গেল,
“আমি কবুল করলাম।”
সবাই হাত উঠিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললো। তারপর-ই বিয়ের রেজিস্ট্রেশন আর কাবিননামায় সই করানোর কার্যাদি সম্পন্ন করা হলো।

রিদি জানে না, সেই সময় ওর কেমন অনুভূতি হয়েছিল। এই অনুভূতির সাথে ওর আগে কখনো পরিচয় হয়নি। শুধু বুঝলো, শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেছে। সামনে উপস্থিত মানুষটার “আমি কবুল করলাম” কন্ঠস্বর বারবার কানে বাজছে। কেমন যেন অসহ্যকর অনুভূতি হচ্ছে। অস্থির তোলপাড় সৃষ্টি হচ্ছে বুকের মাঝে। মস্তিষ্ক দম মেরে আছে। রিদিকে নিয়ে যাওয়া হলো ভেতরে।
এখন বরপক্ষ আর বিয়েতে উপস্থিত সবার খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন পালা সারা হবে। রিদিকে ভেতরঘরে ওর কাকিমণিই খাইয়ে দেবেন। তবে এরপর কি হতে চলেছে, জানেনা রিদি! ঘূর্ণিঝড় বুঝি ধেয়ে আসছে, এইতো আর বেশি দূরে নয়!

“আপু, আজ নাকি দুলাভাই এখানে থাকবে। তোমার ঘরেই আসছে কিছুক্ষণ পরে। বড়রা আলোচনা করে ঠিক করেছেন, আজ দুলাভাইকে এখানে রেখে দেওয়া হবে।”
রিদি সবে সাজ মুছে বসেছে। তখনই জামিয়া এসে কথাটা বলে গোছানো ঘর আবারও গোছাতে লেগে গেল। রিদির হৃৎস্পন্দন কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। ওর ঘরে ওর কিছু মহিলা আত্মীয়রা ছিল। তারা বলাবলি করতে লাগলো,
“রিদির না ওই বাড়িতে যাওয়ার কথা?”
তখনই হালিমা খাতুন ঘরের ভেতরে এসে বললেন,

“রিদিকে ওরা নিয়ে যেতে চেয়েছিল আজকের দিনের জন্য। আমরাই বললাম, একবারে বরং আনুষ্ঠানিকতা করে পরেই নেওয়া হোক। তাছাড়াও আমাদের মেয়েজামাইয়ের আবার কালকেই দীর্ঘদিনের জন্য সিলেট চলে যেতে হবে। তারচেয়ে আজকের দিনটা বরং শ্বশুরবাড়িতে যত্নআত্তিতে থাকুক। আর ওদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের তেমন কোনো আলাপ-ই হয়নি বলা চলে। দু’জন একসাথে থাকুক আজকে। নিজেরা কথাবার্তা বলুক। সম্পর্কটা গভীর হতে দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে তো নাকি?”
কথাটা বলেই হালিমা খাতুন সবাইকে বাইরে যাওয়ার তাড়া দিলেন। সবাই একে একে বেরিয়ে যেতেই রিদিকে বললেন,

“বিয়ের কাজ সেরে সবার আলাপ-আলোচনা করতেই তো সন্ধ্যা হয়ে গেল। এখনই আরবিন বাজানকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোর ঘরে। ঠিকঠাক হয়ে বোস মা। সাজ মুছলি কেন? দেখি এদিকে আয়।”
হালিমা খাতুন রিদিকে টেনে বসিয়ে ওর চুল খোঁপা করে তাতে সকালের আনা ফুলের গাজরা আবারও বেঁধে দিলেন। চোখের কাজল প্রায় মুছে গিয়েছে। আবারও কাজল লাগিয়ে দিলেন তিনি। হালিমা খাতুনের রিদিকে সাজাতে খুব ভালো লাগে। এমনিতেও রিদি ন্যাচারালি সুন্দর। তবু মেয়েটাকে সাজলে আরো অপূর্ব লাগে। তবে রিদি খুব কমই সাজে। সাজগোজে যেন ওর মারাত্মক এলার্জি। এই-যে এখন ঘরে এসে সাজ মুছে হোয়াইট ফ্রেমের চশমা পরে বসেছিল! মনে হচ্ছিল, যেন পড়তে বসেছে বইপত্র নিয়ে।
হালিমা খাতুন ওকে আবারও বউ রূপে সাজিয়ে বসিয়ে দিলেন। শাড়ির আঁচলের অংশ কাঁধের কাছ থেকে ঠিক করতে করতে বললেন,

“শোন মা, তোর জামাই সিলেট চলে যাবে কাল। শুনেছিস কিনা জানি না, আমি শুনলাম ফিরবে নাকি ছয়মাস পরে। তখন তোকে নিয়ে যাবে। এরমধ্যে ওর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবি সবসময়। খবরদার! কোনো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য বা ঝগড়াঝাটি করবি না। এসব করলে তোর দিকে মন থাকবে না। জামাইকে ভালোবেসে, মিষ্টি কথা বলে নিজের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখবি। অন্য কোনোদিকে ঝোঁক থাকবে না তাহলে। আর ওর সাথে নিয়মিত ফোনে কথা বলবি ও সিলেট যাওয়ার পরে। বিয়ে যেহেতু হয়েছে, স্বামী কিন্তু তোর-ই। পড়াশোনার পাশাপাশি ওকেও সময় দিবি। সবসময় সেজেগুজে থাকবি। এই এখন যেমন সেজে আছিস। আর ঘরে আসলে সালাম দিয়ে হাত ধরে বসাবি। আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তোর বরকে।”

হালিমা খাতুন দ্রুত বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। হৃৎস্পন্দন প্রতি মুহূর্তে বেড়েই চলেছে রিদির। শরীরে যেন জ্বরের আভা পাচ্ছে ও। দ্রুত উঠে দাঁড়ালো ও। ঘোমটা টেনে বিছানার অপর পাশে যেয়ে ফ্লোরে পা রেখে গুটিসুটি মেরে বসে রইলো।
আরবিন আসলো মিনিট দশেক পরে। রিদি ওর উপস্থিতি সঙ্গে সঙ্গেই টের পেয়ে গেল। আরবিন দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। রিদি উঠে দাঁড়ালো। কাকিমণি সালাম দিতে বলেছিল। কিন্তু লজ্জায়, আড়ষ্টতায় যেন বোবা হয়ে গেল রিদি। আরবিন-ই সহজ হলো। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা আঁটকে দিলো ভেতরে থেকে। রিদির সামনে এসে দাঁড়িয়ে অত্যাধিক শান্ত স্বরে বললো,
“ঘোমটা সরাও।”
রিদি নিজ হাতে ঘোমটা সরালো। আরবিন বিছানার ওপর পা উঠিয়ে হাঁটু মুড়ে বসতে বসতে বললো,
“শীতকালেও গরম লাগছে ভীষণ। ফ্যানটা একটু চালু করবে?”
রিদি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ফ্যানের সুইচ দিয়ে আসলো। আরবিন রিদিকে পরখ করে বললো,
“বসো।”

রিদি পা ফ্লোরে রেখে বিছানার ওপর আরবিনের সামনা-সামনি বসলো।
উফফ! রিদির মনে হচ্ছে একটা কম্বল টেনে এনে মুখ ঢেকে বসে থাকতে। আরবিন এমনভাবে তাকাচ্ছে কেন! ওই দৃষ্টির ভাষা রিদি বোঝে না। সত্যিই বোঝে না। বুঝতে পারলে আর এতোটা আড়ষ্ট হতো না৷ কিছু সময় দু’জনেই চুপচাপ রইলো। আরবিন ফোন বের করে কিছু একটা কাজ করে প্যান্টের পকেটে ফোনটা রেখে আবারও রিদির দিকে মনোযোগ দিলো।
“বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলে কেন?”
আরবিনের শান্ত কন্ঠস্বর। রিদি কিছুটা ভড়কালো। তবে বুঝতে না দেওয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা করলো। আরবিনের মুখের দিকে একপলক তাকালো রিদি। সরু চোখদু’টোকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেই চোখ নামিয়ে নিলো ও। রিদি আস্তে করে জবাব দিলো,

“এমনিই।”
“ও আচ্ছা আচ্ছা! এমনিই!”
আরবিন আর কিছু বললো না। রিদি তখনও নতজানু হয়ে বসে। সামনের মানুষটার কাছ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকালো ও। সঙ্গে সঙ্গে একজোড়া ঠোঁট ওর কপাল স্পর্শ করলো!
রিদি চমকে উঠলো কিছু মুহূর্তের জন্য। হার্টবিট মিস করলো যেন। আরবিন চুমু খেয়েছে ওর কপালে। মুহূর্তের মধ্যেই আবার সরে গেছে। এমনভাবে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে, যেন মাত্র কিছুই হয়নি। আরবিন রিদির দিকে চেয়ে শান্তস্বরে বললো,
“ইট’স জাস্ট অ্যা ফর্মালিটি।”

ফর্মালিটি! রিদি আবারও চমকে উঠলো। আশ্চর্য হলো। অবাক না হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও পারলো না। সামনে শান্ত ভাবমূর্তি নিয়ে বসে থাকা এই পুরুষের একটা চুমু মানে ঘনিষ্ঠতা নাকি ফর্মালিটি! চুমুও ফর্মালিটি হয়?
রিদি নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করলো। কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। অবাক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো আরবিনের মুখের দিকে। আরবিন ফোন স্ক্রল করতে করতে বললো,
“তোমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে?”
“না।”
“তোমার আব্বুর নেই?”
“জি, আব্বুর আছে।”
“আমি এখান থেকে যাওয়ার পরে তোমার আব্বুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারটা আমাকে দিও।”
“কেন?”

“একটা ফর্মালিটি পূরণ করে ফেলেছি। আর এই ফর্মালিটির জন্য আরো একটা ফর্মালিটি অতি দ্রুত পূরণ করতে হবে। তোমার আব্বুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই মাসে দেনমোহরের এক লক্ষ এক টাকা পাঠিয়ে দেবো। ওই টাকা দিয়ে যা ইচ্ছা কোরো। দেনমোহরের টাকার ওপরের তোমার-ই হক। আর নতুন জবে জয়েন করছি তো, আমার কাছে এখন পুরো টাকা নেই। নিজের ব্যাংক ব্যালেন্সে যা আছে, ওসবের বেশিরভাগই আব্বার টাকা। তার টাকা থেকে তোমার দেনমোহর পরিশোধ করার ইচ্ছা নেই। নিজের ইনকাম থেকে দেবো বলেই একটু সময় লাগবে। ডোন্ট মাইন্ড।”
কথাটা বলে আরবিন আবারও ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত হলো। একদম সহজ-স্বাভাবিক রয়েছে ও। পেছনের বালিশটা খাটের সাথে সোজা করে রেখে তাতে হেলান দিয়ে বসলো ও। রিদি কিছুক্ষণ আগের ঘটা অপ্রত্যাশিত ঘটনাটা ভুলতে পারছে না। মনে হচ্ছে, কপালে এখনো যেন সেই পোড় খাওয়া ঠোঁটের স্পর্শ লেগে আছে। ও কিছুক্ষণ আরবিনের দিকে তাকিয়ে এবার কথা বলতে শুরু করলো। জিজ্ঞাসা করলো,

“আপনি আগামীকাল যাচ্ছেন কখন?”
“বিকালেই বের হবো।”
“আবার ফিরবেন কবে শহরে?”
“জানা নেই। নতুন জব। ফাইনাল ট্রেনিং চলবে কিছুদিনের। এরপর ফাইনালি এজেন্সিতে জয়েন হওয়ার পরে কাজে ব্যস্ত হয়ে পরবো। তারপর যদি অথোরিটি ছুটি দেয় সময়মতো! পুরোটাই অথোরিটির ওপর ডিপেন্ডেবল। তবুও কিছু মাস পরে যদি ছুটি না দেয়, তখন একবার অথোরিটিতে ছুটির জন্য আবেদন করে দেখবো।”
“অথোরিটি মানে? কীসের জব পেয়েছেন আপনি?”
“বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আইটি ও সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে। প্রাথমিক পর্যায়ে লেফটেন্যান্ট পদে।”
রিদি উঠে দাঁড়ালো দ্রুত। মাথা ঘুরছে ওর। চারিপাশে আঁধার দেখছে মনে হচ্ছে। ওর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে এসেছে। আরবিন রিদির এমন হাবভাব দেখে উঠে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো। জিজ্ঞাসা করলো,

“কী হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?”
রিদি কোনো কথা বললো না। প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে ওর মধ্যে।
“বুঝেছি, নিশ্চয়ই শরীর খারাপ লাগছে তোমার? গতদিনও খেয়াল করেছিলাম, শাড়ি আর এই ধরনের ব্লাউজের কারণে তোমার অস্বস্তি হচ্ছিল। শাড়ি চেঞ্জ করে নরমাল ড্রেস পড়ে আসতে পারো। এতো ফর্মালিটির দরকার নেই।”
কথাটা বলেই রিদির কাঁধের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিল আরবিন। সঙ্গে সঙ্গে তেঁতে উঠলো রিদি। দ্রুত আরবিনের হাত ছিটকে সরিয়ে দিয়ে ঝাঁঝালো সুরে বললো,

“দূরে সরুন! আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।”
আরবিন চরম আশ্চর্য হলো রিদির এমন আচরণে। অবাক চোখে রিদির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কী হয়েছে তোমার? সমস্যা কী? আমাকে বলো!”
“আপনি মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়েই কাজ করবেন তাই-না?”
“হ্যাঁ তো?”
“বলা যায় দেশের জন্যই কাজ করবেন?”
“বলা যায় না। অবশ্যই দেশের জন্য কাজ করবো। আর দেশের জন্য কাজ করবো বলেই, টাইগার আইটির জব থেকে ইস্তাফা দিয়ে এই জবের জন্য আবেদন করেছিলাম আমি। নাহলে আমার এসব জবের প্রয়োজন ছিল না, তাই-না?”

“যদি আমি বলি, এই জবটা ছেড়ে দিতে; তাহলে ছেড়ে দেবেন?”
রিদি প্রশ্নটা করে অধীর আগ্রহের সাথে আরবিনের চোখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।৷ আরবিন কিছুক্ষণ প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে রিদিকে দেখলো। অদ্ভুত চাহনিতে। তারপরেই ধীরে ধীরে রিদির দিকে একধাপ এগিয়ে ওকে আপাদমস্তক পরখ করে ওর চোখে চোখ রাখলো। ভরাট কন্ঠে বললো,
“দেশের জন্য কাজ করা আমার স্বপ্ন। আমি কেন তোমার জন্য আমার স্বপ্ন ছেড়ে দেবো? কে তুমি?”
রিদি থমকালো। আশ্চর্য হলো। আবার রাগও হলো। কার ওপর তা জানা নেই ওর। আরবিন যে এমন জবাব দেবে, তা ও ভাবতেও পারেনি। আরবিনের এমন কঠোর রূপের সাথে পরিচিত নয় রিদি। তবু দমে যেতে ইচ্ছে হলো না ওর। বুকের ভেতর যে দহনের সৃষ্টি হচ্ছে, তা মুছে ফেলার উপায় নেই। ইশশ! আগে জানলে ও বিয়েতে কোনোভাবেই রাজি হতো না। ওকে মে’রে ফেললেও নয়। রিদি আবারও শক্ত গলায় বললো,

“দেশের জন্য কাজ করা ব্যক্তি আর দেশপ্রেমীদের আমি অপছন্দ করি। এককথায় বলতে পারেন, একজন ব্যতীত এই দলভুক্ত সবাইকে ঘৃণাও করি। এরা দেশ ছাড়া কারো হতে পারে না! এদের জন্য কত মানুষের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।”
রিদির কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরবিন শক্ত করে ওর দুই হাতের বাহু চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
“আর আমি লেফটেন্যান্ট আরবিন, দেশপ্রেমীদের যারা ঘৃণা করে; তাদেরকে দেশদ্রোহী বলে মনে করি। আর আমার মন-মস্তিষ্কে কোনো দেশদ্রোহীর স্থান না আগে কখনো ছিল, আর না কখনো হবে৷ রিদি তুমি বুঝতে পারছো, তুমি দেশদ্রোহীদের মতো আচরণ করছো! এমন মনোভাব কেন তোমার?”

আরবিন প্রশ্নটা করে অবাক চাহনি রিদির চোখেমুখে বিচরণ করতে লাগলো। এই শান্ত, মেধাবী আর দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ মনে করা মেয়েটা যে এমন বিদ্বেষ আর মনোভাব নিজের মনে পুষে রেখেছে; তা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি আরবিন। যদি বুঝতে পারতো, তবে সজ্ঞানে অন্তত এই মেয়েকে বিয়ে করতো না! আরবিনের প্রচন্ড জেদ হচ্ছে। রিদির ওপর রাগ উঠছে। তবু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে ও।
রিদি ওর প্রশ্নের জবাবে বলে উঠলো,
“আমি এতো প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না৷ আপনি শুধু জবাব দিন, আপনি কী এই জব ছাড়বেন? নাকি না?”
“প্রশ্নই আসে না।”

“তাহলে আমাকে ছেড়ে দেন। আপনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে বাঁচা সম্ভব না আমার পক্ষে। আমার ডিভোর্স চাই। ভুল করেছি। চরম ভুল! এই ভুলের খেসারত এখন দিতে হচ্ছে আমাকে।”
আরবিন বিস্ফোরিত নয়নে রিদিকে দেখছে। এই মেয়ে এমনভাবে কথা বলতে পারে! আশ্চর্য হচ্ছে ও। আরবিন আরো শক্ত করে রিদির হাতের বাহু চেপে ধরে বললো,
“ডিভোর্স দেবো না তোমাকে। তুমি অযথা একটা সুন্দর সম্পর্ক যেচে নষ্ট করেছো। তেজ দেখাচ্ছো আমাকে? তোমার ওই তেজ ইজ অন মাই ফুট!”
“আমি বলেছি মানে, আপনি আমাকে ডিভোর্স দেবেন৷ আমি আপনাকে একটা অপশন দিয়েছিলাম। আপনি নাকচ করেছেন। আপনার প্রতি এখন একটুও ভালো আচরণ আসছে না আমার। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই না। আমার সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ আছে। সেটাকে নষ্ট করার ইচ্ছা নেই। আপনারা দেশের জন্য ফালতু কারণে মরবেন, আর আপনাদের পরিবারের মানুষদের সমাজের রোষানলে বেঁচে থাকতে হবে। মাঝখানে কারো কিচ্ছু যায়-আসবে না।”

রিদি আরবিনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে কথাগুলো বললো। ওর চোখেমুখে কতটা ভয়াবহ জেদ। আরবিন তারচেয়েও কয়েকগুণ বেশি জেদ দেখিয়ে বললো,
“দেশদ্রোহীদের মতো কথাবার্তা বোলো না রিদি। বাচ্চা খুকি নও তুমি। আমি কিন্তু তোমাকে শত্রু ভেবে ঘৃণা করতে শুরু করবো।”
“হ্যাঁ আমি দেশদ্রোহী! উচিত কথা বলে দেশদ্রোহী ট্যাগ পেলে আমি বরং তাই-ই! কি করবেন আপনি করুন। কিন্তু আমি আপনার সাথে কোনোভাবেই নিজেকে জড়াবো না।”
“তোমাকে আমার নামেই বাঁচতে হবে। তোমার ওই দেশদ্রোহী মনোভাব নিয়েই আমার সঙ্গে থাকতে হবে। দেশ নিয়ে কীসের এতো সমস্যা তোমার, আমিও দেখে নেবো। তোমার মতো একজন দেশদ্রোহীর কপালে আমি চুমু খেয়েছিলাম। ঠোঁট ছুঁইয়েছিলাম! ছিহ! ভাবলেই এখন ঘৃণা লাগছে। আমার ঠোঁট অপবিত্র হয়ে গেল। পারলে একদলা থুথু ছুড়তাম।”

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৮

আরবিন এবার রিদিকে হালকা ধাক্কা মে’রে ছিটকে দূরে সরিয়ে দিলো। নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে পালঙ্কের কোণে একটা ঘুষি মেরে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আরবিন যেতেই রিদি হুহু করে কেঁদে ফেললো।
এসব কি থেকে কি হয়ে গেল! কি ভেবেছিল, আর কি হলো! আরবিনের সাথে ওর কোনোদিনও মিল হতে পারে না। রিদি থাকবে না এই লোকের সাথে। ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবে ওর আব্বুকে বলে। নিজের জীবনটা কাকিমণির মতো হতে দিতে চায় না…

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১০