নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ৩১
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা
“আদিত! তুমি! কানাডা থেকে ফিরেছো! বাড়িতে কেন আসোনি? আমি বুঝেছি গত দুদিন তুমি এখানে এসেছো! কিন্তু লুকিয়ে এখানে আসা আর বাড়িতে না যাওয়ার কারণ কি?”(বিস্মিত স্বরে)
আদিত শেরহামের কথায় ঘুরে তাকালো শেরহামের দিকে। শেরহামের দিকে তাকাতেই আদিতের নজরে আসলো শেরহামের বিস্মিত মুখশ্রী সেই সাথে একগাদা প্রশ্ন। আদিতের চোখের কার্নিশে অশ্রুজল জমে আছে। আদিত চোখের জল মুছে মৃদু হাসলো। উঠে এসে শেরহামের মুখোমুখি দাঁড়ালো। ভাঙা স্বরে বললো,,
“কানাডা থেকে এসেছি পাঁচ কি ছয় দিন হচ্ছে। সকল প্রকার ঝামেলা মিটিয়ে কানাডা থেকে চিরতরের জন্য চলে এসেছি। সেখানকার বিজনেস বাবা এহমাদ সাফিক আঙ্কেলকে সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। এসজে গ্রুপের অন্তের শেষে আমরা বাংলাদেশে রওনা দিয়েছি। বাবা, আমি আর ইনতেহার। বাংলাদেশ পৌঁছে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের গাড়িটা কন্ট্রোললেস হয়ে গাছের সাথে এক্সিডেন্ট করে। আমি ঠিক আছি শুধু একটু মাথায় ও হাতে লেগেছে, ইনতেহারও ঠিক আছে, তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বাবা পূর্বে আঘাতপ্রাপ্ত থাকার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আজ পাঁচদিন ধরে হাসপাতালেই সময় কাটছে আমার, বাবার আর ইনতেহারের। আমি একটু বেটার অনুভব করতেই ইলার কাছে এসেছি। আমি চাইনি আমাকে এই আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় কেউ দেখিস তাই বাড়ি যাইনি।” (ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে)
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শেরহাম নির্বাক তাকিয়ে আদিতের দিকে। আদিতের মাথায় ব্যান্ডেজ। ব্যান্ডেজের সাইডে কিছুটা রক্ত দৃশ্যমান হয়ে আছে। আদিতের মুখশ্রী মলিন হয়ে আছে। চুলগুলোও এলোমেলো। শেরহাম ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে উঠলো,,
“কিছু হবেনা, কাল সকালেই জেঠুমণি, তুমি আর ইনতেহার দাভাইকে নিয়ে বাড়ি আসবে।” (ভাবলেশহীন কণ্ঠে)
আদিত নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে চাইলো শেরহামের দিকে। শেরহাম নির্ভেজাল কণ্ঠে ও মুখশ্রীতে উক্ত কথা বলেছে। আদিত পিছু ফিরে ইলার মলিন মুখশ্রীর দিকে তাকালো। মৃদু স্বরে বলে উঠলো,,
“জানিস নিজেকে অনেক অপরাধী বলে মনে হয়! ইলার আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আমিই দায়ী। আমার জন্যই অভীক মাহমুদ ঐদিন ইলাদের গাড়ির এক্সিডেন্ট করিয়েছে। এরপর ইলার ওই রক্তিভ মুখশ্রীর ভিডিও আমায় মেইল করেছিল। ভাবলে আমার রাগ কন্ট্রোললেস হয়ে পড়ে। সহজ মৃ ত্যু দিয়েছি ওদের, নয়তো এটো কষ্ট দিতাম।”(মৃদু স্বরে)
শেরহাম নজর মেঝের দিকে নিক্ষেপ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বলল,,
“আশা রাখি ইলার খুব দ্রুতই জ্ঞান ফিরবে ও সুস্থ হয়ে উঠবে। রাত কম হয়নি, আপাতত যাও। কালকেই বাড়িতে আসবে।”
আদিত ঘুরে তাকালো শেরহামের দিকে। মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে আদিত দরজার দিকে এগোলো। শেরহাম এক নজর ইলার দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা শ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
দুমাস পর,,
সারুর প্রেগন্যান্সির আজ পাঁচমাস। পেটটা খানিকের চেয়ে একটু বেশি উঁচু হয়েছে। একটু না অনেকটাই ঝামেলা হয় তবুও এডমিশনের জন্য সারু মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। কয়েকদিন পরই এডমিশন, সারুর লক্ষ্য এখন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়া। শেরহাম সারুকে সবকিছুতেই সাহায্য করে। যেহেতু সারু এখন প্রেগন্যান্ট, সারুর সুবিধা অসুবিধা আছে তার জন্য শেরহাম অফিসের সব দায়িত্ব আদিতের হাতে দিয়েছে। অফিস এখন আদিত, নেহাল রায় সামলান। আপাতত বিপুল রায় রেস্টে আছেন। ইনতেহার কানাডা ফিরে গিয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে।
রায় পরিবারে ধরতে গেলে এখন দুঃখের পরিবর্তে সুখ ফিরে এসেছে। তবে এসেও যেন আসেনি। কারণটা ইলা। আজ তিনমাস ধরে ইলা কোমায় আছে। কোনো রকম রেসপন্স করেনা ইলা। কৌশিক চৌধুরী আর প্রমীলা চৌধুরী মরিয়া হয়ে উঠেছেন মেয়ের জন্য। প্রমীলা চৌধুরীর অবস্থা যত দিন যাচ্ছে ততো বেগতিক হচ্ছে। আদিত দুমাস আগে সেদিন সকালে বাড়িতে ফিরেছিল বিপুল রায় আর ইনতেহারকে নিয়ে। সেই সাথে জোর করে ইলাকেও রায় বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ইলার দেখাশোনার জন্য একজন নার্স রাখা হয়েছে।
বিকেল ৩টা বেজে কুড়ি মিনিট।
সারু বইয়ের রাজ্যে ডুবে আছে। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে আর শেরহাম গালে হাত দিয়ে সারুর দিকে চেয়ে সারুর মুখশ্রী পড়ছে। সারুর বার কয়েক অস্বস্তি হলেও মনোযোগ সম্পূর্ণ বইয়ের দিকে দিয়েছে। হঠাৎ সারু একনজর শেরহামের দিকে তাকালো। শেরহাম সাথে সাথে চোখ মারলো সারুকে। সারু ভ্রু কুঁচকে শেরহামের দিকে তাকালো। শেরহাম এবার ফ্লাইং কিস দিলো। সারু গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,,
“আপনার জ্ঞান বুদ্ধি কি বিক্রি করে কটকটি খেয়ে ফেলেছেন? এমন হাবলার মতো আচরণ কেন করছেন? কি? সমস্যা কি?”(গম্ভীর কণ্ঠস্বরে)
শেরহাম গাল থেকে হাত সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে নাক ফুলিয়ে বলে উঠলো,,
“সমস্যা কি মানে কি? তোমাকে তো আর স্পর্শ করছিনা জাস্ট ফ্লাইং কিস দিয়েছি! এতে ক্ষতি কই? কিসব বলো, জ্ঞান বুদ্ধি কেউ বিক্রি করতে পারে?”(নাক ফুলিয়ে)
“আপনি যেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন আপনার দ্বারা জ্ঞান, বুদ্ধি বিক্রি করে কটকটি খেয়ে ফেলা আহামরি কিছুনা।”
“নিজে ভালো থাকলেই সব ভালো, তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ কেন? নিজের মতো পড়ো। আমার দিকে তাকাতে তো আর আমি বলিনি।”(আড়চোখে তাকিয়ে)
সারু দুপাশে মাথা ঝাকালো, বলল,,
“আপনি আর শান্তি দিলেন না আমাকে।”
“শান্তি? সেটা তোমার ডিস্কনারীতে নেই। লিটেল এসে নিক, তোমায় জ্বালানো আরও বেড়ে যাবে হুহ।”(মৃদু স্বরে)
“হ্যা ডিকশনারী না ডিস্কনারী! ধন্য করেছেন আমায়, এখন পড়তে দিন সরুন আপনি এখান থেকে।”(বইয়ের দিকে তাকিয়ে)
শেরহাম ঠোঁট চেপে হাসলো সারুর কথায়। নড়লোনা, সেভাবেই বসে চেয়ে রইলো সারুর দিকে। কীয়ৎক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। শেরহাম উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখতে পেলো ইলার দেখাশোনার জন্য যে নার্সকে দায়িত্বে রাখা হয়েছিল। তিনি ব্যস্ত গলায় বলে উঠলেন,,
“স্যার আপনাদের, আপনাদের পেসেন্ট রেসপন্স করছে।”(ব্যস্ত গলায়)
শেরহাম অবাক হলো, পেছন ঘুরে দেখলো সারু পেটে হাত দিয়ে উঠে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। শেরহাম এগিয়ে গিয়ে সাবধানতার সাথে সারুকে ধরে নার্সের সাথে ইলার ঘরের দিকে রওনা হলো। বাড়িতে এখন শেরহাম, সারু আর মিতালি ও বিপুল রায় রয়েছেন। আদিত, নেহাল রায় অফিসে। স্নিগ্ধা কল্যাণীর সাথে আছে, আজকে কল্যাণীর চলমান কেসের শেষ দিন।
শেরহাম সারুকে নিয়ে ইলার ঘরের দরজার সামনে এসে দেখতে পেলো ইলা চোখ মেলে উঠে বসার চেষ্টা করছে। শেরহাম অবিশ্বাস্য চক্ষুতে ইলার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“উঠোনা!”
ইলার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। উঠার চেষ্টা না করে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো। শেরহাম সারুকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সারুকে চেয়ারে বসালো। দ্রুত পদে পুনরায় নিজের কক্ষে এসে ফোন হাতে নিয়ে ডাক্তারকে কল করলো। ডাক্তার শাফানকে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলে শেরহাম আদিতকে কল করলো। কল রিসিভ হতে আদিত অপর প্রান্ত হতে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,,
“হু, বল।”(গম্ভীর স্বরে)
“বাড়িতে আসো, গুড নিউজ আছে তোমার জন্য।”(মৃদু হেসে)
“কিসের গুড নিউজ? কি হয়েছে?”
“ইলার জ্ঞান ফিরেছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি আসো।”
বলেই শেরহাম কল কে”টে দিলো। সে জানে আদিত এখন বেশ শকড হয়েছে। আদিত ইলার জ্ঞান ফেরার পথের দিকে তৃষ্ণার্তর মতো চেয়ে আছে, এখন ইলার জ্ঞান ফিরেছে শুনে প্রথমে নিশ্চয়ই শকড হয়েছে আর এখন হয়তো দ্রুত বাড়ি আসার জন্য বেরোচ্ছে। শেরহাম হাসলো, সামনের দিনগুলো নিশ্চয়ই শুভ হবে। এতসবের মাঝে শেরহামের সারুর কথা মনে পড়লো। ডাক্তার বলেছিলেন সারুর শারীরিক কন্ডিশন তেমন ভালোনা, প্রেগন্যান্সিতে সমস্যা হতে পারে, সারুর ভালো করে খেয়াল রাখতে বলেছিলেন। শেরহাম সেই চেষ্টাতেই আছে। সব ভেবে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো শেরহাম। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো বিপুল রায় আর মিতালিতে ডাকার উদ্দেশ্যে।
মিতালি বসার ঘরে ছিলেন সেই সাথে বিপুল রায়ও। ওনারা দুজন কল্যাণীর আজকের কেস নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
“জেঠুমণি, মা ইলার জ্ঞান ফিরেছে।”(মৃদু গলায়)
বিপুল রায় আর মিতালি অবাক হলেন শেরহামের কথায়। মিতালি অবাক স্বরে বলে উঠলেন,,
“কি বলছিস! সত্যি? ইলার জ্ঞান ফিরেছে! আদিতকে বলেছিস? ইলার মা বাবাকে বলেছিস?”(অবাক স্বরে)
মায়ের এতো প্রশ্নে শেরহাম কোনটা রেখে কোনটা বলবে বুঝতে পারলোনা। বললো,,
“একসাথে এতো প্রশ্ন কেন করো? আদিতকে বলেছি সে আসছে। ইলার মা বাবাকে বলা হয়নি, এখনই বলছি।”
বিপুল রায় আর মিতালি দ্রুত পদে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলেন ইলার ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
শেরহাম কৌশিক চৌধুরীকে কল দিলো। রিসিভ হতে অপর প্রান্ত থেকে প্রতিবারের মতো একটাই কথা শুনতে পেলো শেরহাম।
“ইলার জ্ঞান ফিরেছে শেরহাম?”
আজ অব্দি যতবার শেরহামের কৌশিক চৌধুরীর সাথে কথা হয়েছে ততবারই তিনি প্রথমে মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। এবারও তাই হয়েছে। শেরহাম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,,
“হ্যা আঙ্কেল, ইলার জ্ঞান ফিরেছে আপনারা দ্রুত আসুন।”
শেরহামের কথা শেষ হওয়ার আগেই কল কেটে গেলো। শেরহাম হাসলো মৃদু। কৌশিক চৌধুরী আর প্রমীলা চৌধুরীর মেয়ের প্রতি টান, ভালোবাসা দেখে ভালোই লাগে শেরহামের। একমাত্র মেয়ে বলে কথা। শেরহাম ইলার কক্ষের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় ইলার চিৎকার করে কান্নার শব্দ শুনতে পেলো। ভ্রু কুঁচকে এলো শেরহামের। দ্রুত পদে ইলার কক্ষে উপস্থিত হলো। দেখলো, ইলা পিঠ এদিকে করে ওপাশে মুখ করে চিৎকার করে কাঁদছে নিজেকে গুটিয়ে। সারু, মিতালি, বিপুল রায় ও নার্স এতো করে শান্ত হওয়ার কথা বলার পরেও ইলা শান্ত হচ্ছেনা। চিৎকার করে কান্না করছে।
শেরহাম কি করবে কি বলবে ভেবে পেলোনা। সারু শেরহামের দিকে তাকালো, শেরহাম ইশারা করলো “কি হয়েছে?”
সারু নিজের পেটে হাত দিয়ে উঠে আসলো ধীর পায়ে শেরহামের কাছে।
“ইলাদি চুপ করে চোখ বন্ধ করে ছিল। হুট্ করেই চোখ বন্ধ রেখেই ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলো ইলাদি। এরপর থেকেই কান্না করে যাচ্ছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। আমরা বলেও শান্ত করতে পারছিনা।”(চিন্তিত স্বরে)
শেরহাম ভ্রু কুঁচকালো, হুট্ করেই ইলা কান্না কেন করছে! কিছুক্ষনের ভাবতেই শেরহাম বুঝলো সেদিনের এক্সিডেন্ট এর কথা মনে পড়তেই ও আশেপাশে বাবা বা মাকে দেখতে না পেয়ে ইলা এভাবে কান্না করছে। শেরহাম ছোট করে একটা শ্বাস ফেললো। নিচু স্বরে বলে উঠলো,,
“এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়তেই ইলা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। পাশে আঙ্কেল আন্টিকে না দেখতে পেয়েই কান্না করছে। তবে এভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়লে ওর ব্রেইনে চাপ পড়বে যার ফল ভালো হবেনা।”(নিচু স্বরে)
সারু চিন্তিত মুখে ইলার দিকে তাকালো। ইলা কান্না করেই যাচ্ছে, থামছেনা। সবার এতো করে বলার পরেও থামছেনা। মিনিট পনেরোর মতো কেটে যাওয়ার পরেও ইলার কান্না থামেনি। কান্নার পরিমান কিঞ্চিৎ কমলেও কান্না থামেনি। সারু, শেরহাম, বিপুল রায়, মিতালি ও নার্স চেষ্টা করেও ইলাকে শান্ত করতে পারেনি। ইলা মাথা চেপে কান্না করছে। তার মাথা ব্যথা করছে।
এর মাঝেই ডাক্তার শাফান হন্তদন্ত পায়ে কক্ষে প্রবেশ করল।
“দুঃখিত, জ্যাম থাকার ফলে আসতে দেরী হয়ে গেলো।”
ডাক্তার শাফান এগিয়ে আসলো ইলার দিকে। জোর করে ইলার পালস চেক করে দেখলো স্বাভাবিকের চেয়ে পালস রেট বেশি। ইলা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে অনেক। এভাবে চলতে থাকলে তার মস্তিষ্কে চাপ পড়বে, ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
ডাক্তার শাফান ইলাকে শান্ত করতে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করলো। কীয়ৎক্ষন যেতেই ইলা শান্ত হলো।
ডাক্তার শাফান সবার উদ্দেশ্যে শান্ত স্বরে বলে উঠলো,,
“আপনারা টেনশন করবেন না। ওনার জ্ঞান ফেরার পর সেদিনের এক্সিডেন্টের কথা স্মরণ করায় উনি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন, বাবা আর মায়ের কথা ভেবে আরও উত্তেজিত হয়ে কান্না করা শুরু করেছেন। দ্রুত ওনার বাবা মাকে এখানে আসতে বলবেন। ওনাকে উত্তেজিত করবেন না, শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন।”(শান্ত স্বরে)
সবাই মাথা নাড়ালো। যার অর্থ তারা ইলার খেয়াল রাখবে, উত্তেজিত করবেনা, শান্ত রাখার চেষ্টা করবে। ডাক্তার শাফান ইলার দ্রুত সুস্থতার জন্য কিছু ওষুধ দিয়ে চলে গেল। পরপরই আদিত বাড়ি আসলো। হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে ইলার কক্ষে আসলো।
আদিত কক্ষে আসতে মিতালি, বিপুল রায় বাহিরে গেলেন। শেরহাম আদিতের কাঁধে হাত রেখে মৃদু হাসলো। বললো,
“উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল, ডাক্তারশান্ত করার জন্য ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছেন।”(মৃদু হেসে)
অতঃপর সারুকে নিয়ে বের হলো। সবাইকে চলে যেতে দেখে নার্সটিও বের হয়ে গেলো। আদিত একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইলার দিকে। ইলা এখন ঘুমাচ্ছে। আগেও ইলা এভাবেই ঘুমাতো। তবে তখন ইলার জ্ঞান ছিলোনা, কথা বলার সম্ভাবনা ছিলোনা, চোখ মেলতোনা। তবে এখন ইলার জ্ঞান আছে, এইতো ঘুম ভাঙার পরেই আদিতের দিকে নিজের চোখ মেলে পিটপিট করে তাকাবে, মৃদু হাসি দিবে। আদিত ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইলার ডান পাশে বসলো। ইলার হাত নিজের হাতে মধ্যে নিয়ে মুঠো করে জড়িয়ে ধরলো। ইলার হাতে অধর ছুঁইয়ে থেমে থেমে বললো,,
নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ৩০
“অবশেষে, অবশেষে তুমি আবারও চোখ মেলে তাকালে। আবারও আমায় ভালোবাসি বলবে। দেখো এখন সবটা ঠিক আছে, দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠো। আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা খুব নিকটেই, ভালোবাসি আমার আলুকে।”(থেমে থেমে)