নীলের হুরপাখি পর্ব ১৩
কারিমা ইসলাম কেয়া
ফিরতে ফিরতে ওদের অনেক রাত হয়ে গেলো। হুর ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় এসে বসলো। তখনই তার নজরে এলো একটা বক্স। বক্সটা পারপেল পেপার দিয়ে মুড়ানো।
আজ ইংরেজিতে 2025 সালের 27 অক্টোবোর। গত 6 বছর যাবৎ তার জন্য এই একই দিনে পারপেল কালারে মোড়ানো একটা করে বক্স আসে। এবার ওহ তার ব্যতিক্রম হলো না।
হুরের শরীর ঘামতে লাগলো। কপাল বেয়ে ঘাম গালে এসে ঠেকলো। হুর বাম হাতের বৃদ্ধা আগ্ঙুল দিয়ে মুছে নিল।
হুর ঃ আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার এই বক্সে কিহ আছে।
কারো যত্ন সহকারে মোড়ানো বক্স হুর কৌতুহলী বসত তাড়াহুড়ো করে খুলতে লাগলো।
ভিতর থেকে বেরিয়ে আসলো ডাইমন্ডের নেকলেস আর একটা চিঠি।
হুর ঃ পিংক স্টার ডাইমণ্ড নেকলেস।
হুর নেকলেসটি বেডের উপর রেখে চিঠিটি হাতে নিল। হুরের অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে কেননা অপরিচিত ব্যক্তিটি এই প্রথম তাকে চিঠি পাঠিয়েছে।
হুর চিঠির ভাজ খুলে পড়তে লাগলো।
প্রিয় আগুণ
রক্তের দাগ এখনো হাত থেকে শুকায়নি, ঝরঝর করে দু এক ফোটাঁ গড়াচ্ছে এই শ্রুভ্র কাগজে। তবে তুমি চিন্তা করো না আগুণ। এই আঘাতের অনুভূতি কখনোই আমার জন্য বেদনার নয় বরং আনন্দের।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাইতো এই আনন্দঘন মুর্হূর্তে তোমার কথা আরও বেশি মনে পড়ছে। চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। তবুও গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। মনে রেখো এই প্রতিটি শব্দের অধিকারীনি একমাত্র তুমি।
আচ্ছা তুমি কিহ কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছো, আমি ভিজিনি তবে তোমায় নিয়ে ভিজবো একদিন। আচ্ছা তুমি কিহ কখনো পুরো শহর ঘুরেছো, জানি ঘুরা হয় নি, তবে তুমি কিহ জানো এই শহর আমার আয়ত্ত্বে, আমার শহরে তুমায় নিয়ে ঘুরবো একদিন। সুমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে তোমার নরম কমোরে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে লালচে কমলা আবৃত্ত আকাশ গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যেতে দেখব।
এগুলো যদি ভালোবাসা হয় তবে ভালোবাসি আর এই ইচ্ছেগুলো যদি ভালোবাসার লক্ষণ না হয় তবুও তোমায় চাই প্রিয় আগুণ। তোমার উপস্থিতি আমার বুকের বাঁ পাশে অনল সৃষ্টি করে। তাইতো আমার চোঁখে তুমি এক জ্বলন্ত আগুণ।
এই চিঠিটা শুধু আমার আগমণী বার্তা নয়, এটা তোমার জীবনে আমি এক অংশ হিসেবে প্রকাশ।
তৈরি থাক আগুণ আসছি আমি
ইতি
MKR
হুর অবহেলায় চিঠিসহ নেকলেস সোফার উপর ফেলে ঘুমোতে গেল।
বহু অপেক্ষার পর হলেও অপেক্ষারা ক্লান্তিতে ইতি টেনে সেই প্রিয় মুহূর্ত টা আসে। যার জন্য আমরা অপেক্ষা করি। ঠিক তেমনি অন্ধকারের ইতি টেনে ধরণীতে আজও আলোর রশ্নিরা ঝলমল করছে
চারিদিকে ক্লান্তিহীনভাবে নব শিশু হাটঁতে শিখলে যেমন ক্লান্তি তাদের ছুতে পারে না, তারা থামে না।ঠিক তেমনই আলোর রশ্নিরাও থামছে না অন্ধকারকে গ্রাস করে চারিদিকে আলোয় ভরিয়ে দিতে তারা ব্যস্ত।
হুর ক্যালেন্ডারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর 2 দিন পর নীল আর তুবাই ইংগেমেন্ট আর তারপর বিয়ে।
হুর ঃ আর মাত্র 2 দিন পর তোমার আন্টি বদল তারপর বিয়ে কিন্তু প্রথম বউয়ের অনুমতি ছাড়া তহ দ্বিতীয় বিয়ে কথা নিষেধ নীল ভাইই। আর তুমি একবার ওহ আমার অনুমতি নিলে না নীল ভাই। এটা শুধু পাপ নয় অন্যায় ওহ। (হুর নাটকীয় ভঙ্গিতে কথাটা বলে মুখের রেখায় ভয়ংকার হাসিঁ ফুটিয়ে তুললো।)
হুর ঃ উমমম নেকলেসটা ধারুণ দেখা যাক কেমন
লাগে আমায়।
হুর নেকলেসটা গলায় পড়লো। হুরকে বেশ মানিয়েছে এই সিমপল নেকলেসটায়।
নিলাসা দরজা খুলে আচমকা ঘরে ডুকলো।
নিলাসা ঃ কিরে হুর এখন ওহ রেডি হস নি। কলেজ যাবি না।
নিলাসা ঃ হুর ওয়াও নেকলেসটা তহ যাস্ট ওয়াও। তকে ভিষণ মানিয়েছে।
হুর ঃ তাই। তুই ওহ পড়ে দেখ।
নিলাসা ঃ না না তার কোনো প্রয়োজন নেই বইন। যার জিনিস তার কাছেই থাক।পড়ে দেখা যাবে তর এই নেকলেস পড়া নিয়েই আমি ইন্না -লিল্লাহ হয়ে যাব।
হুর ঃ ধুর শালী পুরাই আণ্ডা।
নিলাসা ঃ দেখ বইন তুই আমায় শুধু আণ্ডা না আণ্ডা থেকে বের হওয়া হাসেঁর ছানা, মুরগির ছানা ,কোয়েল পাখি – টিয়া পাখির ছানা – পোনা বললেও আমি তর এই নেকলেসে আমার এই হাতির কলিজা নিয়েও টাচস্ করছি না।
পরে দেখা যাবে আমার হাতই থাকবে না।
হুর ঃ হাতির কলিজা কিন্তু তুই তহ মানুষ, নাকি আমি ভুল বুঝতাম এতদিন। তুই আসলে আমার ভাইয়ের ভাস্যমতে সেই আদিকালের পুরোনো একহাজার বছরের ডাইনী।
নিলাসা ঃ না আমি তর ভাইয়ের ভাস্যমতে সেই আদিকালের ডাইনী নয় বরং সেই সন্ন্যাসিনী যিনি মানুষ হয়েও 100 বছরের তপসার পর কাল নাগীনির রুপ পেয়েছে।
এখন এই রুপের বিষ দিয়েই তর ভাইকে আমি ঘায়েল করে দিব।
লামীম ঃ কার রুপের এতো জ্বালা ধরেছে যে তার ওই ইয়েচাটাঁ রুপ দিয়ে আমায় ঘায়েল করতে চাইছে। তার উদ্দেশ্য বলছি, ওইসবে আমার ইয়েটাও নারাতে পারবে না মানে চুল।
লামীমের হঠাৎ উপস্থিতিতে নিলাসার মুখটা চুপসে যায়।
লামীম ঃ হুরজান এই নে তর ফেবরেট চকলেট।
ফকিন্নি টকিন্নি কেউ ভিক্ষা চাইলে দুই একটা দিয়ে দিস। নাহলে আবার পেটখারাপ হওয়ার চান্স থাকে।
নিলাসা ঃ হুর তর ভাইকে বলে দিস শুধু তর ই ভাই নেই ভাই আমার ওহ আছে।
নিলাসা স্বভাব বশত গাল ফুলিয়ে চলে গেল।
নিলাশা রাগে খট করে দরজা লাগিয়ে দিল।
নিলাশা ঃ কিহ ভেবেছে টা কিহ যখন খুশি আমায় এভাবে অপমাণ করবে ওই নারকেলটা। আমি আজই আমার ভাইকে নালিশ করবো। (নিলাশা কান্না জুড়ে দিল)
নিলাশার কাদঁতে কাদঁতে বালিশটা নিজের কোলে নিয়ে নিল। বালিশটা সরাতেই বেরিয়ে আসলো একটা হলুদ রাঙ্গা শাড়ী, তাজা বেলি ফুল আর কিছু চকলেট। তার উপর ছোট্ট একটা চিরকোট।
তাতে লেখা আদিকালের ডাইনী।
নিলাশা নাক মুছে নিল।
নিলাশা ঃ চাইনা আমার এইসব যখন তখন অপমাণ করে আদিকালের ডাইনী, শুকনা পেকাটি, পেত্নী বলে। আবার দরকার হলে নীলা, নীলা বলে ডাকে।
হুর সিড়ি বেয়ে নামছে তার গলায় চকচক করছে পিংক স্টার ডাইমণ্ডের নেকলেস। যা উপস্থিত সকলের নজর কাড়লো কিন্তু কেউ কোনো প্রশ্ন করলো না।
রক্তিম ঃ হুর খুব সুন্দর লাগছে তকে।
রক্তিম নীলের দিকে তাকিয়ে বললো।
নীল ঃ হুর এক কাপ কফি বানিয়ে আনতো।
রুহানি ঃ আমি যাচ্ছি।
নীল ঃ না মা হুরের হাতের কফিই আমি খাবো। আজ পুরো 4 দিন যাবত ওর হাতের কফি খায় না।
নীল একদম শান্ত ভঙ্গিতে বসে মোবাইল স্ত্রল করছে সোফার উপর বসে। বাড়ির দুই কর্তা অনুপস্থিত কমল সরকার বসে সংবাদ পত্রে চোঁখ বুলাচ্ছে।
হুর ঃ নীল ভাইই এই নাও তোমার কফি।
হুর বাগাণে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নীল থামিয়ে দিল।
নীল ঃ দ্বারা হুর কফিটা তহ আগে টেস্ট করি এই চারদিনে না আবার কফি বানানো ভুলে গেলি।
হুর ঢোক গিলল।
নীল ঃ রিলাক্স পাখি,,,।
নীল কফিতে চুমুক দিল। ওমনি মুখ বিকৃত করে কফিটা থু দিয়ে ফেলে দিল। পুরো কফি হুরের দিকে ছুড়ে মারলো। হুরের বুকের অংশ পুড়ে গেল।
হুর ঃ আআআহহহহহহহ মা জ্বলে গেল।
লামহা রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে আসলো হুরের চিৎকারে।
লামহা ঃ হুর এই হুর খুব কষ্ট হচ্ছে মা। দ্বারা নেকলেসটা খুলে দিই এটাঁর সাথে টাচস্ লাগলে আরও বেশি ব্যথা করবে।
লামহা নেকলেসটা খুলে দিল হুরের গলা থেকে।
রুহানি, লামহা,রুজি, নিলাসা, চারুলতা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো হুরকে নিয়ে।
কমল ঃ এটাঁ কোন ধরনের ব্যবহার নীল। হুর তোমার চাকরানী নয় কারও হাতে কফি ভালো না লাগলে নিজে বানিয়ে খাবে।
নীল ঃ হ্যাঁ হুর আমার চাকরানি আমার ওর সাথে যখন যেমন করতে মন চাইবে আমি তেমনি করবো। আর আমার ব্যবহারের ধরণটা যেমনই হোক তোমাদের মতো বাবা, চাচাদের কাছ থেকে ব্যবহার শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না।
নীল বাসা থেকে চলে গেল।
নীলের হুরপাখি পর্ব ১১+১২
হুর আর নিলাসা আজ কলেজ যায় নি। সকালের ঘটনার পর হুরকে মলম লাগিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় লামহা।
দুপুর 1 টা হুর ঘুম থেকে উঠে সাওয়ারে যায়। ঠাণ্ডা পানি স্পর্শ হুরের পুড়ে যাওয়া বুকে অনুভব হতেই হুর যণ্ত্রনায় কুকরে উঠে।
অন্যদিকে নীল অফিসের কেবিনে বসে আছে। তার ডান হাত গরম ধোঁয়া উঠা কফিতে ডোবানে।
অন্যহাতে ল্যাবটপের স্ত্রিনে ভেসে উঠেছে হুরের যন্ত্রনাদায়ক কুকরানো কমল মুখ খানা।
