নীলের হুরপাখি পর্ব ১৪
কারিমা ইসলাম কেয়া
অন্যদিকে নীল অফিসের কেবিনে বসে আছে। তার
ডান হাত গরম ধোঁয়া উঠা কফিতে ডোবানো। অন্যহাতে ল্যাবটপের স্ত্রিনে ভেসে উঠেছে হুরের যণ্ত্রনাদায়ক কুকরানো মুখখানা।
হুর শার্টের বোতামগুলো খুলতে শুরু করে। হুরের দৃশ্যমান উনুক্ত গলা, বুকের অংশ পোড়ার সময় লালচে হলেও সেটাঁ পরিবর্তন করে এখন হালকা কালচে রুপ ধারণ করেছে। যেটা দেখতে ভিষণ বাজে লাগছে।
ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে হুরের যন্ত্রনায় মুখটা বিকৃত হয়ে গেলো।
হুর ঃ কেনো নীল ভাইই, কেনো এতো যন্ত্রনা দাও আমায়। আমার না খুব কষ্ট হয়, কলিজাটা ছিড়ে আসতে চায়, শ্বাস অবরোধ হয়ে আসে। পৃথিবীর বুকে নিজেকে ভিষণ ভারি মূল্যহীন এক সস্তা কীট মনে হয়।
আবার কখনো তুমিই আমার ঠোঁটের কোণে হাসিঁর রেখা, হাড়কাপানো শীতের সকালে ধোঁয়া উঠা উত্তপ্ত গরম চায়ের প্রথম চুমুক,লাভাময় উষ্ণ গরমে শীতল হাওয়া যা আমার হৃদয় অব্দি প্রসারিত হয়ে শীতল অনুভব করায়। কখনো তুমিই আমায় নিজেকে বিশেষ অনুভব করাও কখনো তুমিই আমায় পোড়াও।
এ কেমন বহুরূপী রুপ তুমার, যা আমায় পাগল করে দিচ্ছে। এভাবে আস্তে আস্তে না মেরে একেবারেই মেরে ফেলছো না কেন আমায়।
হুর হু হু করে কেদেঁ দিল।
আর পারছি না আমি টিকে থাকার লড়াইয়ে বাচঁতে। নিজের অধিকারকে ছেড়ে দিতে দিতে নিজের জীবনে নিজেই এক আপত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নীল ল্যাবটপটা বন্ধ করে দিল। কফির মগটা স্বজরে আছাড় মারলো।
অফিসে ভাংচুর করতে লাগলো। একে একে সবাই বাইরে ভীর জমাতে লাগলো বাইরে কিন্তু কেউ ভিতরে আসার সাহস পেল না।
তুবা এসেছে নীলের সাথে দেখা করতে। নীলের কেবিনের সামনে এত মানুষের ভিড় দেখে তুবা আতংকে ভিতরে আসে।
তুবা ঃ নীল বেইবি তুমি এইসব কিহ করছো। লোক বেইবি আমার দিকে তাকাও। কিহ হয়েছে আমায় বলো।
তুবা নীলকে সামলানোর জন্য নীলের হাত ধরতে গেলেই। নীল তুবার হাত ঝটকা দিয়ে ছারিয়ে তুবাকে ঠাসিয়ে একটা চড় দিল। তুবা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল।
নীল ঃ তোর জন্যই আমার জীবনে যত সমস্যা তৈরি হচ্ছে নষ্টা নারীলোক। তকে তহ আমি মেরেই ফেলবো আজ।
নীল হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে তুবার দিকে ক্রধে এগিয়ে যেতে লাগলো। তখনই অনুপম আর সাফিন চলে আসে। নীলকে আটঁকায়।
অনুপম ঃ তুবা তুমি এখান থেকে চলে যাও নীলের রাগ সম্পর্কে তহ জানোই নিশ্চয়ই ।
তুবা উঠে দাঁড়ালো। নীলের দিকে এগিয়ে আবার নীলের ক্রধেভরা চোঁখকে ভয় পেয়ে বেরিয়ে গেল।
তুবা চলে যেতে যেতে শুনতে পেল স্টাফদের গুঞ্জন। নীলাদ্র স্যার তার হবু বউয়ের গায়ে হাত তুলেছে।
কেউবা বলছে, বড়লোকদের বড় বড় ব্যাপার চল বাদ দে।
তুবা অপমাণে জর্জরিত হয়ে চলে গেল। কিন্তু মনে মনে তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এটা তুমি ঠিক করলে না নীল, এর ফল খুবই ভয়ানক হবে।
অনুপম দরজা বন্ধ করে দিল।
নীল নিজের পোড়া ডানহাত অনবরত দেয়ালে ঘুসি দিচ্ছে। অনুপম আর সাফিন দুজনেও তাকে থামাতে পারছে না।
নীল ঃ তুমি কেন বুঝিস না পাখি তকে পুড়িয়ে আমিই দগ্ধ হয় সেই অনলে। তর উচ্চারিত প্রতিটা শব্দ প্রতিধ্বনিত হয় বারবার আমার হৃদয়ে।
আমি তোলপাড় হয়ে যায়, নিংশ্বেষ হয়ে যায়, হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে যায় তর ওই আখিঁর চাহনিতে। যা আমায় বাধ্য করে প্রতিটা পদক্ষেপে তর ইশারাতেই মত্ত হতে।
নীলকে কোনভাবেই থামাতে না পেরে সাফিন বলে উঠলো।
সাফিন ঃ নীল থেমে যাহ তর হুরপাখির নামে।
নীলের হাত থেমে গেল। নীল মুগ্ধ করার মতো হাসঁলো কিঞ্চিৎ বেদনা তার মুখে ফুটে উঠলো।
নীল ঃ সেই দূর্বলতা ধরেই টানলি।
অনুপম নীলকে বসালো চেয়ারে।
অনুপম ঃ সাফিন ডক্টরকে কল দে। এটা সিরিয়াস।
রাত 11 টা ছুইছুই নীল বাড়ি ফিরলো । সিড়ি বেয়ে হেটেঁ হেটঁ থামলো তার গন্তব্যে।
তার কাছে থাকা চাবিটা দিয়ে হুরের রুমের দরজা খুললো। মেয়েটা অভ্যেস ভেঙ্গে আজ জেগে নেই তার জন্য। নীলের ভিষণ রাগ হলো। নীল ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে গেল হুরের দিকে। হুরের মুখের দিকে তাকাতে নিমিষেই তার রাগ হাওয়ায় মিঠাইয়ের মতো মিষ্টি ছোয়ায় ভেনিস হয়ে গেল।
নীল বিছানার পাশে বসলো।
নীল ঃ মাই সিল্লি গ্রার্ল, আমার হুরপাখি, আমার অবাধ্য বালিকা, আমার কলিজা।
নীল হুরের গলায় আলতো চুমু খেতে লাগলো। পকেট থেকে একটা মলম বের করে লাগাতে লাগলো। মলমের ঝাজে হুর ঘুমের মাঝেই উহ্ শব্দ করে উঠলো।
নীল ঃ কলিজা খুব কষ্ট হচ্ছে।
নীল ফু দিতে লাগলো।
সকাল বেলা নাহিদ নীলের রুমের দরজা খুলে ভেতরে গেল।
নাহিদ ঃ হোয়াট রাবিশ নীল, গতকাল তুমি তুবার গায়ে হাত তুলেছ৷ কাল তুমাদের ইংগেইজমেন্ট নীল।
নীল আদোঁ আদোঁ চোঁখ খুললো।
নাহিদ ঃ তুমি শুনতে পাচ্ছ আমি কিহ বলছি।
নীল শুয়া থেকে উঠে বসলো। কিন্তু কোনো উত্তর করছে না।
নাহিদ ঃ নীল তুমি ভালো করেই জানো তুবার সাথে তুমার বিয়েটা কতোটা ইমপরটেন্ট আমাদের
কোম্পানির জন্য।
নীল আমি কিচ্ছু জানি না তুমি এখনি তুবাকে কল করে সব মিটিয়ে নিবে।
নীল তুমি শুনতে পাচ্ছো আমার কথা। নাহিদ নীলের শরীর ঝাকাতে ঝাকাতে বলল।
নাহিদ ঃ নীল এতো তুমার প্রচুর জ্বর।বাড়িতেই থাকো আজ বেরোনোর কোনো প্রয়োজন নেই।
নাহিদ বেরোনোর আগে রুহানিকে বলে গেল।
নীল আজ সকালের খাবারটা রুমেই খেল।
অন্যদিকে হুরের ওহ ভিষণ জ্বর হয়েছে। কিন্তু সে কোনোভাবেই নাতো খাবার খাচ্ছে আর নাতো ঔষধ।
হুর বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে তখনই রুমে প্রবেশ করলো নীল।
হুর নীলকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিল।
নীল থুতনি চেপে হুরের মুখটা উপরে তুললো।
নীল ঃ সমস্যা কিহ ঔষধ কেন খাচ্ছিস না।
হুর ঃ ইচ্ছে করছে না তাই।
নীল ঃ তহ সবকিছু তর ইচ্ছেতে হচ্ছে?
নীলের প্রশ্নে হুরের দুই চোঁখে পানি এসে জমলো। হুর নীলের দিকে তাকালো এই আখিঁযুগল নিয়ে।
হঠাৎ নীল একটা কাজ করে বসলো। হুরের দুই হাত চেপে ঠোঁট জোড়া দখল করে নিল।
নীল আলতো ভাবে চুষতে লাগলো হুরের ঠোঁট জোড়া। হুরের মাঝে বরাবরের মতো সেই একই প্রতিক্রিয়া তৈরি হলো।
নীলের হুরপাখি পর্ব ১৩
জ্বরের কারণে দুজনেরই শ্বাস তুলনামূলকের চেয়ে ভারী হতে লাগলো।যেন অগ্নিকাণ্ড দাউদাউ করে বাড়ছে। হুর আর নীল দুজনেই ডুবে যেত লাগলো সেই উত্তপ্ত লাভাময় সাগরে।
এরমাঝে হুর তিতা কিছু অনুভব করে নীলকে ছাড়াতে চাইলো কিন্তু নীল আরো গভীরে যেতে লাগলো।
