নীলের হুরপাখি পর্ব ৭

নীলের হুরপাখি পর্ব ৭
কারিমা ইসলাম কেয়া

ক্লাস শেষে অভিক হুর আর নিলাসাকে বলে গেল।যেন তারা ছুটির পর তার সাথে দেখা করে।
হুর আর নিলাসার ক্লাস শেষ। হুর আর নিলাসা অভিক স্যারের সাথে দেখা করতে গেল।
হুর আর নিলাসা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।হুর নক করল,
হুরঃস্যার আসব?
অভিকঃ ইয়েস কাম।
হুর আর নিলাসা ভিতরে গেল।
অভিক ঃ তোমাদের জন্যই ওয়েট করছিলাম।বসো,,,,,,,
হুর আর নিলাসা বসল

অভিক ঃতোমাদের দুজনেরই রেজাল্ট এবার খুবই বাজে এসেছে, তোমাদের পেরেন্সের নাম্বার টা দাও আমায়।
নিলাসা আর হুর দুজন দুজনের একবার হা করে তাকিয়ে আবার স্যারের দিকে তাকালো।
নিলাসা ঃ স্যার প্লিজ প্লিজ এমন করবেন না,আমরা ফেসেঁ যাবো।এরপর থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবো।কথা দিচ্ছি আর আপনাকে ফাকিঁ মানে আপনার ক্লাস ফাকিঁ দিব না।
অভিক ঃ সেটার সুযোগ ওহ আর আমি তোমায় দিব না অনেক দিয়ে ফেলেছি।
কিহ দেওয়া নেওয়ার কথা এত হচ্ছে স্যার।(লামীম)
লামীম এন্টি নেয় ওদের কথার মাঝেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হুর আর নিলাসা চমকে উঠে লামীমের গলা শুনে।
লামীমের গলা শুনে অভিক ওহ খানিকটা ইস্তত হয়।
অভিক ঃকে আপনি?
হুর ঃ আমার ভাইয়া।
অভিক ঃ ওহ আচ্ছা (জোর পূর্বক খানিকটা হেসেঁ)।আসলে আমি ওদের পড়ার টপিক নিয়েই কথা বলছিলাম।
লামীম ঃ পড়ার টপিক নিয়ে কথা ক্লাসে হবে এখানে কেন?
লামীম আর কিছু বলতে পারছে না আসলে সে বিষয়টা হঠাৎ পরিকল্পনা মাফিফ না হওয়ায় ঘাবরে গেছে।
লামীম দুহাতে হুর আর নিলাসার হাত ধরে বেরিয়ে যায়।

কিরে হুরজান,নিলা তদের হলো, আর কত সময় লাগবে তদের রেডি হতে।
এইতো এইতো ভাইয়া আমি রেডি। (হুর)
আর আমিও (নিলসা)
চল তাহলে এবার।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে হুর,নিলাসা আর লামীম রওনা হবে তখনই লামীমের কল আসলো।
লামিম ঃকিহহহহ এটা কিভাবে হলো আমি এখনই আসছি আব্বু।
হুরজান,নীলা সরি আমি যেতে পারবো না কাজ আছে আমার অফিসে যেতে হবে।
লামহা ঃ কিহ হয়েছে লামীম?
লামীম ঃ মা এখন বলার সময় নেই আমি আসছি।
রুজিনা ঃ আরে বাবা সাবধানে যাহ।

রুহানি ঃ দ্বারা তরা এতো টেনশন করিস না আমি দেখছি কিহ হয়েছে।
হুর আর নিলাসা রেগে ওপরে চলে গেল।
নিলাসা ঃ ধুর বাল,এতোক্ষন সময় নিয়ে রেড়ি হলাম আর শেষে কীনা যেতেই পারলাম না।
হুর ঃ হুমমম।
নিলাসা ঃশুধু হুমমম অন্যসময় হলে অতীত বর্তমান সব তুলে বাড়ি মাথায় তুলতি আর এখন শুধু হুমমম।
হুর ঃ হুমমম।
নিলাসা ঃ সত্যি করে বল তহ হুর তর কিহ হয়েছে।কিছুদিন যাবৎ তর যেন কিছুতেই ইন্টারেস্ট নাই।কোথায় যেন হারিয়ে যাসস।
হুর ঃ কিছু না ব্যাস এমনি। আচ্ছা নীল ভাইকে তহ আজ একবার ওহ দেখলাম নাহহ।
নিলাসা ঃ কেন তুই জানিস না নীল ভাই ট্যুরে গেছে কবে ফিরবে তারও ঠিক নেই।
হুর ঃ ওহ।

রাত্রি প্রায় 1 টা বাজে হুরের চোঁখে ঘুম নেই।সে তার রুমে হাটাঁহাটিঁ করছে।
এরই মাঝে হুর নিজের রুমের জানালার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো। তার শখের খোলা জানালা আর নেই।
নীল নিলাসা আর হুরের রুমের জানালার গ্রিল লাগিয়েছে। কারণটা হুরের অজানা।
নীলকে এক কাপ কফি বানিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতি রাতেই হুরকে অপেক্ষা করতে হয়।যেটা এখন হুরের অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে।

হয়তোবা হুরের এই অভ্যেসের কারণেই আজ তার ঘুম আসছে না কিছুতেই।
কিছুদিন পরেই নীলের বিয়ে তারমানে হুরকে আর নীলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।আজকাল মাঝে মাঝেই তার মাথায় এমন আজগুবি চিন্তা ঘুরে কিন্তু হুর খুশি হওয়ার বদলে যেন বিরক্ত হয়।
কাল রাতেই আমি মনস্থির করেছি আমি নীল ভাইয়ের থেকে দূরে থাকব।কিন্তু কথাটা যতবার ভেবেছি, ভাবছি ততবারই যেন আমার মস্তিষ্ক সায় দিলেও মনটা ব্যথা পাচ্ছে। অনুভূতিরা যন্ত্রনা দিয়ে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমায় নীল ভাই।কেন, কেন এমনটা হচ্ছে নীল ভাই।(হুর)
হুরের শ্বাস বেড়ে গেল, সে রেগে সামনে থাকা পানিভর্তি কাচের গ্লাসটা ফ্লোরে ফেলে দিল এক হাতের ঝটকায়।
গ্লাসটা রিনরিন শব্দ হয়ে ভেঙ্গে গুরিয়ে পড়লো, কাচেঁর ছোট বড় ভেজা মিশ্রনের টুকরো। হুর সুক্ষ চোঁখে তাকিয়ে দেখল,তার মনে খানিকটা চাপা তোলপাড় শুরু হলো। এগুলো যেন শুধুই কাচেঁর টুকরো নয় কোনো আগমনী বার্তা।
হুর একটা টুকরো আলতো হাতে তুললো। হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই আঙ্গুলের ডগা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ল।

রাত্রির আধারে কত না বলা কথাদের ওহ যেন বুলি ফুটে আবার কখনোবা তারা নিশ্চুপ হয়ে যায়।
রাত্রি গুলো কারে কাছে আরামদায়ক আবার কারো কাছে যন্ত্রনাদায়ক। কারো কাছে মধুর আবার কারো কাছে তিক্ত।
প্রতিদিনের মতো গভীর রহস্যময় আধাঁর রাত্রীকে পাড়ি দিয়ে আজ আবার ওহ ধরনীতে এক শ্রুভ্র সকালের সূচনা।
সরকার বাড়িতে নিত্যদিনের মতোই আমেজ। তবে নীলদ্র নেই।
বিকেলে রক্তিম হুর,নিলাসা আর কলিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো।
রাত 11 টা
নিলাসার ঘুম আসছিল না তাই সে মোবাইল চালাচ্ছিল, কেউ তার রুমে খটখট আওয়াজে নক করছিল।
নিলাসা বাইরে বেরোলো।

নিলাসা ঃ লামীম ভাই তুমি এতরাতে এখানে?
লামীম ঃ কেন অভিক স্যারকে আশা করেছিলি?
নিলাসা ঃ মানে?
লামীম রুমের ভিতরে ঢুকে নিলাসার গলা চেপে ধরল। গলা চেপে ধরে পিছতে পিছতে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল নিলাসাকে।
লামীম ঃ একদম নাটক করবিনা আমার সাথে তর সাথে ওই অভিকের যদি কিছু নাই থাকে তাহলে ছেলেটা তর জন্য বিয়ের প্রস্তাব কিভাবে পাঠায়।
নিলাসার ধম আটঁকে আসতে লাগলো। একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগল।
লামীম নিলাসাকে ছেড়ে দিল।নিলাসা ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলো।
লামীম ঃ একটা কথা স্পষ্ট ভাবে মাথায় রাখবি সবসময়, কলেজে তকে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়, পাত্রী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য নয়।
এরপরে যদি এমন কিছু হয় তাহলে পা কেটে বাড়িতেই বসিয়ে রাখব।
লামীম চলে গেল নিলাসার রুম থেকে।

কেটে গেল মাঝে 15 দিন।
হুর প্রতিরাতের মতো আজ ওহ হাটাঁহাটিঁ করছে তার রুমে।তখনই গাড়ির হর্ণ পেয়ে জানালার ধারে যায়।
নীল ভাইই। কথাটা উচ্চারণের সাথে সাথেই তার মুখে মিষ্টি হাসিঁ ফুটে উঠলো তার শত না চাওয়া সত্ত্বেও।
হুর নীলের দিকে তাকিয়ে রইল বাট নীল একবার ওহ তাকালো না।
নীল ক্লান্ত পায়ে হেটেঁ নিজের রুমে চলে গেল।রুমে গিয়ে নীল দরজা বন্ধ করে দিল।
হুর খুব যত্নে কফি বানিয়ে নিয়ে গেল কিন্তু নীলের রুমের দরজা বন্ধ। হুর বারকয়েক ধাক্কালো, নীল দরজা খোললো না।
হুর তবুও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল।

রক্তিম ঃ হুর পরি কফি টা বরং আমায় দে, বড্ড প্রয়োজন বোধ করছি।(রক্তিম পিছন থেকে বলে উঠলো)।
রক্তিম হুরের হাত থেকে কফিটা নিল,
রক্তিম ঃ যাহ ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।
হুর আর দাঁড়ালো না চলে গেল।রক্তিম হুরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক বসানোর আগেই নীল দরজা খুলে কফির মগটা ছিনিয়ে নিল।
রক্তিম ঃ আরে আস্তে ভাইই,কফিটা গরম আমার হাতটা পুড়ে যাবে।আর কফিটা খাওয়ার যখন এতই শখ তাহলে এতক্ষন বের হচ্ছিলে না কেন?
নীল ঃ তখন মুড ছিল না কিন্তু এখন আমার মুড চেঞ্জ হয়েছে।
রক্তিম ঃ আরে ভাই ইনফম করে তহ আসবে কাউকে কিছু না বলে চলে গেলে আবার চলে ওহ আসলে।
নীল ঃ এখন এত উত্তর দেওয়ার আমার মুড নেই তুই যেতে পারিস।
নীল দরজা বন্ধ করে চলে গেল।

সকাল বেলা, বাড়ির তিন গিন্নি রান্না করছে তবে আজ নীলের পছন্দের আইটেম গুলো রান্না করা হচ্ছে।এতদিন পর ছেলেটা বাসায় ফিরল।
চারুলতা সোফায় বসে পান চিবচ্ছে আর টিভি দেখছে।
একটু পর নিলাসা,হুর, কলি ওরাও এসে দাদির পাশে বসলো।
চারুলতা তার নাত্নীদের সাথে গল্পগুজব করা শুরু করে দিল।
রান্না ওহ শেষ, রুহানি,লামহা,রুজিনা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।মেইড রাও সাহায্য করছে।
চারুলতা কুলি করে আসলো খাবার খেতে।
ডাইনিং টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।
নাহিদ সরকার ঃ নীল রাতে কখন ফিরেছো কাউকে ইনফম করে আসলে না কেন।নিজের ইচ্ছে মতো চলো, আমি যে তুমার বাবা আমাকে কিহ কখনো কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করো না।
হায়দার ঃ আহ,,,ভাই থাক এসব কথা এখন।
কমল ঃ তোহ নীল কেমন কাটলো দিনগুলো?
নীল ঃ ভালো চাচ্চু।

সকলে খাওয়া শেষে অফিস বের হয়ে গেল।নীল আজ অফিসে যাবে নাহ তাই বাসায় ই।
হুর আর নিলাসা কলেজ যাওয়ার জন্য বের হবে তখনই তুবা আসলো। নীলের বাড়ি আসার খবর শুনে।
তুবাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কেন যেন এটা একদমই সজ্জ হচ্ছে না হুরের।
নিলাসা ঃ হুর চল আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
হুর ঃ নাহ আমি যাবো না শরীরটা ভালো লাগছে না।
লামহা ঃ কেন তর আবার হঠাৎ করে কিহ হলো।
হুর ঃ মা আসলে আমার মাথা ব্যথা করছে।
হুর নিজের রুমে চলে গেল।
নিলাসা ঃ মা হুর না গেলে আমিও যাব না আর ভাবি ওহ তহ এসেছে।

হুর পানি খাওয়ার জন্য নিচে নামলো।
রুহানি ঃ হুর কফি দুটো নীল আর তুবাকে দিয়ে আয়।নীলের রুমে,,,,,
নীল আর তুবা ভীষণ কাছাকাছি বসে আছে সোফায়।
তুবা ঃ নীল ভিষণ ভালোবাসি তুমায়। তুমায় কাছে পেতে ইচ্ছে করে সবসময়।যাস্ট একবার, প্লিজ একবার কিস মি।

নীলের হুরপাখি পর্ব ৬

হুর হঠাৎ করে নক না করেই রুমে ডোকে পড়ে। এতে বিরক্ত হয় তুবা।কিন্তু জোর পূর্বক মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব আনে।
হুর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই কফি দিয়ে বেরিয়ে যায়।

নীলের হুরপাখি পর্ব ৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here