নীলের হুরপাখি পর্ব ৮

নীলের হুরপাখি পর্ব ৮
কারিমা ইসলাম কেয়া

হুর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই রুম থেকে চলে যায়।
তুবা ঃ নীলল তহ যেটা বলছিলাম,,,,,
নীল ঃ গেট আউট।
তুবা ঃ হুউউউ।
নীল ঃ গেট আউট অফ মায় রুম। (নীল চিৎকার করে বলল)
তুবা অপমানিত বোধ করল, তবে রুম থেকে চলে গেল।
নীল ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল।
নীল ঃ Rubbish
তুবা বেরিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওণা হলো।পিছন থেকে রুহানি ডাকল,,,
রুহানি ঃ তুবা মা আমার। এভাবে চলে যেওনা।জানোই তহ আমার ছেলেটা এরকমই। একটু অন্যরকম সবাই চেয়ে।
তুবা কারও কোন কথা না শুনেই চলে গেল।
গাড়িতে বসে
তুবা ঃ Fruitless ( ব্যর্থ হওয়া) এত চেষ্টার পরেও নীলের কাছকাছি যেতে পারলাম না শুধুমাত্র ওই হুরের কারণে। ওই মেয়েকে তহ আমি এইজন্য উচিত শিক্ষা দিব।
নীল তুমি আজকে যেটা আমার সাথে করলে সেটা একদম ঠিক করোনি। বিয়ে তহ তোমার এই তুবাকেই করতে হবে।যত চেষ্টায় করো না কেন তুমি এই তুবার ভালোবাসার জ্বালে ফাসঁতেই হবে।বেইবি যাস্ট ওয়েট,,,,,

হুর নিজের চোখেঁর এক ফোটা পানি মুছে জেদি গলায় বলল,
অনেক হয়েছে নীল ভাই, ব্যাস অনেক হয়ে গেছে আমি আর ছেসরামি করব না, আমার তোমাকে চাই না।
তুমি যদি সবটা ভুলে এগিয়ে যেতে পারো, তহ আমি কেন পারবো না।আজ থেকে আমার জীবনে তোমার আর কোনো জায়গা নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভাই ভাই ভাই এইটা ঠিক না, তুই বলেছিলি আমাদের লং ড্রাইবে নিয়ে যাবি কিন্তু এখন তহ দেখছি তুই আমাদের সোজা কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যানে আছিস।(সাফিন)
নীল তবুও থামছে না, হাওয়ার বেগে গাড়ি চালাচ্ছে।
অনুপম ঃ ব্রো থামম প্লিজ, সাফিন তোহ তাও সিংগেল কিন্তু আমি, আমার যে এতগুলো ললিপপের মতো মিষ্টি গ্রার্লফ্রেন্ড আছে তাদের কিহ হবে।বেচারি গুলো তহ বিয়ের আগেই বিধোবা হয়ে যাবে।
সাফিস ঃ ভাইই থামমম আমার ভবিষ্যত বউটার সাথে এমন অবিচার করিস না আল্লাহর গজব পড়ব তর উপর।
গাড়ির স্পিড আরো বেড়ে গেল।
সাফিন ঃ অনুপম বেশি বলে ফেললাম কিহ।
অনুপম ঃ সাফিন সামনে দেখ, একটা ট্রাক আসছে।নীল বামে যাহ,,,
নীল কোনো কথায় শুনছে নাহ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (অনুপম আর সাফিন একসাথে জোরে জোরে পড়তে থাকল)
নীল অবশেষে শেষ সময় গাড়িটা সরিয়ে নিল।

কেটে গেছে মাঝে আরও কিছু দিন হুর এখন আর আগের মতো নীলের জন্য পাগলামি করে না।
নিজের লাইফ নিয়ে সে ভিষণ ব্যস্ত।
নীলকে এক কাপ কফি বানিয়ে দেওয়ার জন্য আর রাত জেগে বসে থাকে না।
নীল ও হুরকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে না।দুজনই দুজনকে না চেনার মতো করে চলছে।
রাত 12 : 30
অনুপম ঃ আচ্ছা নীল তুই এভাবে হুরকে ইগনোর কেন করছিস।
নীল সিগেরেটে এক টান দিল। অরেঞ্জ ঠোঁট জোড়া থেকে সিগেরেট টা হাতের দু আঙ্গুলের ভেতর চেপে নিচে নামাল।
মুখ থেকে শ্বাস ছেড়ে ধোয়া বের করলো।

নীল ঃ আমার খোদা জানে, ওর চেয়ে আর কোনো বড় নেশায় আমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে নি।
ওকেও বুজতে হবে, অনুভব করতে হবে আমার হৃদয়কে। আমার নেশায় ওকেও আসক্ত হতে হবে।
আমার আশেপাশে কোনো নারীকেই যদি ওর সর্য্য না হয় তাহলে ওহ কিহ পারবে সারাজীবনের জন্য
আমি কোনো নারীর অধিকারে পরিণত হবো এটা মানতে।
ডিসিশন টা ওকেই নিতে হবে।
রাত গভীর হয়েছে। নীল বাসায় ফিরল।
বাসায় ফিরতেই ড্রয়িং রুমে দেখা মিলল মা রুহানিকে।আজকাল উনি ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন।
নীল ঘড়িতে টাইম দেখল। রাত 1 : 45
নীল ঃ কিহ ব্যাপার মা এখনো জেগে আছো কেন? না করেছি না একদিন রাত জাগতে হবে না আমার জন্য।আমি খেয়ে এসেছি, তুমি ঘুমিয়ে পড়।
রুহানি ঃ নাটক না করে ভাত বাড়ছি খেয়ে যাহ।
নীল কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
রুহানি ওহ বুজে গেল তার ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে তাই নিজের রুমের দিকে রওণা দিল। তবে তার চোঁখে এক ফোটা পানি চিক চিক করে উঠলো।

আজ শ্রুক্রবার, খাবার টেবিলে সবাই বসে নাস্তা করছে।
নীল আর হুর সামনা সামনি বসা।
খেতে খেতে হুর ভিষম খেল।
নীল আর রক্তিম দুজনেই পানি এগিয়ে দিল। হুর রক্তিমের হাত থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি খেল।
নীল হুরের দিকে এগিয়ে দেওয়া পানির গ্লাসটা থেকে নিজেই ঢকঢক আওয়াজ তুলে পানি খেয়ে
নিজের রুমে চলে গেল।

নিলাসা ঃ হুর হুর নিচে চল তুবা ভাবি এসেছে।
হুর ঃ তর ভাবি এসেছে তহ আমি কিহ করব, তর ভাবিকে কিহ ধেই ধেই করে মাথায় তুলে নাচব।
নিলাসা ঃ আহ,,হুর আজকাল কেমন কেমন কথা বলিস, চল নিচে যায়।
হুর ঃ বিরক্ত করিস না আমাকে, উপন্যাস পড়ছি।
নিলাসা ঃ পড়ে পড়িস, চল নিচে যায়।
নিলাসা হুরকে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেল।
তুবা ঃ পিচ্চি ননদিনী কেমন আছো।
হুর ঃ অনেক ভালো। তুমি
তুবা ঃ সেইম টু ইউ।
কলি ঃ চল গ্রার্ডেন্ড থেকে ঘুরে আসা যাক।
নিলাসা, হুর, কলি, তুবা গ্রার্ডেন্ডে গিয়ে ঘুরছে।
নিলাসা ভিবিন্ন ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তুবাকে।

ওরা কথা বলতে বলতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।আর হুর হোয়াইট গোলাপ ফুল দেখছে।
হুর একটা গোলাপ ছিরে কানে গোজলো।
তুবা ঃ আরে হুর ওতো দূরে কেন এইদিকে এসো।
হুর সামনে নগ্ন পায়ে এগোতে থাকলো বেখেয়ালি ভাবে। হুর খেয়ালই করলো না সামনে কাচেঁর টুকরো ছড়িয়ে আছে।
হুর এগোতে থাকল। হঠাৎ কারো হাতের টানে হুর ঘুরে গেল।
কিন্তু লোকটি তাল সামলাতে না পেরে হুরকে বুকে নিয়েই পড়ে গেল কাচেঁর টুকরোর উপর।
নীল চোঁখ বন্ধ করে আছে।মুখে ফুটে উঠেছে বেদনার ছাপ।
নীলের হাত হুরের কমোরে। নীলকে এতটা কাছে পেয়ে মাঝে সেই প্রতিত্রিয়া গুলো কাজ করা শুরু হলো।
তুবা দৌঁড়ে এলো।

তুবা ঃ হুর ওঠো নীলের পিঠে কাচঁ বিধে গেছে।তুবা হুরকে নীলের উপর থেকে টেনে দাঁড় করালো।
নীল উঠে দাঁড়ালো। নীল বাগান থেকে হেটেঁ নিজের রুমে চলে যাচ্ছে।
তুবা ঃ নীল নীল দাঁড়াও আমি ওহ আসছিঁ।
নিলাসা, হুর, কলি,তুবা নীলের পিছনে পিছনে যাচ্ছে।
নীল নিজের রুমে চলে গেল।
নীলের পিঠে কাচঁ বিধেছে শুনে রুহানি, রুজি, লামহা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
নীলের পিঠ থেকে কাচঁগুলো বের করছে ডক্টর।
তার রুমে শুধু মা রুহানি, লামীম আর কাউকে এলাও করে নি নীল।
তুবা সোফার উপর বসে আছে। মনে মনে সে ভিষণ ফুসছে। ওইদিনের প্রতিশোধ নিতে তুবা নিজেই সবার অজান্তে কাচেঁর টুকরো গুলো ফেলেছিল।
কিন্তু তুবা বুজতে পারে নি এটা নীলের উপর দিয়ে যাবে।পাশাপাশি নীলের এই আচরণ তুবাকেও ভাবাচ্ছে।
তুবা ঃ তবে কিহ নীলাদ্র হুরের জন্যই আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, না এমনটা হতে পারে না।
আর যদি সত্যিই এমন কিছু হয় তাহলে হুর তুমি প্রস্তুত থাক, তুবার ভয়ংকর রূপ দেখার জন্য।নীল আমার নীলকে আমি আর কারও হতে দিব না।

রাত প্রায় 1 টা
নীল হুরের রুমে ডুকলো হুর জেগেই আছে।
হুর জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
হুর নীলের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
হুর ঃ এতো রাতে আপনি এখানে।
নীল রুমের দরজা বন্ধ করে। নীল হুরের দু কাধ চেপে পিছতে পিছতে একদম হুরের পড়ার টেবিলের সাথে মিশে যায়।
নীল ঃ সমস্যা কিহ।
হুর বুঝতে পারছে না নীল ঠিক কি বলছে।
নীল ঃ I say , তর প্রবলেমটা কিহ। নাতো ঠিক মতো খাচ্ছিস, নাতো ঠিক মতো ঘুমোচ্ছিস, আর নাতো ঠিক মতো পড়ালেখা করছিস।
হুর কোনো উত্তর না দিয়ে নীলের কাছ থেকে ছোটার চেষ্টা করতে লাগলো।
হুর ঃ ছাড়ুন আমাকে।
নীল আরো বেশি রেগে গেল।

নীল ঃ হুর তুই ভালোভাবেই জানিস আমার Avoidance একদম পছন্দ নয়।
নীল অবাধ্য হাতে বই খাতে গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে হুরের কমোর চেপে টেবিলের উপর বসালো,
এক হাত দিয়ে হুরের থুতনি চেপে উপরে তুলল,
নীল ঃ সবসময় ছেড়ে দিতে নয়, মাঝে মাঝে নিজের অধিকারকে কেড়েঁ ও নিতে হয়। নাহলে আপসোস শব্দটাই নিজ সঙ্গে পরিণত হয়।
নীল হুরকে ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। হঠাৎ কেউ তার হাত চেপে ধরল।এবং নীলকে টেনে কোথাও নিয়ে যেতে থাকলো।

নীলের হুরপাখি পর্ব ৭

নীল ঃ আব্বু,,,
নাহিদ ঃ তুমি হুরের রুমে এতো রাতে দরজা বন্ধ করে কিহ করছিলে নীলল
নীল চমকালো না বরং গাড়ো হাসঁল,
নীল ঃ তুমিই মনে হয় এই পৃথিবিতে প্রথম বাবা,যে তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করছে, সে তার বউয়ের সাথে এতো রাতে বদ্ধ ঘরে কিহ করছিল।

নীলের হুরপাখি পর্ব ৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here