নীলের হুরপাখি পর্ব ৯+১০

নীলের হুরপাখি পর্ব ৯+১০
কারিমা ইসলাম কেয়া

নীল ঃ তুমিই মনে হয় পৃথিবীর প্রথম বাবা, যে তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করছে, সে তার বউয়ের সাথে এত রাতে বদ্ধ ঘরে কিহ করছিস।
নাহিদ ঃ নীললল (গর্জে উঠে)
নীল ঃ ভয় পচ্ছেন মিস্টার নাহিদ সরকার, দাবার চাল না আবার উল্টে যায়। (নীল খুব সুন্দর হেসেঁ কথাটা বলল)
নীল চলে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরতেই দেখল হায়দার সরকার দাঁড়িয়ে আছে।
নীল তার দিকে দুষ্টো হেসেঁ ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে চলে গেল।
হায়দার ঃ ভাই এটা হচ্ছে টা কিহ?
নাহিদ ঃ শান্ত হ,,,হায়দার আমরা হারতে পারি না। পরিকল্পনা মাফিকই সব হবে শুধুমাত্র ধৈর্য ধরে রাখ।

হুরের যখন 13 বছর বয়স তখনই 21 বছরের নীলের সাথে তার বিয়ে হয় গোপণে। বিষয়টা তাদের পরিবারের বাইরে কেউই জানে না।
দুই ভাইয়ের পারিবারিক বন্ধন ওহ নিজ ব্যবসায়িক স্বার্থে এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
হুর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত বিষয়টা গোপন রাখা হবে তারপর সকলের সামনে বিষয়টা আসবে।
কিন্তু সময়ের সাথে বদলেছে পরিস্থিতি আর তাদের সিদ্ধান্ত।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নীল জানালার পর্দা সরিয়ে দিল, সূর্যের তীর্যক রশ্নি মুখের উপর পড়তেই নড়েচড়ে উঠলো হুর।
হুরের পরণে টিশার্ট আর টাওজার। চুলগুলো এলোমেলো সূর্যের রাশ্নি চোঁখে পড়তেই সে উল্টো হয়ে টেডিটা বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।
হুর ঃ মা বিরক্ত করো না, আজ স্কুল বন্ধ। আর একটু ঘুমাবো।
নীল ঃ Really পাখি,,
হুর ঃ হুমমম
হুর খেয়াল না করেই উত্তর দিল। নীলের গলা পেয়ে ধরফরিয়ে উঠলো।

হুর ঃ তুমি, তুমি আমার রুমে কিহ করছো। কিভাবে আসলে, কখন আসলে, কেন আসলে?
নীল ঃ ওয়েট, আমি রোবট নয়, একটা একটা করে প্রশ্ন কর?
হুর ঃ আমার রুমে এভাবে হুটহাট কেন চলে আসো। কী চাই?
নীল ঃ তর মাথা ঘোরানোর একমাত্র কারণ হতে চাই আমি হুরপাখি।
হুর অবাক চোঁখে নীলের দিকে চেয়ে আছে। নীলের কথা বুঝার চেষ্টা করছে।
নীল হুরের কাছে এসে হুরের মাথা বরাবর এক নখ তাক করে বলল,
তর এই উপরের ফ্লোর পুরোটাই ফাঁকা, এখানে যে কোনো আসভাব পত্র নেই সেইটা আমি জানি। কাজেই ভাবনা চিন্তা বাদ দে আমি যেটা বলি সেটা কর?
হুর ঃ আমি মোটেই মাথামোটা নয় নীল ভাই।আর আমি আপনি যেমনটা বলবেন ঠিক তেমনটা করবো ভাবলেন কিহ করে।

নীল তার শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো,,
হুর ঃ আরে আরে শার্টের বোতাম কেন খুলছেন?
নীল ঃ আরে বোকা মেয়ে, এইটাই তহ প্রথম ধাপ নাহলে হবে কী করে ?
হুর ঃ মানে আপনি আমার সাথে কিহ করতে চাইছেন নীল ভাই? আমি কিন্তু চিৎকার দিব? (হুর আমতা আমতা করে বলে কাথাটা গায়ের সাথে লেপ্টে নিল)
নীল ঃ দে,,,আমি কিহ তর মুখে টেপ লাগিয়ে রেখেছি নাকি। তবে তর এত পরিশ্রমের সার্টিফিকেট স্বরূপ কেউ তকে পার্মানেন্টলি আমার রুমে পাঠিয়ে দিবে না।
নীল তার শার্ট খুলে ফেলল, একটানে হুরের কাথাঁটা গা থেকে টেনে সরিয়ে ফেলল। তারপর হুরের হাতে একটা মলম ধরিয়ে দিল।

হুর এবার আহাম্মকের মতো চেয়ে আছে নীলের দিকে।
নীল ঃ এই হলো দ্বিতীয় ধাপ, এখন তৃতীয় ধাপ হিসেবে মলমটা আমার পিঠে লাগিয়ে উদ্ধার কর। আমার পিঠের এই ক্ষতবিক্ষত অবস্থা শুধু তর জন্য।
হুর ঃ আমি পারবো না ।
নীল ঃ ওকে।
হুর ঃ আরে এই অবস্থায় আমার রুম থেকে কেন বের হচ্ছেন।
নীল কোনো কথা না বলেই বেরিয়ে যাচ্ছে।
হুর ঃ আরে দারান।
নীল হুরের সামনে এসে পিঠ করে বসল।
হুর আস্তে আস্তে খুব যত্নে জায়গাটা পরিষ্কার করে মলম লাগাতে লাগলো।
নীল নিশব্দে বসে আছে। কোনো ব্যথাতুর আওয়াজ ওহ তার মুখ থেকে বেরোচ্ছে না।
মাঝে মাঝে আলতো কেপে কেপে উঠছে।
যেন হুরের প্রতিটা স্পর্শ অনুভব করতে চাইছে।

সরকার বাড়ির ড্রয়িং রুমে সকলে উপস্থিত। শুধু নীল ছাড়া।
নাহিদ ঃ নীলের এনগেজমেন্ট আর মাত্র 7 দিন পরেই হবে। আর তার কিছুদিন পরেই বিয়ে।
চারুলতা ঃ এত তাড়াহুড়ো
হায়দার ঃ হ্যাঁ মা আমরা আর দেরি করতে চাইছি না ।
লামীম ঃ কিন্তু,,,,
নাহিদ ঃ না আর কোনো কিন্তু নয় লামীম।
বাড়ির কেউ আর এই সিদ্ধান্তে অমত করল না।

হুর ছাদে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে তখনি পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো তাকে।
তুবা ঃ হুররর
হুর পিছন ফিরে তাকিয়ে কফিতে চুমুক বসালো।
হুর ঃ ভাবি তুমি এখন এখানে?
তুবা ঃ আসলে তুমাদের মতো মিষ্টি ননদ গুলোকে ভিষণ মিস করছিলাম। তাই চলে আসলাম।
হুর ঃ ওহ হহ শুধুই কিহ আমাদের জন্যই এসেছেন নাকি আমাদের নীল ভাইয়ের জন্য।
তুবা মুখটা লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে উঠলো। ছোট চুলগুলো কানের কাছে গুজলো।
হুর ঃ আহহহ ভাবি এতো লজ্জা পেতে হবে না, নাহলে আবার দেখা যাবে লজ্জায় আপনার গাল গুলো ব্লাসন ছাড়াই লাল হয়ে জ্বলে পুড়ে মাটিতে পড়ে যাবে।
একটা মানুষ গাল ছাড়া দেখতে কিহ ভালো লাগবে।
তুবা ঃ হুম হুর একদম ঠিক বলেছো, গাল দুটো এখন ওহ তুমার নীল ভাইয়ের ঠোঁটের ছোয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

দুজনেই আলতো হাসঁলো।
তুবা ছাদের রেলিং ধরে ধারালো
তুবা ঃ আচ্ছা হুর তুমি কিহ আমার আর নীলের বিয়েতে খুশি।
হুর ঃ কেনো আমি খুশি না হলে তুমি নীল ভাইকে
বিয়ে করবে না।
তুবার মনে নীল আর হুরকে নিয়ে একটা খটকা তৈরি হয়েছিল, সেটা পুরোপুরি সিউর হতেই আজ হুরকে বাজিয়ে দেখা।
তুবা ঃ অবশ্যই না। নীল আমার ভিষণ প্রিয়, আমার তাকে চাই। বিনিময়টা যেকোনো কিছু হতে পারে। (তুবা জেদি গলায় বলল।)

হুর তুবার কথা শুনে আলতো হাসঁলো তবে সেই হাসিঁর ধাচটা প্রখর।
হুরের কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঠাণ্ডা এটোঁ কফিটা তুবার দিকে এগিয়ে দিল।
হুর ঃ কফিটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, আমার আর এটার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই, তুমি চাইলে টেস্ট করতে পারো।
তুবা ঃ তাকরিম খন্দকার যার একটা ইশারায় পুরো শহর চলতে বাধ্য, তার একমাত্র রাজকন্যা তাহরিম তুবা খন্দকার, সে কীনা তোমার এটোঁ কফি খাবে। মাথা ঠিক আছে তুমার হুরর
হুর ঃ সত্যি বলতে আমার মাথা ঠিক নেই ভাবি তোমার কথা আমার তলার নিচ দিয়ে গেলো।
তুবা হাসঁলো হুরের কথা শুনে।

তুবা ঃ অত বুজতে হবে না তোমায় বোকা মেয়ে।
বোকা মেয়ে শব্দটা কানে পৌঁছাতেই হুরের নীলের
হাস্কি সুরে বলা ‘Hey silli gril কথাটা মনে আসলো।
গাড়ির হর্ণের শব্দে হুরের ধ্যান ভাঙ্গে। হুর আর তুবা দুজনেই নিচে তাকায়। নীলের গাড়ি।
নীল গাড়ি থেকে নামলো। অভ্যাস বসত ছাদের দিকে তাকালো।
নীলের হুর আর তুবা দুজনের সাথেই চোঁখাচোঁখি হলো।
নীলকে দেখে তুবা তাড়াহুড়ো করে নিচে নামার জন্য পা বাড়ায়।
হুর ঃ যাবে না তুমি নীল ভাইয়ের কাছে।
তুবা ঃ তুমি আমায় নীলের কাছে যাওয়া থেকে আটঁকাতে চাইছো ?
হুর ঃ Christian Dior J’adore রাইট এই পারফিউমটাই তহ ইউস করেছো।
বাট এই পারফিউমে নীল ভাইয়ের এলার্জি আছে।
তাই দূরে থাকো।

রুজি ঃ তুবা নীল নিজের রুমে আছে, যাও দেখা করে আসো।
তুবা ঃ না আন্টি আসলে আমার পারফিউমের জন্য নীলের এলার্জি হতে পারে। আমি চাই না নীলের আমার জন্য কষ্ট হোক।
রুহানি ঃ মা দেখেছেন আমার বউমার কত দিকে
খেয়াল ?
চারুলতা পান চিবতে চিবতে বলল,
ঢং দেখে আর বাচিঁনা, আমরা তহ বিয়ের আগে উনাদের মুখ ই দেখতাম নাহ। আর এই মেয়ে তহ,,,, থাক সে বাদ দিই,,আর একটা কথা বড় বউ এই মেয়ে এখনো তুমার বউমা হয় নি। আগে হোক তারপর না হয় বউমা বউমা করে মুখের ফেনা তুলে ফেলো।
চারুলতা নিজের রুমে চলে গেলো।

তুবা জ্বলে উঠলো। বুড়িটা বড্ড বেশি কথা বলে ব্যাপার না আমি এই বাড়িতে শুধু পারমানেন্টলি আসি তারপর এই বুড়ির সব জাজ আমি মিটাবো। (তুবা মনে মনে বলল)
রুহানি ঃ রাগ করো না তুবা। মা একটু এমনই। পুরোনো যুগের মানুষ তহ।
তুবা ঃ না আন্টি আমি কিছু মনে করি নি।একটা জয়েন ফ্যামিলিতে থাকতে হলে সকলের সাথে মানিয়ে গুছিয়েই চলতে হয়। আমি সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি। আমার বিশ্বাস আমি দাদুর মন ঠিক জয় করতে পারবো।
বুড়িটার মন জয় করতে আমার বয়েই গেছে, আমি যদি বিয়ের পর এখানে পড়ে থাকি তাহলে আমার
বাবার বিজনেস কে সামলাবে। (মনে মনে)
তুবা ঃ আচ্ছা তাহলে আমি আসি।

সন্ধ্যা বেলা নিলাসা, হুর, টিভি দেখছে। রক্তিম বসে মোবাইল স্ত্রল করছে। নীল নিচে নেমে সোফায় বসলো।
নীল ঃ মা এক কাপ কফি।
রক্তিম ঃ ভাই আর 7 দিন পরে তোমার এনগেজমেন্ট ডেট ফাইনাল করা হয়েছে।
ভাই আমার তহ খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে মন চাইছে।
হুর ঃ মন চাইছে কিহ চলো দিয়ে ফেলি লুঙ্গি ড্যান্স।
হুরের কথা শুনে সকলে তার দিকে তাকালো তবে কেউ চমকালো না।
কলি দৌঁড়ে গিয়ে লুঙ্গি নিয়ে আসলো।
নিলাসা ঃ তর প্রস্তাবটা পছন্দ হইছে চল হয়ে যাক।
নিলাসা, হুর,রক্তিম, কলি ড্যান্স করতে লাগলো।
নীল কেবল একদৃষ্টিতে হুরের দিকে তাকিয়ে রইল।

বাড়ির ছোট সদস্যদের বায়নায় আজ নীল আর লামীম সব ছোট সদস্যদের ঘুরতে নিয়ে যাবে।
হুর, কলি, নিলাসা শাড়ী পড়বে।
হুর অনেক ক্ষন যাবত ব্লাউজ আর পেটিকোড পড়ে বসে আছে কিন্তু নিলাসার আসার নামই নেই।
হুর ঃ বালডা আসার আর নামই নাই। আর কতক্ষন ওয়েট করবো। আমাকে রেখে কিহ সবাই চলে যাবে। না না কখনোই না।

নীলের হুরপাখি পর্ব ৮

হুর পায়চারি করতে করতে বলতে লাগলো।
তখনই তার লক করা রুমের দরজা খুলে গেলো।
হুর ঃ নীল ভাইইই আবারো তুমি এভাবে আমার রুমে।
নীল রুমে ডুকে দরজা অফ করে দিল।

নীলের হুরপাখি পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here