নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩৯
সিনথিয়া
তুষার ঝড়ের প্রকোপ কমলো না সে রাতে। তবে যে ভয়টা আরশি পাচ্ছিল, সেটা অবশ্য উধাও হলো নিমেষেই। একচোট খুরখার দৃষ্টিতে ঘায়েল হয়েও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো
নিজের জায়গায়। বিস্ময়াভূতের ন্যায় উপলব্ধি করলো শেহজাদ ওকে বা স্নোবলকে একটুও বকেনি। সেখানে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া তো দূরের কথা!
অবাক মস্তিষ্ক এই প্রথমবার খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করলো এক অন্য শেহজাদকে। যার ধৈর্য্যের সামনে মাথা নুইয়েছে ওর উদ্ভট ভাবনারা।
তখনই হইহই করে উঠলো আয়ান!
“বন্ধুগণ! আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি!”
বেডের সাইড ধরে কেবল উঠে দাঁড়ানোর শেহজাদের কপালে ভাজ পড়লো। বিরক্তি নিয়ে চাইলো আয়ানের দিকে।
আরশির আনত চোখজোড়া চোরের মতো উঁকিঝুকি মারলো সেই গুরুগম্ভীর মুখটায়। তবে ঠিক সুবিধে করতে পারলো না। অতো লম্বা মানুষটার রাশভারি আদল অব্দি নজর পৌঁছোতে ব্যর্থ শ্বাস ফেললো কৃষ্ণকালো অক্ষিপট।
আয়ান গলা পরিষ্কার করলো। একটু থেমে
ঘোষণা দিলো,
“যেহেতু অর্ধেক রাত ফুরিয়ে যাওয়ার পরও শায়ানটার প্রেম হলো না! সুতরাং আজ কি শাম; পেয়ার না হোনে ওয়ালে ইস বেচারাকে নাম! টিম স্নোবল স্কোয়াড! চলো এই দুঃখে বসার ঘরে শুয়ে বসে আড্ডা দেই!”
তাতেই তেতে উঠলো শেহজাদ! এক প্রকার উড়ে এসে পেছন থেকে ঘাড় চেপে ধরলো আয়ানের। হিসহিসিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তোকে কে বললো আমার প্রেম হয়নি?”
আয়ানও কি কম যায়? অমন বিপদ ঘাড়ে রেখেই আওড়ালো,
“কে আবার বলবে? তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্ল্যান এক্সিকিউট করতে পারিসনি!”
জারা হাসছে ঠোঁট টিপে। আরশি হতভম্ব! কোনোমতে টেনেটুনে ফাঁক করলো বিমূঢ় ঠোঁটজোড়া।
“কীসের প্ল্যান?”
কিন্তু এবার আয়ান হা করার আগেই ত্রস্ত পিছন থেকে ওর মুখ চেপে ধরলো শেহজাদ।
কটমটে চোখে তাকালো বন্ধুর দিকে!
“বসার ঘরে আড্ডা দিবি বলছিলি না? চল আজকে আমিও দেখি কত আড্ডা দিতে পারিস তুই!”
আয়ানের চোখে জল মুখে হাসি অবস্থা! শ্বাস নিতে না পারলো কি পারলো না সেসবে পাত্তা দিলো না শেহজাদ! শক্তপোক্ত হাতটা মুখের সামনে রেখেই টেনে
নিয়ে চললো বসার ঘরে।
আরশি আর জারাও এলো পিছন পিছন। তবে ওদের সাথে খাবার টেবিলে না বসে ছুটলো রান্নাঘরে। মরিয়ম বেগমের কথামতো আরশি ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে গরম করলো। আর সেসব পাকা গিন্নীর মতো একে একে এনে টেবিল সাজালো জারা।
আয়ানের গালে হাত। চেয়ারে বসে বসেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখে গেলো ওর বাটারফ্লাইকে। এখনই কেমন টমবউ টমবউ ভাব! বিয়ের পর চোখে না হারায়।
অমন হা হয়ে তাকিয়ে দেখতে পাশ থেকে ফোড়ন কাটলো শেহজাদ,
“স্টার্টার হিসেবে মাছি মন্দ না! তবে খেলে পেট খারাপ হওয়ার চান্স হান্ড্রেড পার্সেন্ট! কিন্তু তোর সেই পেট খারাপের ধকল সামলানোর মতো বাথরুম আমাদের বাড়িতে কেনো? গোটা পৃথিবীতেও নেই! সো প্লিজ মুখটা বন্ধ কর!”
কথাটা বলতে না বলতেই তুরন্ত ঘাড় ঘোরালো আয়ান। আহত কন্ঠে অভিমান টেনে বললো,
“এমনভাবে বলছিস যেনো তুই তোর বউকে দেখছিস না?”
শেহজাদের উত্তর দিলো সংক্ষেপে। হাতে থাকা জ্বলজ্বলে স্ক্রিনে চোখ রেখে জানিয়ে দিলো,
“আমি তোর মতো বউপাগল নই!”
আয়ান তার পুরুষালী স্বরের আগাগোড়া তাচ্ছিল্য মিশিয়ে বলে উঠলো,
“দেখছি তো! কেমন বউপাগল নও তুমি। শোন শায়ান! আমার যদি বাটারফ্লাইকে দেখলে পেট খারাপ হয় তাহলে আরশিকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলে তোর–!
“কী আমার?”
“তোর চোখে জয়বাংলা হবে! এরপর উঠতে বসতে একটা নয়, ট্রিপল ট্রিপল আরশি দেখবি!”
স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সোজাসুজি আরশির দিকে চাইলো শেহজাদ! নীলাম্বরজুড়ে ছোটাছুটি করা কিশোরীকে কামুক নিশানায় রেখে বলে উঠলো,
“তুই বরং অন্য বদদোয়া কর! লাইক ডজন খানেক বাচ্চা অর সামথিং!”
কেশে উঠলো আয়ান। তালুতে হাত রেখে সামলালো নিজেকে। বন্ধুর কথায় বিষম খেতে খেতে আওড়ালো,
“ওওও! তারমানে আমি আমার বউকে দেখলে স্টার্টারে মাছি আর তুমি দেখলে চিকেন মাঞ্চুরিয়ান?”
শেহজাদ চাপা হাসলো। হেরে যাওয়া একচোট শ্বাস ফেলে চোখ নামালো কোলের উপর! ততক্ষণে খাবার টেবিল ভরে গেছে আইটেমে। জারা ঠিকই এসে বসলো আয়ানের পাশে। কিন্তু আরশি চেয়ার টেনে শেহজাদের মুখোমুখি বসতে গেলেই লাফিয়ে উঠলো আয়ান,
“এই এই! কী করছো? কী করছো?”
ভড়কালো মেয়েটা। তড়িঘড়ি চেয়ারটা আগের জায়গায় ঠেলে রেখে দিলো! আতঙ্কিত স্বরে বলে উঠলো,
“কী করলাম আমি ভাই?”
“না মানে তুমি কিছু করোনি! কিন্তু শায়ানটা করে ফেলতে পারে! যেকেনো মূহুর্তে! ওর যা অবস্থা!”
মূহুর্তেই হাসি মিলিয়ে গেলো শেহজাদের।চোখ খিঁচে বন্ধ করলো সহসা। নির্ঘাত আবার উল্টো পাল্টা কিছু বলবে এই ছেলে!
মুখ থেকে ‘চ’ সূচক শব্দ করলো জারাও। লোকটা হুট করে এতো কথা বলছে কেনো আজ? সবাই যে লজ্জা পাচ্ছে উনি কি বুঝতে পারছেন না বুঝতে চাইছেন না?
এরা যতটা বিরক্ত ততটাই অবাক হলো আরশি! ফ্যালফ্যালে চোখ। ছোট খাটো মুখটাতে কৌতূহল নিয়ে শুধোলো,
“কী করবেন উনি?”
নড়েচড়ে উঠলো আয়ান। বন্ধুর উপকারে সদা জাগ্রত মনটা ভেতর ভেতর হেসে কুটিকুটি হলেও ফর্সা চেহারায় ধরে রাখলো মেকি ভার!
গলার শ্লেষা দূর করে বললে,
“করবেন তো অনেককিছু!”
“আয়ান!”
শেহজাদের কঠিন স্বরে থতমত খেলো আয়ান। কথায় লাগাম টেনে সুর ঘুরিয়ে বললো,
“না মানে যদি আবার জ্ঞান ট্যান হারিয়ে ফেলে? পাশের চেয়ার খালি থাকলে ওকে ধরবে কে বলো? শুধু শুধু বেচারার ফ্লোরে পড়ে মাথাটা ফাটবে! তারচাইতে তুমি ওর পাশে বসো আরশি!”
একরাশ লাজে চিবুকখানা গলায় এসে ঠেকলো মেয়েটার। শেহজাদের পাশে বসাটা এড়াতে চাইছিল অন্য কারনে। এই যে তখন কি অনায়াসে উনি ভালোবাসি বললেন! এটা শোনার পর শুধু পাশে কেনো? আশেপাশে থাকলেও আরশির বুক ঢিপঢিপ করছে!
ক্ষনে ক্ষনে মনে পড়ছে সেই লাগামহীন স্পর্শের মূহুর্তটুকু।
কিন্তু বিধিবাম! ঘুরেফিরে শেহজাদের পাশেই বসতে হলো ওকে। তবে বসে থেকেই উশখুশ শুরু হলো ওর! কতক্ষণ প্লেটের ভাতগুলোতে আঙুল ঘুরোলো। আস্তেধীরে চোখের এক কোণ উঁচিয়ে চেয়ে দেখলো মানুষটাকে।
সে নিজের মতো করে খাচ্ছে। কে পাশে বসলো কে বসলো না সেদিকে যেনো কোনো মাথা ব্যথা নেই তার। এতো নিরুত্তাপ কেনো? তবে কি সত্যি সত্যি রাগ করলো?
বিস্তর ভাবনাচিন্তা শেষে আরশি আর চুপ করে থাকতে পারলো না। অল্প একটু চেপে বসলো শেহজাদের দিকে। গলার স্বর নামিয়ে শুধোলো,
“আপনি কি খুব রাগ করেছেন?”
“ফর হোয়াট?”
শেহজাদের কন্ঠস্বর নিরেট। পাল্টা প্রশ্নটাতেও বিশেষ নমনীয়তা নেই। আরশি ঠোঁট উল্টায়। উত্তর না দিয়েই মনোযোগ আনে খাবারের প্লেটে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভাত তুলে মুখে দিতে যাবে তখনই ঘাড়ের পাশে অনুভব করলো একজোড়া তপ্তশ্বাস। কানে ভেসে আসলো কন্ঠ খাদে নামানো বাক্যবান,
“আজ রাতে তোমার কাছে স্নোবল ছিল, তাই বেঁচে গেলে! কিন্তু কাল রাতে কি করে বাঁচবে ঠিক করে রেখেছো তো?”
আরশি আইঢাই করে উঠলো কথার পিঠে। সোজা শিরদাঁড়া নুয়ে পড়লো লতানো ডগার ন্যায়। আনত মুখে গলা ভিজিয়ে শুধোলো,
“ম-মানে?”
শেহজাদের পুরুষালী স্বর নিভু। ব্যস্তহীন শ্বাসে আরশি ঘাড় ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
“মানে টা…কাল রাতে বোঝাবো!”
বছরের শেষ তুষারঝড়টা বোধ হয় গতকাল রাতেই পার করলো নিউইয়র্ক।
তবে রৌদ্রস্নাত প্রভাতের শুরু হলো বেশ মনোরমভাবেই। ভোরের নরম আলো এসে বরফকুচির উপর পড়তেই ঝলমলিয়ে উঠলো হাসান ভিলার ব্যাকইয়ার্ড।
বরফের একপরত আস্তরণ ভেদ করে কোনোমতে মাথা তুললো সবুজ ঘাসগুলো। ব্যস্ততা শুরু হলো বাড়ির সামনের রাস্তায়। জগিং করতে বের হওয়া দম্পতি কিংবা স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েগুলোতে সরব হলো ঝিমিয়ে পড়া পরিবেশ।
আরশির ঘুম ভাঙলো মাত্র। একটা লম্বা হাই তুলতেই প্রথমে চোখে পড়লো জারা আর আয়ানকে। ওর বরাবর সামনের সোফাটা দখলে সেই কপোত-কপোতীর।
আয়ানের কাঁধে মাথা রেখে দিব্যি ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে জারা। গতকাল সবাই মিলে কতরাত করে আড্ডা দিলো। তারপর কে কখন কিভাবে ঘুমিয়েছে কারোরই আর হুশে নেই সেসব।
আরশি প্রশান্তির হাসলো।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো তখন যখন উঠতে গিয়েও মুখ থুবড়ে পড়লো একটা চওড়া সিনায়। দৈবাৎ মুখ ঘুরিয়ে তাকালো কোমরের দিকটায়। একজোড়া বলিষ্ঠ হাত! খুব শক্ত করে নিজের সাথে বেঁধে রেখেছে আরশিকে। এলোমেলো চুলে সুতনু ললাটপটের অর্ধেকটাই ঢাকা। নীল চোখজোড়া বন্ধ। খুব ধীরস্থির শ্বাসের গতিতে ওঠানামা করছে বক্ষভাগ।
মূহুর্তেই ম্যারাথনের বেগে ছুটলো আরশির শ্বাসপ্রশ্বাস। শেহজাদের বুকে মাথা রেখে সারারাত ঘুমিয়েছে ভাবতেই কুন্ঠারা ডানা মেললো গালে। জালে আটকা পড়া কবুতরের মতো হাসফাস শুরু হলো ছোট্ট- খাট্টো গতরখানায়।
মনে মনে ভাবলো, ও ঘুমিয়েছে ঘুমিয়েছে! শেহজাদ ওকে সরিয়ে দিলো না কেনো? কেনো আবার? নির্ঘাত ঘুম থেকে উঠেই আরেকপ্রস্ত লজ্জায় ফেলবে বলে?
এইজন্যই তো কুস্তিগীরদের মতো জড়িয়ে ধরে আছে ওকে।
তবে অত নড়াচড়ার পরও যখন শেহজাদের ঘুম ভাঙলো না তখন একটু একটু করে শান্ত হলো আরশি।
বেখেয়ালের বশেই লম্বা সময় নিয়ে দেখলো শেহজাদকে। হাতটা নিশপিশ করলো ঐ ঘুমন্ত মুখখানা ছুঁয়ে দিতে।
করলোও তাই। কাঁপা কাঁপা তর্জনীর আলতো স্পর্শ রাখলো ভ্রুজোড়ার মাঝে। কপালে ভাজ ফেললো শেহজাদ। তবুও থামলো না আরশি। ভীষণ সাহস করে কপাল থেকে আঙুলটা টেনে নামালো নাকের উপর। চোখা নাকটা বিস্ময় নিয়ে দেখে ভাবলো, একটা চুমু খাবে এখানে?
না না! ও কি এই লোকটার মতো অসভ্য নাকি যে মানুষের ঘুমের সুযোগ নিতে যাবে? যেটা করছিল সেটাই বরং করুক।
তবে মন শোনালো অন্য গান। ফের নাকের উপর থেকে আঙুলটা টেনে ঠোঁট বরাবার নামাতেই থামতে হলো ওকে। কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে ওষ্ঠপুট চেপে হেসে উঠলো মিটিমিটি। বিড়বিড় করে বললো,
“সব সু্যোগ ছেড়ে দিলে পাপ হবে মিস্টার শেহজাদ! তাই আগে থেকেই সরি হ্যাঁ?”
পরপর ঝুঁপ করে এসেই টুপ করে ঠোঁট ছোঁয়ালো শেহজাদের অধরজোড়ায়। সরেও গেলো ঝড়ের গতিতে।
রুদ্ধ শ্বাসে কয়েক পল তাকিয়ে রইলো সম্মুখপানে। সচেতন চোখ যখন বুঝলো যে শেহজাদের ঘুম ভাঙেনি তখনই নিশ্চিন্তের শ্বাস ঝাড়লো ও।
ঐ সেকেন্ডখানেকের চুমুতেই রাজ্য জয়ের তৃপ্তি এসে ভিড়লো চোখেমুখে। ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললো,
“খুব আমাকে জ্বালানো না? এখন কেমন দিলাম? এই যে চুমুটা খেয়েছি, কস্মিনকালেও ধরতে পারবেন আপনি? পারবেন?”
আয়ানের ঘুমটা ভেঙেছিল সবে। কিন্তু চোখ খুলতেই ঘুমটুম সব উবে গেলো ছেলেটার। আরশি আর শেহজাদকে অমন ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে এক প্রস্থ হা হলো মুখ।
তখনই পেটে চিমটি কাটলো জারা। চোখ বন্ধ করেই কন্ঠ নামিয়ে আওড়ালো,
“ভাই হয়ে বোনের রোমান্স দেখছেন! লজ্জা করে না? চোখ বন্ধ করুন!”
সহসা চোখের পাতা নামিয়ে ফেললো আয়ান! নিজেও ফিসফিস করে বললো,
“তুমিও তো দেখছো বাটারফ্লাই!”
“আমি দেখছি না, দেখছিলাম!”
“কি ডাহা মিথ্যে কথা! ছি ছি!”
জারা বিরক্ত হলো! এতো কথা বললে আরশি শুনে ফেলবে না? তারপর লজ্জায় একশেষ হয়ে আরেকদফা মিশে যাবে মাটির সাথে! তখন রোমান্সেরও বারোটা বাজবে আর ওদের এই সুন্দর মোমেন্টারও। সেসব বোঝে এই লোক?
তবে শেষ রক্ষা বোধ হয় হতে দিলো না প্রকৃতি।
গতকালকের ঘটনা ছড়িয়ে গেলো নিউজ পেপারে। মেহমেদ হাসানকে আদির বাবা কল করে হুমকিও দিয়ে দিয়েছেন! তার ছেলের বিরুদ্ধে আনা কেইসটা উইথড্র করার জন্য।
ঘটনার আদ্যোপান্ত মেহমেদ জানতেন না। তাই কথা বাড়াননি তখন। সাতসকালে গাড়ি নিয়েই রওনা হয়ে এসেছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। ফেরার পথে বাসার কারো ফোনে না পেয়ে অবশ্য থানায় একবার কল করেছিলেন। সেখান থেকেই জানতে পারেন শেহজাদও জখম হয়েছে সেভেন্থ এভিনিউয়ের ঘটনায়।
তখনই হা-হুতাশ শুরু করলেন মরিয়ম। বারবার করে বলতে লাগলেন,
“মেয়েকে হারিয়ে যে শোকটা পেয়েছি সেটা কাটিয়ে উঠলেও ছেলে হারানোর শোক কাটাতাম কি করে? যদি সাংঘাতিক কিছু হয়ে যেতো আমার শায়ানটার? তখন কি নিয়ে বাঁচতাম আমি?”
মেহমেদেরও দুশ্চিন্তা হচ্ছে। তবে সেসব প্রকাশ করলেন না। এক হাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরে রেখে অন্য হাত স্ত্রীর মাথায়
রাখলেন। ধীরস্থির স্বরে বললেন,
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩৮
“এতো টেনশন করো না। কিছু হয়নি তো ওদের। হলে তোমাকে জানাতো ওরা বলো? তারপরও কেনো এতো কান্নাকাটি করছো মরিয়ম? শরীর খারাপ করবে তো এবার!”
এ্যামি সিটিয়ে বসে আছে পিছনে। খালাকে নিয়ে ও ভাবছে না। শুধু ভাবছে, এই আদির সাথেই বিয়েটা যদি সত্যি সত্যি হয়ে যেতো ওর? তখন কি হতো? আরশিকে সহ্য করতে পারে না জানলে ওকে যদি মেরে ফেলতে চাইতো সাইকো টা?