পাতা বাহার পর্ব ৫২
বেলা শেখ
-” ভোর বলেছো তো কখনো বিয়ে করবে না। তাহলে সবাই কেন বলছে আজ ভোরের বিয়ে? আমার লজ্জা করে না বুঝি? যাবো না আমি বাইরে। গোসলও করবো না।বিয়েও করবো না!”
গাল ফুলিয়ে বলে ভোর। এক হাতে লুঙ্গি সামলে অপর হাত গালে রেখে সোফায় বসে আছে। চোখে মুখে হালকা লজ্জা মাখা! পাতা মুচকি হেসে ভোরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-” ওরা সবাই মজা করছে ভোর। তুমি রাগ করছো কেন? আচ্ছা আমি ওদের বকে দেবো কেউ কিছু বলবে না। চলো? তোমার আব্বু মার্কেট থেকে এলো বলে!”
-” যাবো না আমি!”
ভোরের একরোখা জবাব! পাতা ভোরকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়! ভোর যাবেই না। পাতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এইটুকু বাচ্চার এতো লজ্জা! ভোরের সুন্নতে খৎনা করা হয়েছে সাতদিন আগে! সেদিনের কথা আর কি বলবে পাতা! একদিকে ভোরের চোখে মুখে আকাশ সম লজ্জা। অপরদিকে ব্যাথায় খেই হারিয়ে ভোর চিৎকার চেঁচামেচিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো। সে কি অভিযোগ তাঁর। সবাই বললো অল্প ব্যাথা করবে তাহলে বেশি ব্যাথা কেন? অনেক কষ্টে তাকে সামলানো গেলেও সেদিনের পর থেকে সে বাড়িতে কাউকেই ঢুকতে দেবে না। পাতা অরুণ বাদে কাউকেই না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আজ সপ্তম দিনে অরুণ সরকার অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিল কিন্তু ভোর না কোথাও যাবে, না কাউকে আসতে দেবে বাড়িতে। পাতা অনেক বুঝানোর পর পরিবারের সদস্যদের এলাও করেছে ভোর।তাই আজ সকালে তাদের আগমন। ঘরোয়া আয়োজনে ভোরের গোসলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোর লজ্জা মাখা মুখে মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু বাবার অনুপস্থিতিতে সকলের হাসি ঠাট্টায় ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। পাতা তাকে বোঝানোর চেষ্টায় অথচ ভোর বুঝতে নারাজ। এরই মাঝে দরজায় কড়া নাড়ছে কেউ। পাতা দরজা খুলতে উদ্যত হতেই ভোরের পক্ষ থেকে আদেশ বানী ভেসে আসে,
-” ও আম্মু একটুও দরজা খুলবে না বলেদিলাম নইলে ভোর রেগে যাবে কিন্তু!”
-” আরে বাবা ডাকছে কখন থেকে! কারো কিছু লাগবে বোধহয়!”
-” না তুমি দরজা খুলবে না। তুমি আমার কাছে থাকো তো!”
পাতা অসহায় দৃষ্টিতে চায়। ভোর আস্তে আস্তে উঠে এসে পাতার আঁচল টেনে ধরে। খুলতে দেবে না সে দরজা। দরজা খুললেই সবাই বলবে ভোর আজ তোর বিয়ে! তোর বাবা বউ আনতে গেল যে! একটু পরেই বিয়ে করিয়ে দেবে।
পাতা কান খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করে কে ডাকছে। পরিচিত ডাক ভেসে আসতেই পাতা বলে,
-” দেখো তোমার আব্বু এসেছে মার্কেট থেকে! দরজা খুলিই?”
ভোর ‘হুম’ বলতেই পাতা দরজা খুলে দেয়। আগমন ঘটে অরুণ সরকারের। ভোর পাতার আঁচলের আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখে বাবা সত্যিই বউ এনেছে নাকি! কাউকে না দেখতে পেয়ে স্বস্তি পেল যেন। অরুণ হাতের শপিং ব্যাগ বিছানায় রেখে ভ্রু কুঁচকে রাশভারী গলায় বলে,
-” দু’জন ঘাপটি মেরে আছো কেন ঘরে?”
পাতা ভোরকে ইশারা করে বললো,
-” লজ্জায় লাল হয়ে লুকিয়ে আছে। সবাই একটু মজা করেছে যে আজ ভোরের বিয়ে আর ভোরের বাবা বউ আনতে মার্কেটে গেছে ব্যস।গাল ফুলিয়ে লুকিয়ে আছে।”
বলেই হাসে পাতা। ভোর নাকের পাটা ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে তাঁর দিকে। পরপর বাবার গম্ভীর মুখ দেখে আবার বিছানায় বসে পড়ে। অরুণ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” সবাই মজা করছে। আমি শপিং করতে গিয়েছিলাম। চলো?”
ভোর ঝটকায় বাবার হাত সরিয়ে দিয়ে অভিযোগের সুরে বলে,
-” যাবো না! সবাই ভোরকে লেগপুল করে কেন?”
অরুণ ছেলের পাশে বসে বলে,
-” তুমি রেগে যাও তাই ওরা মজা করে। তুমি রাগবে না দেখো ওরাও আর লেগপুল করবে না। এখন ভদ্র ছেলের মতো ড্রয়িংরুমে চলো! সবাই ওয়েট করছে!”
-” আমি যাবো না বললাম তো!”
-” থাপ্পড় না খেতে চাইলে চলো? কয়েকদিন হয়ে গেলো কিছু বলি না তাই বেশি বেশি করছো!’
ধমকের সুরে বলে অরুণ! ভোরের মুখাবয়ব গম্ভীর হয়। অরুণ বাহু ধরে টানে ;ভোর ওঠে না। জেদ ধরে বসে থাকে। যাবেনা সে! বাবা বকলো কেন তাকে? অরুণ আবার চাপা স্বরে ধমক দেয়! ভোর গাল ফুলিয়ে বলে,
-” বকছো কেন তুমি? আমি যাবো না। তুমিই যাও! তোমরা সবাই ভোরকে বোকা বানিয়েছো! বলেছ এইটুকুন ব্যাথা লাগবে।তহালে ভোরের বেশি ব্যাথা কেন লাগলো?”
-” তুমি দুষ্টু তাই বেশি ব্যাথা পেয়েছো! ভদ্র ছেলেদের ব্যাথাই লাগে না!”
শান্ত গলায় বলল অরুণ! ভোর ঠোঁট উল্টিয়ে কিউট ভঙ্গিতে বলে,
-” আমি দুষ্টু নই! ভোর গুড বয়। তোমরা মিথ্যে বলছো!”
-” যাবে না তুমি?”
ভোর পিটপিট করে চায়। সময় নিয়ে ভাবতে থাকে। ভাবা শেষ হতেই বলে,
-” আব্বু মুসলমানি করার সময় তোমারও অনেক ব্যাথা করেছিলো তাই না?”
অরুণ শান্ত চোখে ছেলের দিকে চায়! ভোর তাঁর উত্তর শোনার জন্য মুখিয়ে আছে। পাতা এতক্ষণ চুপচাপ বাবা ছেলের কথা শুনলেও এবার তার চোখের আকার পরিবর্তন হয়। গোল গোল করে তাকায়। লজ্জায় কান দিয়ে মনে গরম ধাপ বেরোচ্ছে। কপোল জোড়া রক্তিমতাম ছেয়ে গেছে। আশ্চর্য তাঁর লজ্জা লাগছে কেন? লজ্জা তো নাক উঁচু ম্যানারলেস লোকটার পাওয়ার কথা! যেখানে লোকটা নির্বিকার সেখানে সে লজ্জায় মরি মরি! অরুণের চোখে চোখ পড়তেই পাতা নজর লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে। অরুণ ভ্রু কুঁচকে চায়। পাতার মাথায় চাটি মেরে বিড়বিড় করে বলে ‘আল্লাহ এই দুটোকে কি দিয়ে যে বানিয়েছে!’
এদিকে ভোর আবার একই প্রশ্ন করে! অরুণ স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দেয়,
-” একটু আকটু সবারই ব্যাথা করে। আর কষ্ট না পেলে কি কেষ্ট মেলে?”
পাতা অন্যদিকে তাকিয়ে জিভ গালে ঠেকিয়ে মুচকি হাসে। ভোর খানিকটা ভেবে বলে,
-” কেষ্ট কি আব্বু? আমি কখন পাবো?”
-” আগে বড় হও! অনেক হয়েছে এখন চলো সবাই ওয়েট করছে। তোমার হুজুরও আসবে একটু পর।”
ভোর আবার নিজস্ব সত্তায় ফিরে যায়। সে যাবে না! অরুণ চোখ রাঙিয়ে ধমক দেয় ভোর কাঁদো কাঁদো চোখে পাতার আঁচলে লুকিয়ে কি যেন বিড়বিড় করে। পাতা বুঝতে পারে না। অরুণকে চোখে আশ্বস্ত করে ভোরের উদ্দেশ্যে মুচকি হেসে বলে,
-” ভোর তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। এখন তুমি কথা না শুনলে কিন্তু সারপ্রাইজ পাবে না!”
-“তাহলে আগে বলো কি সারপ্রাইজ?”
সারপ্রাইজের নাম শুনেই ভোর উজ্জ্বল মুখে জিজ্ঞেস করে। পাতা অল্প ঝুঁকে আসে। ভোর তাঁর অসুবিধা বুঝতে পেরে উঁচু হয়ে দাঁড়ায়। পাতা তার কানে কানে ফিসফিস করে কিছু বলে। ভোর খুশি হয়ে পাতার গালে চুমু দিয়ে বিড়বিড় করে ‘ধন্যবাদ’ জ্ঞাপন করে। বাবার হাত ধরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয় । অরুণ ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে পাতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” শপিং ব্যাগে শাড়ি আর প্রয়োজনীয় সব আছে। জলদি রেডি হয়ে এসো!”
বলেই বেরিয়ে আসে। ড্রয়িং রুমে আসতেই অরুণের বন্ধুরা হৈ হৈ শুরু করে দেয়! ফয়সাল এগিয়ে এসে ভোরের বাহু ধরে উঁচুতে তুলে নিয়ে আলতায় রাঙানো পিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,
-” এই তো জামাই বাবাজির আগমন ঘটেছে। জলদি স্নান সেরে শেরওয়ানি পড়ে টোপর মাথায় বউ আনতে যাবে। লাল টুকটুকে বউ যে অধির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে!”
ভোরের স্বাভাবিক চোখে মুখে আবার লজ্জা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
-“তোমরা মিথ্যে বলছো আমি জানি। ভোর কখনো বিয়ে করবে না! ওই লাল টুকটুকে বউ যতই ওয়েট করুক!”
-” ভোর ভিডিওতে সব রেকর্ড হচ্ছে কিন্তু! বড় হওয়ার পর বিয়ের কথা বলে কেঁদে গঙ্গা যমুনা ভাসালেও বিয়ে করাবো না!”
ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে উঁকি দিয়ে বলে শুভ! ভোরও গলা উঁচিয়ে বলে সেও বিয়ে করবে না কখনো! এরমধ্যে আনিকা পিঁড়িতে ভোরের পাশে দাঁড়িয়ে হাঁসি খুশি মুখে বলল,
-” আমি বিয়ে করবো! আমাকে একটা লাল টুকটুকে বর এনে দাওনা আঙ্কেল? প্লিজ প্লিইজ!”
সবাই তাঁর কথায় হেসে উঠলো। ভোর আড়চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো। ধাক্কা দিয়ে পিঁড়ি থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে
-” আনি’র পঁচা বর আসবে। যে আনি’কে অনেক বকবে। ঠাস ঠাস করে মারবে! কালো টুকটুকে বর আসবে তোর আনি!”
বলেই হেসে উঠলো খিলখিলিয়ে! আনিকা রাগে ফুঁসে ওঠে নিমিষেই। ভোরের দিকে তেড়ে এসে তাঁর চুল মুঠিতে চেপে বলে,
-” তোর পঁচা বউ হবে। তোর মাথার চুল টেনে লাড্ডু মাথা বানিয়ে দেবে। পঁচা ভোরের পঁচা বউ!”
অরুণ তড়িঘড়ি করে আনিকাকে ছাড়িয়ে নেয় ভোরের থেকে। ভোর বড়দের মতো বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করে আনিকার দিকে; আনিকা ভেঙায় ভোরকে। ভোর চোখ রাঙায়!
ফয়সাল আরিয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে বলে,
-” মনে হচ্ছে তোর আর অরুণের সম্পর্ক গাঢ় হবে!”
এরই মাঝে ভোরের হুজুরের আগমনে সবাই হৈ হুল্লোড় কমিয়ে দেয়। তবে অরুণের বন্ধুরা যেমন তেমনি! তাঁরা হুজুর সমেত ভোরকে এটা ওটা বলে মহল জমিয়ে নেয়! ভোর এবার চুপচাপ থাকে।
পাতা প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় পড়ে শাড়ির ভাঁজ খুলে। মিষ্টি রঙের কাতান শাড়ি। খুবই সুন্দর দেখতে! পাতা অরুণের পছন্দের প্রশংসা করে। লোকটার পছন্দ আছে। তা না হলে কি পাতা আজ এখানে দাঁড়িয়ে! মুচকি হাসলো পাতা। তবে দরজার নব ঘোরানোর শব্দে চকিত দৃষ্টি ফেলে গায়ে এলোমেলো শাড়ি জড়িয়ে নেয়! অরুণকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও হালকা উঁচু গলায় বলে,
-” ম্যানারলেস লোক! নক করতে পারেন না?”
অরুণ দরজা বন্ধ করে। ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে আসে।
-” মায় রুম মায় ওমেন! নক কেন করবো? আর ম্যানারসে ভরপুর মিসেস সরকার! বাড়ি ভর্তি মানুষ দরজা লক করতে হাত ব্যাথা করে?”
পাতা জবাব দেয় না। সে তো দরজা বন্ধ করেই ছিলো! সে শাড়ি পড়তে উদ্ধত হয়! অরুণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। পাতা জিজ্ঞেস করে,
-” আপনার সব বন্ধুরা এসেছে? ভোরের হুজুর?”
-” হুম!”
-” মা যে কেন আসলো না! সকালে ফোন করেননি?”
-” করেছি পাতাবাহার! সেদিন বাড়ি গিয়ে কতবার করে বলেছি আসতে। আজ সকালেও চারবার ফোন করেছি! তিনি বলেন দেখি আসতে পারি কিনা! এটা কোনো উত্তর হলো? আসবেনা তাই বাহানা দিচ্ছে!”
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হালকা হেসে বলল অরুণ! পাতা তাঁর কথার প্রেক্ষিতে বলে,
-” হয়তোবা কোন কাজে ব্য.”
-” আনিকা রূপ হলে নিশ্চয়ই এসব ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করতে পারতো! ভোর বলে পারছে না।”
পাতা কাপড়ের কুচি করে। অরুণের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” আমার মনে হয় কি! মা আপনার উপর অভিমান করে আছে। সরকার বাড়ি ছেড়ে চলে আসায়। মা সেদিন আপনার হাত ধরে কত অনুনয় বিনয় করলো। আপনি গ্রাহ্যই করলেন না!”
অরুণ এগিয়ে এসে পাতার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে কুচি গুলো ঠিক করে দেয়! পাতা আপ্লুত হয়! অরুণ কুঁচি ধরিয়ে দেয় পাতার হাতে। শান্ত গলায় বলে,
-” অভিমান অভিযোগ সব আমার উপর ছিলো না হয়! ভোরের জন্য হলেও আসতে পারতো। ও তো অবুঝ বাচ্চা। আসলো না কেন?”
পাতা কুঁচি গুজে আঁচল ঠিক করতে উদ্যত হয়। অরুণ সাহায্য করে। পাতা তাঁর বাহু আকরে ধরে বলে,
-” আমরা সবসময় নিজের দিকটা ভেবে নিজ মনমতো কারণ ভেবে নেই। অপর পক্ষের টা ভাবিই না। নিজ স্বার্থ ভাবলেও অন্যের..”
কথা শেষ করতে পারে না। মুখ দিয়ে ব্যথাতুর অস্ফুট ধ্বনি নির্গত হয়! অরুণ আঁচলে পিন আটকে কাঠ কাঠ গলায় বলে,
-” এতো সাধুদের ভিড়ে আমি খুবই স্বার্থপর লোক! আমি নিজেকে নিয়েই ভাবি। আমার কাছে নিজের ভালোলাগা সবচেয়ে আগে। আরে নিজে ভালো না থাকতে পারলে অন্যকে কিভাবে ভালো রাখবো? সব ভালো মানুষের ভিড়ে আমি দোষে দুষ্ট অরুণ সরকার খুব একটা বেমানান নই!”
পাতা কাঁধ থেকে অরুণের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
-” ভালো! আমি আবার ভিন্ন ধরনের বুঝলেন! আমি মানিয়ে নিতে জানি! যা পাই নি তা নিয়ে আফসোস করে বেড়াই না। যেকোনো বিষয়ে মানুষ মানিয়ে নিতে শিখে গেলে সে সুখী! অনেকেই মানিয়ে নিতে পারে না! একটা বিষয়কেই কেন্দ্র করে সারাজীবন বিদ্বেষ মনে পুষে রাখে। তাঁরা সুখানুভূতি সহজেই অনুভব করতে জানে না। ছোট একটা জীবন; কি দরকার এসব হিংসা, বিদ্বেষ, রেষারেষি, মান অভিমান পুষে রেখে সময় ব্যায় করা! ভালো নয় কি যে মিলেমিশে সবটা ভুলে সকল দুঃখ মান অভিমান জলাঞ্জলি দিয়ে নতুন সূচনা করার!”
অরুণ পাতার চোয়াল আলতোভাবে চেপে ধরে বলল,
-” হয়ে গেছে নব্য সূচনা! ওরা ভালো থাকুক। আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বান্ধবীর সুপরামর্শে কান দেয়া বন্ধ করো পাতাবাহার!”
বলেই হন হন করে চলে যায় রুম থেকে। পাতা তার প্রস্থান দেখে। অরুণ সরকার খোঁচা দিয়ে কথা বলে কি বোঝাতে চাইলো?
পাতা মাথায় আঁচল টেনে আস্তে ধীরে পা চালিয়ে রুম থেকে বেরোয়! ড্রয়িংরুমের সকলের দিকে একনজর চেয়ে মুচকি হাসলো। তবে থমথমে মুখাবয়বে দন্ডায়মান তার ব্যক্তিগত লোকটাকে দেখে পাতার হাসি মলিন হয়ে আসে।
মুস্তাকীম পাতাকে দেখে হই হই করে বলে,
-” এই তো এসে গেছে আমাদের রাণী সাহেবা! এখন শুরু করা যাক?”
আদুরি চটপট এক চিমটি হলুদ নিয়ে ভোরের গালে মুখে মাখিয়ে বলে,
-” সবার আগে আমি হলুদ লাগিয়ে দিলাম আমাদের রাজপুত্তুর কে!”
ভোর মুচকি হাসলো। পরপর রুবি, সাবিনা চৌধুরসহ সবাই হলুদ লাগিয়ে দিলো! ভোরের হুজুর দোয়া দরুদ পাঠ করে ভোরকে ভালোভাবে গোসল করিয়ে দেয়! ভোর লজ্জা পায় তবে কিছু বলে না। হুজুরের সম্মুখে ভোর শান্ত শিষ্টাচারে ভরপুর এক ভদ্র বাচ্চা।
ভোরের গোসল শেষে ভোরকে সাদা পাঞ্জাবী ও সাদা লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হয়! সাদা পাজামা লুঙ্গি তে ভোরকে মুরুব্বি মুরুব্বি লাগছে। আদুরি ‘আব্বাজান আব্বাজান’ ও আনিকা ‘দাদাজান’ ডেকে ভোরের কান পঁচিয়ে ফেলেছে। মুস্তাকীম ফয়সাল সহ বাকিরাও একটু পর পর ‘মুরুব্বি’ বলে ডেকে ভোরকে বিরক্ত করছে। ছোট রূপ হাসতে হাসতে ভোরের কাছে এসে লুঙ্গি টেনে ‘দাদা দাদা’ ডাকে। ভোর কাউকেই কিছু বলে না; মুখাবয়ব তার শান্ত নম্রতায় ছেয়ে। তবে পাতাকে রূপ যখন :আম্মা’ ডাকে ভোরের রাগ হয় অনেক। কিন্তু সে কিছু বলে না।
সকলের খাওয়া দাওয়ার পাঠ শেষ হলে ভোরকে হাদিয়া দেয় সবাই! ভোর উপহার পেয়ে বেশ খুশি হয়!
শুনশান অন্ধকারে নিমজ্জিত ধরনী! অতিথিদের বিদায়ী পর্ব শেষ হয়েছে বেশ সময় গড়িয়ে গেছে। ছোট ভোরও ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। পাতা তাকে ঘুম পাড়িয়ে নিজ ঘরে এসেছে ঘন্টা খানেক হবে। অথচ তার চোখে ঘুম নামে নি। পা দুটো ব্যাথায় টনটন করছে।পেটেও খানিক পরপর চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হয়! অসহ্য লাগছে সবকিছু। পাতা শুয়ে থাকা অবস্থাতেই নিজ চুল খামচে ধরে। কেমন পাগল পাগল লাগছে!
-” কি হয়েছে?”
রাশভারী আওয়াজ ভেসে আসতেই পাতা সজাগ হয়। এলোমেলো চুল পরিপাটি করে ছোট করে বলে ‘কিছুই হয়নি!’
অরুণ গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে পাতাকে অবলোকন করে। মেয়েটা পা মোচরা মুচরি করছে! নিশ্চয়ই পায়ে ব্যাথা করছে! অরুণ বিছানায় উঠে বসলো। লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। পাতার পা দুটো টেনে নিজ কোলে রাখে। শক্ত খসখসে হাত চালিয়ে টিপতে শুরু করে। পাতা সরিয়ে নিতে চায় অরুণের বলিষ্ঠ হাতের শক্তির কাছে ব্যর্থ হয়!
-” ছাড়ুন ভোরের বাবা!”
অরুণ ছাড়ে না। পাতা আরো কয়েকবার একই কথা বলে। অরুণ নিরুত্তর! পাতা
কিছু সময় চুপ থেকে বলে,
-” পা ব্যাথা করছে না আর! শুয়ে পড়ুন!”
অরুণ পায়ের আঙ্গুল গুলো টেনে পা নামিয়ে পাশে শুয়ে পড়ে চুপচাপ। পাতা আড়চোখে তাকিয়ে দেখে। পাতা চিৎ হয়ে শুয়ে আর লোকটা তার দিকে পিঠ করে। পাতা আশায় থাকে লোকটা তার দিকে ফিরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করবে! কিন্তু এমন কিছুই হয় না। অন্যসময় হলে পাতা লাজ ভুলে নিজেই কাছ ঘেঁষতো। আজ এগিয়ে যায় না। কম্ফোর্ট টেনে গায়ে জড়িয়ে চোখ বুজে শুয়ে থাকে। চোখে ঘুম নামে না। সময় গড়ায় বেশ! পাতার কান্না পায় কেন জানি । পাশ হাতরিয়ে মোবাইল বের করে। অরুণকে ডিঙিয়ে উঠে আসে বিছানা থেকে। অন্ধকারে ভয় পাওয়া পাতা অন্ধকারকে তোয়াক্কা না করে ;লাইট না জ্বালিয়েই বেলকনিতে যায়! দোলনায় বসে থাকে চুপচাপ! বাড়ন্ত পেটে হাত রেখে বলে,
-” এই বাবু? কি হয়েছে তোমার? না নিজে ঘুমোচ্ছো না আমাকে ঘুমোতে দিচ্ছো! খিদে পেয়েছে?”
জবাব আসে না প্রশ্নের! পাতার তবুও ফিসফিসিয়ে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে। বাবুর বাবার নামে শ খানিক অভিযোগ দায়ের করে। সাথে অনুভব করে তাঁর ভেতরে বেড়ে ওঠা আরেকটা প্রাণ কে। মনে হয় কেউ তাকে ডাকছে। পাতার ভয় করে না ভালো লাগে। মাতৃমন জুড়ে দোলা খায় তীব্র খরায় শীতল ধারার বর্ষণ। তবে পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাতার লোমকূপ জেগে ওঠে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে পাশে তাকায়!
অরুণ লাইট জ্বালিয়ে পাতার সম্মুখে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় যার অর্থ আমি ! ভয়ের কিছুই নেই। পাতা তাঁর পেটে মুখ লুকিয়ে রাখে। বিড়বিড় করে দোয়া ইউনুস পাঠ করে।ভয় পেয়েছিল অনেক। স্বাভাবিক হয় ক্ষনিকের মাঝেই। অরুণের পেটে মুখ লুকানো অবস্থায় খাবারের ঘ্রাণ নাকে বাজে। পাতার ভেতরের সত্ত্বা যেন তরতরিয়ে ওঠে সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণে! মাথা তুলতেই দেখতে পায় অরুণ সরকারের একহাতে পাস্তার বাটি! তাতে বেশি করে টমোটো সস। পাতার জিভে পানি চলে আসলেও চুপ থাকে। অরুণ পাতার পাশে বসে চামচে খাবার ভরে ফু দিয়ে পাতার মুখের সামনে ধরে বলে,
-” আমার মা’য়ের খিদে পেয়েছে। সে খাবে।”
-” তো আপনার মা’কে খাওয়ান! আমার মুখের সামনে ধরে আছেন কেন? আ..”
অরুণ তার মুখে পুরে দেয় খাবার! পাতা গাল ফুলিয়ে চিবোতে থাকে। নাক উঁচু ম্যানারলেস লোক! সব মা’য়ের চিন্তা। পাতা তো কেও না।
দু’জনের মাঝে নিরবতা ভেঙ্গে অরুণ বলে,
-” তুমি খেলে তবেই না আমার মা খেতে পারবে!”
পাতা শান্ত চোখে চায় অরুণের দিকে। স্বাভাবিক মুখশ্রী! ফোলা ফোলা চোখে ঘুম পাখির আনাগোনা! সে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
-” আপনি এমন কেন?”
-” কেমন? স্বার্থপর! বদমেজাজি! অহংকারী! কোনটা রেখে কোনটা বলি বল তো?
হেসে বলে অরুণ। পাতা তার বাহুতে মাথা এলিয়ে বলে,
-” রুবি আপুর সাথে কথা বলেননি কেন? উনি প্রথমবার এলো এই বাড়িতে! আপনাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো আপনি সম্পূর্ণ ইগনোর করলেন! আরিয়ান ভাই কি মনে করলো? যতই মান অভিমান থাকুক ভদ্রতাসুলভ দু-একটি কথা বললে কি হতো? এতো ইগোয়েস্টিক কেন আপনি!”
অরুণ চুপ থাকে। পাতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“আমি তখন কি এমন বললাম যে আপনি আমাকেও ইগনোর করছেন! আমি আপনাকে বুঝতেই পারি না। আপনার ঘন ঘন মুড সুয়িং হয়! যেন প্রেগন্যান্ট আমি না আপনি! আমি দেখেই এসব সহ্য করছি! নইলে অন্য কেউ হলে আপনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতো! হাসবেন না একদম! আপনার দাঁত আমি ভেঙে দেবো!”
অরুণের হাসি থামে না। শব্দ হীন হাসে সে। পাতা এগিয়ে তাঁর গাল টেনে দেয়।
-” আপনার সাথে মা’র এতো কিসের মান অভিমান আমি জানি না। তবে মা কিন্তু আপনাকে ছেলের মতোই ভালোবাসে। আরিয়ান ভাইয়ের মতো না হলেও বাসে তো। মা ভেবে কেন মান অভিমান ভুলে সব ঠিকঠাক করে নিতে পারেন না? রুবি আপু সেদিন রাগের মাথায় দুই একটা কথা বলেছেই। আপনি কেন বড় ভাইয়ের মতো তার ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে পারছেন না? আপু কিন্তু অনুতপ্ত হয়ে কতবার ক্ষমা চেয়েছে আপনি প্রতিত্তর করেন না। সে তবুও বারবার নত হয়! সেদিন রূপের অবস্থা দেখে আপু একটু বাড়াবাড়ি করেছিলো সে স্বীকার করেছে। মা আরিয়ান ভাইয়ের দোষটা কোথায় এখানে? তাঁরা রুবি আপুকে শাসন করে আপনার কাছে ক্ষমা চায়নি? তবুও কেন এতো অভিমান ভোরের বাবা? ওদের দিকটাও একটু ভেবে দেখবেন। আপনার বাবা চাইতো আপনারা সবাই মিলেমিশে থাকুন! আপনি তাঁর কথাও রাখবেন না?”
অরুণ গম্ভীর মুখে বলে,
-” আব্বু চাইতেন! আমিও মিলেমিশেই থাকতে চেয়েছিলাম। আমি অনেক বিষয় ইগনোর করেছি পাতাবাহার। আমার কথা বাদ। আমার জ্বরে কাতর তিন বছরের ছেলে ঘরে হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে মা মা করছিল! বাড়ির কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পায় না। আমি রাতে অফিস থেকে এসে ছেলের অবস্থা দেখে দিশেহারা! তারপর থেকে কোল ছাড়া করি নি। আনিকাকে রুবির আদর করার দৃশ্য আমার ছেলে হা করে গিলতো! তাঁর পিছু ঘুরতো আদরের আশায়। অবুঝ আনি রেগে যেতো! রুবি কি পারতো না আনিকার অনুপস্থিতিতে একটু খানি বুকে টেনে নিতে! রুবির দুই বছরের আনিকা মা বাবাকে ছাড়া যত্নে থাকতো! আমার তিনবছরের ছেলে অযত্নে ঘুরঘুর করতো সারা বাড়ি। নাকের সর্দি মুছে দেয়ার লোক নেই এক মিনু আপা বাদে! ওরা অভিযোগ আনতো ভোর কেন কাজের লোকের সাথে লেগে থাকতো! দাদি থেকে কাজের লোক অধিক প্রিয় কেন? ওদের যত্ন আমি থাকতেই; আমি নেই যত্ন নেই। লোক দেখানো যত্ন যাকে বলে। আমার মতো ছেলেটার হাতটাও বেশি চলে। বাচ্চাদের মাঝে ঝগড়া মারামারি হয়! আমি ভোরকে শাসন করি ছেলেটা শোনে না। সেদিন যা কিছু হলো আবার হবে না তার কি গ্যারান্টি? তাই ভাবলাম দূরেই সই!”
থেমে যায় অরুণ! আবেগী পাতার চোখে নোনাজল। অরুণ লম্বা শ্বাস নিয়ে আবার বলে,
-“অনেক করেছি অন্যের স্বার্থের জন্য! ধোঁকা, কষ্ট ছাড়া কিছুই পাই নি। ছোটমা ভালোবাসে আমাকে আমি অস্বীকার করছি না। তবে আমার মনে হয় তাঁর মাঝেও কিছু স্বার্থ লুকিয়ে আছে।আরিয়ান আমার সাংঘর্ষিক সম্পর্কে আব্বু ছোটমার সম্পর্কে টানাপোড়নে ছিলো। আব্বু ছোট মা’কে দোষ দিতো ছোট-মা’ আমাকে। বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থেকেছি। তাদের সব ঠিকঠাক মাঝখান থেকে আমার আব্বুর মাঝে সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। আব্বু আনতে গেলেও ছোটমা কখনো ফোন করেও বলেনি ‘অরুণ বাড়ি ফিরে এসো!’
আব্বু উকিল ডেকে একটা উইল বানিয়েছিলো।সব সম্পত্তির বন্টন হয়। সবাই সন্তুষ্ট ছিলো। সমস্যা হয় এক জায়গায় অফিস! আব্বু অফিস পুরোটাই আমার নামে দিয়ে দেয়।এতেই ছোটমা আব্বুর বাকবিতন্ড হয়। বাবা তাঁর জেদে অনড়। আমি এসব জানতাম না। আভারি ভাই জানিয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পর অফিসের সব ক্লায়েন্ট পিছু হটে। কিছু ঋণ ছিলো! ব্যাংক থেকে তোড়জোড় আসে। পুরোনো ম্যানেজার কারসাজি করে অনেক ডকুমেন্টস গয়নাগাটি হাতিয়ে নেয়। সব বিপর্যয় একসাথেই আসে। অফিস নিলামে ওঠার অভিপ্রায়ে।
অফিস আমাদের সরকার বাড়ির ঐতিহ্য ছিলো। আমার বাবা দাদা এই পেশায় নিযুক্ত ছিল। অফিসের প্রতিটি কোনায় আব্বুর ছোঁয়া ছিলো। কিভাবে একে ধ্বংস হতে দিতাম? ছোট-মা’র সহায়তা চাই উনি মানা করে দেয়। ‘এই ব্যবসা লাটে উঠেছে আর কিছুই হবে না। নিলামে তুলে বরং সব ঋণ শোধ করো’। আমি তখন সবে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েছি। হাত শূন্য। আমি অরুণ প্রথমবারের মতো তার হাত ধরে অনুরোধ করি বেশ কয়েকবার। উনি মানেন নি। ধারেও টাকা চেয়েছিলাম যে পরে শোধ করে দিবো। মানা করে; তাঁর কাছে টাকা নেই! বন্ধুদের সহায়তায় ঋণ শোধ করে ব্যবসা কাঁধে তুলে নিই।
এখন অরুণ সরকার সফলকামি। আড়ালে আবডালে গুঞ্জন শোনা যায় অফিসের মালিকানা নিয়ে। রুবির ব্যাংকের চাকরি রিজাইন করে অফিস জয়েন করা শখের বশেই? তোমাকে ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা!ছোট-মা’র আড়ালে খবরি পাঠিয়ে অফিসের সব খবরাখবর নেয়া! লোকের কানাঘুষা! অফিস অরুণ একা পাবে নাকি! আরিয়ান আদুরির সমান ভাগ আছে! কান ভারি হয়! শোন পাতাবাহার অর্থ সম্পত্তির লোভ অনেক বড় লোভ!আরিয়ান এসব নিয়ে না ভাবলেও রুবির মনে আছে কিছুটা! আমি বলি নি আমি আরিয়ান বা আদুরিকে ভাগ দেবো না।ওরা আমার ভাইবোন। তাদের নামেও শেয়ার আছে! যতটুকু তাঁরা প্রাপ্য। আমি অরুণ তাদের হক মেরে খাবো না।”
অরুণের দীর্ঘ ভাষণের পর পাতা হামি তোলে।নাহ্। ব্যাপারটা মোটেই সাধারণ না।সে এতো দিন আসমা বেগমের কথা শুনে এক তরফা ভেবেছে। এসব তো তার ভাবনার বাহিরে।অরুণের একহাত টেনে বাড়ন্ত পেটের উপর রেখে বলে,
-” আমি ওসসব ঝামেলা কুচকাওয়াজ বুঝি না ভোরের বাবা। আমি একটা সুন্দর শান্তি প্রিয় সংসার চাই! সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে চাই!”
অরুণ ঝুঁকে পাতার বাড়ন্ত পেটে চুমু দিয়ে বলে,
-” জো হুকুম মেরে রাণী!”
পাতা লজ্জা পায় সাথে হাসিও পায়! নিমিষেই মনটা হালকা হয়ে যায়। ভালো লাগে। হ্যাঁ এখন তো ঘুম পাবেই।
অরুণ পাতার হাতে বাটি ধরিয়ে দোলনা থেকে উঠে রুমে যায়! পাতা বিরক্তের সাথে তাঁর প্রস্থান দেখে পুনরায় মুখে খাবার চালনা করে। অরুণ সাথে সাথেই ফিরে আসে একটা টুল,পানি ভর্তি গ্লাস ও একটা শপিং ব্যাগ। টুল পাতার সম্মুখে রেখে গ্লাস রাখে তার উপর। পাশে বসে শপিং ব্যাগ থেকে একজোড়া জুতো বের করে। টকটকে লাল ছোট একজোড়া মেয়ে বাচ্চার জুতো। দেখতে কিউট। অরুণ পাতার দিকে বাড়িয়ে বলে,
-” সুন্দর না?
পাতা হাতে তুলে নেয়। সুন্দর সাথে একটু বেশিই কিউট। ছোট বাচ্চাদের জিনিস পত্রই এমন। তাদের মতোই কিউট। দেখলেই কিনতে মন চাইবে!
-” মা’য়ের জন্য!”
-” যদি আরেকটা আব্বু আসে?”
অরুণের চোখে চোখ রেখে বলে পাতা! অরুণ কপালে ভাঁজ পড়ে। থমথমে গলায় বলে,
-” মা আসবে মিলিয়ে নিও!”
পাতা বত্রিশ পাটি বের করে হাসতে হাসতে বলে,
-” হ্যাঁ আপনাকে আর ভোরকে বলে গেছে তাই না? যে নাক উঁচু ম্যানারলেস লোকটার মা আসবে। ভোরের বোন ভাবনা আসবে।”
অরুণ পাতার বাড়ন্ত পেটে কান ঠেকিয়ে অনুভব করে। ফিসফিসিয়ে বলে,
-” ও আসার পর থেকেই মনে হয় আমার মা আছে আশেপাশে। আমার মন বলে মা হবে!”
পাতা আর তর্কে জড়ায় না। মুচকি হাসে। উপর ওয়ালার কাছে ফরিয়াদ করে যেন একটা মা আসে। তাদের ঘরে জান্নাত আসে।
অরুণ সোজা হয়ে বসে। পাতার দু গালে হাত রেখে মুখোমুখি হয়! আলগোছে মিলিত হয় অধরজোড়! পাতা চোখ খিচে নেয়! অরুণ সময় নিয়ে অধর ছাড়ে। ছোট ছোট চুমুতে আদুরে মুখটা ভরিয়ে গলার ভাঁজে মুখ ডুবায়! লাজহীন হস্ত জোড়া থেমে নেই। পরনের ঢিলাঢালা ফ্রকের বোতামগুলো একে একে খুলতে শুরু করে অধৈর্য হয়ে। বেপরোয়া ভঙ্গিতে মেতে ওঠে। পাতার চোখের আকার বড় হয়। অরুণের হাতজোড় মুঠোয় বন্দি করে বলে,
-” ভোরের বাবা! কি করেছেন? প্লিজ শান্ত হন!”
পাতা বাহার পর্ব ৫১
অরুণের কানে গেলেও অরুণ থামে না। পাতার ভয় হয়! অরুণের চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে মুখ নামিয়ে আনলো। কানে অধর রেখে বিড়বিড় করে কিছু বলে। অশান্ত অরুণ শান্ত হয়ে আসে নিমিত্তে। পাতার কপালে চুমু দিয়ে পাজা কোলে নিয়ে রুমে চলে যায়! বেলকনির টবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাতাবাহার মিও মিও করে ডেকে ওঠে! অলস ভঙ্গিতে দোলনায় উঠে গা এলিয়ে দেয়।