পারমিতা পর্ব ১৩
Nabila Ahmed
–আমি তোমাকে সেভাবে ভালোবাসি যেভাবে একজন নারী একজন পুরুষকে ভালোবাসে, যেখাবে একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসে, যেভাবে আফ…যেভাবে আফরিন আপু তোমাকে ভালোবাসতো।
এক নিশ্বাসে বলে ফেলে মিতা।
মিতার কথা শুনে কাধ থেকে হাত সরিয়ে নেয় অরিয়ন। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে। পরক্ষণেই চেহারায় গাম্ভীর্য ফুটে উঠে। মিতার থেকে দূরে সরে ঘুরে দাঁডায় অরিয়ন। নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মিতা অরিয়ন কি করছে তা দেখতে ব্যস্ত। কেনো হঠাৎ করে মনের কথা বলে দিলো তা বুঝতে পারছে না তবে বলাটা জরুরি ছিলো। রে*পিস্ট? না, অরিয়ন এসব ভুলেও করতে পারবে না। তবে আফরিন ভেবে যা হয়েছে তাতে কি মিতার একটু ও কষ্ট হয়নি? হয়েছিলো।
–তুই এসব কিছুই বলিসনি।
মিতার দিকে না তাকিয়েই সিরিয়াস হয়ে বলে অরিয়ন।
–কিন্তু আমি তো..
বলতে নেয় মিতা।
–তুই কিছুই বলিস নি। আমি ও ভেবে নিবো আমি কিছুই শুনিনি। এরকম কিছু তুই বলেছিস সেটা ভুলে যা।
বলে ফেলে অরিয়ন।
–কিন্তু অরিয়ন..
–অরিয়ন ভাইয়ায়ায়া…খবরদার নাম ধরে ডাকবি না পরী।
মিতার দিকে ঘুরে চেচিয়ে বলে উঠে অরিয়ন।
হঠাৎ করে অরিয়নের এরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে ভয়ে দু পা পিছিয়ে পড়ে মিতা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–যা বলেছি তাই হবে। এখন যেতে পারিস।
আবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে অরিয়ন।
নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা মিতার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে। মিতার ভালোবাসা অরিয়ন মেনে নিবে না তা মিতা ভালো করেই জানে তাই বলে এতোটা রেখে যাবে তা বুঝতে পারেনি মিতা। অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকলেও অরিয়ন মিতার দিকে আর একবার ও ফিরে তাকায় নি। অবশেষে কান্না করতে থাকা মিতা টেবিলের উপর থেকে বইটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রুম থেকে।
–ফা************কককককক।
চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।
রুম থেকে বেরিয়েই কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে দৌড়ে চলে যেতে নেয় মিতা।
–মিতা?
পেছন থেকে ডাক দেয় আবরার।
আবরারের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরে মিতা। তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখের পানি দু হাত দিয়ে মুছে চুলগুলো সামনে এনে গলায় থাকা দাগগুলো ঢাকা চেষ্টা করে।
–জি আরিয়ান ভাইয়া?
আবরারের দিকে তাকিয়ে হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে বলে মিতা।
মিতা ফিরে তাকাতেই আবরারের চোখ যেন কপালে উঠে গেলো। মিতার চোখ লাল হয়ে আছে, চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কান্না করেছে। ঠোঁটের আর গলার দাগগুলো আবরারের নজরে আসতেই চোখেমুখে রাগ ফুটে উঠে আবরারের। নিজের হাত মুঠ করে রাখে শক্ত করে।
–কিছু না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে মিতা একটা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা আবরারের নজর থেকে মিতা সরতেই দ্রুত হেটে অরিয়নের রুমের দিকে যেতে থাকে আবরার।
অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করার প্রয়োজন মনে না করেই দরজা খুলে রুমে ঢুকে পড়ে আবরার।
–তুই আবারও..
দরজা খোলার শব্দে মিতা ভেবে বলে উঠে অরিয়ন।
আবরার কোনো কথা না বলেই দু কদমে অরিয়নের সামনে গিয়ে স্বজোরে এক ঘুসি মারে অরিয়নের মুখে। হুট করে আবরারের এহেন কান্ডে অবাক হয়ে যায় অরিয়ন।
–হোয়াট হেভ ইউ ডান টু হার, ইউ ফা*কং মনস্টার।
আবারও একটা ঘুসি মারে আবরার।
–আরিয়ান।
আবরারের হাত ধরে চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।
–তোর সাহস কীভাবে হলো মিতাকে স্পর্শ করার?
–ভুলে হয়ে..
আরবারের হাত ছেড়ে দিয়ে বলতে নেয় অরিয়ন
–ভুলে? ভুলে তুই মিতার জীবন শেষ করে দিবি? তুই জানিস না তোদের ডিভোর্স হয়ে যাবে তা? তাও ওর গায়ে হাত দিয়েছিস তুই।
–তুই যেমন ভাবছি..
–আমি যেমনটা ভাবছি ঠিক তেমন ই। আমি নিজের চোখে মিতার অবস্থা দেখে এসেছি। তুই একটা জা*নোয়ার।
–মুখ সামলে কথা বলবি আরিয়ান।
এবার গম্ভীর হয়ে বলে অরিয়ন।
–আমি মুখ সামলে কথা বলবো? তুই আগে বল তোর সাহস কীভাবে হলো মিতাকে স্প..
–শি ইজ মাই ওয়াইফ। আই হেভ অল দা রাইট আরিয়ান।
হুট করেই আবরারের গলা চেপে ধরে অরিয়ন।
হঠাৎ করে অরিয়নের এমন করা দেখে থতমত খেয়ে যায় আবরার। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে অরিয়নের দিকে।
–শি. ইজ. মাই. ওয়াইফ। মাই, নট ইউরস আরিয়ান। সো স্টে ইন ইউর লিমিট।
আবরার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অরিয়নের দিকে। অরিয়নের হঠাৎ কি হলো অরিয়ন জানেনা শুধু জানে বার বার মিতা মিতা নামটা শুনতে বিরক্ত লাগছে অরিয়নের। দু জন দু জনের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন ঘোর কাটলো অরিয়নের। তাড়াতাড়ি করে আবরারের গলা থেকে হাত সরিয়ে দু পা পিছিয়ে পড়ে অরিয়ন। মিনিটেই চোখে মুখে ফুটে উঠে অনুশোচনা। আরিয়ান? নিজের আদরের ছোট ভাই আরিয়ানের গায়ে কখনো হাত তুলেনি অরিয়ন আর আজ সেই ভাইয়ের গ*লা টি*পে ধরেছে তা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না নিজেই।
একবার নিজের হাতের দিকে একবার আবরারের দিকে তাকিয়ে থাকে।
–আরি..
অরিয়ন কথা বলার আগেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আবরার।
–ফা* ফা* ফা* ফা*।
রাগে দেয়ালে অনবরত ঘুসি মারতে মারতে বলতে থাকে অরিয়ন।
সারাদিন মিতা নিজের রুম থেকে বের হয়নি। শায়লাকে দিয়ে রুমের মধ্যে খাবার আনিয়ে খেয়ে নিয়েছে। এখনও নিজের রুমে বসে একা একা আকাশের দিকে তাকিয়ে গান শুনে যাচ্ছে মিতা।
“আচ্ছা আমার কি উচিৎ তোমাকে ঘৃণা করা রিয়ন?” মনে মনে ভাবে মিতা। “কিন্তু কি জন্য করবো? তুমি একজনকে মন থেকে ভালোবেসেছিলে তাই? তা জানা স্বত্তেও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই? তাকে ভেবে তুমি নিজের ফিলিংস আমার কাছে শেয়ার করেছো তাই? নাকি তোমাকে ভালোবেসে আমি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি তাই? নাকি তোমার মতো কাউকে চাইতে চাইতে তোমাকেই চেয়ে বসেছি তাই?নাকি তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসবে না তাই?” আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে মিতার।
দু দিন ধরে রুম থেকে মিতা তেমন একটা বের হয়নি। বিশেষ করে যখন হাবিব চৌধুরী আর আনিকা চৌধুরী বাসায় থাকে তখন এটা সেটার বাহানা দিয়ে রুমেই থেকে যাচ্ছে মিতা। শরীরে থাকা গায়ের দাগগুলো আগের থেকে হালকা হয়ে এসেছে। নিজেকে আয়নায় আরও একবার ভালো করে দেখে মিতা। কাল থেকে কলেজ যাওয়া শুরু করবে আবার।
–মিতা? মিতা?
দরজায় নক করে শায়লা।
শায়লার ডাক শুনে তাড়াতাড়ি করে ওড়না গায়ে দিয়ে দরজা খুলে দেয় মিতা।
–জি শায়লা আপু?
–হাবিব স্যার ডিনার করতে ডাকছে তোকে।
–আচ্ছা আপু আমি আসছি।
জবাব দেয় মিতা।
খাবারের টেবিলে সবাই মিলে অপেক্ষা করছে মিতার জন্য। অরিয়ন হাবিব চৌধুরীর পাশেই বসেছে। অন্য পাশে আনিকা চৌধুরী বসেছে। আবরারকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মিতা হাবিব চৌধুরীর কাছাকাছি আসতেই রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে আবরার। নিজের জায়গায় বিরাজমান হতে চেয়ার টান দেয় আবরার।
–আরিয়ান।
ডাক দেয় হাবিব চৌধুরী।
–জি বাবা?
জবাব দেয় আবরার।
–ওটা মিতার জায়গা, এখন থেকে অরিয়নের পাশে মিতা বসবে।
আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কিন্তু বাবা
–কোনো কিন্তু নয়।
জানিয়ে দেয় হাবিব চৌধুরী।
–কিন্তু হাবিব, এতোদিন ধরে আরিয়ান এখানে বসে আসছে।
বলে উঠে আনিকা চৌধুরী।
–আমি জানি আনিকা। এতোদিন অরিয়নের বিয়ে হয়নি, এখন হয়েছে।
আনিকা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
আনিকা চৌধুরী আর কোনো কথা বললো না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে রইল।
–নিজের জায়গায় গিয়ে বস মিতা।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
মিতা বা অরিয়ন কোনো কথা বললো না। অরিয়ন নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে।
মিতা চেয়ার টেনে অরিয়নের পাশে বসে। সবাই যার যার জায়গায় বসে পড়লেই শায়লা আর অন্যরা খাবার দিতে থাকে প্লেটে।
হাবিব চৌধুরী একটা খাম অরিয়নের সামনে রাখে।
–কি এটা?
জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–খুলে দেখো।
বলে হাবিব চৌধুরী।
চামচ রেখে খাম খুলতেই অবাক হয়ে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকায় অরিয়ন। সবাই তাকিয়ে আছে অরিয়ন আর হাবিব চৌধুরীর দিকে।
–ইউ আর জোকিং।
বলে অরিয়ন।
–ইউ নো আই ডোন্ট ডু দিস।
খাবার মুখে দিতে দিতে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কি আছে খামে?
প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।
–আমি যাবো না কোথাও।
জানিয়ে দেয় অরিয়ন।
–তাহলে নিপ প্রোজেক্ট থেকে তুমি বাদ।
সাফ জানিয়ে দেয় হাবিব চৌধুরী।
–আর ইউ সিরিয়াস বাবা? এই প্রোজেক্ট এর জন্য আমি দিনরাত কাজ করেছি। তুমি এটা করতে পারো না।
রেগে গিয়ে বলে অরিয়ন।
–আর তুমি ভুলে যাচ্ছো এই কোম্পানির মালিক আমি তাই আমি যা খুশি তাই করতে পারি।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–হয়েছেটা কি কেউ বলবে?
রেগে বলে আনিকা চৌধুরী।
–বাবা আমার আর পরীর জন্য হ্যানিমুন যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
বলে অরিয়ন।
–কিহ?
অবাক হয়ে বলে আবরার।
–কি?
বলে উঠে মিতা।
–হাবিব, এইসব কি করছো তুমি?
বলে আনিকা চৌধুরী।
–আমার কাছে যা ভালো মনে হচ্ছে তাই।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–আর অরিয়ন শুনো, তোমার কাছে কাল দিনটাই সময় আছে এর মধ্যে তোমার মতামত জানিয়ে দিবে। আমার আবার নতুন মানুষ ঠিক করতে হবে প্রোজেক্ট এর জন্য।
কথাটা বলেই টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায় হাবিব চৌধুরী।
–আর মিতা?
ডাক দেয় হাবিব চৌধুরী।
–জি চাচ্চু?
জবাব দেয় মিতা।
–খাওয়া শেষ হলে আমার রুমে আসিস, কথা আছে।
–ওকে চাচ্চু।
মাথা নিচু করে বলে মিতা।
–কাজটা বাবা ঠিক করছে না।
বলেই উঠে চলে যায় আবরার।
–আরিয়ান খেয়ে যা বাবা।
আবরারের পেছন পেছন চলে যায় আনিকা চৌধুরী।
পারমিতা পর্ব ১২
–তুই..
হঠাৎ করে নিজের চেয়ার মিতার দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠে অরিয়ন।
–তুই বাবাকে বলবি তুই যেতে পারবি না,ঠিক আছে?
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে মিতা।