পারমিতা পর্ব ২৭

পারমিতা পর্ব ২৭
Nabila Ahmed

–আফনান।
দূর থেকে ভেসে আসে অরিয়নের নাম।
মিতার চোখের সামনে যেন সবকিছু স্লো মোশনে হতে লাগলো। ড্রয়িং রুম থেকে দৌড়ে আসা মানুষটির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলো মিতা।
–আফরিন আপু।
বিরবির করে বলে মিতা।
ক্ষণিকের মধ্যে দৌড়ে আশা আফরিন জড়িয়ে ধরে অরিয়নকে। নিজের দু হাত দিয়ে অরিয়নের গলা জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করে আফরিন। মিতার হাত ধরে থাকা অরিয়নের হাত নিজে নিজেই হালকা হয়ে আসলো। মিতার হাত ছেড়ে আফরিনকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অরিয়ন।

–আফনান…আফনান। আমার আফনান।
অরিয়নের গলায় চুমু খেতে খেতে কাঁদতে থাকে আফরিন।
মিতা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। পরক্ষণেই তাকায় আফরিন আর অরিয়নের দিকে। ড্রয়িং রুমের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সকলেই তাকিয়ে আছে আফরিন আর অরিয়নের দিকে। হাবিব চৌধুরী, মায়া চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী অপরাধীর মতো মন খারাপ করে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
অনবরত কাঁদতে থাকা আফরিন হুট করেই চুপ হয়ে যায়।
–আফরিন?
ধীরে ধীরে ডাক দেয় অরিয়ন।
আফরিনের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আফরিন।
–আফরিন? আফরিন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
অন্যরা দরজার দিকে এগিয়ে আসার আগেই অরিয়ন আফরিনকে নিজের কোলে তুলে নেয়। তাড়াতাড়ি করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। অরিয়নের পেছন পেছন হাবিব চৌধুরী, আনিকা চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী যায়। মিতা ধীরে ধীরে হেটে যায় মায়া চৌধুরীর সামনে।
–মিতা য..
–মা, আপু ফিরে এসেছে। আপু ফিরে এসেছে মা।
খুশি হয়ে বলে মিতা।
আফরিন ফিরে এসেছে তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলো না মিতা। মায়া চৌধুরীর পাশে স্যুট পরা অচেনা একজনকে দেখতে পায় মিতা।

–ইনি?
প্রশ্ন করে মিতা।
–আফরিনের সাথে এসেছে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–ওহ। দাঁড়িয়ে থেকো না, তাড়াতাড়ি চলো।
কথাটা বলেই রুমের দিকে হাটা শুরু করে মিতা।
মিতার পেছন পেছন মায়া চৌধুরীও হাটা শুরু করেছে। মিতা তাড়াতাড়ি হাটতেই বুঝতে পারে আফরিনকে অরিয়নের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দরজা খোলা, রুমে ঢুকতেই দেখতে পায় আফরিন বিছানায় শোয়া। পাশেই চেয়ার নিয়ে বসে আছে অরিয়ন। আফরিন শক্ত করে অরিয়নের হাত ধরে রেখেছে। বিছানার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে হাবিব চৌধুরী ও আনিকা চৌধুরী।

–ডাক্তারকে কল করেছি, কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।
অরিয়নের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
মায়া চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে খাটের অন্য পাশে উঠে বসে, আফরিনের হাত ধরে রাখে। “আফরিন আপু ফিরে এসেছে, রিয়নের প্রকৃত ভালোবাসা ফিরে এসেছে।” মনে মনে ভাবে মিতা।
–এইগুলা এখান থেকে ফালাও, জানোনা আফরিনের এলার্জি আছে?
হুট করে অরিয়ন নিজের জায়গা থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা রজনীগন্ধা ফুলের তোড়া ছুড়ে ফেলে দিয়ে চেচিয়ে উঠে।

মিতা অরিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অরিয়নের চেহারা দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারছে অনেক বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে অরিয়নকে। অরিয়নের চেচামেচি শুনেই শায়লা দৌড়ে এসে ফ্লোরে পড়ে থাকা ফুল নিয়ে যায়।
অরিয়ন আবারও নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আফরিনের হাত শক্ত করে ধরে আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। নিজের খোপায় থাকা ফুলগুলো টেনে বের করে নেয় মিতা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার চলে আসে। আফরিনকে ভালো ভাবে দেখে নেয়।
–টেনশনের কিছু নেই। বেশি উত্তেজিত হওয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
বলে ডাক্তার।
–ভয়ের কিছু নেই তো?
প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।
–না। তবে জ্ঞান ফিরলে কিছু পরীক্ষা দিবো।
বলে ডাক্তার।
–ওকে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

ডাক্তার আর কিছু না বলেই চলে গেছে। সবাই যার যার জায়গায় চেয়ার নিয়ে বসেছে। মিতা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে জানা নেই। তবে আফরিন ফিরে এসেছে তার জন্য খুশি। কিন্তু বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করছে মিতা। আফরিন জড়িয়ে ধরার পর থেকে একবার ও অরিয়ন মিতার দিকে ফিরে তাকায় নি। যেন মিতার কোনো অস্তিত্ব নেই এই বাড়িতে। অরিয়নের মুখে আর চোখে তাকাতেই দেখতে পায় অরিয়ন এখনো তাকিয়ে আছে আফরিনের দিকে।
মিটমিট করে চোখ খুলে আফরিন। চোখ খুলে অরিয়নকে দেখে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না আফরিনের।
–আফনান।
লাফ দিয়ে উঠে জড়িয়ে ধরে অরিয়নকে।
–আমি ফিরে এসেছি আফনান। তোমার আফরিন ফিরে এসেছে।
অরিয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে আফরিন।

–আফরিন?
ডাক দেয় মায়া চৌধুরী।
মায়া চৌধুরীর ডাক শুনে অরিয়নকে ছেড়ে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকায় আফরিন।
–মা।
মায়া চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে আফরিন।
–শান্ত হ মা, একটু শান্ত হ।
আফরিনের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে মায়া চৌধুরী।
–হুম মা।
কথাটা বলেই একটু সরে আসে আফরিন। অরিয়নের হাত শক্ত করে ধরে সামনের দিকে তাকাতেই চোখ যায় মিতার দিকে।

–মিতা।
মিতার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে আফরিন।
–আপু।
মিতা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় আফরিনের দিকে।
আফরিনের কথা শুনে যেন বাস্তবে ফিরে এলো অরিয়ন। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল মিতার দিকে। মিতার ঠোঁটের কোণে হাসি কিন্তু চোখ ছলছল করছে পানিতে। অরিয়ন এক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে থাকলেও মিতার নজর আফরিনের দিকে।

–এখানে বস। কেমন আছিস তুই?
বিছানায় মিতাকে বসতে বলে আফরিন।
–ভালো আপু, তুমি কেমন আছো? এতোদিন কোথায় ছিলে?
বিছানায় বসে প্রশ্ন করে মিতা।
–তোকে অনেক সুন্দর লাগছে মিতা। একদম নতুন বউয়ের মতো। কি বলো আফনান, তাই না? দেখো না, একদম বউ বউ লাগছে।
অরিয়নের কাধে মাথা রাখতে রাখতে বলে আফরিন।
অরিয়নের কাধে কত সহজেই নিজের মাথা রাখলো আফরিন তা দেখছে মিতা। বুকের মধ্যকার যন্ত্রণা যেন সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে মিতার জন্য। কি করলে এর শেষ হবে মিতার জানা নেই।

–তোর স্বামী কোথায়? এতোদিন পর কেনো এসেছিস।
প্রশ্ন করে বসে হাবিব চৌধুরী।
বাড়িতে ঢুকার পর থেকে মিতার অবস্থা ঠিকি খেয়াল করেছে হাবিব চৌধুরী। মিতার দিকে তাকাতেই যেন অপরাধবোধ ছেয়ে যাচ্ছে নিজের মধ্যে।
–স্বামী? কিসের স্বামী?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে আফরিন।
–যার সাথে তুই পালিয়ে গিয়েছিলি।
শান্ত গলায় বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–কি সব আজেবাজে বলছো? আমি কেনো পালিয়ে যাবো? আমি তো…
কথাগুলো বলে থেমে যায় আফরিন। ঘটনা বুঝতেই পেরেই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে সবার দিকে।

–তোমরা, তোমরা জানতেই পারোনি ঘটনা কি?
অবাক হয়ে বলে আফরিন।
–মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
অন্য কেউ কথা বলার আগেই বলে উঠে অরিয়ন।
–তুমি বিয়ের দিন পরীর হাতে একটা চিঠি পাঠিয়েছিলে আফরিন, এরপর…এরপর তোমাকে আর পাওয়া যায়নি। তন্নতন্ন করে খুজেছি তোমাকে।
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
–হ্যাঁ আমি চিঠি দিয়েছিলাম আফনান, কারণ আমি সত্যি তোমার সাথে প্র‍্যাংক করতে চেয়েছিলাম।
জবাব দেয় আফরিন।
–এসব কিছুর মানে কি? কি সব বলছো তুমি?
চেচিয়ে চেয়ার থেকে উঠে যায় অরিয়ন।

–কি বলছিস তুই এসব আফরিন? সব সত্যি হলে এতোদিন এতোদিন কোথায় ছিলি তুই? আর নিচে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি কে?
আফরিনের পেছন থেকে প্রশ্ন করে উঠে মায়া চৌধুরী।
–পতি*তালয়ে।
জবাব দেয় আফরিন।
আফরিনের কথা শুনে যেন সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। পুরো ঘরে নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায়।
–পতি*তালয়ে?
বিরবির করে বলে মিতা।
–কি বলছিস? ঐখানে কিভাবে গেলি তুই?
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।
–কি বলছিস আফরিন?

ওয়াহিদ চৌধুরী আফরিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে।
–বিয়ের দিন প্ল্যান মাফিক মিতাকে চিঠিটা দিয়ে আমি পার্লারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। মাঝ রাস্তায় মিরাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামাই আমি।
কাঁদতে কাঁদতে বলে আফরিন।
–মিরাজ কে?
প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।
–আমার ক্লাসমেট।
বলে আফরিন।
–মিরাজের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ওর মা মারা গেছেন, গাড়ির জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছে। লোকালে যেতে অনেক সময় লাগবে। যেহেতু আমার বিয়ের এখনো অনেক সময় বাকি ছিলো আর আমি ও দেরী করে আসরে আসতে চাইছিলাম তাই আমি গাড়ি করে কুমিল্লা দিয়ে আসার কথা বলি।
আবারও বলে উঠে আফরিন।

–চট্রগ্রাম ছাড়িয়ে কুমিল্লার রাস্তায় কিছুক্ষণ যেতেই একটা মহিলাকে দেখি বাচ্চাসহ রাস্তায় পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে আর কান্না করছে। গাড়ি থামিয়ে আমি আর মিরাজ কথা বলতে নিয়েই হুট করে ৫/৬ জন কোথা থেকে চলে আসলো বুঝতেই পারিনি।
চোখের পানি মুছে বড় বড় শ্বাস নেয় আফরিন।
–ওরা আমাদের ব*ন্দুক আর চা*পাতি নিয়ে গাড়িতে তুলে। আমার, মিরাজ আর ড্রাইভারের চোখে কাপড় বেধে ফেলে সাথে সাথে। নিয়ে যায় কুমিল্লা বর্ডারের কাছে। প্রথমে ছিনতাইকারী ভাবলেও পরে বুঝতে পারি এরা আসলে ছিনতাইকারী না। বর্ডারে এদের নিজস্ব লোক আছে, গোপন রাস্তা দিয়ে আমাদের ভা*রত পাচার করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পার হতেই ওরা মিরাজ আর ড্রাইভার আংকেলের কি করেছে আমি জানিনা, শুধু জানি চোখ খুললে আমি নিজেকে অনেকগুলো মেয়ের সাথে একা পাই। বুঝতে পারি এরা হিউম্যান ট্রা*ফিকিংয়ের সদস্য।

আফরিনের কথা গুলো শুনতেই মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে ওয়াহিদ চৌধুরী। মায়া চৌধুরী নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে। দু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে তার। ফ্লোরে বসে পড়া ওয়াহিদ চৌধুরীকে দৌড়ে গিয়ে ধরে হাবিব চৌধুরী। মিতা অবাক হয়ে শুধু আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইছে মিতার। অরিয়ন দূরে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। চেহারার এক্সপ্রেশন দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
–কি থেকে কি হয়ে গেলো মাথায় যেন কিছুই ঢুকছিলো না আমার। আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় এক পতি*তালয়ে,যেখানে জোরপূর্বক আমাদের দিয়ে পতি*তাবৃত্তি করানো হতো। যারা করতে চাইতো না তাদের উপর নির্যাতন চালানো হতো।
কথাগুলো বলতেই নিজের মুখ দু হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে আফরিন।
মায়া চৌধুরী আফরিনকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে শুরু করলেন আবারও।

–মা প্লিজ কেঁদো না, আপু নিজেকে সামলাও।
মিতাও আফরিন আর মায়া চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে।
–ওখানে…ওখানে ৩ মাস রাখা হয়েছিলো আমাকে, এরপর…এরপর আমাদের কয়েকজনকে রাশিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানের একটা পতিতালয়ে আরও ৪ মাস ছিলাম আমরা।
হেচকি দিতে দিতে বলে আফরিন।
–এরপর আমাকে আর দু জন মেয়েকে পাঠানো হয় রাশিয়ান এক মা*ফিয়া ফ্যামিলিতে। সেখানে একজন ভালো মানুষ আমার সব জানতে পারে। সেই ব্যবস্থা করে তার মানুষ দিয়ে আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।
মায়া চৌধুরীর বুকে নিজের মুখ গুজে কাঁদতে কাঁদতে বলে আফরিন।
–ওরা, ওরা আমাকে নির্যাতন করেছে মা। কি অসহ্য সেই যন্ত্রণা। আমি শুধু, আমি শুধু প্রে করতাম তোমাদের আর…আর আফনানের। আমাকে খুজে বের করার। কিন্তু…কিন্তু..
কথা বলতে বলতে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আফরিন।

–আফরিন? আফরিন?
বলে মায়া চৌধুরী।
–আপু? আপু কথা বলো?
বলে মিতা।
–মায়া, ও আবারও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। ওকে একটু রেস্ট নিতে দেও।
নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে হাবিব চৌধুরী।
–আমি গিয়ে নিচে থাকা লোকটার সাথে কথা বলছি, উনি না থাকলে আফরিনকে পেতাম না আমরা।
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আনিকা চৌধুরী।
জ্ঞানহীন আফরিনকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়েছে মিতা আর মায়া চৌধুরী। দু জনের চোখের পানি যেন এক মিনিটের জন্যও থামছে না। অরিয়ন এক দৃষ্টিতে বিছানায় শুয়ে থাকা আফরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় অরিয়ন।

–মিতা? অরিয়নের পিছন পিছন যা। ও আবার কি করে বসে।
মিতার কাধে হাত রেখে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কিন্তু আপু…
–আফরিনকে দেখার জন্য আমরা আছি। তুই যা।
আবারও বলে হাবিব চৌধুরী।
অরিয়ন নিজের রুম থেকে বের হয়েই আবরারের রুমে গিয়ে প্রবেশ করে। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়ন বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। নিজের দু হাত কোমরে রাখা। দাঁতে দাঁত চেপে আছে। চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।
–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
চিৎকার করে উঠে অরিয়ন।
রুমে থাকা জিনিস একের পর মাটিতে ছুড়ে ফেলতে শুরু করে। কিছুতেই যেন নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না অরিয়ন।

–আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
নিজের মাথার চুল রাগে টেনে ধরে চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।
কি করবে কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না অরিয়নের। চোখের সামনে শুধু সব কিছু ভাসছে। বিয়ের দিনের কথা, আজ আফরিনের কথা।
–অরিয়ন?
রুমে প্রবেশ করতে নিয়েই ডাক দেয় মিতা।
নিজের জায়গায় পাথর হয়ে রইল মিতা। পুরো রুম এলোমেলো করে ফেলেছে অরিয়ন। বিছানার চাদর, ফুলের টব, ড্রেসিং টেবিলের আয়না সব চুরমার হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে অরিয়ন নিজের চুল টানছে পাগলের মতো। অরিয়নের অবস্থা দেখে মিতার মনটাও যেন চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
–অরিয়ন?
আবারও ডাক দেয় মিতা। মিতার চোখে পানি ছলছল করছে।
মিতার ডাক শুনতেই ফিরে তাকায় অরিয়ন। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। চোখেমুখে দুঃখের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কান্না করার কারণে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে মিতার। খোপায় থাকা ফুলগুলো আর খোপায় নেই। এলোমেলো চুল মিতার মুখে এসে পড়েছে।

“ইউ নিড পিস”
“ইউ নিড পিস”
“ইউ নিড পিস”
“শি ইজ হেয়ার”
“ইউ নিড হার”
“ইউ নিড হার”
“আই নিড পিস”

পারমিতা পর্ব ২৬

অরিয়নের মাথায় বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে কথাগুলো। দু কদমে হেটে গিয়ে মিতার সামনে দাঁড়ায় । হঠাৎ করে অরিয়ন সামনে চলে আসাতে ভয়ে এক পা পিছিয়ে নিতে নেয় মিতা। মিতা পিছপা হতেই মিতার বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে অরিয়ন। পরক্ষণেই মিতার ঠোঁট স্পর্শ করে অরিয়নের ঠোঁটকে।

পারমিতা পর্ব ২৮