পারমিতা পর্ব ২৯

পারমিতা পর্ব ২৯
Nabila Ahmed

–আমি বিয়ে করে নিয়েছি।
কথাটা বলে একটু থামে অরিয়ন।
–পরীকে।
মাথা তুলে আফরিনের দিকে তাকায় অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে মুখটা ক্ষণিকের জন্য শুকিয়ে গেলো আফরিনের,পরক্ষণেই হাসতে শুরু করে। অরিয়ন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করে এই হাসিটা যে আনন্দের হাসি না তা ভালোই জানে অরিয়ন।

–তুমি আমার সাথে দুষ্টামি করছো তাই না?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে আফরিন।
হাসিটা মুখ থেকে সরে সিরিয়াসনেস প্রকাশ পাচ্ছে আফরিনের চেহারায়।
–তোমার মনে হয় আমি এমন একটা বিষয় নিয়ে দুষ্টামি করবো?
জবাব দেয় অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে দু পা পিছিয়ে পড়ে আফরিন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলতো করে এক হাসি দেয়। হাসি দিলেও আফরিনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে গড়িয়ে। আফরিনের এই চোখের পানি দেখলে এক সময় পাগল হয়ে যেত অরিয়ন, আর এখন? এখন বুকের মধ্যকার সেই যন্ত্রণা চাপা দিয়েই দাঁড়িয়ে রইল অরিয়ন।
–তুমি জানো, কেন তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরিয়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আফরিন। মুখে চিলতে এক হাসি আফরিনের।
অরিয়ন কিছু বললো না। চুপ করে তাকিয়ে রইল আফরিনের দিকে। অপেক্ষা করছে আফরিনের জবাবের।
–কারণ তুমি সবার থেকে একদম আলাদা আফনান, আমার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর আমি তোমাকে এক মিনিটের জন্যও কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে দেখিনি। কারণ তুমি আমার কাছে লয়ালের আরেক নাম।
আফরিনের মুখ থেকে হাসিটা যেন একটুও সরছে না।
কথাগুলো শুনে যেন অরিয়নের অস্থির লাগছে।
“আলাদা? কিসের আলাদা? আফরিন কি শুনেনি আমি পরীকে বিয়ে করেছি?” মনে মনে ভাবে অরিয়ন। দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইল অরিয়ন।

–ধন্যবাদ তোমাকে।
আবারও বলে আফরিন।
কি জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছে তা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে আফরিনের দিকে তাকায় অরিয়ন। অরিয়নের চাহনি দেখে আফরিনও বুঝে গেছে তার মানে।
–কারণ তুমি আমাকে নিজে থেকে সব বলে দিয়েছো, কারণ তুমি মুখ সরিয়ে নিয়েছো, কারণ তুমি আমার বোনের প্রতি নিষ্ঠাবান,কারণ তুমি বিয়ের এই সম্পর্ককে সম্মান দিয়েছো।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে আফরিন।
–আমি..সরি…কি..

–সরি বলো না আফনান। তুমি বরং আমাকে আমার নিজের চোখে খারাপ হওয়া থেকে বাঁচিয়েছো। তোমাকে কিস করার পর যদি আমি জানতে পারতাম তুমি মিতার স্বামী, তাহলে এখন যতোটুকু বেঁচে আছি তাও মরে যেতাম।
অরিয়নের হাত ধরেই কথাগুলো বলে আফরিন।
–মিতাকে…মিতাকে ভালোবাসো তুমি?
হঠাৎ করে প্রশ্ন করে আফরিন।
আফরিনের প্রশ্ন শুনে যেন তব্দা খেয়ে গেলো অরিয়ন। অরিয়নের পক্ষ্যে অন্য কাউকে ভালোবাসা কি সম্ভব? পরীকে ভালোবাসলে কি আফরিনের জন্য খারাপ লাগতো অরিয়নের? কিন্তু পরীর জন্য যা অনুভব করে তা? পরীর মধ্যে আফরিনকে খোজা কি এখন বন্ধ হবে, এখন যখন আফরিন ফিরে এসেছে? অরিয়নের মাথায় সব কিছু যেন একসাথে ঘুরপাক খাচ্ছে। ২৯ বছরের জীবনে এতো কনফিউজড অরিয়ন কখনো ছিলো না, তাহলে এখন? এখন কেনো এতো কনফিউশান?
আফরিন অরিয়নের দিকে তাকিয়ে অরিয়নের জবাবের অপেক্ষা করছে। অরিয়ন নিজের মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। আফরিন অরিয়নের হাত ছেড়ে একটু সরে আসে।

–মিতার প্রতি অন্যায় করো না আফনান।
গম্ভীর কন্ঠে বলে আফরিন।
–আমি কি করবো? কি করবো আমি? তুমি কেনো আমাকে ধোঁকা দিয়েই চলে গেলে না আফরিন?
চেচিয়ে উঠে অরিয়ন।
ধৈর্যের সীমা যেন শেষ হয়ে গেলো অরিয়নের। এতোদিনের লুকানো সব অনুভূতি একসাথে আসতে শুরু করেছে অরিয়নের সামনে। রাগ, অভিমান সব যেন এক সাথেই গ্রাস করে নিচ্ছে অরিয়নকে।
–আমি এটা ভেবে মুভ অন করতে চেয়েছিলাম যে হয়তো তুমিও ভালো আছো অন্যকারো সাথে। কিন্তু এখন?
দরজায় এক লাথি মেরে বলে অরিয়ন।
–এখন তোমার দিকে তাকালে নিজেকে স্বার্থপর মনে হয় আমার। মনে হয় তুমি সেখানে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছিলে আর আমি..আমি এখানে ভালো ছিলাম। এতো সহজে মুভ অন করে ফেলেছি, তাহলে কি ভালোবাসলাম তোমাকে আমি?
কথাগুলো অরিয়ন যেন আফরিনকে না, নিজেকে বলছে।

–আমি কারো থেকে আলাদা না আফরিন, আলাদা না। আমিও ওদের মতো যারা একজন চলে গেলে অন্যজন নিয়ে ভালো থাকে।
আবারও দরজায় শক্তি দিয়ে লাথি মেরে বলে অরিয়ন।
–তুমি হয়তো কোনোদিন ফিরে আসবে তা ভেবে তোমার ফিরে আসার রাস্তাটাও খোলা রাখিনি আমি, হোয়াট হেভ আই ডান। এসব কিছুর মাঝে পরীকেও জড়িয়ে ফেলেছি আমি। এখন না পারছি তোমার দিকে তাকাতে, না পারছি পরীর দিকে তাকাতে।
রাগান্বিত অরিয়ন ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে বলতে থাকে।
–আমার কথা ছাড়ো আফনান, ভাবো আমি আর ফিরে আসিনি।
রোবটের মতো বলে আফরিন।
–কিভাবে ভাববো আফরিন? কীভাবে? আমার সব জুড়ে শুধুই তুমি ছিলে।
হতাশ হয়ে বলে অরিয়ন।
–অতীত ছিলাম। বর্তমান নিয়ে ভাবো।

অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে আফরিন।
–শুধু জেনে রাখো,পরিস্থিতি অন্যরকম হলে আমি পরীকে কখনোই বিয়ে করতাম না। কাউকেই করতাম না।
কথাটা বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায় অরিয়ন।
দরজা লাগানোর বিকট শব্দ লাফিয়ে উঠে আফরিন। অরিয়ন চলে গেছে বুঝতে পেরেই অশ্রুসিক্ত নয়নে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। শীতের কুয়াশায় সবটা আবছা আবছা দেখাচ্ছে। ডীম লাইটের আলোতে সব কিছু কেমন যেন মাধুর্যতা হারিয়ে ফেলেছে। আকাশের দিকে তাকায় আফরিন। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে অনবরত।
–আফনান, আমার আফনান।
ডান হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে বেলকনিতে বসে পড়ে আফরিন। কান্নার এই বাধ যেন কোনোমতেই থামাতে পারছে না আফরিন। “ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা এতো বেশি হবে, তা যদি জানতাম তাহলে সেই প্র‍্যাংক করার কথা আমি কখনো কল্পনাও করতাম না ” মনে মনে ভাবে মিতা।

অন্ধকার বিছানায় শুয়ে আছে অরিয়ন। কপালের উপর এক হাত দেওয়া। চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শুয়ে থাকা অরিয়নের চোখের সামনে আফরিনের কান্না করা চেহারা ভাসছে, কানে বাজতে থাকে সেই ভয়ানক কথাগুলো যা কখনো শুনবে বলেও কল্পনা করেনি অরিয়ন। আফরিনের সেই চোখ, যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে পানি আপন মনে পরেই যাচ্ছে, তা ভাবতেই যেন নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো অরিয়নের মন।

চোখ বন্ধ করা অরিয়নের সামনে ভেসে থাকা আফরিনের ছবি যেন আবছা আবছা হতে হতে অন্য কারো ছবিতে পরিনত হতে লাগলো। চোখ মিটমিট করে সব কিছু পরিষ্কার করে দেখার চেষ্টা করতেই লক্ষ্য করে সামনেই তাকিয়ে আছে পরী। পরীর চেহারায় ভেসে উঠেছে অসহায়ত্বতা। অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকা চাহনি। যে চাহনি চিৎকার করে বলছে ” কেনো আমাকে আশা দেখালে?”। পরক্ষণেই বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে অরিয়ন। বড় বড় করে শ্বাস নিতে লাগলো। বুকের মধ্যে কেমন যেন এক ব্যাথা অনুভব করছে অরিয়ন। অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। পরীর চাহনি কেনো হঠাৎ করে এরকম উথালপাথাল করে দিলো অরিয়নের মন তা বুঝায় আগে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে যায় অরিয়ন।
কোনো কিছুর বুঝার আগেই অরিয়নের পা যেন অরিয়নকে গেস্ট রুমের সামনে নিয়ে এসেছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল অরিয়ন। ভিতরে যাবে কি না তার জন্য দ্বিধাবোধ করছে কিন্তু বুকের এই যন্ত্রণা তা?এই অস্থিরতা তার কি হবে?
কিছু না ভেবেই দরজার লক ধরে মোচড় দেয় অরিয়ন। দরজা লক করা ভেতর থেকে। দরজা লক করা দেখে বড় করে শ্বাস ফেলে অরিয়ন।

বিছানায় শুয়ে আছে মিতা। গভীর চিন্তায় মগ্ন। নিজের চোখের সামনে ভাসছে আফরিনের কথাগুলো, গায়ের দাগগুলো, অরিয়নকে জড়িয়ে ধরা, অরিয়নের দিকে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটে উঠা,অরিয়নের আফরিনের দিকে তাকিয়ে থাকা। রুমে আসার পর থেকে এক মিনিটের জন্যও শান্তি পাচ্ছে না মিতা। আর কেউ বিশ্বাস না করলেও মিতার মন জানতো আফরিন পালিয়ে যায় নি, তারপরও কীভাবে অরিয়নকে ভালোবেসে ফেললো মিতা? নাকি ভালোবাসাটা আগে থেকেই ছিলো যা বুঝতে পারেনি মিতা। কেনো সব সময় আফরিনের সব কিছুতেই ভাগ বসাতে হয় মিতার?
মিতার ইচ্ছে করছে ম*রে যেতে আর না হয় নিজের চুল টেনে নিজের ছিড়তে।
নিজের চিন্তায় মগ্ন মিতার ঘোর কাটে দরজার লক মোচড়ানোর আওয়াজ শুনে।

–কে?
প্রশ্ন করে মিতা।
দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়ন মিতার কন্ঠ শুনতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। স্বস্তির এক নিশ্বাস ছাড়ে বড় করে। কারো কন্ঠ শুনেও যে স্বস্তি পাওয়া যায় তা যেন কোনোদিন ভাবেও নি অরিয়ন।
–কে?
আবারও জিজ্ঞেস করে মিতা।
অরিয়ন চুপ করে রইল। কি বলবে বুঝতে পারছে না। এ কোন দ্বিধায় জড়ালো অরিয়ন তা মাথায় ঢুকছে না।
লক মোচড়ানোর স্পষ্ট শব্দ শুনতে পেয়েছে মিতা। বার বার কে জিজ্ঞাসা করার পরও কোনো জবাব না পেয়ে দরজা খুলতে যায় মিতা। দরজা খুলতেই অবাক হয় মিতা। এই গভীর রাতে দরজার সামনে কেউ নেই। রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে একটু দেখার চেষ্টা করে কেউ আছে নাকি। কিন্তু কাউকেই চোখে পরে না মিতার,অতঃপর দরজা লাগিয়ে দেয় মিতা।
মিতার হাটার শব্দ পেতেই তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমের দিকে হাটা শুরু করে অরিয়ন। এতো রাতে কেনই বা মিতার কাছে ছুটে এসেছে তা জানেনা। শুধু জানে যা হচ্ছে তা ঠিক না। মিতার জন্য ঠিক না।

নাস্তার টেবিলে সবাই বসে অপেক্ষা করছে, অরিয়ন ও আফরিনের জন্য। মিতা, মায়া চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরীর সাথে বসেছে। সব সময় অরিয়নের পাশে আফরিন ই বসে এসেছে তাই এবার মিতা নিজেই আর অরিয়নের পাশের চেয়ারে বসেনি।
–আমার মনে হয় অরিয়ন আর মিতার বিয়ের খবরটা আফরিনকে জানানো উচিৎ।
সবার উদ্দেশ্যে বলে হাবিব চৌধুরী।
–আমার ও ত…
–কি বলছো তুমি? আফরিন জানতে পারলে কি হবে জানো?
ওয়াহিদ চৌধুরীর কথা মাঝখান থেকে কেটেই উত্তর দেয় আনিকা চৌধুরী।
–কি হবে মানে?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

–আফরিন যেভাবে উত্তেজিত হলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে,অরিয়নের বিষয়টা জানলে কি হবে একবার ভেবেছো? মেয়েটার উপর দিয়ে কি সব গেছে, শেষমেশ যদি জানতে পারে অরিয়নও ওর নেই তাহলে?
সবার দিকে তাকিয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।
আনিকা চৌধুরীর কথা একদম ফেলে দেওয়ার মতোও মনে হলো না কারো।
–কিন্তু..
–না মা। আন্টি যা বলছে ঠিক বলেছে।
মায়া চৌধুরী কিছু বলার আগেই জবাব দেয় মিতা।
–আমার ও মনে হয় আফরিন আপু এসব শোনার জন্য এখনো প্রস্তুত না। আর আমার কথা ভেবো না, আমি ঠিক আছি।

সকলের উদ্দেশ্যে বলে মিতা।
মিতায় কথায় কেউ কোনো জড়তা বা মন খারাপের মতো কিছু অনুভব করলো না, তাই সবাই একমত হয় আপাতত আফরিনকে কিছু জানানো হবে না। কিছুদিন গেলেই সবটা খুলে বলা হবে।
–ওরা আসছে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

মিতা সিড়ির দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে আফরিন আর অরিয়ন এক সাথে কথা বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নামছে। আফরিন আর অরিয়ন দু জনের মুখেই জেনুইন হাসি। অরিয়নের মুখে এরকম হাসি মিতা শেষবার দেখেছিলো বিয়েরদিন সকালে। এরপর সব কিছু যেন ঝড়ের বেগে এসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো। মিতা নিজের জায়গায় খিচ মেরে বসে রয়েছে। সকলের দিকে তাকিয়ে একটু আলতো হাসি ফুটায় নিজের চোখেমুখে। সকলেই তাকিয়ে আছে আফরিন আর অরিয়নের দিকে। সবার মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে।
আজ যখন আফরিন আর অরিয়নকে একসাথে আবারও অনেকদিন পর দেখছে মিতা, তখন বুঝতে পারছে দুজনকে একসাথে কতই না সুন্দর আর মানানসই লাগছে। নিজেকে অরিয়নের সাথে বড্ড বেমানান লাগছে মিতার।

–গুড মর্নিং এভরিওয়ান।
একটা হাসি দিয়ে বলে আফরিন।
–গুড মর্নিং।
সকলেই জবাব দেয়।
অরিয়ন টেবিলের সামনে এসে কিছুটা অবাক হয়। মিতা আজ অরিয়নের পাশের চেয়ারে বা তার আশেপাশেও বসেনি। অপজিটে বসেছে। কেনই বা বসবে? আফরিন তো চলে এসেছে। মিতা নিজের থেকে সব বুঝতে পারছে তা তো ভালো, তাই না? তাও অরিয়নের মন কেমন যেন করছে। ইচ্ছে করছে মিতাকে টেনেহিঁচড়ে হলেও আগের জায়গায় বসাতে। “কি আজেবাজে ভাবছি আমি?” নিজেই নিজেকে বলে অরিয়ন।
–কিরে মিতা, ওখানে বসেছিস কেনো?
অরিয়ন চেয়ারে বসে গেলেও, আফরিন দাঁড়িয়ে থেকে প্রশ্ন করে মিতাকে।
আফরিনের প্রশ্ন শুনে সবাই কিছুটা অবাক হয়। একে অপরের দিকে চোখাচোখি করে।

–এখানে মানে? আমি তো এখানেই বসি।
আমতা আমতা করে জবাব দেয় মিতা।
–আগে বসতি, কিন্তু এখন কেনো বসবি? এখন ওটা আমার জায়গা। তুই তোর স্বামীর সাথে বস।
কোনোরুপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই খুব অনায়াসে কথাগুলো বলে ফেলে আফরিন।
আফরিনের কথা শুনে সকলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল আফরিনের দিকে। অরিয়ন কোনো কথা না বলে নিজের প্লেটে খাবার তুলছে, মাঝে মধ্যে আড় চোখে মিতার দিকে তাকাচ্ছে। মিতার দৃষ্টি সেদিকে নেই, মিতার পুরো মনোযোগ আফরিনের দিকে।
–তুই, তুই কীভাবে জানলি?
প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।
–সেটা বড় কথা না মা, বড় কথা হলো মিতাকে ওর জায়গায় আসতে বলো।
জবাব দেয় আফরিন।
আনিকা চৌধুরী আফরিনের কথা শুনে রাগে ফোসফোস করতে থাকল।

–আমি একদম শিউর এই মেয়েটাই বলেছে। এই মেয়ে এই, নিজের বোনের সুখ সহ্য হয় না তাই? আসতে না আসতেই অরিয়নকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছিস।
রাগে মিতার দিকে তাকিয়ে চেঁচাতে থাকে আনিকা চৌধুরী।
–মা।
গম্ভীর সুরে ডাক দেয় অরিয়ন।
–মা কি? এই মেয়েটা তোকে আফরিন থেকে কেরে নিতে চায় বুঝিস না কেনো। আমার তো মনে হয় আফরিনকে ঐ প্র‍্যাংক করার বুদ্ধিট…
–বেস মা, অনেক হয়েছে। আফরিনকে সব আমি বলেছি। শুধু শুধু পরীকে দোষারোপ করবে না।
প্লেট ছেড়ে দাঁড়িয়ে রাগ হয়ে বলে অরিয়ন।
মিতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ভিজে আসছে মিতার।
–এই মেয়েটা ম*রে গেলেই ভালো হতো, সেদিনের এটাকে ও ম*রে গেলে খুশি হতাম আমি। ওর জন্য তোর জীবন নিয়েও টানাটানি শুরু হয়ে গেছে।
এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে আনিকা চৌধুরী।

–মা..।
চেচিয়ে বলে অরিয়ন।
–আন্টি প্লিজ চুপ থাকুন।
বলে আফরিন।
–আপা।
মায়া চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী একই সাথে বলে উঠে।
–আনিকা।
অবাক হয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
আনিকা চৌধুরীর কথা শুনে অবাক হয় মিতা। একজন মানুষের মৃ*ত্যু কামনা করতে পারে কতটা ঘৃণা করলে তা ভালোই জানে মিতা। কিন্তু মিতার সব কিছু যেন দুটো শব্দেই আটকে গেলো “ওর জন্য “।
” আমার জন্য অরিয়নের জীবনে ঝুঁকি? ” মনে মনে ভাবে মিতা।
আনিকা চৌধুরী কথাটা বলেই টেবিল ছেড়ে চলে যায়।
–মা, আমি আর এখানে থাকবো না।
বলে আফরিন।

পারমিতা পর্ব ২৮

–ঠিক আছে। নাস্তা শেষ করেই রওয়ানা হবো আমরা।
বলে মায়া চৌধুরী।
–আমি ও যাবো তোমাদের সাথে।
হুট করে বলে উঠে মিতা।
মিতার কথা শুনে অবাক হয়ে মিতার দিকে তাকিয়ে রইল অরিয়ন। কিন্তু মিতা এক মিনিটের জন্যও অরিয়নের দিকে তাকাচ্ছে না। এক দৃষ্টিতে তাও মিতার দিকেই তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। ক্ষনিকের মধ্যে যেন মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে অরিয়নের। হাতের চামচ শক্ত করে ধরেছে, দাঁতে দাঁত চেপে ধরা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মিতার সাথে চোখাচোখি হলেও মিতা যেন অরিয়নকে দেখলোই না।
–আর ইউ ফা*কং সিরিয়াস?
হুট করে অরিয়নের কি হলো জানেনা, কথাটা বলেই প্লেট ধরে মেঝেতে ছুড়ে মারে। পরক্ষণেই গিয়ে দাঁড়ায় মিতার সামনে।

পারমিতা পর্ব ৩০