পারমিতা পর্ব ৪৬

পারমিতা পর্ব ৪৬
Nabila Ahmed

সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে আজ। আশেপাশের সব কিছু যেন এই বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে আরও দু তিনদিন এভাবেই বৃষ্টি পড়বে।
সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বিছানায় শুয়ে আছে অরিয়ন। গতকাল রাত ৩ টায় বাড়িতে ফিরেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই প্রচন্ডরকম মাথা ব্যাথা করছে। ঔষধ খেলেও মাথা ব্যাথা কমার কোনো নাম গন্ধ নেই। তাই আজ বিকালেই অফিস থেকে বাসায় চলে এসেছে অরিয়ন।

সন্ধ্যার পর ঘুম ভাঙ্গতেই বুঝতে পারে মাথা ব্যাথা এখনো কমেনি। পাশেই রাখা রং চা। কে বা কখন দিয়ে গেছে কিছুই জানেনা তবে চা দেখে মনে হচ্ছে অনেক আগেই দিয়ে গেছে। পানির মতো ঠান্ডা হয়ে আছে পুরো।
বিছানার উপর বসে থাকা অরিয়ন জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে এখনো বৃষ্টি পড়ছে। কিছু একটা ভেবে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন। হাটতে হাটতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির গতি এখনো আগের মতোই, আকাশে চাঁদের আলো কম। মেঘে প্রায় পুরোটাই ঢেকে যাচ্ছে। বাইরে জ্বলছে লাইটের আলো। সব কিছু এই বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেলেও অরিয়নের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। রাগ হচ্ছে এটা ভেবে যে, এই বৃষ্টি সব কিছু সুন্দর করে দিতে পারলেও অরিয়নের জীবনটা সুন্দর করে দিতে পারেনি। অরিয়নের পরী এখনো অরিয়নের কাছে ফিরে আসেনি।
কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজের শক্তি আর সামর্থ্য দিয়ে সবটাই চেষ্টা করে দেখেছে অরিয়ন তাও মিতার কোনো সন্ধান পায়নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–কোন অপরাধের জন্য এতো বড় শাস্তি দিচ্ছিস আমাকে?
আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে অরিয়ন।
–আমার প্রতি কী একটু করুণাও হয় না তোর? এতো নিষ্ঠুর কবে থেকে হয়ে গেলি তুই?
আবারও বলে অরিয়ন।
–প্লিজ ক্যাম বেক, প্লিজ।
কথাটা বলতেই যেন সব বাধা ভেঙ্গে পড়লো। অরিয়নের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে। এবার অরিয়ন নিজেকে সামলানোর বা মন শক্ত করার কোনো চেষ্টাও করলো না। স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেও কেঁদে যাচ্ছে।
–প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ আল্লাহ। আমার উপর একটু করুণা করুন। পরীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন,প্লিজ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় চোখ বন্ধ করে অনুরোধের সুরে বলতে থাকে অরিয়ন।

নিজের রুমে ঢুকেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয় আবরার। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে।
–ফা*ক ইউ ভাইয়া, ফা*ক ইউ।
হঠাৎ করেই চেঁচিয়ে উঠে আবরার।
একটু আগেই বিজনেস নিয়ে অরিয়নের সাথে কথা বলার জন্য অরিয়নের রুমে গিয়েছিলো আবরার। দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। অনুরোধের সুরে পরীকে ফিরে আসার অনুরোধ করছে। নিজের ভাইকে এতোটা ভেঙ্গে পড়তে দেখে আর সহ্য করতে পারেনি আবরার। চলে আসে নিজের রুমে।
ছোটবেলা থেকেই অরিয়নকে দেখে এসেছে একজন আদর্শ ছেলে হিসেবে, একজন আদর্শ ভাই হিসেবে। এরপর একজন বয়ফ্রেন্ড হিসেবে। মনে মনে ইচ্ছা ছিলো নিজেও অরিয়নের মতো হবে। কিন্তু এখন? এখন সেই অরিয়নকে এভাবে দেখে তা কীভাবে সহ্য করবে আবরার? আর মিতার কথাই বা কীভাবে ভুলে যাবে? অরিয়ন আর মিতা দুজনেই যে আবরারের খুব প্রিয়।
–ফরগিভ মি, ফরগিভ মি।
নিজে নিজে বলতে বলতেই টেবিলের উপর থেকে নিজের ওয়ালেট তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আবরার।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে নিয়েছে অরিয়ন। গতকাল রাতেও ঘুমাতে পারেনি অরিয়ন, চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় কানে ফিসফিস করে মিতা কথা বলছে। এই রুমে শুধু মিতার স্মৃতিগুলো তাড়া করে বেড়ায় অরিয়নকে। তাই যতোটা সম্ভব অফিসেই থাকার চেষ্টা করে। দু/চারদিনের মধ্যে আর বাসায় আসবে না ঠিক করেছে অরিয়ন। টাই বাঁধতে বাঁধতে রুম থেকে বেরিয়ে আসে অরিয়ন।
সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনি লক্ষ্য করে আবরারের রুমের দরজা একটু করে খোলা। ৬/৭ দিন আগে শেষবার দেখা হয়েছিলো আবরারের সাথে। মিতাকে খুঁজে বের করতে এতোটাই মরিয়া হয়ে পড়েছিলো যে, পরিবারের কারো সাথেই তেমন ভাবে আর যোগাযোগ হয়নি অরিয়নের। আবরার যে নিজের জীবনের চাইতেও অরিয়নকে ভালোবাসে তা খুব ভালোই জানে অরিয়ন। দু /চারদিন আর বাড়িতে ফিরবে না বলেই ঠিক করলো আবরারের সাথে একবার দেখা করেই অফিসে যাবে।

হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে ৬:১০ বাজে। এতো সকালে আবরারকে হয়তো ঘুমন্ত অবস্থায় পাবে তাও আজ খুব ইচ্ছে করছে এক নজরের জন্য হলেও নিজের ভাইকে দেখতে। এতো কিছু না ভেবে আবরারের রুমের দিকে হাটা শুরু করে অরিয়ন। আবরার হয়তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ভেবে দরজায় কড়া নাড়ে অরিয়ন। দরজায় কড়া নেড়ে একটু অপেক্ষা করলেও জবাব আসলো না । কিছু না ভেবেই দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় বিছানা খালি। বেডের দিকে এগিয়ে যেতেই লক্ষ্য করে ওয়াশরুম থেকে শব্দ শোনা যাচ্ছে। অপেক্ষা করবে নাকি চলে যাবে বুঝতে পারছে না অরিয়ন। বিছানার উপর একটু ইতস্তত বোধ করতে করতেই বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।

আবরারের মোবাইল বিছানায় পড়া। হুট করেই কল বাজাতে একটু চমকে যায় অরিয়ন। মোবাইলের দিকে চোখ যেতেই লক্ষ্য করে কল এসেছে। স্ক্রিনে নাম নেই শুধু তিনটে লাভ দেওয়া। অরিয়নের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, আবরারও এবার সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে গেছে। আলতো করে একটু হাসি ফুঁটলো অরিয়নের ঠোঁটে।
মোবাইলে একের পর এক কল বেজেই যাচ্ছে নন স্টপ। আর্জেন্ট ভেবে মোবাইল হাতে তুলে নেয় অরিয়ন,বিছানা থেকে উঠে দু কদম এগোতেই কল বাজা বন্ধ হয়। ভেবেছিলো ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে আবরারকে মোবাইলটা দিয়ে আসবে কিন্তু অরিয়ন দাঁড়াতেই বন্ধ হয়ে গেল। আবারও বিছানার দিকে এগোতেই কলে মেসেজের নোটিফিকেশন শব্দ শুনতে পায় অরিয়ন। ছোট ভাইয়ের প্রেমিকার মেসেজ না দেখার জন্য কোনোমতে অন্যদিকে চোখ দিয়ে রাখে। আবারও বিছানার উপর মোবাইল রেখে অপেক্ষা করতে থাকে অরিয়ন।
আবারও কল বাজা শুরু হয়। এবার একটু বিরক্ত হয় অরিয়ন। ‘ কী এক অবস্থা, একটু সময় ও দিচ্ছে না মেয়েটা। একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে, পাগল নাকি!’ মনে মনে ভাবে অরিয়ন। রাগে মোবাইল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন।

-তো..
মুখ থেকে বাকি কথা বের হওয়ার আগেই আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রাখে অরিয়ন। ইচ্ছে করছে এক আছাড়ে মোবাইল ভেঙ্গে ফেলতে।
মোবাইলে আবারও শব্দ হতেই সাথে সাথেই চোখ যায় মোবাইলের দিকে। এবার লজ্জা সরম ভুলে মেসেজে কী বললো তা দেখে অরিয়ন। স্ক্রিনে চোখ যেতেই যেন আশেপাশের সব কিছু থেমে গেল। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল মোবাইলের দিকে।
“মিতা বলেছে তোমাকে একটা কথা বলতে,আর্জেন্ট”
চোখে দেখা মেসেজটি যেন বিশ্বাস করতে পারছে না অরিয়ন। কিছু না ভেবেই কল করার উদ্দেশ্যে লক খোলার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় অরিয়ন। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে কি সব বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে নিজেও জানেনা। অরিয়নের ঘোর কাটলো যখন ঐ নাম্বার থেকে আবারও কল আসা শুরু করে তখন। কল আসার সাথে সাথেই রিসিভ করে অরিয়ন।

–কোথায় থাকো তুমি? হ্যাঁ? মিতা হাজারটা কল করেছে আমাকে আর আমি তোমাকে। মিতার ব্যাপারে কথা আছে বললাম না?
অপর পাশ থেকে অল্প বয়সী এক মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে আসে।
মেয়েটা যা বলছে তা যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে অরিয়নের কাছে। কোথায় খোঁজ করেনি অরিয়ন? আর সেই মিতা নাকি অরিয়নের এতো চোখের সামনে লুকিয়ে ছিলো।
–কী হয়েছে, কথা বলছো না কেন?
আবারও বলে মেয়েটি।
–মেহু হিরো নাম্বার ওয়া….ফা*ক।
গান গাইতে গাইতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসতেই অরিয়নকে সামনে দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠে আবরার।
–তুই এখানে কী করছিস? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
বুকের উপর হাত রাখতে রাখতে বলে আবরার।
অরিয়ন আবরারের কথার কোনো জবাব দিলো না। বড় বড় চোখ করে আবরারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অন্যদিকে, আবরার অরিয়নের এভাবে তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কানের কাছে মোবাইল ধরা অবস্থায় এভাবে কেন ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে তা বুঝতে পারছে না আবরার।

–কী হয়েছে? এভাবে ভূতের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? খেয়ে ফেলবি নাকি?
হাসতে হাসতে বলে আবরার।
অরিয়নকে ইগনোর করে বিছানার দিকে দু কদম এগোতেই চোখ যায় বিছানার উপর। বিছানার উপর রাখা আবরারের মোবাইল আর বিছানায় নেই। মুখ থেকে হাসি সরে যায় আবরারের। বিছানা ও এর আশেপাশের টেবিলে চোখ বুলিয়ে মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করে।
–WHERE IS SHE?
পেছন থেকে অরিয়নের গম্ভীর কন্ঠ শুনতে পায় আবরার।
ক্ষণিকেই ঘুরে তাকায় অরিয়নের দিকে। এক দৌড়ে গিয়ে অরিয়নের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় আবরার। স্ক্রীনে চোখ যেতেই থতমত খেয়ে যায় আবরার।

–WHERE IS SHE?
দাঁতে দাঁত চেপে ধরে আবারও প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–Who?
না বুঝার ভান করে উলটো প্রশ্ন করে আবরার।
–I aked where is she?
আবরারের দিকে এক কদম এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন। প্রতিনিয়ত অরিয়নের ধৈর্যের সীমা যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে।
–And i said who?
–YOU FU*KING BUST*ARD.
ক্ষণিকেই অরিয়নের দু হাত গিয়ে আবরারের শার্টের কলার চেপে ধরে। আবরার যেন কিছু বুঝে উঠার সময়ও পেলো না।

–তুই জানিস না কার কথা বলছি? জানিস না? আমার পরী কোথায়?
নিজের শক্তি দিয়ে আবরারের শার্টের কলার টেনে ধরে চেঁচিয়ে বলে অরিয়ন।
–কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস ওকে? বল।
রাগান্বিত অরিয়ন আবারও প্রশ্ন করে।
–আমি কিছু জানিনা।
জবাব দেয় আবরার।
অরিয়ন আর কিছু বললো না। মুহূর্তেই আবরারের মুখে ঘুষি মারে অরিয়ন। সাথে সাথে ঠোঁট কেটে র*ক্ত বের হওয়া শুরু হয় আবরারের।
–পরী কোথায়? কোথায় ও?
চেঁচিয়ে বলতে থাকে অরিয়ন।
আবরার কোনো উত্তর দিলো না। চুপ করেই থাকলো।
–আরিয়ান, আমি কিন্তু ভুলে যাব তুই আমার ভাই। পরী কোথায় বল!
কলার ধরা অবস্থায় কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে অরিয়ন। অরিয়নের পুরো শরীর অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে।
–আমি জানিনা।
মাথা নিচু করে জবাব দেয় আবরার।
আবরারের কথা শুনে যেন ধৈর্য্য হারিয়ে ফেললো অরিয়ন। পরক্ষণেই একের পর এক ঘুষি মারতে থাকে আবরারের কলার ধরে।

–তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন কিছুই না। এটা সেই মিতা না, ভাইয়া।
বলে আবরার।
–Don’t you fu*king dare… Dare to lie, Abrar.
কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় নিচতলার ড্রয়িং রুমে।
–আমি মিথ্যা বলছি না।
জবাব দেয় আবরার।
অরিয়ন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। আবরারের শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে একটু পিছিয়ে আসে। কতক্ষণ মাথা নিচু করে রাখলো জানেনা তবে যখন মাথা উঁচু করে আবরারের দিকে তাকালো, তখন যেন আবরারের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু হয়েছে। আবরারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অরিয়নের চোখ প্রায় ভেজা। মনে হচ্ছে রাগে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না। অরিয়নকে দেখে মনে হচ্ছে যেন সবকিছু হারিয়ে নিস্ব হয়ে গেছে।
–প্লিজ, আমি তোর কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি। পরী কোথায় আমাকে বল,প্লিজ।
আবরারের কাছে এসে আবরারের হাত ধরে বলে অরিয়ন।
আবরার শুধু অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না।
–প্লিজ আরিয়ান। পরী কোথায় আছে আমাকে বল, প্লিজ। তোর পায়ে ধরতে হবে? ধরতে রাজি আছি। তাও বল পরী কোথায়।
বলে অরিয়ন।

–এভাবে বলিস না প্লিজ, ভাই।
বলে আবরার।
–তাহলে বল পরী কোথায়?
উৎসুক দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে থাকে অরিয়ন। মনের মধ্যে যেই আশা জেগেছে তা কোনো মতেই আর দমাতে পারছে না অরিয়ন।আবরারকে দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে বলে দিবে সব কিছু। যতই হোক আবরার যে অরিয়নের কষ্ট সহ্য করতে পারে না, তা অরিয়ন ভালো করেই জানে।
মৃদু হাসি দিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে অরিয়ন।
–আমি জানিনা।
আবরারের জবাবে অরিয়নের মুখে থাকা মৃদু হাসিটা ক্ষণিকেই মলিন হয়ে গেল। অবাক দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে রইল অরিয়ন। কি করবে বুঝতে পারছে না। মাথায় যেন র*ক্ত উঠে যাচ্ছে অরিয়নের। ক্ষণিকেই ঝাপিয়ে পড়ে আবরারের উপর। এক ঘুষিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবরার,শুয়ে থাকা আবরারের উপর একের পর এক আঘাত করতে থাকে অরিয়ন।

–বল পরী কোথায়? বল। আমার পরী কোথায় বল তা না হলে আমি পাগল হয়ে যাব।
আবরারকে আঘাত করতে করতে বলতে থাকে অরিয়ন।
আবরার নিজেকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টাই করে যাচ্ছে কিন্তু অরিয়নের উপর যেন অজানা শক্তি ভর করেছে। কোনো মতেই অরিয়ন থেকে ছুটে আসতে পারছে না আবরার।
–পরী কোথায় বল? পরী কোথায়? ফা*কার বল, আমার পরী কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস পরীকে বল।
পাগলের মতো চেঁচিয়ে যাচ্ছে আর আবরারকে আঘাত করে যাচ্ছে অরিয়ন।
আবরারের নাক মুখ দিয়ে র*ক্ত প্রবল ভাবে পড়তে শুরু করেছে কিন্তু সেদিকে যেন অরিয়নের চোখ গেলো না। অরিয়নের মাথায় শুধু এক কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ” ও জানে আমার পরী কোথায়”।
–তুই কী ভেবেছিস, আমার পরীকে আমার থেকে দূরে নিয়ে যাবি? পারবি না কখনো,পারবি না।
আবরারকে আঘাত করতে করতে বলে অরিয়ন।

— এতো চেঁচামেচি কি….
–কী হলো সকাল স…
হাবিব চৌধুরী আর আনিকা চৌধুরী রুমের মধ্যে আবছা আবছা চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে আসে। সকাল সকাল কাজের লোকদের মধ্যে কী নিয়ে ঝামেলা লাগলো তা নিয়ে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়েই আবরার আর অরিয়নকে এই অবস্থায় দেখে যেন দুজনেই পাথর হয়ে রইল।
–অরিয়ন কি করছিস তুই বাবা।
আনিকা চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে অরিয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
–অরিয়ন, কী হচ্ছে এসব। ছাড়ো আরিয়ানকে।
অরিয়নের কাঁধে হাত রেখে বলে হাবিব চৌধুরী।
–বল আমার পরী কোথায়, কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস বল।
এক হাত দিয়ে আবরারের কলার ধরে অন্য হাত দিয়ে আবরারকে ঘুষি মারতে মারতে বলে অরিয়ন।

–মিতা?
অবাক হয়ে বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।
–ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো।
হাবিব চৌধুরী অরিয়নকে টেনে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই চেঁচাতে থাকে অরিয়ন।
–ছাড় ওকে, কী হয়েছে আমাকে বল।
অরিয়নকে সরিয়ে নিয়ে এসে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কী হয়েছে তা তোমার গুনধর ছেলেকে জিজ্ঞেস করো। ও জানে পরী কোথায়। পরীকে ও লুকিয়ে রেখেছে।
আবরারের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে অরিয়ন। হাবিব কোনো মতেই যেন অরিয়নকে ধরে রাখতে পারছে না। আনিকা চৌধুরী গিয়ে আবরারের পাশে বসেছে।
–আরিয়ান, কী বলছে অরিয়ন এসব।
জিজ্ঞেস করে হাবিব চৌধুরী।
আবরার কিছু বললো না।

–ওর গার্লফ্রেন্ড জানে মিতার কথা। দু জনে মিলে কী চালাকি করছে জিজ্ঞেস করো ওকে।
বলে অরিয়ন।
–গার্লফ্রেন্ড? কে গার্লফ্রেন্ড?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
–আমি জানিনা। ওকে বলো পরী কোথায় বলতে।
বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন যা বলছে তা কী সত্যি? তুই কী জানিস মিতা কোথায় আছে?
আবরারের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
আবরার কিছু বললো না। মাথা নিচু করেই রইল। জীবনে কোনোদিন নিজের মা বাবার কাছে মিথ্যা কথা বলেনি আবরার। আজও কীভাবে বলবে বুঝতে পারছে না।
আবরারের চুপ থাকা দেখে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায় হাবিব চৌধুরীর কাছে।
–ওর থেকে কিছু জানতে হবে না। ওর মোবাইল কোথায়?

আশেপাশে মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করতে করতে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় আবরারের।
–মোবাইল কী জন্য লাগবে? মিতা কোথায় আমি জানিনা বললাম তো।
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আবরার।
–তোমার কিছু আর জানতে হবে না। যা জানার এখন তোমার গার্লফ্রেন্ড থেকেই যেনে নি…
–খবরদার বাবা, খবরদার এসব কিছুতে যদি ওকে জড়িয়েছো।
অপরিচিত এক কণ্ঠে বলে উঠে আবরার।
–পরীকে তো আমি খুজে বের করবোই কিন্তু তোর প্রেমিকাকে যেন কোনোদিন খুজে না পাস সেই ব্যবস্থাও করে দিবো আমি।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।

–আমি বেঁচে থাকতে পারলে করে দেখাস। ভাই বলে এতোক্ষণ কিছু বলিনি কিন্তু ওকে টানলে ভুলে যাব তুই বড় ভাই হস।
অরিয়নের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে আবরার কিন্তু আনিকা চৌধুরী দু হাত দিয়ে ধরে রেখেছে আবরারকে।
–তাহলে এটা ভালোই জানো আমি কী করতে পারি? পারলে আমাকে ঠেকাস।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–বাবা…
পরাজয়ের সুরে বলে উঠে আবরার।
–হয় মিতা আর না হয় তোমার গার্লফ্রেন্ড। ভেবে নেও কে বেশি ইম্পোর্টান্ট।
বলে হাবিব চৌধুরী।
আবরার চুপ করে রইল। মুখ ফুঁটে কিছু বলার চেষ্টা করলো না।
–হ্যালো? আবরারের কল লিস্ট চেক করে আজ সকালে যেই মেয়ের নাম্বার থেকে কল এসেছে তার সব ডিটেইলস আমাকে সে…
–বাবা।

পারমিতা পর্ব ৪৫

হাবিব চৌধুরী ফোনে কাউকে পুরো কথা শেষ করার আগেই অনুরোধের সুরে বলে উঠে আবরার।
–যেই হোক ২০ মিনিটের মধ্যে টেনেহিঁচড়ে হলেও ঐ মেয়েকে আমার বাড়িতে চাই আমি।
আবরারের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে ফোনে বলে হাবিব চৌধুরী।
আবরার কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল হাবিব চৌধুরীর দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরেছে।
–পরী ঢাকায় আছে।
বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে মাটিতে বসে পড়ে অরিয়ন। এই ৬ টা মাস কীভাবে পার করেছে তা একমাত্র অরিয়ন নিজেই জানে। সেই মিতার খবর জানতে পেরে নিজেকে যেন আর সামলাতে পারলো না অরিয়ন। মৃদু হাসি ফুঁটে অরিয়নের ঠোঁটে।
–I am coming. Coming.
বিরবির করে বলে অরিয়ন।

পারমিতা পর্ব ৪৭