পারমিতা পর্ব ৫৬
Nabila Ahmed
শায়লার ডাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসে মিতা। চোখের পানি মুছতে মুছতে ড্রয়িং রুমের দিকে এগোতে থাকে।
মায়া চৌধুরী, আফরিন আর ওয়াহিদ চৌধুরী অপেক্ষা করছে মিতার জন্য। হাবিব চৌধুরী আর আনিকা চৌধুরী মাঝে মধ্যে তাদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।
–কিরে,এতোক্ষণে সময় হলো?
মিতাকে দেখতে বলে আফরিন।
মিতাকে দেখা মাত্রই চিন্তিত লাগে মায়া চৌধুরীকে।
–ব্যাগ কোথায়? লেট হয়ে যাচ্ছে তো।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমি এখন যাব না,বাবা।
সকলের সামনে এসে বলে মিতা।
–যাবি না মানে? কেন কি হয়েছে?
চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে উঠে ওয়াহিদ চৌধুরী।
কিছুক্ষণ আগেও যাবে বলে বায়না ধরলো। হঠাৎ করে কেন মত চেঞ্জ হলো তা বুঝতে পারছেন না ওয়াহিদ চৌধুরী। মায়া চৌধুরী কিছু বললো না। চুপচাপ নিজের জায়গায় বসে মিতাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
ওয়াহিদ চৌধুরীর প্রশ্নের কী জবাব দিবে তা বুঝতে পারছে না মিতা। অরিয়ন আর নিজের মধ্যে সবটা ঠিক হয়ে গেছে তাই যেতে চাচ্ছে না , এই কথাটা সবার সামনে কীভাবে বলবে তা বুঝতে পারছে না মিতা। কথাটা ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে মিতা।
–আমার শরীরটা ভালো লাগছে না তাই। তোমরা যাও, আমি আরেক দিন যাব।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।
–শরীর ভালো লাগছে না! কী হয়েছে? খারাও লাগছে বেশি?
দ্রুত মেয়ের কাছে এসে কপালে হাত দিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
আফরিন, আনিকা চৌধুরী, হাবিব চৌধুরী সকলেই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মায়া চৌধুরী বড় করে এক নিঃশ্বাস ছাড়লো। সোফা থেকে উঠে ওয়াহিদ চৌধুরীর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
–ওয়াহিদ, টেনশনের কিছু নেই। ও থাক। কিছুদিন পর না হয় যাবে।
স্বাভাবিক ভাবেই বলে মায়া চৌধুরী।
–কিন্তু মায়া ওর…
–কোনো কিন্তু না ওয়াহিদ।
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সবটাই বুঝতে পেরেছেন মায়া চৌধুরী। মিতা আর অরিয়নের ভুল বুঝাবুঝির পরিসমাপ্তি ঘটেছে তাতেই মহা খুশি উনি।
হাবিব চৌধুরী আর আফরিনের মুখে মুচকি হাসি। কিন্তু ওয়াহিদ চৌধুরী কিছুই বুঝলো না। মেয়ের টেনশনের তার মাথায় যেন কোনো কথায় ঢুকতে চাচ্ছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–তোমাদের মা-মেয়ের যা ভালো লাগে তাই করো।
কথাটা বলেই হাটা শুরু করে ওয়াহিদ চৌধুরী। নিমিষেই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
–সব ঠিক?
মিতার মাথায় হাত দিয়ে বলে মায়া চৌধুরী।
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে মিতা। কথা বলতেই লজ্জা লাগছে মিতা।
–শরীর খারাপের কিছুই নেই, ও অনুমতি পায় নি তাই যাচ্ছে না বুঝলে মা?
মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে বলে আফরিন।
–আপু..
লজ্জায় বলে মিতা।
–আচ্ছা আমরা তাহলে বের হচ্ছি। তোর বাবা আবার রেগে গেছে মনে হচ্ছে।
বলে মায়া চৌধুরী।
–যাবে যখন তখন মিতাকেও সাথে করে নিয়ে যাও।
হুট করে বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।
–এই না..
কিছু না ভেবেই বলে উঠে মিতা।
মিতার কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠে। হাবিব চৌধুরী যে মিতার সাথে মজা নিচ্ছিলো তা বুঝতে পারে মিতা। পাশে বসে থাকা আনিকা চৌধুরীর মুখেও হাসি দেখতে পেল মিতা কিন্তু মিতার সাথে চোখাচোখি হতেই হাসি সরিয়ে ফেলে আনিকা চৌধুরী।
–আচ্ছা ভাই, আমরা যাচ্ছি। আপনারা কিন্তু যাবেন। আর আপা, কাল কিন্তু ক্লাবে দেখা হবে।
বলে মায়া চৌধুরী।
–আচ্ছা মায়া।
বলে আনিকা চৌধুরী।
–আমার গু*লি লাগার পরেও আমাকে দেখতে আসোনি তাহলে কেমন গার্লফ্রেন্ড হলে তুমি? তার উপর খোঁজখবর ও নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করোনি।
–কিসের গার্লফ্রেন্ড? আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড কবে থেকে হয়ে গেলাম?
–ফাইজলামি করো? এক থাপ্পড় মে*রে ফাইজলামি করা বের করে দিবো।
–গায়ে হাত দিবেন? আপনি কী ভেবেছেন সেই অধিকার আছে আপনার?
–ফাহমিদা!!
–আমার নাম ধরে ডাকবেন না। আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই আমি। আপনি বেঁচে থাকুন বা ম*রে যান তাতে কিছু যায় আসে না আমার।
–কিছু যায় আসে না?
–না আসে না। আমাকে কল করে ডির্স্টাব করবেন না। আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।
রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলছে আবরার আর ফাহমিদা। মিতার খবর অরিয়ন জানার পর থেকে আবরারের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি ফাহমিদা আর আবরারের মধ্যে। আবরারের এমন অবস্থা জানার পরও ফাহমিদা আবরারের কোনো খোঁজখবর পর্যন্ত নেয় নি।
আর আবরার যখন ফাহমিদাকে কল করলো তাও রিসিভ করেনি ফাহমিদা। এই কয়েকদিনে হাজারটা কল করেছে আবরার। শেষমেশ কিছু সময়ের জন্য দেখা করতে রাজি হয় ফাহমিদা।
–এনগেজমেন্ট?
–অবাক হচ্ছেন কেন? এটাই তো আপনার চাওয়া ছিলো তাই না?
ফাহমিদার কথা শুনে থতমত খেয়ে যায় আবরার।
–আপনি কী ভেবেছেন, মিতার খবর রাখার জন্য আমাকে ব্যবহার করবেন, প্রয়োজনে প্রেমের অভিনয় করবেন তা জানতে পারবো না আমি? এতোটা বোকা মনে করেন আমাকে?
ফাহমিদার কথা শুনে অবাক হয় আবরার।
–কে বলেছে তোমাকে এই কথা?
–সেটা আপনার না জানলেও হবে। তবে শুনে রাখুন, আমাকে এমন মেয়ে ভাববেন না যে, এতোকিছুর পরও আমি আপনার সাথে থাকবো। আমার একটা আত্নসম্মানবোধ আছে।
–ইমরান..ও বলেছে তোমাকে তাই না?
দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে আবরার।
–মিথ্যে বলেছে কি? নাকি এখন নিজের বন্ধুকেও মিথ্যাবাদী বলবেন?
আবরার কিছু বললো না।
–অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। বাসায় ফিরতে হবে আমাকে।
কথাটা বলেই সিট থেকে উঠে দাঁড়ায় ফাহমিদা।
হেটে যাওয়ার আগেই ফাহমিদার হাত ধরে ফেলে আবরার। রাগান্বিত অবস্থায় ফাহমিদার দিকে তাকায়। ফাহমিদার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আবরার। ফাহমিদা জোর খাটিয়েও হাত ছাড়াতে ব্যর্থ।
–আজকেই এই এনগেজমেন্ট ভাঙ্গবে। বাসায় জানিয়ে দিবে তোমার অন্য জায়গায় পছন্দ আছে।
ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।
–হাসি পাচ্ছে খুব। আপনার মতো বেইমানের সাথে জীবন কাঁটানোর চেয়ে আমি কুমারী থাকা পছন্দ করবো।
ফাহমিদার কথা শুনে হাসে আবরার। নিজেও উঠে দাঁড়ায় সিট থেকে।
–কুমারী থাকবে কী না তা তো পরে বুঝা যাবে। তবে কালকের মধ্যে যদি এনগেজমেন্ট না ভাঙ্গে তাহলে সব ছবি নিয়ে বাসায় হাজির হবো আমি।
–ঠাসসসস..
আবরারের কথা শুনামাত্রই থা*প্পড় মা*রে ফাহমিদা।
–আপনি শুধু বেইমান না, একটা থার্ডক্লাস মানুষ ও।
–তোমার জন্য আমি এর থেকে নিচেও নামতে পারি।
ফাহমিদা আর কিছু না বলেই হাত ছাড়িয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়।
–ইমরান।
দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে আবরার।
অরিয়ন বিছানায় বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। পানি পড়ার শব্দে বুঝা যাচ্ছে মিতা ওয়াশরুমে।
একটু পরেই বেরিয়ে আসে মিতা। মাত্রই গোসল করে এসেছে। চুল দিয়ে পানি পড়ছে মিতার। মিতা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই অরিয়নের চোখ যায় মিতার দিকে।
মিতাকে দেখতেই ল্যাপটপ সরিয়ে রাখে অরিয়ন। মিতার দিকে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মিতা লজ্জায় একটু পর পর নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।
তোয়ালে নিয়ে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে যায় মিতা। চুল মুছতে থাকে মিতা। অরিয়ন উঠে গিয়ে মিতার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। অরিয়নকে দেখতেই থমকে দাঁড়ায় মিতা।
অরিয়ন নিজের দু হাত দিয়ে মিতার কোমর জড়িয়ে ধরে। নিজের মুখ গুজে দেয় মিতার গলায়। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে মিতা।
–রেজাল্ট কী এসেছে?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–গোল্ডেন।
চোখ বন্ধ অবস্থায় জবাব দেয় মিতা।
–ডাক্তার হবি?
মিতার গলায় চুমু দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
–হুম।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।
–তাহলে এই রুগীর চিকিৎসা কর আগে।
কথাটা বলেই মিতাকে নিজের দিকে ফিরায় অরিয়ন।
অরিয়নের সাথে চোখাচোখি হয় মিতার।
–এই রুগীর তার নিজস্ব ডাক্তারের খুব প্রয়োজন।
কথাটা বলেই মিতার ঠোঁটে আলতো এক চুমু দেয় অরিয়ন।
মিতা নিজের হাত দিয়ে অরিয়নের গলা জড়িয়ে ধরে। নিজেও তাল মিলায় অরিয়নের সাথে। মিতার সারা পেতেই মিতাকে কোলে তুলে নেয় অরিয়ন।
মিতাকে কোলে নিয়েই বিছানায় গিয়ে বসে অরিয়ন।
–আই লাভ ইউ সো মাচ, লাভ।
মিতার কপালের সাথে নিজের কপাল স্পর্শ করিয়ে বলে অরিয়ন।
পারমিতা পর্ব ৫৫
–আই লাভ ইউ টু, রিয়ন।
চোখ বন্ধ করা অবস্থায় বলে মিতা।
আলতো করে মিতার কপালে চুমু এঁকে দেয় অরিয়ন।
ভালোবাসায় মগ্ন দুটি দেহ মনে প্রাণে এক হয়।