পারলে ঠেকাও শেষ পর্ব 

পারলে ঠেকাও শেষ পর্ব 
লেখিকাঃ দিশা মনি

আরহার মৃত্যু হয়নি। আমিনুল হক যেই মৃতদেহ দেখে হা আরহা করেছিল সেটা অন্যকারো ছিল। তবে বিস্ফোরণের ফলে গুরুতর আহত হয়েছিল আরহা। তার দুটো হাত বাজেভাবে পু’ড়ে গেছে। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছিল আরহা। মধুজা আমিনুল হকের সাথে হাসপাতালেই এসেছে। অক্ষরকে তার কাজে হাসপাতালে চলে যেতে হয়েছে। তাই অক্ষর বর্ণকে ফোন করে আসতে বলেছে। আরহার এরকম খবর শুনে বর্ণ ছুটে চলে এসেছে।
হাসপাতালে এসে বর্ণ জানতে চায় মধুজার কাছে,

‘আরহার অবস্থা এখন কেমন?’
‘আগের থেকে ভালো আছে। তবে ডাক্তার বলেছে ওর দুটো হাত বাজেভাবে পু’ড়ে গেছে। যেটা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। তবে সুস্থ হলেও ওর হাতে দাগ থেকে যাবে চিরকাল। কখনো হাত দিয়ে ভারী কোন কাজও করতে পারবে না।’
আমিনুল হক হতাশ হয়ে বসে পড়েন।আগামী মাসে আরহার বিয়ে হওয়ার কথা। এইরকম সময় এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল, এমন মেয়েকে কি কেউ বাড়ির বউ করে ঘরে তুলবে এমন ভাবনাই চলছিল তার মাথায়। পরক্ষণেই তিনি ভাবলেন, নিজের মেয়ের এমন দুঃসময় এসব ভাবনা করা উচিৎ নয়। আমিনুল হক সেটা বুঝতে পারলেন।
একজন ডাক্তার এসে বলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। উনি নিজের বাবার সাথে দেখা করতে চাইছেন।’
কথাটা শুনে আর অপেক্ষা করলেন না আমিনুল হক। ছুটে গেলেন নিজের মেয়ের কাছে। আরহা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। নিজের বাবাকে দেখে কাতর গলায় বলে,
‘আমার হাতে খুব জ্বালা করছে আব্বু। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’
নিজের মেয়ের এরকম অবস্থা দেখে কোন বাবাই ঠিক থাকতে পারে না। আমিনুল হকও শান্ত থাকতে পারলেন না। কান্না জড়ানো গলায় বললেন,

‘চিন্তা করিস না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
‘আমার কি আর বিয়ে হবে আব্বু? আমার হাতের যা অবস্থা, আমাকে হয়তো কেউই আর বিয়ে করবে না।’
‘কেউ না করলে আমি করব।’
গলার স্বরটা কানে আসতেই আরহা দরজার দিকে তাকায়। বর্ণকে দেখে চোখ সরিয়ে নেয় আরহা। বর্ণর করা অপমানগুলো মনে পড়তেই আরহা বলে,

‘সেটার কোন প্রয়োজন নেই। আমি জুনিয়র ছেলেকে বিয়ে করতে চাইনা।’
বর্ণ একটু এগিয়ে এসে বলল,
‘কিন্তু আমি সিনিয়র মেয়েই বিয়ে করতে চাই।’
আরহা কিছু বলল না এই কথার পরে৷ আমিনুল হকও নিরব ভূমিকা পালন করলেন। একটু পরেই ডাক্তার চলে আসল। যার কারণে কথা আর বাড়লো না।

১ মাস পর,
বিস্ফোরণের সাথে জড়িত লোকেরা ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে এবং তাদের শাস্তিও হয়েছে।
আরহা অনেকটা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছে। বাড়িতে আজকাল শান্ত হয়ে থাকতে পারে না। হাতের ক্ষতগুলো ভীষণ যন্ত্রণা দেয়। আজ আবারও বর্ণ এসেছে। আজকাল প্রায়ই বর্ণ আসে। আমিনুল হকের সাথে তার বেশ ভাবও হয়ে গেছে। দুজনে অনেক সময় আড্ডা দেয়।

আমিনুল হক তো দুই ধাপ এগিয়ে বর্ণকে নিজের মেয়ের জামাই করবেন বলে ভেবে নিয়েছেন। এসব ভাবনায় বিরক্ত আরহা। তার মতে, বর্ণর সাথে আমিনুল হক আগে তার বিয়ে দিতে চায়নি, কারণ বর্ণ জেলখাটা আসামী। কিন্তু এখন আরহার হাতে যেহেতু পু’ড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তাই আমিনুল হক চাইছে বর্ণর সাথে বিয়ে দিতে। কারণ অন্য কেউ আরহাকে বিয়ে করতে রাজিও না। আর বর্ণও হয়তো আরহাকে দয়া করছে। এইরকম ভাবনা থেকেই আরহা চায়না বিয়ে করতে।
আরহা বসার ঘরে আসামাত্রই বর্ণ বলে,

‘আপনি ঠিক আছেন তো এখন?’
আরহা কোন উত্তর দেয় না। আমিনুল হক বলেন,
‘বর্ণ কিছু জিজ্ঞেস করছে তো। তুই চুপ করে আছিস কেন?’
‘আমি ইচ্ছুক নই তাই।’

বর্ণ আঘাত পায় আরহার কথায়। আসলে সে তো আরহাকে আগে থেকেই পছন্দ করতো। কিন্তু আগে সেটা উপলব্ধি করতে পারে নি। এখন যখন উপলব্ধি করতে পেরেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই তো এতদিন চেষ্টা করেছে আরহার মনে নিজের হারানো যায়গা ফেরত পাওয়ার। সেটা তো পায়নি, বরং আরহা তার সাথে অনেক কঠোর ব্যবহার করেছে।
বর্ণ আজ আর না পেরে বলেই দেয়,
‘আমি তো অনেক চেষ্টা করেছি আপনাকে বোঝাতে যে আমি আপনাকে কতটা চাই।’
‘আপনার চাওয়া পাওয়া আমার কাছে ওতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।’
আমিনুল হক বলেন,

‘তুই এভাবে কথা বলছিস কেন আরহা?’
আরহা উত্তর দেয়না। নিজের রুমে চলে যায়। বর্ণ আরহার রুমের দরজার সামনে এসে বলে,
‘আজ আমি চলে যাচ্ছি। আমার ফোন নম্বর তো আপনার কাছে আছেই। আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, আপনাকে আমি সময় দিচ্ছি। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। এরমধ্যে আপনি হ্যা অথবা না ম্যাসেজ পাঠাবেন আমার ফোনে। আমি সেটাকেই আপনার উত্তর ধরে নিবো। যদি হ্যা বলেন তাহলে শনিবার আমাদের বিয়ে হবে। আর যদি না হয় তাহলে আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।’

আজ শুক্রবার। বর্ণ,অক্ষর, মধুজা, মমতা চৌধুরী, অনীল চৌধুরী সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। আরহা এখনো হ্যা বা না ম্যাসেজ দেয়নি। বর্ণ আরহার ব্যাপারে তার পুরো পরিবারকে জানিয়েছে। অনীল চৌধুরী প্রথম দিকে অমত করলেও মমতা চৌধুরীর মত থাকায় তিনি বুঝিয়েছেন নিজের স্বামীকে৷ তার ধারণা নিজের পছন্দোমতো মেয়েকে বিয়ে করলে বর্ণ বদলে যাবে। লিয়াও আছে সবার সাথে। ভাইয়ের মৃত্যুর পর এখন সে মধুজাদের সাথে থাকে। এই পরিবারেরই সদস্য হয়ে গেছে বলা যায়।

শুক্রবার পেরিয়ে যায়। আজ শনিবার। বর্ণর ফোনে কোন ম্যাসেজ আসে না। যার কারণে বর্ণ সিদ্ধান্ত-হীনতায় ভুগছিল। আচমকা বর্ণর ফোনে একটি ম্যাসেজ আসতেই সে দৌড়ে যায় কাজি অফিসে। যেখানে বিয়ের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্ণ পুরো অবাক হয়ে যায়। তাকে যে এভাবে সবাই মিলে সারপ্রাইজ দিবে সেটা বুঝতেও পারেনি বেচারা। সে তো চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল।
সবার মধ্য থেকে আরহা এগিয়ে এসে বলে,

‘আপনার পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে আমি আপনাকে সারপ্রাইজ দিলাম। আমার উত্তর জানতে চাইছিলেন না জুনিয়র? আমার উত্তর হ্যা। চলুন বিয়ে করে ফেলি। তবে আমার একটা শর্ত আছে?’
‘এখন আবার কি শর্ত?’
‘বিয়ের পর কিন্তু আপনি এইসব ছাত্র রাজনীতি করতে পারবেন না। দশটা নয় পাচটা নয় একটা মাত্র জামাই আমার তাকে নিয়ে কোন ঝুকি আমি জিতে পারবো না। এই শর্ত মানলে তবেই আমি বিয়ে করব নয়তো করব না।’
বর্ণ বেশ ভাবনায় পড়ে যায়। অনেক ভেবে চিন্তে বলে,
‘আপনার শর্ত মঞ্জুর করলাম। চলুন বিয়ে করে নেই।’
বর্ণ ও আরহার বিয়েটা হয়ে যায়। দুজনে জরিয়ে পড়ে এক পবিত্র সম্পর্কে।

সারপ্রাইজ অংশ
মধুজা ও অক্ষরের জীবন এখন অনেক সুন্দর হয়েছে। একে অপরের ভালোবাসায় সিক্ত তারা। বর্ণ এবং আরহাও চুটিয়ে সংসার করছে।
মধুজা রোজকার মতো আজ নিজের কাজ সেরে বাড়িতে ফিরল। বাড়িতে ফিরে আচমকা বমি পেয়ে গেল তার। ছুটে গেল বেসিনের কাছে। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত কয়েকদিন থেকেই এমন হচ্ছে মধুজার সাথে। মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব–এসব সিম্পটম নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে মধুজা। ভাবল একবার প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট করে দেখবে। আর করলোও তাই। কিট দিয়ে চেক করে দেখল রিপোর্ট পজেটিভ। খুশিতে লাফিয়ে উঠল মধুজা।

রাতে অক্ষর বাড়িতে ফিরল। মধুজা তাকে খুশির খবর দিল। অক্ষরও ভীষণ খুশি ছিল। নিজের অনাগত সন্তানের নাম পর্যন্ত ঠিক করে রাখল। ছেলে হলে মাহাদ আর মেয়ে হলে অহনা। নাম দুটো মধুজারও ভীষণ পছন্দ হলো।
অক্ষরঃতো আমরা মা-বাবা হতে চলেছি হানি। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। যেভাবে আমাদের বিয়ে হলো সংসার টিকবে কিনা সেই নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। আমাদের বিয়ের ছয়মাস তো হয়েও গেছে। আমি তো ভেবেছিলাম এই দিনে তুমি আমার হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দেবে, তা না প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট ধরিয়ে দিলে!

মধুজাঃডিভোর্স পেপার দিলে খুশি হতে বুঝি। যাও আর কথা বলবো না তোমার সাথে।
অক্ষরঃরাগ করছো কেন? আমার হানিকে রাগ করলে একটুও ভালো লাগে না। আসো একটু আদর করে দেই।
মধুজাঃশুরু হলো পাগলা ডাক্তারের রোম্যান্টিক অ’ত্যাচার। আমি আদর করতে দেবোই না।
অক্ষর মধুজাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,
‘আমি আদর করবোই। ❝পারলে ঠেকাও❞’

সমাপ্ত

অবশেষে গল্পটি শেষ করলাম। গল্পটা শুরুর দিকে ভালো থাকলেও মাঝখান থেকে ভালো হয়নি সেটা আমি নিজে স্বীকার করছি। আগের গল্পগুলো ছোট করায় অনেক পাঠক বলছিল নতুন গল্পটা বড় করতে। সেইজন্য গল্প বড় করতে গিয়ে গল্পটার মাধুর্য হারিয়ে গেছে। আমার নিজের কাছে আর ভালো লাগছিল না তাই গল্পটা এখানেই শেষ করে দিলাম। নতুন গল্প নিয়ে ফিরব তবে একটু সময় লাগবে। একটু ভেবে চিন্তে লিখতে চাই। এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন গল্প নিয়ে ফিরবো ইনশাআল্লাহ ততদিন একটু কষ্ট করে অপেক্ষা করুন

পারলে ঠেকাও পর্ব ৩০