পূর্ণতা পর্ব ২৬

পূর্ণতা পর্ব ২৬
নন্দিনী নীলা

থাপ্পর খেয়েও স্মরণের মাঝে কোন হেলদোল পাওয়া গেল না। কোন প্রকার অপমান লজ্জা লক্ষ্য করা গেল না। স্মরণ থাপ্পর খেয়ে ও আগের সুরেই বলল,“ ফার্স্ট টাইম কোন মেয়ের হাতে আদর মাখানো থাপ্পর খেয়ে দারুণ লাগছে।”
পূর্ণতা স্মরণের নির্লজ্জ মার্কা মুখের দিকে চেয়ে বলল,“ আপনার লজ্জা নেই? জনসম্মুখে একটা মেয়ের সাথে থাপ্পর খেয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন। কীভাবে?”

“ প্রেমে পড়লে মানুষ সব কিছুর উর্ধ্বে চলে যায়। আমি তো তার থেকেও বড়ো টায় ফেসেছি।”
“মানে?” কপাল কুঁচকে বলল পূর্ণতা।
স্মরণ বলল,“ ভালোবাসার ফেসেছি।”
পূর্ণতা বলল,“ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি নিজের জীবনের থেকে ও বেশি। এসব জানা সত্ত্বেও…!”
স্মরণ থাপ্পর দেওয়া গালে আঙুলের স্পর্শ করে বলল,“ মেয়েদের হাত শুনেছি তুলোর মতো নরম তুলতুলে হয়‌। তোমার হাত মনে হচ্ছে পাথরের মতো শক্ত। লেগেছে ভালোই।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ ভবিষ্যতে এই পাথর হাতের থাপ্পর খেতে না চাইলে আমার পিছু ছাড়েন।” কঠিন স্বরে বলল পূর্ণতা।
স্মরণ গাল পূর্ণতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“ ভবিষ্যতে আরো খেতে চাই। এবং তুমি চাইলে এখনি আরো দিতে পারো। থাপ্পর দেওয়ার উসিলায় হলেও তোমার স্পর্শ তো পাওয়া হবে। তাতে আমার সমস্ত যন্ত্রণা সয়ে যাবে।”
পূর্ণতা কটমট করে তাকিয়ে আছে স্মরণের দিকে স্মরণ চোখের ইশারায় দিতে বলল পূর্ণতা রাগে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।

রাগে ওর শরীর কাঁপছে। রাগে গজগজ করে পিছু ঘুরে দেখল স্মরণ দাঁত কেলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ও অসহ্য চোখে তাকিয়ে নিজের ল্যাকেজ টেনে বলল,“ আমাকে বাসায় যেতে হবে।”
বলেই পূর্ণতা নিজের ল্যাকেজ টেনে সামনে যেতে লাগল স্মরণ নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পূর্ণতার পিছু এসে বলল,“ আরে আমাকে এই অচেনা শহরে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছো পূর্ণতা?”
পূর্ণতা চোখমুখ শক্ত করে তাকাল স্মরণের দিকে।

“ তো সারাদিন কি আমি আপনার ফালতু কথা শুনতে এখানে বসে থাকব? এমন ভাবে বলছেন যেন নিজে একটা শিশু।”
“ তা কখন বললাম। বাসায় যাবে ঠিক আছে কিন্তু আমাকে ফেলে যাচ্ছ কেন?”
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে বলল,“ মানে? আপনাকে নিয়ে আমি কোথায় যাব?”
“ কেন তোমার বাসায়!” বলেই লাজুক হেসে বলল,“ এভাবে শ্বশুর বাড়ি যেতে খুব লজ্জা লাগতেছে কিন্তু কিছু করার নেই‌। এখন শ্বশুর বাড়ি যাওয়া ছাড়া তো আমার থাকার জায়গা নেই।”
পূর্ণতা আকাশ থেকে পড়ে বলল,“হোয়াট? ঢাকা শহরে কি হোটেলের অভাব পরেছে?”
“ নাতো বাট আমি তো যেখানে সেখানে থাকতে পারিনা।”

“ দেখুন আপনি আমার অনেক বড়ো একটা উপকার করেছেন। এজন্য অনেক কৃতজ্ঞ আমি আপনার প্রতি। দয়া করে এবার আমাকে ছেড়ে দিন।”
“ শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তো আমি ছাড়তে পারব না পূর্ণতা। তুমি তো কথা দিয়েছিলে আমি যে শর্ত দিব তুমি তা মানবে। আমার শর্ত হলো আমি তোমার বাসায় এক সপ্তাহ থাকতে চাই।”
“ আপনার মাথা ঠিক আছে তো?”
“ একদম ঠিক আছে‌।”
“ আপনি কি সব বলছেন?”

“ তোমার কি কানে সমস্যা হচ্ছে বলো আমি লিখে দিচ্ছে।”
পূর্ণতা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,“ খাতাকলম কি সাথে নিয়ে এসেছেন?”
“ একজন টিচার আমি আমার কাছে কি কলম খাতা থাকবে না?”
“ দেখুন আপনি কোথাও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন এক সপ্তাহ। আমাকে নিস্তার দিন।”
“ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি মায়া ভাবিরা না আসা পর্যন্ত আমি আমার শ্বশুর বাড়ি অর্থাৎ তোমার বাসায় থাকব। খুব এক্সাইটেড আমি সেখানে থাকার জন্য।”

পূর্ণতা নিজের কথার জালে এভাবে ফেঁসে যাবে কল্পনা ও করেনি। স্মরণের মনে এতো বড়ো প্যাঁচ ছিল জানলে ও ফেরত না এসে রাজশাহী চলে যেত। এখন এই বিপদ কাঁধে থেকে নামাবে কিভাবে? পূর্ণতা নিজের ল্যাকেজ ছেঁড়ে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।‌
আশালতা বেগম ছেলেকে পুলিশের সঙ্গে যেতে দেখে অসুস্থ হয়ে পরেছে। সাথে সাথে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। বাসার কাজের বুয়ার মাধ্যমে আত্নীয় স্বজনের কাছে খবর চলে যায়। বিয়ে বাড়ি ফেলে সবাই হসপিটাল এসে জড়ো হয়।

আশালতা বেগম একটু সুস্থ হতেই মেয়ের জামাই কে বলেন,“ আমার ছেলেটাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনো বাবা। যত‌ই খারাপ হোক ওর এই পরিণতি আমি মা হয়ে কীভাবে সহ্য করব?”
আয়রার বাবা তার হাত ধরে চিন্তা করতে মানা করলেন। আশালতা বেগমের চোখ বেয়ে অধরে অশ্রুর ধারা নামছে। মা যে সন্তান যত‌ই খারাপ হোক তার ক্ষতি দেখলে শান্ত থাকতে পারেনা।

আশালতা বেগম কে আয়রার মা নিজের বাড়ি নিয়ে আসলো। বিয়ে না হ‌ওয়া পর্যন্ত এখানেই মাকে রাখবে। আশালতা বেগম আদরের নাতনির বিয়েতে এসেছে কিন্তু তার মন পরে আছে ছেলের কাছে। ছেলেটাকে সামনে সামনে যত‌ই দুরু ছাই করুক। একটাই ছেলে তার আদরে মানুষ করেছে। চোখের মনি ছিল ছেলে কিন্তু ছেলে তার আদরে বাঁদর হয়ে উঠেছিল বুঝতেই পারেনি। এতো অন্যায় করেছে কিন্তু মায়ের মন যে এখনো ছেলের বিপদে কাঁদে। ছেলের বিপদে কীভাবে তিনি শান্তিতে থাকতে পারবে?

থানায় দিদানের সাথে শশী দেখা করতে আসছে। দিদান অগ্নি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
শশী বলল,“ দিদান আমার গায়ে হাত তুলে তুমি খুব ভালো কাজ করেছ। না হলে তোমাকে আমি এতো সহজে কি জেলের ভাত খাওয়াতে পারতাম বলো? থাংকিউ।”
“ কাজটা তুমি ভালো করোনি। তোমাকে পস্তাতে হবে।”
“ শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।”
“ এখানে কেন এসেছ?”

“ যত‌ই হোক এক সময় তোমাকে কম ভালোবাসতাম না। এখন অবশ্য ভালোবাসা নেই। কিন্তু হাজব্যান্ড তুমি আমার সেই খাতিরেই এসেছি।”
“ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কি জানো?”
শশী বলল,“ তোমার জীবনে ভুলের শেষ নেই।”
“ তা জানি কিন্তু তোমাকে বিয়ে করা, ভালোবাসা আমার সবচেয়ে বড়ো ভুল। যা এখন প্রতি মুহুর্তে আফসোস হয়ে ধরা দিচ্ছে।”

“ আমাকে ঠকানোর শাস্তি তোমার এভাবেই ভোগ করতে হবে। আমি তোমার এক্স ওয়াইফের মতো ন‌ই যে হাজব্যান্ড যা করবে মুখ বুঁজে সহ্য করব। আমাকে ঠকানোর শাস্তি আমি তোমাকে দিয়েই ছাড়ব। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা সেই তুমি বিবাহিত জানার পর‌ই শেষ হয়ে গেছে। ব‌উ থাকতেও আমাকে বিয়ে করা, আমার জীবনটা নষ্ট করা আমি এতো সহজেই তোমাকে ছেড়ে দেব ইম্পসিবল।”
“ শাস্তি দাও আমি এর প্রাপ্য নিজের মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার হাত ধরেছে এটাই তো আমার ভুল‌। দয়া করে তুমি কখনোই আমার সামনে এসো না।”

“ সরি গো এটা করতে পারব না। আমি তোমার সামনে আসাটাই তো তোমার শাস্তি। আমি না আসলে তুমি তো আমাকে ভুলে যাবে তাহলে শাস্তি পাবে কীভাবে? আফসোস করবে কাকে দেখে?”
পূর্ণতা নিজের কথা রক্ষার্থে স্মরণ কে নিয়েই বাসার পথে রওনা হলো। স্মরণের মুখে তখন ঝুলছে বিশ্বজয়ের হাসি। পূর্ণতা সিএনজিতে বসে কটমট করে তাকালো স্মরণের দিকে।‌ স্মরণ বলল,“ এতো রাগ করছ কেন গিয়েই তো তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেব না। আগে তুমি নিজ মুখে রাজি হবে তবে না এসব হবে। এতো দুশ্চিন্তা করো না তো আমি তোমার অমতে এগুবো না।”

“ আমার অমতে সমস্ত কিছু করে ভালো সাজা হচ্ছে?”
“ আমি এমনিতেই যথেষ্ট ভালো‌। ভালো সাজার প্রয়োজন নেই।”
“ দয়া করে চুপ করে থাকেন। আমার মাথা ব্যথা করছে।”
“ ওকে‌।”
স্মরণ পূর্ণতার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে কথা না বলে।

পূর্ণতা পর্ব ২৫

পূর্ণতা বিরক্তিকর চোখে স্মরণের দিকে তাকিয়ে ওরনা টেনে মাথা মুখ ঢেকে বসে আছে। স্মরণ পূর্ণতার কান্ড দেখে হাহাহা করে হেঁসে উঠল। গলা ফাটিয়ে হাসছে‌। পূর্ণতা রাগে কাঁপতে লাগল। বাসায় কারো প্রশ্নের ধার ও ধারে না। কিন্তু এমন একজন বিরক্তিকর মানুষ কে নিজে বাসায় নিয়ে যাবে। এর থেকে তো রাজশাহী যাওয়াটাই বেটার ছিল।

পূর্ণতা পর্ব ২৭