পূর্ণতা পর্ব ২৯

পূর্ণতা পর্ব ২৯
নন্দিনী নীলা

আরো একদিন পর স্মরণের যাওয়ার কথা থাকলেও একদিন আগেই স্মরণ কে চলে যেতে হলো। স্মরণের মা হঠাৎই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরেছে এজন্য স্মরণ একদিন আগেই রাজশাহীর উদ্দেশ্য এ র‌ওনা হয়েছে। বাসে বসে আছে স্মরণ‌। মা ওকে বাড়ি ফেরানোর জন্য অনেক মিথ্যাচার করেছে এই পর্যন্ত কিন্তু এবার সত্যি সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওর একমাত্র কারণ স্মরণের ফুপি। তিনি নাকি বাসায় এসে আজেবাজে কথা বলে গেছে তার থেকেই তিনি অসুস্থ।

স্মরণের ফুপি নিজের মেয়ের বিয়ে অনেক আগে থেকেই স্মরণের সাথে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। বোনের কথায় স্মরণের বাবা ইব্রাহিম হোসেন ও রাজি হয়েছিল কিন্তু এই বিয়েতে অমত করেছে স্মরণ। স্মরণ একটা ম্যাচিউর মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার ফুপাতো বোন হৈমী একেবারেই নাদান টাইপের। বয়স ও অল্প ওর থেকে কমপক্ষে ৯/১০ বছরের ছোটো হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কয়দিন আগেও ওর সামনে হাফ প্যান পরে ঘুরাফেরা করেছে সেই মেয়েকে নাকি ওর বিয়ে করতে হবে? ভাবতেই কেমন চোখমুখ কুঁচকে আসে ওর। হৈমী একবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পরে বয়স সর্বোচ্চ ১৭ হবে। যেখানে ওর বয়স সাতাশ। হাঁটুর বয়সী বোনের নজরে দেখা মেয়েটাকে ও স্ত্রী হিসেবে কোনদিন মানতে পারবে না। অনেক আগে থেকেই ফুপি এসব নিয়ে বাড়িতে ঝামেলা করে। রাগ করে বাড়ি আসা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। আবার রাগ অভিমান ভেঙে আসলেও বিয়ের জন্য ঝামেলা করতে লাগে। হৈমী ও হয়েছে মায়ের মতো কথা বলা ও যায় না ভাব খানা এমন করে যেন ওর সাথে বিয়ে হয়ে গেছে।

সবাই রাজি থাকলেও এখন অব্দি স্মরণ এই সমন্ধে রাজি হয়নি ওর পক্ষে একমাত্র স্মরণের মা আছেন। তিনিও ছেলের অমতে কিছুই করতে চায় না। অন্যত্র পাত্রী দেখা নিয়েও ঝামেলা করেছে ‌ফুপি। স্মরণ মনমতো পাত্রী না পাওয়ায় এই ঝামেলা থেকেও বের হতে পারছিল না। তারপর পূর্ণতার প্রতি যখন নজর আটকে গেল। তখন নিজের সমস্ত ধ্যান জ্ঞান পূর্ণতার উপর নিবন্ধ করে ঢাকা ছুটে আসে ভেবেছিল একেবারে পূর্ণতা নিয়েই রাজশাহী ফিরবে। নিজের ভালোবাসাকেও জয় করা হবে সাথে ফুপির টেনশন মাথা থেকে নামবে।

মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে ফুপি বাসায় এসে। এসব শুনে মা অসুস্থ।‌ এসব শুনে আর নিজের জেদ বজায় রাখতে পারল না স্মরণ। এর একটা হেস্তনেস্ত করবে তাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
প্রথমবার যখন পাত্রী দেখতে গিয়েছিল তখন হৈমীর সাথে দেখা হয়েছিল। তখন ওর বেয়াদবি গুলো এখনো ওর মনে পড়লে রাগে চোখমুখ লাল হয়ে উঠে।

স্মরণের জন্য পাত্রী দেখা শুরু হয়। মায়ের উপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়েছে স্মরণ। প্রথম পাত্রীর নাম স্মরণ ভুলে গেছে কিন্তু মনে আছে তখন হৈমী নাইনে পরে‌। দেখতে বাচ্চা একটা মেয়ে তাকে নিয়ে ফুপি ওদের বাসায় এলো। ওরা পাত্রীর বাড়ি থেকে এসে কেবল সোফায় বসে আলোচনা করছিল। স্মরণের পাত্রী পছন্দ হয়নি কেন হয়নি ও নিজেও জানে না। পাত্রী যথেষ্ঠ সুন্দরী, লম্বা, মাথা ভর্তি চুল। তবুও স্মরণের তাকে ভালো লাগেনি। এই ভালো না লাগার কারণ স্মরণ বাবা মাকে বলতে পারছিল না।
শুধু বলেছিল,“ মা মেয়ে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট কিন্তু আমার কেন জানি নিজের জন্য তাকে পারফেক্ট মনে হচ্ছে না।”

ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসে সোমা বেগম। ছেলের পছন্দ হয়নি তাহলে এখানে আর কথা এগুবে না। স্মরণ কথা শেষ করে নিজের রুমে যাচ্ছিল তখনি বাসায় এসে উপস্থিত হয় ফুপি এবং হৈমী। মেয়ের হাত ধরে টেনে বাসায় এসে চিৎকার করে উঠে। স্মরণ ফুপির ভয়ংকর চেহারা দেখে কপাল কুঁচকে এগিয়ে আসে। স্মরণের ফুপি হালিমা বেগম স্মরণের সামনে মেয়েকে টেনে এনে দাঁড়ায়। তারপর হৈমীকে স্মরণের পাশে দাঁড় করিয়ে বলে,“আমার মেয়েকে নাকি তোর পাশে মানায় না। কোনদিক দিয়ে মানায় না হ্যাঁ? আজকালকার ছেলেরা তো কচি মেয়েই খোঁজে আমার মেয়ে দেখতে সুন্দরী। উঁচা লম্বা দেখতে কোথায় ছোটো লাগছে তোর সমান হয়ে গেছে। ওকে বিয়ে করতে তোর কোথায় সমস্যা হ্যাঁ?”

হৈমী বেয়াদব টা চট করেই স্মরণের হাত ধরে নিল। স্মরণ কিছু বলতে যাবে হৈমীকে নিজের হাত জড়িয়ে ধরতে দেখে বিমূঢ় হয়ে যায়।
স্মরণ ফুপিকে সেখানে রেখেই হৈমীকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে।
তারপর হৈমীর হাত নিজের বাহু থেকে টেনে ছাড়িয়ে বলে,“ এই তোর লজ্জা লাগছে না? আমার হাত ওভাবে চেপে ধরলি কেন বেয়াদবের মতো?”
হৈমী ধমক খেয়ে চোখমুখ ফুলিয়ে বলল,“ বকছো কেন? আমাদের তো দুইদিন পর বিয়ে হবে তোমার হাত ধরলে সমস্যা কোথায়?”

স্মরণ থাপ্পর দিতে হাত তুলেও হাত মুঠো করে নামিয়ে নিল। হৈমী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
স্মরণ বলল,“ আমি কি তোর সমবয়সী? তুই আমাকে তুমি করে কথা বলছিস কেন? বড় ভাইয়ের সাথে কেউ তুমি করে কথা বলে? আপনি করে কথা বল বেয়াদব!”
হৈমী ধমক খেয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,“ আব্বুর সাথে তো আম্মু তুমি করে কথা বলে। কয়দিন পর আমাদের ও বিয়ে হয়ে যাবে তাই আমি ও তুমি করে কথা বলছি…”

ধমকে উঠল স্মরণ। চেঁচিয়ে বলল,“ এক থাপ্পর দিয়ে গাল ফুলিয়ে ফেলব। যা মুখে আসছে বলে দিচ্ছিস? এখনি বিয়ে করতে লাফাচ্ছে। কত বয়স তোর হ্যাঁ তোকে বিয়ে করে কি আমি বাল্যবিবাহের জন্য জেলের ভাত খাব নাকি। এখনি বিয়ের শখ জেগেছে ফুপি তোর মাথাটা একদম নষ্ট করে দিয়েছে।”
হৈমী ধমক খেয়ে কান্না করে দিল কিন্তু কান্না করতে করতে বলল,“ তুমি খুব পঁচা আমাকে বকো। বিয়ের পর আমি তোমাকে খুব মারব।”

স্মরণ আবার ওর মুখে বিয়ের কথা শুনে মারতে আসলে হৈমী ভয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে এলো। স্মরণ রাগে বিছানায় বসে কাঁপতে লাগল।
যেমন ফুপি তেমন নিজের মেয়েকেও বানিয়েছে। এইটুকু মেয়েকে কেমন বিয়ের জন্য লাফালাফি করছে‌। মেয়েটাকে একদম নষ্ট করে ফেলছে ফুপি‌।

বাসের যাত্রাটা খুব লম্বা মনে হলো স্মরণের কাছে। বাসায় ফিরে এর একটা হেস্তনেস্ত না করা পর্যন্ত ওর শান্তি লাগছে না। স্মরণ ব্যাগের চেইন খুলে পানির বোতল বের করতেই সেখানেই একটা নীল রঙের ডায়েরি নজরে এলো‌‌। স্মরণ পানি না খেয়ে ডায়েরি বের করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। গতকাল রাতেই এটা প্রভাতের রুমে পেয়েছে স্মরণ। রাতে যখন ও নিদ্রায় শায়িত হতে পারছিল না উঠে বাইরে ঘুরতে লাগল হঠাৎ ওর চোখ চলে যায় প্রভাত এর রুমের দিকে রুমটা হাট করে খোলা ও দেখতে পায় মাঝরাতে পূর্ণতা রুমে বসে আছে হাতে কিছু ধরা।

স্মরণ দরজার আড়ালে থেকে পূর্ণতা কে নজরে রাখতে লাগে চাইলেই সামনে যেতে পারত কিন্তু কেন জানি পূর্ণতা কে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করে না। পূর্ণতা ওকে দেখলেই মেজাজ গরম করে ফেলে। ওর এই শান্তি ওর নষ্ট করতে ইচ্ছে হয়না। পূর্ণতা হঠাৎ ডায়েরি বন্ধ করে সেটা বিছানার নিচে লুকিয়ে রেখে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। স্মরণ পূর্ণতার বের হবার সময় দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।

পূর্ণতা চলে যাবার পর ও রুমে প্রবেশ করে আর ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে খাটের নিচে উঁকি মেরে নীল রঙের ডায়েরি নজরে আসে। বক্স খাট না থাকায় খাটের তলায় ভালোই জায়গা। স্মরণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডায়েরি হাতে তুলে নেয়। তারপর ফোনের আলোয় প্রথম পেইজ খোলে ফেলে।
কারো ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া উচিত হয় স্মরণ জানে মানে এটা অন্যায় কিন্তু পূর্ণতার ব্যাপারে জানার এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না। যত কঠিন হোক এই অধ্যায় স্মরণ শেষ জানতে চায়।

স্মরণ লুকিয়ে ভায়েরি নিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে। ডায়েরি সাবধানে ব্যাগে লুকিয়ে রেখে ঘুমিয়ে যায়‌‌। সকালে মায়ের খবর শুনে এটা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভুলে যায়‌। ও ভেবেছিল আজকের দিনটা ওই বাসায় থাকবে ও লুকিয়ে এই ডায়েরি পড়বে তারপর রাতের আগেই ওটা জায়গা মতো রেখে দিবে কিন্তু সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেল। ভুলে এটা সাথে করে রাজশাহী চলে যাচ্ছে। পূর্ণতা এটা না পেয়ে কি করবে কে জানে? এখন ফোন করে বলার উপায় নেই তাছাড়া ফিরিয়ে দেওয়াও এখন অসম্ভব।

পূর্ণতা পর্ব ২৮

চিন্তিত মুখে স্মরণ ডায়েরি টার দিকে তাকিয়ে আছে। সৃষ্টিকর্তা ও চাইছিল এটা ওর কাছে থাকুন। এটা তিনি আমার সাথে এনেছে এর রহস্য না জেনে আমি এটা ফিরিয়ে দিতে পারি না।

পূর্ণতা পর্ব ৩০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here