পূর্ণতা পর্ব ৩০

পূর্ণতা পর্ব ৩০
নন্দিনী নীলা

স্মরণ বসে আছে মায়ের সামনে। সোমা বেগম ছেলের হাত ধরে বললেন,“ কত শুকিয়ে গেছিস। ডিভোর্সি একটা মেয়ের পেছনে আর কত দিন ঘুরবি? দেখ আমি তোর জন্য ওই মেয়েটা ডিভোর্সি জানার পরও রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু আর কত বল তো? আমার সোনার টুকরো ছেলে তুই‌। তোর জন্য কত মেয়ে আছে। কিন্তু তুই কিনা এমন এক মেয়ে পছন্দ করলি যে তোর যোগ্য না‌।

আমার কথায় তোর রাগ হতে পারে কিন্তু তুই বল ওই মেয়ে কি তোর যোগ্য? বিবাহিত অবস্থায় মেয়েটা তোকে মিথ্যা বলেছে পরে ওই বাড়ির ছেলে দিদানের সাথে আলোচনা না করলে কি তুই জানতে পারতি তার এক্স ওয়াইফ ছিল? সবার বিপক্ষে গিয়েও আমি তোর কথা চিন্তা করে মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু ওই মেয়ে তো তবুও তোকে পাত্তা দেয়না। এতো দিন মেয়েটার পিছু ঘুরে কি পেলি? এদিকে তোর ফুপির অত্যাচার।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সবার কালো মুখ আমার হজম করতে হচ্ছে শুধু তোর জন্য। তবুও তুই আমার কথা না ভেবে ওই মেয়ের জন্য পরে থাকবি? পরিবার চাকরি সব ফেলে ওই মেয়ের জন্য বৈরাগী হয়ে ঢাকা পরে থাকবি? আর কত দিন এর থেকে তো আমার মনে হচ্ছে তোর ফুপির কথায় রাজি হয়ে হৈমীর সাথে তোর বিয়ে দেওয়া ভালো‌। একটা ডিভোর্সি মেয়ের থেকে হৈমী অবশ্যই বেস্ট।”

স্মরণ মায়ের হাত ধরে বলল,“ প্লিজ মা তুমি অন্তত আমায় এমন কথা বলো না। আগে আমার জীবনে কেউ ছিল না তবুও আমি হৈমীকে চায়নি। এখন আমার জীবনে একজন এসেছে আমি তাকে ভালোবাসি। পূর্ণতা কে ছাড়া আমি অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে পারব না মা।”
“ তোর জন্য কি মেয়ের অভাব তুই কেন একটা ডিভোর্সি মেয়ের পেছনে পরে থাকবি? তবুও মেয়ের এতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য সহ্য করে?”

স্মরণ চট করেই মায়ের মুখ সেপে ধরল এবং বলল,“ প্লিজ মা এই শব্দটা আর উচ্চারণ করো না। আমি চাই না পূর্ণতা ডিভোর্সি এই খবরটা এই বাড়ির কেউ জানুক। পূর্ণতা আমার ভালোবাসা। ওকে আমি বিয়ে করে সসম্মানে এই বাসায় নিয়ে আসব একদিন। আমি চাইনা সেদিন ওর দিকে কেউ বাঁকা দৃষ্টিতে ফেলুক।”
“ যে মেয়ে তোকে দুই আনাও দাম দেয়না। তার জন্য এতো চিন্তা? ও তোকে কোনদিন বিয়ে করতে রাজি হবে বলে তোর মনে হয়?”

“ রাজি হতে হয়ত টাইম লাগবে কিন্তু রাজি করাতে পারলে তোমার ছেলের জীবনটা সুখের হবে মা। তোমার ছেলে তার ভালোবাসা ফিরে পাবে‌। তুমি কি চাও না?”
“ অনেক চেয়েছি আর চাই না‌। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি আর চাই না তুই ওই মেয়ের আশেপাশে যাস।”

“ আমি পারব না তোমার কথা রাখতে মা। আমি পূর্ণতা কে ছাড়তে পারব না।” গম্ভীর কন্ঠে বলল স্মরণ।
সোমা বেগম চিৎকার করে উঠল,“ স্মরণ.!”
“ ফেরার পথ নেই মা। চিৎকার করে তুমি আমার মন থেকে পূর্ণতা কে সরাতে পারবে না।”
সোমা বেগম স্মরণের কথায় আজ আর নরম হলেন না। তার এক কথা সে স্মরণ কে অন্য জায়গায় বিয়ে দিবে। স্মরণ মায়ের সাথে তর্ক শেষ করে হতাশ হয়ে নিজের রুমে ফিরল। তারিন ভাইয়ের রুমে এসে ভাইকে খেতে ডাকল।
স্মরণ খাবে না বলে ঘুমিয়ে পড়ল।

স্মরণ আসার খবরটা হালিমা বেগমের কানে চলে যেতেই এসে পড়ল মেয়ে নিয়ে। স্মরণের ঘুম ভাঙল বাইরে ফুপির চিৎকার চেঁচামেচি শুনে। রেগে স্মরণ বাইরে এসে দেখল হৈমী মায়ের পাশে বসে আছে জড়োসড়ো হয়ে।
স্মরণ এসে সামনে বসতেই হালিমা বেগম ঠান্ডা হয়ে গেল‌‌।
স্মরণ হৈমীর দিকে তাকিয়ে বলল,“ হৈমী তুই তো খুব বড়ো হয়ে গেছিস। এবার তোকে বিয়ে দিতে হবে।”
হৈমী লজ্জা কাঁচুমাচু মুখে বলল,“ কেমন আছো?”

স্মরণ বলল,“ দাঁড়া তো কতটুকু লম্বা হয়েছিস দেখি…!”
হৈমী কপাল কুঁচকে ফেলল। মায়ের দিকে তাকাল কি করবে বুঝতে না পেরে। হালিমা বেগম টেনে মেয়েকে দাঁড় করিয়ে বলল,“ এখন আর আমার মেয়েকে ছোটো বলে তুই না করতে পারবি না।”
“ ঠিকি বলেছ ফুপি। হৈমী তো অনেক লম্বা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা তো একজায়গা তেই।”
হালিমা আতংক ছড়িয়ে বলল,“ কি সমস্যা?”

“ আমার আবার এতো লম্বা মেয়ে পছন্দ না। এতো লম্বা হয়েছে হৈমী ওকে তো কয়দিন পর আমার থেকেও লম্বা লাগবে। তখন কি বাজে লাগবে বলো? সবাই বলবে আমার থেকে আমার ব‌উ লম্বা।”
চোখ মুখ শক্ত করে ফেলল হালিমা বেগম‌। স্মরণের কথার মানে এতোক্ষণ তিনি বুঝতে পারলেন‌। এভাবে তাকে ও তার মেয়েকে স্মরণ অপমান করছে।
“ তুই কিন্তু অপমান করছিস স্মরণ।”

স্মরণ ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল,“ আচ্ছা ফুপি তুমি আমার কাছে মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য এতো উতলা হয়েছ কেন বলোতো? তোমার মেয়ের কি কোন সমস্যা আছে? অন্য জায়গায় কি বিয়ে দিতে পারবে না। এজন্য কি আমার কাছে বিয়ে দিতে এতো উঠেপড়ে লেগেছ?”
হালিমা বেগমের গায়ে লাগল খুব কথাটা মেয়ের সমস্যা আছে বলল এতো বড়ো অপমান।
তিনি ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলেন। স্মরণের বাবা ইব্রাহিম হোসেন এগিয়ে এসে স্মরণ কে ধমক দিলেন। ভেতর রুমে থেকে স্মরণের মা ও এগিয়ে আসলেন।

সোমা বেগম এসে হৈমীকে ডেকে নিজের কাছে এনে ওর গাল ছুঁয়ে বললেন,“ আমার ছেলের ব‌উ আমি তোকেই করব। ছেলের পাগলামিতে অনেক সায় দিয়েছি আর না। এবার ওর পাগলামি থামাতে হবে।”
হালিমা বেগম কান্না থামিয়ে দুহাতে চটজলদি চোখ মুছে হাসিমুখে তাকালেন সোমা বেগমের দিকে।
স্মরণ মায়ের দিকে বিস্ময়ে কিংকতৃব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে। মায়ের কথা ও মুখের হাসি ওকে বাকরুদ্ধ করে দিল। মা এই কথাটা কিভাবে দিল? এতো কিছু বুঝানোর পর ও মা এই বিয়েতে সম্মতি কীভাবে দিতে পারল?
তারিন হৈমীকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,“ হৈমী আপু ফাইনালি আম্মু রাজি হলো। এবার আর তোমাকে আমার ভাবি করা থেকে আটকাতে পারবে না।”

স্মরণ মায়ের দিকে বিস্ময়ে কন্ঠে বলল,“ মা এসব কি বলছো?”
“ অনেক পাগলামি হয়েছে এবার এসব বাদ দিয়ে সবার কথা শোন। হৈমী কে আমি ছেলের ব‌‌উ করতে চাই।”
স্মরণ রাগে গজগজ করে চলে গেল। মা এভাবে পাল্টি খাবারে কল্পনাও করেনি স্মরণ। এখন এসব কীভাবে আটকাবে ও জানে না। পূর্ণতা কেও রাজি করাতে পারল না এদিকে মাও বিপক্ষে চলে গেল। এখন কি করবে ও?
হৈমী তারিনকে নিয়ে স্মরণের রুমের সামনে এসে দেখে ভেতরে থেকে দরজা আটকানো।
হৈমী বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে স্মরণকে ডেকে দরজা খুলতে বলল। স্মরণ ভেতরে থেকে একটা ধমক দিয়ে দিল। তারিন আর হৈমী ধমক খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে এলো ভয়ে।

স্মরণ বিছানায় শুয়ে আছে রাগে ওর কপালের রগ ফুলে উঠছে। বাসায় এসে এভাবে ফেঁসে যাবে কল্পনা ও করেনি। বাইরে সবাই ওর বিয়ের ডেইট পর্যন্ত ঠিক করে ফেলেছে। অথচ এই বিয়েতে ওর কোন মত নেই তাতে কারো মাথাব্যথা নেই। সবাই মিলে প্লান করে এসব করেছে এখন স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছে স্মরণ।
নিজের বাড়িকে এখন জেলখানার থেকে কম কিছু লাগছে না। স্মরণ রুম থেকে বের হতে পারছে না ভয়ে। বাইরে ঘুরঘুর করছে হৈমী বের হলেই মাথায় চড়ে বসতে চাইছে। এমনিতেই এই মেয়ে অতি পাকনা। দুই পা এগিয়ে থাকে সবসময় এখন তো সবারই সম্মতি পেয়েছে। বিয়ের ডেইট অব্দি ফিক্সড করে ফেলেছে এখন কি আর এই মেয়েকে থামানো সম্ভব?
হৈমী কে দেখলে স্মরণের রাগে ওর গাল বরাবর থাপ্পর মারতে ইচ্ছা করছে।

“ ক‌ই যাচ্ছ?”
স্মরণ বাসা থেকে বের হচ্ছিল ওকে কেউ বাসার বাইরে অব্দি যেতে দিচ্ছে না সবাই এক হয়ে বলেছে বিয়ের আগে ওকে বাসার বাইরে যেতে দিবে না।
স্মরণ লুকিয়ে বাইরে যাচ্ছিল কিন্তু এই মেয়ে নিশাচরের মতো রাত জেগে বসে আছে।
স্মরণ রাগান্বিত স্বরে বলল,“ তুই এখানে কী করছিস?”
“ তোমাকে পাহারা দিচ্ছে?”
“ মানে?”

“ মামি বলেছে তুমি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাবে। অনেক কষ্টে সব ঠিকমতো হচ্ছে তোমাকে তো আমি পালাতে দিতে পারব না। তখন আমার বিয়ে হবে কার সাথে এতো বড়ো রিস্ক আমি নিতে পারব না। তাই আমি নিজে ভেবেছি এই দুইরাত তোমায় পাহারা দেব‌।”
স্মরণ কপাল কুঁচকে বলল,“ দুই রাত মানে?”
“ উফ তুমি তো জানোই না। আমাদের সামনের বৃহষ্পতিবার কাবিন হবে তারপর মাসখানেক পর অনুষ্ঠান।”
বলতে বলতে হৈমী লজ্জায় লাল হয়ে উঠল।

পূর্ণতা পর্ব ২৯

ওর লজ্জা পাওয়া দেখে স্মরণের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো ও গটগট করে রুমে চলে গেল।
হৈমী পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করল চেঁচিয়ে,“ তোমার হাতে ওটা কি? নীল রঙের দেখি।”
স্মরণ ভেবেছিল বাগানে বসে ডায়েরি পড়বে। কিন্তু এই বাড়িতে ওর সমস্ত শান্তি শেষ‌। এই ডায়েরিটা পড়তে ওর ভয় লাগছে ভালোবাসার মানুষটির ভালোবাসা পড়তে ওর বুক কাঁপে। তাইতো পড়তে গিয়েও পড়তে পারেনি।

পূর্ণতা পর্ব ৩১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here