পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৫৯

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৫৯
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

প্লিজ রুদ্র আমি আর খাব না।
এইটুকু শেষ করতেই হবে আমি আর কোনো কথা শুনবো না।
রুদ্রকে আমাকে খাবার খাওয়ার জন্য জোর করছে ঠিক তখনি আগমন ঘটে কুচুটে মহিলার। এসেই মুখ বেকিয়ে বলে,
বউ নিয়ে এতো আদিখ্যেতা করার কী আছে?
রুদ্র কাঠ কাঠ গলায় জবাব দেয়, বউ নিয়ে আদিখ্যেতা করবো না তো অন্য মেয়েদের নিয়ে আদিখ্যেতা করবো?
রুদ্রর কথায় মহিলাটি চুপসে গেলো। কিন্তু দমে গেলো না। মামুনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
তোমার ছেলে তো বউ পাগল হয়ে গেছে। বউয়ের কথা উঠছে আর বসছে। কোনদিন না জানি তোমাকে বউয়ের কথা শুনে বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
রুদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই মামুনি বলে, আমি রুদ্রকে যতটা না ভরসা করি তার থেকে বেশি রিয়াকে ভরসা করি। রিয়া আমার ছেলের বউ না আমার মেয়ে। ওকে আমি ছোটবেলা থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। ও আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে করা তো দূরে থাক। আমাকে আঘাত করার কথাও কল্পনা করতে পারে না। আমার ছেলে সুপুরুষ কোনো কাপুরুষ না। নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসলেই কেউ বউ পাগল হয়ে যায় না।

কেটে গেছে ৭ মাস। আমি আগের থেকে অনেকটা মোটা হয়ে গেছি। এই ৭ মাসে আমি বেশ কয়েক বারই অসুস্থ পড়েছি আমি। আমার থেকেও বেশি রুদ্র অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি না উনিই প্রেগনেন্ট। আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছেন। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। আগের থেকেই উনি আমার খেয়াল একটু বেশি রাখতেন। কিন্তু এখন অতিরিক্ত খেয়াল রাখেন। আমি ‘উহ’ শব্দটাও করলে উনি অস্থির হয়ে পড়েন। উনার এসব পাগলামু দেখে মাঝে মাঝে হাসি পায় আবার মাঝে মাঝে খারাপ লাগে।
আমি আগের মতো হাঁটা চলা করতে পারি না। পা বেশ ফুলে গেছে। আমি বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি। রুদ্র আসছে কী না তা দেখছি। কিন্তু রুদ্রর তো আসার কোনো নামই নেই। আজকে রুদ্রর সাথে নিভ্রও আসবে। নিভ্র রুনা আপু আর ইলান ভাইয়ার ছেলে। বয়স প্রায় চার বছর। কিন্তু এতটুকু ছেলের যা রাগ। প্রচণ্ড গম্ভীর টাইপের। অন্য বাচ্চাদের থেকে একদম আলাদা। ইলান ভাইয়া যেমন উনার ছেলে একদম উনার বিপরীত। মামুনি বলে রুদ্রও ছোটবেলায় এমন ছিলেন। নিভ্র একদম রুদ্রর কার্বন কপি। কিন্তু নিভ্র অন্যদের সাথে এতো না মিশলেও। আমাকে ছাড়া তার চলে না। প্রতিদিন একবার তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসতেই হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুদ্রকে একা আসতে দেখে আমি চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকালাম।
কী ব্যাপার আপনি একা কেনো? নিভ্র কোথায়?
ইলান নিয়ে আসবে নিভ্রকে। তুমি চুপচাপ এখানে বসে থাকো। আমি আসছি।
উনি আমার কোলের ওপর কয়েকটা চকলেট রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। বিছানায় পা গুটিয়ে বসলাম। বেশিক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে পারি না। উনি ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই রুম থেকে চলে গেলেন। একটু পরেই ফিরে আসলেন এক গাধা খাবার নিয়ে। এতো খাবার দেখে চোখ মুখ কুঁচকে গেলো।
উনি খাবারের প্লেট নিয়ে আমার সামনে বসলেন। আমি ভাবলাম এখনি হয়তো উনি আমার মুখে ঠুসে খাবার ঢুকাতে শুরু করবেন। কিন্তু না উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে নিজেই খাওয়া শুরু করলেন। আমি হতভম্ব হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি অবাক হয়ে উনাকে প্রশ্ন করলাম।
আপনি এই খাবারগুলো আমার জন্য নিয়ে আসেননি?
তোমার জন্য কেনো নিয়ে আসবো? তোমার তো খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি খেলেই তো তোমার পেট ভরে যাবে।
উনার কথা শুনে আমার মুখটা চুপসে গেলো। বেশ বুঝতে পারছি উনি আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সকালে উনাকে বলেছিলাম, আমার দুজন তো এক মন, এক পেট, এক আত্না টাইপ হাজবেন্ড ওয়াইফ। তাহলে আমার খাওয়ার কী দরকার? আপনি বেশি বেশি করে খেলেই তো আমার পেট ভরে যাবে।
এতক্ষণ ক্ষুধা না লাগলেও এখন আমার খেতে ইচ্ছে করছে। উনি আরেক লোকমা মুখে দেওয়ার আগেই আমি টুপ করে খেয়ে নিলাম।

আমি শুয়ে আছি আর উনি আমার পায়ে তেল মালিশ করে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে ব্যাপারটা অস্বস্তিকর। উনি আমার থেকে বয়সে বড় হয়ে আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন। আমি উনাকে এই শত বারণ করলেও উনি আমার কথা শুনতে নারাজ।
ভালো করে বউয়ের সেবা যত্ন কর। সব সিংহ পুরুষই বিয়ের পর বিড়াল পুরুষ হয়ে যায়। এই দেখ না আমাকে আমার বউ যদি বলে ওঠো তাহলে আমি ওঠি আমার বউ যদি বলে বসো তাহলে আমি বসি।
রুদ্র কিছু বললো না। উনি বুঝতে পেরেছেন ইলান ভাইয়া এগুলো মজা করে বলেছেন। নিভ্র দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। রুনা আপুও মুচকি হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে। ইলান ভাইয়া রুদ্রর দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে,
ইদানীং নিভ্রর জন্য তোকে আমার ভীষণ সন্দেহ হয়। সত্যি করে বলতো তুই আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে আরেকটা বিয়ে করিস নি তো। সেই বউয়ের ছেলের সাথে আমার ছেলে অদল বদল করে ফেলিসনি তো।
শাট আপ ইলান।
নিভ্রও ঠিক এরকম করে। আমি একটু ওর সাথে মজা করলেই বলবে শাট আপ বাবা। একদম তোর কার্বন কপি। এই ছেলে আমার হতেই পারে না। আমার ছেলে এতো গম্ভীর কী করে হতে পারে?
আমি নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম, তা নিভ্র সাহেব কেমন আছে?

আই’ম ফাইন। বেবিটা কেমন আছে?
বাহবা আমার আগে বেবির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে?
আম্মু বলেছে বেবি ভালো থাকলে তুমি ভালো থাকবে।
গেইম খেলবে?
না।
কেনো?
আমার এসব ভালো লাগে না।
তোমার ভালো লাগে না কেনো? সব বাচ্চাদেরই তো গেইম ভালো লাগে।
সব বাচ্চাদের গেইম ভালো লাগে। কিন্তু আমি তো বাচ্চা না।
মাঝখান থেকে ইলান ভাইয়া ফোড়ন কেটে বলে, তুই বাচ্চা হবি ক্যান? তুই তো রুদ্রর কার্বন কপি। আমারই ফাডা কপাল। আমার ছেলে আমার থেকে এক কাঠি ওপর দিয়ে যায়।
ইলান ভাইয়ার কথা শুনে নিভ্র বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে বলে,
শাট আপ বাবা।

২ মাসের সময় যখন চেক আপ করিয়েছিলাম তখন ডক্টর বলেছিলেন, আমার প্রেগনেন্সির বেশকিছু কমপ্লিকেশন আছে। আজকে রুদ্র আবার চেক আপ করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডক্টর বলেছে, এখন আর কোনো প্রবলেম নেই। আমার প্রেগনেন্সিও আর চার পাঁচটা প্রেগনেন্সির মতোই। আমাকে নিয়ে রুদ্রর টেনশন বিন্দু পরিমাণও কমলো না। উনার এক কথা ডেলিভারির পর যে পর্যন্ত উনি আমাকে আর আমাদের বেবিকে সুস্থ না দেখবেন সে পর্যন্ত উনার টেনশন কমবে না।
রুদ্র একটা শান্ত, নির্মল পরিবেশে এসে গাড়িটা দাঁড় করান। আমি ফট করে উনার কোলে ওঠে বসলাম। রুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিঙ্গেস করলেন কী? আমি উনার গালে টাইট একটা কিস করলাম।
উনি মুচকি হেসে আমার ঠোঁটে উনার ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। উনি আলতো হেসে বললেন,

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৫৮

রিটার্ন গিফট।
হঠাৎই আমার চোখ গেলো রাস্তার ঐ পাশে। রাস্তার ঐ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে আমি ভীষণ অবাক হলাম। আমি ইশারায় রুদ্রকে দেখালাম। উনিও আমার মতো ভীষণ অবাক হয়েছেন। দুজনের মনে একটাই প্রশ্ন এটা কী করে সম্ভব?

পূর্ণিমাতিথি শেষ পর্ব