পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৩

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৩
সাদিয়া আক্তার

সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙে পুনমের। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে রান্নাঘরে উকি মেরে দেখে চাদনী বেগম রান্না করছে।।
— বড় চাচী শুভ সকাল
— শুভ সকাল শাশুড়ি আম্মা,, কাল এতো করে খেতে ডাকলাম উঠলিই না পরে না পেরে তোর খাওয়ার দায়িত্ব মুক্তিকে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
— আমি শুনিনি তোমাদের ডাক,, পুনম ঠোট উল্টে বলল। তা দেখে চাদনী বেগম মুচকি হেসে বলল
— তা আম্মাজান রাতে মুক্তি কিছু খেতে দিয়েছিল??
পুনম মাথা নাড়ে মানে হ‍্যা দিয়েছিল। এর মধ‍্যে কামরুল সাহেবের আওয়াজ আসে তিনি ডাইনিং টেবিলে বসে চায়ের জন‍্য চিল্লাচিল্লি করছে।
— শুরু হইছে তোর চা খোর চাচার চায়ের ফরমায়েশি। এখন কিভাবে দেই আমার হাতে আটা
— আমি বানিয়ে দেই চাচী??
— দিবি দে,,,

চাদনী বেগম বলতেই পুনম চা বানানো শুরু করে।। চা হয়ে যেতেই পুনম কামরুল সাহেবের কাছে নিয়ে তার হাতে দিতে নিলে কেউ ছো মেরে চায়ের কাপটা ছিনতাই করে। পুনম কামরুল সাহেব একসঙ্গে দেখে চন্দ্র চায়ের কাপ নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে চুমুকও দিয়ে ফেলেছে।
— চায়ের কাপ নিলে কেনো চন্দ্র ঐটা আমার,,,
— আমার এটা তুমি আম্মুকে বলো আরেকটা বানিয়ে দিতে।
— এটা আমার ছিলো
— ছিলো!! এখন আমার
দুইজনের ঝগড়ায় পুনম একবার কামরুল সাহেবের দিকে একবার চন্দ্রের দিকে তাকায়। কামরুল সাহেব আবার কিছু বলতে নিলে তাকে পুনম থামায়
— থাক চাচা আমি আপনার জন‍্য আরেক কাপ আনি,,;
— হ‍্যা সেই কর।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কামরুল সাহেব বলল। যেনো চা না খেতে পেরে তার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
পুনম মুচকি হেসে চলে যায় রান্নাঘরে।।
মুক্তি সিড়ি দিয়ে তড়িঘড়ি করে নামছে আজ তার ইম্পরট‍্যান্ট ক্লাস আছে ভার্সিটিতে।
বসেই পুনমের উদ্দেশ্যে বলল — সরি পূর্ণ আজ তোর কোচিং এ ভর্তির সময় তোর সাথে যেতে পারব নারে,,,,
— তাহলে আমি কার সাথে যাব??
অবাক হয়ে পুনম বলল।
কামরুল সাহেব বলল — চন্দ্রের সাথে যাবিরে মা,,
চন্দ্রের সাথে যাওয়ার কথা শুনে ভয়ে পুনম মুখটা চুপসে যায়। চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে চন্দ্রের কোনো হেলদোল নেই সে নিজের মতো খেয়ে চলেছে আশেপাশে তার কোনো হেলদোল নেই।
— আমি চন্দ্র ভাইয়ের সাথে যাব না,,,

পুনম বলতেই চন্দ্র সহ সবার খাওয়া থেমে যায়। পুনমের দিকে তাকায় মুক্তি চাদনী বেগম ভয়ে ভয়ে আছে চন্দ্র কখন না জানি খেপে ওঠে।
— আম্মাজান তুমি চন্দ্রের কোচিং সেন্টারেই ভর্তি হবা ওর সাথেই যাতায়াত করা লাগবে।
কামরুল সাহেবের কথায় পুনম মাথা নিচু করে কাপা স্বরে বলে — আমার গ্রামের বন্ধু উন্মেস এ ভর্তি হবে ওখানেই,,,,
আর বলতে পারে না চন্দ্র বাম পাশে থাকা পানির গ্লাসটা নিচে ছুড়ে মারে। কেপে উঠে থেমে যায় পুনম চন্দ্র হনহনিয়ে পুনমের সামনে যায় হিসহিসিয়ে বলে — আমার কথা ছাড়া একপা বাইরে ফেলবি সেই পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিব। মনে রাখবি এই চন্দ্রের নজর বন্দী তুই।

পুনম শব্দ করে কেদেঁ উঠতেই কামরুল সাহেব চন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পুনমকে বুকে আগলে বলে — তোমার এরকম বিহেবিয়ার চলতে থাকলে আমি পুনমকে সরাতে বাধ‍্য হব চন্দ্র।
চন্দ্র আর কিছু না বলে রক্ত চক্ষু নিয়ে পুনমের দিকে একপলক তাকিয়ে গটগট পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। অর্ধেক সিড়িতে উঠে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল — দশ মিনিটের মধ‍্যে রেডী হতে বলবে।।।
সবাই বুঝল কাকে বলা হয়েছে। কামরুল সাহেব চাদনী বেগমকে ইশারা করে পুনমকে নিয়ে যেতে। চাদনী বেগম পুনমকে নিয়ে যেতেই মুক্তি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের গন্তব্যে চলে যায়।
কামরুল সাহেব চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। এতো ট্রিটমেন্টের পরেও কোনো মতে ছেলেটার রাগ কন্ট্রোলে আসছে না। নাকি আবার আগের বারের মতো হয়েছে।

অতীত ভেবেই কামরুল সাহেবের হাত পা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। চন্দ্র এর মধ‍্যে নিচে নামে গটগট পায়ে হেটে যায় তার কিছুক্ষণ পরেই পুনমকে নিয়ে নামে চাদনী বেগম।
বাইরে বাইকের সাথে হ‍্যালান দিয়ে দাড়িয়ে আছে চন্দ্র। হাতে ফোন পুনম আসার আভাস পেয়েই চোখ তুলে তাকিয়ে ঢোক গিলে পুনরায় নজর নামায়।
সাদা সালোয়ার কামিজে পুনমকে বেশ লাগছে। বরাবরের মতো মাথায় ঘোমটা। কাধে ব‍্যাগ নিয়ে চাদনী বেগমের হাত ধরে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।
পুনম সামনে আসতে চন্দ্র বাইকে বসে স্টার্ট দেয়। চাদনী বেগম ইশারা করে পুনমকে চন্দ্রের পিছনে বসতে বলে পুনম বসে পড়ে দূরত্ব বজায় রেখে।
— আস্তে চালিও বাইক আব্বা,,
চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে সাই সাই করে চলে যায়। পুনম খামচে ধরে সীট কভার। সেটা দেখে চন্দ্রের মেজাজ একদম তুঙ্গে ওঠে তবে কিছু বলে না আজকে অনেক হয়েছে এর বেশী নিতে পারবেনা তার “” জোহরা””
সাহরান “স কোচিং সেন্টার।
এর সামনে থামতেই পুনম দ্রুত নেমে পরে।। চন্দ্র বাইক লক করে গটগট পায়ে ভিতরে যায় পুনম চন্দ্রের যাওয়ার দিকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চন্দ্রের পিছু যায়।
চন্দ্র সব ফর্মালিটি পূরণ করে পুনমকে তার ক্লাস দেখিয়ে দেয়।
যথারীতি সময় ক্লাস শুরু হয়েছে ক্লাসে বেশ ছাত্র / ছাত্রী। যেনো এরা একটা দিনো ওয়েষ্ট করতে চায়না।
ক্লাসে উপস্থিত হয় স‍্যার।

— গুড মর্নিং স্টুডেন্টস
সবাই একত্রে বলে — গুড মর্নিং স‍্যার,,,
— ওকে স্টুডেন্টস আমি আপনাদের ইংরেজি শিক্ষক মুহিব মাহমুদ। আজ যেহুতু আপনাদের প্রথম ক্লাস তাই পরিচিতি মাধ্যমে শুরু করি।
মুহিব বলতে সবাই একে এক নিজেদের নাম পরিচয় বলতে শুরু করল। চার সাড়ির পর আসে পুনমের পালা।
— জোহরা তাবাচ্ছুম পুনম
— নাইস নেইম কোথায় থাক তুমি??
পুনম নজর একপল তুলে আবার ঝুকিয়ে বলল সে কোথায় থাকে।
— জোহরা নামের অর্থ জানো তুমি।
পুনম মাথা নাড়ে সে জানে না। পুনম মাথা নাড়তে বিরক্ত হয় মুহিব সে আরো কিছুক্ষণ ঐ কোকিল কন্ঠ শুনতে চাইছিল। তবে হাড় মানল না মুহিব আবার বলল — তোমার নামের অর্থ হলো সফল বা বিজয়ী
তখনই পিছন থেকে কারো গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনা যায়।

— আপনাকে এখানে নামের ব‍্যাখ‍্যা দিতে রাখা হয়নি মি. মুহিব। যেই কাজের জন‍্য রাখা হয়েছে সেটার দিকেই ধ‍্যান দেন আর যদি না পারেন তাহলে ইয়‍্যু ক‍্যান কুইট ইয়‍্যুর জব।
চাকরী ছাড়ার কথা শুনে আতকে ওঠে মুহিব। মধ‍্যবিত্ত ফ‍্যামিলির ছেলে সে। এই কোচিং সেন্টারে চাকরী করে মোটা অংকের বেতন পায় যা দিয়ে ঢাকা শহরের মতো শহরে থাকা খাওয়া হয়েও মাস শেষে কিছু টাকা বাড়িতে পাঠায়।
মুহিব কিছু বলল না।
চন্দ্র পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — ছুটি হলে অপেক্ষা করবি একা একা বের হবি না নিয়ে যাব।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১২

— স‍্যার পুনম কি আপনার চেনা??
— নিজের কাজ মনোযোগ দিয়ে করেন। বলেই চলে যায় চন্দ্র নতুন স্টুডেন্টসরা অবাক হয় তবে যারা চন্দ্র বিষয়ে জানে তারা অবাক না হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
— ইশশ কি মারাত্মক সুদর্শন এই লোক নামেও চন্দ্র কামেও চন্দ্র একদম চাদঁমুখী,, ক্রাশ খাইলাম আবারও
পুনমের পাশে বসা মেয়েটা বলতেই পুনম বড়বড় চোখ করে তাকায় এই লোকের উপর ক্রাশ কিভাবে খায় মেয়েরা। এই লোকের উপর ক্রাশ খাওয়া মানে আইককা আলা বাশ খাওয়া।
— কি পাইছে মেয়েরা এই লোকের উপর আল্লাহ্ জানে,, বিড়বিড় করে বলে পুনম। বলার সময় নাক মুখ কুচকে নেয় যেনো কোনো তিতা করলা তার মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছে জোর জবরদস্তি।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৪