পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৪
সাদিয়া আক্তার
সব সন্তান বাবা মায়ের কাছে সমান হলেও কিছু কিছু সন্তানের জন্য স্পেসিফিক ভালোবাসা থাকে আবার কেউ কেউ বাবা মায়ের কাছে নিজের আলাদা জায়গা করে নেয়।
পারভেজ সাহেবের জীবনে তেমনি হচ্ছে পুনম। বাবার মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে সে। প্রতিদিন সকালে পারভেজ সাহেবের জৈন খাওয়ার অভ্যাস ছোট থেকেই। জৈন খেয়ে একগ্লাস পানি খেয়েই নামাজে যেতো সে।
পুনম প্রতিদিন বাবার হাতে একচামচ জৈন ও একগ্লাস পানি এগিয়ে দিতো। শীতকালে চাদরটাও পেচিয়ে দিতো এইটুকু যত্নই পিতা হিসেবে তার চোখে অনেক আজ দুইদিন হচ্ছে পুনম বাড়িতে নেই পারভেজ সাহেবের মনে হচ্ছে কত বছর ধরে মেয়েটাকে সে দেখেনা।
বমির শব্দে স্তম্বিত ফিরে পারভেজ সাহেব গতকাল থেকে রোজিনা বেগমের শরীরটা খারাপ জ্বর সাথে বমি।।
পারভেজ সাহেব রান্নাঘরে যেয়ে রোজিনা বেগমের পিঠে হাত বুলায়।
— এই শরীরে রান্নাঘরে এসেছো কেনো??
— সকাল থেকে তোমরা না খাওয়া নিশাটাও কলেজে গেছে না খেয়ে।
— নিশা তো এই বছর প্রথম বর্ষে এখন ভালো মতো ক্লাসও হচ্ছে না তাহলে আজ না গেলেই পারতো।
পারভেজ সাহেবের কথা নজর লুকায় রোজিনা বেগম। সে কিভাবে পারভেজ সাহেবকে বলবে যে নিশাকে তিনি আজ যেতে বারন করেছিল এবং একটু সাহায্য করতে বলেছিল নিশা মুখের উপর না করে চলে গিয়েছে।। পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগমকে ঘরে নিয়ে বসাতেই পুনমের কল আসে।
— আসসালামু আলাইকুম আব্বু কেমন আছো?? আম্মু কেমন আছে তার শরীর এখন কেমন??
পারভেজ সাহেব আড়চোখে রোজিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল — আমি আলহামদুলিল্লাহ্ তবে আাম্মু একটু অসুস্থ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— আব্বু আজকে দোকানে যেও না। আমিও নেই যে আম্মুকে একটু হেল্প করব এই জন্যই আমি ঢাকায় আসতে চাইনি। এখন চেয়েও তোমাদের পাশে থাকতে পারছিনা।
মন খারাপ করে বলল পুনম
— তুমি নিজের পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করো। আমরা ঠিক ম্যানেজ করে নিব।
পুনম মাথা নাড়িয়ে বলল — আম্মুর সাথে কথা বলব
— হ্যা নাও। রোজিনা বেগমের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দেয় রোজিনা বেগমের নজরে আসে মাথায় ঘোমটা দেয়া নম্র পুনম। মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে রোজিনা বেগম পুনম সালাম দিতে তার ধ্যান ভাঙ্গে সালামের উত্তর নিয়ে আরো অনেক কথা বলে পুনম রোজিনা বেগমের হালচাল জিজ্ঞাসা করে।
পারভেজ সাহেব লুঙ্গি গেঞ্জি বদলে প্যান্ট শার্ট পরে নেয়। পুনমের সাথে কথা বলে রোজিনা বেগমের এখন বেশ ভালো লাগছে। রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল
— কোথাও যাবে তুমি??
— হুম সাথে তুমিও বোরকা পরে নাও ডাক্তারের কাছে যাব।
রোজিনা বেগম চুপচাপ বোরকা পরে নেয়। রেডি হয়ে দুজনে ডাক্তারের কাছে যায়।
বাবা মায়ের সাথে কথা শেষ করে পুনম মন খারাপ করে বসে আছে। তার এখানে মন টিকছে না একটু ক্লাসে সবাই কেমন করে তাকায় আজকে ক্লাস না থাকায় বাসাতেই আছে এই টাইমে পুনম তবে চাদনী বেগম বাদে আর কেউ নেই।
পুনম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচে নামে। কাউকে না পেয়ে চাচীর ঘরে উকি দিয়ে দেখে চাদনী বেগম চোখ বন্ধ করে কেমন ছটফট করছে। পুনম তা দেখে দ্রুত পায়ে ঘরে ঢোকে দেখে চাদনী বেগম বিছানায় ছটফট করছে।
— কি হয়েছে চাচী??
আধোআধো চোখ মেলে তাকায় চাদনী বেগম পুনমকে দেখে অস্ফুট স্বরে বলল — মাথা অনেক ব্যাথা করছে রে পূর্ণ মা,,,
— তোমার কোনো ঔষধ আছে ব্যাথার??
— হ্যা ঐ ড্রয়েরে
ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার দেখিয়ে বলল। পুনম দ্রুত ড্রয়ার থেকে মেডিসিন বক্স বের করে চাদনী বেগমকে নাম জিজ্ঞাসা করে সে নাম বলতে তাকে উঠিয়ে ঔষধ খাইয়ে বসে বসে হালকা করে চুল টানতে থাকে ও অন্য হাত দিয়ে মাথা ম্যাসাজ করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরামে চোখ মুদে আসে চাদনী বেগমের মিনিট পাচেঁর মধ্যে ঘুমিয়েও যায়।
চাদনী বেগম ঘুমাতেই পুনম ধীর পায়ে ঘর থেকে বের হয় দরজা চাপিয়ে।
রান্নাঘরে যায় দেখতে দুপুরের রান্না হয়েছে কিনা?? গিয়ে দেখে দুই পদ তরকারি রান্না আছে তবে ভাতটা রান্না নেই পুনম ঘড়ির দিকে তাকায়।।
বেলা বারোটা বাজে একটু পরেই মুক্তি এসে পরবে তখন নায়হ রাইস কুকারে ভাত চড়িয়ে দিবে।
পুনম তো কিছুই পারে না এসব। রোজিনা বেগমকে এটা সেটা এগিয়ে দিলেও কখনও রান্না করা হয়নি। আর সেখানে না থেকে আবারও চাচীর ঘরে এসে তার মাথায় হাত বুলায়।
বিছানায় মরার মতো পড়ে আছে রুপশা। লিমন বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছে। একটুপরে ঘরে ঢুকে রুপশাকে জাগায়।
— উঠে রান্না করো আ”ম হাঙ্গরী,,,
লিমনের কথা শুনে কোনো রকম উঠে বসে রুপশা কাপা স্বরে বলে — আমার সারা শরীর ব্যাথা
— রানী বানাতে চেয়েছিলাম বাট তোর মতো প্রষ্টিটিউটের সেটা পছন্দ হলো না। যেই কোনো পুরুষ নজরে পরল ওমনি স্লাট গিরি শুরু করে দিলি,,
— আমি কিচ্ছু করিনি বিশ্বাস করো।
— তাহলে ঐ ড্রাইভার বাসায় কেনো আসবে?? আজ পযর্ন্ত কোনো ড্রাইভারতো আমার বাসায় আসলো না।
— ঐ লোকটা কেনো এসেছে আমি জানি না,,,,
রুপশার কথা শুনে লিমন বাকা হেসে বলল — তোমার কি মনে হয় তোমার পাষ্ট আমি জানি না কলেজে থাকাকালীন যে সকল ছেলেদের নিজের আঙ্গুলের ইশারায় নাচিয়েছো তা আমি জানি না বিয়ের আগের সকল খোঁজ খবর আমার কানে এসেছে।
লিমনের কথা শুনে রুপশা অবাক হয় তার বিয়ের আগের জীবন সম্পর্কে লিমন কিভাবে জানল। এই বিষয়ে কেউ জানে না তার পরিবারের শুধু তার দুই বান্ধবী ছাড়া।
রুপশাকে মনে প্রানে ভাবতে দেখে লিমন ঝুকে রুপশার কানে কানে বলে — ভাবছ কিভাবে জানতে পেরেছি,,,
মাথা নাড়ায় রুপশা। লিমন সেভাবেই বলল — টপ সিক্রেট মাই লাভ। গোট টু দ্যা কিচেন নাউ
শেষের কথাটা বেশ জোরেই বলল।
রুপশা কেপে ওঠে সেই কথায়। দ্রু বিছানা থেকে নেমে রান্নাঘরে যেতে নিলে পিছন থেকে ডাকে লিমন
— কাল ছোট মাছ এনেছিলাম বুয়া মনে হয় কেটে রাখতে পারেনি। সেগুলো বের করে কেটে ছোট মাছের চচ্চরি করোতো।
লিমনের কথা শুনে এবার ঢোক গিলল রুপশা। তবে কিছু না বলে চলে যায় ফ্রিজ থেকে মাছের প্যাকের বের করে ভিজিয়ে রাখে। অন্যান্য সবজি কাটতে শুরু করে।
ঘরে বসে লিমন ভেবে চলে কিছু কথা।
বাবা মায়ের কথায় প্রথম বার বিয়ে করেছিল লিমন স্বপ্ন সাজিয়েছিল একটা সংসারের। বিয়ের পর স্ত্রীকে সকল প্রকার স্বাধীনতা দিয়েছিল কোনো কিছু কমতি রাখেনি তবে ঐ যে বলেনা যে পাখি ঘর বোঝে না মন বোঝে না ঘুরে বেড়ায় বন বাদারে,, ভোলা মন মিছে কেনো মনের খাচায় রাখিস তারে।
বিয়ের কয়েকদিন যেতে সেই নারী পালিয়ে গেলো তার ড্রাইভারের সাথে।।
লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গিয়েছিল লিমনের। মানুষ হাসাহাসি করত না পেরে ট্রান্সফার নেয় লিমন। নিজ জেলা ছেড়ে চলে আসে ইট পাথরের শহরে ঢাকা শহরে। সেখানে এসে রুপশাকে দেখে চন্দ্রের মাধ্যমে।
রুপশার খালার ননদের ননদের ছেলে ছিলো চন্দ্রের ক্লাস মেট। লিমনের জুনিয়র অফিসার ছিলো তার স্বামী। তখন চন্দ্রের সাথে আলাপ হয় আস্তে ধীরে বেশ ভালো পরিচয় হয়। তার মাধ্যমেই রুপশার খবর জানতে পারে।
আগুন সুন্দরী রুপশার ছবি দেখেই পছন্দ হয় লিমনের। সে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে চাইলে চন্দ্র তাকে রুপশার এটু জেড বলে।
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৩
সাথে এও বলে রূপশাকে একটু শাষনে রাখলে সে অবশ্যই ঠিক হবে। তার চাচীর অতিরিক্ত আদরে রুপশা আর নিশা বেপরোয়া হয়ে গেছে তবে তারা সঠিকভাবে প্রদর্শক ও শাষন পেলে ঠিক হবে।
লিমন এমনিতে ঘর পোড়া গরু। সে সিদুরে মেঘ দেখল ভয় তো পাবেই তাই চন্দ্রের কথা অনুযায়ী স্ট্রিক্ট হয়। এবং ধীরে ধীরে পুরোপুরি রুপশাকে নিজের আয়ত্বে আনে। প্রথমে তাদের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে। তারপর লিমনের নিয়ম বাধা জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা শুরু করে।
লিমন মানে এবং জানে মানুষ অভ্যাসের দাস। রুপশা একবার এই জীবনে অভ্যাস হয়ে গেলে আর কোনোদিন তা ছাড়তে পারবে না।
