পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৭

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৭
সাদিয়া আক্তার

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের বাবা মা হওয়া আশীর্বাদ স্বরুপ। তবে একসময় সেই আশীর্বাদটা অভিশাপে পরিনত হয়ে যায় । পারভেজ সাহেবের এখন সেটাই মনে হচ্ছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে মাথা তুলে সবার দিকে তাকাতেও পারছে না।
— কি হলো আম্মু নিশা এটা কি বলছে এগুলো কি সত‍্যি??
রুপশার প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না রোজিনা বেগম সে মাথা নিচু করে রাখে।
— ছিঃ ছিঃ নিজের মেয়ের বিয়ে হয়েছে নাতী নাতনি পালার বয়সে তোমরা এখন,,,,
বলতে পারেনা আর তখনই পুনম বলে — তো কি হয়েছে আপা আব্বু আম্মু তো কোনো দোষ করেননি সন্তান আল্লাহর দান।

— পুনম তুই ছোট মানুষ তুই কিছুই বলবি বা বুঝবি না।
— কেনো আপা নিশা যদি বলতে বা বুঝতে পারে আমি কেনো পারব না। অথচ নিশার থেকে আমি দুই বছরের বড়। শোনো আপা আমাদের বাবা মা যা করেছে তা ভুল না তারা কোনো পাপ করেনি আর মনে করোতো ছোট্ট একটা ভাই অথবা বোন হলেও ক্ষতি কি??
রুপশা পুনমের কথায় চুপ থাকে। তবে নিশা ফুসে ওঠে — তোমাদের আপত্তি না থাকলেও আমার আছে আমি কক্ষণ এই পরিস্থিতিতে থাকতে পারব না গ্রামে সবাই ছিছি করবে। আমি আমার বন্ধুদের সামনে দাড়াব কিভাবে?? ভেবে দেখেছো??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— তাহলে দাড়াস না বন্ধুদের আর গ্রামের লোকদের কথা বলছিস আব্বু আম্মু যদি গ্রামেই না যায় তাহলেই তো সব সমাধান আর তুই যদি আব্বু আম্মুর সাথে থাকতে না চাস তাহলে গ্রামের যে লেডিস হোস্টেলটা আছে সেখাই থাকিস।। তোর ভরন পোষণের টাকা প্রতি মাসে চলে যাবে।
পুনমের ভাবলেসহীন কথায় সবাই চমকে ওঠে পারভেজ সাহেব সবার দিকে তাকায় লিমনের দিকে চোখ যেতেই আবার মাথা নিচু করে নেয়। রোজিনা বেগমের চোখে অনুতাপের পানি ঝড়ে পরে।
— হ‍্যা হ‍্যা তাই করব আমি কখনও ওনাদের সাথে থাকব না এই অসম্মান কোনো দিনও মেনে নিতে পারব না। বলেই নিশা চলে যায়। রুপশা লিমনের দিকে তাকায় দেখে লিমন কেমন ভাবলেস ভাবে দাড়িয়ে আছে।
— বড় আম্মু খিদে পেয়েছে খেতে দিবেন প্লিজ,,,

লিমন কথাটা বলে পরিবেশ হালকা করতে চায়। তবে এর মধ‍্যেই নিশা তার ব‍্যাগ নিয়ে বের হয় পারভেজ সাহেব ও রোজিনা বেগমের দিকে ঘৃণার দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে চলে যায়।।
এর মধ‍্যে কামরুল সাহেব ও মিরাজ সাহেব এগিয়ে আসে দুই ভাই পারভেজ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বলে — অভিনন্দন ভাই,,,,
পারভেজ সাহেব ছলছল চোখে তাকায় পুরুষ মানুষ দেখেই এতোক্ষণ অশ্রু গড়িয়ে পরেনি। পারভেজ সাহেব তাদের ঝাপটে ধরে বলে — ধন্যবাদ ভাই,,,
— কিসের ধন‍্যবাদ ট্রিট চাই ট্রিট শালা বাবু বাবা হচ্ছো,,,,
রমিজ সাহেবের কথায় পরিবেশ হালকা হয়। পারভেজ সাহেব পুনমের দিকে তাকায় তার ছোট্ট চুপচাপ থাকা মেয়েটা আজ বাবা মায়ের পক্ষ নিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।।
— আম্মা কি তার ছেলের উপর রেগে আছে,,??

পুনমের সামনে দাড়িয়ে বলে পারভেজ সাহেব। পুনম ঠোট উল্টে বলে — উহু খুশী হয়েছি আরো খুশী হব একটা ভাই হলে তাই না আপা??
রুপশা এগিয়ে এসে মাথা নাড়ায়। পারভেজ সাহেব দুই মেয়েকে ঝাপটে ধরে রুপশা বাবা বুকে মাথা রেখে কেদেঁ ওঠে বুঝ হওয়ার পর তার বাবার সাথে দূরত্ববেড়ে যায় আজ সেটাই ঘুচে গেলো। মনেমনে ধন‍্যবাদ জানায় ছোট্ট ভাই অথবা বোনকে।।
মূহুর্ত্তের মধ‍্যে পরিবেশ হালকা হয় চন্দ্র একদৃষ্টিতে দেখছে তার জোহরাকে তার জোহরা বুঝি এতোটা বড় হয়ে গেলো।
— বড় হয়ে গেছিস তুই এখন আর দূরে রেখে লাভ নেই যত আমার কাছে থাকবি ততই আমার ভালোবাসা বোঝাতে সহজ হবে।।

আজ লিমনরা এখানেই থাকবে। কামরুল সাহেব যখন লিমনকে থাকতে বলে এককথায় লিমন রাজী হবে রুপশা ভাবেনি।
তবে অনেক দিন পর তার চোখে মুখে খুশীর ঝিলিক দেখা যায়।
মুক্তির ঘরে পাচঁবোনের জমিয়ে আড্ডার আসর বসে।
রুপশা খুব একটা জানেও না এদের ব‍্যাপারে তবে মুক্তি ঝিনুক রিমি পুনম কেউই সেটা বুঝতে দিচ্ছে না। হঠাৎই রিমি বলে উঠল — এই পূর্ণ তোর ইউটিউব চ‍্যানেলের কি খবর??
— রিমু সেটা তো আমি জানি না,, মুক্তি আপুর কাছে আছে।
— উহু আমার কাছে নেই
মুক্তির কথায় সবাই অবাক হয় তাহলে কার কাছে আছে। সবার অবাকতার মুখ দেখে মুক্তি রহস‍্য হাসে। রহস্য ভঙ্গিতে বলে — সারপ্রাইজ সিস্টার গন”স
— পুনম ইউটিউব চ‍্যানেল চালায় কই জানিনা তো??
— হ‍্যা রুপশা আপু পুনম তো অনেক সুন্দর আর্ট করে সেই জন‍্যই মুক্তি আপু খুলে দিয়েছে ঢাকায় আসার পরপরই,,,
রুপশা অবাক চোখে তাকায় পুনমের দিকে। মেয়েটা গুনী সেটা কেউ জানে না তারা। অথচ আজ বোনের গুনের খবর অন‍্য ফুপাতো বোনের কাছ থেকে শুনতে হয়।।

ছাদে আড্ডার আসর বসেছে লিমন আজ শিহাব রিশানের সাথে প্রথম পরিচয় হলেও ওদের ব‍্যবহারে তা টের পাচ্ছে না ছেলেদের এই একটা গুন বিশ্ব সেরা তারা যেখানেই যাক প্রথম দেখাতেই এমন ব‍্যবহার করে যেনো অনেক দিন ধরেই চিনে।
— তো চন্দ্র মিয়া আপনার প্রেয়সীর কি খবর,,,??
— যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পড়শির ঘুম নাই,, আমাদের চন্দ্র ভাই যারে ভালোবাসে তারে ছাড়া দুনিয়ার সবাই জানে আমাদের চন্দ্র তার কান্তাকে ভালোবাসে,,
রিশানের কথায় লিমন শিহাব উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। চন্দ্র শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলে
— যার বিয়ে সেও জানবে সময় হলেই,, ভর্তি পরীক্ষাটা দিক,,
ভর্তি পরীক্ষার কথা শুনেই শিহাব চেহারা গম্ভীর করে ফেলল — রিশান চন্দ্র তোরা এই একটা বিষয়ে ঠিক করছিস না আমার বোনেদের নিজের ইচ্ছে মতো কলেজে বা ভার্সিটিতে পড়ার অধিকার আছে,,
চন্দ্র হ‍্যালান দেয় দেয়ালে পূর্ণ চাদের দিকে তাকিয়ে বলে — আঠারো বছর বয়সটা আবেগের বয়স শিহাব নতুন কলেজ নতুন মানুষের সাথে মিশে যদি কাউকে মনে ধরে। সেই ভয়ে বলতে পারিস ওকে নিয়ে একপ্রকার ভয়েই আছি আর যাই হোক প্রিয়তমার চোখে অন‍্য কারো জন‍্য ভালোবাসা বা মুগ্ধতা কোনোটাই দেখতে পারব না। আর ওকেও কোনো দিন ছাড়তেও পারব না। আমাদের ভার্সিটিতে থাকবে আমি সব বিপদ আপদের থেকে রক্ষা করতে পারব।

মেইন পয়েন্ট হলো পুনম কেমন তোরা জানিস র‍্যাগ অরহর চলে ভার্সিটিতে ও সেগুলো সামাল দিতে পারবে না
শিহাব চুপ থাকে কি বলবে ভেবে পায়না কাতর স্বরে বলা চন্দ্রের কথার পিছে কিছু খুজে পায় না। লিমন বলল — একজন কালো মেয়ের মধ‍্যে কি পেয়েছো??
লিমনের কথা শুনে চন্দ্রর রাগ উঠে কপালের শিরা শক্ত হয়। শিহাব রিশান একে অপরের দিকে তাকায় তারা ভয় পায় এখনই না ফেটে পরে চন্দ্র। তবে তাদের অবাক করে দিয়ে চন্দ্র শান্ত স্বরে বলল — কখনও উজ্বল চাদ দেখেছেন লিমন ভাই??
মাথা নাড়ে লিমন দেখেছে। চন্দ্র আবার বলে

— পুরো আকাশ অমাবস‍্যায় যখন ডুবে তখন চন্দ্র আকাশে না দেখা গেলেও চিকন করে তার প্রতিফলন গটে। আর অমাবস‍্যার পরপরই কিন্তু উজ্বল চন্দ্রের দেখা যায়। অমাস‍্যার পরপরই চন্দ্রের আসল সৌন্দর্য দেখা যায় ও আমার জীবনে সেরকমই আমার ঘোর অমানিষায় ডুবে যাওয়া জীবনে ঐ কালো উহু শ‍্যামবর্ণ মেয়ের আগমনেই উজ্বল হয়েছে।। ও আমার ড্রাগ লিমন ভাই যা কৃত্রিম ড্রাগের থেকেও নেশাক্ত,,
— তাই বলে এতোটা অবসেসড,,,
আবারও হাসে চন্দ্র,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৬

— গাজা হেরোইন ইয়াবা এই নেশাদ্রব‍্য গুলোর রঙ যাচাই না করেই তো মানুষ এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়। তাহলে মানুষের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের বিচার করে কেনো???

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৮