পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৯

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৯
সাদিয়া আক্তার

নতুন বাসায় এসেছে পুনমরা। রোজিনা বেগম পুনম অবাক চোখে চারিদিকে তাকিয়ে দেখছে বেশ বিলাস বহুল ফ্ল‍‍্যাট। হাউজিং এরিয়ায় এরকম ফ্ল‍্যাট অবাকের বিষয় না তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ফ্ল‍্যাটটা ডুপ্লেক্স।
— হ‍্যা গো রুপশার আব্বু এতো বড় ফ্ল‍্যাট ভাড়াও তো অনেক বেশী হবে তাইনা এখন এতো বড় ফ্ল‍্যাট নেয়ার কি দরকার।
রোজিনা বেগমের কথায় পারভেজ সাহেব তার দিকে তাকায়। উদ্বিগ্নতা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এতো টাকা তার স্বামী কোথা থেকে পাবে। তবে পারভেজ সাহেব কিছু বলল না হাসল শুধু।
— আব্বু তুমি ফ্ল‍‍্যাটটা ছেড়ে দাও আমরা মানুষ তিনজন ছোট্ট একটা ফ্ল‍্যাটেই হয়ে যাবে শুধু শুধু এতো টাকা খরচ করার কি দরকার।

পারভেজ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তার স্ত্রী সন্তানের কাছে কথাটা লুকাতে হচ্ছে। সে চাইলে রোজিনাকে সত‍্যি কথাটা বলে দিতে পারে যে এই ফ্ল‍্যাট পুরোটাই আমাদের তোমার স্বামীর কষ্টের অর্জিত টাকায় করা তবে রোজিনা কতটুকু ঠিক হয়েছে সে জানে না। তাই বলতেও দ্বিধা কাজ করছে।
পারভেজ সাহেবের ভাবনার মধ‍্যেই রোজিনা বেগমের কল আসে। রোজিনা বেগম কল লিষ্ট দেখে তার বোন রুবি ফোন দিয়েছে রোজিনা কল রিসিভ করতেই রুবি গমগমে স্বরে বলল
— এগুলো কি শুনছি আপা কথা গুলো কি সত‍্যি??
রোজিনা ভয় পায় আমতা করে কিছু বলতে নিলে বলতে দেয় না রুবি — তোমরা এই বয়সে এই কাজগুলা কিভাবে করতে পারলা। মান সম্মানের ভয় নাই তোমাগো হ‍্যা। ভাই তো বেশ রেগে আছে তোমার উপর। ভাগ‍্যিস গ্রামের লোক কেউ জানে না আমি তো নিশার থেকে শুনলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার কথাটা তো শুন রুবি,,,,
— কি শুনব হ‍্যা তুমি আর আমাকে ফোন দিবা না বুইড়া বয়সে এখন বাপ হওয়ার শখ জাগছে।
আরো অনেক কথা শুনিয়ে ফোন কাটল রুবি। রোজিনা বেগম শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে কানে শুনে গেলো কিছু বলল না। পারভেজ সাহেব ও এবার কোনো জবাব দিলো না তবে ফোনের অপাশে কথাগুলো কতটা তিক্ত হতে পারে তা আন্দাজ করে নিলো। পুনম বাবার দিকে তাকায় মায়ের কাছে যেতে চায় তবে পারভেজ সাহেব আটকায়। এর মধ‍্যে কলিং বেল বেজে ওঠে।
পারভেজ সাহেব পুনমকে ইশারা করে দরজা খুলে দিতে।
পুনম দরজা খুলে দেখে চন্দ্র বাদে বড় চাচারা সবাই এসেছে হাতে খাবারের বক্স।

— কিরে নিজের বাসায় উঠেই দেখছি আমাদের ভুলে গেছিস,,,
ঘরের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল কামরুল সাহেব।
তবে ভিতরে ঢুকে রোজিনা বেগমকে কাদতে দেখে ভরকে গেলো।
— কি হয়েছে পারভেজ ভাই এভাবে কাদছে কেনো রোজিনা,,,
চাদনী বেগম দৌড়ে রোজিনা বেগমের সামনে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে রোজিনা বেগমের ও মনে হয় অনেকক্ষণ ধরে এরকম একটা আশ্রয়ের দরকার ছিল তাই তো তাকে ঝাপটে ধরে।
— এতোদিন আমি এতকিছু কাদের জন‍্য করেছি ভাবী বলতে পারো। বাবা মা মারা যাওয়ার পর ভাই বোনকে আকড়ে ধরে ছিলাম আজ তারাই আমাকে পর করেদিল।
এর বিপরীতে কি বলবেন ভেবে পেলো না চাদনী বেগম তবে চুপচাপ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কামরুল সাহেবের থেকে খাবারের বক্স নিয়ে মুক্তি ও পুনম খাবার সাজিয়ে ডাকে সবাইকে

— চল খেতে চল এই অবস্থায় ঠিক সময় খাওয়া দাওয়া খুব জরুরি
— খাব না ভাবী
— তা বললে তো হবে না রোজিনা তবে জানিস আমরা বিপদে পড়েই আপন পরের তফাৎ করতে পারি কে আমাদের বিপদের সঙ্গী তা সহজেই চিনতে পারি তাই ভেঙে না পরে শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে উচিৎ।
চাদনী বেগমের কথা কাজে দিলো রোজিনা বেগম চোখ মুখ মুছে চাদনী বেগমের সাথে খাওয়ার টেবিলের দিকে যায়।
— বড় চাচা আব্বুকে বল না এতো বড় ফ্ল‍্যাটের আমাদের দরকার নেই,,,
পুনমের কথা শুনে কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেবের দিকে তাকাতেই সে মাথা নাড়ে এবং ইশারা করে বলে যে কিছু না বলতে। কামরুল সাহেব সম্মতি জানিয়ে পুনমকে বলল — কেনো আম্মা এই বাসায় ভালো লাগছে না আমাদের বাসায় পরের বাড়িতে আছো প্রতিদিন আমার আম্মার হাতে এককাপ চা খাওয়া যাবে,,
— ভালো তবে বড় চাচা ভাড়াটা বেশী হবে মনে হয়।
পুনমের সাথে তাল মিলিয়ে রোজিনা বেগমও বললেন — পুনম ঠিক বলছে ভাইজান এতো টাকা খরচ করার কোনো মানে হয়,,,

— যদি বলি একটাকাও তোমাদের দিতে হবে না তাহলে??
কামরুল সাহেবের কথা শুনে পুনম রোজিনা অবাক চোখে তার দিকে তাকায়।
কামরুল সাহেব সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল — খাওয়া শেষ কর সব বলব
কেউ আর কোনো কথা বলে না তবে পারভেজ সাহেব বড় ভাইকে চোখের ইশারায় না করে কিছু বলতে। কামরুল সাহেব তো ঘাড় ত‍্যাড়া চন্দ্রের বাপ সে বুঝি কোনো কথা শুনে।।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোফায় বসে কামরুল সাহেব তার পাশে পারভেজ সাহেব সামনের ডাবল সোফায় বাকী চারজন।
— পুনম মা এদিকে আয়,,,,

পুনম উঠে যেতেই দুই ভাই দুইপাশে সরে পুনমকে মাঝখানে বসার জায়গা করে দিল। পুনম সেখানে বসলে কামরুল সাহেব পুনমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল — তোমার মনে আছে তোমার আব্বু তোমাদের তিনবোনের জন‍্য তিনটা দোকানের টাকা দিয়ে ফিক্স ডিপোজিট করে রেখেছে
পুনম মাথা নাড়ায়। কামরুল সাহেব আবারও বলল — মনে আছে রুপশার বিয়ের পর তোমাদের আব্বু বলেছিল ব‍্যবসায় একটু লস খেয়েছে। সেটা পুষিয়ে নেয়ার জন‍্য টাকার প্রয়োজন।
— হ‍্যা তখন আমি আমার ফিক্স ডিপোজিট ভেঙ্গে আব্বুকে টাকা দিয়েছিলাম,,
কামরুল সাহেব হেসে বলে — এটা সেই টাকার জায়গা। অনেক দিন ধরেই আমি নিজের একটা বাসস্থান করার চিন্তা ভাবনা করছিলাম। তাই আরো দুই বছর আগে আমাদের বাড়ির জায়গাটা কিনি। তখন তোমার আব্বুকে বললে সেও রাজী হয়ে যায় বেশ সস্তা দামেই কিনেছিলাম জায়গা গুলো ভাবিনি এতো দ্রুত এর দাম বেড়ে যাবে। আর এটা হাউজিং এরিয়ায় পরিনত হবে। তবে আমরা বাড়ির কাজটাও একসাথেই শুরু করি সেটা পারভেজের একটু একটু জমানো টাকায়। দোকানের টাকা দিয়েই ওর সংসার চলে যেতো তবে উপরের রুমের ভাড়া গুলো জমানো ছিলো বেশ দীর্ঘ দিনের আর বাকিটা লোন নিয়ে করেছে।

— এতো টাকার লোন কিভাবে দিবে সেই চিন্তা করেছ তুমি??
— ভয় নেই রোজিনা উপরের দুইটা ফ্ল‍্যাটের ভাড়া নিচের দুইটা ফ্ল‍্যাটের ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লোনের টাকা শোধ হবে।। আর পারভেজ ব‍্যাবসায়ী মানুষ কাপড়ের ব‍্যবসাটা নাহয় ঢাকায় আবার শুরু করল। গ্রামে বিশ্বস্ত লোক আমিই ঠিক করে দিব।
কামরুল সাহেবের কথায় আর কেউ কিছু বলল না। কেউ জিজ্ঞাসা ও করল না বাড়িটা কার নামে। পারভেজ সাহেব যেনো এই প্রশ্ন না করায় সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। সবাই এবার অন‍্য কথায় চলে গেলো পুনমকে নিয়ে মুক্তি চলে গেলো ওর ঘর দেখতে।।

পুরো ভার্সিটি জুড়ে আজ হলুদের সমারহ বসন্তবরণ উৎসবে মেতে আছে ভার্সিটি। নাচ গান হইহুল্লোরে মেতে আছে সবাই এর মধ‍্যে ভরা ক‍্যাম্পাসের মাঝখানে দাড়িয়ে চন্দ্রের দিকে ফুল বাড়িয়ে হাটু গেড়ে বসে একটা অনিন্দ‍্য রূপশী কন‍্যা।
চারিদিক থেকে বিভিন্ন ক্রেজ আসতেছে। শিহাব রিশান ও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কি বলে চন্দ্র সেটা শোনার জন‍্য।
— আজকে এই বসন্তের দিনের একমুঠো ভালোবাসার বিনিময়ে তুমি কি আমাকে একমুঠো ভালোবাসা ফেরত দিবে,,,??

— আপনার ভালোবাসা নেওয়ারই প্রয়োজন নাই আরতো ফেরত দেয়া দূরের কথা
চন্দ্রের কথা শুনে পুরো ভার্সিটি জুড়ে হাসির রোল পরে গেলো মেয়েটা মনে খারাপ করেও নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলল — আমি তোমাকে ভালোবাসি,,
— কারেকশন মিস ইটস আপনি হবে,, একজন অচেনা অজানা তারউপর নিজের থেকে ছোট মেয়ের থেকে অন্তত তুমি ডাকটা শুনতে ইচ্ছুক না।
এরপর ভার্সিটির সবার দিকে তাকিয়ে বলে — আমি বিবাহিত এবং আমার বউটা আমাকে নিয়ে অভার পজেসিভ। সে আমার পাশে কোনো মেয়ে সহ‍্য করতে পারে না এবং কেউ এই ভিডিওটি অনলাইনে ছেড়ে আমার সংসারে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করবেন না বুঝেনই তো নারী জাতি কখন না জানি কি করে বসে। আদুরে বউকে কিছু বলতেও পারব না,,,,,
চন্দ্রের কথায় নিমিষেই সবাই মোবাইল নামিয়ে নেয় সেই সাথে চলতে থাকে হাসির রোল।। সবার মধ‍্যমনি চন্দ্র হনহন করে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তার পিছু পিছু শিহাব রিশান ও যায়।
একটা টুলে বসতেই কোথা থেকে চন্দ্রের সামনে এক বালতি পানি নিয়ে হাজির হয় ছোট ভাই রাব্বি। চন্দ্র মাথা নিচু করতেই মগ ভর্তি পানি চন্দ্রের মাথায় ঢালতে শুরু করে।
শিহাব রিশান কিছু বলতে নিলে মাথা নিচু অবস্থায় চন্দ্র জবাব দেয় — নো মোর ওয়ার্ডস,, মাথা গরম আছে ঠাণ্ডা করতে দে।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৮

চন্দ্রের কথা শুনে আর কেউ কিছু বলে না এর মধ‍্যে পুনমের কল আসে রিশানের ফোনে। ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। পূনরায় বেজে ওঠে
— ফোনটা ধর বা**ল কানটা ঝাঝড়া করে ফেলল,, কে এমন পাগল হয়ে ফোন দিয়েছে??
চন্দ্রের প্রশ্নে শিহাব শয়তানি হাসল। রিশান অনুনয় করল চন্দ্রকে কিছু না বলতে তবে শিহাবকি তা শোনে এর আগে বহুবার চন্দ্রের থেকে মার খাওয়াইছে চন্দ্ররে দিয়ে আজ আমার পালা। ভেবেই গলা খাকারি দিয়ে শিহাব বলল
— চন্দ্র রিশানের ফোনে পুনম কল দিয়েছে,,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২০