পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৪

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৪
সাদিয়া আক্তার

কেটে গেছে একসপ্তাহ আজকে নতুন সদস‍্যের আকিকা করে নাম করন করা হবে। আট মাসের বাবুটা সহজেই কারো কাছে থাকতে পারে না বেশ সেন্সিটিভ।
পুরো পরিবার হাজির,, সকাল থেকে ড্রয়িং রুমে বোনেরা ব‍্যস্ত নাম ঠিক করায়। একেকজন একেক নাম বের করছে কিন্তু কারোই পছন্দ হচ্ছে না। ঝিনুক ঠিক করলে রিমির পছন্দ হচ্ছে না রিমি পছন্দ করলে রুপশার পছন্দ হচ্ছে না এরকম করেই চলছে।
পুনম ভাইকে নিয়ে ঘরে চলে গেছে এদের কাজ দেখে তার খিদে পেয়েছে তাই রোজিনা বেগমের কাছে দিয়ে আসল।
— এই পূর্ণ আপু তুমিই ঠিক করো এবার এদের দ্বারা কিচ্ছু হবে না,,,
রাইয়‍্যানের কথায় পুনম ঠোট উল্টে বলল কারো নামই তো কারো পছন্দ হচ্ছে না আমি কি ঠিক করব।

— শালী সাহেবা এবার তুমিই ঠিক করো এছাড়া আর কোনো উপায় নেই,,,
পুনম কিছুক্ষণ ভাবল ভেবে বলল — রাশমিক আহমেদ পূর্ব
— বাহ বেশ সুন্দর নাম দিয়েছ তো,,,
লিমনের কথায় সবাই হ‍্যাতে হ‍্যা মিলায়। — হ‍্যারে আম্মাজান নাম ঠিক হয়েছে মাওলানা সাহেব তো এসে পরেছে
— হ‍্যা আব্বু পূর্ণ ঠিক করেছে রাশমিক আহমেদ পূর্ব,,
— বাহ বাহ বেশ ভালো নাম। দ্বারা আমি আগে ভাইজানদের বলে আসি নামটা মাওলানা সাহেবকে বলতে হবে।
মিরাজ সাহেব মাওলানা সাহেবকে নাম বলল। সেই নাম অনুযায়ী ছাগল জবাই করা হলো পূর্বর আকিকা উদ্দেশ্যে দুইটা ছাগল আনা হয়েছে সেগুলো কাচ্চি করা হবে এক ডেগচি কাচ্চি মসজিদে দিয়ে আরেক ডেগচি থেকে নিজেদের জন‍্য রেখে বাকিটা প‍্যাকেজিং করে বিলি করা হবে।
চন্দ্র শিহাব এখন সেই কাজেই আছে রিশান কামরুল সাহেব মসজিদে গিয়েছে।।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— ভাবী বেলীটা আসল না
শিলা বেগমের আক্ষেপে চাদনী বেগম তার দিকে তাকায়।
— ভাবী আমার বোনটা একটা প্রতারকের জন‍্য এখনো কেনো অপেক্ষা করে নিজের জীবনটা নষ্ট করল সঠিক সময়ে বিয়েটা পযর্ন্ত করল না। এখানে আসতে বললেই বলে আপারে এই ভীর আমার জীবনের ব‍্যর্থতা মনে করিয়ে দেয় যে তারে আমি পাইনি,,,,
চাদনী বেগম ননদকে বুকে জড়ায়। তার যখন বিয়ে হয় তখন বেলী আট বছর বয়সী দুরন্ত কিশোরী যার শিড়ায় শিড়ায় বাচ্চামো গাছে চরা গুলাইল দিয়ে নিষানা করা এই নিয়েই দিন যেতো পড়াশোনায় ছিলো লাড্ডু। তবে মন বসেছিল পড়ায় সেই সাথে বসেছিল আরেকজনের উপরেও চৌদ্দ বছরে কারো মায়ায় পড়েছিল। তবে পূর্ণতা পেলো না। সবাই কি পূর্ণতা পায় পায়না। বেলীরে শত চেষ্টার পরেও কেউ বিয়ে দিতে পারেনি সেই যে আটকেছে কারো উপর আর বের হতে পারেনি।
— ভাবী এই বাদামবাটা ডিপে রাখব নাকি নরমালে,,;??
নিপা বেগমের কথায় চোখ মুছে দুই ননদ ভাবী। চাদনী বেগম নিপা বেগমকে জিজ্ঞাসা করলেন
— ছোট রোজিরে খেতে দিয়েছিস??
— হ‍্যা ভাবী সবার আগে মেঝ ভাবীরে দিছি। উনার জন‍্য শিং মাছের ঝোল করেছিলাম সেগুলো দিয়েই খেয়েছে।।

দূর্বল রোজিনা বেগম ঘুমিয়ে পড়েছে পাশেই পূর্ব ঘুমিয়ে একটু আগেই পুনম শুয়িয়ে দিয়ে গেলো।। পিচ্চিটা এই কয়দিনে সবচেয়ে বেশী পুনমের কাছেই থাকে বেশী। পুনম ও নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ভাইয়ের জন‍্য হাজির থাকে পারভেজ সাহেব পূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠোঁটের কোণে হাসি হঠাৎই লাইটের জন‍্য ঘুমটা হালকা হলো রোজিনা বেগমের।
— এখনো ঘুমান নাই??
রোজিনা বেগমের কথায় তার দিকে তাকায় পারভেজ সাহেব উল্টো প্রশ্ন করে — রোজি ছেলেটা তো লাল সুন্দর হয়েছে মনে হয় গায়ের রঙ শ‍্যামলা হবে,,,
— তো কি হইছে স্বর্নের চামচ বাকাও ভালো।
ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেব বলল — তা ঠিক বলেছ স্বর্ণের চামচ বাকাও ভালো,, যার দ্বারা আমার ঘরে জান্নাত সে কালো হলেও সমস‍্যা নাই।

— কি বলছেন কিছুই বুঝলাম না
— কিছু না এই পুত্রের জন‍্যই মানুষ হাহাকার করে। ঐ যে মুরুব্বিরা বলত একটা পুত্র দেরে আল্লাহ্ একটা পুত্র দে কামাই খাওয়ার ইচ্ছা নাই মাটি দিব কে,,,
— আপনের কথার কিছুই বুঝতাছি না,,
— কিছু না বলেই শুয়ে পড়ে পারভেজ সাহেব। পূর্বের দিকে ফিরে তার কপালে চুমু খায় এই ছেলেটা তাদের থেকে তার পুনমের বেশী সাধনার প্রত‍্যেক ওয়াক্তের নামাজের মুনাজাতে পুনমের একটাই চাওয়া যেন আল্লাহ্ এবার তার মায়ের আশা পূরণ করে একটা ভাই দেয় তাদের শেষ বয়সের সম্বল দেয় অথচ সে এটা জানে না ভবিষ্যতে তার ভাই তার বাবা মাকে দেখবে কিনা। যদি সব পুত্রই সুপুত্র হতো তাহলে বৃদ্ধাশ্রম নামক বাসস্থান তৈরী হতো না।
পূর্বের গলা ফাটিয়ে কান্নায় পারভেজ সাহেবের ধ‍্যান ভাঙ্গে। আজ কেন জানি মনে মনে বেশ আজগবি ভাবনা আসতেছে যা সে চাইলেও দূর করতে পারছেনা।
রোজিনা বেগম পূর্বকে খাওয়াতে চাইলেও সে মুখে নিলো না। আরো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল।

— সারাদিন পর মনমানবের বার্তা মিলল,,,
— উহু সারাদিন আমার মন ময়ূরী মনে ছিলো তবে সে কি জানে আমি আজ ব‍্যস্ত ছিলাম
— কিসের ব‍্যস্ততা??
— আছে
পুনম পেড খাতা হাতে বসে আছে আজ চারদিন পর শের “এ আলী সাহেবের সাথে কথা হচ্ছে। তার মনের প্রশ্ন গুলো জিজ্ঞাসা করার জন‍্য মনটা বড্ড উতলা সামনাসামনি চন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করতে যেয়েও পারেনি কি জিজ্ঞাসা করবে। চন্দ্র ভাই রাতে আমার ঘরে শাড়ি চুরি কে রেখে গেছে কেউ আমাকে চিরকুট দেয় কেউ একজন আছে যার গলাটা অনেকাংশ আপনার সাথে মিলে যদি চন্দ্র কোনো ঝামেলা করে। আর পুনমের এসব জানতে পেরে যদি শের “এ আলী সাহেবের কোনো ক্ষতি করে তাহলে পুনম কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারল না।
হঠাৎই ঘোর ভাঙে ভাইয়ের গলা ফাটিয়ে চিৎকারের ফলে। পুনম হাতে খাতা রেখে সেভাবেই উঠে যায় বাবা মায়ের ঘরের দিকে।

চন্দ্র অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন কোনো ফিরতি বার্তা আসলো দুইবার ড্রোনটা নিজের কাছে এনেছে চন্দ্র কোনো কাগজ পায়নি। পরে পূর্বের কান্নার আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বের হয়।
দেখে রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেব সহ পুরো ফ‍্যামিলি ঘুম ছেড়ে এই পিচ্চির কান্না থামাতে ব‍্যস্ত।
খানিকক্ষণ পর পুনমের কাছে দিতেই ঠোট চটকে থেমে গেলো ড‍্যাবড‍্যাব করে পুনমের দিকে তাকিয়ে থাকল। সবাই আশ্চর্য হয়েও হেসে দিলো।
— হ‍্যারে পূর্ণ ভাইতো একদম তোর ন‍্যাওটা হয়ে গেলো এই কয়দিনে,,,
— হোক আপা আমার ভাইকে আমিই পালব আমার ভাইয়ের জন‍্য সব করব।
পুনমের কথায় সবাই আরো একজোট হেসে দিল তবে হাসতে পারল না একজন সে একবার পুনমের কোলে থাকা পূর্বের দিকে তাকায় আবার নিজ মনে বিড়বিড় করে — এই চাচাতো ভাই শালা দেখি হওয়ার পরপরই আমার প্রেমের নৌকা ডুবিয়ে দেয়ার ধান্দায় আছে।
আমার জোহরা যদি সারাদিন এর সাথেই থাকে আমার কি হবে,,,,
চন্দ্র চলে গেলো গভীর ভাবনায় সে দেখতে পারছে ভবিষ্যতে তার অন্ধকার।।
পুনম হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দোল দিতেই ঘুমিয়ে যায় পূর্ব।
ঘুমন্ত পূর্বকে রোজিনা বেগমের কোলে দিয়ে তাদের ঘুমিয়ে যেতে বলল পুনম। পারভেজ সাহেব মুচকি হেসে দুই মেয়ের কপালে চুমু খায়।

— আজকে আমার আম্মাদের সাথে কথা বার্তা হয়নি তো তাই বোনদের ভাই রাগ করেছে সেজন্য এতো রাতে বোনদের উঠিয়ে এনেছে।
— আমরা কিছু মনে করিনি আব্বু তুমি ব‍্যস্ত ছিলে।
পারভেজ সাহেব দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে দেয়। মিরাজ সাহেবকেও ঝাপটে ধরে ঝিনুক রিমি মুক্তিও কামরুল সাহেবকে ঝাপটে ধরে।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৩

— এটা কি হলো তোদের দুই ভাইয়ের ডান বাম বুকের দুই সাইড ভরল মেয়ে দিয়ে। আমার কেনো ভরল না
মুক্তি বাবার বুকে থেকে বলল — আব্বু ভাইকে বিয়ে করিয়ে দাও ছেলের বউকে মেয়ে বানিয়ে ঘরে রেখে দিবা,,,
— বেশ বলেছেন আম্মাজান তাহলে তো পারভেজের বুকটা একসাইড খালি হয়ে যাবে,,,
কামরুল সাহেবের কথা সবাই বুঝলেও বুঝল না পুনম। সে ভ্রু কুচকে ভাবল –তার আব্বুর বুক এক সাইডে খালি হবে কেনো??

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৫