পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৫

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৫
সাদিয়া আক্তার

চাচার কথার সমীকরণ মিলাতে মিলাতে পুনম নিজের ভাবনায় ডুবে গেলো। চাচা কার সাথে চন্দ্র ভাইয়ের বিয়ের কথা বলছে রুপশা আপু ও নিশা বাদে একমাত্র সেই বাকী আছে। চিন্তা করে আবার চন্দ্রের দিকে তাকায় দেখে চন্দ্র ও তার দিকে তাকিয়ে আছে কেমন তীক্ষ্ম নজর। কি যেন ছিল ঐ নজরে পুনম নিজের চোখ সরিয়ে নিল। পুনম আর ভাবতে পারছে না সে আর চন্দ্র ভাই কোনো ভাবেই সম্ভব না। পুনম শের “এ আলী সাহেবের সাথে এই কয়দিনে বেশ ভালোভাবে জড়িয়ে পরেছে তাকে ছাড়া কাউকে ভাবতেও পারছে না। মনে মনে ভাবল পুনম।
আবারও পূর্বের গলা ফাটিয়ে চিৎকারের ফলে ধ‍্যান ভাঙ্গে পুনমের। এতোক্ষণ তারা সবাই ড্রয়িং রুমেই ছিলো ঘুম ভাঙায় কারোই ঘুম আসছিল না তাই সবাই গল্পই করছিল তবে পুনম ছিল নিজের ভাবনায় ডুবে।

— ওলে লে আমার ভাইয়ুটা কাদে কেনো কে মেরেছে ভাইয়ু কে??
পুনমের আহ্লাদী স্বরে কান্না থামিয়ে পূর্ব ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে থাকল। সবাই অবাক এই ছেলে মায়ের কোলে থাকছেই না শুধু খাওয়াটা বাদে। তবে পারভেজ সাহেবের ভাবান্তর হলো না যেন এটা হওয়ারই ছিলো।
পূর্ব আবার পুনমের কোলেই ঘুমিয়ে যায়। এবার আর কেউ রিক্স নিতে চায়না। তাই রুপশা বলল
— পুনম তোর কাছেই পূর্বকে রাখ দেখ আর কাদে কিনা,,??
— হ‍্যা আম্মাজান সেটাই ঠিক হবে
পারভেজ সাহেব বলে রোজিনা বেগমের দিকে তাকায়। রোজিনা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা দেখে পারভেজ সাহেবের ঠোঁটের অদ্ভূত হাসি ফুটে উঠল।
— হ‍্যা এবার যে যার মতো ঘুমাতে যাই
মিরাজ সাহেব হামি দিতে দিতে বলল। তার কথা শুনে নিপা বেগম ফোরণ কেটে বলল — হ‍্যা সেতো ঘুমাবেই তোমার মতো সবাই ঘুম কাতুরে কিনা,,,
নিপা বেগমের কথা শুনে সবাই হাসিতে মেতে ওঠে। মিরাজ সাহেব ছোট ছোট চোখে তাকায় নিপা বেগমের দিকে। পুনম সবার আগে পূর্বকে নিয়ে চলে যায় চন্দ্রও বিরক্ত হয়ে পুনমের পিছু পিছু যায় — ছ‍্যাহ এখন এই চাচাতো ভাই শালা আমার বউয়ের উপরেও ভাগ বসিয়েছে,,,, নিজ মনে বিড়বিড় করে ঘরে গিয়ে গেট লাগিয়ে ধপ করে শুয়ে পরল।
পুনম ঘরে ঢুকে পূর্বকে শুয়িয়ে নিজেও শোয়। এর মধ‍্যে একবারও পূর্ব নড়াচড়া করে নাই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

একজন নারীর মাতৃত্ব পরিপূর্ণ পায় মাতৃ দুগ্ধ তার শিশু সন্তানকে খাওয়ানোর মাধ‍্যমে। আজ থেকে রোজিনা বেগম সেটার থেকেও বঞ্চিত হলেন।
সকালে ঘুম থেকে পূর্ব খাওয়ার মুখেই নিচ্ছে না গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। বাসায় কেউ নাই পুনম মুক্তি গিয়েছে নিজ নিজ ভার্সিটি চন্দ্র কোচিং সেন্টার গেছে ।
মিরাজ সাহেবরাও সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়েছেন নিজ বাসস্থান উদ্দেশ্যে। পারভেজ সাহেব কামরুল সাহেব গেছে দোকানের উদ্দেশ্যে।
— কিরে রোজী খাওয়াতে পারলি??
— না ভাবী খাইতেছে না। কি যে করি এমন কাদলে তো অসুস্থ হয়ে পরবে এমনিতেই আটমাসে হয়েছে ওজন কম,,,,
চিন্তিত স্বর রোজিনা বেগমের। চাদনী বেগমও চিন্তিত হলেন এইটুকু বাচ্চা এখানো না খেয়ে আছে বেলা এগারোটা বাজতে চলল।
— আচ্ছা এককাজ কর গোসল করিয়ে দে দেখ গোসল করলে খিদে লাগলে খায় নাকি??
চাদনী বেগমের কথা শুনে মাথা নাড়ায় রোজিনা বেগম তার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

বেলা বারোটা বেশ কয়েক ঘন্টা না খাওয়ার ফলে পূর্বের কান্নার জোর আরো বেড়ে যায়। রোজিনা বেগম ও চাদনী বেগম কোনো মতেই ঠাণ্ডা করতে পারছে না।
কিছুক্ষণ পরেই পুনম বাসায় চুকে ভাই থাকায় আজ মিহির সাথে আড্ডাও দেয়নি সে আবার শের “এ আলী সাহেবের চিঠিও পায়নি তাই একপ্রকার খারাপ লাগা নিয়েই পুনম বাসায় ঢোকে সে বুঝেছে কাল রাতে চিঠির উত্তর না পাওয়ায় সাহেবের অভিমান হয়েছে।
পূর্বের কান্না শুনে দৌড়ে সেদিকে যায় পুনম কাধের ব‍্যাগটা কোনো রকম রেখে ভাইকে কোলে নেয় পুনম কোলে নেয়ার পাঁচ মিনিটের মধ‍্যেই কান্না কমে আসে পূর্বের আঙ্গুল মুখে দিয়ে ফুপাতে থাকে
— আম্মু ভাইয়ুর খিদে পেয়েছে,,,,
— খিদে পেয়েছে তো খাচ্ছে না কেনো মুখেও তো নেয় না।
রোজিনা বেগমের ক্লান্ত স্বর। — এই পুনম মা একবার শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি দেখবি এতো কাদে ক‍্যান দুই দিন আগেও তো ভালোই ছিল।
— হ‍্যা চাচী নেওয়াই যায় তুমি রেডী হয়ে নেও মুক্তি আপু আসলেই আমরা যাবোনে,,,,
— দ্বারা মুক্তিকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করি কই আছে??
বলেই মুক্তিকে কল দেয় চাদনী বেগম। মুক্তি রিসিভ করে জানায় সে দশ মিনিটের মধ‍্যেই পৌঁছে যাবে। তাই চাদনী বেগম রেডী হতে চলে যায় পুনম মায়ের দিকে তাকায় কেমন করে তাকিয়ে আছে পূর্বের দিকে পুনমের খারাপ লাগে। পুনম বোঝানোর স্বরে বলে — ভাই ঠিক হয়ে যাবে আম্মু চিন্তা করো না,,
রোবটের মতো মাথা নাড়ায় রোজিনা বেগম। ফের পুনমের দিকে তাকায় মেয়েটা ভার্সিটি থেকে এসে একদন্ড বিশ্রামও নিতে পারেনি।

— এখানে বস
নিজের পাশের জায়গাটা দেখিয়ে বলল।
— না বসা লাগবে না তাহলে যদি ভাই আবার কাদেঁ!!
মুক্তি আসার পরপরই তারা বেড়িয়ে যায় পূর্বকে নিয়ে।
ডাক্তারের কেবিনে বসে আছে পুনম চাদনী বেগম। ডাক্তার পূর্বকে ভালোমতো চেকআপ করে দেখল।
— নাহ পেটে গ‍্যাস ও হয়নি তাহলে খাচ্ছে না কেনো। আপনারা বরং এককাজ করেন ফর্মূলা খাইয়ে দেখতে পারেন খায় কিনা।
বলেই প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনী ঔষধ ও দুধের নাম লিখে দিল।
চাদনী বেগম আসার সময় নিয়ে আসল ফার্মেসী থেকে পুনম পরিমাণ মতো দুধ গুলিয়ে ফিটার মুখের সামনে নিতেই পূর্ব চু চু করে খাওয়া শুরু করল।
খাওয়ার পর থেকে সারাদিন পূর্ব পুনমের কাছেই ছিলো। খাওয়ার পরপরই আবার ঘুমিয়ে যায়। পুনম তখন ফ্রেশ হয় খাওয়া দাওয়া করে ভাইয়ের পাশে ঘুম দেয়।।
দুই ভাইবোনের ঘুম ভাঙে আসরের আজান শুনে পূর্ব ও হিসু করে ওঠে। পুনম পূর্বকে চেঞ্জ করিয়ে মায়ের কাছে দিয়ে আবার ঘরে যায় নামাজ পরতে।
নামাজ পরে এসে পূর্বের খাওয়ার রেডী করতে করে তাকে খাওয়াতে পূর্ব আবার ঘুমিয়ে যায়।

— চাচী ভাই এতো ঘুমায় কেনো??
পুনমের প্রশ্নে হাসে চাদনী বেগম। — একমাস পযর্ন্ত ওর এই কাজ চলবে খাওয়া আর ঘুম এরপরে একটু একটু হাত পা নাড়াচাড়া করবে তাকিয়ে থাকবে।
— ভাইয়ু তাড়াতাড়ি বড় হও আপার জন‍্য চকলেট কিনে আনবে না,,
পূর্বের নাকে নাক ঘষে পুনম।

রুপালি থালার মতো চাদঁ উঠেছে আকাশে পুনম ভাইকে ঘুম পারিয়ে বারান্দায় এসেছে। ঘর থেকে উকি দিয়ে দেখে এগারোটা বেজে দশ মিনিট এখনো শের “এ আলী সাহেবের চিঠি আসল না।।
— এতো অভিমান সাহেবের একটাবার খোঁজ ও নিল না,,,
এর মধ‍্যেই ল‍্যান্ড করে ডিজিটাল কবুতর। গটগট শব্দ করে পুনম মিষ্টি হাসে চাকার চিপা থেকে চিরকুট বের করে
— তোমাকে আমার কি করতে মন চায় জানো??
এমন প্রশ্নে ভরকে যায় পুনম। ফের লিখে — কি করতে মন চায়??
— বুকের ভিতর ঢুকিয়ে পিষে ফেলতে মনে চায়। পাষাণী জোহরা
— অভিমান হয়েছে শের “এ আলী সাহেবের??
— তো ভাঙাও
— কিভাবে??
— আমি কি জানি,,,
পুনম চিরকুটটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবল। বারান্দায় রেলিঙে হ‍্যালান দিয়ে বসে লিখল

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৪

— আপনার ঐ অভিমানী দুই চোখে একটুখানি ছুয়ে দিলে চলবে মন মোনোহর।
— মন সম্মোধনে তাকেই ডাকা যায় যে অন্তরস্থলে বসবাস করে,, তবে আমিও কি জোহরার অন্তরস্থলে বসবাস করার অনুমতি পেলাম।
চিঠি খানা পড়ে পুনম লাজুক হাসে। এই কয়দিনে অন্তরস্থলের অনেকক্ষাণি জুড়েই শের “এ আলী সাহেবের বসবাস। তবে সেটা জানান দিতে নারাজ এই লজ্জাবতী তাই একটা রাগি ইমুজি লিখে পাঠিয়ে দেয়।
সেটা দেখে বারান্দায় বসে চন্দ্র হো হো করে হেসে দেয়।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৬