পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৬

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৬
সাদিয়া আক্তার

প্রানীবিদ‍্যা বিভাগের প্রানী ভুগোল ক্লাসে আজ নতুন টিচার আসবে। সেই নিয়েই ক্লাসে গসিপ চলছে টিচার কেমন হবে ইয়াং নাকি মধ‍্য বয়স্ক সব মিলিয়ে বেশ উল্লাস যুক্ত একটা পরিবেশ। ভার্সিটি লাইফ হোক আর স্কুল কলেজ হোক প্রত‍্যেকটা স্টুডেন্টসদেরই নতুন টিচারদের প্রতি কৌতুহল থাকে। উচ্ছাস থাকে।
পুনমের সেদিকে খেয়াল নেই সে এদিক ওদিক উকি ঝুঁকি মারছে। কেনো মারছে সে নিজেও জানে।
হঠাৎই গটগট পায়ে মধ‍্যবয়স্ক একজন লোক ক্লাসের ভিতরে প্রবেশ করল। চোখে রিমলেস চশমা আভিজাত্য চেহারা এই মধ‍্যবয়স্ক চেহারায় গাম্ভীর্যতা ভরপুর। সেটা দেখেই অনেকে ভয় পেলো তাদের আশা ছিলো একজন ইয়াং টিচারের তবে সেগুরে বালি।

— হ‍্যালো স্টুডেন্টস আম নাওয়াজ শেখ ইয়‍্যুর নিউ টিচার,,,
গম্ভীর গমগমে স্বর কাপিয়ে তুলল ক্লাসরুম জুড়ে। ছাত্রছাত্রীরা কেনো যেনো ভয় পেলো। ছাত্রছাত্রীদের ভয় পেতে দেখে নাওয়াজ শেখ মিষ্টি হেসে বলল — ডোন্ট অ‍্যাফরেইগ্ক আম ইয়‍্যুর টিচার নট অ‍্যা ডেমন,,
স‍্যারের কথা হাসিতে মুখোরিত হলো পুরো ক্লাসরুম। পুনম ও হাসল হঠাৎই নাওয়াজ শেখের সেদিকে নজর যেতেই সে ভ্রু কুচকে গম্ভীর স্বরে বলল — আজকের মতো হাসাহাসি শেষ নাও লেট”স স্টার্ট দ‍্যা ক্লাস।
বলেই নিজের মতো পড়াতে লাগলেন। সবাই মনোযোগ হলো ক্লাসে স‍্যারের পড়ানোর স্টাইলটা একটু ভিন্ন তাই সবার ভালোও লাগল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ক্লাস শেষে জানানো হলো আজ আর ক্লাস হবে না। তাই পুনম লাইব্ররির দিকে গেলো মিহির কিছু বই লাগবে।।
পথিমধ‍্যে নাওয়াজ শেখের সামনাসামনি পড়লে সে ভ্রু কুচকে সাইড কাটিয়ে চলে যায়। মিহি পুনম যায় লাইব্রেরিতে। পুনম আনমনা হলেও মুখে লেগে আছে মুচকি হাসি ভালো লাগে তার এই লাইব্ররিতে এলে এখানেই তো শের “এ আলী সাহেবের সাথে প্রথম লিপি দেয়া নেয়া হয়েছে।
পুনম সেই প্রথম দিনের বইটা হাতে নেয়। মলাটে হাত বুলিয়ে প্রথম পৃষ্ঠা সরাতেই আজকেও ধূসর রঙা চিঠি পেল।
— হৃদয়ে পুরে ঝড় উঠেছে জোহরাকে প্রণয় রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার ঝড়। জোহরা কি সেই রঙে নিজেকে রাঙাবে??
মুচকি হাসে পুনম লিখতে শুরু করে — প্রণয়ের রঙ কি প্রণয় সখা?? জানতে ইচ্ছুক জোহরা,,,
ধূসর রঙা চিরকুটের অপর পাশেই লিখে যেভাবে ছিলো সেভাবেই রেখে দিলো পুনম।। রেখে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকল তবে আশানুরুপ কাজ না পাওয়ায় সেখান থেকে চলে আসল। অথচ সে টেরই পেলো না তার প্রস্থানের পরপরই কেউ চুপিসারে এসে বইয়ের ভাজের থেকে চিরকুটটা নিয়ে গেলো।।
— ভাই ভাবী মনে হয় আজ আপনেরে দেখার আশায় ছিলো অনেক্ষণ দাড়ায় ছিলো চিঠি লেইখা।
রাব্বির কথা শুনে হাসে চন্দ্র তার বোকা জোহরা তাকে দেখার জন‍্য ব‍্যাকুল হয়ে আছে। সে জানে তবে সে এখন দেখা দিতে নারাজ তাদের প্রণয়টা আরো গভীর হোক। জোহরা তার হোক সে দেখা দিবে তার জোহরাকে।।

পুনম বাসায় ঢুকে দেখে মা চাচী মুক্তি আপু ও তাদের হেল্পিং হ‍্যান্ড শিউলি খালা বসে আছে। শিউলি খালা ছুটা কাজ করে দিয়ে যায় তবে এখনো বসে থাকতে দেখে পুনম অবাক হয়।।
— কি ব‍্যাপার খালা তুমি সো স্ট্রেইট ফোরওয়ার্ড মানুষ তোমারে দশ মিনিটের জন‍্যও বাকা করা যায় না। আজ এখনো বাসায়,,,?
টেবিলের কাছে পানি খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করল পুনম।
— কইয়েন না ছোঠ আম্মা মার ভাইঝি আইব এহন থেইক্কা আপনেগো বাসায় বান্দা কাম করব। ওর লইগাই বইয়া আছি,,,,,
— ওওওওও
সোফায় বসে কথোপকথন চলে তাদের পুনম ঘরে যায় ফ্রেশ হতে নিচে ভাইকে না পেয়ে মায়ের ঘরে আসে। দেখে পূর্ব ঘুম তার মাথায় চুমু খেয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে সকাল বেলা তার ভাইটা তাকে ছাড়তেই চায়নি একদম অনেক কষ্ট করেই যেতে হয়েছে।

পুনম গোসল করেই বের হয় মাথায় গামছা পেচিয়ে ঘর থেকে বের হয়। — আম্মু দুপুরে খেয়েছ?,
রোজিনা বেগম কেমন ক্লেশ মাখা স্বরে বলল — হ‍্যা,,
পুনম তাকায় মায়ের দিকে ভাইটা একদমই মায়ের কাছে থাকে না সারাদিন পুনমের কাছে আর সে না থাকলে চাচী ও মুক্তি আপুর কাছে থাকে।
খারাপ লাগে পুনমের।
— চাচী আপু তোমরা খেয়েছ??
— হ‍্যারে আমরা সবাই খেয়েছি তুই বস তোকে আমি বেড়ে দেই,,
— লাগবে না আপু তুমি বস আমি নিয়েই খাব। বলেই মুক্তিকে বসায় টেবিলে ভাত তরকারি টেবিলেই ছিল সেখান থেকে নিয়ে খাওয়া শুরু করল।
এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। মুক্তি গেট খুলল চন্দ্রকে দেখে ভ্রু কুচকে আবার ঘড়ির দিকে তাকায়।
— এই সময় ভাইয়া
চন্দ্র মুক্তির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল — সর আমার বাসা আমি যখন খুশী তখন আসব।
মুক্তি ঝাড়ি খেয়ে সরে গেলো। চন্দ্র চড়ুই পাখির মতো কুটকুট করে খেতে থাকা পুনমের দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। চন্দ্রের পরপরই প্রবেশ করে একটা মেয়ে
— আচচালামু আলাইকুম ফুআম্মা,,

শিউলী খালার সামনে দাড়িয়ে তাকে লম্বা করে সালাম দিয়ে বলল। চ শব্দে সালাম শুনে সবাই সেদিকে তাকায় শিউলী খালা বলে — খালাম্মা হেয়ই আমার ভাইঝি রেনু ওর কথাই কইছি,,,
চাদনী বেগম মুচকি হেসে আলাপচারিতা সারে। এরমধ্যেই উপর থেকে নামে চন্দ্র সিড়ি বেয়ে কাউকে নামতে দেখে মুক্তি পাশ দিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকায় রেনু। হঠাৎই কথা বন্ধ করায় মুক্তি রেনুর দিকে তাকায় ঘাড় বাকিয়ে মুক্তির পাশ দিয়ে চন্দ্রকে দেখতে দেখে মুক্তি হতবাক হয়। মুক্তিও ঐপাশ হেলে যায়। রেনু আরেকপাশ হেললে মুক্তি ও তাই করে তিনচার বার এরকম চলতে যায়। শেষে না পেরে মুক্তি বলল — এই মেয়ে সোজা হয়ে বসো
মুক্তির ঝাড়ি খেয়ে সোজা হয়ে বসল রেনু মুক্তি সেখান থেকে পুনমকে বলল — পূর্ণ ভাইকে খেতে দে,,,
— এই চন্দ্র বাবা উপর একটু যা না দেখ পূর্ব উঠেছে কি না,,,
চন্দ্র আবার উঠে যায় পূর্বকে দেখতে। রেনু আবার সেদিকে তাকিয়ে থাকে ঘাড় বাকিয়ে মুক্তি ও সোজা হলে রেনুর সামনে বসলে রেনু বলল

— চমচ‍্যা কি আপনের
— এই মেয়ে সোজা হয়ে বসো একদম আমার ভাইয়ের দিকে তাকাবা না নাহলে চাকরী নট
চাকরী নট শুনে রেনু মন খারাপ করে চুপচাপ বসে পড়ে থাক এই হান্ডচাম বেটারে দেখতে হইলে তার এই বাড়ি থাকতে হইব। মনে মনে ভাবে রেনু।
পুনম খেতে খেতে একবার রেনু একবার চন্দ্র ও একবার মুক্তির দিকে তাকায়। মিটিমিটি হাসে চন্দ্র ভাইয়ের দেওয়ানী এসেছে।।
— আম্মু পূর্ব ঘুম
— আচচালামু আলাইকুম চাদ ভাই,,,
— ভাইয়া তুমি খেতে যাও পূর্ণ ভাইকে খেতে দে,,,
চন্দ্র ভ্রু কুচকে একবার বোনের দিকে তাকিয়ে টেবিলে বসে পুনম মিটিমিটি হাসতে হাসতে চন্দ্রের খাবার বাড়ে।
— চমচ‍্যা কি আপনের চাদ ভাইয়ের লগে কথা কইবার দেননা ক‍্যলা,, হেয় আমার দেহা চবচেয়ে চুন্দর পুরুষ হের পাঙ্খা আমি,,

রেনুর কথা শুনে মুক্তি মুখ বাকিয়ে বলল — চাদ ভাইয়ের হাতে দাবাং মার্কা চড় খাইয়া বেহুচ হইয়া যাইবা। তখন চুইটা যাইব পাঙ্খা গিরি।
মুক্তির কথা শুনে পুনম খিলখিল করে হেসে উঠল। চাদনী বেগম ও রোজিনা বেগমও মুচকি হাসল শিউলী খালা ভাইঝিকে চোখ রাঙাল।।
পুনমের হাসির দিকে চন্দ্র অনিমেষ তাকিয়ে রইল। তখনই পূর্বের কান্নার আওয়াজে পুনম হাসি থামিয়ে ভাইয়ের কাছে ছুটল।
— ছ‍্যাহ এই চাচাতো ভাই শালা দেখী বোনের মতোই আমার প্রেম বিরোধী।

ভাইকে শুয়িয়ে নিচে তাকায় পুনম তার ঘরে আজ চন্দ্রের পাঙ্খার আগমন ঘটেছে। সে নিজে মায়াবী আপা চাতে ঘুমাতে বলে আগে আগে ডেরা গেরেছে পুনমের ঘরে। নিচে বিছানা করে নিজের মতো শুয়েও পড়েছে।।
পুনম ভাইয়ের দুই পাশে বালিশ দিয়ে তাকে সংরক্ষিত করে পা টিপে টিপে বারান্দায় যায়। দেখে হেলিকপ্টারে দুইটা চিরকুট।
— তুমিময় অপেক্ষা এতো প্রশান্তির কেনো বলতে পারো মাই জোহরা,,,
— অপেক্ষা মানেই তো একগুচ্ছ আশা
— উহুম অপেক্ষা মানে জোহরা
চিঠি পড়ে ফের লাজুক হাসে পুনম। চিঠিতে লিখে

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৫

— আপনাকে দেখার তৃষ্ণা জেগেছে আপনার জোহরার মনে তাকে কি একটু দেখা দেওয়া যায়। আপনাকে কি একটু ছুতে পারি,, আপনিময় উপস্থিতি অনুভব করতে পারি?? ক‍্যান আই ফিল ইয়‍্যু শের “এ আলী সাহেব।
পুনমের চিঠি পড়ে চন্দ্র হাসল ফের লিখল
— অফকোর্স মাই জোহরা,,,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৭