পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৯

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৯
সাদিয়া আক্তার

ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল পুনম একি বলছে চাচী। পুনম কোনো দিনও চন্দ্রকে মেনে নিতে পারবে না সে মনে প্রানে তার শের “এ আলী সাহেবকে চায়। তাকে নিয়ে তার ভাবতে ভালো লাগে তার জায়গাই চন্দ্র ভাইকে কোনো দিনও বসাতে পারবে না। হাসফাস লাগে পুনমের দম বন্ধকর অনুভূতি লাগছে। এ অনূভুতির কথা কাকে বলবে পুনম কে তাকে বুঝবে ভেবেই আরো অস্থির পুনম।।
মিহির কথাই সত্যি হলো পুনম আগুনে ঝাপ দিয়েছে প্রণয় নামক অনল বর্তমানে তার হৃদয়ে দাউদাউ করে জ্বলছে। কিছু একটা ভেবে ফোন হাতে নেয় পুনম,,,,,
কল লাগায় বাবাকে। দোকানের কাজে ব‍্যস্ত থাকায় পারভেজ সাহেব ফোন ধরতে পারে না। ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেদেঁ উঠে পুনম।
ড্রয়িং রুমে রোজিনা বেগম ও চাদনী বেগম পুনমের অভাবে যাওয়া দেখে ভাবছে পুনম লজ্জা পেয়েছে তবে মুক্তির মনে অন‍্য চিন্তা ইদানিং পুনমের হাবভাব তার ঠিক লাগছে না নিজে নিজে মুচকি হাসা। হঠাৎই উদাসীন হওয়া কেমন যেনো রহস্য রহস্য ঠেকল মুক্তির কাছে।

— মুক্তি খাওয়া শেষ কর। এরপর পুনমকে নিয়ে যাবি তোর বাবার সোরুম এ সেখান থেকে নিজের পছন্দ মতো কেনা কাটা করে যাবি বেনারসি পল্লীতে শাড়ি বা লেহেঙ্গা যেটাই নিবি নিস।
— ভাবী চন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করেন ও কি পছন্দ করবে পুনমের জন‍্য,,,
রোজিনা বেগমের কথায় চাদনী বেগম সায় জানিয়ে বলল — হ‍্যারে মা চন্দ্রকেও জিজ্ঞাসা করে নিস,,,। মুক্তি
মায়ের ডাকে ধ‍্যান ভাঙ্গে মুক্তির এতোক্ষণ সে এলোমেলো ভাবনায় বিভোর ছিল।
— হু
— কি বলেছি শুনেছিস চন্দ্রকে ফোন দে,,
মুক্তি চন্দ্রকে ফোন দিলে চাদনী বেগম কথা বলে। রোজিনা বেগম পূর্বের কাছে যায়। আজ সারাদিন খুব জালিয়েছে রোজিনা বেগমকে।
পূর্বকে নিয়ে আসতে তাকে কোলে নেয় মুক্তি রোজিনা বেগম তার দুধ বানাতে যায়। মুক্তি পূর্বের সাথে খেলতে খেলতেই বলে — ভাই কি বলল??
— আমাদের যা মনে চায় কিনতে বলল। তার শুধু বিয়ে নিয়েই ইন্টারেষ্ট আর কিছু না,,,,
মায়ের কথায় মুক্তি মুচকি হাসল। সে জানত চন্দ্র এসব কোনো কিছুইতে মত দিবে না।
— তাহলে কি করব আম্মু??
— তুই বরং পুনমকে নিয়ে চলে যায়। পিছন থেকে রোজিনা বেগম বলল। তার সাথে চাদনী বেগম ও সায় জানাতে মুক্তি পূর্বকে নিয়ে পুনমকে ঘরের দিকে যায়।
আপন মনে কান্না করছিল পুনম মুক্তির গলা শুনে নাক টেনে মুখ মুছে কোনো রকম নিজেকে সামলায়।
দরজা খুলে ভাইকে দেখে হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোণে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার ভাই কি আমাকে আজ মনেই করেনি??
পুনমকের প্রশ্নে পূর্ব ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে রইল। পুনম মুচকি হেসে কোলে নিলো। মুক্তির দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। পুনম ভয় পায় আমতা আমতা স্বরে জিজ্ঞাসা করে — কিছু বলবা আপু??
— হু চারটার দিকে রেডী থাকিস শপিং এ যাব,,
ঢোক গিলে পুনম এদিকে সেদিকে তাকিয়ে চোখ নিচু করেই বলল — তুমি চাচী ও আম্মুকে নিয়ে যাও আমার তো এসব ভালো লাগে না সেটা জানোই আর তোমার পছন্দ কখনও খারাপ না।
— তারপরে ও তোর একটা বিশেষ দিন। বিয়েটা মানুষের জীবনের একটা স্পেশাল দিন সেটা তোর মনের মতোই হওয়া উচিৎ।
মুক্তির কথা শুনে পুনম উদাসীন আওড়ায়
— বিয়েটা তাহলে মনের মানুষের সাথেই হওয়া উচিৎ।
— কি বললি,,

মোটামুটি উচ্চস্বরে বলল মুক্তি। মাথা নিচু করে ঠোট কামড়ে কেদেঁ দিল পুনম মুক্তি তৎখনাত তাকে নিয়ে ঘরে ঢোকে। হাত ঝাকাতে ঝাকাতে বলল — এই পূর্ণ কি বললি তুই মনের মানুষ মানে,,
— আআমমি কাউকে পছন্দ করি আপু ইভেন ভালোওবাসি,,,
পুনমের কথা শুনে তার হাত ছেড়ে দিল মুক্তি। একি বলল পুনম তার ভাইটা এগুলো জানতে পারলে মরে যাবে এতো বছরের লালিত ভালোবাসা এভাবে শেষ হতে পারে না। মুক্তি ভাইকে চিনে সে জানতে পারলে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। তবুও গম্ভীর স্বরে বলল — কে সে কোথায় থাকে??
মুক্তির প্রশ্নে পুনমের মনের কোনে আশার কিরণ জাগে। গরগরিয়ে শুরু থেকে সবটা বলে দেয়।
— লোকটা যদি তোকে ভালো না বাসে তখন সে তো একবারও নিজের মতো করে চিঠিতে লিখে পাঠায় নাই।
মুক্তির কথা শুনে পুনমের ছোট্ট হৃদয় খানা ধক করে উঠল। এই কথা কেনো বলল আপু সে কি বুঝতে পারছে না তার শের “এ আলী সাহেব তাকে কতটা চায়। পুনম তো জানে।

— আপু ভালোবাসায় ব‍্যক্ততা থাকবে কেনো অবক্ত ভালোবেসে ভালোবাসা অনুভব করা যায়,,,
পুনমের কথায় মুক্তি হতবাক মেয়েটা কেমন মোটা মোটা কথা বলতে শিখেছে খারাপ লাগল তার পরোক্ষণেই ভাবল কোথাকার কোন উড়ো চিঠি তার ভাইয়ের এতো বছরের ভালোবাসা নিমিষেই শেষ করে কেড়ে নিবে তা মুক্তি হতে দিবে উহু না। কখনও না দরকার পরলে পুনমকে জোর করবে
— বেশ বড় বড় কথা শিখেছিস বাহ বেশ ভালো। তবে একটা কথা মনে রাখ কোথাকার কোন উড়ো চিঠি আমার ভাইয়ের ভালোবাসার পথে বাধা হতে পারে না।
রেগে গেলো পুনম চিল্লিয়ে বলল — কিসের ভালোবাসা মানিনা তোমার ভাইয়ের ভালোবাসা। আমি একজনকেই ভালোবেসেছি সে আমার শের “এ আলী সাহেব।
এবার মুক্তি ও রেগে গেলো। গম্ভীর স্বরে বলল
— একদম জানে মেরে দিব পুনম অন‍্যকারো বউ হবি,,,

অন‍্যকাউকে ভালোবাসবি হ‍্যা ঐ চিকন টুটি চেপে ধরলে গলা দিয়ে গরগরিয়ে ভালোবাসা বের হয়ে যাবে। আজ রাতটুকুই সময় দিলাম এরমধ্যেই ভালোবাসা বমি করে ফেলবি তারপর চুপচাপ বউ সাজবি।।। আমার ভাইয়ের বউ মনে রাখিস আমার ভাই ছাড়া অন‍্য কারো ভাবনা মাথায় আনবি না।
মুক্তির এমন রাগ দেখে পুনম ভয় পেলো। হাস‍্যজ্জল মুক্তির এমন ব‍্যবহার মেনে নিতে পারল না পুনম ডুকরে কেদেঁ উঠল পুনমকে কাদতে দেখে মুক্তির ঘোর ভাঙ্গে। বোধ হয় সে রাগে কি বলে ফেলেছে তবুও মায়া দেখায় না চুপচাপ পূর্বকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে যায় পুনমের ঘর থেকে। মায়ের কাছে পূর্বকে দিয়ে হনহন পায়ে নিজের ঘরে গিয়ে ঠাসস করে দরজা আটকে ফোন দেয় চন্দ্রকে।
চন্দ্র ফোন রিসিভ করতেই মুক্তি শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করল বাসায় কখন আসবে চন্দ্র বলল রাত হবে। মুক্তি আর কিছু না বলে কেটে দিলো।

রাত নয়টা পারভেজ সাহেব,, কামরুল সাহেব চাদনী বেগম ও মুক্তি একসঙ্গে বাসায় ঢোকে। বিকালের দিকে চাদনী বেগম পুনমকে শপিং এ যাওয়ার জন‍্য ডাকলেও সাড়া দেয়না পুনম তখন মুক্তি কথা কাটানোর জন‍্য বলে পুনম তাকে বলেছে তাদের পছন্দ মতো কিনতে। রোজিনা বেগমকে নিতে চাইলে সে যেতে পারে না অসুস্থ থাকায়।
— পুনম কই??
রোজিনা বেগম থেকে পানি নিতে নিতে বলল পারভেজ সাহেব। রোজিনা চিন্তিত স্বরে বলল
— মেয়েটা সেই যে দুপুরে ঘরে যেয়ে দোর দিল এখন পযর্ন্ত দরজা খুলছে না এতো ধাক্কালাম তাও সাড়া নেই।
— কি বল তুমি আমাকে ফোন দিলে না কেনো??
বলেই পুনমের ঘরের দিকে যায়। তার পিছু পিছু সবাই যায় মুক্তি বাদে।
কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরেছিল পুনম। গভীর ঘুমে হঠাৎই জোরে জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম হালকা হয়। টেনে চোখ মেলে তাকায় বাবার গলা শুনে ঢুলতে ঢুলতে দরজা খুলে।
পুনমকে দরজা খুলতে দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৮

— কি হয়েছে আম্মা চেহারার এমন অবস্থা কেনো??
মাথায় হাত বুলিয়ে বলল পারভেজ সাহেব। পুনমের কান্না ঠেলে আসতে চায় তবে চাচা চাচীকে দেখে নিজেকে সামলায় এখন বাবাকে বলায় সঠিক সময় না ভেবে চুপ থাকে।
— দুপুরে ও কিছু খাসনি এখন খেতে আয়। চাদনী বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।। চাচীর আদরে পুনমের মন খারাপ ক্রমশ বেড়ে যায় সে সবাইকে কি জবাব দেবে। ভেবেই মনে ঝড় উঠে তবে তা অদৃশ্য কিন্তু পিছনে দাড়িয়ে থাকা মুক্তি কিছুটা আচ করতে পারে। তবুও একবিন্দুও মায়া দেখায় না। কোথাকার কোন আলী তার ভাইয়ের জায়গা নিবে কখনও না।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪০